#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_৩৪
অন্ধকারে দুটো চোখের মত কিছু একটা জ্বলজ্বল করছে,মানুষের ন্যায় কেউ দাড়িয়ে আছে।লায়ানা পিছনে ফিরে তাকিয়ে এহেন দৃশ্য দেখে গলা ফাটিয়ে এক চিৎকার করে উঠবে তখনই এক শক্ত হাত লায়ানার মুখ চেপে ধরে।লায়ানার চোখ রসগোল্লার আকার ধারণ করে।
.
লায়ানার অতি পরিচিত পারফিউমের একটি ঘ্রাণ যেনো বারংবার নাকে ভেসে আসছে কেমন মাতাল করে দিচ্ছে তাকে।কানের কাছে করো ভারি নিশ্বাস ছেড়ে দেয়ার মত এক অনুভূতি হলো লায়ানার।
“হায়া পাখি আমি।”হিসিহিসিয়ে বলা কথাটি কানের একদম কাছে এসে বলতেই লায়ানা বুঝতে পারলো এ আর কেউ না আহনাভ।
আহনাভ লায়ানার মুখ ছেড়ে দিয়ে বলে,”এমন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কী আমার মান ইজ্জত লুটাতে যাচ্ছিলে নাকি?”
লায়ানা মৃদু কন্ঠে বলে উঠে,”তুমি এইভাবে কেনো এসেছো?আমার জান বেরিয়ে আসছিল একটুর জন্য আমি তো মরেই যেতাম।”
আহনাভ লায়ানার ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে বলে,”হিশ।একদম এমন বলবে না তোমার কিছু হওয়ার আগেই যেনো আমার মরণ হয়।”
লায়ানার বুকে গিয়ে বিধলো আহনাভের এহেন কথা।লায়ানা আহনাভকে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে বলে,”এমন বলো না,আমার বুকের ভিতর এক তোলপাড় শুরু হয়ে যায় আহনাভ।”
আহনাভ এক হাতে জড়িয়ে ধরে লায়ানাকে আরেক হাত লায়ানার চুলে ডুবিয়ে দেয়।
লায়ানা মিনমিনিয়ে বলে উঠে,”এই শুনো এই পারফিউম টা আর কখনো দিবে না।”
“কেনো পারফিউমের ঘ্রাণ টা কী ভালো না?”
লায়ানা আবার একই ভাবে মিনমিনিয়ে বলে,”আসলে পারফিউমের ঘ্রাণ টা কেমন মাতাল মাতাল করে দেয় আমাকে।যাইহোক তুমি এলে কী করে?”
আহনাভ ঠোঁট টিপে হাসে।লায়ানাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,”পাখি আগে ছাড়ো আমি লাইট জ্বালিয়ে আসি তারপর বলি।”
লায়ানা আহনাভকে ছেড়ে দিলে আহনাভ গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে লায়ানার কাছে এসে বলে,” জাদু করে এসেছি।”
“আহ বলো না কী করে এলে? বারান্দা টপকে এসেছো?”
