#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৬
সেদিনের মতো শ্রাবণ ও শ্রাবণের পরিবার চলে যায়। শ্রাবণকে থাকতে বলা হয়েছিল কিন্তু আর্শির দিক থেকে কোনো পজেটিভ সাইন না পেয়ে শ্রাবণ নিজেই থাকতে চায়নি। এদিকে আর্শি সন্ধ্যা থেকে ঘুমিয়ে এখন রাত এগারোটা বাজে ঘুম থেকে উঠে অলস বসে আছে। মিসেস আশালতা খাবার খাইয়ে দিয়ে যান। এখন নামাজ পড়ে এসে ফোন নিয়ে বসেছে। কিছুক্ষণ গেমস খেলে, মিমস দেখে এখন তার বিরক্ত লাগা শুরু হয়েছে। ভাবলো শ্রাবণকে ফোন করবে কী-না! যদি কিছু ভেবে বসে? দোটানায় ভুগছে খুব।
“আমাকে যখন রাত দুইটা-তিনটায় কল করে, তখন সে তো ভাবে না। তো এখন মাত্র বারোটা বাজে। আমি কেন এতো ভাবছি?”
এসব ভেবেই সে শ্রাবণের নাম্বার ডায়াল করে। দুইবার রিং হওয়ার পর শ্রাবণ রিসিভ করে। আর্শি প্রথমে সুন্দর করে সালাম দেয়। শ্রাবণও সালামের জবাব দেয়। আর্শি শুধায়,
“বিজি আপনি?”
“না। এমনি ল্যাপটপ নিয়ে বসে ছিলাম।”
“ওহ। ঘুমাবেন কখন?”
“ঘুমাব। তুমি এই সময়ে না ঘুমিয়ে ফোন করলে যে?”
“আমি সন্ধ্যা থেকে ঘুমিয়ে উঠেছি। একটু পর আবার ঘুমাব।”
“তাহলে ঘুমিয়ে পড়ো।”
আর্শি কিছুক্ষণ নিরব থাকে। শ্রাবণের কথাতে আগের মতো ভাইব পাচ্ছে না সে। কেমন যেন বিষণ্ণ কণ্ঠস্বর। আর্শি সন্দিহান স্বরে প্রশ্ন করে,
“আপনার মন খারাপ?”
শ্রাবণ খানিক নড়ে বসে বিপরীতে নিজেও শুধায়,
“মন খারাপ হবে কেন?”
“সে তো আপনি জানেন। আমি কীভাবে বলব? আমি তো জাস্ট এটা ওটা সন্দেহই করতে পারি। সঠিক জবাব তো আপনি জানেন।”
শ্রাবণ নিঃশব্দে ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“কিছুই হয়নি। ঘুমিয়ে পড়ো।”
আর্শি বলে,
“আপনি এখনো গতকাল রাতের কথা ধরে বসে আছেন? সরি তো বললাম।”
শ্রাবণ চোখ বুজে বিছানার হেডবোর্ডে মাথা এলিয়ে বলে,
“তুমি অযথা ভাবছো। আমি ওই কারণে কিছু মনে করে নেই।”
“তাহলে?”
“আসলে আমি পরশুদিন তোমার সাথে ইটালি যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু…”
শ্রাবণকে কথা শেষ করতে না দিয়ে আর্শি প্রশ্ন করে বসে,
“কেন? আপনি ইটালিতে জব নিচ্ছেন?”
“আরে না। এমনিতেই তোমার সাথে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভিসা এতো জলদি হচ্ছে না। আমার ফ্রেন্ডের ফ্রেন্ড জানালো কম করে দুই সপ্তাহ লাগবে। আরও বেশিও লাগতে পারে। বলা যায় না।”
“ওহ। সমস্যা নেই। আপনি আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমার ওখানে কোন অসুবিধা হবে না। এক বছর তো ছিলাম। কোনো অসুবিধা হয়নি। তাছাড়া আমি তো একা থাকি না। আমার সাথে আরো পাঁচ-ছয় জন মেয়ে থাকে। এখন আপনি গেলে আমার রুমমেটকে অন্য রুমে শিফট করতে হবে। অথবা আমাকেই আপনাকে নিয়ে কিছুদিনের জন্য অন্য কোথাও থাকতে হবে।”
শ্রাবণ ছোটো করে বলল,
“হুম। ঘুমাও। পড়ে কথা হবে।”
এই বলে শ্রাবণই কল কে*টে দেয়। আর্শি হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজে নিজেই বলে,
“আমি কিছু বললেই দেখি ওনার খারাপ লেগে যায়। এখন আবার কী এমন বললাম যে ফোন কে*টে দিলো?”
কিছুক্ষণ আকাশ-পাতাল চিন্তা করে আবারও নিজে নিজেই বলতে থাকে,
“উনি কি ভাবছেন আমি উনাকে যেতে মানা করছি? কিন্তু আমি তো উনাকে মানা করিনি। আমি তো উনার চিন্তা কমানোর জন্য বললাম। তাছাড়া সত্যিই তো বলেছি! উনি সেখানে গেলে তো আমার ফ্রেন্ডকে বা আমাকেই উনাকে নিয়ে শিফট হতে হবে। সত্য কথা বললেও মানুষ মাইন্ড করে বসে! ধ্যাত! ভাল্লাগে না।”
এই বলে আর্শি ফোন হাত থেকে রেখে কাঁথা টেনে চোখ খিঁচে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।
ওইদিকে শ্রাবণ ভাবছে,
“আর্শি চাচ্ছে না, আমি ওর সাথে যাই। ওতো সময় চেয়েছিল। ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে প্রেশারাইজড করে আকদের জন্য রাজি করিয়েছে সবাই। আমি তবে ইটালি যাওয়ার প্ল্যান ক্যান্সেল করে দিব?”
