#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৬
ভেজা চুলে ব্যালকনিতে বসে আছে আর্শি। স্নিগ্ধ সকালে উদিত সূর্যের দিকে নির্নিমেষ চেয়ে আছে সে। রুমে শ্রাবণ উঁবু হয়ে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎই তাকে মন খারাপের রেশ ঘিরে ধরেছে। তবে কি শ্রাবণের হুটহাট মন খারাপের রোগটা তাকেও পেয়ে বসলো? প্রশ্নটা মনে হতেই মৃদু হেসে ওঠলো। কিছুক্ষণ আগে শ্রাবণকে বলেছিল, একটু হাঁটতে বেরোবে। সকালের নাস্তাটা বাহিরে করবে। কিন্তু শ্রাবণের বেরোতে ইচ্ছে করছে না। ঘুম পাচ্ছে। আরও কিছুক্ষণ পর রুমেই খাবার অর্ডার করে নিবে বলে মনস্থির করে ঘুমিয়ে পড়লো। আর্শির খিদেও পেয়েছে। সে এবার উঠে দাঁড়ালো। তারপর রুমে গিয়ে শ্রাবণের হাত ধরে টানতে শুরু করলো। শ্রাবণ পিটপিট করে চেয়ে শুধায়,
“কী হয়েছে?”
“আমার খিদে পেয়েছে।”
“তাহলে আসো!”
আর্শি ভ্রুঁ কুঁচকে শ্রাবণের পিঠে একটা কি*ল দিয়ে বলে,
“আমার সত্যি খিদে পেয়েছে। আপনি যদি না যান তবে বলেন। আমি একাই চলে যাব। সোজা গিয়ে অ্যাপার্টমেন্টে উঠব। আপনি এখানে পড়ে পড়ে ঘুমান!”
এই বলে আর্শি রেগে বিছানা থেকে নেমে যেতে ধরলে শ্রাবণ ওর হাত টেনে নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসে। আর্শি ঝুঁকে পড়ে শ্রাবণের মুখের কাছে। শ্রাবণ সম্মোহিত দৃষ্টিতে চেয়ে আর্শির সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে বলে,
“তুমি জানো? রাগলে তোমাকে কেমন লাগে?”
আর্শি মাথা নাড়িয়ে না জানায়। শ্রাবণ ফের বলে,
“রাগলে তোমাতে ঐশ্বরিক সৌন্দর্য ভর করে। সবাই হাসি মুখের প্রেমে পড়ে, আমি তোমার রাগান্বিত মুখটাতে বারবার প্রেমে পড়ি! কেনো বলো তো?”
আর্শি নজর হটিয়ে কিঞ্চিত হাসলো। অতঃপর জিজ্ঞাসা করলো,
“কেন?”
শ্রাবণ হেসে জবাব দেয়,
“তোমার চোখ দুটোতে তখন মায়া ভর করে। আরও শত শত কারণ আছে, যা আমি বলে শেষ করতে পারব না।”
“ওহ আচ্ছা! তুমি নাহয় সেই মায়াতে ডুবে থাকতে পারো। কিন্তু আমার কী হবে?”
আর্শির হাস্যজ্জ্বল মুখে এহেনো কথা শুনে শ্রাবণ সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে আর্শি শ্রাবণের হাত ছাড়িয়ে সোজা হয়ে বসে তীক্ষ্ণ মেজাজে বলে,
“এখন কি তবে আমি আয়নার সামনে গিয়ে নিজের চোখ দেখতে থাকব? যাতে করে নিজের চোখের মায়ায় নিজেই ডুবে গিয়ে দিন-দুনিয়া ভুলে, খিদে ভুলে থাকতে পারি!”
শ্রাবণ এবার বুঝলো। সে ঢোক গিলে বলে,
“কয়টা বাজে?”
“দশটা!”
“এতো! আমি তো ভাবলাম ৮টা বাজে।”
আর্শি কিছু না বলে শুধু শ্রাবণের দিকে এক পলক তাকালো। শ্রাবণ তাতেই উঠে সুরসুর করে ওয়াশরুমে হাত-মুখ ধুঁতে চলে গেলো। আর্শি মুখে হাত দিয়ে হাসলো।
_________
আরিয়া ক্যাম্পাসের একটা জায়গায় মন খারাপ করে বসে আছে। কিছুক্ষণ পরপর ফোন দেখছে আর বিড়বিড় করছে। এদিকে আশিক আরিয়াকে খুঁজছে। সে আরিয়ার সাথে ভার্সিটির থেকে বেরোচ্ছিল, তখনি এক জুনিয়র মেয়ে তাকে একটা কাজে আর্জেন্ট ডেকে নিয়ে যায়। আশিক আরিয়াকে বলেছে যাতে সে ক্যান্টিনে গিয়ে অপেক্ষা করে। আরিয়া প্রায় আধা ঘণ্টা যাবত ক্যান্টিনে অপেক্ষা করেছে। তারপরও আশিক না ফেরাতে আরিয়া এখন ক্যাম্পাসের একটা কোনায় গিয়ে বসে আছে। বিড়বিড় করে বলছে,
“কী এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ যে এতক্ষণ লাগে করতে? যদি রিসার্চের কাজের জন্যই মেয়েটা ডেকে থাকে তাহলে সারাটা দিন কী করেছে? এই মেয়েটার হাবভাব আমার মোটেও ভালো লাগে না। বিরক্তিকর!”
