ডুবেছি_আমি_তোমাতে #Aiza_islam_Hayati #পর্ব_৩৭

0
180

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_৩৭
স্টেজের পিছন সজ্জিত আয়না মুহূর্তের মাঝে বি’ক’ট শব্দে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়।পুরো গার্ডেন এক নিস্তব্ধতায় ছেয়ে যায়।

লায়ানা আহনাভ এর কপালে লাল রঙের লাইট দেখে আর সময় নষ্ট না করে বসা থেকে উঠে আহনাভকে এক টানে সরিয়ে আনে।আহনাভকে সরিয়ে আনতেই আয়নাটি বিকট শব্দে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়।লায়ানা আহনাভের হাত শক্ত করে ধরে ভেঙে যাওয়া আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে।

আহনাভ বিস্মিত কন্ঠে বলে,”কী হলো!”

লায়ানা স্থির দৃষ্টিতে ভাঙ্গা আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমাকে কেউ টা’র্গে’ট করেছিল আহনাভ।আজ তোমাকে সরিয়ে না আনলে।”লায়ানা থেমে যায় পুনরায় বলে,”তোমাকে সরিয়ে আনায় গু’লি গিয়ে ওই আয়নায় লাগে। আই এম সরি আহনাভ আমার জন্য হয়তো তোমাকে কেউ টা’র্গে’ট করেছে।”

আহনাভ এক হাতে লায়ানাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”কিসের সরি,তোমার জীবনের সাথে জড়িয়েছি একটু ঝুঁকি নিতেই হয়।”

আহনাভ লায়ানাকে ছেড়ে পাশ থেকে মাইক নিয়ে বলে,”আপনারা ভ’য় পাবেন না।আয়নাটা কেনো এইভাবে ভেঙে গেলো আমরা সঠিক জানিনা।প্লিজ
আপনারা পার্টি এনজয় করুন।”
.
মুগ্ধতা ভাঙা আয়না গুলোর দিকে এগিয়ে যায়।ভাঙা আয়নার মাঝে পড়ে থাকা বু’লে’ট চোখে পড়তেই তুলে নিয়ে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বলে,”ওহ এই ব্যাপার!”মুগ্ধতা বু’লে’ট’টি ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল।

রুদ্র মুগ্ধতার পাশে এসে দাঁড়ায়।মুগ্ধতা রুদ্রকে বলে উঠে,”কি করতে হবে বুঝতেই পারছো?যাও ফাস্ট।যে কাজটা করেছে এত দ্রুত বের হতে পারবে না।ওকে দ্রুত খুজো ওকে খুজে না পেলে তোমার খবর আছে রুদ্র।”

রুদ্র সাথে সাথে বড় বড় পায়ে স্টেজ থেকে নেমে রাফিকে নিয়ে সদর দরজা পেরিয়ে আবরাহার বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।

.
অনুষ্ঠান শেষ হলো, মুগ্ধতার পুরো পরিবারের সাথে মুগ্ধতা,আহির আহনাভ, লায়ানা মুগ্ধতাদের বাড়ি যাবে।সকলে গাড়িতে উঠে বসলে এক এক করে সব গুলো গাড়ি আবরাহার ম্যানশন থেকে বেরিয়ে যায়।

আহির গাড়ি চালানোতে মনোযোগ রেখে বলে উঠে, “আমার এখনও সন্দেহ হচ্ছে মুগ্ধ রানি হঠাৎ আয়না টা এইভাবে ভাঙলো কী করে?”

“কিরে ভাই এখানে সন্দেহের কি আছে?আমি তো মাত্রই ভললাম কারো ভুলের কারনে হয়তো ভেঙেছে। কিছুদিন পর দেখা যাবে আপনি বলবেন মুগ্ধরানি আমার তোমার উপরে সন্দেহ হচ্ছে।”

আহির ভ্রু কুঁচকে তাকালো কিছু বলার রাখলো না মুগ্ধতা।
.
ঠিক এক ঘন্টা পর গাড়ি এসে থামলো মুগ্ধতাদের বাড়ির সামনে।লায়ানা চোখ খুলে তাকালো গাড়ি থেকে বেরিয়ে ধীর পায়ে বাড়ির ভিতর চলে গেলো।আহনাভ গাড়ি থেকে বেরিয়ে লায়ানার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।পুরো রাস্তা জুড়ে লায়ানা চুপ ছিলো,চোখ বন্ধ করে সিটে গা এলিয়ে দিয়ে ছিল আহনাভ শুধু লায়ানার ওই মুখ পানেই তাকিয়ে ছিল।
.
লায়ানা বাড়ির ভিতর ঢুকেই নিজের ঘরে চলে গিয়েছে।ইয়াশা মুগ্ধতার কাছে এগিয়ে এসে বলে,”কিছু হয়েছেরে মেয়েটার?”

