#রণরঙ্গিণী_প্রেমরঙ্গা |৭০|
#ঊর্মি_আক্তার_ঊষা
ভূমির জ্ঞান ফেরার পর সে দেখল বিছানার এক কোণে গম্ভীর হয়ে বসে রয়েছে প্রলয়। ক্লান্ত দৃষ্টিতে পুরো ঘর একবার পর্যবেক্ষণ করল ভূমি। অচৈতন্য হবার আগে সে তো রান্নাঘরে কাজ করছিল। নিজেদের ঘরে কী করে এলো তার জানা নেই। এ ঘরে শুধু প্রলয় নয়— মাধুরীও রয়েছেন। প্রলয়ই হয়তো তাকে নিয়ে এসেছে। ভূমি একা একাই শোয়া থেকে উঠে বসল। প্রলয় তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। সন্ধ্যেবেলা নিজের কাজ ছেড়ে হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছে৷ তাকে মেহরাব শিকদারই কল করেছিলেন। ভূমির অবস্থা জানিয়ে বলেছিলেন তাড়াতাড়ি যেন বাড়ি ফিরে আসে! এবার প্রলয় তার মায়ের উদ্দেশ্যে বলল‚
“ভূমির সঙ্গে আমার আলাদা করে কিছু কথা বলার আছে। মা তুমি এখন যাও।”
মাধুরী আগ বাড়িয়ে কোনো কথা না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়াল প্রলয়৷ হাত থেকে ঘড়িটা খুলতে খুলতে ভূমিকে জিজ্ঞেস করল‚
“এই বাচ্চাটা কার? তুমি কী লুকোচ্ছ আমার কাছ থেকে?”
ভূমি কিছু বলতেই নিচ্ছিল কিন্তু প্রলয়ের ধমকে চমকে উঠল। তার এহেন রাগ দেখে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল ভূমির। এত রাগ করতে প্রলয়কে আগে দেখেনি৷ এই একটা স্বাভাবিক বিষয় নিয়ে লোকটার এমন ব্যবহার খুবই অবাক করল তাকে। সে প্রলয়ের রাগ আর রিভলবারকে খুবই ভয় পায়৷ প্রলয় আবারও জিজ্ঞেস করল‚
“তোমাকে আমি একটা প্রশ্ন করেছি৷ বাচ্চাটা কার?”
কম্পিত কণ্ঠে ভূমি উত্তরটা দিচ্ছিল‚ “বাচ্চাটা…!”
এরই মাঝে মাধুরী ঘরের ভিতর প্রবেশ করলেন। ভূমিকে তার পুরো কথাটা বলতে দিলেন না তিনি। এতক্ষণ দরজার কাছেই দাঁড়িয়েছিলেন। ভূমি যেই না কিছু বলতে নিবে তার আগেই তিনি ঘরে ভেতর প্রবেশ করলেন। আর ভূমির কথাটা অপূর্ণই রয়ে গেল। এ সুযোগটাই লুফে নিলেন মাধুরী। আগ বাড়িয়ে দুজনের কথার মাঝে টিপ্পনী কে’টে বললেন‚
“কার না কার বাচ্চা পেটে ধরে আমার ছেলেকে ফুসলাচ্ছে। স্বভাব তো পুরো মায়ের মতই পেয়েছ। ন’ষ্টা মেয়ে।”
মাধুরীর ব্যবহারে আজ অবাক করছে ভূমিকে৷ এমনিতে এই মহিলা যে তাকে দেখতে পারে না এটা সে প্রথম থেকেই জানে। মাধুরীর এভাবে মিথ্যা অপবাদ দেওয়াতে সে ভীষণই কষ্ট পেয়েছে। নিজের কান্নাকে সংবরণ করে মাধুরীকে বলল‚
“সদ্য হারিয়ে ফেলা মাকে আমি আপনার মাঝে সবসময় খুঁজে বেড়াই। কিন্তু আফসোস আমার জন্য আপনার মনে একটুও মমতা নেই। যা আছে তা শুধুমাত্রই ঘৃণা। আচ্ছা মা— আমাকে কী একটুও ভালোবাসা যায় না?”
