#যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে
#পর্ব_২৯
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
( কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
কন্ঠর মনটা একটু খারাপ হলো। এমনিতেই এতো ঝামেলা গেলো। প্রহর ঠকালো,বাবা ছেড়ে গেলো এরপরে ইফতিকে কোনো মতেই হারাতে পারবে না কন্ঠ। ইফতির কিছু হলে নিজেকে কোনোভাবে সামলাতে পারবে না বিনা। তাই ইফতির সামান্য কথায় মনে ভয় লাগছে মেয়েটার। কিন্তু পরক্ষনেই বিনা ও সমুদ্রর কথা মনে হতেই আবারও রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠলো মেয়েটা। কাজকর্মে ব্যস্ত থাকলে মাথায় চিন্তা কম ঘোরে। নিজেকে কাজে ডুবিয়ে রেখে এজন্য অনেকেই যন্ত্রণা লাঘব করতে চায়।
বিনার আগমনে আবারও মল্লিক বাড়ি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। সবার মনে আনন্দের ঠেউ বইছে। মজার কথা বাড়িতে এতো কিছু হয়ে গেছে অথচ জাহাঙ্গীর মল্লিক কিচ্ছু জানতেন না। উনি আজকেই বাসায় ফিরেছেন। আর ফেরার পরে সময় নিয়ে সবকিছু খুলে বলেছিলেন শায়লা মল্লিক।
” এতকিছু ঘটে গেলো অথচ ফোনে একবার জানালে না? ”
” তুমি কাজ করছিলে তাই জানাইনি। বাইরে বসে আরো চিন্তা করতে সেজন্য। এখন সবকিছু ঠিক আছে এটাই আলহামদুলিল্লাহ। ”
বিছানায় বসলেন শায়লা মল্লিক। জাহাঙ্গীর মল্লিক বালিশে হেলান দিয়ে বসা।
” হ্যাঁ সেটা ঠিক বলেছো। আমার সংসারে আর কোনো বিপত্তি না আসুক খোদা!”
কিছুটা শঙ্কিত মনে বললেন ইফতির বাবা। শায়লা স্বান্তনা দেওয়ার ভঙ্গিতে বলেন,
” আল্লাহ ভরসা। শুয়ে পড়ো। রাত হয়েছে। ”
বাতি নিভিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলেন জাহাঙ্গীর দম্পতি।
“কী হলো?”
” কল তো ধরছে না মেয়েটা! ”
চিন্তিত মুখশ্রীতে উত্তর দিলো কন্ঠ। ইফতিরও চিন্তা হচ্ছে। ঝামেলার কারণে এতদিন পরীর কথা মাথায় ছিলো না কারোরই। মাঝখানে পরী কল করেছিল দু’বার। কিন্তু তখন কলে কথা বলার মতো পরিস্থিতি ছিল না কন্ঠর। তাছাড়া সারাক্ষণ ফোন সাইলেন্ট মুডে থাকে বলে কল আসলে টেরও পায় না।
” আরেকবার কল দে। আমি তারপর মামির কাছে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করবো পরীর কথা। ”
” হুম দিচ্ছি। ”
রিং হচ্ছে। এই নিয়ে তিনবার কল দিচ্ছে পরীকে। এবার পরী কল রিসিভ করলো। কন্ঠ ইশারায় সেটা বোঝালো ইফতিকে।
” আসসালামু আলাইকুম ভাবি। কেমন আছো তোমরা?”
প্রফুল্লচিত্তে জিজ্ঞেস করলো পরী। পরীর হাসিখুশি কথা শুনে কন্ঠও মনে প্রশান্তি অনুভব করছে।
” আলহামদুলিল্লাহ। তোমার শরীর কেমন আছে? বাসার সবাই ভালো? ”
” সবকিছু ঠিক আছে ভাবি। সেই যে গেলে আর তো খোঁজ নিলে না! আমি কল দিলাম তা-ও পেলাম না। ”
” এদিকে ঝামেলা ছিলো পরী। বাই দ্য ওয়ে, শুভ্রর খবর কী? বিয়ের বিষয় কিছু এগোলো?”
