ডুবেছি_আমি_তোমাতে #Aiza_islam_Hayati #পর্ব_৩৬

0
225

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_৩৬
মুগ্ধতা হঠাৎ তার কোমড়ে ঠান্ডা হাতের স্পর্শে কেঁপে ওঠে।খাবার গুলো টেবিলে সাজিয়ে রাখছিলো, মুগ্ধতা হাতে থাকা বাটি টেবিলে রেখে চোখ বন্ধ করে বড় এক শ্বাস নিয়ে বলে,”ঘুম থেকে উঠেছেন কেনো যান আরো ঘুমান গিয়ে।আর ছাড়ুন আমাকে।”

আহির মুগ্ধতাকে পিছন থেকে আরো শক্ত করে আকড়ে ধরে বলে,”বউ রাগ করছো কেনো?তুমি এত সকালে উঠতে গেলে কেনো বলো তো,এভাবেই গত কালের জন্য ক্লান্ত তার উপর রাতের এত এত আদর”

“আর কিছু বলতে হবে না গিয়ে ঘুমান আপনি।”

আহির মুগ্ধতাকে ছেড়ে খাবারের সামনে গিয়ে বলে,”এখন তো মা রান্না করার কথা না।এইগুলো তুমি রান্না করেছো?তোমাকে এত্ত কিছু করতে কে বলেছে তাও একা একা?

“আমার মন চাইলো তাই রান্না করলাম।আপনার কি?”

আহির মুগ্ধতাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বলে,”আমারই তো সব।বউ আমার।বউয়ের হাত আমার,বউয়ের হাতের খাবারও আমার।আমি তো আগে খাবো তাইনা।”

“ছাড়ুন আমাকে আর এখন কেনো খাবেন?সবাই উঠবে তারপর একসাথে খাবো।”

দোতলা থেকে আহিরের বাবার কন্ঠ ভেসে আসতেই আহির মুগ্ধতাকে ছেড়ে দেয়।আহিরের বাবা অনামিকার পিছু আসতে আসতে করুন স্বরে বলে,”শুনো না ডার্লিং দেখো ওই বাড়ির মহিলা আমাকে চোখ মারে তাতে আমার দোষ কোথায়?”

অনামিকা অর্ধেক সিঁড়িতে এসে থেমে যায়, আহিরের বাবার দিকে ফিরে শাড়ির অচল কোমড়ে গুজে কটমট করে বলে,”ওই মহিলা তোমাকে চোখ মারবে কেনো?সব দোষ তোমার।আমার তো মন চাইছে তোমার মথার চুল গুলো ছিঁড়ে তোমাকে টাক বানিয়ে তোমার টাকে তবলা বাজাই।”

আহিরের বাবা শুকনো ঢোক গিলে অনামিকার পাশে এসে দাড়িয়ে বলে,”ডার্লিং বউ আমার ডিয়ার সোনা শুনো দেখো আমার কোনো দোষ নেই।”

অনামিকা পুনরায় একই কণ্ঠে বলে উঠে,”কথা বলবি না বুইড়া,আমার সামনে আরেকবার আসলে তোর মাথা আমি ফাটিয়ে দেবো।”

আহির মিটমিট করে হাসছে।মুগ্ধতা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আহিরের বাবা আর অনামিকার ঝগড়া দেখছে।অনামিকা শাড়ির আঁচল ঠিক করে নিচে নেমে আসে,মুগ্ধতা আহির’কে খাবার টেবিলের সামনে দেখে এগিয়ে যায়।টেবিলের সামনে এসে টেবিল সাজানো নাস্তা দেখে বিস্মিত কণ্ঠে বলে,” এত নাস্তা কে বানিয়েছে?”

মুগ্ধতা মিনমিনিয়ে বলে,”আমি।”

অনামিকা গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে,” আজ এমনিতেই তোমার বাবার উপর রেগে আছি মুগ্ধ মা,তার উপর তুমি সকাল সকাল রান্না বান্না করে আমাকে আরো রাগিয়ে দিলে।বলেছিলাম না অতি প্রয়োজন ছাড়া আমার মেয়েদের রান্না ঘরে প্রবেশ নিষেধ।”

আহিরের বাবা এগিয়ে এসে চেয়ার টেনে বসে বলে,”আরেহ ডার্লিং এত না রেগে আগে খেয়ে নাও। আহ খাবারের সুন্দর সুন্দর ঘ্রাণে পেটে ইদুর রেসলিং শুরু করেছে।”