আশিক আরিয়াকে কল করে। আরিয়া ফোন রিসিভ করতেই আশিক বলে,
“তুমি ক্যান্টিনে নেই। আমি তোমাকে ক্যান্টিনে খুঁজে এলাম।”
আরিয়া দাঁতে দাঁত পি*ষে বলে,
“তুমি এখন গেছো? ঘড়িতে সময় দেখতো।”
আশিক বুঝলো বউ তার রেগে গেছে। তাই সরাসরি জানতে চায়,
“কোথায় তুমি এখন?”
আরিয়া তারপর স্থান বললে আশিক কল কেটে সেখানে যায়। গিয়ে দেখে আরিয়া গালে হাত দিয়ে বসে আছে। বিকেলের পড়ন্ত রোদ তীর্যকভাবে আরিয়ার মুখের উপর পড়ছে। হালকা গোলাপি হিজাবে রোদের মধ্যে আরিয়াকে কোনো গাল ফুলানো পুতুল বললে ভুল হবে না। আশিক মুগ্ধ নজরে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থেকে মৃদু হেসে ফোনের ক্যামেরা অন করে কয়েকটা ছবি তুলে নেয়। অতঃপর ছবিগুলো জুম করে দেখে বলে,
“মা শা আল্লাহ। ভাগ্য করে একটা গুলুমুলু পুতুল পেয়েছি। এখন পুতুলের রাগ ভাঙাতে হবে।”
আশিক এগিয়ে গিয়ে আরিয়ার পাশে গিয়ে বসলো। আরিয়া তা দেখে একটু সরে বসে অন্যদিকে মুখ ঘুরালো। আশিক তা লক্ষ্য করে দুষ্ট হেসে বলে,
“ওই মেয়েটা অযথাই আমাকে এতক্ষন বসিয়ে রেখেছে। কাজটা কিন্তু ও নিজে চাইলেও করতে পারতো। বা শোয়েবকে দিয়েও করাতে পারতো। কিন্তু সে যে চাইছিল আমাকে দিয়েই করাবে! আমার সাথেই করবে! তাইতো দেরি হয়ে গেল।”
আরিয়া ফুঁসছে আর আশিক মিটমিটি হাসছে। আরিয়া ব্যাগ থেকে কলম বের করে মুহূর্তের মধ্যে আশিকের গ*লার কাছে খোলা ক*লম ধরে অসহিষ্ণু স্বরে বলে,
“কেন? ওই মেয়েটার তোমাকেই কেন লাগবে কাজের জন্য? ওই মেয়ে কি জানে না, তুমি বিবাহিত? আমি বহুদিন থেকে লক্ষ্য করছি, ওই মেয়েটা তোমার আশেপাশেই ঘুরঘুর করে। এতো কী? এক ফ্যাকাল্টির কাছে রিসার্চ পড়েছে বলে কি সারাক্ষণ সে তোমার পেছনেই ঘুরবে কাজের জন্য? আরও তো আছে রিসার্চমেট। তাদের সাথে তো আমি ওই মেয়েকে দেখি না!”
আশিক ভয় পাওয়ার ভান করে হাত উঁচিয়ে সরল মুখ করে বলে,
“আমি কীভাবে বলব বলো? জুনিয়র দরকারে ডাকলে তো না করতে পারি না। তুমি বলো কীভাবে না করব?”
“কেন? তোমার মুখ নেই? মুখ দিয়ে না করবে। আল্লাহ তোমাকে মুখ দিয়েছে না? ওহ হ্যাঁ! জুনিয়রদেরকে না কীভাবে করবে? তাই না? ওরা এতো মধুর স্বরে ‘ভাইয়া! ভাইয়া!’ করে যে তুমি গলে পানি হয়ে যাও! সুন্দরীদের ডাক বলে কথা! ওয়েট, জেবিন তাই না? দাঁড়াও!”
শেষোক্ত কথাগুলো এক প্রকার ব্যাঙ্গ ও রাগ নিয়ে বলেই আরিয়া উঠে যেতে নিলে আশিক ওর হাত চেপে ধরে। অতঃপর বলে,
“তুমি এতো হাইপার হয়ে জেবিনের কাছে যাচ্ছো? ও তো চলে গেছে।”
“চলে গেছে না? তাহলে কালকে ওইটার চু*ল ধরে দে*য়ালে কয়েকটা বা*ড়ি মা*র*ব! অন্যের স্বামীর দিকে এতো ব*দনজর কেন? তাও আবার সিনিয়র আপুর স্বামীর দিকে! বা-*ড়ি দিতে দিতে মুখের ন*কশাই বদলে দিব। ডা ই নি একটা!”
আশিক এবার আর হাসি চেপে রাখতে পারলো না। আরিয়ার হাত ছেড়ে গা দুলিয়ে হাসতে লাগলো। আরিয়া চমকে তাকিয়ে বিস্ময় নিয়ে আশিককে দেখছে। তাও আশিকের হাসি থামছে না, বরং বাড়ছে। আরিয়া কোমড়ে