#মন_শহরে_বসন্ত_হাওয়া |১৮|
#কে_এ_শিমলা ®
ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করলো রণয়ী। সাথে অবশ্যই আছে দুর্জয়। নামাজ শেষে রণয়ী নিচে নেমে এলো। দুর্জয় মর্নিং ওয়াকে যাওয়ার জন্য তৈরি হলো। এই সপ্তাহ খানেক ধরে জিমে ও যাওয়া হচ্ছে না। আজ যাবে! হাতে ঘড়ি পড়ে ফোন নিয়ে সেও নিচে এলো। রণয়ী মাত্রই কিচেন থেকে বের হয়েছিল। দুর্জয় কে বের হতে দেখে প্রশ্ন করতে গিয়েও আটকে গেল সে। একটু অপেক্ষা করলে হতো না! তারপর ভাবলো থাক। অভ্যাস নেই। জোর করা ঠিক না।”
দুর্জয় একপলক তাকে দেখে বের হয়ে গেল বড় দরজা পেরিয়ে। রণয়ী ডাইন ইন টেবিলে বসে এক গ্লাস পানি পান করলো। উপর থেকে গুনগুন শব্দ আসতেই সে তাকায় সেদিকে। এক সিঁড়ি এক সিঁড়ি করে নিচে নামছে জুনায়না। এখনো উপরেই আছে। রণয়ীর ভয় হলো! দ্রুত টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে তাকে কোলে নিল। রণয়ী কে দেখেই ঠোঁট মেলে হাসলো। দুই গালে দুটো গর্ত হলো, মনে হচ্ছে কেউ যেন এক চিমটি মাংস তুলে নিয়েছে সেখান থেকে। রণয়ী তাঁর নরম কোমল গালে অষ্ট ছোঁয়ায়। মেয়েটা বড্ড আদুরে!”
নিচে নামতেই উপর থেকে জুমায়রা হন্তদন্ত হয়ে এসে রেলিংয়ের পাশে দাঁড়ায়। জুনায়না বলে ডেকে নিচে তাকাতেই তাকে রণয়ীর কোলে দেখে একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে। রণয়ী বললো, ‘আমার কাছে আছে আপু।”
“হুম! মাত্র বেলকনিতে গিয়েছি রেখে। আর বের হয়ে চলে এসেছে। আম্মুর ঘরে গিয়েছে ভাবলাম। এখন দেখি আম্মু একা বেলকনিতে।”
চলে গেল জুমায়রা ঘরে। ব্যাগ ট্যাগ গুছাতে ব্যস্থ সে। আজ চলে যাবে বাসায়। শ্বাশুড়ি মা ও চলে আসবেন।”
নিচে নামলেন জয়নব ইমাম। সোফার উপর বই রেখে কিচেনের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখলেন রণয়ী বের হচ্ছে জুনায়না সমেত। উনাকে দেখেই রণয়ী সালাম দিল মৃদু হেসে।”
জয়নব ইমাম সালামের জবাব দিলেন। বললেন, ‘চা তৈরি করলে নতুন বৌ?”
‘জ্বী ফুপি! হয়ে গেছে।”
আচ্ছা! তোমার হাতের চা একদিন পান করে তো অভ্যাস হয়ে গেল। চলে গেলে ওখানে কী করবো বলো তো। যাক যতদিন আছি ততোদিনই খাই তবে। নানুভাই আসো নানুর কোলে আসো। তোমার মামানি চা নিয়ে আসুক।”
না ছাড়বো না। বলে গলা পেঁচিয়ে ধরলো আরো শক্ত করে জুনায়না। জয়নব ইমাম হেসে গিয়ে সোফায় বসলেন। রণয়ী তাহেরা কে বললো চা কাপে করে নিয়ে আসতে। সেও গিয়ে বসলো সোফায়। জুমায়রা এবং সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন মা মেয়ে একসাথে নেমে এলেন। গল্পে গল্পে চা শেষ হলো।”
তাহেরা এবং সহিদা নাস্তা তৈরি করলেন। রণয়ী একটি ফাইল দেখে নিল। ল্যাপটের কিছু অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করলো। কাল রাতে ফয়সালা হয়েই গিয়েছে সে অফিস যেতে পারে নিয়মিত। একজন কর্মিক মানুষ কে শুধু শুধু বাঁধা দেওয়ার কোনো মানে নেই। কারোরই কোনো সমস্যা নেই তাঁর কাজ করা নিয়ে। সে যদি পারে স্বামীর সাথে ব্যবসায় সামলাতে তাহলে করুক।”
সকালের নাস্তার মিনিট কয়েক পূর্বে ফিরে এলো দুর্জয়। সবাই একসাথে বসে নাস্তা সেরে নিলেন। নিজেদের ঘরে ফিরে আসলো দু’জন। নিজেদের মতো করে তৈরি হতে লাগলো। কারো মুখেই কোনো কথা নেই। কে বলবে এই ঘরে দু’জন মানুষ! তাও তারা স্বামী-স্ত্রী। রণয়ীর পূর্বে তৈরী হলো দুর্জয়। হাতে ঘড়ি পড়ে আতর লাগায় কোটে। হাতে লাগিয়ে নাকের কাছে নিয়ে সুঘ্রাণ নিল একবার। এতো ভালো লাগে এটা! রণয়ীর দেওয়া এইটা। সেদিন বিয়ের রাতে দিল।”
রণয়ী বেলকনি থেকে আসতেই তাকে একঝলক দেখলো দুর্জয়। বোরকায় একটু বেশিই সুন্দর লাগছে না তাকে? হুম। গোলাপী রঙের বোরকা ওড়না স্কাপ করেছে। দুর্জয় বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। রণয়ী নিজের হাতে ঘড়ি পড়লো। জুতো পায়ে দিল। হ্যান্ডব্যাগ এবং একটি ফাইল হাতে নিয়ে নিজেকে শেষবারের মতো আয়নায় দেখে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো।”
ভালোই দেখাচ্ছে। কাল রাতেই কথা হয়েছিল। শাড়ি নয় বোরকা চলবে বাহিরে গেলে। রণয়ীর কোনো সমস্যা নেই। আগে শাড়ি চলতো। এখন পুরো বোরকায় আবৃত হলো। ‘মানুষের চাওয়া কত সুন্দর! নিজের ব্যক্তিগত ফুল কেউ দেখুক, তা চায় না।”
সৈয়দা জোহরা ইয়াসমিন এবং জয়নব ইমামসহ জুমায়রার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো রণয়ী। গাড়ির পাশে আসতেই এমদাদ সাহেব ডোর খুলে দিলেন। ফাইল রাখার স্থান হলো! দুর্জয়ের ফাইল গুলোর সাথে।”
যথা সময়ে গাড়ি এসে পৌঁছালো অফিসে। গাড়ি থেকে নামলো প্রথমে রণয়ী। বাহিরে যারা ছিল তারা তাকিয়ে দেখলো। কিছু সংখ্যক মেয়ের ঈর্ষা হলো রণয়ীর পরিবর্তন! এই জায়গা সব দেখে। দুর্জয় নামতে যাবে তখনই কল এলো ফোনে। গুরুত্বপূর্ণ কল। তাই রিসিভ করলো। নেমে রণয়ী কে হাত দিয়ে ইশারা করলো। অর্থাৎ সে চাইলে যেতে পারে। রণয়ীর দাঁড়িয়ে থাকতে খানিকটা অস্বস্তি হলো। সবাই দেখছে তাকে। এগিয়ে যেতে লাগলো সে। কয়েক কদমের ব্যবধানে এগিয়ে আসতো লাগলো দুর্জয় ও। লিফটের কাছে আসতেই মুখোমুখি হলো রণয়ী আবিরের। রণয়ী পেছন ফিরে তাকায়। দুর্জয় কে দেখা গেল না। রণয়ী দুটো ঢোক গিললো। আবির কেমন ক্রোধান্বিত চোখে তাকিয়ে আছে। এক হাতে ফোন ধরেছে। না জানি কী তো কী বলে।”
রণয়ী নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলো। আবির ফোন পকেটে পুরে এগিয়ে এলো রণয়ীর কাছে। হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে বললো, ‘খুব তো বলেছিলে বিয়ে করবে না। আর এখন?”
‘আপনি বোধহয় জানেন না জন্ম! মৃত্যু! বিয়ে এই তিনটি বিষয় স্বয়ং বিধাতার হাতে। কপালে দ্বিতীয় বিয়ে দ্বিতীয় সংসার ছিল। তাই বিয়েটা হয়েই গেল।”
‘আমি খারাপ ছিলাম? আমায় তো কখনো ফিরেও দেখোনি। ধরে নেই সব মেয়ে বড়লোকই খুঁজে?”
‘আপনি ভুল ধারণা মনে পোষলে সেটা একান্তই আপনার বিষয়। আপনাকে আমি কেন? কোনো মেয়েই যেন স্বামী হিসেবে না চায়। আর যাই হোক নিষ্পাপ বাচ্চা কখনো ভালো বাবা পাবে না। একটা মেয়ে একজন ভালো সুচরিত্রবান বাদ নেই চরিত্রবান স্বামী পাবে না। আমি উনার টাকা দেখে বিয়েতে মত দেইনি। তিনি মানুষ হিসেবে খুব ভালো। যতটা ভালো হলে চোখ বন্ধ করে বিয়ের মতো সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। ভরসা করা যায়। যার তাকানোতে মুগ্ধতা পাওয়া যায়। আপনার মতো কামনা নয়। আর আমি বলেছিলাম যদি কখনো বিয়ে করতেই হয় আপনাকে নয়। এতে মৃত্যু চেয়ে নেবো। এখন পথ ছাড়ুন আমার। নূন্যতম লজ্জা থাকলে আর সামনে আসবেন না।”
‘খুব বেশি কথা বলো তুমি। তোমাকে আমি ছাড়বো না।”
‘ছাড়াছাড়ি পরে! আগে তুই আমার অফিস ছাড়। তোর মতো বেঈমান কে আমার অফিসে রাখা অসম্ভব। আগে যা করেছিস বাদ দিলাম। এখন তুই আমার স্ত্রীকে কটু কথা শুনাচ্ছিস। এক্ষুনি বের হবি তুই।”
ফোন কান থেকে নামিয়ে রাগ মিশ্রিত চোখে তাকিয়ে কথাটুকু বললো দুর্জয়। রণয়ী স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। আবির কাচুমাচু হয়ে অনুনয় করে বললো, ‘প্লিজ স্যার! এবারের মতো ক্ষমা করুন। আর কখনো ওর দিকে মানে ম্যামের দিকে তাকাবো না।”
‘একদমই না। সেই সুযোগই আর দেবো না তোকে। অফিসে থাকলে তুই চোখ তুলে তাকাবি না কী নিশ্চয়তা তাঁর? তোকে বিশ্বাস করা আর গিরগিটি বিশ্বাস করা সমান কথা। রং বদলাবিই। অফিসের ত্রিসীমানায় যদি আর দেখি তোকে? তাহলে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়বো।”
আবির মাথা নিচু করে চলে গেল সামনে থেকে। রণয়ী দুর্জয়ের দিকে একপলক তাকিয়ে লিফটে উঠে গেল। নিজেকে সামলে দুর্জয় নিজেও উঠলো। কেবিনে প্রবেশ করার পূর্বেই পেছন থেকে টেনে ধরলো রণয়ী কে অনুরিমা, রোজা, নয়না, চৈতিরা। আজ অনুরিমার আসার কথা নয়। তবুও এই বিশেষ দিনে সে আসলো। রণয়ী তাদের সাথে কথা শেষ করে নিজের কেবিনে প্রবেশ করতে গিয়ে দেখলো দরজা বন্ধ। পেছন ফিরে কাউকে জিজ্ঞেস করবে? তখনই চৈতি তাঁর চোখ বেঁধে দিল নরম কাপড়ের সাহায্যে।”
রণয়ী মৃদু চেঁচিয়ে বললো,’আরে কী করছো? চোখ বাঁধলে কেন? খুলো।”
‘এখনই না ডিয়ার। জাস্ট পাঁচ মিনিট। এবার আমাদের সাথে সামনের দিকে চলো দেখি।”
‘কোথায় নিয়ে যাবে?”
‘গেলেই দেখবে।”
দুর্জয়ের কেবিনের সামনে এসে থামলো সবাই। রোজা রণয়ীর হাতে কাঁচি তুলে দিল। অনুরিমা লাল ফিতায় হাত ধরিয়ে দিলে বললো, ‘কাটো।”
রণয়ী কথা না বাড়িয়ে ফিতা কাটলে হাত তালির আওয়াজ ভেসে এলো। ভেতরে প্রবেশ করে চোখ খুলে দিল রণয়ীর। একসাথে কয়েকজন বলে উঠলো, ‘সারপ্রাইজ।”
বিস্মিত চোখে তাকিয়ে দেখলো রণয়ী। দুর্জয়ের কেবিন সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। একটা টেবিল। সেখানে নতুন ল্যাপটপ। কয়েকটা ফাইল। কলম! আরো অনেক কিছু। রণয়ী প্রথমেই দুর্জয়ের দিকে তাকায়। টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে হেলান দিয়ে। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। রণয়ীর জিজ্ঞাসু দৃষ্টি। চৈতি বললো,’কথা স্যারের। আয়োজন আমাদের। আপনার জন্য শুভকামনা মেডাম। কলিগ থেকে বস!”
মিষ্টি নিয়ে হাজির আবু সাঈদ। রণয়ী মিনমিনে করে বললো, ‘আমি তো আমার আগের জায়গাতেই ঠিক ছিলাম।”
দুর্জয় নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বললো, ‘এখানে আরো বেশি কাজে মনোযোগী হতে পারবেন।”
নয়না অবুঝের মতো ফিসফিস করে বললো, ‘স্বামী স্ত্রী একসাথে, আর কাজে মনোযোগী! হাউ ইজ পসিবল!”
‘এরকম দু’জন থাকলে সবই পসিবল নয়না। সব পসিবল! দুজনই গুমরোমুখো না?”
হুম এটা অবশ্য ঠিক। তবে সে যাই হোক! রণয়ীর সাথে তো আগের মতো কথা বলা যাবে না।”
‘এরকম হবে না! রণয়ী আগের মতোই থাকবে দেখে নিও। হয়তো আগের মতো কথা বলতে পারবে না। আর সম্ভব ও না। না সে বের হবে! আর না আমরা যেতে পারবো যখন তখন। তবে একবার নিশ্চয় আমাদের কাছে আসবে।”
রোজার কথায় নয়না বললো, ‘তাহলেই হয়।”
এক এক করে সবাই বেরিয়ে গেল কেবিন ছেড়ে। রণয়ী কে অবশ্য তাঁর জায়গায় বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে সবাই। রণয়ী প্রথমে কী করবে তা নিয়ে খানিকটা দ্বিধায় পড়লো। অতঃপর ফাইল একটা কাছে টেনে নিয়ে দেখলো। নিজের কাজে মশগুল সে দেখলো ও না! ‘কেউ একজন তাকে গভীর চোখে দেখছে।”
~~~~~~~~••••••
ঘুমের মধ্যে কানে গানের তীব্র আওয়াজ পৌঁছাতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল নূরার। কাল রাতে এমনিতেই ঘুমোতে অনেক বেশি রাত হয়েছে। এখন আবার ঘুমে ব্যঘাত। রেগেমেগে বিছানা ছেড়ে নামলো নূরা। তলপেটে খানিকটা ব্যথা অনুভব করলো। তবুও দমলো না। হাঁটার মধ্যে পায়ে নোমানের শার্ট লাগলো। তা বিছানায় ছুড়ে মারলো তুলে।”
ধুপধাপ করে হেঁটে বাহিরে আসতেই দেখলো উড়াধুরা নেচে যাচ্ছে নোমানসহ তাঁর বন্ধুরা। কাল রাতের পার্টি কী কম হয়েছিল? এখন সকালে আবার শুরু করেছে এরা। একেকটা কে দেখে মনে হচ্ছে নিজের মধ্যেই নেই। নূরা স্পিকারের কাছে গিয়ে মিউজিক অফ করে দিল। মিউজিক অফ হতেই সবাই নূরার দিকে তাকায়।”
নোমান গ্লাসে চুমুক বসিয়ে কাছে আসলো নূরার। গমগমে আওয়াজে বললো, ‘কী হলো? মিউজিক অফ করলে কেন? সমস্যা কী তোমার?”
‘সমস্যা আমার? বলো সমস্যা কী তোমার? এরকম সাত সকালে মিউজিক কেন? ঘুমোচ্ছি দেখতে পাচ্ছ না? আবার বলছো সমস্যা কী?”
‘তো! কী করবো? সমস্যা তো তোমারই। এখানে পার্টি চলে পার্টি! আর মিউজিক! ড্যান্স ছাড়া কী পার্টি হয়? মিউজিক ছাড়া কী ড্যান্স হয়? তাই মিউজিক অন করো।”
‘নোমান! আমি ঘুমোচ্ছি। এরকম উচ্চ শব্দে আমার ঘুমে সমস্যা হচ্ছে। আর তুমি বলছো পার্টি! কাল রাতে পার্টি কম হয়েছে? আমার থেকে! আমার ঘুমের থেকে এখন পার্টি তোমার কাছে বড়?”
‘হ্যাঁ বড়। এখন মিউজিক ছেড়ে যাও এখান থেকে। না হলে আসো নাচো! গাও ফুর্তি করো। তুমি না থাকলে ঠিক জমছে না। আর যদি না আসতে চাও তো ঘরে গিয়ে কানে তুলো গুঁজে ঘুমাও।”
‘নোমান!”
‘এই চিৎকার করবে না একদম! যা বলছি তা করো নয়তো, ওই যে দেখ বড় করে দরজা দেওয়া হয়েছে। তোমার মতো তিনজন বের হতে পারবে। এখন তুমি একাই বেরিয়ে যাও। আমাদের একদম ডিস্টার্ব করবে না। চিল্লাচিল্লি তো একদমই না।”
‘নোমান! আমরা চলে যাচ্ছি। এখানে আসাই ভুল হয়েছে। এই চলো চলো।”
‘না কেউ যাবে না। দাঁড়াও তোমরা।”
নূরা বিস্মিত চোখে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে। তাঁর আগেই নোমান তাঁর মুখ চেপে ধরলো ঘুরিয়ে ধরে। একহাতে মিউজিক অন করে ঘরে নিয়ে এলো নূরা কে। নূরা সরাতে চাইলে পারলো না। নোমান একটা কাপড় নিয়ে হাত বেঁধে দিল নূরার। রুমাল বের করে মুখ বাঁধলো। অতঃপর থুতনি চেপে ধরে বললো, ‘তুই আমার কথা শুনলি না ওদের সামনে? অপমান করলি। এখন ঘুমো জন্মের মতো। বেয়াদব মেয়ে কোথাকার এবার দেখি কীভাবে গান বন্ধ করিস আর করার কথা বলিস।”
নূরা উমম উমম শব্দ করে কিছু বলতে চাইলে পারলো না। নোমান ও শুনলো না। মোবাইলে গান প্লে করে হেডফোন পড়িয়ে দিল। সাউন্ড দিল অনেক। বললো, ‘নে! আমাদের মিউজিক বন্ধ করেছিলি না। এবার এটা বন্ধ কর। দেখি কীভাবে পারিস? অতঃপর ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে সে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। যাওয়ার আগে দরজা বন্ধ করে গেল।”
নূরার মনে হলো কান ফেটে যাবে গানের শব্দে। এ কোণ নোমান কে দেখছে সে। এক রাতের বিনিময়ে সে বদলে গেল। কাল রাতেও তো কত কী বললো। আর আজ!”
না না হয়তো নেশায় মত্ত হয়ে এমনটা করছে। ঠিক হয়ে যাবে! এমনটা ভেবে নিজেকে সান্তনা দিলো সে। কিন্তু কানে এমন তীব্র শব্দ সহ্য করতে পারছে না। এদিকে চোখ লেগে আসছে। আশেপাশে কোনো ঘর ও নেই যে কেউ এসে বলবে গান চলে কেন? শহরের বাহিরে নির্জন একটা জায়গায় একটাই বাড়ি। নোমানের কোনো বন্ধুর ফার্ম হাউস। তাই যা ইচ্ছা তাই করছে সবাই।”
নূরা আর না পেরে কাঁধের সাহায্যে অনেক চেষ্টার পর ঠেলেঠুলে খানিকটা সরাতে পারলো হেডফোন। এক কান থেকে! তাও পুরোপুরি সরলো না। অপর কানেরটা জায়গা থেকে সরলোই না। এরকম করতে গিয়ে হাতে ব্যথা হয়ে গেল তাঁর। এতোটা শক্ত করে বেঁধেছে নোমান। চোখে জল চলে এলো নূরার। করছে কী নোমান তাঁর সাথে? সহ্য হলো না আর নূরার। চোখে ঘুম! কানে এতো শব্দ! হাতে পায়ে সর্বাঙ্গের ব্যথায় ফ্লোরে পড়ে গেল সে বসা থেকে। জ্ঞান হারালো বোধহয়!”
কিয়ৎক্ষণ পর নোমান এসে হেডফোন খুলে দিল। কিন্তু নূরা কে আর বিছানায় তুলে দিল না। আর না তো হাতের এবং মুখের বাঁধন খুলে দিল। ওভাবেই পড়ে রইলো নূরা। একবার যদি বাহিরে আসতো। তাহলে দেখতো নোমানের নতুন পরিচয়। মেয়েদের সাথে মেশা! এক নতুন নোমান কে আবিষ্কার করতো সে। বুঝতো কাকে বিশ্বাস করে কাকে ঠকিয়ে এলো।”
চলবে!