আহনাভ লায়ানার চোখের সামনে চলে আসা অবাধ্য চুল গুলো কানের পিছে ঠেলে দিয়ে বলে,”হম,বারান্দা দিয়েই এসেছি।এসেই দেখি ঘরে কেউ নেই,ভিতর থেকে দরজা আটকানো ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার আওয়াজ শুনে বুঝে গিয়েছিলাম তুমি ওয়াশরুমেই আছো,তারপর সুইচ বোর্ডের পাশে পর্দার পিছনে লুকিয়ে ছিলাম।আর জানো আপ্পি গিয়েছে আহিরের কাছে আর আমি এসেছি তোমার কাছে।আপ্পি আর আমার আগেই কথা হয়েছিল।আমি আপ্পির জন্য বাড়ির পিছনের দিকে মই রেখে এসেছি আর আপ্পি আমার জন্য তোমার বারান্দার কাছে রেখে গিয়েছে।”
লায়ানা বিস্ময় কণ্ঠে বলে,”বাবা এত বুদ্ধি।”
আহনাভ পকেট থেকে হলুদের পেকেট বের করে নিজের হাতে লায়ানার দুই গালে হলুদ লেপ্টে দিয়ে দেয়।লায়ানা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আহনাভের দিকে।লায়ানাকে এক হেঁচকা টানে কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে লেপ্টে নিয়ে আহনাভ বলে,”সবার আগে আমার পাখিকে হলুদ লাগানোর হক আমার।তাই এসেছি হলুদ লাগাতে।লায়ানা মুচকি হাসলো,আহনাভের পায়ের উপর পা রেখে দাড়িয়ে গেলো।নিজের গাল আহনাভের গালে ছোঁয়া দিয়ে আহনাভকে হলুদ লাগিয়ে বলল,”আমিও আমার জামাইকে সবার আগেই হলুদ লাগিয়ে দিলাম।”
লায়ানা হুট করেই আহনাভের কপালে,চোখে অধর ছুঁয়ে দিয়ে বলে,”খুব ভালোবাসি তোমাকে।এই আহনাভ টা একান্ত আমার।”
আহনাভ হেঁসে বলে,”কপালে,চোখে চুমু খেলে ঠোঁটে’ও একটা চুমু দাও তাহলে।”
লায়ানা আহনাভকে ধাক্কা দিয়ে তার থেকে সরে এসে বলে,”তুমি যে বাঙালি তার প্রমাণ দিয়ে দিলে।দাঁড়াতে দিলে বসতে দাও বসতে দিলে শুতে দাও কত কী!”
আহনাভ এক পা এক পা করে এগিয়ে এসে আহ্লাদি কণ্ঠে বলে,”শুনো না এইবার ঠোঁটের চুমু টাও দিয়ে দাও না।”
লায়ানা বলে উঠে,”নাহ দিবো না এখন।”
আহনাভ লায়ানাকে ধরতে নিবে সেই মুহূর্তেই লায়ানা ঘরের দরজা খুলে এক দৌড়।আহনাভ ফিক করে হেসে উঠে,আর দাড়ায় না বারান্দায় গিয়ে মই বেয়ে নেমে যায়।
.
মাত্রই আবরাহার বাড়ি থেকে আহির, আহনাভের গা ছোঁয়া হলুদ নিয়ে এসেছে সাহিরাহ,আকাশ,আলিযা, আফ্রা।লায়ানা ও মুগ্ধতাকে স্টেজে নিয়ে বসিয়ে দেয়া হয়েছে।দুজনের পরনে হলুদ রঙের লেহেঙ্গা।
বাড়ির বড়রা এক এক করে হলুদ লাগিয়ে চলে যায়।বাড়ির ছোট’রাও এক এক করে লাগিয়ে গেলে এইবার সাহিরাহ, আলিযা, আফ্রা এসেছে মুগ্ধতা লায়ানাকে হলুদ লাগাতে।
সাহিরাহ প্রথমে দুজন কে হলুদ ছুঁয়ে দিয়ে দুইজনের হাতে দুইটি বক্স ধরিয়ে দিয়ে বলে,”এইযে বউ আর হায়া বউ এই দুইটা গিফট আমার তরফ থেকে।”
লায়ানা,মুগ্ধতা মুচকি হাসে।আলিযা,আফ্রা দুজনকে একসাথে হলুদ লাগিয়ে দেয়।আলিযা, আফ্রা একসাথে বলে উঠে,”আমাদের বউ আর হায়া বউ কে কিন্তু আমাদের ভাই’রা পেয়ে জিতে গেলো।”
তিনজন স্টেজ থেকে নেমে গেলে লায়ানা মুগ্ধতা’কে বলে উঠে,”তুই আজকে জিজুর কাছে গিয়েছিলি?হলুদ লাগিয়েছিস জিজুকে ”
মুগ্ধতা গড় গড় করে সব বলে দেয় লায়ানাকে অতঃপর শেষে বলে উঠে,”মরারটার এত্ত কাছে আসার দরকার কি ছিল?আসছে তো আসছে শরীরে কোনো জামা-কাপড় নেই।শরম লজ্জা নেই বেহায়া সভ্য ও থুরি অসভ্য লোক একটা মেয়ের সামনে এভাবে আসতে লজ্জা করে না হারামি জানি কোথাকার উফফফ আরেকটু হলে আমার কি যে বলব আহ।”
লায়ানার মন চাইছে ভুবন কাঁপানো হাসিতে ফেটে পড়তে।মুগ্ধতা বলে উঠলো,”আহনাভ ভাইয়া এসেছিল কী করলো?”