“আম্মু ওর হয়তো শরীর টা ভালো লাগছে না।”

“হম অনেক ধকল গিয়েছে যা আহিরকে নিয়ে ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।”ইয়াশা আহনাভের দিকে তাকিয়ে বলে,”বাবা তুমিও ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।”

.
আহনাভ লায়ানার ঘরের ভিতর প্রবেশ করতেই পুরো ঘরে চোখ বুলিয়েও ঘরে লায়ানাকে দেখতে পায় না,ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ পেতেই আহনাভ সস্তির নিশ্বাস ছাড়ে।দরজা আটকে দিয়ে এগিয়ে গিয়ে বিছনায় পা ঝুলিয়ে বসে পড়ে আহনাভ।
.
আধ ঘণ্টা পর লায়ানা বেরিয়ে আসে ওয়াশরুম থেকে।লায়ানার পরনে কালো রঙের চুড়িদার,মুখটি কেমন মলিন হয়ে আছে,চুল থেকে তার টিপটিপ করে পানি ফ্লোরে গড়িয়ে পড়ছে।

আহনাভ কিছু বলার আগেই লায়ানা মৃদু কন্ঠে বলে,” ফ্রেশ হয়ে আসো।”,বলেই আর দাড়ায় না আহনাভের হাতে তাওয়াল ধরিয়ে দিয়ে বারান্দায় চলে যায় লায়ানা।আহনাভ কিছু বলল না ফ্রেশ হতে চলে গেলো।

.
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আহনাভ কাঁধে তাওয়াল ঝুলিয়ে বারান্দায় এসে লায়ানার পিছন গিয়ে দাঁড়ালো,লায়ানা দোলনায় বসে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে।আহনাভ কাঁধ থেকে তাওয়াল নামিয়ে লায়ানার চুল মুছে দিতে দিতে বলে,”চুল ভালো করে কেনো মুছো না পাখি?এমন করলে ঠান্ডা লাগবে তো?আমার জানা মতে তোমার তো ঠান্ডার সমস্যা আছে তার উপর মাথা ব্যাথার।কেনো নিজের যত্ন নাও না?”

লায়ানা প্রতুত্তরে কিছুই বলল না।আহনাভ লায়ানার চুল মুছে দিয়ে পাশে গিয়ে বসলো এক হাতে লায়ানাকে বুকে আগলে নিয়ে বলল,”কী হয়েছে আমার পাখির?এমন চুপ করে কেনো আছে সে?আমার যে বুকের ভিতরে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তার এমন মৌনতা দেখে।”

লায়ানা আহনাভের টি শার্ট খামচে ধরে ভেজা কণ্ঠে শুধায়,”আহনাভ আমার উচিত হয়নি তোমার জীবনে আসা।আমাকে ক্ষমা করে দাও আহনাভ আমার জন্য তোমাকে আজ মা’র’তে চাইছিলো ওই
জা’নো’য়া’র’রা।এখন ওরা তোমার ক্ষ’তি করার জন্য উঠে পড়ে লাগবে যে।তোমার কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না আহনাভ,আমি মরে যাবো।”

আহনাভ লায়ানাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,”এমন কথা আর বলবে না।আমার জীবনে আসা কেনো ভুল হতে যাবে।তুমি আমার জীবনে না আসলে আমি আমার শ্যামবতীকে কী করে পেতাম,আমার ভালোবাসার উম্মাদনায় মত্ত হায়া কে কোথায় পেতাম আমি।আমার বন্ধুরা বিয়েতে বলেছিল আহনাভ তুই জিতে গিয়েছিস তোমার মনে আছে,আমি কিন্তু জিতেছি হায়াতি আহমেদ লায়ানাকে পেয়ে।”

“কিন্তু আহনাভ।”

“কোনো কিন্তু না।তুমি আমার পাশে থাকলেই চলবে পাখি,এইসব নিয়ে ভেবো না একদম।মা’ফি’য়া লেডি যে এত ভী’তু আমি তো ভাবিনি কখনো।”

