নিশীভাতি #৪৮তম_পর্ব এবং #৪৯তম_পর্ব

0
708

#নিশীভাতি
#৪৮তম_পর্ব এবং #৪৯তম_পর্ব

#৪৮তম_পর্ব

“কাওছার! ওই কাওছার। বের হ এক্কনি”

বাহিরে লোকের সমাবেশ। সকলের মিলিত স্বরে ঘুম ভাঙ্গলো রাশাদের। শুক্রবার বিধায় আজ দোকান বন্ধ। বাসায় একটু বিশ্রাম নেবার পরিকল্পনা করেছিলো। কিন্তু বাহিরের চিৎকারে তা সম্ভব নয়। গায়ে একটি শার্ট জড়িয়েই বেরিয়ে এলো সে। তাকে দেখেই অভিযোগের সুর তুললো কালাম,
“রাশাইদ্দা, তোর বাপরে ক আমার টেহা দিতি”

কালাম গ্রামের বেশ প্রবীনদের জড়ো করেছে। মোট সাত-আটজন তো হবেই। সকলের ক্রুদ্ধ নয়ন দেখছে রাশাদকে। রাশাদ বিমূঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো। মস্তিষ্ককোষগুলো থম ধরে রইলো। ঘুমের রেশটা চট করেই মিলিয়ে গেল। প্রখর হলো কপালের ভাঁজ। কাওছারের ঘরের দিকে একবার চাইলো। সবাই বের হয়ে এলেও সে বের হয়ে আসে নি। ভেতর থেকে উদ্বিগ্ন স্বরে ইলহা শুধালো,
“কারা এসেছে?”

মেয়েটির আজকাল ঘুমাতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। খাবার রুচি নেই বললেই চলে। সব কিছুতেই না কি গন্ধ লাগে! যা একটু মন মেরে খেতে বসে, জোর করে পেটে দিলেও উগড়ে ফেলে মুহূর্তেই। হাসপাতালের চাকরিটা এখনো ছাড়ে নি সে। অনেকটা জোর করেই রেখেছে। রাশাদ বাধা দিলেও সে দৃঢ়। ফলে শরীরটা আরোও দূর্বল হয়ে গেছে। বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়ে। প্রচুর ক্লান্তি আসে। আর রাত হলেই ঘুম আসতে চায় না। আজ ছুটি বলেই সে একটু দেরি করে ঘুমাচ্ছিলো। এই চিৎকার চেঁচামেচিতে সেটাও হলো না। রাশাদ কোমল স্বরে বলল,
“কিছু না, আপনি ঘুমান”

বলেই সে দরজাটা ভিজিয়ে দিলো। দাঁড়ালো উন্মুখ জনতার সামনে। শীতল স্বরে বললো,
“কালাম কাকা, চেঁচাচ্ছো কেনো? আর কিসের টাকা?”
“তোর ওই লম্পট বাপটারে জিগা যাইয়্যা, আমার ছ্রমের টেহ। স্বপন দেহাইছে আমার পোলারে সরকারী চাকরি দিবো। তোর বোনের জামাই তো নেতা, ওয় কইলেই চাকরি হইবো। আমি আমার জমি বন্ধক থুয়্যা তোরে টেহা দিছি। অথচ সেদিন যখন কইলাম, কিরে কাওছার; পোলা তো পরীক্ষা দেয়, চাকরি হয় না। তুই কইলি আরোও টেহা লাগবো। আমি পুরান টেহা ফেরত চাইলে ওয় কয় দিবে না। আমার জমি এখন মুনিম খাইয়্যা লাইবো। কুত্তার বা/চ্চা আমারে লুইট্যা নিছে। আমার টেহা ফেরত দিতে ক। হেতেরে বাইর হইতে ক”

কালাম চিৎকার করে নিজের কষ্টগুলো জাহির করতে শুরু করলো। কালামের চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি ঝরছে। ছেলের ভবিষ্যতের জন্য সে তার শেষ সম্বলটুকুও কাওছারকে দিয়ে দিয়েছে। টাকাটা ফেরত না পেলে সর্বস্বহারা হবে সে। তাদের চেঁচামেচিতে শামসু মিঞা আর আতিয়া খাতুনও উঠানে এলেন। শামসু মিঞা কঠিন স্বরে বললেন,
“কাওছার কোয়ানে, ওরে ডাক”

অবশেষে গর্ত থেকে বের হলো কাওছার। চোরের মতো সে বেরিয়ে এসে দাঁড়ালো এক কোনায়। কালাম ছুটে যেয়ে তার গেঞ্জি ধরে বললো,
“তুই আজকে আমার টেহা দিবি”

কাওছার কোনোমতে তার থেকে নিজেকে ছাড়ালো। জোর গলায় বললো,
“কিয়ের টেহা! কিয়ের টেহা দিবো তোরে!”
“যে টেহা নিছোস সেই টেহাই দিবি”
“মিথ্যা কছ কেন! আমি কোনো টেহা নেই নি”
“কাওছাইররা। তুই কিছু দিন আগেও ওই গেরামের বনি শেখের বাড়িতে জুয়া খেলছোস। পঞ্চাশ হাজার টেহা হারছোস, ওই পাইছোস এতো টেহা? তুই তো কামাই ও করস না। কি ভাবছস আমি পরমান ছাড়া আইছি?”

