#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_৩০
আহনাভের বাবা টেবিলে রাখা বাটি থেকে একটি মিষ্টি নিয়ে মুগ্ধতার বড় মামা মুরাদের মুখে পুরে দিয়ে বলে,”তাহলে এক মাস পর যেই তারিখে মুগ্ধতা আর আহিরের জাঁকজমক ভাবে বিয়ের ডেট ফাইনাল করেছিলাম ঐদিনি তাহলে একসাথে আমাদের আহনাভ আর হায়াতির বিয়ে।”
মুরাদ হেঁসে বলল,”জি।”
.
আলিযা দুইজনকে টেনে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে নিয়ে আসছে,আর বলছে,”ভাই তুই কেন বৃষ্টিতে ভিজতে গেলি,দেখ তোর গা গরম হয়ে আসছে।” আলিজার কন্ঠ বসার ঘরের সকলে শুনতে পেয়ে সিঁড়ির দিকে তাকায়।জেরিন,অনামিকা দুজন দাড়িয়ে এক সাথে বলে উঠে,”আহনাভ তুই ভিজেছিশ কী করে।”
আলিযা দুইজনকে নিয়ে এগিয়ে আসে,দুজনের হাত ছেড়ে দিয়ে বলে,”বৃষ্টিতে ভিজে।”
“আসলে আন্টি আমরা কথা বলছিলাম তখন হঠাৎ বৃষ্টি নামায় ভিজে যাই দুজন।”, লায়ানা বলে থেমে গেলে জেরিন ব্যাস্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,”কেউ তাওয়াল নিয়ে আসো না।আহনাভ বৃষ্টিতে ভিজতে পারে না ওর গা কাঁপা জ্বর আসে।”
আলিযা পুনরায় বলে উঠে,”মা জ্বর আসবে কী দেখো এসে গিয়েছে।”
আহনাভ জেরিনের কাছে এগিয়ে এসে বলে,”মা তুমি ব্যাস্ত হয়ে পরো না।দেখো আমি ঠিক আছি।”বলেই হাঁচি দিল আহনাভ।
লায়ানা ভিজে শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজে শাড়ি ধরেই দৌড় লাগায় টেবিলের কাছে,টেবিলের পাশের চেয়ারে তাওয়াল ঝুলে আছে।লায়ানা টেবিলের কাছে এসে তাওয়াল নিয়ে দৌড়ে চলে আসে আহনাভের সামনে।লায়ানা জেরিনের হাতে তাওয়াল ধরিয়ে দিয়ে বলে,”আন্টি নাও তাওয়াল।”
জেরিন তাওয়াল নিয়েই আহনাভের মাথা মুছে দিতে থাকে।ইয়াশা বলে উঠে,”ইজাজ আহনাভ কে নিয়ে তোমার ঘরে যাও ওকে তোমার একটা শার্ট আর প্যান্ট দাও ছেলেটা ভিজে জামা কাপড় পাল্টে নেক।”
ইজাজ এগিয়ে এসে বলে,”আহনাভ আমার সাথে আসো।”
আহনাভ লায়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,”কিন্তু।”
জেরিন আহনাভের হাত ধরে বলে,”কোনো কিন্তু না চল তুই।”থেমে গিয়ে ইজাজের দিকে তাকিয়ে বলে,”বাবা চলো তো।”,বলেই আহনাভকে নিয়ে ইজাজের ঘরে চলে যায় জেরিন।
লায়ানা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সকলের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমিও বরং চেঞ্জ করে আসি।”,লায়ানা যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে তার আগেই আহান ব্যাস্ত ভঙ্গিতে হাতের ফোন পকেটে ঢুকিয়ে লায়ানার কাছে এসে বলে,”বোন আমাদের এখনই বের হতে হবে এয়ারপোর্ট এর জন্য।”
সবাই এক সাথে বলে উঠে,”কেনো?”
