এলোমেলো_হাওয়া #পর্ব_১০ লেখনীতে- #অলিন্দ্রিয়া_রুহি

0
302

#এলোমেলো_হাওয়া
#পর্ব_১০
লেখনীতে- #অলিন্দ্রিয়া_রুহি

তারা বেগম ও তার মেয়ে মিলে ক্ষেতে গিয়েছে কিছু কাজ করতে। এখন বিকেল বেলা। তারা বেগমের বাড়িটার পাশেই বড় নদী,যা এখন শুকিয়ে আছে। নদীর পরেই ক্ষেতের সমাহার। সেখানে তারা বেগমেরও প্রায় আঠারো শতাংশ ক্ষেত রয়েছে। দুপুরে খেয়েদেয়ে আদ্র একটু ঘুমিয়ে নিলো,এই ফাঁকে তীহা তারা বেগমদের সঙ্গে করে ক্ষেত ঘুরতে চলে গেল। আদ্র ঘুম থেকে ওঠার পর তীহাকে আশেপাশে কোথাও খুঁজে না পেয়ে জড়ানো চোখে উঠোনে বেরিয়ে এলো। উঠোন থেকেই ক্ষেত দেখা যায়। নজর বুলিয়ে দূরে তীহাকে হাসিতে মত্ত থাকতে দেখল সে। তার ফুপাতো বোন আমেনার সাথে হাসিতে লিপ্ত তীহা। আদ্র চিন্তামুক্ত হলো। পুনরায় এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল। রাজ্যের অলসতা তাকে ঘিরে ধরেছে যেন আজ।

____

“এগুলা কী শাক?”

আমেনার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছোঁড়ে তীহা। তার আঙুলের ইশারা অনুসরণ করে তাকাল আমেনা। উত্তর দিলো,

“কলমি শাক। চেনেন না ভাবী?”

“চিনি তবে নামটা জানতাম না। এগুলা অনেক খেয়েছি।আম্মু শুকনো মরিচ দিয়ে এত সুন্দর করে ভাজতো! ইশ,মনে পড়তেই জিভে জল এসে যাচ্ছে।”

“খাবেন ভাবী? আম্মাকে বলি তাইলে তুলতে।”

“না থাক, শুধুশুধু ফুপুকে ঝামেলায় ফেলো না আমেনা।”

আমেনা শুনলো না। তারা বেগমকে গিয়ে কথাটি বলতেই তিনি আদেশ করলেন কতগুলো শাক ক্ষেত থেকে তুলে নিয়ে যেতে। তীহাও হাত লাগালো আমেনার সঙ্গে। আমেনা গপাগপ শাক তুলছে,ওদিকে তীহার হাত লাগাতেও কেমন যেন লাগছে কাদামাটির কারণে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আমেনা সহাস্যে বলল,

“ভাবী,আপনার তুলতে হবে না। আমিই পারব। আপনি বাড়ি যান। হাতমুখ ধুয়ে বসেন গিয়ে। বাড়ি একদম খালি।”

“তোমার ভাইয়া আছেন তো।”

“ভাইয়া তো ঘুমে। ঘুমের মানুষ আর মরা মানুষ সমান কথা। আপনি যান। গিয়ে টিভি দেখেন।”

তীহা মৃদুস্বরে “আচ্ছা” বলে একলাই আইল ধরে চলে এলো নদীর কাছে। নদীর একপাশ পুরোপুরি শুকিয়ে শুধু কাদামাটি স্তুপ জমেছে। উপর থেকে দেখতে নরম লাগলেও সূর্যের প্রতিনিয়ত তাপে সেগুলো শক্ত মাটিতে পরিণত হয়েছে। তীহা নদী পেরিয়ে উঠোনে এসে উঠল। চাপকল চেপে হাত-মা, মুখ ভালো মতো ধুয়ে ঘরে ঢুকল। আদ্র ঘুমোয়নি, তীহার উপস্তিতি বুঝতে পেরেও চোখ মেলে তাকাল না। সে যেন গভীর ঘুমে,এরকম একটা ভাব ধরে পড়ে রইলো। তীহা বুক থেকে ওড়না সরিয়ে একপাশে রাখল। জামার বুকের কাছটায় অনেকখানি ভিজে গেছে। তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে জামাটা মোছার বৃথা চেষ্টা শেষে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। জামা-ই পাল্টে ফেলতে হবে, নইলে উপায় নেই। মুখ মুছে নিয়ে আয়নার ভেতর তাকাতেই ভূত দেখার ন্যায় চমকে উঠল সে। আদ্র কখন যে উঠে বসেছে আর তার দিকেই তাকিয়ে আছে,তা ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি তীহা। মাথায় এলো,তার গায়ে তো ওড়না জড়ানো নেই। সঙ্গে সঙ্গে চোখমুখ খিঁচে ফেলল সে। দু’হাতে নিজের বুককে আড়াল করে নিলো। খানিকটা নিচু হয়ে আয়নার সামনে থেকে সরে দাঁড়াল। তোয়ালে দিয়ে নিজেকে পেঁচিয়ে আদ্র’র মুখোমুখি হয়ে তাকাল। খেঁকিয়ে উঠল তীহা,

