নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ৫৬

0
475

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৫৬

অয়নের দাফন সম্পন্ন করে চার ভাই ও ইমদাদুল হোসেন উঠানে এসে দাঁড়াল। মাথা থেকে টুপি খুলে পাঞ্জাবির পকেটে রেখে পারুলের দিকে তাকাল সকলে। অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছে জননী। ইমদাদুল হোসেন নিজেকে ধাতস্থ করে বললেন, “এখানে আরুর কোনো দোষ নেই ভাইজান। পারুলের সাথে আপনিও পা/গ/ল হয়ে গেলেন। কেন মেয়েটাকে পুলিশে দিলেন ভাই? মেয়েটা এমনিতেই অসুস্থ। প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছিল। একা ওখানে কেমন আছে, কে জানে?”

“চিন্তা করিস না। ওকে পুলিশে দেইনি, ওকে ভালো রাখার ব্যবস্থা করেছি। পারুল ছেলেকে হারিয়ে উন্মাদ হয়ে গেছে। এই সময়ে আরুকে ওর সামনে রাখা ঠিক হবেনা।” মোতাহার আহসান বললেন।

শাহিনুজ্জামান বললেন, “পারুলকে বাড়িতে নিয়ে চলেন ভাই, এখানে রাখা ঠিক হবেনা।”

তদানীং অপূর্ব টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে সন্দিহান ভাবে পা ফেলছে বাড়ির ভেতরে। বুকটা খাঁখাঁ করছে। আরুকে নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পার হয়েছে গোটা এক দিন। রোয়াকে টিফিন ক্যারিয়ার রেখে মোতাহার আহসানের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। কপালে জমে আছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। ভ্রুতে ভাঁজ ফেলে বলল, “বাবা, তোমরা এখানে? বাড়িতে এত ভিড় কীসের?”

“অয়ন পানিতে পড়ে মা/রা গেছে। দাফন সম্পন্ন করে এলাম।” বলতে গিয়ে গলা ধরে এলো শাহিনুজ্জামানের। অপূর্ব দিশেহারা হয়ে উঠল। সমুদ্রের চেয়েও বিশাল এক জলরাশিতে তলিয়ে গেল। যার কোনো কূলকিনারা নেই। ভ্রম ভাঙতেই আরুর কথা মস্তিষ্ক গোচর হলো। সবকিছুর জন্য আরুকে দায়ী করবে পারুল। দৃঢ় গলায় বলল, “আরু কোথায় এখন?”

“আছে। তোর সাথে আমার একটু কথা আছে।” অপূর্বর কথার পরিপ্রেক্ষিতে কথাটা বললেন মোতাহার আহসান। লহমায় অপূর্বর মস্তিষ্ক আগুনের ফুলকি ছাড়ল। কঠোর গলায় বলল, “আরু কোথায়, আমি জানতে চাই।”

সবাই নীরব, প্রতুক্তি দেওয়ার ভাষা নেই। অপূর্ব এতে আরও রুষ্ট হলো। উচ্চৈঃস্বরে আবার জানতে চাইল আরুর খবর। অপূর্বর বাজখাঁই গলায় এক মিলি সেকেন্ডের জন্য বাড়ি নীরব হয়ে গেল। তুর উঠানে বসে কাঁদছে অয়নের জন্য। অপূর্ব তা লক্ষ করে ডাকল তুরকে। আংশিক কথা শুনতেই আরুর দাদিজান তেড়ে এসে বলল, “তোর বউকে পুলিশে কোমরে দড়ি পরিয়ে নিয়ে গেছে। তোর বউয়ের জন্য আমার নাতি পানিতে পড়ে ম/র/ছে। ইচ্ছে করে ওকে পানিতে ফেলে দিয়ে ঘরে গিয়ে ঘুমিয়েছিল। অলক্ষ্মী একটা। ওর জন্য আমাদের মৃধা বাড়ি সার্কাসে পরিণত হয়েছে।”

“মুখ সামলে কথা বলবেন। আমি আপনার ছেলে না যে আপনার কটূক্তি শোনার পরেও চুপ করে থাকব। এত নাতি নাতি করেন, আগে কোথায় ছিল আপনার নাতি? এদিকে তো ঘুরেও আসতেন না। এখন নাচতে নাচতে কাঁদছেন।” দাদি শাশুড়ির মুখের ওপর লাগাম না টেনে বলল অপূর্ব। অপূর্বর উগ্র আচরণে হতবাক হলো সকলে। পারুল দ্বিরুক্তি করে, “অয়নকে গোসল করাতে বলে আমি রান্না করতে গিয়েছিলাম। আরু গোসল না করিয়ে ঘরে এসেছিল জামাকাপড় বদলাতে। ও তো জানত, অয়ন সাঁতার জানেনা। তবুও কেন ওকে দিঘির পাড়ে রেখে এলো।”

“ঘাটলার ওপর গোসল করছিল অয়ন?”

