যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে #পর্ব_২৫ #তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

0
280

#যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে
#পর্ব_২৫
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

চেনা পরিবেশ, চেনা ঘর ছেড়ে ইনায়া চলে গেছে অজানা গন্তব্যে। বাড়ির পরিবেশ কেমন থমথমে হয়ে আছে। মারিয়া হাসান রাতে খায়নি। ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। পরীর বোনের জন্য মন খারাপ একটু থাকলেও শুভ্রর কথা ভাবতেই মনে অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করছে। মানুষটাকে নিয়ে সবাই কতো আজেবাজে কথা বলেছে তাকে। পরীর বান্ধবীরা তো এ-ও বলেছে, ” ওই ছেলে খেয়েদেয়ে ছেড়ে দিবে তোকে। আগেও কতজনকে ছাড়লো!” পরী সব শুনে মুখবন্ধ করে থাকতো। শুভ্র শুরু থেকেই প্লেবয় ছিলো। পরীর সাথে আলাপও বলতে গেলে অসভ্যতা করা থেকেই। কিন্তু কীভাবে যেনো কথা বলতে বলতে মেয়েটার মায়ায় ফেঁসে গেছিল শুভ্র। তাই পরীও শুভ্রর অতীত নিয়ে আর ভাবেনি। অতীতে কেউ খারাপ ছিল বলে বর্তমান ও ভবিষ্যতেও থাকবে এমন কোনো কথা নেই। ঘড়ির কাঁটায় রাত একটা বেজেছে। পরী ঘুমানোর চেষ্টা করছে। আগামীকাল সবকিছু খুলে বলবে কন্ঠকে। পরশু সকালে এমনিতেই সবাই যার যার বাড়ি চলে যাবে।

” তুমি এখনও জেগে আছো কেনো?”
এপাশ থেকে ওপাশ ফিরে শুয়েছে ইফতি। আর তাতেই ঘুম ভেঙে গেলো কন্ঠর।
” আমার ঘুম আসছে না।”
কন্ঠ ঘুম জড়ানো চোখে ইফতিকে জড়িয়ে ধরলো কন্ঠ। ইফতি যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেলো। প্রিয়তমাকে বুকে জড়িয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমের দেশে পাড়ি জমাল মল্লিক বাড়ির বড়ো ছেলে।

