ডুবেছি_আমি_তোমাতে #Aiza_islam_Hayati #পর্ব_২৭

0
167

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_২৭
“ভাই আজ বাড়িতে আমার বউ আসবে তাই আমি বাড়ি যাচ্ছি।তুই আজ আমার সন্ধ্যার মিটিংটা এটেন্ড করে নেহ প্লিজ।”

তমাল আহনাভ এর সামনে ফাইল একটা একটা করে দিচ্ছে আর আহনাভ সাইন করে দিচ্ছে।শেষ ফাইলটিতে সাইন করে আহনাভ বলে ,”ঠিক আছে তুই যা আমি মিটিং অ্যাটেন্ড করে নিবো।”

আহিরের ঠোঁটের কোণে এক বিজয়ী হাঁসি ফুটে উঠে।আহির কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।আহনাভ দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বলে,”তমাল আমাকে একা ছেড়ে দাও কিছুক্ষনের জন্য।”

তমাল সাইন করা ফাইল গুলো একে একে করে হাতে নিয়ে নেয় অতঃপর বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।আহনাভ টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটি ফোটো ফ্রেম বের করে তার দিকে অনিমেষ তাকিয়ে থাকে।হুট করে ফ্রেমটি বুকে জড়িয়ে বলে উঠে,”আমি বারংবার ভয় পেয়েছিলাম দ্বিতীয় বার সুযোগ দিতে।কিন্তু এমন কেনো হলো তুমি কেনো!”আহনাভ থেমে গেলো চোখ বন্ধ করে পুনরায় তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে,”ভুল করে ফেলেছি অনেক বড় ভুল।না পারবো কখনো কাছে টেনে নিতে না পারবো ভুলে যেতে তুমি আমাকে শেষ করে ফেললে। এই মানসিক অশান্তি নিয়ে আমি বাঁচতে পারব না।”

.
শান্ত বিকেল।চারিপাশে পাখির আনাগোনা বেড়ে গিয়েছে,গা শীতল করে দেয়া বাতাস ছুটছে ।গাছপালা গুলো নিজেদের প্রাণ ফিরে পেয়েছে,কিয়ৎকাল আগেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি হওয়ার পরবর্তীতেই প্রকৃতি এমন মাতাল করে দেয়া রূপ ধারণ করে।ধুলো বালি জমে থাকা শহরের প্রতিটি গাছপালা তাদের আসল রঙ ফিরে পেয়েছে।
.
মুগ্ধতার গাড়ি এসে থেমে যায় আবরাহার মেনশান এর সামনে।গাড়ি থেকে বের হয়ে চাবি দারোয়ানকে দিয়ে বাড়ির সদর দরজার দিকে এগিয়ে যায়।বেল বাজাতেই সদর দরজা খুলে যায়।মুগ্ধতা সামনে তাকিয়ে তার চোখ বড় বড় করে ফেলে। আহির সামনে দাড়িয়ে তার চুল ভেজা,শার্ট এর সব বোতাম আনব্লক করা,ধবধবে ফর্সা উন্মুক্ত বুকের লোমশ গুলোয় বিন্দু বিন্দু পানি দৃশ্যমান।বাম কাঁধে তাওয়াল ঝুলিয়ে রেখেছে।

মুগ্ধতার নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে চট করে উল্টো দিকে ফিরে বলে উঠে,”এই আপনি কি এখানেই দরজার সাথে চিপকে দাঁড়িয়ে ছিলেন যে বেল বাজানোর সাথে সাথে দরজা খুলে ফেললেন?আর এইভাবে কেনো?শার্ট এর বোতাম লাগান ফাস্ট।”

আহির প্রথমে মুগ্ধতার এমন উল্টো ফিরে যাওয়া না বুঝলেও এখন বুঝে উঠতে পেরে শার্ট এর বোতাম লাগিয়ে বলে,”আমি মাত্র শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে বারান্দায় গিয়ে দেখি আমার বউয়ের গাড়ি আবরাহার মেনশনে ঢুকছে তো এই অবস্থায় ছুটে চলে এলাম।এমন উল্টো ফিরে কেনো আছো বলোতো।”

“আপনি শার্ট এর বোতাম লাগিয়েছেন?”