এবার কাওছারের মুখশ্রী রক্তশুন্য হলো। শুকিয়ে গেলো গলা। জোর কমে এলো। কেউ যাতে এই টাকার হদিস না পায় তাই সে অন্য গ্রামে যেয়ে জুয়া খেলে। পঞ্চাশ হাজার টাকার কাহিনীটা বেশ পুরাতন নয়। কালামের সাথে ঝগড়ার অনেক পড়ে সে টাকাটা বের করেছিলো। বনি শেখের বাড়ি প্রতি শুক্র-শনি জুয়ার আসর বসে। সে বেশ ভালোই খেলছিলো। দেড় লাখ টাকা জিতেও গিয়েছিলো। কিন্তু কিভাবে যেনো এলোমেলো হয়ে গেলো। হারতে হারতে নিজের হাতে অবশিষ্ট থাকলো পাঁচ টাকা। ভাগ্যিস সে ধার করে নি। শফির কাহিনীতে শিক্ষা হয়েছে। কিন্তু এখন তো মহাবিপদ হলো। কাওছার বুঝলো এখন স্রোত তার বিপরীতে। তাই মুহূর্তেই ছুটে গেলো বাবার কাছে। শামসুর পা ধরে মরা কান্না জুড়লো,
“আব্বা, বিশ্বাস যান আমি টেহা নেই নাই। কালামের কাছে কোন সাক্ষী ই নাই। ও আমারে ফাসাইতেছে। টেহা হাতানোর ফন্দি এডি”
“তুই কি কালামের ছেলের চাকরির কথা কইছিলি”
“আব্বা আমি তো ঘর থেইক্যাই বের হই না। জানবো কেমনে”

রাশাদ নিঃশব্দে তামাশা গুলো দেখছে। তার দৃষ্টি শান্ত। বাবাকে এক মুহূর্তের জন্য তার বিশ্বাস হয় না। এই লোকের উপর বিশ্বাস করা মানে, নর্দমায় গোসল করা। তবুও সে শান্ত কারণ এখানে প্রবীন শামসু মিঞা। তার সিদ্ধান্তের উপর অনেক কিছু নির্ভরশীল। আতিয়া খাতুনের মুখশ্রী ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। লোকের মাঝের ক্রোধ তো দৃষ্টি এড়াচ্ছে না। এদিকে তার মানুষটার শরীরটাও ভালো না। বয়স আর রোগের কারণে মস্তিষ্কে চাপ নিতে পারে না। রক্তচাপ বেড়ে যায়। কালাম তখন বলে উঠলো,
“তুই তারমানে আমার টেহা দিবি না?”
“আরে নি নাই, দিমু কি?”
“তুই তাইলে জুয়ার টেহা পাইলি কই?”
“পরমান কি আমি বনি শেখের বাড়ি গেছি?”
“আমি যখন এইডা খোঁজ নিছি তুই কই টেহা খরচ করছস, তাইলে তুই জুয়া খেলছোস কি না যেইডার পরমান ও আছে। বনি শেখ তো তোর শত্তুর না। সে কইলে কি পরমান হইবো”

কাওছারের স্বর ক্ষীন হয়ে এলো। কালামের কথায় সত্যতা প্রকাশ পাচ্ছে। শামসু মিঞা বুঝলেন কালাম মিথ্যে বলছে না। কালামের সাথে লোকও আছে। তারাও হাউকাউ করছে। লজ্জায় বৃদ্ধের মুখখানা লাল হয়ে গেলো। দৃষ্টিতে অব্যক্ত বেদনা। সম্মানহানির আর কিছুই বাকি নেই। লোকসমাজ নিয়ে তার বাঁচতে হয়। সেখানে আজ আবারও মাথা কাটা গেলো তার। আর কত সইতে হবে। সন্তান থেকে প্রাপ্য কষ্ট বোধহয় বেশি দগ্ধ করে। ব্যাথিত হয়ে ক্ষীণ স্বরে বললো,
“কালাম তুমি চাও কি?”
“শয়তানডারে কন মোর টেহা আজকেই দিবো”

শামসু মিঞা অসহায় হয়ে পড়লেন। এত টাকা তার কাছে নেই। তিনি চাইলেন রাশাদের দিকে। রাশাদ তখনো মৌন। এই আঁধঘন্টা সে একেবারেই চুপ ছিলো। কোনো কথা বলে নি। বিকারহীন, নির্লিপ্ত। শামসু মিঞা অনুরোধের স্বরে বললো,
“রাশাদ, তুই দেখ কি করবি। আমি কিচ্ছু কমু না”

রাশাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বুকে হাত বাঁধলো। যেনো সে অপেক্ষা করছিলো এমন কিছু শোনার। ফলে গম্ভীর স্বরে বললো,
“কালাম কাকা, টাকাটা আপনি কি কাওকে জানিয়ে দিয়েছিলেন?”
“হ্যা?”
“মানে, উনাকে যখন টাকা দিয়েছেন আমি বা দাদা কি জানতো ব্যাপারটি? আর ফাইজান সাহেব চাকরি দিতে পারবেন এই কথাটা কি ফাইজান সাহেব নিজ মুখে বলেছিলেন? কারণ কাওছার মিঞার পক্ষে তো চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। সে নিজেই আঙ্গুল ছাপ। তাহলে কি ভরসায় এত্তোগুলো টাকা দিয়েছেন? মুখের কথায়?”

এবার একটু অপ্রস্তুত হলো কালাম। না সে কাউকেই জানায় নি। এমন কি যার জন্য দিয়েছে, ফাইজান। সেই মানুষটির সাথেও দেখা করে নি। সে কাওছারকেই ভরসা করেছে। তার কথায় মইয়ে উঠেছে। টাকাগুলো তার হাতেই দিয়েছে। কালাম বিপাকে পড়লো ঈষৎ। কিন্তু দমলো না। জোর গলায় বললো,
“এতোসব বুঝি না, টেহা দিছি। টেহা নিমু”
“সেটা নিবেন। আমার আপত্তি নেই। কিন্তু আমার কথা স্পষ্ট, আমাদের না জানিয়ে আপনি টাকাটা দিয়েছেন। তাই এই বাড়ির কেউ টাকা দিবে না। আর আমার বোনাই এমন নোংরা কাজেও যুক্ত নয়। সে যদি সাহায্য করার হত। নিজেই করতো। এখন যে টাকা নিয়েছে সেই টাকা দিবে। মে/রে পারেন, ধরে পারেন, তার থেকেই টাকা নিবেন”

উপস্থিত সকলের মুখখানা শুকিয়ে গেল। কাওছারের মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। শামসু মিঞা চৌকাঠে বসলেন। সবাই জানে কাওছার টাকা উড়াতে পারে, কিন্তু টাকা দেবার মুরদ তার নেই। কালাম এখানে এসেছিলো যেনো রাশাদ এই দায়িত্ব নেয়। ছেলেটা এক কথার মানুষ। তার কথার এদিক ওদিক হয় না। শুধু একবার গছিয়ে দিতে পারলেই হলো। কিন্তু আজ রাশাদ মাথা পেতে অন্যায় সহ্য করবে না। কালাম ফাঁকা ডাক দিলো,
“আমি ফুলিশে দিমু কিন্তু”
“অবশ্যই, আপনাকে ঠকানো হয়েছে এখানে।“

কালাম রেগে গেলো প্রচুর। ফলে রাগ সংবরণ না করতে পেরে ছুটে গেলো কাওছারের কাছে। এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করলো। কেউ থামাতে পারলো না। মারের চোটে মুখ ফেটে রক্ত চুয়ে পড়তে লাগলো। কাওছারের আর্তনাদ কানে আসছে। আতিয়া খাতুন ছুটে এলেন রাশাদের কাছে। তার হাত ধরে বললো,
“রাশাদ, কাওছাররে মাইর‍্যা লাইবো ওরা। তুই ওরে বাঁচা”
“আমি কি করবো দাদী?”

নিষ্পৃহ স্বর রাশাদের। মুখশ্রীতে কোনো ভাবের পরিবর্তন হলো না। আতিয়ার চোখ বেয়ে পড়ছে নোনা জল। কাতর স্বরে বললো,
“তোর আব্বা ওয়। টেহাডা তুই দিয়া দে। এতো পাষান হইস না”

রাশাদ বিদ্রুপভরে হাসলো। খুব শীতল স্বরে বললো,
“আমার জীবনের উনত্রিশটা বছর এই তাশের ঘরের জন্য বিসর্জন দিয়েছি। তবে আর না, আমি সত্যি ক্লান্ত দাদী। যে অন্যায় আমি করি নি, তার শাস্তি আমি কেনো পাবো বলোতো? আমি কি মানুষ নই? একটা মানুষের পাপ কত সহ্য করা যায়? আর সব জেনেও আমার উপর সব চাপিয়ে দেওয়াটাও কি ঠিক। আগে হলে হয়তো আমি মাথা পেতে মেনেও নিতাম। তবে আর না। আর সহ্য হচ্ছে না। আমার একটা পরিবার আছে। আমার সন্তান ইনশাআল্লাহ পৃথিবীতে আসতে চলেছে। আমি চাই না আমার সন্তানের ভাগ্যটাও আমার মত হোক। পদে পদে নিজের বাবা নামক মানুষটির জন্য লাঞ্চনা, ধিক্কার সহ্য করতে হোক। আমি তাকে আমার মতো ভবিষ্যত দিতে চাই না দাদী”
“ওই মাইয়্যা তোর মাথাডা খাইয়্যা লাইছে। তুই তো এমন কঠিন ছিলি না রাশাদ”