লায়ানা ঘাড় ঘুরিয়ে সকলের দিকে একবার তাকিয়ে, আহান এর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে,”কেনো?”
“আমাদের রাতের ফ্লাইট ছিল কিন্তু আবহাওয়ার যেই অবস্থা রাতের ফ্লাইট অফ যেতে পারে।তাই স্টিভ আর আমি ২ টার ফ্লাইটে যাওয়ার ব্যাবস্থা করেছি।এখন ১ টা বাজতে আর ত্রিশ মিনিট তো এখন না বের হলে ফ্লাইট মিস যাবে আর যাওয়া হবে না আজ।”
“ঠিক আছে তুই আমার সাথে আয় আমি আমার লাগেজ গুলো দিচ্ছি নিয়ে যা আর আমি তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নিচ্ছি।”
অনামিকা বলে উঠে,”হায়াতি মা তুমি কোথায় যাচ্ছ?”
“আসলে আন্টি আপনারা তো জানেন আমার আসল কাম্পানি নেক্সট ইন কানাডা এইখানে যেইটা আছে তা ঐটারই একটি শাখা।আমার পুরোনো ক্লাইন্ড স্টিভ আমাকে ঐখানে না পেয়ে গত পরশু বাংলাদেশ চলে আসে আর গত কাল তার একটা বড় প্রজেক্টে সাইন করি আমি।তার প্রজেক্ট কমপ্লিট করতেই এক মাসের জন্য কানাডা যাবো।”
অনামিকা এগিয়ে এসে লায়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”সাবধানে যেও মা।”
লায়ানা হাঁসলো অতঃপর বড় বড় পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চল গেলো,সাথে আহান গেলো।লায়ানা আহান কে লাগেজ গুলো দিয়ে দিলে আহান লাগেজ গুলো গাড়িতে রাখতে চলে যায়।লায়ানা কোনরকমে ভেজা শাড়ি পাল্টে একটি কালো রঙের ফুল স্লিভের শার্ট আর একটি জিন্স পরে নেয়,ভিজে চুল গুলো কোনো রকমে মুছে ছেড়ে দেয়।ফোন পকেটে ঢুকিয়ে নিচে চলে আসে।মুগ্ধতার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,”তোকে ছাড়া এই এক মাস থাকতে হবে বনু।তোর এত ক্রিটিকাল পেশেন্ট গুলো না থাকলে আই সুয়ের আমি তোকে সাথে করেই নিয়ে চলে যেতাম।সোয়াদ ভাই তোর আকদের পর চলে না গেলে ভালই হতো।দারা গিয়েও
সোয়াদ ভাইকে ধরবো কেনো গেলো এত তাড়াতাড়ি।”
মুগ্ধতা হেঁসে বলে,”ওই কানাডা যে আমার হসপিটাল আছে সোয়াদ না গেলে আমার হসপিটাল কে সামলাবে শুনি।আর শুন ঠিক টাইমে খাবার খাবি সাবধানে থাকবি নিজের যত্ন নিবি আমি আহান আর রাফির থেকে প্রত্যেকটা ইনফরমেশন নিবো কিন্তু।যদি জানি তিড়িং বিড়িং করেছিস খাবার ঠিক করে খাসনি এমন মার মারবো না।
লায়ানা মুগ্ধতা কে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলে,”বনু ডোন্ট ওরি।সাবধানে থাকিস।আর আহনাভকে দেখে রাখিস।এই এক মাস তাকে এই লায়ানা আর জ্বালাবে না,ফোন করেও জ্বালাবে না।আমার নাম্বারে ফোন দিয়ে না পেলে আমার আরেকটি যে পার্সোনাল নাম্বার আছে যা শুধু তুই আহান জানিস ওই নাম্বারে ফোন দিস। ”
রাফি সদর দরজার সামনে এসে বলে,”ম্যাম লেট হয়ে যাচ্ছে।”
লায়ানা ছেড়ে দেয় মুগ্ধতাকে।সকলের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি আসছি তাহলে।”
লায়ানা চলে যায়।মুগ্ধতা লায়ানার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।আহির মুগ্ধতার পাশে এসে দাঁড়ায় মৃদু কন্ঠে বলে,”মুগ্ধ রানি,আমি তোমাদের বন্ধুত্ব দেখে মুগ্ধ।আজ যদি মা হায়াতির অতীত ওর কানাডা চলে যাওয়া ওর বাবা মায়ের বিষয়ে না বলতো আমাদের সবাইকে হয়তো বুঝতেই পারতাম না তোমরা আপন বোন না,তোমরা বেস্ট ফ্রেন্ড।”
মুগ্ধতা প্রসন্ন হাঁসলো, আহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,”ও আমার বোনের থেকে কম না।এইযে এক মাসের জন্য দূরে গেলো আমার থেকে।এতেই সারাক্ষণ চিন্তায় থাকবো এইযে বনু বনু করে বলে বেড়ানো মেয়েটা ঠিক আছে তো।”
.
