#যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে
#পর্ব_৩৭+৩৮
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
“বলবো না। মানুষ মরণশীল। বাবা গেছেন আমরাও যাবো।”
সমুদ্র বাবার কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বাবা মানে মাথার উপর মস্ত বড়ো ছায়া। যে সেই ছায়া হারায় সেই বোঝে কী হারিয়েছে!
” হ্যাঁ তো ঠিকই। ”
সমুদ্রর মন খারাপটুকু বুঝতে পেরে বিনা মুখ লুকাল সমুদ্রর বুকে। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো সমুদ্র নিজেও।
” মেয়েটা দেখতে দেখতে বড়ো হয়ে গেছে। ”
” আমি আর দেখতে পারলাম কই পূর্ণতার শৈশব! যাগগে সে কথা, হঠাৎ এ কথা বললে কেনো?”
সমুদ্র কন্ঠে গাম্ভীর্যের ছাপ রেখে বললো। বিনা দোনোমোনো করতে করতে বলে,
” আমি ভাবছিলাম এইচএসসি পরীক্ষা দিলেই বিয়ে দিয়ে দিবো ওর।”
সমুদ্র কিছুটা চমকাল। স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে সামনাসামনি বসলো কথা বলার উদ্দেশ্যে।
” এসব কী বলেছো? এতো জলদি মেয়ের বিয়ে দিবে কেনো?”
” দেখুন আপনি কষ্ট পাবেন না। বলতে গেলে আমাদের সারাজীবনের দায়িত্ব নিয়েছি ইফতি ভাইয়া। আমাদের সবকিছুই তাদের টাকায়। যদিও আপনি তার ভাই তবুও ভাইয়ার কথাও তো আমাদের ভাবা উচিত তাই না? এমন তো না পূর্ণতার আঠারো হয়নি,আঠারো হয়ে গেছে। স্কুলে একটু দেরিতে ভর্তি হয়েছিল মেয়েটা। তাছাড়া ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিলে বিয়ের পরেও লেখাপড়া করতে পারবে। মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেলে আমরা দু’জন ঠিক একরকম নিজেদের ব্যবস্থা করে নিবো।”
সমুদ্র অবুঝ না। বিনার কথা ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। কথায় ভুল নেই। তবুও এখুনি কি বিয়ে করতে চাইবে পূর্ণতা?
” তা ঠিক আছে। কিন্তু মেয়ের অমতে কিছু হবে না বিনা।”
” আপনার মেয়ে বিয়ে করতে একপায়ে রাজি হয়ে যাবে নিশ্চিত। লেখাপড়া তার চিরশত্রু। বুঝলেন? ”
সমুদ্র আর বিনা একসাথে হেসে উঠলো। ইশ কতদিন পরে তারা একসাথে এভাবে প্রাণখুলে হাসছে।
পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর যানবাহনের কর্কশ আওয়াজে ভোরের এই সময়টা সবে মাত্র মুখরিত হতে শুরু করেছে। সকাল সকাল মানুষজন কম থাকে রাস্তায়। তাই কোলাহলও কম থাকে।
” আপনি কি আমার সাথে দেখা করতে চাচ্ছেন? ”
ঠোঁট টিপে হাসতে হাসতে মেসেজটা সেন্ট করলো পূর্ণতা। ঘড়ির কাঁটায় এখন সময় সকাল সাতটা। আজকে একটু তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেলো পূর্ণতার। তাই অনলাইনে গেলো ঘুম ভাঙতেই। আর তারপর নৈশের মেসেজ,
” পূর্ণ! এই যে মেয়ে? ঘুমিয়ে গেলে কেমন লাগে তোমাকে দেখতে? ”
