ডুবেছি_আমি_তোমাতে #Aiza_islam_Hayati #পর্ব_৩৮

0
260

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_৩৮
আহিরের বাবা রুটি বেলার বেলুন নিয়ে আহিরের পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে।আহির দৌড়াতে দৌড়াতে বলে,”মায়ের ডিয়ার ডার্লিং এই বয়সে পারবে না আমাকে ধরতে।শুধু শুধু কোমড় ভাঙার জন্য আমার পিছু দৌড়াচ্ছ।”

আহিরের বাবা থেমে গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বুকে হাত রেখে বলে উঠে,”আহির আহির।”

আহির দাড়িয়ে ফিরে তাকায়,ছুটে তার বাবার কাছে গিয়ে হাত ধরে আতঙ্কিত কণ্ঠে বলে,”বাবা তুমি ঠিক আছো বাবা কী হয়েছে বাবা?বলো বাবা বুকে ব্যাথা করছে বাবা?বাবা প্লিজ বাবা বলো।”

আহিরের বাবা ঠিক হয়ে দাড়িয়ে আহিরকে শক্ত করে ধরে বেলুন দিয়ে পিঠে মেরে বলে,”কী বলেছিলি এই বয়সে পারবো না।”,বলেই আরো দুই তিন ঘা বসিয়ে দিয়ে আহিরের কান মুলে ধরে।

আহির বলে উঠে,”তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়েছো বাবা,ভালো হবে না দেখে নিও।তোমার সাথে ব্রেকআপ বাবা।আহ ছাড়ো।”

“তোর সাথে আবার কিসের ব্রেকআপ।দারা তুই।”

“তোর সাহস কম বড় না সাদেক!আমার ছেলের কান ধরেছিস!”,বলেই আহনাভের বাবা এগিয়ে গিয়ে
আহির কে ছাড়িয়ে নিজের পাশে এনে বলে,”বাবা বেশি ব্যাথা পেয়েছিস?”

আহির অদূরে কণ্ঠে বলে,”আহ হম অনেক।”

এইদিকে আহনাভ সোফায় বসে পপকর্ন খেতে খেতে বলে,”আমার থেকে আমার পুরো ফ্যামিলি ভালো অ্যাক্টিং জানে।”

আহনাভের বাবা আহনাভের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,”আহনাভ তুই এইখানে থাকলে রান্না ঘরের চুলায় বসানো মাংস কে দেখছে।”

আহনাভ চোখ বড় বড় করে বলে,”তাইতো কে দেখছে?গেলো রে আজকে আর কপালে খাবার নেই।”,পপকর্ন ফেলেই দে দৌড় আহনাভ।

.
মুগ্ধতা বাড়ি আসার পর ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলে অতঃপর অনামিকা,জেরিন লায়ানা,মুগ্ধতা, সহিরাহ, ওয়ার্দি,আফ্রা,আলিযা সবাই মিলে বেরিয়ে পরে।সহিরাহর স্বামী রিসেপশন এর দিনই রাতের ফ্লাইটে লন্ডন চলে গিয়েছে।আজ এই সাতজন রাতের খাবার খেয়ে একেবারে বাড়ি ফিরবে।

চারজন বের হতেই বাড়ি জুড়ে যুদ্ধ শুরু হলো। আহনাভ নিজেই রান্না পারে কিন্তু মাংস চুলায় বসিয়ে আহির আর আহিরের বাবার মারামারি দেখতে পপকর্ন নিয়ে তৈরি হয়ে এসেছিল,এত সকলের মাঝে সে রান্নার কথা ভুলেই যায়।

.
আহনাভ সব খাবার টেবিলে এনে বসে পড়ে। আহিরের বাবা হাতের বেলুন দিয়ে আহিরের হাতে বাড়ি দিয়ে বলে,”দেখ দেখ কিছু শিখ।”

আহির হাত ছিটকে সরিয়ে বোকে উঠে,”এই তুমি এমন অস্ত্র নিয়ে বসে আছো কেনো?তোমার হাতে বেলুন মানায় না।”

“তাহলে কি ব’ন্দু’ক নিয়ে আসবো?”