লায়ানা আহনাভের বুকে মাথা গুঁজে বলে,” মা’ফি’য়া দের কী মন নেই?আমি আমার ভালোবাসার মানুষ গুলো কে নিয়ে খুব চিন্তায় থাকি আহনাভ।আমার জীবনে মুগ্ধতা আর আহান এর উপর কম আ’ঘা’ত পড়েনি আমাকে বাঁচাতে গিয়ে।”

“আচ্ছা পাখি মুগ্ধ আপ্পিও তো মাফিয়া লেডি?আপ্পিকে কখনো এতটাও মা’র’পি’ট করতে দেখিনি।তুমি শাড়ি পরে ওইদিন ওই ছেলেগুলোকে কি করে মা’র’লে আমি তো অবাক এর শেষ সীমানায় চলে গিয়েছিলাম।”

“হম।আর বনু চুপ করে থাকলেও সে যে এক ভ’য়া’ন’ক মা’ফি’য়া লেডি।যদি সে রেগে যায় ওই লোককে পাতাল থেকে হলেও খুঁজে বের করে আনবে,তার ভ’য়’ঙ্ক’র মৃ’ত্যু অনিবার্য।তখন আমি নিজেও মুগ্ধতাকে আটকাতে পারি না।এমন অনেক আছে,আমার এক বিজনেস ম্যান এর সাথে ডিল হয়েছিল একটা প্রজেক্টে,ওই প্রজেক্টই ছিল আমার মৃ’ত্যু ফাঁ’দ।আমাকে আগুনে পুড়িয়ে মা’র’তে চেয়েছিল ওরা ভাগ্যিস সেইদিন কপাল করে আল্লাহ আহান কে পাঠিয়েছিল নাহলে তো এই লায়ানা ওইদিনই আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যেত।এরপর আমাকে দুই থেকে তিন সপ্তাহ আই সিউ তে রাখা হয়।আমাকে মারতে চাওয়া লোককে মুগ্ধতা ওইদিনই চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে খুঁজে বের করে ওকে এমন শা’স্তি দেয় যা দেখে যে কারো রু’হ কেঁ’পে উঠবে।আমি যত মিশনে গিয়েছি মুগ্ধতার একই কথা তুই ঠিক থাকলেই হবে আগে নিজেকে ঠিক রাখবি তারপর সব কিছু নাহয় আমি সব ত’ছ’ন’ছ করে ফেলবো লায়ানা।তাও প্রতিটা সময় নিজের জীবনের ঝুঁ’কি রেখে কত মানুষকে বাঁচিয়েছি আর বাড়ি এসে বনুর ব’কা খেয়েছি।”

“আমি ভাবছি আহিরের কথা ও তো জানেই না আপ্পি মাফিয়া।আমার ভাই এইভাবে হাঁসি খুশি হলেও রেগে গেলে সে চুপ হয়ে যায় কথা বন্ধ করে দেয়।আপ্পিকে তুমি বলে দিও যেনো আহির কে খুব তাড়াতাড়ি সব বুঝিয়ে বলে দেয়।”,আহনাভ থেমে গিয়ে লায়ানাকে পাজা কোলে নিয়ে বলে,”চোখের পানি মুছে ফেলো পাখি,এখন আর উল্টো পাল্টা ভাববে না।আমি তো এখন আমার বউকে আদর করবো।”

লায়ানা চেঁচিয়ে বলে উঠে,”একদম না নামাও আমাকে নাহলে কিন্তু।”

আহনাভ লায়ানাকে নিয়ে ঘরে এসে বিছনায় শুয়ে দিয়ে নিজে লায়ানার পাশে শুয়ে জাপটে জড়িয়ে ধরে বলে,”বিয়ের আগে কী রোম্যান্টিক ছিল আমার বউটা এখন এমন কেন হয়ে গেলো বুঝতে পারছি না।”

লায়ানা ভ্রু কুঁচকে তাকালো অতঃপর আর কিছু না বলে আহনাভের বুকে মুখ গুজে বলে,”তুমি বড্ডো অ’স’ভ্য আহনাভ।”

আহনাভ লায়ানার গলায় মুখ গুঁজে বলে,”বউয়ের কাছে অ’স’ভ্য হওয়াই যায়।”

.
মুগ্ধতা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আহিরকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলে।আহির ওয়াশরুমে চলে যাওয়ার পরই মুগ্ধতা নিজের ফোন নিয়ে সোজা ছাদে চলে আসে।রুদ্রর নাম্বার ডায়াল করে রুদ্রকে ফোন করে করতেই রুদ্র রিসিভ করে।মুগ্ধতা বলে,”রুদ্র ওকে পেয়েছো?আমার ওকে চাই রুদ্র।আমার ওকে চাই ড্যাম ইট।”

