#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২১
শ্রাবণ বাহিরে বের হবে বলে রেডি হচ্ছিলো। তখন কল আসাতে ফোনটা বিছানা থেকে উঠিয়ে আর্শির নাম্বার দেখে খানিক অবাকের সাথে মৃদু হাসেও। রিসিভ করে প্রথমেই বলে,
“কী ব্যাপার? আজকে এই সময় কল করলে? তুমি এখন ভার্সিটিতে না?”
সোহা মুখ চেপে হাসে খানিক। ফোন লাউডস্পিকারে দেওয়ার দরুণ আর্শি প্রত্যুত্তরে কিছু বলতে মুখ খুলবে, তার আগেই সোহা আর্শির মুখ চেপে ধরে প্রথমে সালাম দিয়ে বলে,
“ভাইয়া, আমি আর্শির ফ্রেন্ড সোহা। ফোনটা আর্শির ফোন থেকে আসলেও ফোনটা আমি করেছি। আর্শি করেনি।”
শ্রাবণ অপ্রস্তুত হয়ে সালামের জবাব দিয়ে বলে,
“একচুয়ালি আমি…”
কথা সম্পূর্ণ করার আগেই সোহা মাঝে বলে ওঠে,
“আপনি বুঝতে পারেননি। তাই তো? আসলে আমিই আর্শিকে জোর করেছি, যে এখন কল করি। আমাদের এখন লাঞ্চ ব্রেক তো। মানে একচুয়ালি লাঞ্চ ব্রেক না। এমনিই ক্লাস ব্রেক। আমরা একটু পর লাঞ্চ করব আরকি!”
শ্রাবণ খানিক হাসার চেষ্টা করে বলে,
“ওহ আচ্ছা।”
সোহা মোটেও দমবার পাত্রী নয়! সে ফের বলে ওঠে,
“আপনি লাঞ্চ করেছেন না, ভাইয়া?”
“জি।”
“আপনার সাথে একটু গল্প করতে ফোন করলাম। আপনি কি বিজি?”
শ্রাবণ সৌজন্যে বলে,
“না না, আপু। এমনিই একটু…”
আবার শ্রাবণকে তার পুরো কথা শেষ করতে দেয় না সোহা! পুনরায় বলে,
“আপনার ও আর্শির বিয়ের সম্পর্কে আগে থেকে জানতাম না। হুট করে আর্শি বলে যে ওর বিয়ে হয়ে গেছে। মানে টোটালি একটা সারপ্রাইজিং ব্যাপার। আপনার সাথে পরিচয়ও নেই। শ্যালিকা হিসেবে দুলাভাইয়ের সাথে একটু টুকটাক পরিচয় থাকতে হয়। তাই না?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ!”
“তো ভাইয়া আপনি বিয়ের পরপরই বউকে এতো দূরে একা পাঠিয়ে দিলেন! একসাথে টাইম স্পেন্ড করারও তো একটা ব্যাপার আছে।”
সোহার কথায় এবার আর্শি ভীষণ বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে,
“শ্রাবণ, আমি আপনাকে বাসায় পৌঁছে কল করব। একচুয়ালি আমার ফোনের ব্যাটারি প্রায় ডেড! টুকটাক কিছু খেয়ে লাইব্রেরীতে গিয়ে একটু চার্জ দিবো ফোনটা।”
শ্রাবণ স্বস্তির শ্বাস নিয়ে বলে,
“ওকে। আমিও একটু বেরোচ্ছি।”
“ওকে। সাবধানে যাবেন। টাটা।”
শ্রাবণও ‘বায়’ জানায়। আর্শি কল ডিসকানেক্ট করে সোহার গ*লা চে*পে ধরে বলে,
“এই তুই এতো বকবক কীভাবে করিস রে? কী সব বলছিলি? আজব!”