” হ্যাঁ ভালো। ওদের বাড়িতে আমার কথা বলতে প্রথম প্রথম মেনে নিতে চায়নি। কিন্তু পরবর্তীতে প্রেগন্যান্সির নিউজটা বলতেই সবাই রাজি হয়ে গেছে। এখন ভয় লাগছে। আম্মু, আব্বু এই খবর শুনলে আমাকে আস্ত রাখবে না।”
” মামা, মামিকে তোমার ভাই সামলে নিবে। তুমি চিন্তা করো না। ”
” কালকে ওদের বাড়ি থেকে সম্মন্ধ নিয়ে আসবে আমাদের বাড়ি। দেখি কিছু না জানিয়ে এমনিতেই বিয়েটা হয় কি-না। তবে শুভ্রর ব্যাকগ্রাউন্ড এলাকার সবাই জানে। আব্বাও নিশ্চয়ই রাজি হবে না। ”
” তবুও আগে আসুক তারা। তারপর আমরা তো আছি। তুমি নিজের খেয়াল রেখো। আর আমাকে আপডেট দিও।”
” বেশ। তাহলে এখন রাখছি ভাবি। পরে কথা হবে। আজকে ভীষণ ঘুম এসেছে। ”
” ঠিক আছে। শুভ রাত্রি। ”
” শুভ রাত্রি ভাবি। আল্লাহ হাফেজ।”
ইফতি উৎসুকভাবে তাকিয়ে আছে কন্ঠর দিকে। কন্ঠ কথোপকথনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা শোনালো ইফতিকে।
” যাক সবকিছু ভালো হলে ভালো। ভাই-বোনরা সুখে থাকলে আমরাও সুখী। ”
বিছানা ছেড়ে উঠে রুমের লাইট জ্বালিয়ে দিলো ইফতি। কন্ঠ চমকাল। রাত সাড়ে এগোরাটার সময় কেউ বাতি জ্বেলে বসে থাকে?
” বাতি জ্বেলে দিলে কেনো?”
বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে শুধালো কন্ঠ। ইফতি ততক্ষণে কন্ঠর পাশে এসে শুয়েছে।
” তোকে দেখবো।”
” আমাকে আবার নতুন করে কী দেখবে!”
” আমার কাছে তুই প্রতিদিন নতুন। ”
কন্ঠর থুতনিতে হাত দিয়ে বললো ইফতি। অন্য হাত শাড়ির উপর দিয়ে উদরে রাখলো। আজকে শাড়ি পরেছিল কন্ঠ। এমনিতে থ্রিপিস পরে। তবে মাঝেমাঝেই শাড়ি পরে।
” মতলব সুবিধার ঠেকছে না। হাত সরাও পেট থেকে। আমি ঘুমাবো।”
ইফতি কনুইতে ভর দিয়ে শুয়ে অন্য হাত আস্তে আস্তে উপরের দিকে এগোতে লাগলো। কন্ঠ খপ করে চেপে ধরলো ইফতির হাত।
” তুই সেই মেয়ে না? সামস না ছামস নামে এক গায়ক ছিলো, তার একটা গান আছে – ‘ ঘুম ভালোবাসি রে,আমি ঘুম ভালোবাসি রে..’ সেই গান শুনতিস?”
” হ তো?”
” এজন্যই তো ঘুম ঘুম করিস।”
” তুমি দুষ্টমি বন্ধ করো। হাত সরাওওওও!”
কন্ঠ চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে ইফতির দিকে। ইফতি তাতে কোন পাত্তা না দিয়ে দুষ্টমির মাত্রা দ্বিগুণ করে দিলো। বেচারি কন্ঠ শুধু চক্ষু মেলে সবকিছু দেখছে।
দু’দিন পরে মল্লিক বাড়িতে আজকে সবাই আবার একসাথে সকালের নাশতা করার জন্য ডাইনিং টেবিলে সমবেত হয়েছে। নাশতা হিসেবে আছে লুচি, হালিম, টোস্ট, পাউরুটি, জুস,ডিম,কলা,আপেলসহ আরও নানান পদ। বাড়ির পুরুষদের খাবার পরিবেশন করে মহিলারাও খেতে বসেছে।
” আব্বু আমরা সবাই মিলে কোথাও ঘুরতে গেলে কেমন হয়? সমুদ্র কিংবা পাহাড়ে?”
খেতে খেতে জাহাঙ্গীর মল্লিককে উদ্দেশ্য করে বললো সমুদ্র। কন্ঠ আর বিনা একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো একবার। ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনেই মেয়ে দু’টো খুশি হয়ে গেছে।
” আমার এসব ভালো লাগে না রে। তোরা দুই ভাই বরং কন্ঠ আর বিনাকে নিয়ে ঘুরে আয় কোথাও। ”
” হ্যাঁ তোর বাবা ঠিকই বলেছেন। তোরা ঘুরে আয়। ভালো লাগবে।”
শায়লা মল্লিকও স্বামীর কথায় স্বায় দিলেন। সমুদ্র ইফতির দিকে তাকিয়ে বললো,
” ভাইয়া তোমার সময় হবে তো?”
” হুম হবে। কবে যাবি আর কোথায় যাবি সেটা তোরা তিনজন ঠিক কর। আমি ছুটির জন্য আবেদন করে দিবো।”
কন্ঠ আর বিনার চোখমুখ খুশিতে চকচক করছে। খুশিতে গদগদ হয়ে কন্ঠ বললো,
” আমরা বিকেলেই ঠিক করে নিবো। তুমি ছুটির ব্যবস্থা করো।”
” ওকে ডান।”
বিকেলে খোলা আকাশের নিচে ছাদে গোল মিটিং করতে বসেছে তিন সদস্যের কমিটি। সূর্যের তেজ কমেছে এখন। আসরের আজান হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। ছাদের একপাশে বড়ো বড়োই গাছ। গাছে অনেক বড়োই হয়েছে। রেলিং এ বসে আছে দু’টো চড়ুই পাখি। ওঁরা-ও মনে হয় ঘুরতে যাওয়ার বিষয় আলোচনা শোনার জন্য আগ্রহী। লাল চায়ের কাপে চুমুক দিলো সমুদ্র। বিনা ও কন্ঠর হাতে দুধচা।
” তোরা দু’জন কোথায় যেতে চাচ্ছিস? পাহাড় না-কি সমুদ্র? ”
” বিনা যেহেতু পাহাড়ি অঞ্চলের মেয়ে সুতরাং ও তো সমুদ্রেই যেতে চাইবে! তাই না বিনা?”
