যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে #পর্ব_৩৯ #তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

0
720

#যার_কথা_ভাসে_মেঘলা_বাতাসে
#পর্ব_৩৯
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

( প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

বেয়ারা মনকে আশকারা না দিয়ে তীব্র শাষণ করে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো আহনাফ। সারাদিন কাজ করার ফলে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যায় আহনাফ। আবার সকাল সকাল উঠে।

শুক্রবার, ঘড়ির কাঁটায় সকাল ন’টা বাজে । মল্লিক বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে ইফতি মল্লিক চা পান করতে করতে খবরের কাগজে নজর বুলচ্ছে। কন্ঠ আর বিনা তাড়াহুড়ো করে বাইরে যাবার জন্য তৈরি হয়ে এসেছে। সাথে আছে সমুদ্র ও শাওন। ইফতি আগে থেকেই রেডি হয়ে বসে ছিলো। বাড়িতে রইলো শুধু শায়লা ও শারমিন সুলতানা। ইফতির পরিচিত এক বন্ধুর বিয়ে। সেখানেই সবাই মিলে যাবে। পূর্ণতার কোনো এক বিশেষ কাজ থাকায় বিকেলে যাবে বলেছে।
” আমরা তো রেডি! তুমি এখনো বসে থেকে চা খেতে খেতে পেপার পড়বে?”
কন্ঠর ব্যস্তসমস্ত ভাবভঙ্গি দেখে ইফতি মুচকি হাসে। পুরনো কথা ভাবলেই হাসি পায় ইফতির। এই মেয়েটা যখন উচ্চমাধ্যমিকে পড়তো কী পরিমাণ সাজগোছ করতো ভেবে।
” চলো, আমার তো রেডি হওয়া বাকি নেই। ”
ইফতি চায়ের কাপ চেয়ারে রেখেই উঠলো। সবাই একসাথে বাসা থেকে বেরুলো।
” আব্বু আপাই কি বিকেলে একা একাই বিয়ে বাড়ি যাবে?”
বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে বসেছে সবাই। ইফতি ড্রাইভ করবে। পাশেই বসেছে শাওন। পেছনে বাকিরা সবাই।
” না৷ বিকেলে এসে আমি পূর্ণতাকে নিয়ে যাবো।”
” ঠিক আছে। ”
জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি ছড়িয়ে দিলো শাওন। গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। সবকিছুই চলন্ত মনে হচ্ছে শাওনের কাছে। তবে আদতে শাওন নিজেই চলমান।