আহির কাঁধ থেকে তাওয়াল নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ঠোঁট টিপে হেঁসে বলে,”নাহ তো লাগায়নি তোমাকে তো আমার সিক্স প্যাক দেখানো বাকি তো দেখে নেও সুবর্ণ সুযোগ আছে।”

“দেখেন আপনি যদি এমন করেন আমি কিন্তু চলে যাবো।”

আহির ফিক করে হেসে উঠে।মুগ্ধতার হাত ধরে তার দিকে ফিরিয়ে বলে,”উফ মুগ্ধ রানি তোমার এই হুটহাট শরম পাওয়া দেখলে আমি তো মরেই যাবো।”

মুগ্ধতা আহিরকে দেখে নেয়, আহিরের বুকে এক হাতে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে,”মরে যান আপনি।সরুন আপনার এমন করা দেখলে মা বাবা কি ভাববে বলুন তো?”

আহির দুষ্টু হেসে বলে,” সমস্যা নেই সবাই নিজেদের ঘরেই আছে।”

“আরেহ ভাই সর রে।আর আমি শরম পাইনি।হাহ এভাবে খালি গায়ে কেউ কোনো মেয়ের সামনে আসে নিজের মা-বোনের সামনে যায় ঠিক আছে।আর এভাবে দরজা খুলতে কেন এসেছেন?”

আহির সদর দরজা বন্ধ করে দেয়।তাওয়াল দিয়ে মুগ্ধতার কোমড় পেঁচিয়ে এক টানে নিজের কাছে এনে মাতাল কণ্ঠে শুধায়,”বউয়ের কাছেই তো এইভাবে এসেছি অন্য কারো কাছে তো নয়।”

“ভাই আপনি কি বউ কে হার্ট অ্যাটাক করাতে চান নাকি মেরে ফেলতে?এরকম হুটহাট কাছে টেনে নেন কেন ছাড়ুন।”

“বউ কেনো হার্ট এ্যাটাক করবে আমি তো বুঝতে পারছি না।সমস্যা নেই ডক্টর সামনেই আছে।আর আমার বউ আমি যখন খুশি কাছে টেনে নেই তাতে তোমার কী হাহ?”

“এই ভাই আপনার বউ আমি।আমাকে এভাবে কাছে টেনে নিলে আমার সমস্যা হবে না তো আপনার কলিগদের হবে?আর শুধু শুধু নিজের একটা পেশেন্ট কেন বাড়াতে চান?”

“পেশেন্ট বাড়লে সমস্যা নেই আমি ভালো করেই হ্যান্ডেল করতে জানি আমার পেশেন্টদের।”

“এই ছাগল আমারে তোর পেশেন্ট বানাতে চাস কেন?”

আহির হেঁসে ফেলে মুগ্ধতা কে ছেড়ে দিয়ে বলে,”আমার মনে হয় সাইকোলজিস্টদের জন্য একজন সাইকোলজিস্ট হওয়া দরকার।তুমি বস আমি সবাইকে ডেকে আনছি।”বলেই দৌড়

“কী বলে গেলো এইটা।”বলেই মুগ্ধতা সোফায় বসে পড়ে।বোঝার চেষ্টায় লেগে পড়ে।হঠাৎ বলে উঠে ,” কী বুঝাতে চাইছে আমি পাগল আমার জন্য সাইকোলজিস্ট লাগবে?আরেহ তুই পাগল তোর।”মুগ্ধতা থেমে গিয়ে বড় এক শ্বাস নিয়ে বলে,”থাক থাক শ্বশুর বাড়ি দাড়িয়ে এইসব বলতে নেই মুগ্ধতা।”