সোহা নিজের কাঁধের কাছের চুলগুলো পিছনে ঠেলে ডোন্টকেয়ার মুডে বলে,
“কী এমন বললাম? একটু আলাপ করছিলাম, যা তোর পছন্দ হলো না। আর ইউ জে*লাস, বেবি!”
আর্শি মুখ কুঁচকে নেয়। আর বলে,
“জেলাস! তাও তোর এসব ননসেন্স কথাবার্তায়! শ্রাবণ লিটারেলি বিরক্ত হচ্ছিলো।”
সোহা খানিক অভিমানের ভাণ ধরে।
“মোটেও না। ভাইয়া কী সুন্দর করে আমার প্রত্যেকটা কথার জবাব দিচ্ছিল।”
“তোর মা*থা। সে জাস্ট ভদ্রতা দেখাচ্ছিল।”
“হুহ্”
“উঠ এবার। লিসা ও মোনা চলে এসেছে।”
বলতে বলতে আর্শি উঠে দাঁড়ায়। সাথে সোহাও। এরপর ওরা ক্যান্টিনের দিকে হাঁটতে থাকে।
________
শ্রাবণ তার বোন, বোনজামাই ও ভাগ্নেকে নিয়ে এসেছে একটা পার্কে। এসেই ফুচকা অর্ডার করে। স্নিগ্ধা অবাক হয়ে শুধায়,
“ভাইয়া, তুমি ফুচকা খাবে?”
“হ্যাঁ।”
“তুমি ফুচকা খাও? কখনো তো খেতে দেখলাম না!”
শ্রাবণ আমতা আমতা করে উত্তরে বলে,
“কখনো খাইনি তো কি হয়েছে? এখন খাব! ফুচকা খাওয়া তো আর নিষিদ্ধ কিছু না! এটা খুব টেস্টি একটা খাবার।”
“আমি জানি এটা খুব টেস্টি একটা খাবার। কিন্তু তোমাকে কখনোই খেতে দেখিনি। তোমার মনে আছে, স্কুলে যে তুমি আমাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতে দেখেছিলে তখন তুমি কলেজ থেকে ফিরছিলে। আমাকে ফুচকা খেতে দেখে তোমার সেই কী রাগ! বলেছিলে, ‘এই পচা পানিতে চুবিয়ে মানুষের পায়ের ময়লা দিয়ে বানানো ফুচকা খাচ্ছিস? তোর পেট খারাপ হবে না তো? কার পেট খারাপ হবে?’ আর আজ সেই তুমি! নিজে ফুচকা খাচ্ছ!”
শ্রাবণ থতমত খেয়ে আশেপাশে তাকায়। অতঃপর ফুচকাওয়ালার দিকে নজর যেতেই দেখে ছেলেটা তার দিকে কেমন কেমন করে দেখছে! শ্রাবণ অপ্রস্তুত হয়ে বলে,
“একসময় পছন্দ ছিল না। এখন পছন্দ হয়েছে। মানুষের পছন্দ বদলাতেই পারে। তাই না?”
স্নিগ্ধা মাছি তাড়ানোর মতো করে বলে,
“তোমার পছন্দ আবার বদলায়! হাহ্! বলো, আজ সূর্য হয়তো বিপরীত দিকে উঠেছে! তাই তোমার আজ ফুচকা খেতে মন চেয়েছে। সমস্যা নেই। খাও।”
শ্রাবণ আর তার বোনের সাথে কথা বাড়ালো না। ফুচকাওয়ালা ছেলেটাকে বলল,
“শোনো, বোম্বাই দিয়ে বানাবে। ঝাল ঝাল যেন হয়। খুব মজা করে বানাবে কিন্তু।”
স্নিগ্ধার চোখ যেন এবার কপালে ওঠার জো*গার! সে তার স্বামীকে ধরে বলে,
“এই শোনো, আমাকে একটা চি*মটি কা*টো তো! আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না। কী হচ্ছে আশেপাশে! ভাইয়ার কী হলো?”