পূর্ণতা মুচকি হেসে তার বিপরীতে রিপ্লাই দিয়েছে। কিন্তু সারারাত না ঘুমুতে পেরে ফজরের দিকে ঘুমিয়ে পড়ায় এখন অফলাইনে আছে নৈশ। পূর্ণতা অপেক্ষা করছে। পাঁচ মিনিট,দশ মিনিট, পনেরো মিনিট! তারপর বিরক্ত হলো। একবারও ভাবলো না ছেলেটা তো ঘুমিয়ে থাকতে পারে? কিন্তু না! আমরা অধিকাংশ সময় অপর পাশে থাকা মানুষটার রিপ্লাই দেওয়ার পরিস্থিতি না থাকলেও বুঝি না। অভিমান করে দূরে সরে যাই কিংবা ভাবি ভাব দেখায়। পূর্ণতাও ভাবলো নৈশ হয়তো ইচ্ছে করে দেরি করছে। আসলে ফোনের ডাটা অন রেখেই ঘুমিয়ে গিয়েছিল নৈশ। সেজন্য মেসেঞ্জারে এক্টিভ দেখাচ্ছে নৈশকে। পূর্ণতা বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। আজকে ক্লাসে একটু আগেভাগেই যেতে হবে। তাই ফ্রেশ হয়ে ছুটলো ডাইনিং টেবিলের দিকে। কন্ঠ এরমধ্যেই মোটামুটি নাস্তা তৈরি করে ফেলেছে। বিনার উঠতে একটু দেরি হওয়াতে কন্ঠ সবকিছু করার সুযোগ পেলো আজ। নচেৎ বিনা কখনো এসব কাজে অন্য কাউকে হাত লাগাতে দেয় না। পূর্ণতা হন্তদন্ত হয়ে বসলো একটা চেয়ার টেনে। একেবারে কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বেরিয়েছে সে। কাঁধে ব্যাগ আর হাতের খাতাটি পাশের অন্য একটা চেয়ারে রাখলো সে। পূর্ণতা সাদা-কালো রঙের থ্রিপিস পরেছে আজ। খোলা চুল,কানে ছোটো দুল। একহাতে ব্রেসলেট অন্য হাতে ঘড়ি।
” কী রে আজ এতো জলদি রেডি হয়ে বসলি?”
কন্ঠ পূর্ণতার ব্যস্তসমস্ত ভাবভঙ্গি দেখে জিজ্ঞেস করলো।
” এ্যাকাউন্টিং প্রাইভেট আছে। আজকে বিকেলে স্যার পড়াতে পারবেন না৷ এজন্য সকালেই পড়িয়ে দিবেন।”
” ও আচ্ছা। তাহলে খেয়ে নে। আরো একটা ডিম দেবো?”
পূর্ণতার সামনে একটা প্লেটে খিচুড়ি আর ডিম দিলো কন্ঠ। সাথে শসা ও টমেটো কাটা আছে। খিচুড়ির সাথে আবার মাংস মিক্সড। সমুদ্র খিচুড়ি খুব পছন্দ করে। সেজন্য কন্ঠ এই সকাল সকালেই খিচুড়ি রান্না করে বসে আছে।
” না গো। এটাও নিয়ে যাও। ডিম আমি খাবো না বড়ো মা। ”
কন্ঠ পূর্ণতার প্লেট থেকে ডিম সরিয়ে নিয়ে আফসোসের সুরে বললেন,
” আজকালকার ছেলে-মেয়েগুলোর যে কী হলো! দুধ আর ডিম খেতেই চায় না। ”
পূর্ণতা বড়ো মায়ের কথা শুনতে শুনতেই খেতে লাগলো। দুধ কিংবা ডিম নিয়ে তাদের কীসের যে এতো বাড়াবাড়ি বোঝে না পূর্ণতা। শাওনও এসব অপছন্দ করে। তাই বলেই কন্ঠর এই অভিযোগ।
দু-চোখ মেলে তাকিয়ে আশেপাশে তাকাল নৈশ। ঘুমঘুম চোখে ফোন হাতে নিয়ে সময় দেখে নিলো। বেলা এগারোটা ছুঁইছুঁই প্রায়। মেসেঞ্জারে ঢুকতেই সবার উপরে পূর্ণতার মেসেজ শো করছে। হকচকিয়ে উঠলো বিছানা থেকে নৈশ। চোখেমুখে পানি দিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। মেসেজ ওপেন করতেই পূর্ণতার পাগলামি মার্কা মেসেজ চোখে পড়লো, ” আপনি কি আমার সাথে দেখা করতে চাচ্ছেন? ”
নৈশ মনে মনে ভীষণ খুশি হলো এবার। এটাই চাচ্ছিল সে। কতদিন হলো পূর্ণতাকে দেখেনি সে। আনমনে হেসে ঝটপট মেসেজ টাইপ করতে শুরু করলো। মেসেজ পাঠিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো রিপ্লাই এর জন্য। কিন্তু পূর্ণতা অফলাইনে আছে। অস্থির লাগছে নৈশের। দেখা পরে আগে ফোন নম্বরটা লাগবে তার।