“ম্যাম ওকে আমরা সেখান থেকে বের হওয়ার কিচ্ছুক্ষন পরই পেয়ে যাই।এখন ওকে একটা গোডাউনে রাখা হয়েছে।আর ম্যাম রাফি ওর বিষয়ে সব ইনফরমেশন বের করেছে ও বাংলাদেশে এসেছে কিছুদিন হয়েছে,এই অব্দি অসংখ্য খু’ন ক’রে’ছে।এখন ওকে কি করবো ম্যাম?

“কি করবে মানে সাহেব কে চা-নাস্তা এনে খাওয়াও।”

রুদ্র বলে,”ম্যাম!”

“প্রশ্ন কেন করছো?কিসের প্রশ্ন ওকে কি মুখে তুলে চা-নাস্তা খাওয়াবে নাকি?ওর কারনে আজ আমার বোন ব্যাথা পেত আল্লাহর রহমতে পায়নি।আল্লাহ মাফ করুক ভাইয়ার কিছু হয়ে যেত?রুদ্র ওকে যেভাবে ইচ্ছে সেইভাবেই ওর মুখ থেকে কথা বের করো।কে এর পিছনে আছে।এত জিম করে এই বডি বানিয়েছো অন্তত এই কাজটা করো আমি জানি তুমি পারবে।আমার যেন আসতে না হয়।”,বলেই মুগ্ধতা ফোন কেটে দেয়।

“শা’লা’র হা’রা’ম’জা’দা যেই এর পিছনে আছে আমি ওর জী’ব’নে শা’ন্তি রাখব না।যে জিনিসের কারনে ও এমন করছে সেটা পেতেই দিব না কখনো।তোকে আমি পেয়ে নেই তারপর তোর সুখ আমি কি করে কে’ড়ে নেই তুই বুঝেও উঠতে পারবি না।তোর সাহস কি করে হয় তুই আমার বোনের দিকে নজর দিস ওকে মা’রা’র চেষ্টা করিস তোর চো’খ আমি জী’ব’ন্ত অবস্থায় উ’প’ড়ে ফে’ল’ব নিজ হাতে শুধু সময়ের অপেক্ষা”,বিড়বিড় করে কথাগুলো বলছিল মুগ্ধতা।

“মুগ্ধ রানি কী করছো এইখানে?আমি তোমাকে ঘরে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে এইখানে চলে আসলাম।”,বলেই আহির এগিয়ে মুগ্ধতার পাশে এসে দাড়ালো।

“ওহ আপনি,আসলে এভাবেই এসেছিলাম।ছাদ কে মিস করছিলাম সেটাই দেখতে আসা।আমার ছাদ বারান্দা এই দুটো জিনিস খুব ভালো লাগে। তাই সময় পেলেই চলে আসি।যেমন এখন আসলাম।”

আহির আকাশ পানে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে,”তাহলে চলো বউ।আজ আমরা নাহয় চন্দ্র বিলাস করি।তোমাদের ছাদে নিশ্চয় বসার জায়গা আছে।”

“হুম আম্মুর দোলনা খুব পছন্দ তাই ওই পাশে খুব বড় দোলনা লাগানো আপনি চাইলে ঘুমাতেও পারবেন।”

“ওহ ভালোই হয়েছে তাহলে,মা কে একটা বিগ থ্যাংক ইউ।চলো তাহলে।”

.
মুগ্ধতা আহির কে নিয়ে দোলনার কাছে যায়।দুজন একসাথে দোলনায় পাশাপাশি বসে পড়ে।মুগ্ধতা বলে উঠে,”আপনার ছাদ দোলনা এগুলো ভালো লাগে?