ইজাজ জেরিন আর আহনাভকে তার রুমে এনে একটি শার্ট আর প্যান্ট আহনাভের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।আহনাভ ভেজা জামা পালটাতে চলে যায় ওয়াশরুমে,আর জেরিন পুরো ঘরে পায়চারি করতে থাকে।আহনাভ ওয়াশরুম থেকে ভেজা কাপড় পাল্টে বেরিয়ে আসলে জেরিন ধরে ধরে আহনাভকে বিছনায় বসিয়ে বলে,”দেখ তো চোখ দুটো লাল হয়ে কেমন হয়ে আছে।”
আহনাভ বলে উঠে,”মা জ্বর’ই তো তুমি এত প্যানিক কেনো করছো।”
“বুঝবি না মা তো তাই এমন করি।তোর মনে নেই বৃষ্টিতে এমন করে দুইবার ভিজে কী জ্বর টাই না এসেছিল তোর,পুরো শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলি।আর জ্বরের ঘোরে কি উল্টো পাল্টা কথা বলতি।”
অনামিকা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠে,”আসবো আমি।”
জেরিন অনামিকার দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমাকে অনুমতি নিতে কে বলেছে অনামিকা।”
অনামিকা ভিতরে এলো,জেরিন ও আহনাভের কাছে এসে বলল,”মা আর ছেলে কথা বলছে অনুমতি তো নিতেই হয়।”বলেই আহনাভের কপালে হাত দিল অনামিকা অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”এসে পড়েছে জ্বর।আর এখন বাড়ি যাবই বা কী করে বাহিরে অসম্ভব রকমের বৃষ্টি হচ্ছে,এই বৃষ্টিতে ড্রাইভার গাড়ি চালাতে পারবে না বলে দিয়েছে।আর ইয়াশা আপা আমাদের আজ যেতে বারণ করলো,মুগ্ধতা মা আহিরের বাবা,আহনাভের বাবা, আহির আর আমাদের মেয়েদের গেস্ট রুমে নিয়ে গিয়েছে।”
জেরিন আহনাভের দিকে তাকিয়ে বলে,”তো তুই এইখানেই শুয়ে পর আহনাভ।আমি তোর জন্য ঔষধ নিয়ে আসছি।”
আহনাভ বসা থেকে দাড়িয়ে বলে,”মা আমার হায়ার সাথে অনেক জরুরী কথা আছে।আমি ওর কাছে যাই।”
অনামিকা আহনাভকে বসিয়ে দিয়ে বলে,”কোথায় যাবি হায়াতি মা চলে গিয়েছে।”
আহনাভ ভ্রু কুঁচকে বলে,”চলে গিয়েছে মানে?”