কলেজের ক্যান্টিনে বসে আছে পঞ্চ পান্ডব ব্যতীত আর একজন সদস্য। নাম তার পায়েল। পূর্ণতাদের ক্লাসমেট বটে। মস্ত বড়ো অঘটন ঘটিয়ে ফেলেছে সে। সেই নিয়ে সবাই চিন্তিত। পায়েলের কারো সাথেই প্রেমের সম্পর্ক নেই কিংবা কারো সাথে কখনো ডেটেও যায়নি। তবুও গতকাল সে জানতে পেরেছে, সে প্রেগন্যান্ট! পরপর দু’মাস পিরিয়ড বন্ধ থাকায় মনটা কেমন খচখচ করছিল পায়েলের। প্রথম মাসে ভেবেছিল এমনি হয়তো এমনটা হয়েছে। কিন্তু দুই মাস একই ঘটনা ঘটার ফলে অস্বাভাবিক লাগে তার। বড়োলোক বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে পায়েল। দেখতে আহামরি সুন্দর একটা না হলেও চেহারার গঠন মাশা-আল্লাহ। ইভা নখ মুখে দিয়ে বসে আছে। প্রেম করতো বোঝা যেতো সম্পর্কে আছে বাচ্চা হবে। কিন্তু এটা কী ধরনের কথা? হুদাই তো কেউ কন্সিভ করতে পারে না। ছয় জনের মনেই চলছে বিভিন্ন চিন্তাভাবনা। নীরবতা ভাঙলো পূর্ণতা।
” পায়েল তুই ভালো করে মনে করে দেখ তো কখন কী হয়েছে! তুই ছাড়া সেটা তো আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়।”
” তোরা আমাকে অবিশ্বাস করছিস? বিশ্বাস কর আমি এসব কিচ্ছু করিনি। করলে তো বলবো!”
উপস্থিত সবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পায়েল। সবাই যে পায়েলকে অবিশ্বাস করছে এমনটাও না। কিন্তু পায়েল যেটা বলছে সেটাও সম্ভব নয়। কোন পুরুষের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছাড়া পায়েলের পক্ষে তো প্রেগন্যান্ট হওয়া সম্ভব না। সাইফা পায়েলের হাত ধরে আস্বস্ত করে বললো,
” আমরা তোকে অবিশ্বাস করছি না পায়েল। কিন্তু এটা তুইও ভালো করে জানিস কারণ ছাড়া এটা সম্ভব নয়। ”
পায়েল মাথা দোলাল দু’দিকে। ঠিকবেঠিকের মাঝামাঝিতে আছে সে। সামনেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা! আর এই সময় এইসব বিষয় মোটেই কোনো মেয়ের পক্ষে সহজতর নয়। নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে পায়েলের। দুচোখ ছলছল করছে মেয়েটার। সজল এতক্ষণ চুপ করে ছিলো একেবারে। হঠাৎ করে বলে উঠলো এবার সে,
” তুই লাস্ট কোন কোন পার্টিতে গেছিলিস? ”
পায়েল হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে গড়িয়ে পড়ার আগেই চোখের জলটুকু মুছে নিলো। কিছুটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো,
” থার্টি-ফাস্টের পার্টি ছিলো গুলশানে আর রিসেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে-এর পার্টিতে তো আমরা সবাই ছিলাম। ”
সজল চুপ রইলো ফের। কিছু একটা ভাবছে সে।
” তারমানে ঘটনা দুই কিংবা আড়াই মাস আগের। অতএব এটা ডিসেম্বরের কাহিনি! ”
ইভা উত্তেজিত হয়ে বললো। সজল মাথা দুলিয়ে বলে,
” হ্যাঁ। ওই পার্টিতে কে কে ছিলো? আমাদের মধ্যে তো কেউ ছিলো না। কোন বন্ধুদের সাথে গেছিলি?”
