প্রেমিকের ফোন গ্যালারিতে অপর মেয়ের সাথে ভীষণ অন্তরঙ্গ ছবি দেখার পর একজন প্রেমিকার কী অনুভূতি হয়,তীহা জানে না। সে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো ফোনের স্ক্রিনের উপরে। যেখানে উদোম গায়ের অনিন্যকে দেখা যাচ্ছে আরেকটি মেয়েকে জড়িয়ে ধরে হাস্যজ্বল মুখে ছবি তুলতে।
তীহা,বাইশ বছরের এই যুবতী আড়াই বছর ধরে যাকে ভালোবেসে এসেছে মনপ্রাণ দিয়ে, সে যে মানুষ রূপের আড়ালে অমানুষ,তা ঘুণাক্ষরেও কল্পনায় আসেনি কোনোদিন! অনিন্য, শহরের নামীদামী বিজনেসম্যানদের মধ্যে একজন, তার আসল রূপ এই অবশেষে? তবে কী লোকে ঠিকই বলে। যাদের টাকাপয়সা আছে,তারা ভালোবাসা বোঝে না,চেনে না! তীহার দমবন্ধ হয়ে এলো। অস্পষ্ট চোখজোড়া তুলতেই অনিন্যর চেহারাটা চোখে ধরা দিলো। অনিন্য আগুন চোখে তাকিয়ে রয়েছে। সে ফোন দিয়ে গিয়েছিল গান শোনার জন্য, তার ব্যক্তিগত গ্যালারি ঘাটবার জন্যে নয়! কোন সাহসে তীহা তার গ্যালারিতে ঢোকে! প্রেম করেছে বলে কী এই মেয়ে মাথা কিনে নিয়েছে তার! রাগে শিরশির করে ওঠে অনিন্যর হাত-পা। সে ছোঁ মেরে ফোন কেড়ে নেয় তীহার হাত থেকে। ঠিক তখনই ভীষণ দুর্বল কণ্ঠে তীহা প্রশ্ন করে,
“কেন করলে এমনটা?”
অনিন্য ফোন পকেটে ঢুকিয়ে হম্বিতম্বি শুরু করল। কর্কশ কণ্ঠে বলল,
“তোমাকে আমি গ্যালারি ঘাটার জন্য ফোন দিয়ে গেছিলাম?”
“আমার প্রশ্নের জবাব দাও অনিন্য,কেন করলে এরকম?”
“কী? কী করছি?”
“ওই মেয়েটা…”
কথার মাঝখানে আচমকা আক্রমণ করে বসে তীহা। অনিন্য’র শার্টের কলার খামচে ধরে দু’হাতে৷ চোখের পানি ছেড়ে দেয় সঙ্গে সঙ্গে। প্রশ্ন ছোঁড়ে বিক্ষিপ্ত গলায়,
“ওই মেয়েটার সঙ্গে তুমি…”
“শুয়েছি। সমস্যা? কেন,তুমি তো শুতে দাও না। আমি একজন পুরুষ। আমার কী শারীরিক চাহিদা নেই,নাকী? তাই আমি শুয়েছি। তুমি শুতে দিলে অন্য মেয়ের কাছে যেতাম না।”
দায়সারাভাবে কথাখানা বলতেই তীহার হাত পড়ে অনিন্য’র গালে। অনিন্য স্তম্ভিত, হতবাক,তীহা তাকে মারলো! এই পুচকি একটা মেয়ে! রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখা কোনো কালেই অনিন্য’র আয়ত্তে ছিল না। এবারও রইলো না। আক্রোশ পূর্ণ হাতে তীহার দুই গাল একত্রে চেপে ধরল সে। তীহার দিকে ঝুঁকে,শক্ত চোয়ালে প্রশ্ন তুললো,
“তুই আমাকে মারলি! আমাকে! আমি কে জানিস? তোর মতো ফকিন্নির সঙ্গে আমি যে সম্পর্ক করেছি এতদিন,তা তো সাত-কপালের ভাগ্য। কী মনে করিস,প্রেম করেছি বলে একেবারে তোকেই বিয়ে করব আমি? তোর চাইতেও সুন্দর মেয়েরা আমার পায়ের কাছে পড়ে থাকে। হামাগুড়ি খায় আমার বিছানা গরম করার জন্য।”
