ডুবেছি_আমি_তোমাতে #Aiza_islam_Hayati #পর্ব_৩৩

0
202

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_৩৩
সামনে চেয়ারের বেঁ’ধে রাখা লোকটির মুখ টিপে ধরে রেখেছে তার সামনে দাড়িয়ে থাকা পুরুষটি।সে গর্জে উঠে বলে,”তোর সাহস কী করে হয়,ওই বাইকের উপর ট্রাক উ’ঠি’য়ে দেয়ার মত কাজ করতে গিয়েছিলি!ওই বাইকে ওই আহনাভ সহ আমার কুইন ছিলো।”

লোকটি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠে,”স্যার আপনি তো বলেছিলেন ওই আহনাভ কে ট্রাকের চা’পা দি’য়ে যেনো শে’ষ ক’রে ফে’লি।”

লোকটির গাল আরো জোরে চেপে ধরে বলে,”আমি তোকে ওই আহনাভ কে শে’ষ করতে বলেছি তার সাথে আমার কুইন কে না।যদি গত কাল রাতে আমার কুইনের কিছু হয়ে যেত?”

পুরুষটি ছেড়ে দেয় লোকটিকে,তার পাশে দাঁড়ানো কালো পোশাক পড়া লোক গুলোকে বলে উঠে,”একে শে’ষ ক’রে ফেল।আমার কুইনের গায়ে আচ দেয়ার সাহস করেছে ও।”

বলেই ধীর পায়ে হেঁটে থাই গ্লাসের জানালা খুলে দেয়। আকাশ পানে তাকিয়ে বড় এক নিশ্বাস ছেরে বলে,”কুইন তুমি অন্ধকারকে ধ্বং’স’কা’রি’নী আর আমি নিজেই অন্ধকার আমাদের মিলন কী কোনো প্রলয় ডেকে আনবে?সমস্যা কি আমি সেই প্রলয় কে সামলে নিতে পারবো।তোমাকে আমার এই অন্ধকার জ’গ’তে খুব শীঘ্রই নিয়ে আসবো।আমি যে পারছি না তোমায় ওই আহনাভের সাথে দেখতে।”

.
আজ মুগ্ধতার বাড়ির বাগানে মুগ্ধতা,লায়ানার মেহেন্দির অনুষ্ঠান করবে।বাড়ির সকলে মিলেই নিজেরা নিজেরা সাজাচ্ছে বাগান।খুব সকালেই মুগ্ধতাদের বাড়ি চলে এসেছে আহিরের পুরো পরিবার শুধু আসেনি আহির ও আহনাভ।আহির,আহনাভ দুজনেই আজ অফিসের এক গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হ্যান্ডেল করছে,তারা দুজন সন্ধ্যার আগেই চলে আসবে মুগ্ধতাদের বাড়ি।

.
সাহিরাহ মুগ্ধতার ঘরের সামনে এসে দরজার কড়া নেড়ে বলে,”বউ তুমি কী ঘরে আছো?”

সাথে সাথে দরজা খুললো না।ঠিক পাঁচ থেকে ছয় মিনিট পর দরজা খুললো মুগ্ধতা।মুগ্ধতা তাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বলে উঠে,”আপু আসলে আমি শাওয়ার নিচ্ছিলাম।আসো ভিতরে আসো।”

সাহিরাহ ঘরের ভিতর ঢুকে দুই হাতের দুইটি ব্যাগের মধ্যে একটি মুগ্ধতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,”এই নাও বউ এইটা তোমার জন্য।বড় মা,আমি আর মা মিলে তোমার, আহিরের জন্য মিলিয়ে মেহেন্দি’র আউটফিট কিনেছিলাম।আজ এইটা পড়বে মেহেন্দি’তে।আশা করি ভালো লাগবে তোমার।”

মুগ্ধতা মলিন হেসে বলে,”অবশ্যই ভালো লাগবে।বড় মা,তুমি,মা মিলে কিনেছো কেনো ভালো লাগবে না।”

সাহিরাহ ব্যাগ’টি মুগ্ধতার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,”আচ্ছা আমাদের হায়া বউ কোথায়?আসার পর তো একবারও দেখলাম না।”

“আসলে আপু ও সকালে শপিংয়ে গিয়েছে ওর জরুরী কিছু কেনার ছিলো তাই।”