.
সকলে নিচে নেমে আসে।আলিযা, আফ্রা বাদে সকলেই আছে।মুগ্ধতা দাড়িয়ে যায়,সবাইকে সালাম দিলে।আহিরের মা অনামিকা সালামের উত্তর নিয়ে ঠোঁটের কোণে এক অমায়িক হাঁসির রেখা ফুটিয়ে এগিয়ে আসে মুগ্ধতার কাছে।মুগ্ধতার হাত ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে নিজেও পাশে বসে পড়ে। অনামিকা বলে,”আমার বউমা টা কেমন আছে?”

মুগ্ধতা হেঁসে বলে,”আলহামদুলিল্লাহ মা ভালো।তুমি কেমন আছো?”

“আমি তো পুরোই অস্থির মেজাজে আছি,বউমা প্রথম শ্বশুর বাড়ি এসেছে।আমি তো তার জন্য তার সব পছন্দের নাস্তা বানিয়ে রেখেছি।আমি তো তোমার পছন্দের ব্যাপারে জানতাম না সব আমাকে আহির বলেছে।আর লায়ানা মা আসল না যে?”

“মা লায়ানা ওর কাজ নিয়ে একটু ব্যাস্ত তাই আসতে পারেনি।আর এত কিছু করার কী দরকার ছিল মা।”

আহনাভের বাবা সোফায় বসতে বসতে বলে,”আমাদের মেয়ে বাড়ি আসবে আর তার জন্য কিছু করা হবে না এইটা কেমন করে হয়।”

মুগ্ধতা মুচকি হাসে।সাহিরাহ ওয়ার্দিকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বলে,”বউ আগে কিছু খেয়ে নিক তারপর কথা বলবে।”

আহনাভের মা জেরিন রান্না ঘরের দিকে যেতে যেতে বলে,”হম সাহিরাহ ঠিক বলেছিস।আমি নাস্তা গুলো নিয়ে আসছি তোরা দাড়িয়ে না থেকে সোফায় বসে পড়।”

মুগ্ধতা দাড়িয়ে বলে,”আমিও যাই বড় মাকে হেল্প করি।”

অনামিকা মুগ্ধতার হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বলে,”চুপটি করে বসে থাকো।”

“কিন্তু মা আমি যাই না।”

“আমি আমার মেয়েদের রান্না ঘরে যেতে দেই না এত। চুপটি করে বসে থাকো তো।”

আহিরের বাবা আহনাভের বাবার পাশে বসে আহিরের দিকে তাকিয়ে বলে,”বউ এসেছে আর তুই এইভাবে খাম্বার মত দাড়িয়ে আছিস কেনো যা বড় মা কে হেল্প কর নাস্তা গুলো নিয়ে আসতে।”

আহির আড় চোখে তাকিয়ে চলে যায় জেরিন এর কাছে রান্না ঘরে।মুগ্ধতা পুনরায় বলে উঠে,”আরেহ উনি যাচ্ছে কেনো মা আমি যাই না।”

আহিরের বাবা বলেন,”বউমা বসে থাকো তো।প্রথম শ্বশুর বাড়ি এলে তোমার বর কে একটু তার বউকে অ্যাপায়াওন করতে তো দাও।”
.
আহির,জেরিন সার্ভেন্টদের নিয়ে নাস্তা গুলো এনে সেন্টার টেবিলে রেখে নিজেরাও গিয়ে সোফায় বসে পড়ে।

জেরিন বলে,”মুগ্ধতা মা খেয়ে নাও।”

ওয়ার্দি পুরো বসার ঘর দৌড়ে বেড়াচ্ছে,হঠাৎ সে দৌড়ে আহিরের কাছে এসে বলে,”কোলে কোলে মামা।”