” ওঁরা ক্লাবের বন্ধু। আর কয়েকজন বাবার বন্ধুর ছেলেমেয়েও। আর রাকিবও ছিলো সেদিন। ”
” হ্যাঁ আমিও গেছিলাম। আমার এক বন্ধু ডেকেছিল।”
পাশ থেকে সম্মতি জানাল রাকিব।
” তুই কি ওইদিন পায়েলকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কারো সাথে রুমে যেতে দেখেছিস?”
” আমার মনে নেই। অতটা তো খেয়াল করিনি ভাই। ”
সজলের প্রশ্নে রাকিবের সহজসরল স্বীকারোক্তি।
#যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে
#পর্ব_৩৮
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
” তুই কি ওইদিন পায়েলকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কারো সাথে রুমে যেতে দেখেছিস?”
” আমার মনে নেই। অতটা তো খেয়াল করিনি ভাই। ”
সজলের প্রশ্নে রাকিবের সহজসরল স্বীকারোক্তি। পায়েল ভাবছে,সেদিন রাতে কি এমন কিছু ঘটেছিল? হয়তো! রাতে অনেকেই বেসামাল হয়ে সেখানেই ঘুমিয়ে ছিলো। বলতে গেলে দশ কিংবা পনেরো জনের মতো হবে। তার মধ্যে পায়েলও ছিলো। তখুনি হয়তো কেউ সুযোগ নিয়েছে।
” সজল আমার মনে হচ্ছে আমার অচেতন অবস্থায় কেউ সুযোগ নিয়েছে। কিন্তু ওখানে সবাই তো পরিচিত ছিলো! ”
পায়েল দ্বিধায় পড়ে গেছে। পূর্ণতা কৌতূহল সংবরণ করতে না পেরেই জিজ্ঞেস করে,
” তারমানে তুই কি রাতে ছিলি ওখানে? ”
” হু। অনেকেই অজ্ঞান হয়ে ছিলো।”
” ধুর!”
সজল বিরক্তি প্রকাশ করে বলে উঠে। সবাই সজলের দিকেই তাকিয়ে আছে। সজল ফের বলে উঠে,
” এই তো ঝামেলার উৎপত্তি সম্পর্কে জানা গেলো। তোর তো আগেই বোঝার কথা ছিলো তাই না? আর পরিচিত তো হোয়াট? নেশা অবস্থায় কেউ নিজের মধ্যে থাকে ভাই? ”
পায়েল চুপ করে রইলো। ইভা সজলকে চোখে ইশারা করলো শান্ত হয়ে কথা বলতে। সজল পায়েলের হাতে হাত রেখে কিছুটা আস্বস্ত করার ভঙ্গিতে বললো,
” মন খারাপ করিস না। আমরা আছি তোর পাশে। গুলশানের কত নম্বরে সেই বাড়ি? আর কার বাসা?”