সাহিরাহ বাম হাতে থাকা ব্যাগটি মুগ্ধতার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,”তাহলে আমাদের হায়া বউ আসলে ওকে এইটা দিয়ে দিও।এইটা হায়া বউ এর জন্য।আহনাভ আর হায়া বউ এর জন্য ও কিনেছিলাম।আজকে এইটা ওকে পড়তে বলো।”

“ঠিক আছে আপু।”

সাহিরাহ মুগ্ধতার ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

.
গোধূলি লগ্ন চলছে,মুগ্ধতা’দের বাড়ির বাগানে বিভিন্ন রঙের মরিচ বাতির আলো জ্বলছে।মুগ্ধতা,লায়ানা দুজনেই তাদের জন্য নির্ধারিত বসার জায়গায় বসে আছে।মুগ্ধতা,লায়ানা সাহিরাহ’র দেয়া লেহেঙ্গা টাই পড়েছে।

হঠাৎ মরিচ বাতির আলো বন্ধ হয়ে গেলো,সাথে সাথে চেঁচামেচি রোল পড়ে গেলো,”আলো কিভাবে চলে গেলো।”

আহান অন্ধকার হাতড়ে কিছুটা এগিয়ে গেলেই করো হাতের স্পর্শে থেমে যায়,আহান ভীতিবিহ্বল কণ্ঠে বলে উঠে,”কে ভাই তুমি?ভুত নাকি?প্লিজ ভাই আমাকে শেষ মেষ এইভাবে আকড়ে ধরিস না,বিয়ে সাদি করা বাকি এখন’ও।শুন ভুত ভাই আমি খেতে একদম টেস্টি না আমাকে ধরিস না।”

সামনের মানুষটি আহান এর হাত আরো শক্ত করে ধরে ধমকে বলে উঠে,”এমন’ই অন্ধকারে ভয় পাচ্ছি আর আপনি এইসব কী বলছেন?”

আহানের ভ্রু কুঁচকে আসে,জিজ্ঞাসু কণ্ঠে বলে,”এই তুমি কী আলিযা?এমন পেত্নী মার্কা কন্ঠ তো একদম আলিযার।”

সাথে সাথে লাইট জলে উঠে,আহান এর সামনে আলিযা দাড়িয়ে, আলিযা আহান কে ধরেই ওর পিঠে কিল বসিয়ে বলে,”আমার কন্ঠ পেত্নীর মত?”

আহান সরে আসতে নিলেও পারে না আলিযা আহান এর পাঞ্জাবির কর্লার ধরে রেখেছে।আহান বড় সড় এক ঢোক গিলে বলে,”ইয়ে মানে আসলে পেত্নীর মত না, কে বলেছে তোমাকে কন্ঠ পেত্নীর মত?আসলে কী পেত্নী পেত্নী একটা ভাব আসে তোমার কণ্ঠে।একদম পেত্নীদের মত না।”

আলিযা আরো এক কিল বসাতে হাত উঠাবে ওই মুহুর্তেই বাগানে প্রবেশের জায়গা থেকে আহির, আহনাভের কণ্ঠে ভেসে আসে,

হো~
রাঙ পুরেদি রাঙ রাঙিলি
ছেল ছাবিলি নার
চাঞ্চাল নেন কাটার
দি উসদা রুপ টেজ তালোয়ার
উসকের রূপ সে কাতল হুয়ে তো
চার্চা শুরু হুয়া হে~
নাগারা নাগারা নাগারা বাজা
নাগারা নাগারা নাগারা বাজা,

পুরো ব্যান্ড পাটির সঙ্গে বাড়ির সব কচিকাঁচারদের নিয়ে নাচার সাথে গান গাইতে গাইতে দুই ভাই এসে দাড়ালো মুগ্ধতা,লায়ানার কাছে। আহির মুগ্ধতা’কে চোখ মেরে বলে,”আমি তো পুরোটাই ঘায়েল হয়ে গিয়েছি মুগ্ধ রানি।”,মুগ্ধতা মুচকি হাসে।

আহনাভ বুকে হাত দিয়ে বলে উঠে,”হায়!হায়া পাখি তোমার এই রূপ আমাকে তো মেরেই ফেলবে।”

আহনাভ,আহির মুগ্ধতা ও লায়ানার দুই পাশে গিয়ে বসে পড়ে।আহির মুগ্ধতার হাত নিজের হাতে নিয়ে বলে,”দেখি তো আমার বউ এর হাতের মেহেন্দি।”

“হম দেখুন দেখুন,আর আপনার নাম খুঁজে বের করুন তো?”