আহির ওয়ার্দিকে কোলে নিয়ে বসিয়ে দিলে ওয়ার্দি মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে বলে,”খেলে লাও খেলে লাও।” বসার ঘরের সবাই হো হো করে হেসে উঠে।

আহির বলে উঠে,” বউ।”বলেই থেমে যায় আবার সকলের দিকে তাকিয়ে বলে,” এই মানে মুগ্ধ খেয়ে নাও।ওয়ার্দি তোমাকে খেয়ে নিতে বলছে।”

মুগ্ধতা সকলের দিকে খাবার এগিয়ে দিয়ে বলে,” আপনারাও খাওয়া শুরু করুন।”

.
সকলের খাওয়া শেষ হতেই সার্ভেন্ট এসে খাবারের প্লেট গুলো নিয়ে যায়।মুগ্ধতা ওয়ার্দিকে কোলে নিয়ে খেলছে।

আহনাভের বাবা বলে উঠে,”আহির বলল তুমি কি যেনো বলবে আমাদের।কোনো খারাপ কিছু নয় তো?”

“না বড় বাবা সেরকম কিছু নয়।”

মুগ্ধতা ইশারা দিয়ে আহিরকে বলে বলা শুরু করতে আহির উল্টো মুগ্ধতাকে ইশারা দিয়ে বলে ওকেই বলতে এভাবে ইশারায় কথা আদান প্রদান হতে হতে মুগ্ধতাই বলে উঠে,”মা,বাবা,বড় বাবা,বড় মা আপনারা আমাকে ভুল বুঝবেন না।আমি বাড়ির বড়দের ছাড়াই একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছি।ওনাকে আমি গত কাল এই বিষয়ে বলেছি।

জেরিন জিজ্ঞাসু চাহনিতে তাকিয়ে বলে,” কি বিষয়ে কথা বলবে?”

মুগ্ধতা সামনে থাকা গ্লাস থেকে পানি খেয়ে বলা শুরু করে,” আমি একজন সাইকোলজিস্ট আর এই বাড়ির বউ আর আমি আহনাভ ভাইয়াকে নিজের ভাই মনে করি।সেই হিসেবে আমি একটা কথা বলতে চাই।সেটা হয়ত আমাকে বলা নাও মানাতে পারে।কিন্তু আমি ভাইয়ার বোন হিসেবে এটা বলতে চাই।আহনাভ ভাইয়া তার প্রথম ভালোবাসায় ধোকা খায় তারপর সে মেন্টালি একটা ট্রমাতে ছিল।আপনারা সবাই সেটাতে অনেক কষ্ট পেয়েছেন।অনেক উপায়ে চেষ্টা করেছেন সেটা থেকে বের করার কিন্তু কিছুতেই কিছু করতে পারেননি কারন সে খুব মারাত্মক একটা ট্রমাতে ছিল।ভাইয়া লায়ানার সাথে মিশার পর সেই ট্রমা থেকে কিছুটা হলেও বের হয়েছে প্রথম প্রথম।আর লায়ানা ভাইয়া কে খুব পছন্দ করে।ভাইয়াকে ও ওর জীবনসঙ্গী বানাতে চায়।সে থেকেই ও ভাইয়ার সাথে মিশেছে।”মুগ্ধতা থেমে গিয়ে পুনরায় এক গ্লাস পানি খায়,আবার বলা শুরু করে,”আমার বোন কে আমি এত বছর ধরে চিনি ও কখনো কোনো ছেলের দিকে সেভাবে তাকায়নি।ও প্রথম থেকেই জানত যে ভাইয়া এরকম একটা ধোকা খেয়েছিল তাই ও নিজে ভাইয়া কে সেখান থেকে বের করার চেষ্টা করেছে।এবং সফলও হয়েছে ভাইয়াও লায়ানা কে ভালোবাসতে শুরু করে।এখন এক কারণ বশত ভাইয়া আবারো সেই ট্রমাতে ফিরে যাচ্ছে।ভাইয়া আর লায়ানার মাঝে এমন কিছু হয়েছে যার কারণে দুজন ভেঙ্গে পড়েছে,আমি জানি না কী এমন হয়েছে।”