” আমাদের গ্রুপের দু’জন ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিয়েছিল। নিজস্ব বাসা নয়। গুলশানে বলতে বনানীর মধ্যে, থানার পশ্চিম দিকে, ১৯ নং ওয়ার্ডে।”
” ঠিক আছে। তাহলে আমি আর সজল দেখছি। আর তুই তোর সেসব বন্ধুদের সাথে কথা বলে কালকে নিয়ে আয়,যারা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিল। তারপর ওখানকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই সব জানা যাবে।”
সিসিটিভি ফুটেজ! ভাবতেই পূর্ণতার কেমন খারাপ লাগছে। মেয়েটার উচ্চ বিলাস বহুল জীবনযাপনের জন্য এখন ইজ্জত নিয়ে টানাটানি। রাকিবের কথায় পায়েল মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।
পায়েলের বিষয়টা নিয়ে এতো চিন্তা করেছে যে নৈশের কথা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিল পূর্ণতার। সারাদিন শেষে পড়ন্ত বিকেলে বাসায় ফেরে মেয়েটা। বাসায় ফিরে গোসল সেড়ে দুমুঠো খেয়ে পড়তে বসলো। শায়লা মল্লিকের শরীরটা আজকে একটু খারাপ যাচ্ছে। সেই নিয়ে কন্ঠ ও বিনা চিন্তিত ছিলো সারাদিন। সেজন্য পূর্ণতার বাড়ি না ফেরা নিয়ে ততটা ভ্রুক্ষেপ ছিলো না কারোরই। কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই মেয়ের ঘরে উপস্থিত হয়েছে বিনা। ঘরের দরজার পাশেই পড়ার টেবিল। সেখানেই বসে আছে পূর্ণতা।
” বাড়ি ফিরতে এতো দেরি হয়েছে কেনো পূর্ণতা?”
” আম্মা একটু কাজ ছিলো। একটা বন্ধু খুব বিপদে পড়েছিল।”
পূর্ণতার সহজসরল স্বীকারোক্তিতে বিনা খুশি হয়। মেয়ের মাথায় আলগোছে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,
” বিপদ থেকে কি উদ্ধার হয়েছে তোদের বন্ধু? ”
” না আম্মা! ”
” দোয়া রইলো তোর বন্ধুর জন্য। ”
পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো কেবল। পায়েলের মতো কোনো মেয়ের জীবনে এরকম পরিস্থিতি না আসুক। বিনা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই শাওনের আগমন ঘটল। শাওন এসেই বসলো বিছানায়। পূর্ণতার মনোযোগ তখন সামনে রাখা মার্কেটিং বইয়ের দিকে।
” আপাইইই!”
একটু টেনে টেনেই ডাকলো শাওন। পূর্ণতা শাওনের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। ছেলেটাকে কেমন জানি লাগছে। নিশ্চিত এতো ভালো করে ডাকার পেছনে অন্য কোনো কারণ লুকিয়ে আছে।
” হুহ্ বল।”
” তোর বিয়েতে আমি কী পোশাক পরবো বল তো? আমার যে কতটা আনন্দ হচ্ছে বলে বোঝাতে পারবো না। ”
শাওনের কথায় পূর্ণতা ভুত দেখার মতোই চমকাল। কয়েক সেকেন্ডের বিরতি নিয়ে বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে রইলো ভাইয়ের দিকে।
” কী বললি? আমার বিয়ে! ”
শাওনের বেশ মজাই লাগছে,বোনকে এভাবে নাস্তানাবুদ হতে দেখে। পূর্ণতা ততক্ষণে পড়ার টেবিল রেখে শাওনের কাছে চলে এসেছে।
” হুম। তবে এখন না। ভবিষ্যতে! ”
শাওন এ কথা বলেই ফিক করে হেসে উঠলো। পূর্ণতার মেজাজ গেলো বিগড়ে। পড়ার সময় এ ধরনের ফাইজলামির কোনো মানে হয়? পূর্ণ রেগেমেগে মারলো শাওনের পিঠে এক ঘা।
” তুই এখুনি ঘর থেকে বেরো নয়তো এরকম আরো উত্তমমধ্যম খাবি।”
” আপাইইইই….গেলামমমম….”