“ওর এক পুরনো ক্লাইন্ট গত পরশু কানাডা থেকে আসে তারপর গত কাল ওর সাথে এক প্রজেক্টে ডিল ফাইনাল করে,হায়াতি মা সেই প্রজেক্টের কারণে এক মাসের জন্য কানাডা চলে গিয়েছে।”
“কিন্তু ওর তো রাতের ফ্লাইট ছিল।”
“বৃষ্টির সাথে বাতাসের বেগ বেড়ে গেলে রাতের ফ্লাইট গুলো অফ হওয়ার সম্ভবনা আছে তাই আহান ২ টার ফ্লাইটে যাওয়ার ব্যাবস্থা করেছে তাই বেরিয়ে গিয়েছে মাত্রই।”
আহনাভের বুকটা ধুক করে উঠলো।দাড়িয়ে গেলো ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বলল,”কিন্তু আমার ওর সাথে কথা আছে।ও হয়তো এখনও বেশি দূরে যায়নি আমি ওর কাছে যাবো মা।”
জেরিন আহনাভের হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে,”আহনাভ তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস। ফোনে কথা বলে নিস।”
“প্লিজ মা যেতে দাও।এই কথা ফোনে বললে হবে না।”,বলেই আহনাভ জেরিনের থেকে হাত ছাড়াতে চাইলে জেরিন কণ্ঠের খাদ বাড়িয়ে বলে উঠে,”কী পাগলামো হচ্ছে আহনাভ?কী এমন কথা এই ঝড়ের মধ্যে তোমাকে বের হতে হবে।”
আহনাভ জেরিনের থেকে হাত ছাড়িয়ে বলে,”মা আমি অনেক ভুল করেছি আমার হায়া পাখিকে ভুল বুঝে,অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি পাখিটাকে।আমার যেতেই হবে মা।ও যাওয়ার আগে একবার হলেও ওর থেকে মাফ চাইতে হবে নাহলে এই একটি মাস আমি কুড়ে কুড়ে শেষ হয়ে যাবো।”
জেরিন ছেলের কথার মানে কিছুই বুঝতে পারলো না।আহনাভ দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।জেরিন আহনাভের পিছু পিছু দৌড় লাগালো,জোরে বলে উঠলো,”আহনাভ শুন আমার কথা।”
আহনাভ শুনলো না বেরিয়ে গেলো।সদর দরজা পেরোতেই আবার বৃষ্টিতে ভিজে গেলো আহনাভ।দারোয়ানের কাছে গিয়ে নিজের গাড়ির চাবি নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো অতঃপর দ্রুত গতিতে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো আহনাভ।
জেরিন ফোন বের করে আহির কে ফোন করলে, আহির সাথে সাথে রিসিভ করে বলে উঠে,” কী হয়েছে বড় মা একই বাড়িতে থেকে আমাকে কল দিচ্ছ?আমি তো এইযে গেস্ট রুমে আছি।”
“আহির আহনাভ এই ঝড়ের মধ্যে বেরিয়ে গিয়েছে হায়াতির জন্য।তুই আয় বাবা প্লিজ দেখনা ছেলেটা কোথায় গেলো।”
আহির ফোন রেখেই গেস্ট রুম থেকে ছুটে আসলো। সদর দরজার সামনে এসে অতঃপর জেরিনকে বলল,”বড় মা চিন্তা করোনা আমি যাচ্ছি।”
আহির বেরিয়ে যায়।
.
আহনাভ যত দ্রুত পারছে গাড়ি চালাচ্ছে এক হাতে, আরেক হাতে বার বার লায়ানার নাম্বারে ফোন করছে বার বার নাম্বার ব্যাস্ত বলছে।লায়ানা ফোন রিসিভ করলো না।
আহনাভ বিড়বিড় করে বলতে থাকে,” প্লিজ হায়া পাখি প্লিজ এইভাবে যেও না আরেকটি বার আমার সাথে দেখা করে যাও।আই এম সরি পাখি।”
.
বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।ধীরে ধীরে দমকা হাওয়ার বেগ বেরেই চলেছে।আহনাভ দমকা হাওয়ার বেগের জন্য বহু কষ্টে গাড়ি চালিয়ে এসেছে। আহনাভের গাড়ি থামলো এয়ারপোর্ট এর সামনে।
আহনাভ গাড়ি থেকে বের হতেই মাথার উপরে দিয়ে শাই করে উড়ে গেলো ঠিক ২ টার প্লেন।আহনাভের বুক ধুক করে উঠলো,টিপটিপ করে তাকালো আকাশ পানে।বৃষ্টির কারণে ভালো করে তাকাতেও কষ্ট হচ্ছে।আহনাভের শরীর ছেড়ে দিল দুই কদম পিছনে এসে থাপ করে গাড়ির সাথে লেগে দাড়িয়ে গেলো আহনাভ।
আহনাভের গা কেঁপে উঠছে বারংবার।আহনাভ ভাঙ্গা কণ্ঠে শুধালো,”চলে গেলে পাখি।কেনো ধরলে না আমার ফোন?,একবার দেখা করে গেলে আমি মাফ চেয়ে নিতাম।আমি কেনো বার বার ভুল বুঝি তোমায় কেনো বারবার কষ্ট দেই তোমাকে।আমি এই এক মাস কিভাবে কাটাবো হায়া পাখি?”
এইভাবেই আকাশ পানে তাকিয়ে বৃষ্টির মধ্যে দাড়িয়ে থাকলো আহনাভ।আধ ঘণ্টা পর আহিরের গাড়ি এসে থামলো এয়ারপোর্ট।আহনাভকে দেখতে পেয়ে ছুটে এলো আহনাভের কাছে,জাপটে জড়িয়ে ধরলো আহনাভকে আহির।আহনাভ কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে বলে উঠলো,”আহির হায়া পাখি আমাকে সরি না বলতে দিয়েই চলে গেলো।”
আহির আহনাভকে ছেড়ে দিয়ে টেনে তার গাড়িতে এনে বসিয়ে বলে,”তুই পাগল আহনাভ।এইভাবে এসেছিস কেনো?তোর শরীর কাঁপছে তোর গা পুরে যাচ্ছে জ্বরে।তুই এইদিকে বস আমি তোর গাড়িটা পার্ক করে রেখে আসছি।”
আহির আহনাভের গাড়ি এয়ারপোর্ট এর পার্কিং লটে পার্ক করে চলে আসে।ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নওশাদ কে ফোন করে বলে,”নওশাদ আহনাভের গাড়িটা এয়ারপোর্ট এর পার্কিং লটে আছে এসে নিয়ে যাও।”
.
যত সময় যাচ্ছে আবহাওয়া খারাপ হচ্ছে। আহনাভের গা কাপিয়ে জ্বর’ও চলে এসেছে।আহির পরনের ব্লেজার খুলে আহনাভের গায়ের উপর দিয়ে দ্রুত গাড়ি ছুটিয়ে এক ঘণ্টার রাস্তা পার করে চলে এসেছে।
মুগ্ধতার বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে হর্ণ বাজাতেই বাড়ির ভিতর থেকে অনামিকা,জেরিন ছাতা নিয়ে বেরিয়ে আসে।
.