আহির মেহেন্দি রাঙা হাতে ভালো করে চোখ বুলিয়ে বলে,”ঐযে ওই চিপায় পড়ে আছে আমার নাম’টা।”

মুগ্ধতা ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটিয়ে বলে,”আপনি চিপায়’ই সুন্দর আপনাকে সামনাসামনি তুলে ধরলে আপনি যেই বড় মাপের শয়তান।কে জানে কোন শয়তানি করে বসেন।”

আহির আড় চোখে তাকিয়ে বলে,”আমি একদম শয়তানি করিনা।তুমি কি চোখে দেখোনা আমি কী ভদ্র।”

“আপনাকে ভদ্র বললে ভদ্র কে অভদ্র বলা হবে।”

আহির বিস্ময়ের সাথে বলে,”এ!”

“এ না হ্যাঁ গো আহির সাহেব।”

.
লায়ানা তার দুই হাত আহনাভ’কে দেখিয়ে বলে,”দেখো কী সুন্দর হয়েছে আমার হাতের মেহেন্দি!”

“আমার পাখি টাই কত সুন্দর তাহলে তার হাতের মেহেন্দি কেনো সুন্দর হবে না!”

লায়ানা দুই হাতে মুখ ঢেকে বলে,”হায় এইভাবে বলো না।”

আহনাভ হেঁসে বলে উঠে,”আয় হায় আমার পাখি দেখি শরম’ও পায়।”

লায়ানা মুহূর্তের মাঝে হাত সরিয়ে আহনাভের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,”তো কী মনে হয় আমি কী ফুল্লি বেশরম?”

“তোমার মাথায় এত বড় সত্যি কথাটা এলো কী করে?”

লায়ানা মুখ ফুলিয়ে বলে উঠে,”আহনাভ!”

“জি বলো বউ।”

“অসভ্য লোক একটা।”

লায়ানার সামনে বসে থাকা মেয়েটি বলে উঠে,”আপু ভাইয়ার নাম কী?”

লায়ানা ভ্রু কুঁচকে বলে,”আমার ভাইয়ের নাম দিয়ে তুমি কী করবে?শুনো আমার ভাই পুরোই সাদা চান আমার তোমাকে আমার ভাইয়ের বউ হিসেবে পছন্দ হয় নাই।”

মেয়েটা বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে বলে,”আপু আমি বলতে চাইছি আপনার হাসবেন্ডের নাম কী?”

লায়ানা এক ভ্রু উচু করে বলে,”কী সাংঘাতিক মেয়ে,আমার হাসবেন্ডের নাম দিয়ে তুমি কী করবে?শুনো তোমাকে আমার সতীন হিসেবেও পছন্দ হয়নি।”

“ম্যাম আপনার হাসবেন্ডের নাম টা আপনার হাতে লিখতাম তাই আরকি জিজ্ঞেস করছিলাম।”

লায়ানা হেঁসে বলে,”ওহ আচ্ছা তা বললেই তো পরো।”

আহনাভ নিশব্দে হাঁসে।

.
ভাই বোন’রা নাচ গান করলো।এখন সবাই বসে খাওয়া দাওয়া করছে।লায়ানা’কে আহনাভ খাইয়ে দিচ্ছে আর মুগ্ধতা’কে আহির।আহির মুগ্ধতার মুখে খাবার পুরে দিতে গেলে মুগ্ধতা আহিরের আঙ্গুলে কামড় বসিয়ে দেয়, আহির সাথে সাথে হাত সরিয়ে বলে উঠে,”আহ মুগ্ধ রানি কামড় দিচ্ছ কেনো?”

“আপনি আমার মত নিষ্পাপ কে এমন বলতে পারেন আহির সাহেব।”

আহির হেঁসে বলে,”হম আমার বউ যে কত’টা নিষ্পাপ তার মুখ’টি দেখেই যে কেউ বলে দিবে।”

“কেন আমার মুখে কি ডাইনি লেখা না আমি ডাইনির মতো দেখতে যে নিষ্পাপ না আমি?”