লায়ানা এক এক করে সব বলে দিল।এখন মুগ্ধতার ইছে করছে ভুবন কাঁপানো হাসিতে ফেটে পড়তে।
.
আহান ফোনে কথা বলে পিছন ফিরতেই থমকে যায়,
শুকনো ঢোক গিলে বলে,”আলিযা তুমি এইখানে?কিছু প্রয়োজন?”
“হুঁ প্রয়োজন তোমাকে।”
আহান বিড়বিড় করে বলে,”ভাবলাম গিয়ে একটু খেয়ে দেয়ে আসি।এই আমার খাওয়া টাইমেই কেনো চলে আসে।ভাই এই তো দেখি আমার খাওয়া আর আমার মাঝে এক বড় সড় কাবাব মে হাড্ডি।”
“কিছু বললে?আচ্ছা বাদ দাও চলো তুমি আর আমি মিলে একটা কাপল ডান্স করি।দেখো সবাই কেমন পারফরমেন্স করছে।”
“নাহ বইন আমি নাচবো না।”
আলিযা আহান এর হাত টেনে স্টেজ নিয়ে দাড়িয়ে গেলে সবাই জিজ্ঞাসু চাহনিতে তাকায়। আলিযা হাতে মাইক নিয়ে বলে,”আমি আর আহান মিলে একটা ডান্স পারফরমেন্স করবো।আর আমি গান টা গাইতে চাই।”
আলিযা শুর তুললো,
~ছেলে তোর নেশা নেশা চোখে
যেন আগুন জ্বলে বুকে,
ওই নেশা নেশা চোখে
যেন আগুন জ্বলে বুকে,
সেই আগুনে পুড়তে আমার ভাল্লাগে,
সেই আগুনে পুড়তে আমার ভাল্লাগে।~
আহান চোখ রসগোল্লার মত করে বলে উঠে,”মাইয়া কয় কী!আমার চোখে নেশা আসবো কোন জায়গা থেকে আমি নেশা ফেশা করি না ভাই আমি কোনো নেশা খোর না!
~ছেলে তোর কোকড়া কোকড়া চুলে
যেন সমুদ্র ঢেউ খেলে,
তোর কোকড়া কোকড়া চুলে
যেনো সমুদ্র ঢেউ খেলে
সেই ঢেউ খেলা দেখিতে আমার ভাল্লাগে,
সেই ঢেউ খেলা দেখিতে আমার ভাল্লাগে। ~
আহির বিড়বিড় করে বলে উঠে,”আমার কাউয়ার বাসার চুল করো আবার এত ভালো লাগে বাহ বাহ বাহ!”
~ছেলে তোর গোলাপ গোলাপ ঠোঁটে
যখন বিড়ির ধোঁয়া ওঠে
তোর গোলাপ গোলাপ ঠোঁটে
যখন বিড়ির ধোয়া ওঠে,~
আহির পুনরায় বিড়বিড় করে বলে উঠে,” আস্তাগফিরুল্লাহ মাগো মা আমি বিড়ি জীবনে ছুঁয়েও দেখি নাই এই মাইয়া বলে কী!”