রৌদ্রস্নাত দিন। বাইরে যানবাহনের কর্কশ আওয়াজ। সাথে কালো ধোঁয়া তো আছেই। চারদেয়ালে আবদ্ধ ঘরের মধ্যে বসে আছে সাত সদস্যের একটি দল। পঞ্চ পান্ডব ব্যতীত সেখানে আছে ভুক্তভোগী পায়েল ও আহনাফ। সকাল সকাল এখানে এসেই সবকিছু ম্যানেজ করেছে আহনাফ। এখানে এসে সবাই বসেছে পনেরো মিনিট হবে। ফ্ল্যাটের মালিক অনেক খোঁজাখুঁজি করে সেদিনের রাতের সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছেন। মাত্র ল্যাপটপ নিয়ে আসলেন তিনি। ল্যাপটপ নিয়ে রুমে আসতেই পায়েলের অস্বস্তি হচ্ছে। নিশ্চয়ই অশালীন কর্মকাণ্ডের সব ভিডিও আছে এখানে? সেগুলো সবাই দেখলে নিশ্চয়ই পায়েলের ভালো লাগবে না?
” ধন্যবাদ ভাই। আপনি আসুন। আমরা ভিডিও দেখে আপনাকে ডেকে নিবো।”
আহনাফের কথায় সালাউদ্দিন ফিরোজ রুম থেকে বেরিয়ে যান। আহনাফ ল্যাপটপের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। ভিডিও ওপেন করার আগে সবার দিকে একবার তাকাল।
” প্রাথমিক কিছু দেখলেই ভিডিও বন্ধ করে দিবেন ভাইয়া। রুমে কার সাথে গেছিল সেটুকু জানলেই হবে। ”
সজল সকলের দিকে তাকিয়ে বললো। আহনাফ আস্বস্ত করে বলে,
” অবশ্যই। ”
ভিডিও অন করলো আহনাফ।
‘পূর্ণতা পায়েলের হাত ধরে আছে। সবার দৃষ্টি এখন অপরাধীর খোঁজে। ভিডিয়োতে রাকিবের সাথে কথা বলছে পায়েল। মিনিট পাঁচেক কথা বলার পরে গেলো ভীড়ের মধ্যে। সবাই ড্রিংকস করছে আর যার যার মতোই ডান্স করছে। সময় চলছে ভিডিয়োর। আধঘন্টা ধরে চলছে কিন্তু কাউকে পায়েলের সাথে তেমন ঘনিষ্ঠ হতে দেখা যায়নি এখনো। সবাই প্রায় মাতাল অবস্থা। অধিকাংশ পার্টি থেকে বেরিয়ে গেছে। পরিচিত মুখ বলতে পায়েল, সারোয়ার ও আহনাফ। সারোয়ারও আহনাফের ব্যাচের। সোফায় প্রায় অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে আহনাফ। পায়েল ফ্লোরে বসা। সারোয়ার পায়েলের কাছে এসে কানে কানে কিছু একটা বলতেই পায়েল আহনাফের দিকে এগোতে লাগলো। হেলেদুলে ঠিক আহনাফের পাশে গিয়ে বসলো। আহনাফ পায়েলের উপস্থিতি টের পেয়ে কোনো রকম উঠে বসলো। দুজনের চোখাচোখি হতেই দু’জন দু’জনাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো ফ্ল্যাটের অন্য দিকে!’

ভিডিও থামিয়ে দিয়েছে আহনাফ। সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পায়েল ও আহনাফের দিকে। আহনাফ লজ্জায়,ঘৃণায়,রাগে মাথা নিচু করে বসে আছে। সেদিন বন্ধুরা মজা করে সফট ড্রিংকসের সাথেও অল্প করে হার্ড ড্রিংকস মিশিয়ে দিয়েছিল। ফলে সেগুলো পান করার ফলে আহনাফও নেশাগ্রস্ত হয়ে যায়। সচারাচর আহনাফ নেশা করে না। এই মুহুর্তে সবাই একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছে।
” আহনাফ আপনি নিজেই….”
” পূর্ণতা! থাম। আমরা বরং বাইরে চল। পায়েল উনার সাথে কথা বলুক। দুজনেই পরিচিত। আশা করি যেকোনো সিন্ধান্ত একত্রে নিলে ভালো হবে। ”
পূর্ণতামে থামিয়ে দিয়ে সাইফা বললো। পূর্ণতাসহ সবাই নীরবে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। আহনাফ যে কীভাবে পায়েলের সাথে কথা বলবে সেটাই বুঝতে পারছে না। পায়েল বারবার শুধু একটা কথাই ভাবছে আহনাফের তার প্রতি দূর্বলতা ছিল? নাকি কেবল নেশারঝোঁক ছিল?
” পায়েল আমার ক্ষমা চাওয়ার মতো মুখ নেই তবুও সরি। আমি সজ্ঞানে কিছু করিনি।”
ইতস্ততভাবে বললো আহনাফ। পায়েল চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে চোখ মেলে তাকালো। দুজনেই পরিস্থিতির স্বীকার। তাই অহেতুক আহনাফকে দোষারোপ করে লাভ নেই। পায়েলের অসম্মিতিতে তো কিছু হয়নি! হলে সবাই টের পেতো। এসব পার্টিতে যোগদান করা মেয়েদের জন্য কতটা অনিরাপদ আজ সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে পায়েল।
” আসলে আপনার একার ভুল নয়। তাই অহেতুক সরি বলবেন না। যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমার সাথে কী হয়েছিল এটাই জানার ছিলো। ”
এতটুকু বলে থামলো পায়েল। সময় নিয়ে ফের কথার খেই ধরলো সে।
” আশা করি বাচ্চাটাকে নিশ্চিহ্ন করার কাজে সাহায্য করবেন। ”
কাঁপা কাঁপা গলায় কথাটা বলেই নিঃশব্দে ঢোক গিললো পায়েল। ইশ একটা প্রাণকে শেষ করে ফেলবে সে? এতক্ষণ সবকিছু ঘোরের মতো থাকলেও হুট করেই আহনাফ অনুভব করে পায়েলের গর্ভে তারই অনাগত সন্তান! চকিতে পায়েলের দিকে দৃষ্টিপাত করে আহনাফ। সবকিছু ভুলে পায়েলের দু’হাত আঁকড়ে ধরে বলে,
” তুমি কি আমাকে আমাদের বাচ্চার বাবা ডাক শুনতে দিবে? আমার ঘরণী হবে? উইল ইউ পায়েল?”