শাওন চেঁচিয়ে বলতে বলতে ঘর ত্যাগ করলো। পূর্ণতা মুচকি হেসে আবারও পড়ার টেবিলে বসলো। পড়ার সময় ফোন হাতে নেয় না মেয়েটা। কিন্তু আজ ইচ্ছে করছে নৈশের মেসেজ এসেছে কি-না একবার চেক করে দেখতে। কিন্তু বেহায়া মনকে শান্ত করে ফেলে পূর্ণতা। তার মা ছোটো থেকেই বলেছে, মনকে বেশি আশকারা দিতে নেই। মনের কথা কম শুনে মস্তিষ্কের কথাই বেশি শুনতে হবে। তাই এই মুহুর্তেও তাই করলো পূর্ণতা। পড়া শেষে একেবারে রাতের খাওয়াদাওয়া শেষ করেই অনলাইনে যাবে বলে ঠিক করে।
সারাদিন গেলো অথচ মেয়েটা একটা মেসেজের রিপ্লাই তো দূর! সিন পর্যন্ত করলোনা? মনে মনে ভীষণ রাগ হচ্ছে নৈশের। শেষমেশ কেনো সে আবারও প্রেম নামক অসুখে জর্জরিত হলো? এই যাতনা সহ্য করার জন্য?
” ভাইয়ু!”
ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে আনমনে ভাবছিলো নৈশ। হঠাৎ রাত্রির আগমন হকচকিয়ে উঠলো সে। নৈশদের ছাদেও বাতি জ্বেলে দেওয়া হয় সন্ধ্যার পরে।
” তুই এখানে কেন হুহ্? পড়াশোনা কি গোল্লায় গেছে? ”
মেকি রাগ দেখিয়ে ছোটখাটো একটা ধমক দিলো বোনকে। রাত্রিকে এখন না ধমকালে জ্বালিয়ে মারবে। কিন্তু নৈশের ধমকে রাত্রি মোটেও দমল না।
” গোল্লায় তো গেছো তুমি। প্রেমাসুখে পেয়েছে তোমাকে। কী মনে হয় আমি কিছু বুঝি না? এই যে সারাদিন অস্থির অস্থির করো,খেতে বসলে ঠিকমতো খাওনা। তারপর রাত জেগে ছাদে পায়চারি করো সবকিছুই খেয়াল করি আমি। ”
বোনের কথা শুনে রাগ করলো না নৈশ। উল্টো পরম মমতা অনুভব করলো। বোনটা তার দিকে কতটা খেয়াল রাখে! কপাল করে মা ও বোন পেয়েছে নৈশ। নইলে আজকাল আপন বোন যখন হিংসা করে সৎ হলে তো কথাই নেই! কিন্তু না। রাত্রি কখনো তেমন আচমকা করেনা। আর না তো স্নেহা চৌধুরী।
” লাভ ইউ বোনটি আমার। এত সুন্দর করে আমাকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য। ”
” টাকা দাও। টাকা ছাড়া কোনো কমপ্লিমেন্ট নিবো না।”
” আগে তোর ভাবিকে পাকাপোক্ত ভাবে পাই তারপর তোকে ঘুষ দিবো। আপাতত তুই সরর।”
রাত্রি সরলো না। ফোনটা ভাইয়ের দিকে উঁচিয়ে ধরে ঠোঁট উল্টে বললো,
” দেখো ব্রো,সবকিছুই রেকর্ড করা হয়েছে। এখন বলো নগদ হাজার টাকা দিবা না-কি আব্বুর কাছে যাবো?”