মুগ্ধতা অনামিকার পিছনে গিয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,”মা আমি তো আপনার মেয়ে তাই না?আপুরা রান্না করেনি আপনার পছন্দ না তাই। কিন্তু আমার রান্না করতে বেশ ভালো লাগে তাই আমার যখন ইচ্ছে রান্না করে সবাই কে খাওয়াবো।আর আপনি এত্ত রেগে কেন আছেন মাফ করে দেন বাবা কে হয়তো ভুলবশত কোনো ভুল হয়েছে।রাগ করবেন না আমি আপনার জন্য ঠান্ডা ঠান্ডা জুস বানিয়ে আনি।”

আহির বিড়বিড় করে আড়াওল,”নিজেই যে তার এক মাত্র ভদ্র স্বামীর উপরে রেগে আছে আবার সে কিনা মা কে বলে বাবার উপরে রেগে থাকতে না।”

“ঠিক আছে কিন্তু এই বুইড়া কে মাফ করা ইম্পসিবল।”

মুগ্ধতা আহিরের বাবার পাশে দাড়িয়ে ঝুঁকে গিয়ে তার কানে কানে বলে,”বাবা মা সাংঘাতিক রেগে আছে রাগ ভাঙান কোনো ফুল-টুল মার পছন্দ?প্রয়োজন পড়লে বলুন এখনই এনে দিচ্ছি।আপনি ভাবুন আমি বরং ঠান্ডা ঠান্ডা জুস বানিয়ে আনি।”,বলেই জুস বানাতে চলে যায়।

জেরিন আর আহনাভের বাবার ঘর নিচ তলার কর্নারের দিকে হওয়ায় তারা এত্বক্ষণ সবই শুনতে পেয়েছে।জেরিন আর আহনাভের বাবার ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।জেরিন এগিয়ে এসে বলে,”আরেহ তুমি রেগে আছো কেনো?কী করেছে ভাই।”

অনামিকা আহিরের বাবার দিকে গরম চোখে তাকায় যেনো এখনই গিলে খেয়ে ফেলবে।আহিরের বাবা আহিরের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,”একটা বাঁদর ছেলে জন্ম দিয়েছে বাপ কেও নাচিয়ে ছাড়ে।”

আহনাভের বাবা চেয়ার টেনে বসে বলে,”জেরিন তুমি নিজেই ভেবে দেখো তো মাঝে মাঝে আমার মতো নিষ্পাপ স্বামীর উপর কেমন করে রেগে থাকো তুমি।”

জেরিন আড় চোখে তাকিয়ে আহনাভের বাবার পাশে গিয়ে বসে পড়ে।আহনাভের বাবার টি শার্ট টেনে ফিসফিস করে বলে উঠে,”ঝাড়ুর বাড়ি খেতে না চাইলে উল্টো পাল্টা বলবেন না একদম।”অতঃপর ঠিক হয়ে বসে বলে,”বলুন তো আহনাভের বাবা আপনাকে আমি কখনো কিছু বলতে পারি?আমি আপনাকে কত সম্মান করি।”

সাহিরাহ,আফ্রা,আলিযা এসে টেবিলে বসে বলে,”আমাদের মা আর বড় মা যে বাবাইদের কতো ভালোবাসে তা আমরাই ভালো করে জানি।”

জেরিন বলে উঠে,”দেখেছো।”

.
আহনাভ এক হাত লায়ানার কোমড়ে রেখে নিচে নামছে।লায়ানা আহনাভের হাত বার বার সরিয়ে দিয়ে বলে,”অসভ্য লোক নিচে সবাই আছে দেখবে।”

“আমার বউকে আমি ধরি অথবা হামি খাই তাতে কার বাপের কী?”

আহনাভের বাবা কেশে বলে উঠে,”তোর বাপের অনেক কিছু।”

আহনাভ ঘাড় কাত করে তাকায় তার বাবার দিকে অতঃপর লায়ানার হাত ধরে নিচে নেমে আসে।আহনাভ চেয়ার টেনে বসে বলে,”বাবা তুমি তো এই বয়সেও মায়ের এক হাত ধরে রেখে আরেক হাত দিয়ে খাবার খাও।”

“তুই আগের বেশরম আহনাভে ফিরে এসেছিস তাহলে।”

জেরিন আড় চোখে আহনাভের বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,”বাপ যেমন ছেলে তো তেমনি হবে তাইনা।”

আহনাভ হেঁসে বলে,”মা একদম ঠিক বলেছো।আমি তো বাবার কার্বন কপি।”

জেরিন লায়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,”মা ঘুম কেমন হলো?”

