শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_১৭

0
263

#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৭

বাংলাদেশে এখন রাতের শেষাংশ। ভোরের দিকও বলা যায়। আর্শি মাত্রই ইটালিতে সে যেই অ্যাপার্টমেন্টে থাকে সেখানে পৌঁছালো। এই সময় ফোন না করে সে তার বাবা, ভাই ও শ্রাবণের মেসেঞ্জারে মেসেজ করে জানিয়ে দিলো। তার নিজেরও দীর্ঘ জার্নির কারণে খুব ক্লান্ত লাগছে বিধায় রুমমেটদের সাথে হাই-হ্যালো করে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো।

সকালে একটু দেরি করেই ঘুম ভাঙে আর্শির। ঘুম থেকে উঠেই বেডের কাছে মোনালিসাকে কফির মগ হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসে আর্শি। বলে,

“গুড মর্নিং, লিসা।”
মোনালিসাও হালকা হেসে বলে,
“গুড মর্নিং, আশি! লিসেন, ড্রিংক দিস কফি এন্ড গেট রেডি কুইকলি। ইউ আর অলরেডি লেইট। উই হ্যাভ ক্লাস এট টেন এম। গো ফার্স্ট।”

আর্শি পূর্ব দিকের দেয়ালে ঘড়িটার দিকে চেয়ে কপালে হাত দিয়ে বলে,
“ও ইয়াহ! আই টোটালি ফরগেট! জাস্ট ওয়েট কাপল অফ মিনিটস।”

আর্শি জলদি করে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে ফোনের ইন্টারনেট কানেকশন অন করতেই ফোন কেঁপে ওঠে। ভাইয়ের, বাবার, আরিয়ার আইডি থেকে একবার করে কল। শ্রাবণের আইডি থেকে দুইবার কল। মোনালিসা বলে,

“কুইকলি এটেন্ড দ্যা ফোন কল দেন প্লিজ গেট রেডি ফার্স্ট।”

অতঃপর মোনালিসা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর্শি প্রথমে কাকে কল করবে এই নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলো। কয়েক সেকেন্ড চিন্তা-ভাবনা করে ভাবল প্রথমে বাবাকেই কল করবে। তাছাড়া তার ভাইয়া ও আরিয়া এখন অফিস ও ভার্সিটিতে। ওদের সাথে ভার্সিটি থেকে এসেই কথা বলা যাবে। কিন্তু শ্রাবণকে প্রথমে কল করলে বাবাকে কল করার সময় পাবে না। হাতে সময়ও বেশি নেই। চটজলদি বাবাকে কল করলো। দুই মিনিটের বেশি কথা বলল না। অতঃপর লম্বাশ্বাস নিয়ে শ্রাবণকে কল লাগালো। প্রথমবার রিসিভ হলো না! আর্শি ভাবলো আবার দুই মিনিট পর কল করবে। এখন জলদি তৈরি হয়ে নিক।

এদিকে শ্রাবণ তার বোনের ছেলের জন্য চকলেট আনতে গেছে। তার বোন নিজের স্বামী-সন্তান নিয়ে আজকে সকালেই সিঙ্গাপুর থেকে এসেছে। শ্রাবণের আকদের সময় আসতে চেয়েও পারেনি। চকলেট নিয়ে বাড়ি ফিরে শ্রাবণ ফোনের ইন্টারনেট অন করে দেখলো প্রায় চার মিনিট আগে আর্শি তাকে কল করেছিল। তারপর আর কল করেনি। শ্রাবণ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। ফোনটা রেখে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধরলেই তখনি ফোনটা বেজে ওঠে। শ্রাবণ ফোনটা উঠিয়ে দেখে আর্শি কল করেছে। শ্রাবণ রিসিভ করে। আর্শি সালাম দিয়ে বলে,

“কিছুক্ষণ আগে যে আপনাকে কল করলাম, তখন কই ছিলেন?”