দাদীর অপবাদে মনক্ষুন্ন হলো রাশাদের। দরজার ওপাশে ওই নিরীহ মেয়েটিও বোধ হয় কথাগুলো শুনছে। রাশাদের কাঠিন্য বাড়লো,
“ইলহাকে এই নোংরার মধ্যে টানবে না দাদী। যদি সে এমন মেয়ে হত, আমি তাকে কখনো গ্রহন ই করতাম না। এইবার বলছো আমি কিছু বললাম না। কিন্তু আর না”

এদিকে শামসু মিঞার শরীর ভেঙ্গে পড়লো। শ্বাসকষ্ট উঠলো। কালামের সাথের মানুষগুলো পুলিশে খবর দিলো। পুলিশ এলো আধ ঘন্টা বাদে। মা/র খেয়ে কাওছারের অবস্থা নাজেহাল। পুলিশ কালাম এবং কাওছারকে ধরে নিয়ে গেলো। আতিয়া খাতুন রাগে অনেক কথা বললো রাশাদকে। রাশাদ স্বভাবত ই তার কোনো বিরোধিতা করলো না। শুধু এটুকু বললো,
“কাওছার এ বাড়িতে থাকলে আমি এখানে থাকবো না। আমি অকৃতজ্ঞ হতে চাই না। তবে তোমাদের বাছতে হবে দুজনের একজনকে। আমার সন্তানকে আমি এই নোংরাতে রাখবো না”

************

রোদের তেজ আজ প্রচন্ড। ঘাম বেয়ে পড়ছে শিরদাঁড়া বেয়ে। হুমায়রার চুলগুলো উঁচু করে বাঁধা। আজ স্যার অনেকক্ষণ পড়িয়েছেন। সামনে টেস্ট পরীক্ষা, সময় কম। তাই সিলেবাস শেষ করার তাড়া খুব। কিন্তু ঝামেলা হলো এই ভরদুপুরে একটা রিক্সাও নেই। ড্রাইভার আজ আসে নি। ঘরে কোনো পুরুষ নেই যে গাড়ি চালাবে। শরীফা বকবক করলেও তার অজানা অনেক কিছু আছে। হুমায়রা ঠিক করেছে ফাইজান এলে এবার গাড়ি চালানো শিখবে। তখন একা একাই গ্রামে যাবে। সে ফুপু হতে চলেছে, কথা শোনামাত্রই ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে বাড়িতে। কাওছারকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। দাদার শরীরটাও ভালো নয়। ঘরে বেশ মনোমালিন্য চলছে। রাশাদ আর দাদী কেউ কারোর সাথে কথা বলছেন না। দাদী কাওছারকে শেষ সুযোগ দিতে বলছেন। কিন্তু রাশাদ এবার শক্ত। হুমায়রাও তার পক্ষে। অনেক হয়েছে আর না। এবার একটু তার ভাইজানও সুখের মুখ দেখুক। মানুষটার সারাটাজীবন অন্যকে খুশী করতেই কেটেছে। এবার একটু নিজের জন্য বাঁচুক। রাশাদের সাথে অনেক কথা হলেও যুবাইদার কথাটা জানায় নি হুমায়রা। এতো কিছুর মধ্যে যুবাইদার কথা বলা মানে মুখে এলাচ পড়া। অহেতুক স্বাদ নষ্ট করা। এর মাঝেই হুমায়রার মনে খটকা লাগলো। হুট করে মনে হলো কেউ তার পিছু নিয়েছে। পথটা এখন প্রায়ই জনমানবহীন। ভরদুপুরে দোকানপাটও বন্ধ। ফলে বুকটা ধক করে উঠলো তার। শিরদাঁড়া বেয়ে হিমপ্রবাহ নামলো। কপালে জমলো বিন্দু বিন্দু ঘামকনা। পেছনে তাকানোর সাহস হলো না। পেছনের মানুষের পায়ের বেগ ক্ষিপ্র হলো। হুমায়রা পেছনে না তাকিয়েই ছোটার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। পেছনের মানুষটি তাকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরলো…………

চলবে

#৪৯তম_পর্ব

হুমায়রা পেছনে না তাকিয়েই ছোটার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। পেছনের মানুষটি তখন পেছন থেকে ঝাপটে ধরলো। হুমায়রার কাধের কাপড়ের ব্যাগটি শক্ত করে ধরলো সে। চোখ বন্ধ করে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু হলো। প্রাণ বাঁচানোর আকুল প্রচেষ্টা। ঠিক তখনই ব্যাক্তিটি তার হাতজোড়া শক্ত করে ধরলো, প্রবল স্বরে শুধালো,
“হুমায়রা?”