লায়ানা আহনাভের দিকে একবার তাকালো তাড়াতাড়ি দৃষ্টি সরিয়ে বলে,”ভালোই হয়েছে মা।”
বলেই লায়ানা রান্না ঘরের দিকে উকি ঝুঁকি মেরে মুগ্ধতাকে দেখতে পেয়ে রান্না ঘরে চলে যায়।লায়ানা মুগ্ধতার পাশে গিয়ে দাড়িয়ে দেখে মুগ্ধতা শরবত বানাচ্ছে।লায়ানা তার কাঁধ দিয়ে মুগ্ধতার কাঁধে মৃদু ধাক্কা দিয়ে হেঁসে বলে,”কী বনু জামাইর আদর পেয়ে তো আজ গ্লো করছো।উফ কি সাইন করছো তুমি!”

মুগ্ধতা লায়ানার হাতে থাপ্পড় দিয়ে বলে,”চুপ থাক নাহলে মা’র খাবি।ভাইয়া মনে হয় তোকে একদিনেই একটু বেশি আদর দিয়ে দিয়েছে।”

লায়ানা মুচকি হেঁসে শাড়ির আঁচলে গিট্টু দিতে দিতে বলে,”সত্যি বেশি আদর পেয়ে গেছি।”

মুগ্ধতা চোখ ছোট ছোট করে বলে,”যা গিয়ে টেবিলে বস আমি মায়ের জুসটা নিয়ে আসছি।”বলেই মুগ্ধতা রান্না ঘর থেকে আহিরের দিকে তাকালো, আহির আহনাভের এক পাশে বসে মুগ্ধতার দিকেই তাকিয়ে আছে।মুগ্ধতা বলে উঠে,”উনি এখনো ঘুমাতে যাচ্ছে না কেন?উনার ওই মরার ঘুম ঘুমাক গিয়ে টেবিলে বসেছে কেন?

লায়ানা আহিরের দিকে তাকাতেই দেখে আহির অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে।

মুগ্ধতা পুনরায় বলে,”মাত্র না উনাকে ঘুমাতে যেতে বললাম।উনার ঘুমাতে ইচ্ছে করছে তো যাক না গিয়ে ঘুমাক।”

“এই শুন কী হয়েছে তোদের মধ্যে?জিজু মুখ টাকে এমন ছোট ইদুরের মত করে রেখেছে কেনো?”

মুগ্ধতা কিছু বললো না।

.
আহনাভ আহিরের অসহায়ের মত মুখ দেখে রান্না ঘরের দিকে একবার তাকিয়ে মুগ্ধতাকে দেখে মৃদু কন্ঠে বলে উঠে,”কিরে আপ্পি রেগে আছে কেন তোর উপর?বিয়ের পরের দিনই রাগালি কেন আপ্পি কে?

“আরেহ কালকে রাতে ঘুমাতে দেরি হয়েছিল।”

“হুম এটা স্বাভাবিক পরে?বউকে আদর করতে করতে এমনিতেই দেরী হবে।”

“আরেহ ভাই বলতে দে।মুগ্ধ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে গিয়েছিল পরে সকালে আমাকে ডেকে বলছিল উঠতে।একা একা কি করবে সে তাই।আমি উঠিনি এজন্য ম্যাডাম রেগে আছে।”

“ওহ এই ব্যাপার তাহলে একটা আইডিয়া দেই করবি?”

“বল আমার বউয়ের রাগ ভাঙাতে করতে পারি।”

“তুই আপ্পি কে নিয়ে রুমে যাবি।তারপর আগে ওয়াশ্রুমের দরজা খুলবি পরে আপ্পি কে কোলে তুলে ওয়াশরুমে নিয়ে এক্কেবারে বাথটাবে ফেলে দিবি।আপ্পির মাথা ঠান্ডা হয়ে যাবে আপ্পির রাগও ভেঙে যাবে।”

আহির আহনাভের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলে,”ভাই তুই আমার বউয়ের রাগ ভাঙার আইডিয়া দিচ্ছিস নাকি কোমড় ভাঙার?”

