#যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে
#পর্ব_২৩
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
( মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
ইফতিকে দেখে কন্ঠ দেহে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। কন্ঠ একটু আগেও কল দিয়েছিল কিন্তু কল রিসিভ করেনি ইফতি। গাড়িতে আছে ভেবে অপেক্ষা করে বসে ছিলো কন্ঠ। কিন্তু কল ব্যাক করেনি ইফতি।
বাড়ি ভর্তি মানুষজন। কোথাও নিরিবিলি কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই। মহিলারা রান্নাবান্নার কাজে ব্যস্ত। কেউ পেঁয়াজ ছাড়িয়ে কাটতে ব্যস্ত তো কেউ মশলা পিষতে ব্যস্ত। কেউ মুরগী জবাই দিয়ে মাংস বানাচ্ছে তো কেউ ধুচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে মশলা শিলনোড়ায় বাটা হয়। মুরগীও হাতে জবাই করে হাতেই চামড়া ছিলে মাংস কাটা হয়। বিয়ে বাড়িতে কি কম খাবারের আয়োজন? তাই কারো দুদণ্ড বসার জোঁ নেই। ঘড়িতে রাত বারোটা বেজেছে। কন্ঠও এতক্ষণ সবার হাতে হাতে কাজ করছিল। এখন সবাই ঘুমুতে যাবে। খাওয়াদাওয়ার পাট চুকিয়েছে এগারোটার দিকেই। দোতলায় থাকার বন্দোবস্ত হয়েছে কন্ঠ ও ইফতির। বিনা, ইয়ানা ও পরী একসাথেই থাকবে। সমুদ্র অন্য ছেলেদের সাথে। কন্ঠ আর ইফতির বেলায় শুধু আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন শায়লা মল্লিক। এমনিতেই ওদের সম্পর্কে সবে একটু ভালোবাসা এসেছে। তাই মা হিসেবে কিঞ্চিৎ পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ারও সুযোগ সে দিবে না।
কন্ঠ তড়িঘড়ি করে ঘরে এসে দেখে ইফতি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার দূর আকাশের পানে। কন্ঠ ঠিক বুঝতে পারছে না হুট করে মানুষটার কী হলো! এতো বছরে কখনো এমন আচরণ করতে দেখেনি। কন্ঠ সরাসরি কথা বলবে বলে ঠিক করলো। যেকোনো বিষয় দু’জন মনে মনে রেখে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে সরাসরি কথা বলে নেওয়া ভালো।
” শুনছো!”
কন্ঠ ইফতিকে পেছন দিক থেকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বললো।
” বল।”
ইফতির ভাবলেশহীন জবাব। আজকে প্রথম কন্ঠ নিজ থেকে তাকে জড়িয়ে ধরল তারপরও এতো উদাসীনতা? কন্ঠ অবাক হলো ইফতির নীরবতায়।
” তোমার কী হয়েছে? তোমার নীরবতা যে আমাকে ভাবাচ্ছে সেটা কি তুমি অনুভব করতে পারছো না?”
ইফতি কন্ঠর দিকে তাকালো। চোখে চোখ পড়তেই কেমন শীতল হয়ে গেলো ইফতির মন ও মস্তিষ্ক। নারীর চোখে তাকিয়ে কোনো পুরুষ স্থির থাকতে পারে না। তার মন ও মস্তিষ্ক অবশ্যই অস্থির হয়ে উঠে। ইফতিরও তাই হচ্ছে। কন্ঠকে আচমকা জড়িয়ে নিলো বুকে। কন্ঠ স্বস্তি পেলো। মুখ গুঁজে রইলো বুকে। ললাটে চুম্বন এঁকে চোখ বন্ধ করে কন্ঠর মাথার উপর থুতনি স্থির করলো ইফতি।
” সরি কন্ঠ। মনটাকে কিছুতেই স্থির করতে পারছিলাম না।”
” কেনো? বলো কী হয়েছিল।”
” ঐশী কল দিয়েছিল। ”
” ঐশী!”
কন্ঠ চমকাল। নিজেকে ছাড়িয়ে ইফতির মুখশ্রী পানে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে।
” হ্যাঁ। ”
” কী বললো?”
” তোমার আর প্রহরের মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল সেসব। ”
” আরকিছু?”