কন্ঠ বিনার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিলো। বিনা হেসে বললো,
” কন্ঠ আপা ঠিকই বলেছে। ”
” তাহলে সমুদ্রেই যাবো। কক্সবাজার যাবি না-কি সেন্টমার্টিন?”
” আমি তো কোথাও যাইনি তাই তোমরা যেখানে বলবে সেখানেই যাবো।”
বিনা সরলভাবে বললো। কন্ঠ চুপ করে রইলো। কোথায় যাওয়া যায় সেই নিয়ে সন্দিহান। খানিক ভেবে বললো,
” কক্সবাজার চল। ”
” বেশ। ভাইয়াকে তাহলে রাতে বলে দিস আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি। ”
” আমার না খুব এক্সাইটেড লাগছে সমুদ্র। ”
কন্ঠ সবগুলো দাঁত বের করে হেসে বললো। সমুদ্র দিলো ভেংচি।
” কেন শুনি?”
” আমি ছবিতে দেখেছি কক্সবাজার গিয়ে সাকিব খানের সাথে অপু বিশ্বাস ধাক্কা খেয়ে প্রেমে পড়ে। ”
মুখখানা লজ্জাবতী বউয়ের মতো করে বললো কন্ঠ। সমুদ্র হো হো করে জোরে হেসে উঠলো। বিনা এদের কথার আগামাথা কিছুই বুঝল না।
” আমার ভাই তোকে আর কারো সাথে ধাক্কা খেতেই দিবে না। তুই তো ভালো ছিলিস লুচ্চা হলি কবে রে?”
কন্ঠ সমুদ্রর মাথায় টোকা দিলো একটা।
” তুই চুপ কর। ধাক্কা তো খেতেই হবে। ধাক্কা থেকে যদি আরেকটা প্রেম হয় তবে ধাক্কাই ভালো। মোটকথা সিনেমাটিক ভাবে প্রেমে পড়তে হবে। ”
” ভাইয়াকে বলবো?”
” না! আমি তো মজা করেছি। ”
সমুদ্র বিজয়ীর মতো হাসি দিয়ে বললো,
” এই তো বেলুন চুপসে গেলো। ”
” এই তোমরা কীসব বলছো? সাকিব খান, ওপু কে?”
” আরে ভাই ওটা অপু, ওপু না। উনারা সিনেমা করে। ”
সমুদ্র বিনার গাল টেনে দিয়ে বললো। কন্ঠ চা শেষ করতে ব্যস্ত। বিনা মাথা চুলকে বললো,
” ও আচ্ছা। কিন্তু তাদের সাথে তোমাদের সম্পর্ক কী? আমাদের গ্রামে তো টিভি ছিলো না তাই ছবি দেখা হতো না।”
” অপু আর এক্স গার্লফ্রেন্ড। এবার বুঝলে?”
বিনা মাথা নাড়লো। সে কিছু বোঝেনি। কন্ঠ ঠোঁট টিপে হাসছে। সমুদ্র ফের বললো,
” এক্স গার্লফ্রেন্ড মানে আমার আগের প্রেমিকা।”
বিনা দুজনের মুখের দিকে একবার তাকাল। পরক্ষণেই একা একা হেসে উঠলো। সমুদ্রর মানে লাগলো বড়ো। মেয়েটাকে বোকা বানাতে না পেরে। ভেবেছিল অভিমানে গাল ফোলাবে তার বউ। তারপরে ঢং করে মান ভাঙাবে। সে আর হলো না।
” ইশ আসছে নায়িকার সাথে প্রেম করতে। নায়িকা যদি পেতে তবে কি আমার সাথে ঘর করতে?”
” কেমন দিলো? ঠিক হয়েছে একেবারে। ”
কন্ঠ একগাল হেসে বললো। সমুদ্র মুখ বাঁকা করে অন্য দিকে তাকালো।
চলবে,
যারা আমার লেখা ই-বুক কিনতে চান কিন্তু কীভাবে কিনতে হয় জানেন না ইনবক্সে জানাবেন। আর ই-বুক সব দেশ থেকে কিনতে পারবেন।
আগের পর্ব https://www.facebook.com/100080128645410/posts/406352005379084/
পরের পর্ব https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=406895951991356&id=100080128645410&mibextid=Nif5oz