#যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে
#পর্ব_২২_প্রথম_অংশ
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
” এবার আর অন্য ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া হচ্ছে না তোর। আমার ভার্সিটিতে ভর্তি হবে। ”
কন্ঠ ইফতির গলায় টা-ই বেঁধে দিচ্ছে। ইফতি কন্ঠর কপালের উপর পড়ে থাকা এলোমেলো চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে বললো।
” কেনো? পরিচিত জায়গায় মাস্টার্স করলে সমস্যা কী?”
” সমস্যা নেই। আমার চোখের সামনে রাখতে চাচ্ছিলাম। ”
” অতিরিক্ত কোনো কিছু ভালো না। সারাক্ষণ তো চোখের সামনেই থাকি তাই না? ”
কন্ঠ ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ওয়ালেট আর ঘড়ি এনে দিলো ইফতির হাতে।
” ইদানীং কেমন জানি হয়ে যাচ্ছিস তুই। ”
” কেমন শুনি?”
” এই যে কেমন খিটমিট করিস।”
” তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। ”
ইফতির হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো। আসলেই দেরি হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত রেডি হয়ে নিলো ইফতি। যতক্ষণ ইফতি বাইরে বেরুনোর জন্য তৈরি হয় ততক্ষণ কন্ঠ ঘরেই থাকে। তাই এখনো দাঁড়িয়ে আছে। ইফতি একেবারে তৈরি হয়ে কন্ঠকে গভীরভাবে আলিঙ্গন করে। বক্ষে মাথা চেপে ধরে দাঁড়ায় মিনিট পাঁচেক। এই সময়টুকু কন্ঠ শুধু ইফতির হৃৎস্পন্দন শুনতে মনোযোগী থাকে। প্রতিটা স্পন্দনে যেনো “কন্ঠ ভালোবাসি ” শুনতে পায় মেয়েটা।
” আসছি। সাবধানে থাকিস।”
ইফতি কন্ঠকে ছেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। কন্ঠও গেলো সাথে সাথে। বসার ঘরে এসে থামলো কন্ঠ। ইফতি ততক্ষণে বেরিয়ে গেছে। শায়লা ও শারমিন দু’জনেই সোফায় বসে কথাবার্তা বলছে। বিনা এরমধ্যে ডাইনিং টেবিলে নাস্তা পরিবেশন করে ফেলেছে। ইফতির আজ তাড়াতাড়ি বেরোতে হয়েছে বলে বাসায় নাস্তা করেনি।
” কী ব্যাপার বলো তো? সকাল সকাল আমার দুই মা গোল মিটিং করছে কী নিয়ে? ”
দুই মা’কে উদ্দেশ্য করে শুধালো কন্ঠ। শায়লা মল্লিক মুচকি হেসে বললেন,
” ইনায়ার বিয়ে তিন দিন পর। আমাদের সবাইকে যেতে হবে। তাই কী কী উপহার নিবো সেসব আলোচনা করছিলাম। ইফতিকে বলবো রাতে। ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে তো।”
কন্ঠর বেশ খুশি খুশি লাগছে। ইনায়া ইফতির মামাতো বোন। কন্ঠর বিয়েতে এসেছিল মামী ও তার দুই মেয়ে ইনায়া আর পরী।
” বাহ! ভালোই হবে। বিয়ের পর থেকে বিনারও কখনো কোনো আত্মীয়স্বজনের বাসায় যাওয়া হয়নি। আর না তো একসাথে পরিবারসহ কোথায় গিয়েছি আমরা!”