ভরাট পুরুষালী কন্ঠ কানে আসতে বর্তমানে ধাতস্থ হলো সে। চিরচেনা কন্ঠটি শুনে চোখ খুলতেই অক্ষিগোলক বড় হলো। ফাইজান হতভম্ব দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তা দিকে। বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো সে। সারা শরীর ঘেমে নেয়ে একসার। চুলের গোড়া থেকে ঘাম গড়িয়ে চিবুকে এসে জমলো। গলা শুকিয়ে এসেছে। ফাইজানের কপালে তীক্ষ্ণ ভাঁজ। কন্ঠ বিমূঢ়,
“তুমি এভাবে ছুটছিলে কেনো? আরেকটু হলেই তো পড়ে যেতে। তোমার ধারণা আছে কত ডেকেছি তোমাকে! আর ফোন কোথায় তোমার?”

একাধারে অনেক প্রশ্ন ছুড়লো ফাইজান। কিন্তু হুমায়রা কোনো প্রশ্নের উত্তর দিলো না। শুধু হাপাতে হাপাতে মাথাটা ঠেকালো ফাইজানের বুকে। তার হৃদয় এখনো কাঁপছে। নিচু স্বরে বললো,
“আমাকে একটু পানি খাওয়াবেন?”

****

গাড়ির এসির তাপমাত্রা একুশে দেওয়া। শীতলতায় পানি জমছে কাঁচে। হুমায়রা জড়সড় হয়ে বসে আছে। তার সাথে সদ্য কেনা মামের বোতল। বোতলটির মুখটি ফাইজানের হাতে। সে গা এলিয়ে দিয়েছে ধূসর সিটে। নিস্তেজ চাহনী হুমায়রাকে স্থির। এখন অবধি দুজনের মাঝে কোনো কথা হয় নি। নিস্তব্ধতায় ফরিদেরও অস্বস্তি হচ্ছে। সে আর নিজেকে আটকাতে পারলো না। লুকিং গ্লাস দিয়ে হুমায়রার দিকে চেয়ে বললো,
“তুমি ওখানে কি করছিলে হুমায়রা? গাড়ি আসে নি আজ?”

হুমায়রা নিভু স্বরে উত্তর দিলো,
“রহিম ভাইয়ের জ্বর তাই সে আসেন নি। আমি তাই একা একা বাড়ি যাচ্ছিলাম”
“মেইন রোড ছেড়ে?”

হুমায়রার দৃষ্টি নত হলো। একবার আড়চোখে গম্ভীর মানুষটিকে দেখলো। সে গাড়িতে উঠার পর কোনো কথা বলে নি। পুরোটা সময় শুধু তার দিকেই চেয়ে ছিলো। ওড়নার ত্রিকোন হাতে খুটতে খুটতে ধীর স্বরে শুধালো,
“আপনারা এখানে কি করছিলেন?”
“ঢাকা থেকে ফাইজান এসেই ফুপুকে ফোন দিয়েছে। উনি বললেন তুমি কোচিং এ এখনো ফিরোনি। তাই কোচিং এই সরাসরি এলাম। এমা তুমি এখানেও নেই। স্যার বলেছে, দশ মিনিট হয়েছে ছুটি দিয়েছেন। তাই ফাইজান বললো, তুমি এখনো বেশিদূর যাও নি। আমরা তোমার নাম্বারে ফোন দিলাম তুমি ধরো নি। হঠাৎ ফাইজান তোমাকে গলিতে হাটতে দেখলো। তোমাকে ডাকলো, কিন্তু তুমি সাড়া দিলে। তোমার কাছে যেতেই তুমি ভো দৌড়। বেচারা ফাইজানকে যা দৌড়টা দিলে। আবার ব্যাগ দিয়ে মারছিলে অবধি। তুমি বলেই পার পেয়ে গেলে। নয়তো অন্য কেউ হলে যে কি হতো! জনদরদী এমপি সাহেব কি না বউ এর হাতে পিটুনি খাচ্ছে”

বলেই ফরিদ নিজের হাসি আটকাতে পারলো না। ফ্রন্ট সিটে মাথা এলিয়ে গা কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো। ফাইজানের কিঞ্চিত বিরক্ত লাগছে। তার চোখমুখ স্থির। গম্ভীর স্বরে বললো,
“খুব হাসি পাচ্ছে তাই না ফরিদ ভাই”
“দৃশ্যটি ই হাস্যকর ছিলো!”

ফাইজান এবার দৃষ্টি হুমায়রার দিকে ঘোরালো। নিন্মোষ্ঠ ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে মেয়েটির দাঁতে। চোখে মুখে লজ্জিত ভাব। কিন্তু সেগুলোকে উপেক্ষা করে ফাইজান প্রশ্ন ছুড়লো,
“তুমি ছুটছিলে কেনো? তুমি কি কোনো কারণে আতঙ্কিত?”