“কী আর বলবো এত ঘুমাতে গিয়েছিলি কেনো?আর আমি তো আমার বউয়ের ঘুমন্ত মুখ দেখবো বলে তার আগে ঘুম থেকে উঠতে চেয়েছিলাম ঠিক তার আগেই ঘুম ভেঙ্গেছে আমার।”

.
লায়ানা মুগ্ধতাকে ধাক্কা দিয়ে বলে,”এই বল না আর এই কীসের ঘুম কোন ঘুম ভাই?কী বলছিস মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে সব।”

মুগ্ধতার জুস বানানো শেষ হাত থেকে চামচ রেখে বলে,”বাদ দে চল নাস্তা খেতে যাই।”,বলেই রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো মুগ্ধতা।লায়ানা আর দাড়ালো না রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
.
মুগ্ধতা আর লায়ানা খাবার এগিয়ে দিতে চাইলে জেরিন উঠে দাড়িয়ে দুজনের হাত থেকে খাবারের বাটি নিয়ে বলে উঠে,” আমাদের খাবার এগিয়ে দিতে হবে না তোমরা দুজন বসো খেতে।”

লায়ানা আহনাভের পাশে গিয়ে বসে পড়ে আর মুগ্ধতা আহিরের পাশে,কিন্তু আহিরের দিকে একবার তাকিয়েও দেখে না।

.
সবাই খাবার শেষ করে উঠে দাড়ালে আহনাভের বাবা বলে উঠে,” আহনাভ আজ তোমাদের চারজনের রিসেপশন এর অনুষ্ঠান আমাদের গার্ডেনে হবে দেখো গিয়ে গার্ডেন কত দূর সাজানো হলো।”

আহনাভ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বাড়ির সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে গার্ডেনে চলে যায়।লায়ানা নিজের ঘরে চলে যায়।মুগ্ধতা কাজ করতে চাইলেও অনামিকা করতে দেয় না ঘরে পাঠিয়ে দেয় তাকে। আহির মুগ্ধতাকে ঘরে যেতে দেখে নিজেও ঘরে চলে যায় মুগ্ধতার পিছু পিছু।মুগ্ধতা ঘরে প্রবেশ করতেই আহির ঘরের ভিতর এসে দরজা আটকে দেয়।মুগ্ধতা ফিরে তাকায়।

আহির কানে ধরে মুগ্ধতার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,”মুগ্ধ রানি প্লিজ সরি।আমি কখনো এমন করবো না।তুমি এমন করলে আমার কষ্ট হয়।”

মুগ্ধতা বলে,”আমি রাগ করিনি আপনার ঘুমাতে ইচ্ছে করেছে আপনি ঘুমিয়েছেন।আগামি থেকে এভাবে আপনাকে ডিস্টার্ব করব না ঘুমালে আপনার মন মতো ঘুমাবেন।”

আহির আরো এগিয়ে এসে ঠোঁট উল্টে বলে,”এমন করে বলছো কেনো মুগ্ধ রানি।আম সরি বলছি তো সরি।”

“সরি বলার দরকার নেই আমি আর রাগ করে নেই।আমি বুঝেছি তো।”

আহির কান ছেরে দিয়ে মুগ্ধতার কাছে এসে মুগ্ধতাকে এক হাতে আকড়ে ধরে বলে,”সত্যি রাগ কমেছে?”

“না রাগ করে নেই ছাড়ুন।ভালো লাগছে না।”

“আমি তো ছাড়ছি না।”বলেই আহির মুগ্ধতার অধরে অধর ছুঁয়ে দেয় কিয়ৎকাল পর ছেরে দিয়ে বলে,”এখনও রেগে আছো মুগ্ধ রানি।”

মুগ্ধতা বলে উঠে,”ভাই ছাড়বেন? নাকি আমি নিজে ছাড়াব?

আহির মুগ্ধতাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”এমন করো না মুগ্ধ রানি এই আহিরের খুব কষ্ট হয়।রেগে থেকো না বউ।প্লিজ বউ প্লিজ রাগ করে থেকো না”

মুগ্ধতা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়লো। আহির বাচ্চাদের মত ‘প্লিজ প্লিজ ‘ বলেই যাচ্ছে।মুগ্ধতা নরম কণ্ঠে বলে উঠে,” ছাড়ুন আমি রাগ করে নেই।”

.
লায়ানা লাগেজ থেকে জামা কাপড় বের করে আলমারি’তে রাখছিলো তখনই ফোন বেজে উঠে।বিছানার কাছে এগিয়ে গিয়ে ফোন তুলে রিসিভ করতেই ঐপাশ থেকে আহান বলে উঠে,”বোন একটা বিগ নিউজ আছে।”

“কী নিউজ।”

“আসল লিডার এর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।”

লায়ানা বলে উঠে,”কে ওই মানুষ রুপি জা’নো’য়া’র?”