” সুযোগ পায়নি আরকিছু বলার।”
” এদিকে এসো।”
কন্ঠ ইফতির হাত ধরে বিছানায় বসালো। তারপর নিজেও বসলো খুব কাছাকাছি। হাত ছাড়লো না। মুখোমুখি বসে চোখে চোখ রেখে ফের কথা বলতে শুরু করলো কন্ঠ।
” মানুষটা যেমনই ছিল আমার প্রথম প্রেম ছিল সে। আমাকে ঠকিয়েছে বলে নিজেও শান্তিতে থাকতে পারেনি। একটু হলেও অনুশোচনার অনলে জ্বলে পুড়ে মরেছে। আমি চাইনি তার এই পরিণতি। কিন্তু আমাদের মধ্যে কখনো কোনো ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়নি। একেবারে যে স্পর্শ করেনি সেটা বলবো না। তবে সেটা শুধু চুম্বন পর্যন্ত তা-ও মুখশ্রীতে। এরথেকে বেশি কিছু না। তবে হ্যাঁ প্রহর যে চায়নি তেমনটা নয়। আসলে সম্পর্কে থাকলে নব্বই পার্সেন্ট ছেলেরাই চায় প্রেমিকাকে নিজের করে নিতে। প্রহরও তেমনই ছিলো। কিন্তু কথা হচ্ছে নিজে ঠিক তো দুনিয়া ঠিক। আমি যদি স্বেচ্ছায় তাকে সুযোগ না দেই তার পক্ষে জোর করে নেওয়া সম্ভব ছিল না। হয়েছেও তাই। পুরুষ জাতির কামনাবাসনার ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ কম। আর নারী হলো মায়ের জাত। তাদের সবক্ষেত্রেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে চলতে হয়। আমি তার ব্যতিক্রম নই। আশা করি বুঝতে পেরেছো?”
কথাগুলো শেষ করে দম নিলো কন্ঠ। প্রায় হাঁপিয়ে গেছে। ইফতি পাশের টেবিলে রাখা জগ থেকে পানি ঢেলে গ্লাসে করে পানি দিলো কন্ঠকে।
” পানি খেয়ে নাও আগে। ”
কন্ঠ এক ঢোক পানি খেয়ে গ্লাসটা ইফতিকে ফিরিয়ে দিলো। ইফতি কন্ঠর কোলে মাথা রেখে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো।
” কন্ঠ আমি তোর সাথে কার ঘনিষ্ঠতা ছিলো, তুমি ভার্জিন কি-না সেটার জন্য মন খারাপ করে ছিলাম না।”
কন্ঠ ইফতির মাথায় চুলের মধ্যে আঙুল ডুবিয়ে দিলো।
” তাহলে? ”
” আমার ভালোবাসার মানুষকে আমার আগে অন্য কেউ ছুঁয়েছে বলে হিংসা হচ্ছিল। ঐশী ওসব বলার পরে মনে মনে পাগলের মতো কী ভেবেছি জানিস?”
” কী?”
” ভেবেছি যখন এসএসসি দিলি তখন কেনো বিয়ে করে নিলাম না তোকে! তাহলে আমি তোর প্রথম প্রেম হতাম। আমি ছাড়া অন্য কেউ তোর জীবনে থাকতো না।”
” প্রথম প্রেম হওয়ার চেয়ে শেষ প্রেম হওয়া বেটার। তাছাড়া তুমি আমার স্বামী, প্রেমিক নয় শুধু। ”
” তা অবশ্য ঠিক। সেবাযত্ন লাগবে না। বুকে আয়। বুকটা কেমন খালি খালি লাগে তোকে ছাড়া। ”
ইফতি কন্ঠকে টেনে শুইয়ে দিলো। তারপর কন্ঠকে জড়িয়ে শুয়ে কাঁধে নক ঘষতে লাগলো।
” সুড়সুড়ি লাগে কিন্তু। ”
” রাখ তোর সুড়সুড়ি! যেখানে হাত দিবো সেখানেই তোর সুড়সুড়ি। ”
” আচ্ছা শোনো তোমার সাথে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। যদিও কথাটা কাউকে বলা নিষিদ্ধ কিন্তু আমি একা একা এসব সামলাতে পারবো না। ”
” কী কথা বল।”
কন্ঠ আতংকিত দৃষ্টিতে ইফতির দিকে তাকিয়ে আছে। ইফতি ঘটনার সাংঘাতিকা বুঝতে না পারলেও গুরুতর কিছু হয়েছে সেটা কন্ঠর অভিব্যক্তি দেখেই আন্দাজ করতে পেরেছে।
” আমাকে ছুঁয়ে কথা দাও রাগারাগি করবা না এবং কথাটা কাউকে বলবেও না।”
” বেশ তাই হবে। এবার বল।”