তীহা হাউমাউ করে কাঁদছে। তার যেন এসব বিশ্বাসই হচ্ছে না। অনিন্য,যাকে সে মন উজাড় করে ভালোবেসেছে,সে কী করে পারল এমনটা করতে! টাকাপয়সা মানুষের বিবেক আর মনুষ্যত্বকে এভাবে নষ্ট করে দেয়? তীহার কান্না দেখে অনিন্য সরে দাঁড়াল। এক হাতে কপালের রগ ঘষে মেজাজ ঠান্ডা করার চেষ্টা করল। তারপর নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল,
“আজকের পর থেকে এখানেই সব শেষ। তোর সাথে প্রেম প্রেম খেলা,ভালোবাসা- সবকিছুই শেষ। আমি যে দেড়টা বছর এক নদীতে গা ভাসিয়েছি,তাই তো অবাকের বিষয়! একবার,শুধু একবার যদি নিজেকে সপে দিতি,তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না তোকে। আমি আবার জোরজবরদস্তি পছন্দ করি না। যাইহোক, এরপর থেকে তুই তোর পথে,আর আমি আমার পথে…”
তীহা বলার চেষ্টা করল,
“এসব সব মিথ্যা তাই না? তুমি আমার সাথে মজা করছো তাই না অনিন্য? তুমি এমনটা করতে পারো না! তুমি…তুমি আমাকে এভাবে ঠকাতে পারো না। আমি তোমাকে সত্যি ভালোবেসেছিলাম।”
“নাটক! এসব নাটক আমাকে দেখিয়ে লাভ নেই তীহা। লিসেন, আমি লিভ ইন টুগেদার পছন্দ করি, মোর দ্যান ম্যারেজ লাইফ। আজ হোক বা কাল,আমাদের ব্রেকাপ হবারই ছিল। তুমি সবসময় বিয়ে করে সুখী হতে চাও আর আমি আজ এই ফুল তো কাল ওই ফুলে মধু আহরণ করে সুখী হতে চাই। আমি কী বোঝাতে পারছি তোমাকে ব্যাপারটা?”
“না, পারছো না। আমি কিছু বুঝতে চাই না। আমি শুধু তোমাকে চাই.. শুধু তোমাকে। তুমি এমনটা করতেই পারো না। এভাবে এতদিন পর এসে… কথা দিয়েছিলে সারাজীবন আমার থাকবে! রাইট? ভুলে গেছো অনিন্য? প্লিজ মনে করো। আমি কীভাবে বাঁচবো তোমাকে ছাড়া? অনিন্য,তাকাও, আমার দিকে তাকাও। দেখো আমার চোখে, ভালোবাসা আর কী কিছু দেখতে পাচ্ছো তুমি?”
অনিন্য’র বুকের উপর মাথা রাখে তীহা। দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে সে। অপরদিকে অনিন্য’র কপালে বিরক্তির ভাঁজ পড়েছে। তীহা নামক আপদটাকে বিদায় করতে পারলেই বাঁচে যেন। তীহাকে শরীরের উপর থেকে সরিয়ে অনিন্য কঠিন গলায় বলল,
“এখান থেকে বেরিয়ে যাও যদি সামান্যতম লজ্জা শরম থেকে থাকে। আমি পার্সোনালি আর চাচ্ছি না এই রিলেশন কন্টিনিউ করতে।”
“আমি তোমার পায়ে পড়ি। এমনটা করো না। আমার বাসায় বিয়ের কথা চলতেছে। আমি সেইজন্যেই তোমার কাছে আসছি আজকে। তুমি সব জানো। সব জেনেও আমাকে ফিরিয়ে দিও না অনিন্য। বাসায় গেলে আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিবে বাবা। আমি..আমি তোমাকে হারাতে চাই না অনি।”