ইরফান সত্যি সত্যি চি*মটি কে*টে বসলো। তার বউ এই প্রথমবার তাকে চি*মটি কা*টতে বলেছে! তাও স্বেচ্ছায়! এই সুযোগ সে কিভাবে মিস করতে পারে! চি*মটিটা বোধহয় বেশ জোরেই ছিল! স্নিগ্ধা মৃদু চিৎকার করে ইরফানের বাহুতে দুটো কি*ল বসাতে বসাতে বলে,
“এত জোরে চি*মটি কা*টতে বলেছি তোমাকে? আস্তে কা*টা যেত না?”
ইরফান নিজের বাহুতে হাত বুলাতে বুলাতে মিনমিন করে বলে,
“সরি! বুঝতে পারিনি।”
বাবা-মায়ের এই কান্ড দেখে ইশরাক মুখ চেপে হাসছে। এদিকে শ্রাবণ ফুচকার অপেক্ষায়। আজ সে আর্শিকে দেখিয়ে দেবে, সেও ঝাল ঝাল বোম্বাই ম*রিচ দিয়ে ফুচকা খেতে পারে। এদিকে ফুচকাওয়ালা ছেলেটার স্নিগ্ধার কথাগুলো ইগোতে খুব লেগেছিল। তাই সে ভেবে নিয়েছে, শ্রাবণের ফুচকাতে সে ভর্তি করে মরিচ দেবে! বেচারা শ্রাবণ তো আর ফুচকাওয়ালার মনের খবর রাখে না!
তিন প্লেট ফুচকা চলে আসার পর শ্রাবণ, স্নিগ্ধা ও ইরফান নিজেদের প্লেট নিয়ে নেয়। ইশরাক এদিকে চকলেট খাচ্ছে। স্নিগ্ধা তো ফুচকা দেখেই প্রথমে একটা টপ করে মুখে পু*ড়ে নিলো। ইরফানও আস্তে আস্তে খাচ্ছে। কিন্তু শ্রাবণ একটা ফুচকা হাতে নিয়ে ফুচকার চেহারাটা ভালো করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে! আর নিজের বোন ও বোন জামাইয়ের প্লেটের দিকেও তাকাচ্ছে। তার প্লেটের ফুচকাগুলো একটু ভিন্ন ভিন্ন লাগছে। মনে হচ্ছে, কাঁচা-পাকা মরিচের পরিমাণটা খানিক বেশি!
ভাইকে এভাবে তাকাতে দেখে স্নিগ্ধা ইশারায় খেতে বলে। শ্রাবণ ঢোক গিলে স্নিগ্ধা কীভাবে খাচ্ছে তা দেখে সেটা অনুসরণ করে একটা মুখে দেয়। সাথে সাথে তার চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড়ো বড়ো হয়ে যায়! ফুচকাওয়ালা ছেলেটা এইটা দেখে নিজের গলার গামছাটা একটু ঝাড়া দিয়ে আবার গলায় পড়ে নেয়। শ্রাবণ একবার ভাবছে, মুখ থেকে ফেলে দিবে নাকি খেয়ে নিবে। তার জিহ্বা জ্ব*লে যাচ্ছে! স্নিগ্ধা বিষয়টা লক্ষ্য করে মুখেরটা গি*লে বলে,
“কী ভাইয়া? এমন দম ধরে বসে আছো কেন? মুখেরটা গি*লো।”
শ্রাবণ অসহায় দৃষ্টিতে জোরপূর্বক হেসে কোনোমতে গি*লে নেয়। অতঃপর মুখ চেপে ধরে নিঃশ্বাস বন্ধ করে রেখেছে। চোখের কার্নিশ বেয়ে জলও গড়াতে শুরু করেছে। স্নিগ্ধা মিটিমিটি হেসে তার ভাইয়ের প্লেট থেকে একটা ফুচকা উঠিয়ে সুন্দর করে টক পানিতে ডুবিয়ে বলে,