“ছিঃ! আপনি এত খারাপ! দেখছেন আমি পরিপাটি নই,তবুও এভাবে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমার বেখেয়ালি পনার সুযোগ নিয়েছেন আপনি।”

আদ্র ইনোসেন্ট গলায় শুধালো,

“কী আজব! নিজের বউকে দেখতে হলে পরিপাটি ভাবে দেখতে হবে কেন সবসময়? তুমি অপরিপাটি থাকো,আর অগোছালো থাকো- সেভাবেই আমার কাছে সুন্দর হওয়া উচিত।”

“একদম গলানো কথাবার্তা বলে মন নরম করার চেষ্টা করবেন না। আপনাকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। আর আপনি যখন জেগেই তখন আগে থেকে কেন সাড়া দিলেন না আমাকে?”

“এমনিই। সাড়া দিলে এত সুন্দর তোমাকে দেখতে পারতাম না তো।”

তীহা দমে গেল। অগ্নি চোখে কয়েক সেকেন্ড অপলক তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। বিছানার উপর থেকে ওড়না টা ছোঁ মেরে নিজের শরীরে মেশালো। মাথা এদিক ওদিক দুলিয়ে স্বগতোক্তি করতে লাগল,

“সুযোগ নিচ্ছেন আমার তো। ওকে, ফাইন! নিন সুযোগ। কিচ্ছুটি বলব না। আমি তো বউ… বিয়ে করা রক্ষিতা আর কী। বৈধ সার্টিফিকেট পেয়েই গেছেন যেহেতু,তখন ছুঁতে দোষ কোথায়। নিন, আসুন, ঝাপিয়ে পড়তে চাইলে তাও পারবেন। আমি কিচ্ছুটি বলব না,সত্যি বলছি- কিচ্ছুটি বলব না।”

তীহার গলার স্বর ভেজা, অন্যসময় আদ্র সাফাই গাওয়ার চেষ্টা চালাতো অথবা তীহাকে আশ্বস্ত করতো। এবার তা করল না বরং আদ্র’র হুট করেই ভীষণ রাগ চাপলো মাথায়। গলায় কাঠিন্য যোগ করে সে বলল,

“তোমাকে কবে ছুঁয়েছি তীহা? সবসময় এভাবে খোঁটা মেরে কথা না বললে হয় না? তোমার কী মনে হয়,আমি মরে যাচ্ছি এসবের জন্য? আই ক্যান কন্ট্রোল মাই ইমোশন এন্ড ফিলিংস তীহা। নইলে তোমার উপর বহুত আগেই স্বামীর অধিকার খাটাতে পারতাম।”

তীহাও গলা বাড়িয়ে বলল,

“তো খাটাচ্ছেন না কেন? করুণা করছেন? আমি কারো করুণার পাত্রী নই। বিয়ের পর শুধু আমি কেন, আমার সবকিছুই তো আপনার হয়ে গেছে। নিন,যা খুশি করুন। আমি কিচ্ছু বলব না,কিচ্ছু না!”

আচমকা তীহা শরীর থেকে ওড়না খুলে দূরে ছুঁড়ে মারলো। জামার পেছনে লম্বা চেইনটা ধীরে ধীরে নামিয়ে নিতে লাগলে আদ্র দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে আসে। তীহার হাত চেপে ধরে জামার চেইন তুলে দিয়ে অবিশ্বাস্য চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। তীহা তেজী গলায় পুনরায় কিছু একটা বলতে গেলে তাকে হালকা ধাক্কায় বিছানায় ফেলে দেয় আদ্র। চিৎ হয়ে শুয়ে পড়া তীহার উপর নিজের শরীর ঝুঁকিয়ে কী যেন খুঁজে বেড়াতে লাগল সে। ওদিকে আগাম কোনোকিছু ঘটার আশংকায় নিজের চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো তীহা। তার শ্বাস ক্রমশ ঘন হয়ে উঠেছে। পাজরে পাজরে কাঁপন, শরীরের ভেতর শিরশির করছে। এই বুঝি খাবলে ধরল আদ্র তাকে! কিন্তু না,একসময় শোনা গেল একটা রক্ত হিম করা কণ্ঠস্বর।

“আমি এই তীহাকে সত্যিই চিনি না।”