শ্রাবণও সালামের জবাব দিয়ে বলে,
“ইশরাকের জন্য চকলেট কিনতে গিয়েছিলাম।”

“ইশরাক এসেছে? তার মানে স্নিগ্ধা আপুও এসেছে।”

“হ্যাঁ। আজ সকালেই।”

“ওহ। আচ্ছা শুনুন, ভোর রাতে আপনি কল করেছিলেন। আমি তখন ঘুমাচ্ছিলাম। তাই কল রিসিভ করতে পারিনি। এখন ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছি। হাতে বেশিক্ষণ সময় নেই। বাড়ি ফিরে আবার কল করব। আপনি ইশরাক, স্নিগ্ধা আপুদের সাথে এখন সময় কাটান। কতো বছর পর আসলো। টাটা।”

“হুম। টেক কেয়ার।”

অতঃপর কল কে*টে দেয়। আর্শি দ্রুত বেড়িয়ে পড়ে। শ্রাবণ ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আরেকটু কথা বললেও পারতো!”

মন খারাপ করে ফোন রেখে ইশরাকের কাছে চলে যায়।

______

ভার্সিটির এড়িয়ার কাছে পৌঁছে মোনালিসার সাথে হাঁটছে আর্শি। নিরবতা দুজনের মধ্যে। মোনালিসা কম কথা বলে। কিন্তু এবারে মোনালিসাই প্রথমে বলে,

“সো ইউ গট ম্যারিড?”

আর্শি ওর দিকে চেয়ে হালকা হেসে বলে,
“ইয়াহ।”

“হোয়াট এবাউট, নাহিদ?”

“আই উইল টেল ইউ এভরিথিং আফটার দ্যা ক্লাস।”

“আর ইউ হ্যাপি নাউ?”

আর্শি খানিক থামলো। ফের বলল,
“একচুয়ালি, আই ডিডেন্ট ওয়ান্ট টু গেট ম্যারিড ইন সাচ এ শর্ট টাইম। বাট মাই ফ্যামিলি ওয়ান্টেড ইট এন্ড দে রিকুয়েস্টেড মি। সো আই হ্যাড টু। বাট শ্রাবণ ইজ গুড গায়। হি লাভস মি।”

“হোয়াট এবাউট ইউ? ডু ইউ লাভ হিম?”

আর্শি আকাশের দিকে চেয়ে চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিলো। অতঃপর বলল,
“টু বি অনেস্ট, আই ডোন্ট নো। ইয়াহ আই হ্যাভ সাম ফিলিংস ফর হিম। ইজ ইট লাভ? আই রিয়েলি ডোন্ট নো।”

আর্শির জবাব শুনে মোনালিসা মুচকি হেসে বলে,
“ইউ উইল। জাস্ট গো উইথ ফ্লো।”

বিনিময়ে আর্শিও মৃদু হাসে। অতঃপর দুজনে নিজেদের ক্লাসরুমের দিকে চলে যায়।

________

স্নিগ্ধা তার মায়ের রুমে বসে আছে। ড্রয়িংরুমে শ্রাবণ ও ইশরাক ভিডিও গেম খেলছে। স্নিগ্ধার স্বামী ইরফান ঘুমাচ্ছে। স্নিগ্ধা তার মাকে বলে,

“মা, তুমিও কি ভাইয়ার মতো বোকা হয়ে গেলে? আর্শির সাথে ভাইয়ার বিয়ে দিলে? যেই আর্শি কখনোই ভাইয়ার মন বুঝতে চায়নি! আবার শুনলাম নাহিদ নামে একটা ছেলের সাথে ওর কিছু একটা ছিল। পরে ওই ছেলে ওকে ডি*চ করে আরিয়াকে বিয়ে করতে এসেছিল। তোমরা তার সাথেই ভাইয়ের বিয়ে দিলে? এতগুলো বছরেও আর্শি একবারের জন্যও ভাইয়ার ফিলিংস বুঝতে চায়নি। আই ডোন্ট নো, হোয়াট উইল হ্যাপেন?”