“কানাডার,বাবেল ইন্ডাস্ট্রির মালিক অভ্রো।বাবেল ইন্ডাস্ট্রির ল্যাবে ড্রা’গ’স দিয়ে এমন এক ঔষধ বানানো হচ্ছে যার ফলে ল্যাবে থাকা অনেকের মৃত্যু হয়েছে।আর ওদের বাবেল থেকেই ড্রাগস পাচার করা হচ্ছে।এইসব কিছু ওরা টাকা দিয়ে ধামা চাপা দিয়ে রাখছে।”

লায়ানা চুপ থেকে বলল,”আহান এই এক সপ্তাহর মধ্যে কানাডা যাওয়ার জন্য সব কিছু প্রস্তুত কর।আমি বনু কে বলে সব ম্যানেজ করছি।”

.
আবরাহার বাড়ির গার্ডেন গেস্ট দিয়ে ভরে উঠেছে।আশপাশ মরিচ বাতির আলোয় আলোকিত।মুগ্ধতা,আহির,আহনাভ,লায়ানা চারজনকে স্টেজে বসিয়ে রাখা হয়েছে।

আহিরের পরনে নীল রঙের সুট বুট আর মুগ্ধতার পরনে টুকটুকে লাল রঙের লেহেঙ্গা।আহির ফিসফিসিয়ে বলে,”আমার লাল টুকটুকে রঙে রাঙা বউ।”মুগ্ধতা মুচকি হাসে।

আহনাভের বাবার বন্ধু চারজনের কাছে এগিয়ে এসে বলে,”কনগ্রেচুলেশন আহির আর আহনাভ।”

দুজনে এক সাথে বলে উঠে,”থ্যাংক ইউ আঙ্কেল।”
লোকটির পাশে দাড়িয়ে থাকা মহিলা এগিয়ে মুগ্ধতার হাতে গিফ্ট ধরিয়ে দিয়ে বলে,”আমাদের আহিরের বউ খুব মিষ্টি।”

মুগ্ধতা মুচকি হাসে।মহিলা লায়ানার কাছে গিয়ে লায়ানার হাতে গিফ্ট ধরিয়ে দিয়ে বলে,”দুজনকে কিন্তু খুব মানিয়েছে।তবে আজ একই রঙের জামা পরে দুজনকে পুরোই লাফ বার্ড লাগছে।”

আহনাভ হেঁসে বলে ,”থ্যাংক ইউ আন্টি।”

(লায়ানার পরনে মরুন রঙের লেহেঙ্গা আর আহনাভের পরনে মেরুন রঙের সুট বুট।)

.
মুগ্ধতা এত ভিড়ের মাঝে কিছু পরিচিত মুখ দেখেই তার ঠোঁটের কোণে হাঁসির রেখা ফুটে উঠে।মুগ্ধতার পুরো পরিবার স্টেজের দিকেই এগিয়ে আসছে।মুগ্ধতা লায়ানা দাড়িয়ে যায় ইয়াশা স্টেজে উঠতেই দুজন গিয়ে জড়িয়ে ধরে।ইয়াশা বলে উঠে,”কেমন আছে আমার মেয়ে দুটো?”

দুজন একসাথে বলে,”আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

একে একে পরিবারের সবাই এগিয়ে এসে মুগ্ধতা,লায়ানার সাথে কথা বলে।আহান লায়ানা,মুগ্ধতার কাছে এসে কিছুক্ষন গল্প করলো অতঃপর স্টেজ থেকে নেমে পাশে গিয়ে দাড়াতেই আলিযা পাশে এসে দাড়িয়ে বলে,”কেমন আছো?”

আহান শুকনো ঢোক গিলে বিড়বিড় করে বলে,”এতক্ষন ভালোই ছিলাম এখন তো কচু গাছের সাথে ঝুলে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে।”

“কিছু বললে?”

“নাহ আমি তো কিছু বলতেই পারি না।তুমি কিছু বলবে আলিযা?”