তীহা চোখ মেলে তাকাল সঙ্গে সঙ্গে। দেখল,আদ্র সরে গেছে। রুমের এক কিনারায় দাঁড়িয়ে তখনো অদ্ভুত চোখজোড়া মেলে তাকে দেখছে। তীহা দ্রুত উঠে ওড়না কুড়িয়ে নিলো। গায়ে জড়াতে জড়াতে আদ্র বেরিয়ে গেল। যাওয়ার সময় ঘরের দরজায় ভীষণ জোরে লাথি মারলো। দরজার শব্দে তীহার ভেতরটাও কেঁপে উঠল।

____

মালোতির বুকের মধ্যিখানে মুখ গোঁজ করে শুয়ে আছে অনিন্য। এলোমেলো বিছানা জানান দিচ্ছে একটু আগে ওঠা আদিম ঝড়ের কথা। দুটো প্রাণ একত্রে শ্বাস নিচ্ছে। মালোতির সরু আঙুল গুলো অনিন্যর চুল টানছে ধীরে গতিতে। লাস্যময়ী দেখাচ্ছে দৃশ্যটাকে।
আচমকা মালোতি বলে উঠল,

“আমাকে কবে বিয়ে করবে অনিন্য?”

অনিন্য সে কথার জবাব না দিয়ে মালোতির বুক থেকে মুখ তুলে নিলো। ড্যাবড্যাবে চোখজোড়া এদিক ওদিক ঘুরিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। গায়ের চাদরটা আরেকটু টেনে নিয়ে ঘুমের দেশে যাত্রা করার প্রস্তুতি নিতে লাগল যখন, মালোতি পুনরায় প্রশ্ন করে বসল ঠিক তখনই,

“জবাব দাও অনিন্য।”

এইবার অনিন্য কথা বলল। ভীষণ খাপছাড়া কণ্ঠস্বর,

“তুমিও ভালো করেই জানো,এই কথার কোনো জবাব নেই।”

“তাহলে আমাদের এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী?”

ক্ষণকালের স্তব্ধতা, তারপর শোনা গেল অনিন্যর দায়সারা জবাব,

“জানি না।”

মালোতি অধৈর্য্য হয়ে উঠল।

“অনি! আমি তো সংসারই করতেছি রীতিমতো তোমার সাথে। তাহলে আমাকে বউয়ের স্বীকৃতি দিতে দোষ কোথায়?”

তারপর গলার স্বরটা নরম করে অনেকটা আকুতির স্বরে মালোতি শুধালো,

“প্লিজ চলো না,আমরা বিয়ে করে ফেলি! প্লিজ অনি, প্লিজ! তোমার জীবনটা একদম ঠিক হয়ে যাবে অনি। আমি সত্যি বলছি,তোমাকে ভীষণ ভালোবাসবো। এত ভালোবাসবো যে, তুমি সব ভুলে যাবে,সব- এমনকি ওই…ওই মেয়েটিকেও।”

শেষ কথাটুকু মাটিতে পড়ার আগেই অনিন্য ক্ষেপা বাঘের ন্যায় মালোতির উপর ঝাপিয়ে পড়ল। একহাতে তার দু’গাল চেপে ধরে কঠোর স্বরে শাসালো,

“এই কথা নেক্সট টাইম ভুলেও উচ্চারণ করতে যেন না শুনি। শুনলে লাত্থি মেরে বের করে দেব এই বাসা থেকে। খুব বিয়ের শখ তোর, না? কী করতিস আগে? একেক সময় একেকজনকে দেহ দিয়ে বেড়াতি। সেখান থেকে তুলে এনে তিনবেলা রাজ খাবার খাওয়াচ্ছি, মাথার উপর ছাদ দিয়েছি- এসব কিছু কী কম নয়? জীবনের ভয় থাকলে বিয়ের নাম ভুলে যা। তোর মতো রক্ষিতাকে যে বিছানার সঙ্গী করেছি,তাতেই খুশি থাক। বেশি লোভ করিস না। মনে রাখিস,অতি লোভে মৃত্যু কিন্তু!”

শেষ বাক্যটুকু বলার সময় অনিন্যর চোখ চকচক করে উঠল। কথার মাঝে রহস্য রেখেই উঠে পড়ল সে। বিছানার চাদর টেনে পুরো গায়ে জড়িয়ে ধীর পায়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। রেখে এলো মালোতির কান্নারত মুখখানি!

(চলবে)
[গল্পটা দিন দিন নিজেই জটিল করে তুলছি। এর শেষ কোথায় কীভাবে করব,নিজেও জানি না। যাইহোক, গল্পের ইন্টারেস্ট কী কমছে দিন দিন? জানাবেন প্লিজ!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here