পরের দিন পরী কন্ঠকে শুভ্রর বলা সব কথাগুলো বললো। ইফতিও ছিল তবে আড়ালে। ছোটো বোনের কাছ থেকে বিয়ের আগে বাচ্চা হওয়া সংক্রান্ত কোনো কথা শোনা তার জন্য লজ্জার ভীষণ।
” তাহলে অপেক্ষা করো পরী। তবে অপেক্ষা করার ফল যেন তেতো না হয়।”
” তাহলে ভাবি কী করবো?”
” যদি সত্যি সে বিয়ে করতে চায় শীঘ্রই বিয়ের কথা নিয়ে তার পরিবার আসবে তোমার কাছে। আমরা তো চলে যাবো। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে যদি শুভ্র কোনো আপডেট না দেয় জানাবে।”
” ঠিক আছে ভাবি। ভাইয়াকে একটু সামলে রেখো।”
পরী ইতস্ততভাবে বললো কন্ঠকে। কন্ঠ পরীকে আস্বস্ত করলো।
” তুমি চিন্তা কইরো না। আশা করি সবকিছু ভালো হবে। পজিটিভ ভাবো। ”
ইফতি আড়াল থেকে সবকিছুই শুনলো। কেনো জানি ইফতির মনে হচ্ছে শুভ্র ছেলেটা তার কথা রাখবে।
পরের দিন মল্লিক বাড়ির সবাই শহরে ফিরে এলো। এই ক’দিন কারোরই তেমন ঘুমোনো হয়নি। তাই বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়েই ইফতি,সমুদ্র ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে। জাহাঙ্গীর মল্লিক বসার ঘরে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন। জোহরের আজান দিয়েছে খানিকক্ষণ আগে। বাড়ির তিন বউ মিলে রান্নাবান্না করছে। এমন সময় কলিংবেলের শব্দে নড়েচড়ে উঠলেন জাহাঙ্গীর মল্লিক। ধীর পায়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। অচেনা একজন যুবক দাঁড়িয়ে আছে দরজার বাইরে। সাজপোশাক মোটামুটি শহুরে বলা চলে।
” আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না! ”
জাহাঙ্গীর মল্লিক বিস্ময় মিশ্রিত কন্ঠে বললেন।
” আমি ইফতির বন্ধু আরিফ শেখ। মানে কলিগ,একই ভার্সিটিতে জব করি। ইফতি কি বাসায় আছে? ”
” ওহ আচ্ছা। হ্যাঁ আছে। ভেতরে আসুন।”
আরিফ জাহাঙ্গীর মল্লিকের পিছুপিছু নিজের ঘরে ঢুকলেন। হুট করে আরিফের আসার কথা শুনে ইফতি চমকাল। কন্ঠ মাত্রই ঘুম থেকে ডেকে তুললো তাকে।
” আরিফ? সে আবার কেনো এলো বল তো! ”
” আমি কীভাবে বলবো? যাও উঠে গিয়ে কথা বলো। এমনিতেই দুপুরের খাওয়াদাওয়ার সময় হয়ে গেছে। ”
” আচ্ছা। ”
স্থানীয় ইউনিভার্সিটি রেখে শহরের বাইরে অন্য কলেজে ইফতির বদলি হয়েছে। গ্রামের বাড়িতে থাকার জন্য নেটওয়ার্ক স্লো ছিল ইফতির। তাই কারো সাথে কথোপকথন হয়নি । আরিফও কল করেছিল কিন্তু পায়নি ইফতিকে। অগত্যা বাড়ি এসে খবরটা দিলো। সেই সাথে দুপুরে ইফতির সঙ্গে খাওয়াদাওয়াও সেড়ে নিলো।
বেলা শেষের দিকে। বসার ঘরে বসে আছেন শারমিন সুলতানা। এরমধ্যেই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে বিনা। দরজা খোলাই ছিল। শারমিন সুলতানা নড়েচড়ে বসেন। এতক্ষণ বিনার অপেক্ষায় ছিলেন যেন।
” এসো বিনা বসো।”
বিনা কন্ঠর মায়ের পাশেই বসলো।
” কেমন আছেন বড়ো মা? ”
” এইতো কাটছে দিন। তোমাদের খবর কী?”
” ভালো বড়ো মা। ”
” হঠাৎ এখন এখানে এলে? কিছু হয়েছে? ”
বিনার চোখমুখ দেখেই শারমিন বুঝতে পেরেছেন মেয়েটার মন আকাশে মেঘ জমেছে। যেকোনো মুহুর্তে বর্ষণ হতে পারে।
” তোমাকে দেখে আমার মায়ের কথা মনে পড়ে বড়ো মা। আমার মা থাকলেও নিশ্চয়ই তোমার মতো করেই যত্ন নিতো!”
গলা খাদে নামিয়ে কোমল কন্ঠে বললো বিনা। শারমিন সুলতানা স্নেহের হাত বুলিয়ে দিলেন বিনার মাথায়।
” বোকা মেয়ে! আমি কী তোমার মা না? বড়ো মা বলেই তো ডাকো।”
” হুম।”
ছলছল চোখে মাথা নেড়ে অস্ফুটে স্বরে বলে বিনা। শারমিন সুলতানা বিনাকে জড়িয়ে ধরেন। কন্ঠ হওয়ার পরে শারমিন সুলতানার ঘরে আরো একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু সেই মেয়ে বেশি দিন থাকেনি পৃথিবীতে। মাত্র চারমাস বয়সেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে সে। বিনাকে জড়িয়ে ধরে মৃত কন্যার কথা স্মরণ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন কন্ঠর মা।
” কষ্ট পেও না বিনা। তোমার তো এখন দু’টো মা। আজ থেকে আমিও তোমার মা। বড়ো মা নয় শুধু মা। কন্ঠ যেমন আমার মেয়ে তুমিও তেমনই আমার মেয়ে। একদম কান্না করবে না,ওকে?”
বিনা আবেগে আপ্লূত হয়ে গেছে। শারমিন সুলতানাকে জড়িয়ে ধরে বিনাও দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সৃষ্টিকর্তার নিকট শুকরিয়া আদায় করে।
” ঠিক আছে মা।”
” লক্ষ্মী মেয়ে আমার। চল দু’জনে মিলে ছাদে গিয়ে গাছে পানি দিবো। বাসায় কোনো কাজ আছে তোর?”
দুজনেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। বিনা একটু ভেবে বললো,
” এখন কোনো কাজ নেই। মাগরিবের নামাজের পরে নাস্তা তৈরি করবো।”
” তাহলে চল মা-মেয়ে গিয়ে বৃক্ষ বিলাস করি।”
বিনা খিলখিল করে হেসে উঠলো। শারমিন সুলতানাও আজ যেন নতুন করে বাঁচার অনুপ্রেরণা পাচ্ছে। পড়ন্ত বিকেলের রোদের ম্লান আলোতে মা-মেয়ে গাছের পরিচর্যা করলো কিছুক্ষণ।