মিসেস সন্ধ্যা বলেন,
“তুই চিন্তা করিস না। ওরা দুজনে এখন স্বামী-স্ত্রী। নিজেদের মধ্যে সবকিছু এমনিতেই ঠিক করে নিবে। তাছাড়া তুই তো তোর ভাইকে চিনিসই। আমরা কি ওকে কম মেয়ের ছবি দেখিয়েছি? ওর পছন্দ আর্শিই। ও যদি আর্শিকে নিয়ে সুখে থাকতে চায় তো থাকুক না।”

“মা, তুমি সকাল থেকে ভাইয়ার মুখখানা একবার দেখেছ? কেমন মুষড়ে পড়েছে। আর্শি কি চাইলেই পারতো না, ইটালি যাওয়াটা আরো কিছুদিন পিছাতে? ও চাইলেই পারতো। কিন্তু ও ইচ্ছে করেই করেনি। ভাইয়া কতো করে চেয়েছিল সেও আর্শির সাথে ইটালিতে যাবে। এমনকি ইরাদকেও ফোন করেছিল যাতে ইরাদের বন্ধুর সাথে কথা বলা যায়। ইরাদের ফ্রেন্ড বলেছিল, সে এক-দেড় সপ্তাহের মধ্যে ট্রাই করবে। সে করতেও পারতো।”

মিসেস সন্ধ্যা হতাশ স্বরে বলেন,
“বাদ দে সেসব। আর্শির দিকটাও দেখ। তোর ভাইয়ের জেদের কারণেই আর্শির পুরো পরিবার আর্শিকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়েছে। তাছাড়া আর্শির ভার্সিটিতে এমনিতেই দুই সপ্তাহের মতো ক্লাস মিস হয়ে গেছে। কী-ই বা বলার আছে।”

“তোমরা ভাইয়ার জেদকে প্রায়োরিটি না দিয়ে আমার কথা শুনে যদি অহনার সাথে ভাইয়ার বিয়েটা দিতে তাহলে ভাইয়া কিছুদিন পর এমনিতেই আর্শিকে ভুলে যেত। অহনা কতো সুইট একটা মেয়ে। ও আমার নিজের ননদ না কিন্তু ও অনেক কেয়ারিং।”

“দেখ স্নিগ্ধা, ভাগ্যে যা ছিল তা হয়ে গেছে। এগুলো নিয়ে আর কথা বাড়াস না। এখন দোয়া করি, আর্শি ও শ্রাবণের মধ্যে সম্পর্কটা স্বাভাবিক হয়ে যাক। আর মাত্র একটা বছরই তো। তারপর আর্শি ফিরে আসবে।”

“দেখো কী হয়! ওই মেয়ের উপর আমার ভরসা নেই।”

এই বলে স্নিগ্ধা সেখান থেকে উঠে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। স্নিগ্ধা ড্রয়িংরুম ক্রস করার সময় শ্রাবণ একবার আঁড়চোখে তার বোনের দিকে তাকায়। তার বোন যে আর্শিকে নিজের ভাইয়ের বউ হিসেবে পুরোপুরি ভাবে মেনে নিতে পারছে না, সেটা তার অজানা নয়। কোনো এক অজানা কারণেই স্নিগ্ধা আর্শিকে অপছন্দ করা শুরু করে দিলো। যেই স্নিগ্ধা আর্শিকে খুব কেয়ার করতো, সেই স্নিগ্ধা আর্শির নাম শ্রাবণের মুখে শুনতেই পছন্দ করে না। শ্রাবণ এখনও ভেবে পায় না, যে স্নিগ্ধা ও আর্শির মধ্যে আসলে কী হয়েছে?

চলবে ইন শা আল্লাহ,

নেক্সট পর্ব কালকে আসবে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here