“নাহ তো।আমার বউ এতই নিষ্পাপ যে তার মতো কেউ আরেকটা খুঁজে পাবে না।”

“আল্লাহ দুনিয়াতে সবাই কে আলাদা চরিত্রে বানায়।কারো সাথে কারো মিল থাকে না সে হিসেবে আমিও দুনিয়াতে এক পিসই।আর আমি অনেক নিস্পাপ ঠিক আছে হুহ।”

লায়ানার গলায় খাবার আটকে যায় আহির এর এমন কথা শুনে।আহনাভ খাবারের প্লেট রেখে লায়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে লায়ানাকে পানি খাইয়ে বলে,”এই ঠিক আছো পাখি।”

মুগ্ধতা বলে উঠে,”আর মরার তোর কি হয়েছে এভাবে কাশছিস কেন? ভাইয়া ওকে আরো পানি খাওয়ান নাহলে বিয়ের আগেই মরে যাবে।”

লায়ানা বুকে হাত দিয়ে বলে,” জিজু এমন বললে আমি তো খাবার গলায় আটকেই এখন মরে যাবো।”

মুগ্ধতা ঠোঁট উল্টে বলে উঠে,”কেন রে লায়ানা তুই জানিস না আমি কত টা নিষ্পাপ।”

“বনু আমি ছাড়া কে জানবে তুমি যে কত নিষ্পাপ।”
মুগ্ধতা আড় চোখে তাকায়।

.
আহান টেবিলে বসে খাচ্ছে,খাবার মুখে নিবে সেই মুহূর্তে চোখে পড়লো আলিযা তার দিকেই আসছে।আহান শুকনো ঢোক গিলে প্লেট হাতে নিয়ে দাড়িয়ে বলে,”আহান এই পেত্নীর থেকে নিজেকে বাঁচাতে চাইলে পালা।ওয়ান টু থ্রি..” বলেই আহান প্লেট নিয়ে দৌড়।

আহান কে দৌড় দিতে দেখে আলিযা’ও আহানের পিছু পিছু দৌড়।আলিযা দৌড়তে দৌড়তে বলে উঠে,” এই আহাইন্না দারা বলছি।”

আহান প্লেট এর খাবার মুখে নিয়ে খেতে খেতে দৌড়াচ্ছে আর বলছে,”আল্লাহ বাঁচাও এই পেত্নীর থেকে!একটু শান্তিতে খেতেও দিচ্ছে না।কী এমন বলেছিলাম!আল্লাহ দিলে এখন আমার শান্তি হারাম করে দিসে।” আহান আবার মুখে খাবার পুরে দৌড়ের গতি বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”এই কেমন দেশ?কথা বলার অধিকার নেই?মনের কথা ভাষা দিয়ে প্রকাশ করার দেখি অধিকার’ই নেই।আমি তো আমার মনের কথা ‘পেত্নী’ টা ভাষা দিয়েই প্রকাশ করেছিলাম এখন এমন করে ধাওয়া করছে যেনো কাউকে গু’লি করে মাচাংয়ে পাঠিয়ে দিসি।”

আলিযা চেঁচিয়ে বলে উঠে,” আহাইন্না দারা বলছি।এত জোরে দৌড়াচ্ছিস কেনো?”

“প্লিজ বইন মাফ কর আমাকে।ছাইড়া দে বইন।ইশ এতক্ষনে আরো তিন প্লেট বিরিয়ানি খাইতে পারতাম।শালা’র বইন এমন কইরা দৌড়ানি দিতে থাকলে আমার তো এই খাবার ও হজম হইয়া যাবে।”

আলিযা লেহেঙ্গা উচু করে আরো জোরে দৌড়ে এসে আহানের হাত ধরে ফেলে।আহান আমতা আমতা করে বলে,”দেখো তোমার কন্ঠ মধুর মত।পুরোই হানি কেও হারিয়ে ফেলার মত কন্ঠ। আই সুয়ের তোমার এই কন্ঠ শুনে যে কেউ পাগলা হয়ে যাবে আমি তো পুরোই ক্রাশ তোমার..”,বাকিটা বলা হলো না আহান মুখে হাত দিয়ে চুপ হয়ে যায়।

আলিযা মুচকি হেঁসে বলে,”ওহ তাই বুঝি।” আলিযা আরো এগিয়ে এসে মিনমিনিয়ে বলে,” শুনো না আহাইন্না আমারও তোমাকে খুব ভালো লাগে।তুমি দেখতে আসলেই হ্যান্ডসাম,তোমার ঐ সুন্দর সুন্দর গাল গুলো লাল হয়ে আছে না তা দেখতে খুব মিষ্টি।”

আহান এর সাথে সাথে কাশি উঠে যায়।আহান কাশতে কাশতে বলে উঠে,”এক্সকিউজ মি বইন আমারে যাইতে দাও আমি যাই আমি আর এইদিকে থাকলে কাশতে কাশতে মইরা যাবো।”,বলেই আহান দৌড়।

আলিযা সেইখানে দাড়িয়ে আনমনে বলে উঠে,”সব রেখে বইন কেনো বলো আহাইন্না!”