” হ্যাঁ। ইফতির মা এমন করে ধরলো কন্ঠ আমিও আর না করতে পারছি না।”
শারমিন সুলতানা ইতস্ততভাবে বললেন। কন্ঠ মায়ের পাশের সোফায় বসে মুচকি হেসে বলে,
” তুমি যাবা না কেন? কতকাল বাড়ির মধ্যে আছো হিসাব আছে? সবাই মিলে চলো মজাই হবে। তাছাড়া গ্রামাঞ্চলে বিয়ে বাড়ি মানে এক্সট্রা আনন্দ। ”
” তোমরা সবাই নাস্তা করতে এসো। বেলা তো ন’টা পেরিয়ে গেলো! ”
বিনার হাঁকডাকে কন্ঠ,শায়লা ও শারমিন নাস্তা করতে গেলো। সমুদ্র আগেভাগে এসে খেতে শুরু করেছে। গ্রাজুয়েশন শেষ হয়েছে বলে ছোটখাটো একটা পার্টটাইম চাকরি খুঁজছে সমুদ্র। বাসা থেকে কোনো চাপ না থাকলেও নিজের স্ত্রী’র সমস্ত খরচ নিজের টাকায় করতে চায় সমুদ্র। তাছাড়া এখন তিন জায়গায় টিউশনি করায় সমুদ্র। সবমিলিয়ে ভালোই চলছে বেকার জীবন।
” সমুদ্র শোন,বিনা আর কন্ঠকে নিয়ে বিকেলে শপিং করতে যাবি তুই।”
মায়ের কথায় মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো সমুদ্র। বিনা আগবাড়িয়ে বললো,
” আমার নতুন পোশাক লাগবে না আম্মা। কন্ঠ আপাকে নিয়ে যাক বরং। ”
” পাকা মেয়ে কম কথা বলো। তোমার মামাতো ননদীর বিয়েতে যাবো আমরা। বিয়ে উপলক্ষে সবাই নতুন পোশাক কিনবে। আর তুমি পুরনো পোশাক পরে যাবা সেটা হয়?”
” আচ্ছা আম্মা আমি তো বিয়ের কথা জানতামই না!”
বিনা জিহ্বায় কামড় দিয়ে বললো। বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার কথা শুনে যেন মনটা চনমনে হয়ে উঠলো বিনারও।
” বেশ তাহলে বিকেলে দু’জন যেও আমার সঙ্গে। ”
সমুদ্র কন্ঠর দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে বললো। বিনা মুচকি হাসলো শুধু জবাবে।
হিজলতলী গ্রাম। ঠিক গ্রাম বলা চলে না। আজকাল গ্রামেও শহুরে ছোঁয়া লেগেছে। সবকিছুতে আধুনিকতার স্পর্শ পেয়েছে। এই গ্রামের প্রতিটি ঘরে এখন বিদ্যুৎ আছে। ঘরে ঘরে আছে গ্যাসের চুলোসহ টিভি, ফ্রিজ সবকিছু। তবে এগুলো শুধু উচ্চবিত্ত পরিবারের জন্য প্রযোজ্য। নিম্নবর্গের মানুষের জন্য বিদ্যুৎ পর্যন্ত ঠিক আছে। আফতাফ হাসান গ্রামের অন্যতম মান্যগণ্য ব্যক্তি। দুদিন পরে তার বড়ো মেয়ে ইনায়ার বিয়ে। পাত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। সবে চাকরিতে যোগ দিয়েছে। ইনায়া স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে কিছুদিন আগে। বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে অনেক আত্মীয়স্বজনের আনাগোনা শুরু হয়েছে। গ্রামের লোকজন তো আছেই! ইনায়ার ছোটো বোন পরী দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। দুপুরের কড়া রোদের তেজ ক্রমশ ম্লান হয়ে এসেছে। ঘড়িতে সময় চারটা ছুঁইছুঁই। ইনায়া পরীকে সারা বাড়িতে খুঁজে না পেয়ে পুকুরপাড়ে খুঁজতে এসেছে। কারণ পরীর মন খারাপ থাকলে পুকুরের ঘাটে একা একা বসে থাকে। বড়ো বোনের বিয়ে হওয়াতে যেমন আনন্দ লাগছে তোমনই বিষাদের সুর বাজছে পরীর হৃদয়মাঝে। শানবাঁধানো ঘাটের দক্ষিণ পাশে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে পরী। পেছন থেকে ছোটো বোনটিকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো ইনায়া। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সেদিকে।
” কী রে এখানে একা একা বসে কার কথা ভাবছিস?”
বোনের কন্ঠে পেছন ফিরে তাকায় পরী। ইনায়া ঠোঁট টিপে হাসছে। পরীকে ক্ষ্যাপানোর জন্যই তার এই হাসি। দু’বোনের মধ্যে প্রায় মারামারি লাগে। দুই বোন ঠিক দুই বান্ধবীর মতোই থাকে।
” তোমার হবু বর মানে আমার দুলাভাইয়ের কথা ভাবছি।”
” কেন? আমি থাকতে তোকে কে বললো তার কথা ভাবতে? ”
ইনায়াও পরীর পাশে বসলো। পরী পানি থেকে পা উঠিয়ে ইনায়ার মুখোমুখি বসে ফিক করে হাসলো।
” ভাবছি কারণ তোমার মতো খবিশ মার্কা মেয়ে তার কপালে জুটছে। বেচারা দুলাভাই আমার। ”
ইনায়া গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে দৃষ্টিপাত করলো। মিনিট পাঁচেক পরে পরীর দিকে তাকিয়ে দুষ্ট হাসি মুখে বললো,
” দেখবো তোর জন্য কোন ভালো মানুষ মার্কা আসে হুহ্। আমি নাকি খবিশ!”