“কোনো জারজ সন্তানকে আমি ভালোবাসতে পারব না।”
মাধুরীর মুখে এমন কথায় ক্ষ’তবিক্ষ’ত হলো তরুণীর মন। এতটা কষ্ট দিয়ে কেউ কারো মুখের উপর কথা বলতে পারে? প্রত্যেকের অনাদরে বেড়ে ওঠা মেয়েটার মনে বিতৃষ্ণা জন্মাল। ভূমি অবাক চোখে তাকাল প্রলয়ের দিকে। মাধুরী এত খারাপ কথা শোনাচ্ছে— কই আজ তো সে কোনো প্রতিবাদ করছে না! দিব্যি নির্বিকার ভঙ্গিতে শুনছে। সে-ও কী তার মায়ের মতই চিন্তাধারা পোষণ করছে? প্রশ্ন জাগল ভুমির মনে৷ কম্পিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল‚
“আপনি কিছু বলছেন না কেন?”
প্রলয়ের মাথায় অনেককিছুই ঘুরপাক খাচ্ছে৷ ভূমি তো প্রতিদিনই পিল খেত৷ আর আসল কথা হচ্ছে‚ মেহরাব শিকদার তাকে জানিয়েছিলেন ভূমি দুই সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। এই কথাটা শোনার পর খুবই অবাক হয় প্রলয়৷ এর আগে তো ভূমি নিয়ম করে প্রতিদিনই পিল খেয়েছে৷ সে নিজে থেকেই খোঁজ নিয়েছে৷ ভূমি অবশ্যই তাকে মিথ্যে বলবে না। তাহলে এই বাচ্চা? সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে তার৷ এসব কিছু নিজের মাঝে দাবিয়ে রাখতে না পেরে প্রলয় বলল‚
“মা ভুল কী বলেছে? তোমার থেকে আর কীই-বা আশা করা যায়?”
কয়েকটা বাক্য নিমিষেই ভূমির কোমল হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিল। প্রলয় তাকে অবিশ্বাস করছে ভাবতেই নিশ্বাস আটকে এলো যেন! ভালোবাসার মানুষ অবিশ্বাস করলে যে— পুরো পৃথিবীটাই মিথ্যে হয়ে যায়। নেত্র যুগল অশ্রুপ্লুত হলো। ঝাপসা চোখে প্রলয়কে দেখতে লাগল ভূমি। মানুষটাকে খুব অচেনা মনে হচ্ছে। তাদের ভালোবাসায় হয়তো খাদ রয়েই গিয়েছিল৷ ঘন ঘন আঁখিপল্লব ঝাপ্টে অশ্রুকণা শুষে নিয়ে ভূমি বলল‚
“আমরা যা দেখতে পাই— সবসময় সেটা সত্যি নাও হতে পারে। যেখানে আমার নিজের বা…!” কথাটা পুরোপুরি না বলেই থেমে গেল ভূমি। একটু সময় নিয়ে আবারও বলল‚
“পরের বাড়ির মেয়ে পরেরই হয়— তারা কখনো আপন হতে পারে না। শুরু থেকে কম অবহেলা‚ লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়নি আমাকে। মানুষের জীবনটা যে কতটা দুর্বিষহ হতে পারে আমি তা আমার এই ছোটো জীবনেই উপলব্ধি করেছি। এ সংসারে এসে শাশুড়ী মায়ের ভালোবাসা কেমন হয় আমার জানাই হলো না! ভালোবাসার কাঙালি হয়ে সবকিছু মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি অহর্নিশ। অথচ বিনিময়ে কিছুই পেলাম না। আজ আমার সমস্ত পিছুটান শেষ। যে ভালোবাসায় বিশ্বাস ভরসা নেই সেখানে আর একমুহূর্ত না। যা হারানোর আমি হারিয়ে ফেলেছি৷ না আমার কিছু চাওয়ার আছে আর না কিছু পাওয়ার আছে৷ আমার সন্তানকে আমি একাই মানুষ করতে পারব। কারো প্রয়োজন নেই আমার। যে নারী প্রচণ্ড অভিমান নিয়ে হারিয়ে যায়— তাকে আর সহজে ফিরে পাওয়া যায় না।”
ভূমি এতকিছু বলার পরও প্রলয় টু শব্দটি পর্যন্ত করল না৷ ভূমির শেষ কথাটা শুনে ধুকপুক করতে থাকা হৃদয়টা ধক করে উঠল। বাঁ চোখটা আজ সকাল থেকেই লাফাচ্ছে। খারাপ কিছু ঘটবে না তো? সে তো এ সমস্ত কুসংস্কারে বিশ্বাস করে না। তবে আজ কী হলো? সে কী কোনো ভুল করছে? মুখে যেন আজ কুলুপ এঁটেছে সে। মুখ দিয়ে কথে বেরই হচ্ছে না। ভূমি আস্তে করে প্রলয় এবং তার পরিবারের দেওয়া সমস্ত গহনা শরীর থেকে খুলে ফেলল৷ আজকের পর থেকে তার জীবনে যে স্বল্প পরিমাণ সুখ ছিল সেটাও শেষ। গায়ের ওড়নাটা মাথায় সুন্দর করে পেচিয়ে প্রলয়ের উদ্দেশে বলল‚
“ভালো থাকবেন এমপি মশাই!”