তীহা সত্যি সত্যি অনিন্য’র পায়ের উপর পড়ে গেল। অনিন্য “আরে” বলে লাফ দিয়ে সরে দাঁড়াল। বিরক্তির শেষ নেই যেন। রাগে তার শরীর কাঁপতে শুরু করল এবার। তীহার হাত ধরে তাকে উঠিয়ে টেনে ফ্ল্যাট থেকে বের করে দিলো। এরপর মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো। তীহার তীক্ষ্ণ চিৎকারে আশপাশের ফ্ল্যাট থেকে কয়েকজন বেরিয়ে এলেও সবাই তামাশা দেখে যে যার মতো বিদায় নিলো। অনিন্য দরজা তো খুললোই না বরং দারোয়ানকে ফোন দিয়ে বলল, এই মেয়েকে এই বিল্ডিং ছাড়া করতে এবং বিল্ডিং এর আশেপাশেও যেন না দেখে কখনো। তারা তা-ই করল। তীহাকে একপ্রকার ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিলো।
____
আমার বিয়ে হয়ে গেছে সম্পূর্ণ অপরিচিত এক লোকের সঙ্গে! এখন পর্যন্ত না তাকে আমি দেখেছি, না তার কণ্ঠ শুনেছি। তোমাকে ভালোবাসার অপরাধে বাবা-মায়ের পছন্দকে বরণ করে নিয়েছি। তুমি যদি ছেড়ে চলে না যেতে আজ, হয়তো বিয়ে নিয়ে মনে জমাট বাঁধা স্বপ্ন গুলো সব পূর্ণতা পেতো অনিন্য। তুমি কথা রাখোনি। মাঝপথে হাত ছেড়ে চলে দিয়েছো। যেন আমি তোমার কেউ না! যেন আমাদের প্রেম ঠুনকো ছিল! যেন আমি তোমার অবহেলার পাত্রী! আমি ভীষণ অবাক এবং অপ্রস্তুত হয়েছিলাম অনিন্য। কেন করলে এমনটা? যদি ভালোবাসার মর্যাদাই না রাখতে জানো,তবে কেন প্রেম নিবেদন করেছিলে? কোনো কমতি তো তোমার নেই। এতবড় বিজনেসম্যান তুমি! তবুও আমাকে ধরে রাখতে পারলে না? এ কেমন বিচার তোমার অনিন্য? অথচ দেখো,তোমার প্রতি এখনো রাগ,অভিমান কোনো কিছুই জমছে না আমার। বরং তোমাকে পাওয়ার আকুতিতে ভেতরটা ছারখার হয়ে যাচ্ছে। মনের উত্তাপে আমি দগ্ধ হচ্ছি প্রতিক্ষণে,প্রতি মুহূর্তে। আমাকে বাঁচাও তুমি, নিয়ে যাও এখান থেকে। এই বিয়ের বোঝা সইতে পারার মতো শক্ত কাঁধ আমার হয়নি অনিন্য… হয়নি…
.
ঝরঝর করে আয়নার সামনে দাঁড়ানো তীহা কেঁদে ফেলল। মুখে মেকাপের ভারী আস্তরণের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তার। মনের আকাশে জমা মেঘ গুলোকে ঝরাতেই হবে যেন। দর্পণের উপর মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে পুরোনো দিনের কথা হাতড়ে বেড়ালো খানিকক্ষণ। মেঘ কেটে গেলেও ভার হয়ে রইলো মনটা। চোখ মুছতে গিয়ে চোখের কাজল তুলে ফেলল। বড় বিরক্ত হলো তীহা। কী এক সং সাজিয়ে দিয়েছে তাকে! অবশ্য আজ যদি অনিন্য থাকত,তবে এই সং সাজ নিয়েই হাজারও জল্পনা কল্পনার সাগরে ডুবে থাকত সে। মনের আঙিনা কালো আঁধারে ঠাসা, চোখ খুলে নতুন সূর্যদোয় দেখবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে তার নেই।
এখন শেষরাত, আর কিছুক্ষণ পর ফজরের আজান পড়বে। বিছানায় তীহার বর আদ্র সাহেব ঘুমুচ্ছেন। কিন্তু তীহা সারারাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি। বাধ্য হয়ে বিছানা ছেড়ে শেষতক উঠে এসেছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় বার কান্না গুলো চোখ বেয়ে নোনাজল হয়ে উপচে পড়ল। তীহা এক পলক ঘুমন্ত আদ্র সাহেবের দিকে তাকিয়ে দ্রুততার সঙ্গে বাথরুমে ঢুকে গেল। সাবান ঘষে ঘষে মুখ ধুঁয়ে কাপড়টাও পাল্টে নিলো। একদম সাদামাটা বেশে বেরিয়ে এলো যখন, নিজের সাথে যুদ্ধ করে পুরোপুরি হাপিয়ে উঠেছে তখন তীহা। ক্লান্ত,বিধস্ত চেহারায় টলমলে পায়ে এগিয়ে গিয়ে বিছানার একপাশে শুলো এবং মুহূর্তেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।
