শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_১৯

0
286

#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৯

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর শ্রাবণ বলে,
“সরি!”
আর্শির মন কৌতুহলী হয় ভীষণ। হঠাৎ শ্রাবণ তাকে সরি কেন বলছে? সে শুধায়,
“হঠাৎ সরি বলছেন কেন?”

“আমি ভাবছিলাম, তুমি আমাকে পছন্দ করো না বলে…”

কথার মাঝে শ্রাবণকে থামিয়ে দিয়ে আর্শি চটপট বলে ওঠে,
“কী ভাবছিলেন? এটাই যে, আমি যেভাবেই হোক আপনার থেকে দূরে থাকতে চাই?”

শ্রাবণ চুপ করে আছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আর্শি জবাব না পেয়ে বলে,
“আপনি আমাকে আগে যেভাবে ভালোবাসতেন, এখনও তেমন ভাবেই ভালোবেসে যান। আমি কথা দিচ্ছি, আমি অন্তত অন্যকারও প্রতি আসক্ত হবো না। আই নিড অ্যা লয়াল ম্যান, হু লাভস মি মোর দেন আই লাভ হিম।”

শ্রাবণের হৃদপ্রাঙনে উত্তাল ঢেউ বইলো। মনের মধ্যে থাকা অশান্তি গুলো যেন কর্পূরের ন্যায় উড়ে যেতে লাগলো। বাকরুদ্ধ অবস্থা তার। আর্শির কথার বিপরীতে যে মুখ ফুটে কিছু বলবে, সেই শক্তিটাও পাচ্ছে না। আর্শি অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে শ্রাবণের জবাবের। তার মনে খুঁতখুঁত করছে। আর্শি মনে মনে বলে,

“প্লিজ শ্রাবণ, কিছু তো বলুন। ভালোবাসা পাওয়ার থেকেও আমার বেশি ভয় ধো*কার! আমি চি*টেড হতে চাই না। আমাদের মাঝে দূরত্ব থাকাটাই যে বেশি ভয়ের। আমার পার্সপেক্টিভ আপনি বুঝলে আমাকে এই ভয়ে ভয়ে থাকতে হতো না।”

ফোনের দুই পাশে দুইজনই নিরব। শ্রাবণ বেডরুম থেকে উঠে হাঁটতে হাঁটতে বারান্দায় গিয়ে বসলো। বারান্দায় বসে প্রাকৃতিক শীতল হাওয়ায় ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে বলল,

“তুমি শুধু আমার হয়ে থেকো। আমি তোমায় যেকোনো পরিস্থিতিতে আগলে রাখব।”

শ্রাবণের কণ্ঠে হয়তো মা*দকতা ছিল, নয়তো আর্শি লজ্জা পেয়ে ফোন কান থেকে নামিয়ে রাখতো না। অপরদিকে শ্রাবণও প্রত্যুত্তরের অপেক্ষা করছে। সে “হ্যালো! হ্যালো!” করতেই আর্শি ফোন কানে নিয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,

“ভালোবাসতে আমার সময় লাগবে। আবার এমনও হতে পারে, পরমুহূর্তেই ভালোবেসে ফেললাম!”

“আমি আরও ধৈর্যশীল হবো।”

হাসলো আর্শি। অতঃপর বলল,
“আমাদের মাঝে এই যে বর্গমাইল বর্গমাইল দূরত্ব! রূপকথার ভাষায় বলা যায়, সাত সমুদ্র তেরো নদীর দূরত্ব! এটাও তো বুঝতে হবে। গানে-কবিতায় বলে, ‘দূরত্ব নাকি ভালোবাসা বাড়ায়।’ যেমন বাড়ায় তেমনি শেষও করে। একটু সহ্য করে নিয়েন। আমার স্বভাব আপনার জানা। সব জেনেই তো ভালোবেসেছেন।”

“হুম। তুমি এক বছর স্টাডিতে মনোযোগ দাও। আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হলে চলে যাব তোমার কাছে।”

দুজনের মুখে লেগে আছে মানসিক প্রশান্তি। একজনের অপেক্ষার, আরেকজনের ভরসার। অপেক্ষা ও ভরসা, দুইই তো ভালোবাসার পূর্ণরূপ।

________

“আশিক! তুমি বাসের পেছনের দিকে সিট নিয়েছ কেন?”