“হম অনেক ভালো লাগে।তুমি তো দেখেছই আমার বারান্দায় কত বড় দোলনা।আমি যখন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতাম বারান্দায় বসে এমন চন্দ্র বিলাস করতাম।”

মুগ্ধতা আহিরের হাত জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রেখে বলে,”হুম খুব ভালো।আমারও খুব ভালো লাগে এমন খোলা আকাশের নিচে বসে চাঁদ দেখতে।”

“জানো মুগ্ধ রানি এই চাঁদ আমার খুব প্রিয় সবাই তার প্রিয় মানুষকে চাঁদের সঙ্গে তুলনা করে কিন্তু আমি করবো না।আমি বলবো তুমি আমার জীবনের এক অনন্য নক্ষত্র যাকে শুধুমাত্র এই আহির মন ভরে দেখতে পায়।”

“ওয়াহ ভালোই তো বলতে পারেন আহির সাহেব।এত বেশি বলা ভাল না।আমিও কখনো আমার প্রিয় মানুষ কে চাঁদের মতো ভাবি না।কারন আমার চাঁদ মামা থেকে তারা বেশি পছন্দ।রাতের বেলা আমার আকাশের তারা গুনতে খুব ভালো লাগে।আকাশে তারার সংখ্যা অনেক গুলো হলে আমি খুব বেশি খুশি হয়ে যাই।”

“ওহ তাই বুঝি।আজ তো আকাশ ভোরে তারা রয়েছে চলো দুজন মিলে তারা গুনা যাক।”

মুগ্ধতা ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো অতঃপর আকাশ পানে তাকিয়ে তারা গুনা শুরু করলো।আহির এক হাতে মুগ্ধতাকে আগলে মুগ্ধতার মুখ পানে তাকিয়ে রইলো।

…..
সূর্যের আলো সরাসরি চোখে এসে পড়তেই মুগ্ধতা চোখ খুলে তাকালো,নিজেকে ছাদের দোলনায়, আহিরের বুকে আবিষ্কার করলো।সাথে সাথে মনে পড়লো কাল রাতে দুজন এইখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিল,মুগ্ধতা উঠে দাড়িয়ে আহিরকে মৃদু কন্ঠে ডাকা শুরু করলো।আহির তাকিয়ে আশপাশ দেখে বলে,”আমরা এইখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।”

“হম চলুন ঘরে চলুন ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে হবে।”

.
আহির,মুগ্ধতা ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বসার ঘরে চলে আসে।দুজন টেবিলের কাছে যেতেই দেখে আহনাভ অসহায় মানুষের মত মুখ বানিয়ে টেবিলে বসে আছে তার সামনে টেবিল ভর্তি নাস্তা আর লায়ানা আহনাভের পাশে বসে ঘুমে ঝিমোচ্ছে।

মুগ্ধতা চেয়ার টেনে বসে বলে,”এই তোর ঘুম হয়নি নাকি এইভাবে ফার্মের মুরগির মত ঝিমোচ্ছিস কেনো?”

লায়ানা আহনাভের দিকে কটমট চাহনিতে তাকিয়ে মৃদু কণ্ঠেই বলে,”এই অসভ্য লোক ঘুমাতে দিলে তবে তো ঘুমাবো,মন তো চাইছে তুলে কয়কেটা আছার মারি।বিয়ের আগের জীবন ভালো ছিল ভাই কী জম্পেশ ঘুম টাই না ঘুমাতাম আমি।”

মুগ্ধতা ঠোঁট টিপে হাসে।আহনাভ তো কোনো কথায় কান না দিয়ে অসহায়ের মত এত খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে।ইয়াশা মাংসের বাটি টেবিলে রেখে আহিরের দিকে তাকিয়ে বলে,”বাবা দাড়িয়ে আছো কেনো বসো।আর এই সব খাবার তুমি আর আহনাভ মিলে শেষ করবে তাড়াতাড়ি করে।”

আহির বিস্ফোরিত চাহনি নিক্ষেপ করে টেবিলে রাখা এত খাবারের দিকে অতঃপর জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,”মা আমার এই ছোট পেটে আপনি তো পুরো খেলার স্টেডিয়াম ঢুকিয়ে দিতে চাইছেন।”

ইয়াশা হেঁসে বলে,”এইটা তো কম।খেতে বসো আরো আসছে।”

আহির ধীর পায়ে এগিয়ে চেয়ার টেনে বসে ফিসফিস করে বলে,”বউ এত খাবার খেলে আমি তো ব্লাস্ট হয়ে যাবো।”

মুগ্ধতা মিটমিট করে হেঁসে বলে,”আপনি আম্মুর টা দেখে এমন বলছেন বাকি বড়ো আম্মু,নানু, ছোট আম্মু,মামি-মামাদের আসতে দিন তারপর দেখবেন দুজন যে জামাই আদর কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি।আজকে আমরা এত বছরে যত্ত না আদর পেয়েছি সব আদর আপনারা আজকেই পেয়ে যাবেন।”।”