____
সকাল হতে না হতেই আহম্মেদ বাড়িতে হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে। ছোট ছোট বাচ্চারা অনেকদিন পর একত্রিত হওয়ায় বাড়ির ছাদে তাদের খেলার আসর জমেছে। বড়রা সকালের চা-নাশতা খেয়ে গুজুরগুজুর করছেন। পুরুষেরা বৌভাতের আয়োজন শুরু করে দিয়েছেন, নারীরা কাজের ফাঁকে ফাঁকে চোখ বাঁকা করে টেবিলে বসা আদ্র’র দিকে তাকাচ্ছে। জামাই উঠে গেছে অথচ তার বউ এখনো ঘুমুচ্ছে! একটা ছিঃ ছিঃ পড়ে গেল মুহূর্তেই। আদ্র’র সেসবে মাথাব্যথা নেই। সে তার ভাগের চা টুকু বেশ আরাম করেই পান করছে। অন্য হাতে মোবাইল, আনমনে নিউজফিড স্ক্রল করে দেশের বিভিন্ন খবরাখবর জেনে নিচ্ছে। নিরুপমা বেগম এসে আদ্র’র সামনের চেয়ারটা টেনে বসলেন। তিনি আদ্র’র মা, আদ্র মোবাইল থেকে চোখ তুলে উৎসুক হয়ে মায়ের দিকে তাকাল।
“তোর বউয়ের আক্কেলটা একবার দেখ! বেলা বাজে দশটা। অথচ মহারাণী এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছেন। তুই উঠে বসে আছিস অথচ তার নাম গন্ধ নেই উঠার।”
আদ্র ভ্রু কিঞ্চিৎ বাঁকা করে জবাব দিলো,
“সে কথা তুমি আমাকে শোনাচ্ছো কেন? তোমাদের বউ, তোমরা বোঝো।”
“আমাদের বউ মানে? তোর কোনো দায়িত্ব নেই,নাকী?”
“না,নেই। আপাতত নেই। একজন কে চিনি না,জানি না, বাচ্চা কিসিমের একটা মেয়ে,তাকে ধরেবেধে আমার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছো তোমরা।”
“বাচ্চা? ও বাচ্চা? বাইশ বছর যার,সে বাচ্চা কীভাবে হয় আদ্র?”
“আমার তুলনায় বাচ্চা-ই। আমার বয়স কত,সেদিকেও খেয়াল দেওয়া উচিত তোমার আম্মা। এবছরের মার্চে যে পয়ত্রিশ পেরোলো, সে খবর রাখছো?”
নিরুপমা বেগম কঠিন গলায় বললেন,
“ছেলে মানুষের বয়স আবার কী? এরা বাইশ যা,বত্রিশ ও তা.. আর মেয়ে মানুষ সাবালিকা হলেই বিয়ে দেওয়া উচিত। উল্টাপাল্টা গুজুরগুজুর না করে যা,গিয়ে ডেকে ওঠা মেয়েটাকে।”
আদ্র অত্যন্ত বিরস মুখে মোবাইলের দিকে নজর দিলো, বলল,
“আমি পারব না,তোমরা বোঝো গে।”
নিরুপমা বেগম অগত্যা উঠলেন, তিনিই ডাকবেন বলে মনস্থির করলেন। হঠাৎ আদ্রই তাকে ডেকে উঠল। বাকি চা টুকু এক চুমুকে মুখের ভেতর ঢেলে নিয়ে বলল,
“তোমার যাওয়া লাগবে না। তোমার ডাক শুনে বেচারি ভয় পাবে আবার। তারচেয়ে আমিই বরং ডাকি। এমনিতেও মেয়েটা সারারাত ঘুমায়নি। শুধু কেঁদেছে। কী কারণে,কে জানে!”