ধীর পায়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল ভূমি। এ বাড়িতে আর একমুহূর্ত থাকবে না সে। এদিকে পুরোপুরি ঘোরের মাঝে আছে প্রলয়। কী থেকে কী বলে ফেলেছে সে নিজেও বুঝতে পারেনি। ইদানীং রাজনীতির প্রেসারটা তার উপর একটু বেশিই। পাথরের ন্যায় বিছানায় বসেই রইল৷ ভূমিকে আটকানোর কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছে।
মালঞ্চ নীড় থেকে বেরিয়ে গেল ভূমি৷ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে৷ মৃদু বাতাসে শরীর শিরশির করে উঠছে৷ নিস্পৃহ বোকাচণ্ডী একটু একটু করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ কোথায় যাওয়া উচিত তার জানা নেই! না তার কোথাও যাওয়ার আছে আর না এ শহরে তার কেউ আপন আছে! বিশাল অম্বর আজ গহীন আঁধারিয়ায় মত্ত। তারও হয়তো ভূমির জন্য মন খারাপ তাইতো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি একটু একটু করে মুষলধারায় রূপ নিচ্ছে। ভূমি সেই আকাশ পানে তাকিয়ে ভাবল‚
“ও পৃথিবী! আমি কী করে বলি— আমার বাবা আমাকে গণিকালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিল? কোনো সন্তানকে কী তার বাবা এমন এক নিষিদ্ধ স্থানে ফেলে আসতে পারে? এতটা নিষ্ঠুর কেউ কী করে হতে পারে? নিজের সন্তানের ভালোর জন্য বাবারা নাকি সবকিছুই করতে পারে৷ তবে আমার ক্ষেত্রে কেন এত ভিন্নতা? আমিও তো বাবার স্নেহ ভালোবাসা পেতে চেয়েছিলাম।”
ঘণ্টা খানেক পর…
হন্তদন্ত হয়ে ঘণ্টা খানেকের মাঝেই অর্পণ বাড়ি ফিরে এলো। ভূমির চলে যাওয়া নিয়ে সব কথাই বলেছে পূর্ণতা পুষ্পিতা। ফিরোজা নিজেও বাড়ি ফিরে এসেছেন। ভূমির জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে উনার। এই রাতে মেয়েটা কোথায় যাবে! শহরের কিছুই তো সে ভালো করে চেনে না৷ রাস্তায় যদি কোনো বিপদ হয়? বাড়ি ফেরার পর মাধুরী আর প্রলয়কে কয়েক দফা কথাও শুনিয়ে দিয়েছেন ফিরোজা৷ এতদিন তিনি প্রলয়কে দায়িত্বসম্পন্ন বুদ্ধিমান ছেলে ভেবে এসেছেন। কিন্তু সেই প্রলয়ই আজ তার জীবনের সবচেয়ে বড়ো বোকামিটা করেছে ভূমিকে অবিশ্বাস করে৷ ভূমির এ বাড়ি থেকে চলে যাওয়া নিয়ে আর কেউ খুশি না হলেও মেহরাব শিকদার আর মাধুরী তো ভীষণই খুশি৷ অর্পণ তার বাবাকে একবার পর্যবেক্ষণ করল। সবচেয়ে বেশি রাগ তো হচ্ছে প্রলয়ের উপর৷ কাউকে কিছু বলতে না পেরে অর্পণ তার ঘরে চলে গেল৷ বোনকে ফিরে পেয়েও ধরে রাখতে পারল না সে। কেন যে আজ বের হয়েছিল! বাড়িতে থাকলে অন্তত ভূমির পাশে থাকতে পারত। অর্পণ খেয়াল করল তার ড্রেসিং টেবিলের উপর পেপার ওয়েটে নিচে একটা কাগজ চাপা পড়ে আছে৷ কিছুটা সন্দেহ হওয়াতে সে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে কাগজটাকে হাতে নিল৷ সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা‚
“উনার পাশে ছায়ার মতো থেক ভাইয়া৷”
~ভূমি!