মুগ্ধতা থেমে গেলে আহির বলে,”আহনাভকে তোমরা সেই আগের গম্ভীর পাচ্ছো এই কারনেই।”

মুগ্ধতা পুনরায় বলল,”এখন আমি একজন সাইকোলজিস্ট সেই হিসেবে আমি একটাই সোলিউয়েশন জানি,সেটা হলো ভাইয়া কে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে।এরকম ট্রমা থেকে পরিবার সহজে বের করে আনতে পারে না একজন সঠিক জীবনসঙ্গীই পারে তাকে এমন ট্রমা থেকে বের করে আনতে।

আহনাভের বাবা বলে,”তো মা তুমি বলতে চাইছো যে লায়ানার সাথে আহনাভের বিয়ে দেওয়ার কথা?”

মুগ্ধতা আহনাভের বাবার সামনে গিয়ে হাটু মুড়ে বসে পড়ে,ওনার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,”বড় বাবা আমি লায়ানা আর ভাইয়ার ভালো চাই।আমি আমার বোন কে কষ্টে দেখতে পারব না বড় বাবা।ও প্রতিদিন মন খারাপ করে রাখে, খাওয়া-দাওয়া ঠিক ভাবে করছে না।আর ও ভাইয়াকে খুব ভালোবাসে ভাইয়া কে কখনো কষ্ট পেতে দেবে না। তোমরা ওকে একবার সুযোগ দিয়ে দেখো।”

পাশ ফিরে মুগ্ধতা জেরিনের হাত ধরে বলে,”বড় মা আপনি তো ভাইয়াকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন আপনি অন্তত বুঝুন।”

আহিরের বাবা বলে উঠে,”মা তুমি আহিরের সাথে ওর রুমে যাও আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে জানাচ্ছি।”

মুগ্ধতা উঠে দাড়ায় আহিরের পিছন পিছন আহিরের ঘরে চলে যায়।ঘরে গিয়েই মুগ্ধতা বলে উঠে,”এই গত কাল আপনাকে কী আমি এই জন্য বলেছিলাম যে আমাকে সাপোর্ট করবেন।ঘোড়ার ঘাস করলেন আপনি কোনো কথাই তো বললেন না।সবই আমি বললাম।উফফ এত্ত নার্ভাস তো আমি নিজের সাইকোলজি এক্সেম এর সময়ও হইনি।”

আহির মুগ্ধতা কে টেনে বিছানায় বসিয়ে বলে,”তুমি এখানে বসো আমি নিচে দেখে আসছি সবাই কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।”

“আচ্ছা যান।”

.
প্রায় বিশ মিনিট কেটে গেলো।আহির ঘরে এসে বলে,”নিচে আসো সবাই ডাকছে তোমাকে।”

মুগ্ধতা বসা থেকে দাড়িয়ে বলে উঠে,” কি হয়েছে বলুন না।”

“নিচে গিয়ে নিজেই শুনে নাও।”

.
নিচে চলে আসে দুজন।মুগ্ধতা আহিরের পাশে দাড়িয়ে আছে।

সারিয়াহ বলে,”আচ্ছা তুমি বললে দুইজনের মধ্যে ভুল বোঝা-বুঝি হয়েছে তাহলে আহনাভ বিয়ের জন্য কি করে রাজি হবে?”

মুগ্ধতা প্রতুত্তরে বলে,”আপু আমার জানা মতে ভাইয়া জীবনেও রাজি হবে না এই বিয়ের জন্য কিন্তু আমি একটা প্ল্যান করেছি আপনারা অনুমতি দিলে বলতে পারি।”

জেরিন বলে,”বলো কি ভেবেছো?”