“না! আমি পানি তুলে দিয়েছিলাম উঠানে। এইখানটায় বসে আমার অয়ন গোসল করছিল কিছু ঘণ্টা আগে। এখন আমার ছেলে ঐখানে শুয়ে আছে।” কাঁদতে কাঁদতে বললেন পারুল। প্রবল রাগে অপূর্ব দাঁতে দাঁত চেপে চোখ গ্রথন করে নিজেকে দমানোর প্রচেষ্টা করল। প্রিঞ্চ করে দাদি শাশুড়ি কিছু বলার প্রচেষ্টা করতেই অপূর্বর কথায় লাভা ছড়াল, “আপনাকে না আমি চুপ করতে বললাম? যথেষ্ট সম্মান দিয়েছি আপনাকে, আর দিতে পারছি না। আমার স্ত্রীকে এই অবস্থায় আপনার বাড়িতে কেন এনেছিলেন, অয়নের বডিগার্ড বানাতে? আমার স্ত্রী আমার বাড়িতে রানি হয়ে থাকে। মেয়েকে আপনি কোনো কালেই সহ্য করতে পারতেন না। নিঃসন্তান হয়ে চেয়েছিলেন না? মৃধা বাড়িতে দাঁড়িয়ে অপূর্ব আহসান বলে যাচ্ছে, আরুর কোনো মা নেই। আপনি নিঃসন্তান।”

অনিতা সবকিছু ফেলে উঠানে ছুটে এলেন। রাগান্বিত গলায় বললেন, “তুই দিনদিন বে/য়া/দ/ব হয়ে যাচ্ছিস অপু। বড়োদের সাথে এ কেমন আচরণ তোর! আমার বাবা মা তোকে এই শিক্ষা দিয়েছে?”

“তোমার ননদ যদি মেয়ের প্রতি অ/মা/নবিক হয়, তবে আমি বে/য়া/দ/ব হলে কীসের সমস্যা?” পরপর দম নিয়ে বলল, “আমার বাবা বোনের প্রতি ভালোবাসায় এতটা অন্ধ যে, বিচারকার্য তিনি ভুলে গেছেন। চেয়ারম্যান হয়ে গ্ৰামের বিচার করতে পারলেও নিজের পরিবারের বিচার করতে পারেনা। যেখানে বোনের জন্য ভাগনে/পুত্রবধূর সাথে অ/বিচার হয়, সেখানে তাদের না থাকাই ভালো। আরুকে নিয়ে আমি বহুদূরে চলে যাব।”

“তুই ভুল ভাবছিস অপু, পারুলকে সান্ত্বনা দিতে আরুকে পুলিশে দেওয়ার অভিনয় করা হয়েছে। কাল সকালে ওকে নিয়ে তুই আমার ভাইকের কাছে চলে যাইস।” আশ্বাস দিলেন পারুল। তবুও অপূর্ব বেপরোয়া, “ফুফু বাচ্চা? তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার কী আছে? অথচ যে বাচ্চা, তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার কেউ নেই।”

অপূর্ব উঠানের জাম গাছটার সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে নিজের রাগ সংযত করছে। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে গ্ৰামবাসীদের। তখনই ধীরপায়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করল হাবিলদার। ব্যতিব্যস্ত হয়ে ইমদাদুল হোসেনকে বললেন, “আপনার মেয়ের পেইন উঠেছিল। ধাত্রী ঠিক করে এতক্ষণে বোধ হয় ডেলিভারি হয়ে গেছে। সকাল থেকেই নাকি ব্যথা ছিল, সারাদিন ব্যথা পাত্তা না দিলেও ভ্যানগাড়ির ঝাঁকুনিতে অস্থির হয়ে উঠেছে। আপনারা কেউ যেতে চাইলে আসুন।”

অপূর্ব দুহাতে চুল টেনে ধরল। রাগে দুঃখে একফোঁটা জল পড়ল চোখ বেয়ে। গলা ধরে এলো আনন্দে। বহু কষ্টে বলল, “ওকে কোথায় দেখে এসেছেন?”