প্রশ্নটা অকপটেই করলো ফাইজান। হুমায়রা প্রস্তুত ছিলো না এমন প্রশ্নে। সে ফ্যালফ্যাল নয়নে চাইলো ফাইজানের দিকে। ফাইজানের দৃষ্টিতে ধার। সে তার প্রশ্নতে দমলো না। উলটো শুধালো,
“কেউ কি তোমাকে বিরক্ত করছে হুমায়রা? যা তুমি আমাকে জানাওনি”

প্রশ্নের গতি এদিকে যাবে এটা অকল্পনীয় ছিলো। হুমায়রাকে এবার চুপ থাকার সুযোগ দিলো না ফাইজান। কঠিন স্বরে বললো,
“তুমি আমার থেকে কোনো কিছু লুকোনোর চেষ্টা করো না হুমায়রা। ব্যাপারটি আমার নিতান্ত অপছন্দ”

হুমায়রা এবার কিঞ্চিত ঘাবড়ালো। ফাইজান কি সত্যি রেগে যাচ্ছে। মিথ্যে বলবে না, সে আসলেই আতঙ্কিত। কোথাও না কোথাও বর্তমানের কিছু ঘটনা তাকে খুব আতংকিত করছে। যখন তার মনে হয়েছিলো কেউ তার পিছু নিয়েছে প্রথম যে নামটা স্মরণ হয়েছিলো তা হলো আমান ভাই। মানুষটার সেই কথাগুলো সে ভুলতে চাইলেও তার কতৃক সৃষ্ট প্রচ্ছন্ন ভয়টা এখনো হৃদয়ে ঘাপটি মেরে আছে। উপরন্তু তার উপর একবার আক্রমণ। যদিও আক্রমণকারী হাজতে কিন্তু এর পেছনে যে আমান ভাইয়ের হাত নেই কি ভরসা! তারপর হুট করে একদিন মা ফিরে এলো। মায়ের ঠিক এভাবে ফিরে আসাটা তার মন সায় দিচ্ছে না। যুবাইদা তার থেকে কিছু লুকাচ্ছে এই বিষয়ে সন্দেহ নেই হুমায়রার। সব মিলিয়ে সে ভীত, সন্ত্রস্ত। সে দ্বিধায় জর্জরিত। হুমায়রা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ধীরে ধীরে এ যাবৎকালের সব ঘটনাগুলো বললো ফাইজানের কাছে। আমানের নাম শুনতেই ফাইজানের চোয়াল শক্ত হলো। কোমলতা নিমিষেই মিলিয়ে কাঠিন্য প্রকাশ পেলো। গম্ভীর স্বরে বললো,
“তুমি আমাকে জানাও নি কেনো?”
“আপনি ব্যস্ত ছিলেন”
“এতোটাও ব্যস্ত ছিলাম না যে নিজের স্ত্রীর আতঙ্কের কথা শুনতে পারবো না”

হুমায়রা কথা বাড়ালো না। ফাইজান কন্ঠের রোষ সে ভালো করেই উপলদ্ধি করতে পারছে। গাড়ির শান্ত হাওয়া উষ্ণ এবং গম্ভীর হয়ে উঠলো। ফরিদের অস্বস্তি লাগছে। ফলে সে ফাইজানকে বললো,
“ছাড়ো ফাইজান। মেয়েটি এমনিতেই আতঙ্কে আছে। আমরা বরং বাড়ি যাই”

ফাইজান মাথা নাড়ালো। পুরোটা রাস্তা কোনো কথা হলো না দুজনের ভেতরে। এতোদিন বাদে তাদের দেখা হলেও দুজন মৌন। ফাইজানের দৃষ্টি বাহিরের দিকে। তার কপালে শিরাটি দপদপ করছে। চোয়াল এখনো শক্ত। হুমায়রা কিছু বলার সাহস পেলো না। কারণ এখানে দোষটি তার। সে কথাগুলো লুকিয়ে গেছে। কিছু হয় নি ঠিক, কিন্তু হতে কতক্ষণ!