আরিয়া একটু জোড়েই বলাতে আশিক থতমত খেয়ে যায়। ঢোক গিলে বলে,
“সামনের বা মাঝের দিকে পাইনি। কিছু হবে না। আমাদের সিটের পর আরও দুটো সারি আছে তো।”

আরিয়া তেড়ে এসে বলে,
“আমার ভমিটিংয়ের প্রবলেম আছে। এটা আবার এসি বাস। যদি….”

আরিয়ার বলা প্রথম কথাটাতেই আশিক আঁতকে ওঠে! সে বিস্ময় নিয়ে বলে,
“কী বলছো! তোমার বমি হবে? প্লিজ প্লিজ! বমি করো না। দেখো বমির গন্ধ আমার সহ্য হয় না।”

“সিট নেওয়ার সময় এটা মা*থায় আসেনি?”

“আমি কি জানতাম নাকি! তুমিও তো বলোনি।”

“আমার সবসময় বমি হয় না। আমার মাঝেমাঝে হয়। ঝাঁকিতে হয়। জার্নিতে আমি আপুর কাঁধে সারাক্ষণ ঘুমিয়ে থাকি।”

আশিক তাড়াহুড়ো করে বলে,
“আমার কাছে বমির ঔষুধ আছে। দেই? খেয়ে নাও। আর আমার কাঁধে ঘুমিয়ে থেকো। ঘুমের ঔষুধও আছে। ওটা খাবে? তাহলে ঝাঁকি টেরও পাবে না। তুমি আমার কোলেই ঘুমিয়ে থেকো।”

আরিয়া চোখ-মুখ কুঁচকে আশিকের বাহুতে মে*রে বলে,
“এতো ভয় পাচ্ছো কেন? এতো ভীতু হলে চলবে? তোমার বউ একটু বমি করবে, তুমি সামলাতে পারবে না?”

“সত্যি বলতে, না! আমার এসবে পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। মেডিসিন দুটো খেয়ে নাও। স্লিপিং পিলটা মাইল্ড। কিছু হবে না। তোমারও কষ্ট কম হবে।”

আলো আঁধারিকে আশিকের অসহায় মুখশ্রী দেখে আরিয়া হেসে ফেলল। ওদিকে ড্রাইভারের হেলপার বলছে এখনি বাস ছাড়বে। আরিয়া আশিককে মেডিসিন দিতে বলল। অতঃপর খেয়ে নিয়ে আশিকের হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

_______

পরদিন ঘুম থেকে উঠে নাস্তার টেবিলে শ্রাবণ ইরাদকে বলে,
“তোর ফ্রেন্ডকে বল যেন ইটালির ভিসার ব্যাবস্থা করে দেয়। জলদি।”

ইরাদের জবাবের আগেই স্নিগ্ধা বলে ওঠে,
“তুমি না বললে যাবে না।”

“এখন বলছি যাব।”

স্নিগ্ধা আবার কিছু বলতে নিলে ইরফান টেবিলের নিচ দিয়ে স্নিগ্ধার বাম হাত ধরে কিছু না বলতে ইশারা করে। স্নিগ্ধা চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ছেড়ে রুটি ছিঁড়ে মুখে পু*ড়ে নেয়। ইরাদ বলে,

“ওকে। আমি কথা বলে দেখছি।”

“হুম।”

তারপর শ্রাবণ আর কিছু না বলে খেতে শুরু করে। শফিক সাহেব খাওয়ার শেষের দিকে শ্রাবণকে জিজ্ঞেসা করেন,
“তুমি কি কানাডাতে সেটেল হওয়ার চিন্তা করছো?”

“হ্যাঁ বাবা। ওখানের জবটা ভালো। সিকিউর। আমি চাই সেটেল হয়ে গেলে তোমাদেরও নিয়ে যাব। স্নিগ্ধাও তো সিংগাপুরেই থাকে। তোমরা দেশে একা একা কী করবে!”

মিসেস সন্ধ্যা বলেন,
“কিন্তু দেশেই তো শান্তি।”

“আচ্ছা, মা। টপিক বাদ দাও। আমি ইরাদকে নিয়ে বেরোবো। ইরাদ, এমন ইঁ*দুরের মতো খুঁটে খুঁটে না খেয়ে জলদি খা!”

শ্রাবণের কথা শুনে ইরাদ ক্ষেপে গেলেও ইশরাক ফিক করে হেসে ফেলে বলে,
“চাচু, তোমার দাঁত কি ইঁদুরের মতো?”