~সেই ধোঁয়া দেখিতে বড়ই ভাল্লাগে,
সেই ধোয়া দেখিতে বড়ই ভাল্লাগে,
সেই ধোঁয়া দেখিতে আমার ভাল্লাগে,~
আহান স্টেজ থেকে নেমে যেতে নিলে আলিযা আহানের হাত ধরে শেষ শুর তুলে নিজেই বলে,”আমার পুরোটাই আপনাকে ভালো লাগে।”
আহান চোখ বড় বড় করে বলে উঠে,”এই মাইয়া আমার মান ইজ্জত খাইয়া দিলো!”
……
আজ মুগ্ধতা,আহির, আহনাভ, লায়ানার বিয়ের অনুষ্ঠান এক ওয়েডিং ভেনিউ’তে করা হবে।
ওয়েডিং ভেনিউ তে এসেও রুমে গিয়ে লায়ানা ঘুমে ঝিমোচ্ছে।কাল হলুদের অনুষ্ঠান দেরি করে শেষ হওয়ায় ঘুম ভালো করে হয়নি।মুগ্ধতা,লায়ানাকে মেকআপ আর্টিস্ট সাজাতে চলে আসে।
.
দুজনের সাজ শেষ,মাথায় চুনরি পড়া বাকি।মুগ্ধতার পরনে জ্যাসবেরি জ্যাম রঙের ভারী কাজের মধ্যে লেহেঙ্গা আর লায়ানার পরনে ডিপ মেজেন্টা রঙের মধ্যে লেহেঙ্গা।দুজনের মুখে ভালোই প্রসাধনীর ছোঁয়া,গলায় ভারী নেকলেস,কানে দুল,হাতে লেহেঙ্গা রঙের সাথে মিলিয়ে মুঠ ভর্তি চুড়ি।
ইয়াশা রুমের দরজা ঠেলে ভীতরে ঢুকে এগিয়ে যায়। লায়ানা,মুগ্ধতা দাড়িয়ে গেলে ইয়াশা দুইজন কে দুই বাহুতে জরিয়ে ধরে বলে, “মাশাল্লাহ আমার দুই মেয়ে কে খুব সুন্দর লাগছে”,থেমে গিয়ে ইয়াশা আবার বলে,”আজকে আমার বাড়িটা আবারো আগের মতো খালি হয়ে যাবে। আমার বাড়ির বড় লক্ষীগুলো চলে যাবে।”
ইয়াশা কিছুক্ষন দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,”শুন তোরা দুজন একদম আমার ছেলে দুটো কে জ্বালাবি না।ওরা খুব ভদ্র ওদের বিরক্ত করবি না।
মুগ্ধতা ইয়াশার থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে বলে,”আম্মা তোমার মনে হয় তোমার মেয়ে কাউকে বিরক্ত করতে পারে।হেহ আমি অনেক ভদ্র আমি কাউকে জ্বালাই না।
ইয়াশা বলে,”হুম হুম জানি কত্তটা ভদ্র তুই আর কাউকে জ্বালাস না যে তাও জানি তুই যে ছোটো থেকে সবাই কে যে মারা মেরেছিস খালি হাত নাড়াস ভুলেও আহির বাবার গায়ে হাত তুলবি না।
মুগ্ধতা বলে,”আচ্ছা আম্মু পারমিশন দিয়েছে বুঝেছিস হায়া। গায়ে হাত তুলতে মানা করেছে আমি পা তুলব উম্মাহ মাম্মাহ।”
লায়ানা হেঁসে বলে,”আর আমি পুরোই নিষ্পাপ আমার দ্বারা কাউকে জ্বালানো ইম্পসিবল।”
“হুম তুই তো তাও কমই জ্বালাস সবাই কে একটু ভদ্র আছিস।”
লায়ানা ইয়াশা’কে জড়িয়ে ধরে বলে,” আহ তুমি বুঝলে তাহলে।”
হম ছার তোদের চুনরি’টা পড়িয়ে দি।ইয়াশা দুজনকে চুনরি পরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে যায়।
.