নৈশ অবাক হলো। কী দুষ্ট বুদ্ধি রে বাবা! বাবাকে বললে তো সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা হলো পূর্ণতার বয়স কম। এখুনি বিয়ে দিবে না শিওর। তাই আগেভাগে বাবা জানলে লজ্জায় পড়ে যাবে নৈশ।
” তুই আমার পাঁচটা না দশটা না একটা মাত্র বোন। তোকে দিবো না কাকে দিবো বল তো? টাকা নিয়ে রেকর্ডটা ডিলিট করে দে লক্ষ্মী বোন আমার। ”
” তাহলে দাও টাকা! ”
” বোকার হদ্দ একটা। আমি কি টাকা নিয়ে বাসায় ঘুরি?”
” তাহলে চলো চলো রুমে চলো।”
” হ্যাঁ চল। তোর মতো বোন থাকলে শত্রুর দরকার নেই। ”
রাত্রি ভাইয়ের হাত ধরে নিচতলায় যাচ্ছে। ভাই যা বলে বলুক। আপাতত টাকা পাচ্ছে সেটাই অনেক। সপ্তাহ হয়নি টাকা নিয়েছে। এখন যে আবারও দিবে সেটা কি বড়সড় ব্যাপার না?
” আহনাফ ভাইয়া শোনো একটা সমস্যা হয়েছে। ”
ফোনের অপরপ্রান্তে বসে আহনাফ কিছুটা অস্থির হয়ে শুধালো পায়েলকে, ” কী হয়েছে? ”
” গত থার্টি-ফাস্টের পার্টিতে যেখানে আমরা গিয়েছিলাম না? ওইখানে আবারও যেতে হবে। ”
আহনাফ মাথা চুলকাচ্ছে। এতদিন পরে হঠাৎ সেই জায়গায় কেনো যাবে মেয়েটা? আহনাফ পায়েলের বাবার বন্ধুর ছেলে। আপাতত ইয়াং বিজনেসম্যান। বাবার সাথে ব্যবসা সামলাচ্ছে।
” কিন্তু কেনো? এতদিন পরে! এনি থিং সিরিয়াস পায়েল?”
” আমি খুব ঝামেলায় ফেঁসে গেছি। ”
সহসাই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো পায়েল। চমকাল আহনাফ। বুকের বামপাশে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে সে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো আহনাফ। অস্থির চিত্তে শুধালো,
” পায়েল কী হয়েছে? প্লিজ বলো। আমার চিন্তা হচ্ছে। এই পায়েল?”
” আমি কাল সামনাসামনি বলবো। তুমি প্লিজ ওখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করো কাল।”
আহনাফ লম্বা শ্বাস নিয়ে বললো, ” বেশ। আমি সবকিছু ম্যানেজ করছি। শান্ত হও প্লিজ। কাল কখন আসবে তুমি? ”
” বেলা এগারোটার দিকে কলেজ গেটের সামনে এসো ভাইয়া।”
” ঠিক আছে। আপাতত মন খারাপ না করে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আমি আছি। আশা করি আহনাফ ভাইয়ের ওপর ভরসা আছে তোমার। শুভ রাত্রি। ”
আহনাফ কল কেটে দিলো। পায়েল নিজেকে সামলে নিয়েছে ততক্ষণে। অন্য কোনো বিষয় হলে যে আহনাফ কতটা সামলাতে পারতো সে বিষয় পায়েলের সন্দেহ নেই। কিন্তু এই বিষয় কতদূর করতে পারবে? এই “ভাইয়া” ডাকের কারণে সব সময় নিজেকে অপরাধী মনে করে আহনাফ। মেয়েটা তাকে “ভাই” বলে ডাকে আর সে কি-না মনে মনে তাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখে! বেয়ারা মনকে আশকারা না দিয়ে তীব্র শাষণ করে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো আহনাফ। সারাদিন কাজ করার ফলে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যায় আহনাফ। আগামীকালের অপেক্ষায় এখন।
চলবে,