অনামিকা,জেরিন ছাতার নিচে করে দুই ছেলেকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে আসলে মুগ্ধতা বলে উঠে,”মা,বড় মা আমার সাথে আসুন আমি ভাইয়ার জন্য জামা কাপড় তার ঘরে রেখে দিয়েছি।”
আহির আহনাভকে ধরে মুগ্ধতার পিছু পিছু গেলো।মুগ্ধতা ঘর দেখিয়ে দিতেই আহির আহনাভকে নিয়ে ঘরে ঢুকে বলে,”মা, বড় মা ভেবো না এত।আমি আহনাভের সাথে আছি ওকে চেঞ্জ করে পানি পট্টি দিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিচ্ছি তোমরা যাও।”
জেরিন বলে উঠে,”বাবা তুই ওকে চেঞ্জ করে আমাকে ডেকে দিস।”
“বড় মা কী বললাম যাও এই জ্বরে কিছু হবে ও ঠিক হয়ে যাবে।”
মুগ্ধতা,অনামিকা, জেরিন বেরিয়ে গেলে আহির আহনাভকে বিছনায় বসিয়ে দরজা আটকে চলে আসে।আহনাভের ভেজা জামা কাপড় চেঞ্জ করে দিয়ে বিছনায় ভালো করে শুইয়ে দিয়ে কাথা টেনে দেয়।নিজেও চেঞ্জ করে আসে।এর মাঝে মুগ্ধতা এসে আহনাভ ও আহিরের জন্য খাবার ঔষধ এক বাটি পানি ও জল পট্টি দেয়ার মত কাপড় দিয়ে যায়।আহির আহনাভকে জল পট্টি দিয়ে,বসিয়ে খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দেয় অতঃপর আবার শুইয়ে দেয় আহনাভকে।
আহির ফ্যান বন্ধ করে দিয়ে এসে দেখে আহনাভ বিড়বিড় করে বলছে,”হায়া পাখিকে এনে দে প্লিজ ওকে এনে দে।”
আহিরের খাওয়া আর হলো না।আহনাভের পাশে বসে থাকলো মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,”যখন ছিল তখন মেয়েটাকে বারবার ভুল না বুঝে ভালোবাসলেও পারতি।”
.
ঘড়িতে রাত দশটা ছুঁইছুঁই।আহিরের চোখ লেগে এসেছিল,আহনাভের পাশে বসে থেকে।আহির চোখ খুলে ঠিক হয়ে বসে আহনাভের কপালে হাত রেখে বলে উঠে,”এ তো জ্বর বেড়ে গিয়েছে। ইশ বড় মা জানলে আরো পাগল হয়ে যাবে।”
আহির উঠে দাড়ায়, মুগ্ধতা একটি নাপা দিয়ে গিয়েছিল এখন তো ঔষধ লাগবে। আহির ঘর থেকে বেরিয়ে চলে যায় মুগ্ধতার ঘরের দিকে।
মুগ্ধতার ঘরের সামনে এসে দরজায় কড়া নাড়লে মুগ্ধতা দরজা খুলে দেয়।আহির বলে উঠে,”আহনাভের জ্বর বেড়েছে মুগ্ধ আমার ঔষধ লাগবে।”
মুগ্ধতা দরজার সামনে থেকে সরে গিয়ে বলে,”আপনি আসুন আমি দিচ্ছি ঔষধ খুঁজে।”
মুগ্ধতা টেবিলের ড্রয়ার খুলে ঔষধ খুঁজছে।আহির ঘরের ভিতর ঢুকে ঘরটা চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগে হঠাৎ চোখ পড়ে বারান্দার গ্রিল ভেদ করে বাহিরের দিকে বরাবর বিল্ডিংয়ের দুই দম্পতির ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ওপর।আহির তৎক্ষণাৎ চোখ সরিয়ে বলে উঠে,”আস্তাগফিরুল্লাহ!”
মুগ্ধতা ঔষধ বের করে ড্রয়ার লাগিয়ে আহিরের সামনে এসে বলে,” কী হয়েছে এইভাবে আস্তাগফিরুল্লাহ বললেন।”,বলেই মুগ্ধতা বারান্দার দিকে তাকাতে নিলে আহির মুগ্ধতার মুখ দুই হাতে ধরে বলে উঠে,”মুগ্ধ রানি ঐদিকে তাকায় না।”
মুগ্ধতা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,”আজব কেনো তাকাবো না?”