হঠাৎ ‘জামাই চলে এসেছে’ কথাটি কানে ভেসে আসতেই লায়ানা,মুগ্ধতা ছুটে বারান্দায় চলে যায়।বারান্দা থেকে ওয়েডিং ভেনিউ’র সামনের দিকটি খুব ভালো করে দেখা যায়।ফুল দিয়ে সজ্জিত দুইটি কালো গাড়ি তার পিছনে অনেকগুলো বাইক।বাইকে বসে থাকা প্রত্যেকের হাতে একেক রঙের স্মোক বম্ব।
লায়ানা,মুগ্ধতা দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে হেঁসেই লেহেঙ্গা ধরে দৌড়।
আহির,আহনাভ গাড়ি থেকে বেরিয়ে ওয়েডিং ভেনিউর দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে আছে কেউ তাদের ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছে না এক তর্ক বিতর্ক লেগে গিয়েছে সকলের মধ্যে।
.
দুজন নিচে এসে দেখে ওয়েডিং ভেনিউ’র দরজার সামনে ভিড়।দুজন ভিড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যায় ওদের দেখেই সাথে সাথে দরজায় দাড়িয়ে থাকা সবাই চুপ হয়ে যায়।আহির,আহনাভ লায়ানা,মুগ্ধতাকে দেখেই বুকে হাত দিয়ে ‘হায়’ বলেই পড়ে যেতে নেয় আর পিছনে তার বন্ধুরা ধরে ফেলে দুজনকে।
লায়ানা মুচকি হাসে।মুগ্ধতা আহিরের দিকে তাকিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে মুচকি হাঁসে অতঃপর আহনাভের দিকে তাকিয়ে বলে,”ভাইয়া আমার বোনকে যখন নিতে এসেছেন এইবার শালা-শালিকাদের ফিস টা দিয়ে দেন।”
লায়ানা আহিরের দিকে তাকিয়ে বলে,” জি জিজু ফিস দিয়ে দিন আপনার এই শালা – শালীকা কে।”
আহির,আহনাভ এক সাথে বলে উঠে,”বউ নিতে আবার কিসের টাকা!”
মুগ্ধতা বলে,””বউ কি ফ্রি ফ্রি দিয়ে দিবো নাকি হ্যা?আগে টাকা দিন তারপর বউ নাহলে আপনাদের আজকের রাত আমি আমার জন্য মজাদার করে ফেলব বেশি কিছু না বিভিন্ন জায়গায় বো’ম রেখে দিবো।আমার কাছে রেডি আছে আমরা যাওয়ার আগেই সব সেট হয়ে যাবে।আজকে আর কপালে শান্তির ঘুমও হবে না।”
আহির আর আহনাভ এহেন কথা শুনে তাদের মুখ হা হয়ে যায়।দুজন এক সাথে বলে উঠে,” কত টাকা দিতে হবে?”
মুগ্ধতা লায়না একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে একসাথে বলে,” এই বেশি না জাস্ট তেরো লক্ষ।”
আহির বলে উঠে,”এত কেনো?”
আহিরের বাবা বলে উঠে,”এই বজ্জাত ছেলে তুই এত হার কিপ্টা কী করে?একজন হৃদরোগ বিভাগের ডাক্তাররা লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করে আর তুই কিনা কিপ্টামি করছিস তাও আমার ছেলে হয়ে?”
আহির ঘাড় কাত করে বলে,”তাহলে আমার বাবা তুমি টাকা টা দিয়ে দাও।”
“আমি বিয়ে করতে আসিনি তুই বিয়ে করবি দে টাকা।”
“বাবা আমার পকেট ফাঁকা কী করে দেই টাকা।”
আহিরের বাবা মুচকি হেসে বলে,”তোর সাইন টা আমি কিন্তু নকল করতে পারি বাবা কি বলিস ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আনি।”
“তুমি ছেলের টাকায় নজর দিচ্ছ?”
“তুই চাইলে আমি তোর একাউন্টের সব টাকা ডাকাতি করতে রাজি আছি। এইটাতো আমার একটা ড্রিম বলতে গেলে তোর ব্যাংকের টাকা ডাকাতি করা।কী বলিস করবো?”