ইরফান হাসি কন্ট্রোল করে রেখেছে। স্নিগ্ধা বাদে সবাই ইরাদকে নিয়ে হাসলেও স্নিগ্ধা গম্ভীর হয়ে খাওয়া শেষ করে উঠে পড়ে। ইরফান তা দেখে নিজেও উঠে যায়।

নিজের রুমে গিয়ে স্নিগ্ধা থম মে*রে বসে আছে। ইরফান দরজা লাগিয়ে স্নিগ্ধার পাশে বসে জিজ্ঞেসা করে,
“তুমি এরকম করছো কেন? দেখো, তোমার ভাইয়া নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে। এখন এটা নিয়ে ঝামেলা করো না। যা হওয়ার তাই তো হয়েছে। বিয়েটা তো হয়ে গেছে। তাইনা?”

স্নিগ্ধা অসন্তোষ নিয়ে বলে,
“আমার ভাই না হয় ওই মেয়ের জন্য দিওয়ানা! কিন্তু আমার বাবা-মাও ও-কে বোঝালো না। আর্শিকে আমি খুব ভালো করে চিনি। খুব ক্লোজ ছিল আমার। ও সব সময় আমার কাছে ভাইয়াকে নিয়ে নিন্দা করতো। একদিন তো আমাকে বলে ফেলেছিল, আমার ভাই নাকি ছ্যাঁ*চড়ার মতো করে! সাত বছর আগের কথা। সেই দিন থেকে আমি ওর সাথে কথা বলি না। কারও ফিলিংসকে সে ছ্যাঁচ*ড়ামো বলতে পারে না।”

ইরফান স্নিগ্ধাকে শান্ত করতে বলে,
“তুমিও কি বাচ্চাদের মতো জেদ ধরে বসে আছো! সাত বছর আগে, আর্শির বয়সই বা কত ছিল! কলেজে পড়তো এমন। তখন তো মানুষ কতো কথাই বলে।”

“তাই বলে আমার কাছে আমার ভাইয়েরই নিন্দা করবে! তাও এভাবে! ওর তো এটা বোঝা উচিত ছিল, আমার ভাইয়ের নামে নিন্দা ও আমার কাছেই বিশ্রি ভাবে করছে।”

“স্নিগ্ধা, শান্ত হও। তুমিও কিন্তু এটা অস্বীকার করতে পারো না যে তোমার ভাই আর্শির জন্য সেসময় আদিবদের বাড়িতেই সারাক্ষণ পড়ে থাকতো। আর্শির এসব ভালো লাগতো না। মুখের উপর কতোবার বলেছিলও মেয়েটা। তারপরও তোমার ভাই, সেখানেই পড়ে থাকতো। ইরাদ আমাকে এসে বলতো।”

“তুমি ওই আর্শির হয়ে ওকালতি করবে না। এতোই যখন ওর আমার ভাইয়াকে অপছন্দ তাহলে এখন বিয়েটা করলো কেন? না করতো বিয়েটা। আমার ভাইয়ের জন্য মেয়ের লাইন লেগে যেত।”

“বাদ দাও না। ওরা ওদের মত ওদের সম্পর্কটাকে গুছিয়ে নিক। তুমি আর্শির প্রতি রাগ করে থেকো না। তোমার ভাইয়া এই বিষয়টাকে ভালোভাবে দেখে না। তোমার এটাও বোঝা উচিত।”

“আমি মেয়েকে কিভাবে দেখবো না দেখবো সেটা সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার। ভাইয়ার এতে ভালো লাগলো কী লাগলো না সেটা আমার দেখার বিষয় না। সে তো আর বিয়ের সময় আমার অপিনিয়ন নেয়নি। সে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছে।”

ইরফান মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“ঠিক আছে! তুমি তোমার অপিনিয়ন, তোমার পার্সপেক্টিভ সব নিয়ে থাকো। কোন সমস্যা নেই। শুধু তোমার ভাইয়ের সামনে গিয়ে এসব কথাবার্তা বলো না। তুমি নিজের লাইফে হ্যাপি আছো কী-না সেটা নিয়ে ভাবো। তোমার ভাইয়েরটা তোমার ভাই বুঝে নেবে।”

এই বলে ইরফান উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। স্নিগ্ধা বেজার হয়ে বসে থাকে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

গল্পটা কার কেমন লাগছে আমি জানিনা। হয়তো আপনাদের মনমতো হচ্ছে না। আমার মনে হয় বেশি টানাও উচিত হবে না। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here