“মায়ের হাতে ঝাড়ুর বাড়ি খেতে না চাইলে বন্দুকের কথা মুখেই এনো না আমার সোনা বাবাই।”

আহিরের বাবা আড় চোখে তাকায়।

.
রাত বারোটা ছুঁইছুঁই,আজ বাবা ছেলেরা মিলে পুরো বাড়ির কাজ করে ক্লান্তিতে সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছে, আহিরের বাবার হাতে এখনও বেলুন, আহিরের হাতে ঝাড়ু।আহনাভের বাবা আর আহনাভ মুখে তাওয়াল দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।

দারোয়ান দরজা খুলে দিলে অনামিকা,জেরিন, মুগ্ধতারা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই বাবা,ছেলেদের এমন করে শুয়ে থাকতে দেখে হো হো করে হেসে উঠে।অনামিকা হাতের শপিং ব্যাগ সেন্টার টেবিলে রেখে আহিরের বাবার কাছে এগিয়ে গিয়ে আহিরের বাবার হাত থেকে বেলুন নিয়ে বলে উঠে,”আহারে আমার ডার্লিং টা আজ কত কাজ করেছে।কিন্তু আমি ডেম সিওর এই বেলুন নিয়ে আহিরের পিছু দৌড়ে বেরিয়েছে এই লোক।”

……

“আহির এই আহির উঠুন।আমাদের একটার ফ্লাইট আর আপনি কিনা এখনও ঘুমাচ্ছেন উঠবেন নাকি আমি পানি এনে আপনার উপর ঢেলে দিবো।”

আহির পিটপিট করে তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পুরো ঘরে চোখ বুলায়।মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে বলে,”বউ আমি ঘরে কী করে এলাম আমি,বাবা, বড় বাবা আহনাভ মিলে ডিসকো ডান্স করতে করতে তো নিচেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।”

“গত কাল রাতে আপনাকে ঘরে আমি এনেছি। আর ঝাড়ু নিয়ে বুঝি ডান্স করছিলেন?”

আহির মৃদু হেঁসে বলে,”হম ঝাড়ু ডান্স।”

“আচ্ছা এইবার তাড়াতাড়ি উঠে পড়ুন,রেডি হতে জান তাড়াতাড়ি আমাদের হাতে আর তিন ঘণ্টা আছে।”,বলেই মুগ্ধতা হাতে থাকা আহিরের শার্ট প্যান্ট এগিয়ে দেয়।

আহির উঠে মুগ্ধতার হাত থেকে শার্ট আর প্যান্ট নিয়ে মুগ্ধতার ওষ্ঠে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে দিকে দৌড়।মুগ্ধতা চেঁচিয়ে বলে উঠে,”ছি ছি ছি ওয়াক এটা গুডমর্নিং এটা কী ছিল?পচা বাসি নোংরা মুখের কিস ছি ছি ওয়াক থু থু থু।”

আহির ওয়াশরুম থেকে বলে উঠে,”কীসের ওয়াক!বেশি করবে এখন বেরিয়ে এসে আবার চুমু খাবো।চুমু থেরাপি দিয়ে দিন শুরু করলাম আর তুমি বলছো ওয়াক।”

“হুম বলবোই তো ছি ছি ছি ওয়াক থু পারলে আসেন টাওয়াল খুলে এক্কেবারে রুম থেকে বের করে দিবো জামা-কাপড় ছাড়াই।”

“ছি ছি বউ তোমার শরম লজ্জা দেখি বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে এসেছো।জামাইর মান সম্মান নিয়ে একটু ভাবো।”

“হেহ যান এখান থেকে।গোসল করেন দেরি যেন না হয় তাহলেই হবে।”

“ঠিক আছে তাহলে ফ্রেশ হয়ে একটা ফ্রেশ চুমু খাবো রেডি থেকো।”

“দূরে যান।দূর হন।বেশরম অসভ্য লোক।”

“শুধু তোমারই জন্য ডিয়ার।”

মুগ্ধতা ‘হুহ,শুনুন তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসুন।লায়ানা, আহনাভ,আহান আমাদের জন্য বসার ঘরে অপেক্ষা করছে।আপনি আমি রেডি হয়ে নামলেই সবাই বের হবে।”

.
আহির,মুগ্ধতা রেডি হয়ে নামলেই আহনাভ,লায়ানা,আহান,রাফি আর রুদ্র বেরিয়ে পরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এর উদ্দেশ্যে।

ঘড়িতে একটা বেজে সাত মিনিট হযরত শাহ্‌জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ‘এয়ার কানাডা’ প্লেনটি মাত্রই টেক অফ করেছে।১৬ ঘণ্টা পর ‘এয়ার কানাডা’ ক্যালগারি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়ে ল্যান্ড করবে।