আলিযা মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বলে,”আহান আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।”

“কী বলবে বলো।”

“আহান আসলে আমি তোমাকে পছন্দ করি।”

আহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”হম বুঝলাম।কিন্তু আলিযা তোমার সাথে আমার কিছু হওয়া আদও সম্ভব না।”

আলিযা মাথা তুলে অকপটে বলে উঠে,”কেনো সম্ভব নয়।”

“তুমি বুঝবে না।আমার জীবনের সাথে তোমাকে জড়ানো যাবে না আলিযা।তোমার ভালোর জন্য বলছি।তুমি আমাকে নিয়ে যাই ভেবে থাকো না কেনো ভুলে যাও।”

“কখনোই সম্ভব না ভুলে যাওয়া।কেনো আমাকে তোমার জীবনের সাথে জড়ানো যাবে না আহান?”

আহান মনে মনে আওড়ালো,”কী করে বুঝাই আমার বোন মা’ফি’য়া তার সঙ্গ সবসময় আমি দেই আমার উপর কত শত্রুর নজর তোমাকে আমার জীবনের সাথে জড়ালে ওরা তোমাকে বাঁ’চ’তে দি’বে না।”

“কী হলো বলো আহান।”

আহান কিছুই বললো না উল্টো দিকে ফিরে হাঁটা ধরলো।

.
অনামিকার পাশেই আহিরের বাবা দাড়িয়ে আছে।আহিরের বাবা অনামিকার শাড়ির আঁচলে গিট্টু দিয়ে আবার সেই গিট্টু গুলো খুলতে খুলতে বলে,”শুনছো ডার্লিং তুমি কি এইভাবেই রাগ করে থাকবে?”

অনামিকা আহিরের বাবার দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে,”আহিরের বাবা আমি ভাবছি কী জানেন একদিন উইসকি ট্রাই করে দেখবো।”

“আস্তাগফিরুল্লাহ বউ এইসব কী বলছো?স্বাভাবিক থেকেই একশো ঝাড়ুর বাড়ি পিঠে পড়ে তুমি উইস্কি খেলে আমার পিঠের চামড়াই আর থাকবে না।”

“তাহলে খাওয়াই লাগে।”

“নাহ নাহ প্লিজ খেও না।”

তাদের কান্ড দেখে পাশে বসে থাকা জেরিন আর আহনাভের বাবা ঠোঁট টিপে হেঁসে যাচ্ছে।জেরিন আহনাভের বাবাকে বলে উঠে,”এই শুনুন না আমিও একবার ট্রাই করে দেখি।”

“ছি ছি আস্তাগফিরল্লাহ নাউজুবিল্লাহ লা হাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লাহ বিল্লাহ এইসব খায় না বউ।”

“আহ আমার নিষ্পাপ’রে আপনি খাননি জীবনে?বিজনেস পার্টনারদের সাথে রাতে মিটিং করে খেতেন না।”

“আমি আর তুমি কি এক বলো।”

“কেনো এক না।”

আহনাভের বাবা স্টেজের দিকে তাকিয়ে বলে,”আরেহ দেখো মুগ্ধতার পরিবার এসে পড়েছে আর আমাদের চোখেই পড়লো না চলো চলো।”

আহনাভের বাবা জেরিন,অনামিকা আহিরের বাবাকে নিয়ে স্টেজের দিকে চলে গেলো।স্টেজে উঠেই দুই পরিবার তাদের কুশল বিনিময়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।দুই পরিবারের কথার মাঝে ইতি টেনে জেরিন বলে উঠে,”আপনারা আসুন পিছনের দিকে টেবিলে গিয়ে বসি সবাই।তারপর নাহয় আমরা গল্প করি।”

লায়ানা,মুগ্ধতা,আহনাভ আহির বাদে সকলে স্টেজ থেকে নেমে বসার জায়গায় চলে যায়।

.
অনেক্ষন হলো এইভাবেই স্টেজে বসে আছে লায়ানা,মুগ্ধতা।একই ভাবে বসে থেকে হাত পা ধরে আসছে।আহনাভ আহির তাদের পরিচিত মানুষ আসতেই উঠে দাড়িয়ে কথা বলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে বার বার।লায়ানা আশপাশে চোখ বুলিয়ে আহনাভের মুখ পানে তাকাতেই ভ্রু কুঁচকে ফেলে।মনে মনে বলে উঠে,”আহনাভের কপালে এই লাল লাইটের আলো কেনো?এইটা কীসের আলো।”মুহূর্তের মাঝেই কিছু বুঝতে পেরে লায়ানা আতকে উঠে।

#copyrightalert
#চলবে।

কোনো প্রকার ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে আশা করি ক্ষমার সুন্দর দৃষ্টান্তে দেখবেন।🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here