……

আবরাহার বাড়ি সকাল থেকেই হলুদ ও কমলা রঙের আর্টিফিশিয়াল ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে দুই ভাইয়ের একসাথে গায়ে হলুদ আজ।আহনাভ গার্ডেনে ঘুরে ঘুরে দেখছে কত দূর সাজানো হলো।আহির গার্ডেনের এক কর্নারে ছাতার নিচে বসে জুস খাচ্ছে।হঠাৎ আহির এর বাবা আহিরের পিছনে এসে চেঁচিয়ে বলে উঠে,”কী রে ব’জ্জা’ত এইখানে বসে জুস খাচ্ছিস?”

আহির লাফ দিয়ে উঠে দাড়ায়,বুকে থু থু দিয়ে তার বাবার দিকে ফিরে বলে,”তোমার ফাডা মাইক টা এইভাবে কানের সামনে এসে ফুল বলিউমে বাজানোর কোনো দরকার আছে?”

“তো কী করবো এইখানে বসে জুস খাচ্ছিস,গিয়ে আহনাভ বাবার সাথে কিছু কাজ ও করতে পারিস দেখ দেখ আমার আহনাভ বাবা লোক গুলোকে কী সুন্দর করে ফুল গুলো এগিয়ে দিচ্ছে।”

আহির চরম বিস্ময় নিয়ে বলে,”আরেহ বাপ আমি তো নিঃসন্দেহে বলতে পারবো তুমি আমার না ওর বাপ।আরেহ বাপ চোখ খোলো দেখো ওই ফুলের মালা টা পড়ে গিয়েছিল ও শুধু তুলে দিয়েছে এর আগে ও কোনো কাজ করেনি শুধু ঘুরে ঘুরে দেখছিল।”

“তাও তো ফুল টা উঠিয়ে দিয়েছে তুই তো তাও পারবি না।” ,বলেই হাঁটতে হাঁটতে চলে যায় আহিরের বাবা। আহির হা করে তাকিয়ে আছে তার বাবার যাওয়ার পানে।

.
গোধূলি লগ্ন চলছে,মুগ্ধতাদের বাড়িতে আহিরের বাড়ি থেকে হলুদ এলেই অনুষ্ঠান শুরু হবে।মুগ্ধতা একটি কালো বোরকা পড়ে বাড়ির পিছন দরজা দিয়ে খুব সাবধানে বেরিয়ে গিয়েছে।বেরিয়ে’ই গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে কাঙ্খিত জায়গাটির জন্য বেরিয়ে পড়ে মুগ্ধতা।

.
মুগ্ধতার গাড়ি এসে থামে আবরাহার বাড়ির পিছনের দিকে।মুগ্ধতা বোরকা খুলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এখন আশে পাশে তাকিয়ে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করছে।গাছের সাথে এলিয়ে একটি মই রাখা,তা দেখেই যেনো বলে উঠলো,” উফ আহনাভ ভাইয়া তাহলে এই তোমার সেই মই।”

মুগ্ধতা মই’টি নিয়ে এসে তা বেয়ে দুই তলার বরাবর ঘরটির বারান্দায় এসে নামলো।এগিয়ে গিয়ে বারান্দার থাই খুলে উকি ঝুঁকি মারলো অতঃপর ধীরে ধীরে রুমের ভিতরে ঢুকে গেলো।মুগ্ধতা রুমের ভিতর এসে দাড়াতেই পিছন থেকে খট করে ওয়াশ্রুমের দরজা খোলার শব্দ হয়।

মুগ্ধতা পিছনে ঘুরতেই দেখতে পায় আহির একটি সাদা পাজামা পরে তাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হচ্ছে চুল থেকে পানি গড়িয়ে গাল বেয়ে ব্যায়াম করে বানানো সেই সিক্স প্যাক এর উন্মুক্ত বুক ছুঁয়ে যাচ্ছে।মুগ্ধতা ‘আহ’ বলে সাথে সাথে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে ফেলে।

আহির মেয়েলি কন্ঠের আওয়াজ পেয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে মুগ্ধতা দাঁড়িয়ে আছে।হাতে থাকা তাওয়াল বিছানার দিকে ছুড়ে মেরে মুগ্ধতার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় আহির।মুগ্ধতার গাল ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,”মুগ্ধরানি তুমি এখানে?এই সময়?কিভাবে কি করে এলে?আমার তো গরের দরজা ভিতর থেকে আটকানো ছিল?”