” কী করবে এখন? আমাকে রেখে দূরের ভার্সিটিতে জয়েন হবে?”
চেয়ারে বসে থাকা ইফতির পাশে দাঁড়িয়ে কন্ঠ অভিমানী সুরে বললো কথাটা। ইফতি ল্যাপটপে কাজ করছে।
” দেখছি কী করা যায়। সেরকম হলে আমি আগে গিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করে এক সপ্তাহের মধ্যে তোমাকেও নিয়ে যাবো। আর ওখানেই ভর্তি করিয়ে দিবো।”
” কিন্তু সবাইকে ছেড়ে কীভাবে থাকবো?”
” দেখছি আশেপাশের অন্য কোনো শহরে ট্রান্সফার হতে পারি কি-না। আর যদি না পারি তাহলে হয় তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে নয়তো এখানে সবার সাথে থাকতে হবে। এখন থেকে ভাবো কী করবা।”
কন্ঠ চুপ করে রইলো। কী বলবে বুঝতে পারছে না। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে রাতের শহরের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। চারদিকে আলোর ঝলকানি। হঠাৎ পরীর কথা মনে পড়লো কন্ঠর। তিন দিন হয়ে গেলো। মেয়েটার সাথে একবার কল দিয়ে কথা বলতে হবে, মনে মনে ভাবলো কন্ঠ। ইফতি ল্যাপটপ বন্ধ করে কন্ঠকে পেছন থেকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করলো। কন্ঠর ভাবনার সুতো ছিঁড়ল ইফতির স্পর্শে।
” কাজ শেষ? ”
” না। আমার খুব প্রেম পাচ্ছে। ”
” আমার মোটেও পাচ্ছে না কিন্তু। ”
” কতদিন প্রেম করি না বল তো!”
” ওসব প্রেম না অসভ্যতা। ”
” তোর মাথা। প্রেম মানেই তো অসভ্যতা। ”
ইফতি ঘাড়ে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে উষ্ণতা ছড়ালো কন্ঠর প্রতিটি শিরা-উপশিরায়। কন্ঠ তবুও নড়লো না। কোনো রকম সাড়াও দিলো না। উল্টো ঠোঁট উল্টে বললো,
” এসবে কিছু যায় আসে না এখন। কারণ আমি ঘুমাবো। আগে ঘুম তারপর আ*কা*ম।”
ইফতি এক ঝটকায় কন্ঠকে নিজের দিকে ফেরালো। উদরে হাত বুলিয়ে থুতনিতে অধর ছুঁইয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। কন্ঠ একটু নড়েচড়ে উঠলো।
” দেখি কতক্ষণ স্থির থাকতে পারিস তুই। ”
” এই খবরদার! সুড়সুড়ি দিবা না তুমি। ”
” তোর দৃষ্টি নত কর কন্ঠ। ওই চাহনিতে আমার মাতাল মাতাল লাগে। ”
” সরো তো। আমি ঘুমাবো।”
ইফতি কন্ঠর কথা বিন্দুমাত্র না শুনে পাঁজা কোলা করে বিছানার দিকে এগোতে লাগলো। কন্ঠ ততক্ষণে অনেকগুলো আদুরে ঘুষি মেরেছে ইফতির বুকে।
চলবে,

পরবর্তী গল্প দ্রুত পেতে পেইজ ফলো দিয়ে ফেভারিট করে রাখুন। আমার লেখা ভালো লাগলে বইটই এপস থেকে রোমান্টিক ই-বুক দু’টি পড়তে পারেন।
https://link.boitoi.com.bd/TbfX🌼

পরের পর্ব https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=405817015432583&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here