******

বাড়িতে খুব গম্ভীর আবহাওয়া। শামসু মিঞা কিছুদিন যাবৎ বেশ অসুস্থ। কাওছারকে ধরে নিয়ে যাবার পর থেকেই এমন অবস্থা। বৃদ্ধ শরীর যেনো ছেড়ে দিয়েছে সম্পূর্ণ। কারোর সাথে কথা বলেন না, খাওয়া দাওয়া করতে চান না। কিছু খেলেই উগড়ে ফেলেন। ঔষধ খেতেও অনীহা। তার দৃঢ় হাটু যেনো ঝুকে পড়েছে। আগে প্রায় ই হাটতে হাটতে বাজারে যেতেন৷ সমবয়সীদের সাথে আড্ডা দিতেন। চা খেতেন। কিন্তু এখন তেমন নন। সারাদিন নিজ ঘরে শুয়ে থাকেন। প্রতীক্ষিত চোখে তাকিয়ে থাকেন দূর আম গাছটার দিকে। আম গাছে পাতা ঝড়ে গেছে। মুকুল এখনো আসে নি। কারণ বসন্ত এখনো আসে নি। সেই পাতাঝরা মূর্ছানো গাছের পানে তিনি অধীর অপেক্ষায় চেয়ে থাকেন। কিসের এতো অপেক্ষা! মৃত্যুর! স্ত্রীর সাথে কথা বলেন না। রাশাদের সাথেও কথা বলেন না। যদি কথা হয় তাহলে তা হয় ইলহার সাথে। ইলহা তার যত্ন নেয়। সময় করে তার প্রেসার মাপে, ঔষধ বদলে দেয়। খাওয়া দাওয়াটার দিকেও তার নজর। শামসু মিঞা প্রায়ই তাকে শুধায়,
“তুমি কি কাঁচা আম খাইবা? জানো ওই যে ন্যাতা আম গাছডা আছে। ওইহানে পচ্চুর আম হয়। কিন্তু কেউ খায় না৷ কারণ হেব্বি টক। তুমি টক খাও?”

ইলহা কথার আগা মাথা পায় না। কিন্তু মৃদু হেসে বলে,
“হ্যা, খাই”

এদিকে শামসু মিঞার অবস্থার জন্য আতিয়া খাতুন দায় করে রাশাদকে। রাশাদ কঠিন না হলে হয়তো তার পরিবারটা এমন ক্ষত বিক্ষত হতো না। ঘরের মানুষকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে। গ্রামে শামসু মিঞার ছিঃ ছিঃ হচ্ছে। মানুষটা একটু বাঁচতে চায় কিন্তু সেই সুযোগটাও তার থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। অথচ রাশাদ তার সিদ্ধান্তে অনড়। তার সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয় না। কাওছার ছাড়া পেলেও তার স্থান এখানে হবে না, কারণ একটা মানুষকে এক বার সুযোগ দেওয়া যায় বারবার না। পাপকে প্রশ্রয় দেওয়াও পাপ। রাশাদ এই নোংরা মানুষটিকে আর বাড়িতে স্থান দিবে না। আতিয়া খাতুন প্রতিদিন তার কাছে কাওছারের আপিল নিয়ে আসে। আর প্রতিদিন রুঢ়ভাবে সে তা প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে আতিয়া খাতুন স্বামীর কাছে আক্ষেপ প্রকাশ করেন কিন্তু স্বামী উত্তর দেন না। সে তাকিয়ে থাকে আমগাছটির দিকে। ইলহা এসব কিছুর মধ্যে পিষছে। কারণ আতিয়া খাতুন তার কাছে চার/পাঁচ বার কাওছারকে ছাড়ানোর দাবি করেছে। কিন্তু ইলহা সেই কথা শুনলেও রাশাদের সম্মুখে বলে না। কারণ রাশাদ এই ব্যাপারে কোনো কথা শুনতে নারাজ। সে একরোখা। ইলহাও চায় না মানুষটির উপর অযাচিত বোঝা আসুক। কাওছার কখনোই শুধরাবার নয়। তাকে আনলে আবারো সে একই কাজ করবে। কিন্তু আবার মনে হয় বাবা তো, সন্তান হিসেবে এতোটা উদাসীন হওয়াও কি ন্যায্য! তখন মনে পড়ে নিজের মার কথা। মায়ের কথা আজকাল খুব মনে পড়ে। সকল মেয়ের ই স্বপ্ন থাকে, এই সময়টায় মায়ের কাছে থাকবে তার আদর যত্ন পাবে। কিন্তু ইলহার ভাগ্যে মনে হয় সেটা নেই। মায়ের কন্ঠটাও শোনা নসিবে নেই তার। পরক্ষণে হাত চলে যায় পেটে। মনে মনে আওড়ায়,
“তুই চিন্তা করিস না, ইনশাআল্লাহ আমি তোকে কাঁধছাড়া করবো না। আমি যা পাই নি, সবকিছু তোকে দিবো। দেখিস”

******

ফাইজান বাগানে বসে আছে। চটিহীন হাটতে ভালো লাগে এই ভোরে। হাটাহাটির পর সে পেপার পড়ে। আজ ও হাতে পেপার। চোখ শিরোনামে। ফরিদ তখন ই এলো। সারা রাত সে বাড়ির বাহিরে ছিলো। ফাইজানকে বসে থাকতে দেখেই সে এগিয়ে এলো। পাশের সাদা চেয়ারটা টেনে বসলো। শরীরটা ক্লান্ত। চোখজোড়া নির্ঘুম, রক্তিম। নেত্রপল্লব ঘুমদেবী বসে আছেন পাতা এক করে দেবার ইচ্ছেতে। ফাইজান বললো,
“কেটলিতে চা আছে খেতে পারো”
“আমি ঘুমোবো। চা খেলেই ঘুম ফুরুৎ”
“কাজ কতদূর?”
“হয়েছে, কিন্তু একটু তাড়াহুড়ো হচ্ছে না? হিত অহিত হয়ে যেতে পারে”