মুগ্ধতা আহিরের মুখ পানে তাকায় আহিরের ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে মৃদু কেপে উঠে মুগ্ধতা।

মুগ্ধতা তোতলিয়ে বলে উঠে, “আমি আমি আমি আ…মি”

আহির মুগ্ধতার আরো কাছে এসে বলে,”মুগ্ধরানি কি আমি আমি আমি করছ?”

“না মানে এই মানে।”,বলতে বলতে মুগ্ধতা পিছিয়ে যেতে থাকে।আহির মুগ্ধতার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,”কেন মুগ্ধরানি তোমার হুলু বানরের বডি দেখে তোতলাচ্ছো না কি?

মুগ্ধতা পিছিয়ে যেতে যেতে এক পর্যায়ে একদম দেয়ালের সাথে লেগে যায়।আহির মুগ্ধতার একদম কাছে এসে দাঁড়ায় তাদের মাঝে বলতে এক ইঞ্চি দূরত্ব আছে এখন।মুগ্ধতা পাশ দিয়ে যেতে নেয় আহির হাত দিয়ে দুইদিক আটকে বলে,”বলো বলো বউ তোমার এই হাসবেন্ড কে হলুদের দিন দেখার তর সইছিল না তাই নিজেই এসে পরলে ?”

মুগ্ধতা অন্যদিকে ফিরে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,”এমন কিছুই নাহ আমি আপনাকে হলুদ লাগাতে এসেছি।আর আপনার বডি কিসের বডি হেহ।একটু দূরে সরে দাড়ান প্লিজ।”

আহির মুগ্ধতার কোমড় জরিয়ে ধরে বলে,”মুগ্ধরানি এভাবে তোতলালে না আমার ইচ্ছে করে তোমাকে থাক বাদ দেই হলুদ লাগাও না আমিও চাই আমার বউ আমাকে আগে হলুদ লাগাবে।কিন্তু আমার বউ তো এসেই এক্কেবারে শরমে তোতলিয়েই যাচ্ছে।”

“ভাই আগে কোমড় ছাড়েন একটু দূরে সরে দাড়ান তারপর হার্ট অ্যাটাক না করে বেচে থাকলে লাগাবো”

আহির মুচকি হেঁসে মুগ্ধতাকে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ায়।মুগ্ধতা যেন হাপ ছেড়ে বাঁচে।মুগ্ধতা তাড়াতাড়ি নিজের পকেট থেকে হলুদের প্যাকেট বের করে কিছুটা হাতে নিয়ে আহিরের গালে লাগিয়েই চলে যেতে নেয়।আহির মুগ্ধতার হাত ধরে হেঁচকা টানে নিজের কাছে এনে গালের সাথে মুগ্ধতার গাল ছুঁয়ে দিয়ে মুগ্ধতা কে ছেড়ে দেয়।

মুগ্ধতা রুমের দরজার দিকে যেতে নিলে পিছন থেকে আহির বলে উঠে,”বউ তুমি কি এই দরজা দিয়ে এসেছিলে?”

মুগ্ধতা ফিরে আহিরের দিকে তাকিয়ে বারান্দার দিকে দৌড় লাগায়।বারান্দায় গিয়ে মই দিয়ে নেমে দেয় দৌড়। আহির এগিয়ে যায়, বারান্দা থেকে মুগ্ধতার কান্ড দেখে হাসতে থাকে।
.
লায়ানা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে আয়নার সামনে দাড়াতেই ঘরের বাল্ব বন্ধ হয়ে যায়,মুহূর্তের মাঝে ঘরটি অন্ধকার হয়ে যায়।

#copyrightalert
#চলবে।

সবাইকে মুগ্ধতা, আহির 🤍 আহনাভ,লায়ানার বিয়ের দাওয়াত রইলো 🍁।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here