আহনাভ, আহির খাওয়া শুরু করেছে আর কিছুক্ষণ পর পর একেক খাবার এসে হাজির হচ্ছে।

.
খাবার শেষ করে কোনো রকমে পালিয়ে এসে দুই ভাই ঘরে ঢুকেছে আর বের হওয়ার নাম নেই।লায়ানা ঘরে এসে জম্পেশ ঘুম দিয়েছে।আর আহনাভ কেউ এসে দরজার কড়া নাড়লেই বলছে তার খিদে নেই পিট ফুটবলের মত ফুলে আছে আর খাওয়া সম্ভব না।আহনাভ বসে না থেকে, লাগেজ থেকে ল্যাপটপ বের করে অফিসের কিছু কাজ শেষ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

.
মুগ্ধতা দরজার সামনে এসে আহিরকে ডাকতেই আহির ভিতর থেকে বলে উঠে,”বউ আমি ব্লাস্ট হয়ে যাবো আর খেতে বলো না।”

.
সারাদিন এমন জামাই আদর চলতে থাকে।রাতের দিকে আহির আর আহনাভকে মুগ্ধতা,লায়ানা মিলে ঘর থেকে টেনে বের করে আনে।রাতের খাবারে দুইজনকে আর জোর করে না ইয়াশা।দুই ভাই কোনরকম খেয়ে ঘরে চলে আসে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে পারি জমায় দুই ভাই।

.
লায়ানা মুগ্ধতা ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে।লায়ানা বলে উঠে,”বনু আহান আসল লিডারের খোঁজ পেয়েছে।ওর নাম অভ্র বাবেল ইন্ডাস্ট্রির মালিক।”

মুগ্ধতা শান্ত কণ্ঠে শুধায়,”ওহ।তাহলে তো যত দ্রুত যাওয়ার ব্যাবস্থা করা দরকার।”

“আহান পরশুর দুপুরের ফ্লাইটে যাওয়ার ব্যাবস্থা করেছে।”

মুগ্ধতা হুট করে লায়ানাকে জড়িয়ে ধরে শান্ত কণ্ঠে বলে,”তুই একদম বেশি ভাববি না,যে গত কাল টা’র্গে’ট করেছিল তাকে রুদ্র আর রাফি মিলে ধরে ফেলেছে।তুই শুধু দেখ ওর কী করি আমি।”

লায়ানা মনে মনে আওড়ালো,”তোর শান্ত কণ্ঠের এই ছোট হু’ম’কি ওই লোকের জীবনে কত বড় ঝড় নিয়ে আসতে চলেছে তা ওর কল্পনার বাহিরে।”
লায়ানা ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে বলে,”আচ্ছা বনু তুই আহির কে সব কখন জানাবি?”

মুগ্ধতা লায়ানাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,”এইসবের পিছনে আসল লিডার কে শে’ষ ক’রি তারপর নাহয় জানাবো ।চল ঘুমাতে যাই অনেক রাত হয়েছে আজ আমাদের জামাইরা তো খেতে খেতে খুব ক্লান্ত।”

লায়ানা ফিক করে হেঁসে উঠে।

……

সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা পর্ব শেষ করলে লায়ানা, আহনাভ,আহির আবরাহার বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।তাদের সাথে আসেনি মুগ্ধতা।মুগ্ধতা তার ইমারজেন্সি পেশেন্টের কথা বলে অনেক আগেই বেরিয়ে পড়েছিল।

.
মুগ্ধতা গোডাউনে ঢুকেই চেঁচিয়ে বলে উঠলো,”রুদ্র তুমি এখনো পারলে না ওর মুখ থেকে বের করতে কে করেছে?তুমি জানো আমাদের কাছে বেশি সময় নেই।তুমি আমাকে এনেই ছাড়লে রুদ্র।”বলেই লোকটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায় মুগ্ধতা।লোকটির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় র’ক্ত শুকিয়ে এসেছে,নে’তি’য়ে পরেছে পুরো শরীর।রুদ্র খুব বাজে ভাবে মে’রে’ছে লোকটির শরীর দেখে তা স্পষ্ট।মুগ্ধতা লোকটির গালে চা’প’ড় মে’রে বলে,”দেখে যা মনে হচ্ছে তোর বেশি মোটা চামড়া।রুদ্রর মা’র খেয়েও কিছু বললি না?এখন তো তোর বলতেই হবে।রুদ্র একে উঠা ওর এই ঘুম আমার বিরক্ত লাগছে।”