কন্ঠ ভয়ে ভয়ে ইফতিকে পরী ও শুভ্রর সম্পর্কের বিষয় সবকথা বলে। কথার ফাঁকে ফাঁকে ইফতির মুখশ্রী পর্যবেক্ষণ করছে কন্ঠ। চোখমুখ কেমন শক্ত হয়ে গেছে। রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে চোখের মধ্যে। কন্ঠ চুপ করে গেলো। ইফতি যে নিজের মামাতো বোনের এরূপ পরিণতির কথা শুনে শান্ত থাকতে পারবে না সেটা আগেই কন্ঠ জানতো। তাই যখন ইফতির ক্রোধ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেলো,তখনই কন্ঠ হুট করে ইফতিকে জড়িয়ে ধরে তার ওষ্ঠ নিজের ওষ্ঠের দখলে নিয়ে নিলো। ইফতি ঠিক কয়েক সেকেন্ড পরেই শান্ত হয়ে গেলো। পুরুষ মানুষ তার নিজস্ব নারীকে বক্ষে জড়ালে বরফের ন্যায় শীতল হয়ে যায়।
কয়েকজন বিবাহিতা মহিলারা কলসি হাতে নদীর দিকে এগিয়ে চলছে। সাথে আছে বিনা ও কন্ঠও। হলুদ রঙের শাড়ি পরিহিত সকলেই। গ্রামাঞ্চলে খাল কিংবা নদীর জোয়ারের পানি কলসিতে করে নিয়ে গিয়ে সেই পানি দিয়ে মেয়ে অথবা ছেলেকে গায়ে হলুদ শেষে গোসল করায়। তাই দুপুরে গায়েহলুদের জন্য এই জোয়ারের পানি নিতে এসেছে সবাই। ইতিমধ্যে বেলা বারোটা বেজেছে। তাই সবাই দ্রুত পা চালাচ্ছে।
লোকজন সবাই বাইরে কাজকর্মে ব্যস্ত। ঘরে তাই লোকজনের আনাগোনা কম। ইফতি পরীকে নিজের ঘরে ডেকে পাঠিয়েছে মিনিট দুয়েক হবে। ঠিক তিন মিনিটের মধ্যে পরী উপস্থিত হলো ঘরে। ইফতির চেহারা দেখেই মনটা কেমন খচখচ করে উঠলো পরীর। ভাবি কোনোভাবে ওসব ভাইয়াকে বলে দিলো না তো? মনে মনে এসব ভাবছিল পরী। এমন সময় ইফতি মুখ খুললো,
” শুভ্রর সাথে যোগাযোগ হলো?”
পরী আঁতকে উঠলো। বুকটা ধুকপুক করছে। তারমানে কন্ঠ ভাবি সবকিছুই বলে দিলো। নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে পরীর। মেয়েটা ইফতির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
” কল দিচ্ছি কিন্তু বারবার নম্বর বন্ধ বলছে।”
” দেখ বাড়ি ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা কর। তারপর আমি দেখবো। এখন যা এখান থেকে। আমার মাথা সব সময় ঠিক থাকতেও পারে। ”
পরী আর এক মিনিটও দেরি না করে ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা নিজের ঘরে গেলো। বিছানায় বসে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো মেয়েটা। এমন সময় ফোনের রিংটোনের আওয়াজ কর্ণকুহরে ভেসে এলো। শুভ্র কল করেছে! পরী আর এক মিনিটও বিলম্ব না করে কল রিসিভ করে তড়িৎ গতিতে বললো,
” কেমন আছো তুমি? কই ছিলা! ”
” আর ভালো! পাহাড়ে নেটওয়ার্ক এতো স্লো বলার মতো না। বাসায় ফিরলাম। শুনলাম ইনায়ার বিয়ে? ”
” হুম আজকেই।”
” আমি আসবো?”
” এসো। তোমার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিলো।”
” বলো।”
” এভাবে না। বাসায় আসো তখন।”
” বেশ ঠিক আছে। ”
শুভ্র যান্ত্রিক যন্ত্রটি বালিশের পাশে রেখে লম্বা ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নিলো।
চলবে,
পোস্টের রিচের কী অবস্থা! লিখতে ইচ্ছে করে না। 💔
আগের পর্বের লিংক https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=404590202221931&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz
পরের পর্বের লিংক https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=405098055504479&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz