যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে #পর্ব_১৬ #তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

0
305

#যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে
#পর্ব_১৬
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

(মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

” হ্যাঁ। মাথাটা কেমন ঘুরে গেলো। তুমি একটু ধরে নিয়ে চলো আমাকে। ”
” আজীবন এই হাত ধরে থাকবো কথা দিলাম। চল এবার। ”
কন্ঠ কিছু বললো না। মাঝে মধ্যে মানুষ কথা বলার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলে। কন্ঠরও এখন সেই অবস্থা।

পারিবারিক সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন কলেজে ক্লাস করাতে পারেনি ইফতি মল্লিক । মজিদ মল্লিক পরলোক গমন করেছেন পনেরো দিন হলো। পরিস্থিতি আগের চেয়ে একটু স্থিতিশীল হয়েছে। সময় সব ক্ষত ঘুচিয়ে দিতে সক্ষম। সেটা যতো বড়ো আঘাত হোকনা কেনো। আজকে কলেজে এসেছে ইফতি। ক্লাসে অথৈর সাথে দেখা হয়েছে। অথৈ আর আগের মতো ইফতির জন্য পাগলামি করে না।

” তাড়াতাড়ি করো বিনা। খিদে পেয়েছে কতক্ষণ হলো। ”
বিনা রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে এসে ডাইনিং টেবিলে রাখতে ব্যস্ত। একা হাতে সবগুলো একসাথে আনা সম্ভব না। তাই সবগুলো পদের তরকারি আনতে সময় লাগছে বলে সমুদ্রর হাঁকডাক।
” এখানে বসে বসে হুকুম না করে বিনার হাতে হাতে কাজ করলে তো পারতিস।”
শায়লা রান্নাঘরের দিকে এগোতে এগোতে বললেন। গোসল সেড়ে নামাজ পড়ে ঘর থেকে বের হলেন উনি। কন্ঠরা এখন নিজেদের বাসায় থাকে। তবে তিনবেলা খোঁজ খবর রাখে জাহাঙ্গীর মল্লিকের পরিবার। বিনা সমুদ্রর প্রিয় তরকারি টমেটো দিয়ে চিংড়ি মাছ ভাজি প্লেটে দিলো। এতক্ষণ ভাত নিয়ে বসে ছিল ছেলেটা।
” আহ শান্তি। এবার তুমিও বসো খেতে। ”
” আপনি খান। আমি বরং মায়ের সাথে খেয়ে নিবো।”
” তুমি সমুদ্রর সাথেই খাও বিনা। আমি তোমার বাবা এলে খাবো।”
শায়লা মল্লিক নিজের ঘরে চলে গেলেন। বিনাও বসলো চেয়ারে খাওয়ার উদ্দেশ্যে। সমুদ্র চোখ টিপ্পনী দিয়ে বললো,
” দেখলে তোমার শ্বশুর, শাশুড়ীর মধ্যে এখানো কতো ভালোবাসা? ”
” হুম দেখলাম তো।”
” তুমি ভীষণ আনরোমান্টিক একটা বউ। ”
” আপনি রোমান্টিক হলেই হবে। দু’জন একরকম হলে সমস্যা। ”
” তোমার মুন্ডু। খেয়ে ঘরে চলো তারপর বোঝাবো কেমন সমস্যা। ”
বিনার গলায় ভাত আঁটকে গেলো প্রায়। কাশি উঠে গেছে। সমুদ্র পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো বিনার দিকে।
” আরে পানি নাও। অন্যমনস্ক হয়ে খেতে হয় না। ”
বিনা পানি পান করে লম্বা শ্বাস নিলো বারকয়েক। চোখের কোণে জল টলমল করছে। সমুদ্র হাসলো বিনার অবস্থা দেখে। এতো লাজুক মেয়েটা। ঠিক যেন লজ্জাবতী বউ!
বিছানায় চুপচাপ বসে আছে কন্ঠ। শারমিন সুলতানা দাঁড়িয়ে জানালার পাশে। দুপুরের তপ্ত রোদে মানুষজন নিজেদের মতো চলাফেরা করছে রাস্তা দিয়ে। সেদিকে আনমনে তাকিয়ে আছেন তিনি। রান্না হয়নি ঘরে। দুজনের কেউ রান্না করলে খায় না তেমন। তাই আজকে আর রান্না করা হয়নি। ঘরের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসে শারমিনের। এই ঘরেই কত-শত স্মৃতি আছে দুজনের। মানুষ চলে যায় কিন্তু স্মৃতিগুলো তো যায় না মস্তিষ্ক থেকে। কন্ঠ ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো ইফতির নম্বর থেকে কল এসেছে। ধরবে না ধরবে না করেও রিসিভ করলো কল।
” দুপুরে খাওয়া হয়েছে তোদের? ”
” নাহ।”
ইফতি নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে ফোনালাপের দিকে মনোযোগ দেয়।
” বেলা তিনটে বাজলো! এখন খাবি না তো কখন খাবি?”
” কারোরই খেতে ইচ্ছে করে না। তাই আজ রান্না হয়নি। রাতে রান্না করবো।”
” আমি আসছি।”
কন্ঠ ভাবলেশহীনভাবে কল কেটে পাশে রেখে দেয়। ইফতি প্রায় বাসার কাছাকাছি চলে এসেছে। ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে মিটিং ছিলো বলেই আজ দেরি হলো। বাসায় যেহেতু রান্না হয়নি তাই বাইরে থেকে খাবার নিয়ে যাওয়ার সিন্ধান্ত নিলো ইফতি। এদিক-সেদিক তাকাতেই একটা রেস্তোরাঁ নজরে এলো। কন্ঠ ভাত ছাড়া অন্য খাবার তেমন পছন্দ করে না। তাই ভাত,মাংস, ডিম আর সবজি প্যাকেট করে নিলো। বড়ো মা আর নিজের জন্য নিলো গরুর মাংশের বিরিয়ানি। ইফতি বিরিয়ানি পছন্দ করে খুব। কন্ঠর মা-ও বিরিয়ানি ভালোবাসেন কিন্তু এখন খাবে কি-না সে বিষয় সন্দিহান ইফতি। তবুও চেষ্টা তো করতে হবে!
” কে কল করেছিল? ইফতি?”
জানালার পাশ থেকে বিছানায় এসে বসলেন শারমিন সুলতানা।
“হ্যাঁ। ”
কন্ঠর স্বাভাবিক উত্তর। নিজে না খেলেও মেয়ের জন্য কলিজা পুড়ছে কন্ঠর মায়ের। পরপর দু’টো আঘাত পেলো মেয়েটা। শরীর, মন সবকিছুর উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
” অনলাইনে খাবার অর্ডার করতে দে কন্ঠ। এভাবে না খেয়ে থাকলে তোর শরীর খারাপ হয়ে যাবে। ”
” আমার শরীরটা শরীর আর তোমারটা কি লোহা? তোমার শরীর খারাপ হবে না? ”
” আমি আর কয়দিন বাঁচ…”
শারমিন সুলতানা কথা শেষ করার আগেই কন্ঠ জড়িয়ে ধরে মা’কে। ফুঁপিয়ে কেঁদে দুজনেই।
” বাবা চলে গেলো তুমিও এসব বলো? আমি কার কাছে থাকবো? আমার কী হবে! ”
কথাগুলো বলে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো কন্ঠ। শারমিন সুলতানা নিজেও নিঃশব্দে কাঁদছেন। এমন সময় কলিংবেলের শব্দ ভেসে এলো কর্ণকুহরে। আঁখি যুগল ওড়না দিয়ে মুছে কন্ঠ দরজা খুলে দিলো। কন্ঠর চেহারার দিকে আজকাল তাকাতে পারে না ইফতি। কোনো প্রকার বাক্যালাপ ছাড়া ইফতি ভেতরে ঢুকে সোফায় বসে। কন্ঠ দরজা আঁটকে শারমিন সুলতানাকে গিয়ে ইফতি আসার খবর দিলো। যতক্ষণে মা, মেয়ে বসার ঘরে ইফতির কাছে এলো ততক্ষণে ইফতি রান্নাঘরে গিয়ে খাবারগুলো প্লেটে পরিবেশন করে ডাইনিং টেবিলে রেখেছে। মা,মেয়ে তো অবাক ইফতির কর্মকান্ডে।
” ইফতি এগুলো তোকে কে করতে বললো! কন্ঠ আর আমি করতাম। ”
” কেউ বলেনি। আমিও তো পারি। খাবার পরিবেশন করা আছে। তোমরা বসো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
ইফতি রান্নাঘরের পাশের ওয়াশরুম থেকেই হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। কন্ঠকে বসিয়েছে শারমিন সুলতানা। কিন্তুু নিজে বসেননি চেয়ারে।
” কী হলো বড়ো মা? তুমি বসলে না কেনো? ”
ইফতি চেয়ারে বসতে বসতে বললো বড়ো মা’কে।
” তোরা দু’জন খেয়ে নে। আমার খেতে ইচ্ছে করে না। ”
” কী বলো! তোমার জন্য বিরিয়ানি আনলাম, একসাথে খাবো বলে।”
” তুই দুই প্লেট একাই শেষ করতে পারবি। শুরু কর। ”
” বড়ো মা শুনাম করলে না-কি পেটুক বললে?”
কন্ঠর হুট করে মুচকি হাসলো। ইফতির কথাটা হাসির মতোই ছিলো।
” অল্প খাচ্ছি। তোরাও শুরু কর খাওয়া। ”

দিন চলে যাচ্ছে। কলেজ,বাসা আর কন্ঠকে সামলাতে সামলাতে হিমসিম খেতে হয় ইফতিকে। কন্ঠ নিজের প্রতি ভীষণ উদাসীন। কন্ঠর মা মেয়ের জন্য আগের থেকে একটু স্বাভাবিক আচরণ করেন। স্বামী হারিয়ে এখন আবার সন্তান হারাতে চাননা শারমিন। তারমধ্যে এলাকার লোকজন অনেক কটু কথা বলে কন্ঠকে নিয়ে। অপয়া, অলক্ষ্মী আরকিছুই বলে। বিয়ের দিনে বাবাকে খেয়েছে। এরকম আরো কথাবার্তা শোনে মল্লিক পরিবার। শায়লা মল্লিকে তো প্রতিবেশীরা বলে, ” ওই মেয়ের সাথে বিয়ে দিলে ইফতিকেও খেয়ে ফেলবে।”
শায়লা কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন না। তবুও সন্তানের বিষয় বলেই এসব কথায় মনটা খচখচ করে প্রায়। আবার কন্ঠদের বাড়ি পুরুষ বলতে কেউ নেই এখন। সমাজের অহেতুক কথাবার্তা বন্ধ করতে হলেও দ্রুত ইফতি ও কন্ঠর বিয়ে দেওয়া দরকার।
” কী ব্যাপার শায়লা? অন্যমনস্ক হয়ে কী ভাবছো এতো?”
রাতের খাওয়াদাওয়া শেষে ঘরে এসে স্ত্রী’কে ভাবুক থাকতে দেখে প্রশ্ন করলেন জাহাঙ্গীর মল্লিক। শায়লা স্বামীর দিকে দৃষ্টিপাত করলেন।
” ভাবছি মাস তিনেক তো হলো ভাইয়া গত হলেন। ইফতি প্রায় কন্ঠদের বাসায় থাকে, যাওয়া-আসা করে। লোকজন তো এসব ভালো চোখে নেয় না। ফলশ্রুতিতে আমাকে বিভিন্ন কথা শুনতে হয়। ”
” তাতে কী করার আছে? লোকের মুখ আছে বলবে। তুমি কথা এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিবে। ঝামেলা শেষ! ”
বিছানায় শুয়ে বললেন ইফতির বাবা।
” সেটা বিষয় নয়। ওদের বিয়েটা এখন ঘরোয়া ভাবে দিয়ে দিলে ভালো হতো। পরে না হয় সব স্বাভাবিক হলে অনুষ্ঠান করতে। ”
” একদম মনের কথা বললে শায়লা। আমিও ক’দিন ধরে এটাই ভাবছিলাম। ইফতিকে বলবো কন্ঠর সাথে কথা বলতে। আর তুমি বরং ভাবির সাথে কথা বলো।”
” বেশ। তাহলে কালকেই কথা বলবো ভাবির সাথে। ”
” ঠিক আছে। এখন আর না ভেবে শুয়ে পড়ো।”
শায়লা ঘরের বাতি নিভিয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলেন। সারাদিন কাজকর্ম শেষে রাজ্যের ঘুম ভর করে উনার চোখে। বিনা যদিও রান্নাবান্নায় সাহায্য করে তবুও শায়লা মল্লিক বসে থাকার মানুষ নন।

” কাহিনি কী? আজকে এরকম দূরে সরে শুয়ে আছো কেনো?”
বিনার উদরে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো সমুদ্র। বিনা সোজা হয়ে শুয়ে আছে,পাশে সমুদ্র। এমনিতে বিনা ঘা ঘেঁষে শোয় ক’দিন ধরে। আজকে ব্যতিক্রম বলেই কৌতূহল জন্মেছে সমুদ্রর মনে।
” কিছু হয়নি। আপনি একটু কয়েকদিন দূরে দূরে থাকেন। ওসব করতে আসবেন না।”
” সোজা করে বললেই হয় সমস্যা হয়েছে। আমি কি অবুঝ নাকি? বাদ দাও বুকে এসো শো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিবো।”
বিনা সমুদ্রর কথায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো যেনো। বিয়ে হওয়ার পর থেকে সমুদ্রর সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিল না। এখন স্বাভাবিক সম্পর্কে আছে। তাই এ সময় যদি কাছাকাছি যেতে চায় সমুদ্র সেই ভয়ে এই দূরত্ব গড়েছিল। এই ভয়ের কারণ বিনার গ্রামের বিপান দা। বিপান একটা বিশ্রী মন মানসিকতার পুরুষ। উনার স্ত্রী প্রায় এসব নিয়ে কথা বলতে আসতো বিনার নানির কাছে। সেখান থেকেই বিনার এসবকিছু জানা। বিনা সমুদ্রর বুকে মাথা রেখে চুপ করে রইলো। সমুদ্র বিনার মাথায় ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
চলবে,

রিচেক দেওয়া হয়নি। এখনও ঢাকায় আছি। তারপর মেলায় গেছিলাম। সবমিলিয়ে ঝামেলায় আছি। বাইশ ফেব্রুয়ারিতে আবার পরীক্ষা! অতএব ভুলভাল লিখলেও আমার দোষ নেই।
আগের পর্ব https://www.facebook.com/100080128645410/posts/396833099664308/
পরের পর্বের লিংক https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=399214116092873&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here