“তাকাতে নেই মুগ্ধ রানি।ওইগুলো তোমার মত আনরোমান্টিক বউয়ের জন্য না তাই তাকিয়ে দেখো না।”
মুগ্ধতা আহিরের হাত সরিয়ে বলে উঠে,”আমি তো তাকাবো’ই।”,বলেই মুগ্ধতা বারান্দা ভেদ করে তাকাতেই চোখ বড় বড় করে বলে উঠে,”এহহ আর জায়গা পায় না এইসব করার।নিজের জানালা পর্দা আটকে নেহ ভাই।সরেন আমি নিজেই আমার বারান্দার থাই আটকাই গিয়ে।”
মুগ্ধতা বারান্দার থাই আটকে ধীর পায়ে আহিরের একদম কাছে এগিয়ে এসে বলে,”আমি আনরোমান্টিক?আমাকে চ্যালেঞ্জ করবেন না আহির সাহেব তাহলে ভালো হবে না।”
আহির আমতা আমতা করে বলে,”একটু সরে দাঁড়াও মুগ্ধ।”
“আমাকেই আনরোমান্টিক বলে আর আমি একটু কাছে আসতে নাকি এমন করে।”,বলেই মুগ্ধতা দুই হাতে আহিরের গলা জড়িয়ে গালে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বলে,”যদি এমন করি তাহলে কী হবে,এইভাবে তো বাহাদুর শাহ হয়ে ঘুরে বেড়ান।”
আহির নিজের গালে হাত দিয়ে বলে,”মুগ্ধ রানি সরে যাও আমি হার্ট এ্যাটাক করে ফেলবো।”
মুগ্ধতা হেঁসে বলে উঠে,”আপনাকে কি আমার রোগে ধরেছে?বলেছিলাম না আমাকে চ্যালেঞ্জ করবেন না।আমি চাইলে এর থেকেও বেশি কিছু করতে পারি।করবো মি.আফরান আবরাহার আহির।”
আহির ঢোক গিলে বলে,”আমার তোমার এই রূপ সইছে না।”
মুগ্ধতা মাতাল করা কণ্ঠে বলে,”কেনো সইছে না জামাই?”
আহির বড় এক শ্বাস নিয়ে বলে,”অনেক কিছু হয়ে যাবে মুগ্ধ রানি।আমি ছুঁয়ে দিলে তখন আমার কোনো দোষ নেই।”
“কি করবেন আপনি শুনি।আমিও দেখি কি করতে পারে আফরান আবরাহার আহির।”
আহির মুগ্ধতার কোমড় এক হতে জড়িয়ে ধরে মুগ্ধতাকে গায়ের সাথে লেপ্টে নিয়ে হিসহিসিয়ে বলে,”অনেক কিছুই করতে পারি কিন্তু এইটা পারফেক্ট সময় না।আর তোমার এই রূপ বড়ই মাতাল করে দেয়ার মত মুগ্ধ রানি।”
“হুম হুম ছাড়ুন আমাকে।”, আহির বাঁকা হেঁসে ছেড়ে দেয় মুগ্ধতাকে।
আহির মুগ্ধতার হাত থেকে ঔষধ নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই মুগ্ধতা এগিয়ে গিয়ে আহিরের হাত টেনে নিজের দিকে ফিরিয়ে আহিরের অধরে অধর ছুঁয়ে দিয়ে চট করে সরে এসে বলে,”পরের বার আমাকে আন্ডারেস্টিমেট করবেন না আফরান আবরাহার আহির।”
আহির বাঁকা হেঁসে বলে,”আজ সময় টা ভালো নেই তাই আমিও কিছু করলাম না।কিন্তু বউ তোমার এই রূপ আমাকে পাগল করে দিল।তুলে রাখো এইদিনের
তোমার দেয়া সকল টর্চার সুদে আসলে নিয়ে নিবো।”,বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে যায় আহির।
#copyrightalert
#চলবে।