“আপনারা অনুমতি দিলে ভাইয়াকে না জানিয়ে অপহরন করে বিয়ে করাব।”

জেরিন বসা থেকে দাড়িয়ে বলে উঠে,”তোমরা এইসব ভাবলে কি করে?আমার ছেলেকে অপহরন করে বিয়ে করাবে।”

“বড় মা আমি এখানে ভাইয়ার জন্য খারাপ কিছু ভেবে এইসব প্ল্যান করিনি। আমি ভাইয়ার ভালোর জন্য আর আমার বোনের সুখের জন্য চাইছি এমনটা।আমার জানামতে আপনারা কেউ চাইবেন না ভাইয়া সারাজীবন গম্ভীর হয়ে রাগি ভাব নিয়ে বসে থাকবে।”

আহনাভের বাবা গম্ভীর ভাবে বলেন,”তাহলে তোমরা কি চাইছো আহনাভকে কিডন্যাপ করে বিয়ে করিয়ে দিবে?”

আহির বলে,”বড় বাবা আমি কখনো আহনাভের খারাপ হবে এমন কোনো কাজ করেছি বা সেই কাজে সাপোর্ট করেছি?আমি সবদিক দিয়েই ভেবে দেখেছি যে মুগ্ধতা যা বলেছে সব ঠিক বলছে।কারণ আহনাভ তোমাদের সাথে কোনো কিছু শেয়ার না করলেও সব আমার কাছে করে থেকে।আমাকে এটাও পর্যন্ত বলেছে যে ও হায়াতি কে পছন্দ করে।আমি এখন না বললে হয়তো তোমরা জানতেও না ।আমিও চাইনা আহনাভ সবসময় এমন গম্ভীর হয়ে নিজেকে অযত্নে রাখুক।ওকে ভালোবেসে যত্ন করার মতো কেউ হোক।আর হায়াতির চোখে আমি আহনাভের জন্য যে ভালোবাসা দেখেছি সেটা আসলেই আহনাভকে সারাজীবন খুশি আর যত্নে রাখার মতো।আর তোমরা যদি বলো যে এতে আহনাভের জন্য খারাপ হবে তাহলে আমি বা মুগ্ধতা কেউই এই বিষয়ে কখনোই কথা বলবো না।কিন্তু মনে রাখবে আহনাভ এমন করতে করতে ওর কিছু হলে সেটার জন্য দোষী তোমরা হবে।”

আহিরের থামতেই পুরো বাড়ি জুড়ে নিরবতা বিরাজ করে।সেই নিরবতা ভেঙে আহনাভের বাবা বলেন,”তোমাদের যেটা ভালো মনে হয় করো।আর এতে যদি আহনাভের ভালো হয় আমার আপত্তি নেই।আহির আজপর্যন্ত আহনাভের জন্য খারাপ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।আশা করি এটাও ভালো সিদ্ধান্তই হবে।”

জেরিন বলে উঠে,”আমার ছেলের এতে ভালো হলে আমার কোনো সমস্যা নেই।আমার আগে থেকেই হায়াতি মা কে খুব পছন্দ ছিল। ওকে আমার ছেলের বউ বানাতে কোনো অসুবিধা নেই।কিন্তু মুগ্ধতা মা আমার ছেলে কে কিডন্যাপ করার সময় একটু দেখেশুনে কিডন্যাপ করবে বুঝলে ও যেন কোনো ব্যথা না পায়।”

মুগ্ধতা আহনাভের মায়ের পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বলে,”বড় মা তুমি একদম চিন্তা করবে না।ভাইয়া কোনোরকম ব্যথা পাবে না।কারন এই কিডন্যাপ করবে ভাইয়ের একমাত্র ভাই আহির।”