আদ্র ছোট করে নিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল এবং নিজেই তীহাকে ডাকার উদ্দেশ্যে বেডরুমের দিকে এগুলো।
____
বিড়াল ছানার মতো গুটিশুটি মেরে বিছানার এক কোণে ঘুমোচ্ছে তীহা। পাতলা চাদর দিয়ে তার কোমর অবধি ঢেকে রাখা, বুকের উপর ওড়না নেই। আদ্র’র লজ্জা লাগল ভীষণ। তার জীবনে দু-বার প্রেম এসেছিল। প্রথম যেবার এসেছিল, সেবার সে কলেজে পড়ত। তারই সহপাঠী এক মেয়েকে ভীষণ ভালো লেগে গেল আদ্র’র। মেয়েটিও তার অনুভূতিতে নাড়াচাড়া দিতো বেশ। প্রায় মাস তিনেক সম্পর্কের পর আদ্র জেনেছিল, সে ভালো ছাত্র হওয়ায় এবং তার থেকে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা পাওয়ার লোভেই মেয়েটি প্রেম করেছিল তার সাথে। জানার সঙ্গে সঙ্গে জনসম্মুখে একটা ভয়ংকর কাজ করে ফেলেছিল আদ্র। সবার সামনে থাপ্পড় মেরে বসেছিল সেই মেয়েটিকে। পরে এই নিয়ে অনেক তোলপাড় হয়েছিল। আদ্র’র বাসায় কলেজ থেকে নোটিশ গেলে তার বাবা শেষ মুহূর্তে কলেজ পরিবর্তন করিয়ে ঝামেলার মিটমাট করেন। এরপর আদ্র পণ করেছিল,আর কোনোদিন কারো প্রেমে পড়বে না। কিন্তু সেই ছলনাময়ী প্রেম তার জীবনে আবারও এসেছিল ভার্সিটির শেষ বয়সে। সেবার মেয়েটি তার থেকে দুই ডিপার্টমেন্ট জুনিয়র ছিল। মেয়েটিকে আদ্র পছন্দ করে বুঝতে পেরে আদ্রকে সে-ই প্রপোজাল দিয়েছিল। আদ্রও সাতপাঁচ না ভেবে এক্সেপ্ট করে নিলো। সেই সম্পর্কের সময়কাল ছিল পাঁচ মাস। পাঁচ মাসে আদ্রকে যতভাবে লুটেপুটে খাওয়া যায়, লুটেপুটে খেয়েছিল মেয়েটি। এরপর নিজের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে সরকারি চাকরি ওয়ালা একজন অফিসারকে বিয়ে করে নেয় সে। দ্বিতীয় বার মন ভাঙার পরই আদ্র বুঝতে পারে,এসব ভালোবাসা-বাসি তার জন্য না। সবাই মৌমাছি, মধু খেয়ে চলে যেতে চায়। কেউ তাকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসেনি! আর ওই মেয়ের এভাবে ছেড়ে চলে যাওয়া মানতে পারেনি বিধায় সে নিজেও প্রতিজ্ঞা করে,আগে ভালো কোনো পর্যায়ে পৌঁছুবে,তারপর বিয়ে-শাদির ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করবে। সেই প্রেক্ষিতেই পড়াশোনা শেষ করে সেটেল্ড হতে হতে বয়সটা হু হু করে বেড়ে গিয়েছে তার। আরও বছর দুই পর বিয়ে করার ইচ্ছে থাকলেও শেষতক মায়ের চাপাচাপিতে পড়ে এই পিচ্চিকে নিছকই অনিচ্ছায় বিয়ে করতে হয়েছে। এখন এই পিচ্চিকে কীভাবে সামলাবে, তাই ভেবে তার গলা বারবার শুকিয়ে আসছে।
ঘুমন্ত তীহার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে এসব ছাঁইপাশ চিন্তা করছিল আদ্র। ঠিক তখনই অঘটন টা ঘটলো। তীহার ঘুম ভেঙে গেল এবং সে চোখ মেলে তার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নেগেটিভ চিন্তা করল। সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে চিৎকার করে উঠতেই আদ্র হতভম্ব হয়ে গেল। দ্রুততার সঙ্গে ঘরের দরজা আঁটকে দিয়ে বিছানার দিকে এগুতেই তীহা দ্বিতীয় বারের মতো চিৎকার করে উঠল। চেঁচিয়ে বলল,
“আমার কাছে আসবেন না,অসভ্য বেয়াদব লোক! আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলেন, ছিঃ! আমি সবাইকে বলে দেব… এত লোভ আপনার, এত লোভ? আমার কাছে আসবেন না, ভুলেও না… আমি কিন্তু আমার চিৎকার করব।”
তৃতীয় দফায় চিৎকার করতে গেলে আদ্র এক লাফে খাটের উপর উঠে আসে। তীহার মুখ চেপে ধরল দুই হাতে, টাল সামলাতে না পেরে তীহা উল্টো ঘুরে শুয়ে পড়ল,তার গায়ের উপরই শুয়ে পড়ল আদ্র। দুই জোড়া চোখ এক হতেই আদ্র দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“আর একবার চিৎকার করলে জানে মেরে ফেলব, কসম!”
তীহা চিৎকার করল না ঠিক, কিন্তু গায়ের জোড়ে আদ্র’র হাতের মধ্যে দাঁত বসিয়ে দিলো।
(চলবে)
#এলোমেলো_হাওয়া
#পর্ব_১
#অলিন্দ্রিয়া_রুহি
[বিসমিল্লাহ বলে শুরু করলাম। প্রথম পর্ব পড়ে সবার কেমন লেগেছে,জানাবেন।]