নিজের ভাবনা-চিন্তার উপর শ্রাবণ লাগাম টানতে পারছে না। যতোই মনোযোগ হটানোর চেষ্টা করে, ততোই এই চিন্তা তাকে ঝেঁকে ধরছে। অতঃপর মস্তিষ্ককে রেস্ট দিতে লো ডো*জের স্লি*পিং পি*ল খেয়ে নেয়।
________
আজ আর্শির ফ্লাইট। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রথমে কাতার। তারপর ইটালির ফ্লাইট। সকাল ১০টার ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কাতার যাবে আর্শি। খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে আর্শি ও তার মা-বাবা, ভাই। আরিয়া ও আশিক ওদের বাড়ি থেকে আসবে। শ্রাবণ ও শ্রাবণের পরিবারও আসবে। মিসেস আশালতা আড়ালে কাঁদছেন। আর্শি গাড়িতে মায়ের পাশেই বসে মায়ের কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছেন। আদিব ড্রাইভারের সাথে বসা। নয়টার মধ্যে এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাবে ওরা।
এয়ারপোর্টে পৌঁছে ফ্লাইটের সময়ের অপেক্ষা করছে। ইতোমধ্যে আরিয়া ও আশিক এসে পৌঁছেছে। মিসেস আশালতাকে মাঝে রেখে দুই মেয়ে দুই পাশে বসা। মিসেস আশালতা নিজের আবেগ সামলাতে পারছেন না। এখন তার কাছে দুই মেয়ের একজনও থাকবে না। ছেলেও সারাদিন অফিসে থাকবে। উনার মনের অবস্থা খুবই নাজুক।
সাড়ে নয়টার দিকে শ্রাবণরাও এসে পৌঁছেছে। মিসেস সন্ধ্যা, মিসেস আশালতার পাশে বসে স্বান্ত্বনা দিচ্ছেন। আর্শি ও শ্রাবণ একটু দূরে গিয়ে বসেছে। দুজনেই চুপ। নিরবতা ভেঙে শ্রাবণ বলে,
“তুমি সাবধানে থেকো। আমি জানি এক বছর তুমি সেখানে একাই ছিলে। কিন্তু এজ অ্যা হাজবেন্ড আমারও চিন্তা হয়।”
আর্শি প্রত্যুত্তরে বলে,
“আপনি কি আবার আমার কথায় রাগ করেছেন? দেখুন, আমি আপনাকে যেতে মানা করিনি। আপনাকে জাস্ট টেনশন করতে নিষেধ করেছি। প্লিজ আমার কথাকে অন্যভাবে নিবেন না।”
“অন্যভাবে নেইনি। আমি বুঝতে পারছি। আমাকেও কানাডা ফিরতে হবে। দুই মাসের ছুটিতে এসেছি।”
“কবে ফিরছেন?”
“ভাবছি। জলদি ফিরে যাব। যাতে পরবর্তীতে বেশি ছুটি পাই। এখন যেহেতু ইটালির ভিসা পেতে টাইম লাগবে।”
“ওহ আচ্ছা। আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন। আপনি কানাডাতে আমি ইতালিতে। ছয় ঘণ্টার ডিফরেন্স। তাই কমিউনিকেশনে কিছুটা ঝামেলা হবে। একটা কমন টাইম বের করতে হবে দুজনের।”
“হুম। বের করে নিবো।”
দুজনে আবারও নিরবতার আশ্রয় নিলো। শ্রাবষ কফি আনার বাহানায় উঠে যায়। এই সুযোগে আরিয়া ও আশিক এসে আর্শির পাশে বসে। আশিক প্রথমে শুধায়,
“আপু, শ্রাবণ ভাইয়ের সাথে তোমার আর কোনো প্রবলেম নেই তো? দেখো, দুজনের মধ্যে লং ডিসটেন্স শুরু হবে। তাই কোনো প্রবলেম থাকলো শর্টআউট করে নাও।”
আরিয়াও একই সুর বলে। আর্শি হতাশ হয়ে বলে,
“আই নো, লং ডিস্টেন্স মেন্টেন করা অনেক টাফ। এজন্যই আমি বলেছিলাম এক বছর পর আকদ, বিয়ে হোক। কিন্তু কেউ শুনলোই না! তাছাড়া আমি যাই বলি, তাতেই এখন উনার খারাপ লেগে যায়। দুইদিনেই উনার মধ্যে হিউজ চেঞ্জ। ডোন্ট নো, হোয়াট উইল হ্যাপেন!”
আরিয়া ও আশিক একে অপরের দিকে অসহায় দৃষ্টি বিনিময় করে। কিছুক্ষণ পর আর্শিকে যেতে হবে। মিসেস আশালতা তখন বড়ো মেয়েকে জড়িয়ে কাঁদছেন। পাশ থেকে আরিয়া ও মিসেস সন্ধ্যা উনাকে আগলে রেখেছেন। আর্শিও ইমোশোনাল হয়ে পড়েছে। তাও জোড় করে মাকে ছাড়িয়ে লাগেজ নিয়ে ইমিগ্রেশন পার করে চলে যায়।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।