সকলে একসাথে আহিরের দিকে তাকালে,আহির বোকা হেঁসে সকলের দিকে তাকায়।

আহিরের বাবা বলে উঠে,”সব রেখে ওকে দায়িত্ব দিলে মুগ্ধতা মা।আমার তো মনে হয় ও আহনাভ বাবাকে কিডন্যাপ করে অজ্ঞান করতে গিয়ে নিজেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে।”

“ডোন্ট আন্ডারএস্টিমেট দা পাওয়ার অফ আফরান আবরাহার আহির।”

আহিরের বাবা আড় চোখে তাকিয়ে বলে,”আসছেরে আমার শারুখ খান।”থেমে গিয়ে মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে বলে,”মা তোমাদের কিডন্যাপিং এর প্ল্যানিংটা আমাদের বল না আমারও একটু শুনি তোমরা কি ভেবেছ।”

মুগ্ধতা বসে পরে,তাদের প্ল্যানিং নিয়ে সকল কিছু সবাইকে বুঝিয়ে আবরাহার মেনশন থেকে বেরিয়ে পরে।মুগ্ধতার গাড়ি আবরাহার মেনসন এর দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতেই পাশ দিয়ে আহনাভের গাড়ি মেনশন এর দরজা দিয়ে প্রবেশ করে।

.
আহনাভ বাড়িতে ঢুকতেই ওয়ার্দি আহনাভের প্যান্ট টেনে বলে,”মামা মামা কোলে কোলে।”

আহনাভ ওয়ার্দি কে কোলে তুলে নেওয়ার পর ওয়ার্দি বলে উঠে,”মামা তুমি তানো তবাই তোমাকে তিতন্যাপ তলে লিয়ে দিবে ফেবেছে তিতি মাম্মামের তাতে।”

আহির টেবিলের কাছে দাড়িয়ে পানি খাচ্ছিল ওয়ার্দির এহেন কথা শুনে কাশি উঠে যায় আহিরের,মুখ থেকে ফুস করে সব পানি পরে যায়। আহির গ্লাস রেখে আহনাভের কাছে এসে ওয়ার্দি কে নিজের কোলে নিয়ে বলে,”মামা তুমি আমার সাথে খেলো তোমার আহনাভ মামা টায়ার্ড হয়ে গিয়েছে না।

আহনাভ ভ্রু কুঁচকে বলে”ওয়ার্দি কি বলল রে?,বলেই কান থেকে এয়ারবার্ড খুলে নেয়।আহির শান্তির নিশ্বাস ফেলে আহনাভের কানে এয়ারবার্ড ছিল এর মানে কিছু শুনেনি আহনাভ।

“কিছুই বলেনি বলছিলো মামা তুমি তেমন আছো।”

আহনাভ পুনরায় ভ্রু কুঁচকে তাকায় আহিরের দিকে।আহনাভ বলে,”আপ্পির গাড়িও দেখলাম মাত্র বের হলো আপ্পি আমার সাথে না দেখা করেই চলে গেল? আর ওয়ার্দি মামা বলতো তুমি কী বলেছিলে?”

আহির ওয়ার্দির মুখ নিজের দিকে করে বলে,”মামা দেখো আমরা আহনাভ মামাকে ডিস্টার্ব না করি।”ওয়ার্দি কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে যায়।

আহির বলে উঠে,”ওই দেরি হয়ে যাচ্ছিল তো তাই চলে গিয়েছে।”

আহনাভ ফোন পকেটে রেখে বলে,”ওয়ার্দি মামা আহির মামার কথা শোনার দরকার নেই।তুমি কী বলছিলে মামা কে?আমি শুনতে পায়নি বলতো আবার।”

ওয়ার্দি মুখ খুলবে তার আগেই আহির ওয়ার্দির মুখ চেপে ধরে এক ভো দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় চলে যায়।আহনাভ অবাক হয়ে বলে উঠে,”এই আহির কী পা’গ’ল টাগল হয়ে গেলো নাকি।”

#copyrightalert
#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here