“একটা খেয়েই এই অবস্থা তোমার? আমার প্লেটের দিকে তাকিয়ে দেখো, আর মাত্র দুইটা বাকি আছে। তুমি একটা খেয়েই কেঁদে ভাসাচ্ছো। নাও নাও, আরেকটা জলদি জলদি মুখে পু*ড়ে নাও! রেশ থাকতে থাকতে খেয়ে ফেললে ঝালটা কম লাগে।”
এই বলে স্নিগ্ধা তার ভাইয়ের মুখে থেকে হাতটা সরিয়ে আরেকটা ফুচকা মুখের ভেতরে ঠু*সে দিলো। এবারেরটা শ্রাবণ আর গিলতে পারল না! সে মুখ থেকে ফেলে দিয়ে এক হাত মাথায় দিয়ে ফুচকাওয়ালার মাঝারি সাইজের পানির কলসিটা নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেতে লাগলো। স্নিগ্ধা তো হেসেই পড়ে যাচ্ছে। ইরফান প্লেট রেখে এগিয়ে গিয়ে শ্রাবণের পিঠে আলতো মালিশ করছে। ইশরাকও তার মামার অবস্থায় একটা চকলেট এগিয়ে দিলো। শ্রাবণও সেটা লুফে নিলো।
ফুচকাওয়ালা ছেলেটা বলে,
“মামা আফনেই তো কইলেন, বেশি বেশি কইরা বোম্বাই ম*রিচ ঝাল দিতে। আমি তো তাই দিছি। আফনে কইবেন না, যে আপনি জাল খাইতে পারেন না। কইলেই তো আমি আঢনেরে ম*রিচ দিতাম না।”
শ্রাবণ হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
“তুমি আমার প্লেটে এত মরিচ দিয়েছো? ওরা তো ঠিকই খেতে পারছে।”
“আফনেই না কইলেন! নাইলে আমার কি এতো শখ! নিজের বিজনেসের লস করমু! মরি*চের দাম জানেন আফনে!”
ইরফান বলে,
“হয়েছে হয়েছে। তোমার কত টাকা হলো?”
“তিনটা প্লেটের ১৫০ টাকা।”
ইরফান নিজের মানিব্যাগ খুলে টাকা দিতে নিলে শ্রাবণ বাধা দেয়। বলে,
“আমি তোমাদের ফুচকা খাওয়াতে এনেছি। সো বিলটা আমি দিবো।”
অতঃপর শ্রাবণ ফুচকাওয়ালার বিল মিটিয়ে চলে যেতে নিলে স্নিগ্ধা বলে,
“দাঁড়াও ভাইয়া, ফুচকাগুলো খেয়ে নেই। তোমরা খেতে না পারো, আমি তো খেতে পারবো। আমি তো ঝাল খেতে পারি।”
বলেই স্নিগ্ধা প্রথমে ইরফানের প্লেটের বাকি ফুচকা গুলো খেয়ে নেয়, তারপর শ্রাবণের প্লেটের একটা মুখে নিয়ে বলে,
“এটা একটু বেশি ঝাল তবে মজাও।”
স্নিগ্ধার খাওয়া দেখে শ্রাবণ মাথায় হাত দিয়ে টুলে বসে পড়ে। ভাবতে থাকে, আর্শির সাথে যদি ফুচকা খেতে যায়, আর এরকম ঝালের ফুচকা যদি খেতে দেয়। সে তো খেতে পারবে না। তখন আর্শি তার মজা উড়াবে! ভেবে ভেবেই মনে মনে ভীষণ দুঃখ পেলো শ্রাবণ! স্নিগ্ধার খাওয়া শেষ হলে ওরা চারজন পার্কে হাঁটতে থাকে।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
কালকে রাতে আরেক পর্ব আসছে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।