পরীর চোখমুখ কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। গভীর দুশ্চিন্তায় ডুবে গেলো মনে হয়। ইনায়া পরীকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে শুধালো,
” হয়েছে হয়েছে আর ভাবতে হবে না। চল চল বাড়ির ভেতরে চল।”
পরী মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বোনের সাথে বাড়ির দিকে অগ্রসর হলো।
আকাশে মেঘ জমেছে। উত্তরের ঠান্ডা বাতাসে প্রকৃত কেমন শীতল হয়ে গেছে। বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানালা ভালো করে আটকে দিয়ে বিছানায় এসে বসলো ইফতি। কন্ঠ মশারী টানানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। ইফতির মশারী ভালো লাগে না কিন্তু অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সচেতন কন্ঠর জন্য সেই ভালো না লাগার সাথেই বসবাস করতে হয় ইফতিকে। কন্ঠ সবকিছু ঠিকঠাক করে বাতি নিভিয়ে বিছানায় অন্য দিকে ফিরে শুয়েছে। একটু শীত শীত অনুভব করায় ইফতি পায়ের দিকে থাকা কম্বলটা দু’জনের গায়ে টেনে দিলো। কন্ঠর বিনুনি করা চুলগুলো একপাশে রেখে ঘাড়ে আঙুল দিয়ে আঁকিবুঁকি শুরু করলো ইফতি। কেমন অদ্ভুত অনুভূত হচ্ছে কন্ঠর। বেশিক্ষণ স্থির থাকতে পারলো না সে। ইফতির দিকে ফিরে শুয়ে ভ্রু নাচিয়ে শুধালো,
” এসব কী হচ্ছে? ”
” নাম লিখলাম তোর আর আমার। ”
” কেনো ঘরে কি লেখার সামগ্রী নেই? ”
” তোর মাথা। এটা রোমান্স গাধী।”
” খবরদার তুমি আমাকে এসব বলবা না।”
” বাইরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, মনে হয় এখুনি বৃষ্টি হবে। ”
ইফতি কন্ঠর চোখে চোখ রেখে বললো। প্রসঙ্গ সম্পূর্ণ পাল্টে অন্য কথায় গেলো সে। কন্ঠ কানখাড়া করে শুনলো সত্যি বাইরে জোরে বাতাস বইছে সাথে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
” হ্যাঁ। আবহাওয়া ভালো যাচ্ছে না। ইনায়ার বিয়ের সময় এরকম টিপটিপ বৃষ্টি হলে আনন্দ হবে না। বাইরে বেরোতে না পারলে কি কিচ্ছু হয় বলো?”
” কী হবে? ”
ইফতি একটা আঙুল কন্ঠর কপালে ছুঁইয়ে ধীরে ধীরে নাক,ঠোঁট, থুতনিতে থামাল। কন্ঠর কথায় যেন তার কোনো খেয়াল নেই। তার সমস্ত খেয়াল এখন কন্ঠতে।
” কিচ্ছু না। চুপচাপ ঘুমাও। বৃষ্টি শুরু হয়েছে, আরামসে ঘুমাবো।”
কন্ঠ ইফতির আঙুল সরিয়ে দিয়ে কম্বল মুড়ি দিলো। ইফতি ঠোঁট কামড়ে মুচকি হাসলো। মেয়েটা যেনো আস্ত একটা নেশা। শখের নারী তার প্রিয়তমের নিকট আফিমের থেকেও ভয়ানক নেশা।
চলবে,
কেমন হচ্ছে জানাবেন। আপনাদের মন্তব্য আমার লেখার অনুপ্রেরণা। চাইলে আমার দ্বিতীয় বইটি সংগ্রহ করতে পারেন ঢাকা বইমেলার স্টল নং ২০৭-২০৮ থেকে অথবা অর্ডার করতে নক করুন ইনবক্সে।
আগের পর্ব https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=403056059042012&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz
পরের পর্বের লিংক https://www.facebook.com/100080128645410/posts/404590202221931/