আহির তার বাবার পাশ ঘেঁষে ফিসফিস করে বলে,”আমারও সময় আসবে দেখে নিও।ওই পাশের বাসার খালা যে তোমায় দেখে চোখ মারে মা কে বলে দিবো।”আহিরের বাবা মিনমিনিয়ে বলে,”ঝোপ বুঝে কোপ মেরে দিয়েছে।”
আহির সরে এসে নওশাদ এর দিকে তাকিয়ে বলে,” নওশাদ আর আরগিউমেন্ট করতে চাই না তুমি আমার ব্যাংক থেকে হায়াতির ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার করে দাও।”
আহনাভ তমালকে বলে উঠে,”আমার তো আজ বিয়ে করে বউ নিয়েই যেতে হবে ঝগড়া করে আর কী করবো তুমিও আমার ব্যাংক থেকে আপ্পির ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার করে দাও।”
মুগ্ধতার মামার মেয়ে ট্রে করে জুসের গ্লাস এনে মুগ্ধতার হাতে ধরিয়ে দিলে মুগ্ধতা বলে উঠে,”এই নিন আপনাদের জন্য স্পেশাল জুস।”
আহির, আহনাভ দুজন দুই গ্লাস নিয়ে মুখে দিতেই তাদের মুখভঙ্গি দেখার মত হয়ে ওঠে। আহির চোখ মুখ কুচকে বলে উঠে,”ইশ এইটা জুস নাকি আদা রসুনের শরবত।”
আহনাভ বলে উঠে,”জুসে মনে হয় মরিচ বেটে ঢেলে দিয়েছে।এমন কেন?”
মুগ্ধতা,লায়ানা হো হো করে হেঁসে উঠে।
.
আহির,মুগ্ধতাকে এক পাশে বসানো হয়েছে আরেক পাশে আহনাভ,লায়ানাকে।
.
স্টেজে উঠে মুগ্ধতার বাড়ির সব কচিকাঁচার দল ডান্স পারফরমেন্স করেছে।আহান তো এখনও চিপায় গিয়ে লুকিয়ে আছে আলিযার ভয়ে।
.
আহির মুগ্ধতার পাশ ঘেঁষে ফিসফিসিয়ে বলে,”এইযে বউ আজ তোমার হাজব্যান্ড কে কেমন লাগছে বললে না।”
মুগ্ধতা এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। আহির আবার একই কথা বলে উঠলে মুগ্ধতা বিড়বিড় করে বলে,”গোল্ডেন শেওয়ানি পরে এমন কিলার লুক করে আমাকে কয়েক দফা হার্ট এ্যাটাক দিয়ে এখন বলছে কেমন লাগছে তাকে।”
আহির ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,” কী বলছো শুনছি না।”
“শুনা লাগবে না আপনার।”
.
আহনাভ লায়ানার হাত শক্ত করে ধরে বলে,”এইভাবে মরিচের শরবত খাওয়ানো টা আমি সুদে আসলে আজ নিয়ে নিবো তোমার থেকে।”
লায়ানা আড় চোখে তাকালো।আহনাভ আরেকটু গা ঘেঁষে বলে,”আজ এমন মারাত্মক ভাবে সেজে আমাকে কী মেরে ফেলার চিন্তা করেছিলে?”
লায়ানা মুচকি হাসলো।আহনাভের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,”তুমি তো এই সাদা শেরওয়ানির তে মারাত্মক সুদর্শন সেজে এসেছো,আমি তো এই অব্দি কয়েকবার ঘায়েল হয়ে গিয়েছি এই সুদর্শন পুরুষের রূপে।”
.