“থানায়।”

জিম করা দেহের শক্তির প্রমাণ এতদিনে না মিললেও, আজ মিলল। একটা শক্তপোক্ত ডাল ধরে ভেঙে ফেলল উঠানের মাঝে। সৌজন্য হেসে উন্মাদের মতো বলল, “চেয়ারম্যান বাড়ির সন্তানের জন্ম হয়েছে থানায়। বাহ্! তোমাদের প্রতি আমার আর কোনো অভিযোগের বাকি নেই। সব পূর্ণ করে দিয়েছ তোমরা। আমার সন্তান চোখ মেলে দেখল তার মা অপরাধ করে থানায় তার জন্ম দিয়েছে। আরেকজন মা, তার মেয়ের কষ্টটাই বুঝতে পারল না।”

চম্পা অপূর্বর হাত ধরে বললেন, “আমি ওর কাছে যাব অপু।”

“এতক্ষণ যখন কেউ যেতে পারেনি, এখন আর যেতে হবেনা। এখন আমার স্ত্রীর জন্য আমি একাই একশো।” এই বাক্যটিই বোধ হয় সবচেয়ে কোমল ছিল। অতঃপর অপূর্ব অগ্রসর হলো থানার দিকে। একবারও পেছনে চেয়ে দেখল না কারো মুখ।
__
গ্ৰাম জনশূন্য। গ্ৰামবাসীরা ভিড় করেছে মৃধা বাড়িতে। হাবিলদারের সাথে সাথে এগিয়ে যাচ্ছে অপূর্ব‌। মনে অভিমান ও অভিযোগ ছাড়া কিছু নেই। দীর্ঘক্ষণ পর তারা পৌঁছাল সুন্দরনগর থানায়। চকিতে কর্ণপথে পৌঁছাল নবজাতকের কান্নার শব্দ। একজন ধাত্রী শুভ্র রঙের কাপড়ে জড়িয়ে রেখেছে নবজাতককে। অপূর্ব শিশুটির মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। আরুর থেকেও রূপবতী সেই শিশুটি। শিশুটির গালে হাত দিয়ে বলল, “আমি ওর বাবা। ওকে কোলে নিব একটু?”

“অবশ্যই। এতক্ষণে আসার সময় হলো? মেয়ের কান্না থামছে না। বাবার কোলে গেলে থামে কি-না দেখি।” বলে ধাত্রী অপূর্বর কোলে তুলে দিল ছোট্ট পাখিকে। অপূর্ব তার মুখমণ্ডলে হাত বুলিয়ে জড়িয়ে নিল বুকে। ললাটে প্রথম আঁকল ভালোবাসার চিহ্ন। অবিলম্বে কান্না থেমে গেল তার। অপূর্বর গচ্ছিত অশ্রু ঝরে পড়ল পাখির চোয়ালে। মৃদু স্বরে বলল, “আমার পাখি। সরি মামুনি, তোর বাবা তোকে রাজকন্যার মতো সিংহাসনে তুলে দিতে পারল না। আমাকে ক্ষমা করিস মামুনি।
আরু কোথায়?”

“ও অসুস্থ। আপনি নিশ্চয়ই বুঝবেন ওর কষ্টের কথা। ভেতরে গিয়ে দেখা করে ওর পাশে থাকুন।
পুশ করতে গিয়ে চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। কিছুক্ষণ আগে জ্ঞান ফিরেছে।”
অপূর্ব পাখিকে আগলে ভেতরে প্রবেশ করে আরুর ক্লান্ত মুখ দেখল। পাশে বসে আরুর হাতটা মুঠো করে ধরল। চোখ মেলে তাকাতেই অপূর্ব বলল, “আরুপাখি, আমাদের পাখি এসেছে। অপূর্ব দেখতে তার মুখ।”

চলবে.. ইন শা আল্লাহ

অপূর্ব আরু ম/রে নি, এতেই এই অবস্থা। ওরা কেউ ম/র/লে..
বাড়ির ঠিকানা দিলাম না। 🥲
বইমেলা ২ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আমার একমাত্র বই প্রেম পিয়াস♡ পাবেন ঢাকার বইমেলার ৬১৩ নং স্টলে ও চট্টগ্রামের ৭৫ নং স্টলে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here