মানে মেয়েটা যাওয়ার আগেও প্রলয়ের কথাই ভাবছিল৷ অর্পণের মাথা এবার ওলট-পালট হয়ে গেল৷ নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে আবারও প্রলয়ের ঘরে গেল কিন্তু ঘর ফাঁকা। এরপর অর্পণ বৈঠকখানায় চলে গেল৷ সেখানেই সবাই উপস্থিত। আর কেউ ভূমির খোঁজ না করতে গেলেও সে অন্তত যাবে৷ বৈঠকখানায় গিয়ে সেই কাগজটা প্রলয়ের সামনে তুলে ধরল অর্পণ। এরপর বলতে লাগল‚
“যাওয়ার আগে ভূমির অপূর্ণ কথাগুলো তুমি শুনেছিলে ভাই? একপাক্ষিক বিবেচনা করে মেয়েটাকে এভাবে অবিশ্বাস করতে পারলে তুমি? জেঠিমা তো শুরু থেকে ভূমিকে পছন্দ করে না। আজ তুমিও সেই তালেই এগিয়ে গেলে! কী করে পারলে তুমি এমনটা করতে? খুব বড়ো ভুল করলে ভাই। এই ভুলের দায় তোমাকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।”
সবার প্রতি রাগ বাড়ছে তড়তড় করে৷ বিশেষ করে মেহরাব শিকদারের উপর। ভূমিকে এ বাড়ি থেকে তাড়ানো আর তাকে অবিশ্বাস করানোর পেছনে কলকাঠি তো এই লোকেই নাড়ছে৷ বাবার প্রতি সুপ্ত রাগ আর দাবিয়ে রাখতে পারল না সে। সবার সামনে চেঁচিয়ে বলল‚
“ভূমির যদি কিছু হয় তাহলে আমি আপনাকে কোনোদিন ক্ষমা করব না। আর হ্যাঁ আমি ভুলে যাব আপনি আমার জন্মদাতা পিতা। কথাটা মাথায় রাখবেন আশাকরি।”
এই বলে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না বড়ো বড়ো পা ফেলে মালঞ্চ নীড় হতে বেরিয়ে গেল। সঙ্গে করে বাইকের চাবি নিয়ে এসেছিল৷ কোথায় খুঁজবে সে তার বোনকে? ভূমিকে নিয়ে চিন্তা ক্রমশ বাড়তে শুরু করল৷ এদিকে অর্পণের ব্যবহারে অবাক হলেন মেহরাব শিকদার। প্রলয়কে তখন তিনি মিথ্যে বলেছিলেন। তিনি তো জানেন ভূমি আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল৷ তবুও তিনি ইচ্ছে করে প্রলয়ের কাছে মিথ্যে বলেছেন যাতে করে ভূমিকে সে অবিশ্বাস করতে পারে৷
❑
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি এখন মুষলধারার রূপ নিয়েছে৷ ল্যাম্পপোস্টের বাতিতে এঁটে থাকা ঝিঝি পোকা গুলো উড়া বন্ধ করে দিয়েছে। রাতের শহরটা নিরিবিলি। আশেপাশের দোকানপাট গুলো বন্ধ। রাস্তা দিয়ে একাকী হাঁটতে ভূমির খানিকটা ভয় করছে। তবুও সে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে‚ নাম না জানা এক গন্তব্যে। হঠাৎ করেই সামনে একটা জিপ গাড়ি এসে থামল। হুট করে সামনে চলে আসায় কিছুটা ঘাবড়ে গেল ভূমি। নিজেকে সামলে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। সেই গাড়ি থেকে নামল চারজন ছেলে। তাদের হাতে লাঠি। ভূমি বুঝতে পারল না‚ ছেলেগুলো কেন তার পথরোধ করে দাঁড়িয়েছে! বোকাসোকা স্বরে জিজ্ঞেস করল‚