একটি বৃদ্ধ লোককে সামনে এনে বসিয়ে দিলে আহনাভ,লায়ানা চুপ হয়ে যায়। বৃদ্ধ লোকটি বলে, “এইযে বউ বলো তো আলহামদুলিল্লাহ কবুল।”
লায়ানা আহনাভের মুখ পানে তাকিয়ে এক নিশ্বাসে তিনবার কবুল বলে ফেলে।সবাই এক সাথে বলে,”আলহামদুলিল্লাহ।”
আহনাভের বন্ধু মহলের সকলে এক সাথে বলে উঠে,”ওয় হয় আহনাভ তুই তো জিতে গেলি ভাই।”
লায়ানা ঠোঁট টিপে হাসলো।
বৃদ্ধ লোকটি আহনাভের দিকে তাকিয়ে বলে,”বাবা বলো আলহামদুলিল্লাহ কবুল।”
আহনাভ লায়ানার দিকে তাকিয়ে প্রসন্ন হেসে তিনবার বলে দিলো,”আলহামদুলিল্লাহ কবুল।”
সামনে বসে থাকা লোকটি বলে উঠলো,”আলহামদুলিল্লাহ।”তারপর একটি কাগজ এগিয়ে দিল।লায়ানা সাইন করে আহনাভের হাতে দিয়ে ফিসফিস করে বলে,”মা’ফি’য়া’র জামাই হতে যাচ্ছেন আহনাভ মশাই।”
আহনাভ সাইন করলো নিঃশব্দে হাসলো,ফিসফিস করে বলল,”এই মা’ফি’য়া লেডিকে আমার করে নিলাম।
.
বৃদ্ধ লোকটি মুগ্ধতা, আহিরের দিকে ফিরে বলে,”বাবা বলো আলহামদুলিল্লাহ কবুল।”
আহির সেই আকদের দিনের মত গড় গড় করে বলে দিলো কবুল।আহিরের বন্ধু মহল বলে উঠলো,”আমাদের আহিরের খুব তাড়া বুঝলি সবাই।”
বৃদ্ধ লোকটি হাঁসলো অতঃপর মুগ্ধতাকে কবুল বলতে বললে মুগ্ধতা ধীরে ধীরে কবুল বলে দিল।দুজনের সামনে কাগজ কলম এগিয়ে দিলো লোকটি।মুগ্ধতা সাইন করে আহিরের হাতে দিলে আহির সাইন করে বলে উঠে,” আহ এইবার আমার বউ আমার।”
সকলে ফিক করে হেঁসে উঠলো।
.
আহান ভেনিউর শেষ মাথায় কর্নারে বসে তিন প্লেট পোলাও শাবার করে ফেলেছে আরেক প্লেট নিতে যাবে পিছন থেকে মেয়েলী কণ্ঠে ভেসে আসে,”তুমি এত খেতে পারো আহাইন্না?পুরো ভেনিউ খুঁজে তোমাকে পেলাম না তুমি এই চিপায় বসে তিন প্লেট শেষ কিভাবে করলে?”
আহান চোখ বন্ধ করে বড় এক নিশ্বাস ছেরে পিছন ফিরে বলে উঠে,” আরেহ আলিযা তুমি বইন এইখানে কী করো?”
আলিযা আহান এর পাশে এসে বসে বলে,”কী আর তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে এইখানে এসেছি আর দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখলাম কী খাওয়া টাই না খাচ্ছ।”
আহান পানি খেয়ে বলে,” আমার খাবারে একদম নজর দিবে না।আমি আমার খাবার কে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।খাবার আমার হার্ট আমার জান আমার ভালোবাসা”
আলিযা ঠোঁট উল্টে বলে,”ওহ তাহলে আমি কি?”
আহান এর কাশি উঠে যায় আলিযা আহান কে পানি খাইয়ে বলে,” ঠিক আছো আহাইন্না।”
আহান কাশতে কাশতে বলে,”দেখো বইন তুমি আমার থেকে দূরে থাকো তুমি আমার সামনে আসলে আমার সব উলোট পালোট হয়ে যায়।”,বলেই উঠে বড় বড় পায়ে হেঁটে চলে গেলো আহান।
#copyrightalert
#চলবে।