রুদ্র এগিয়ে এসে এক মগ পানি লোকটির মুখে ছুড়ে মারে।লোকটি নড়েচড়ে বসে।এতক্ষন যাবত ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে মুগ্ধতার প্রতিটি কথা শুনেছে লোকটি।

মুগ্ধতা তার হাত ডান দিকে বাড়াতেই একজন গার্ড এসে মুগ্ধতার হাতে একটি কাঁচের বোতল ধরিয়ে দেয়।মুগ্ধতা বোতলের মুখ খুলতে খুলতে বলে,”বলবি নাকি আমি নিজের মতো কাজ করে যাবো?

“আমাকে মে’রে ফে’ল’লে’ও আমি কিছু বলব না।মুখ খুলব না আমি।মুখ খুললে আমি এইখান থেকে বেরিয়ে হলেও ম’রে যাবো ওরা আমাকে মে’রে ফেলবে।এর থেকে ভালো আমাকে মে’রে ফেল।”

“তুই যেহেতু বলবি না তাহলে আর কী।নিজের মতো কাজ করে যাই আমি।”বলেই মুগ্ধতা বোতল ভর্তি এ”সি”ড লোকটির মুখে ছুড়ে মারে।লোকটি গগন কা’পা’নো চি’ৎ’কা’র করে উঠে।মুগ্ধতা চি’ৎ’কা’র করে বলে,”এই একদম চুপ।কোনো চি’ৎ’কা’র করবি না।তুই না বললি তোর মুখ খুলবি না তো চি’ৎ’কা’র কেন করছিস?চুপ একদম চুপ।”

মুগ্ধতা পিছিয়ে গিয়ে বলে,”রুদ্র এর মুখে পানি ছুড়ে মারো ওর জ্বা’লা আরো বাড়ুক।”

রুদ্র ইশারা করতেই দুজন গার্ড এসে পর পর দুই মগ পানি ছুড়ে মারে লোকটির মুখে।লোকটি জ্বা’লা’য় আ’র্ত’না’দ করে উঠে।মুগ্ধতা কাছে এগিয়ে গিয়ে লোকটির গ’লা’য় ছু’রি চে’পে ধ’রে বলে,”তুই আমার বোনকে মা’রা’র জন্য এসেছিলি নাকি আহনাভ ভাইয়া কে?

লোকটি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে থেমে থেমে বলে,”আহনাভ।আপনার বোনকে মা’র’লে স্যার নিজেই আমাকে মে’রে ফেলতো।”

মুগ্ধতা ছু’রি কিছুটা দা’বি’য়ে ধ’রে বলে,”তোর সাহস কি করে হয় আমার বোন কে বি’ধ’বা বানানোর জন্য আমাদেরই রিসেপশনে আসিস?তোর ওই হা’রা’ম’জা’দা মালিক কে পেয়ে নেই দেখিস ওর কি করি।ও হ্যা তাই তো তুই দেখবি কি করে তোকে দেখার জন্য বাঁ’চি’য়ে রা’খ’লে তো তবে।

ছুরিটি কিছুটা দাবিয়ে ধরায় কিঞ্চিৎ কে’টে গি’য়ে র’ক্ত বেরিয়ে আসতে থাকে।লোকটির গ’লা থে’কে ছু’রি সরিয়ে মুগ্ধতা পিছিয়ে যায়,মুগ্ধতার সাথে সাথে সবাই পিছিয়ে যেতে থাকে।লোকটি সকলের একসাথে পিছিয়ে যাওয়া দেখে অবাক হয়ে যায়।

মুগ্ধতা প্রায় গোডাউনের শেষ প্রান্তে এসে হাত উঠিয়ে কিছু ইশারা করতেই লোকটির ঠিক উপর থেকে একটি ট্যাংক লোকটির উ’প’রে প’ড়ে যা’য়।সাথে সাথে এক বি’ক’ট শব্দে গোডাউন কেঁ’পে উঠে।লোকটি ট্যাংকের চা’পা’য় প’ড়া’য় করেক হাত মা’টি’র নি’চে দে’বে যা’য়।

রুদ্র বলে উঠে,”ম্যাম একে এখন না মা’র’লে’ই হতো আমরা ওর থেকে জানতে পারতাম কে এর পিছনে আছে।”