বাসায় ফিরতে ফিরতে দুপুর আড়াইটা বেজে গেছে পূর্ণতার। ক’দিন ধরে বিভিন্ন ঝামেলার জন্য অনলাইনে তেমন থাকা হচ্ছে না। মেসেঞ্জারে তো কবে গেছে মনেও নেই! তাই দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পাট চুকিয়ে ফোন হাতে নিয়ে শুয়েছে। মেসেঞ্জারে ঢুকেই সবার প্রথমে “নেশা ভাই ” নিক নেইম দেওয়া আইডির মেসেজ ওপেন করলো পূর্ণতা।
” কেউ নেই! কেউ খোঁজ তো দূর ভাবনার আশেপাশেও রাখে না।”
নৈশের ছেলেমানুষী টাইপের মেসেজ দেখে পূর্নতার ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। পূর্ণতা সময় নিয়ে মেসেজ টাইপ করলো। তবে খুব সংক্ষিপ্ত!
” ব্যস্ততা থাকে তো।”
নৈশ অনলাইনেই ছিলো। তাই মেসেজ আসা মাত্রই সিন করে। পূর্ণতার মেসেজ আসাতেই মনটা কেমন ফুরফুরে হয়ে গেছে নৈশের। এভাবে নয় কলে কথা বলতে ইচ্ছে করছে খুব।
” কল দেই?”
পূর্ণতার কোনো হেলদোল হলোনা এমন আবদার দেখে। মনে মনে সে-ও চাচ্ছিল নেশা ভাইয়ের টালমাটাল করা ভয়েস শুনতে।
” ওকে।”
পূর্ণতার সম্মতি পেতেই অডিও কল দিলো নৈশ। পূর্ণতা সময় নিয়ে কল রিসিভ করলো। অথচ সে কিন্তু ফোন হাতে নিয়ে বসে ছিলো কল আসার অপেক্ষায়।
” আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো পিচ্চি মেয়ে? ”
” ওয়া আলাইকুম আসসালাম। অবজেকশন! আমি পিচ্চি নই। আমি আঠারো প্লাস হয়ে গেছি।”
” তারমানে আঠারো প্লাস হয়ে গেছো?”
নৈশের দুষ্ট কথার অর্থ বুঝতে পূর্ণতার সময় লাগলো না। বুঝে উঠা মাত্রই তড়িৎ গতিতে কল কেটে দিয়ে দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে শুরু করলো মেয়েটা। লোকটা তো ভীষণ পাজি! নৈশ পূর্ণতার অপ্রস্তুত হয়ে কল কেটে দেওয়ায় ভীষণই মজা পেয়েছে। একা একাই হাসলো খানিকক্ষণ। তারপর আবারও টেক্সট করলো, ” সম্ভব হলে ফোন নম্বর দিও। নয়তো প্রতিদিন একবার করে নক দিও। বেশি বেশি করে ফেলছি? হুহ্ একটু। ”
” বেশি কিছু ভালো না। বুঝলেন? আসি এখন। পরে কথা হবে। ”
” কখন?”
” অপেক্ষা করবেন? ”
” আজীবন।”
” এতো সময় অপেক্ষা করাচ্ছি না আপাতত। রাতেই অপেক্ষার অবসান ঘটবে। ”
” টেইক কেয়ার। ”
” সেইম টু ইউ নেশা ভাই! ”
চলবে,
আগের পর্বের লিংক https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/976734787381627/?mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here