এবার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হলো ফাইজানের। চোখ পেপার থেকে তুললো। ফরিদ নিভু স্বরে বললো,
“দেখো দেলোয়ার সাহেব তোমার মামা। আমান তার একমাত্র ছেলে। ছেলের ভবিষ্যত কালকুঠুরীতে কাটবে তিনি মেনে নাও নিতে পারেন। কেতাব চৌধুরীর সাথে উনি মিলে যদি যায়, আমার ভয় বুঝছো তো”
“তুমি কাল হুমায়রাকে দেখেছিলে?”
“হ্যা”
“এখন আমার কি আমার স্ত্রীর আতঙ্ক দূর করা উচিত নয়? এমনিও সে বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে”

ফরিদ মাথা নাড়ালো। সে আর কথা বাড়ালো না। বলে লাভও হবে না। তাই উঠে দাঁড়ালো। যেতে যেতে বললো,
“হুমায়রার প্রতি তুমি খুব দায়িত্বশীল, ভালো লাগছে”

বলেই যাবার জন্য পা বাড়াতেই ফাইজান বলে উঠলো,
“তোমার কখনো রাগ হয় না ফরিদ ভাই?”

ফাইজানের প্রশ্নে অবাক কন্ঠে শুধালো,
“কেনো বলতো?”
“এই যে আমি হুমায়রার প্রতি এতো দায়িত্বশীল হলেও হাফসার প্রতি বরাবর ই ছিলাম একটা বিকারহীন মানুষ”

ফাইজানের এহেন কথায় মৃদু হাসলো ফরিদ। গাঢ় স্বরে বললো,
“হয়, রাগ নয় আফসোস। আফসোস আমার বোনটা ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিলো। আমি তোমাকে দোষাচ্ছি না। ভালোবাসা তো জোর করে হয় না। তুমি তাকে সেই ভালোবাসা দতে পারো নি, যা ওর প্রাপ্য ছিলো।”
“অথচ এই ভুল মানুষটার জন্যই সে আজ নেই”

ফাইজানের কন্ঠে দৃঢ় অপরাধবোধ। ফরিদ কিছুক্ষণ মৌন রইলো। হয়তো কথাটির জন্য৷ প্রস্তুত ছিলো না। তারপর মৌনতা ভেঙ্গে বললো,
“সে মারা গিয়েছে কারণ তার ভাগ্যে তেমন মৃত্যুই ছিলো। মৃত্যুতে তো মানুষের হাত থাকে না। পুরোনো কাসন্দি ঘেটে কি লাভ। শত্রু তো আমারও ছিলো। থাক, আমি ঘুমাবো”

ফরিদ পা বাড়ালো ঘরের দিকে। তার চোখজোড়া জ্বলছে। এই জ্বলন কি ঘুমের নাকি বুকের ছাই চাপা দহনে বুঝতে পারলো না সে।

****

ঘরে ফিরলো ফাইজান। হুমায়রা তখন আয়নার সম্মুখে চুল মুছছে। কেবল গোসল সেরে এসেছে সে। তার মুখখানা ভেজা, স্নিগ্ধ। তাদের চোখাচোখি হলো আয়নার ভেতর। ফাইজানের কিছু সময় তাকে দেখলো। তারপর দ্রুত পায়ে তার কাছে গেলো। পেছন থেকে দৃঢ় ভাবে জড়িয়ে ধরলো। মুখ গুজলো হুমায়রার কাঁধে। মেয়েটিকে ভোরের শিশিরের ন্যায় লাগছে। নিষ্পাপ, কোমল। হুমায়রার সারা অঙ্গে তড়িৎ প্রবাহিত হলো যেন। কেঁপে উঠলো ঈষৎ। ফাইজান তখন বললো,
“তুমি আর ভয় পাবে না। ভূলে যাবে না, তোমার স্বামী ফাইজান ইকবাল”

হুমায়রা স্থির দাঁড়িয়ে রইলো। ফাইজানের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস তার শরীরকে পুড়িয়ে দিচ্ছে। রক্তের স্রোত বইলো মেরুদন্ড বেয়ে। এর মাঝেই হুমায়রার ফোনটা বেজে উঠলো কর্কশ ভাবে। অনিচ্ছাসত্ত্বেও ছেড়ে দিলো ফাইজান। হুমায়রা স্ক্রিনে দেখলো “ভাইজান” ভেসে আছে। ফোনখানা ধরতেই ভেসে এলো কান্নার সুর। ভাঙ্গা, মূর্ছিত স্বরে ভাইজান বললো,
“দাদা আর নাই”…….

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

৪৬তম এবং ৪৭তম পর্ব
https://www.facebook.com/share/p/9Wp1tV3Wkm6Mz2N6/?mibextid=oFDknk

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here