“ও এত কিছুর পরও বলেনি তুমি আরো বলছো ওকে বাঁ’চি’য়ে রাখলে জানা যেত।বলুক বা না বলুক ওর এত বড় সাহস কি করে হয় ও এই কাজ করে?সবাই কি ভুলে গিয়েছে আমি কাউকে ছাড় দেই না?তো আমি একে কিভাবে ছেড়ে দেই।একে ভালো ভাবেই পাঠিয়েছে এর মালিক বলতে গেলে বিশ্বস্ত মরে যাবে তাও মুখ খুলবে না।তার কানে নিশ্চয়ই খবর যাবে কিভাবে ও ম’রে’ছে ও আবার কিছু একটা করবে সেটার অপেক্ষা করো।এইসব বাদ দাও চলো আমরা বাড়ি ফিরি।গোডাউনের সব কিছু গার্ডরা ঠিক করে নিবে চলো।”

.
লায়ানা,আহনাভ, আহির বসার ঘরে বসে আছে তাদের সামনে আহনাভ ও আহিরের বাবা মা বসে।আহনাভ বলে উঠে,”বাবা আমরা চারজন কাল দুপুরের ফ্লাইটে কানাডা যাচ্ছি।আমাদের পিএস ইন্ডাস্ট্রির শাখা প্রজেক্টের কাজ শুরু করতে খুব দেরী হয়েছে,হায়া আর দেরী করতে চায় না তাই কাল যাওয়ার ব্যাবস্থা করেছে।”

আহনাভের বাবা বলেন,”ওহ ভালোই হয়েছে তাহলে, কাজটা শুরু করা দরকার।”

অনামিকা উঠে এসে লায়ানার পাশে বসে বলে,”ইশ আমার ঘরের লক্ষী দুটো ঘরে এলো ভালো করে দুইদিন হলো না তারা কিনা এখনই চলে যাবে।”

লায়ানা অনামিকাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,”তোমরা চাইলে আমাদের সাথে যাওয়ার ব্যাবস্থা করতে পারি।আমিও না তোমাদের মত দুটো মা কে রেখে যেতে চাই না।”

অনামিকা হেঁসে বলে,”পা’গ’লী মেয়ে আমাদের যাওয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে না।”

জেরিন বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে,”মুগ্ধ মা আসুক আমরা শাশুড়ি বউমারা মিলে ঘুরতে বের হবো আজ।”

আহনাভের বাবা বলে উঠে,”তাহলে আমাদের কী হবে?”

জেরিন ভ্রু কুঁচকে বলে,”কী হবে মানে কি?আজ নিজেদের খাবার নিজেরা বানিয়ে খাও।”

আহিরের বাবা অনামিকার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,”বউ আমার জন্য কিছু হলেও রান্না করে যাও আমি যদি তোমাদের সাধের রান্না ঘরে ঢুকি তা ব্লা’স্ট হতে বেশিক্ষণ লাগবে না।”

অনামিকা উঠে দাড়িয়ে বলে,”সমস্যা কোথায় আমার জামাই সাদেক আবরাহার এর টাকার অভাব আছে ব্লা’স্ট হলে আবার মন মত রান্না ঘর বানিয়ে নিবো।”

আহিরের বাবা কপাল চাপড়ে বলে,”মন চাইছে কচু গাছের সাথে ঝুলে যাই।”

আহির ঠোঁট টিপে হেঁসে বলে,”বাবা কচু গাছ টা এনে দেই?”

আহিরের বাবা এক ধমকে বলে উঠে,”অ’স’ভ্য ছেলে একদম চুপ।তোর সাথে আমার তো এখনও বোঝা পড়া বাকি।তোর মা বের হোক তোর সাথে খেলা হবে।”

“সমস্যা নেই।আহির সাদেক আবরাহার এর ছেলে কোনো খেলায় হেরে যাওয়ার ছেলে নয়।”

আহিরের বাবা বিড়বিড় করে বলে উঠে,”এই সাদেক আবরাহার বেঁচে আছে কেনো?একটা বজ্জাত ছেলে ডাউনলোড দিয়েছে আমাকে জ্বা’লি’য়ে মারছে।”

আহির সোফা থেকে উঠে সিঁড়ির দিকে যেতে যেতে বলে,”বাবা ভুলে যাচ্ছ তুমি সেই সাদেক আবরাহার।”

আহিরের বাবা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে,”এইটাই তো সবেচেয় বড় ভুল এক বজ্জাত ছেলেকে ডাউনলোড দিয়েছি যে তার বাপ কেও ছাড়ে না।”

#copyrightalert
#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here