“আপনার আমার পথরোধ করে দাঁড়িয়েছেন কেন? সরে যান সামনে থেকে। আমাকে যেতে দিন।”
“তোমাকে যেতে দেওয়ার জন্য তো আসিনি মামনি। তোমার দেখভাল করার দায়িত্ব পড়েছে আমাদের উপর।”
ঘাবড়ে গেল ভূমি। এটা মেহরাব শিকদারের নতুন কোনো পরিকল্পনা নয় তো? তাকে বাড়ি থেকে বের করার পেছনে ওই জঘন্য লোকটার হাত তো নিশ্চয়ই আছে। কম্পিত কণ্ঠে ভূমি জিজ্ঞেস করল‚ “মানে?”
“তোমাকে আজ আমরা পরপারে পাঠানোর ব্যবস্থা করব।”
এবার বেশ ভয় পেতে শুরু করল ভূমি। নিজের জন্য ভয় করছে না তার। কিন্তু তার জীবনের সঙ্গে যে আরেকটা নিষ্পাপ জীবন জড়িয়ে রয়েছে। লোকগুলো এক পা দু পা করে ভূমির দিকে এগিয়ে আসছে৷ বিস্তীর্ণ অন্তরিক্ষ হতে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষিত হচ্ছে৷ ভূমি সমান তালে পিছতে শুরু করল। পালানোর আর রাস্তা নেই। ভূমি লোকগুলোর সামনে হাত জোড় করে বলতে লাগল‚
“আল্লাহর দোহাই লাগে— আমাকে মারবেন না৷ আমি বাঁচতে চাই৷ আমার অনাগত সন্তানের জন্ম দিতে চাই৷ আমাকে বাঁচতে দিন— আমাকে মা হবার সাধ থেকে বঞ্চিত করবেন না।”
ভূমির কথাটা কেউ-ই শুনল না বরঞ্চ লাঠি দিয়ে বেধড়ক মা’রতে শুরু করল। গলা কা’টা মুরগীর মতো ছটফট করছে ভূমি। অথচ সাহায্যের জন্য কেউ নেই আশেপাশে। ভূমির আর্তনাদে লোকগুলো যেন পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে৷ দূর্বল নেত্রপল্লব মুদে যাবার আগে প্রলয়ের মুখটা ভেসে উঠল। ভূমির চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে সহস্র নোনা জল। শরীরটা ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে আসছে। ইঞ্চি পরিমাণ নড়ে ওঠার শক্তিটুকু অবশিষ্ট নেই৷ চোখ বন্ধ করার আগ মুহূর্তে ভূমি দুটো কথাই আওড়াল‚
“এই ভূমি পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে। তার অস্তিত্ব আর কোথাও থাকবে না— কোত্থাও না!”
মায়ের আদরের পদ্মিনী সে‚
বাবার অবহেলিত রাজকন্যা;
প্রত্যেকরই চোখের বালি‚
স্বামীর নির্মলা ভূমিকন্যা!
[ঊর্মি আক্তার ঊষা]
অসমাপ্ত!…..
–
–
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ এখানেই সমাপ্ত। সবাইকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা। ইনশাআল্লাহ কাল হতে তৃতীয় পরিচ্ছেদ আসবে। আসসালামু আলাইকুম।