.
এখন ঘড়িতে আটটা ছুঁইছুঁই।আকাশ মেঘলা,হাড় কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়া চারিপাশে।গত কাল ভোর পাঁচ’টায় ‘এয়ার কানাডা’ বিমানটি ক্যালগারি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে ল্যান্ড করে।কানাডার টরন্টো শহরে মুগ্ধতা,লায়ানার নিজের বাড়ি।মুগ্ধতা,লায়ানার বাড়ির পাশের বাড়ি হচ্ছে আহানের।এয়ারপোর্ট থেকে বাড়িতে এসেই সবাই ঘুমের রাজ্যে পারি জমিয়েছিল।গত কাল বিশ্রাম করেই দিনটি কেটে যায় সকলের।

.
লায়ানার ফোন বেজে উঠতেই লায়ানা চোখ মেলে তাকায়,পাশ থেকে ফোন নিয়ে রিসিভ করে কানে ধরতেই ওই পাশ থেকে এক পৈ’শা’চি’ক হাঁসির শব্দ ভেসে আসে।লায়ানা তড়িৎ গতিতে শোয়া থেকে উঠে বসে।ঐপাশেরের মানুষটি তার পৈ’শা’চি’ক হাঁসির ইতি টেনে বলে উঠে,”আমার শহরে পুনরায় তোমাকে স্বাগতম কুইন।তুমি যে আমার জালে নিজেই নিজেকে ধরা দিচ্ছ, আই লাইক ইট।এখন তোমার হাসবেন্ড আহনাভকে আর কতদিন বাঁচাবে আমার হাত থেকে?”

লায়ানা পাশেই উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা আহনাভের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বলে,”এই লায়ানা বেঁচে থাকতে আহনাভের কিছু হতে দিবে না।আর রইলো তোর মত জা’নো’য়া’র’দে’র কথা,তোর মৃ’ত্যু ঘনিয়ে আসছে,তোকে আমি আমার নিজের হাতে মা’র’বো।”

“উফ কুইন তোমার ঐ শান্ত কণ্ঠের হুমকি যেনো আমার ঠিক বুকে গিয়ে লাগলো।আমিও দেখবো কী করে বাঁচিয়ে রাখো ওই আহনাভকে।আমি তিলে তিলে মারবো ওকে,একসময় বেঁচে থাকাও যেনো ওর জন্য কষ্ট হয়ে উঠবে নিজেই নিজের মৃ’ত্যু কামনা করবে।”লায়ানা কিছু বলার আগেই টুট টুট শব্দে ফোন কেটে যায়।

লায়ানা ফোন কান থেকে সরিয়ে আহনাভের চুলে হাত ডুবিয়ে মৃদু কণ্ঠে শুধায়,”আমি কাউকে ছাড়বো না আহনাভ।তোমাকে ছোঁয়ার সাহস যে করবে তাকে এক ভ’য়’ঙ্ক’র মৃ’ত্যু উপহার করবে এই হায়াতি আবরাহার লায়ানা।”

লায়ানা বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়।কিছুক্ষন সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসলে চোখে পড়ে আহনাভ ফোলা ফোলা চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে,ঝাঁকড়া চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।এমন এলোমেলো আহনাভ কে যেনো লায়ানার খুব ভালো লাগে,লায়ানা হেঁসে উঠে আহনাভের কাছে এগিয়ে গেলে আহনাভ লায়ানার হাত টেনে নিজের পায়ের উপর বসিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,”বউ আই ওয়ান্ট আ গুড মর্নিং হামি।কুইক হামি দাও আমার এনার্জি লাগবে।”

লায়ানা ঘাড় কাত করে আহনাভের চোখে,কপালে, গালে,ঠোঁটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে বলে,”নাও তোমার হামি এইবার বলো তো হামির সাথে এনার্জির কী সম্পর্ক?”

আহনাভ লায়ানার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বলে,”হায়া পাখির হামি আমাকে রিচার্জ করে আমার এনার্জি ফুল বাড়িয়ে দেয়।”

“কী উল্টো পাল্টা লজিক তোমার।আমাকে ছাড়ো নিচে চলো গ্লুকোজ খাইয়ে তোমার এনার্জি বাড়াচ্ছি।”

“নাহ নাহ আমার গ্লুকোজ চাই না আমার তোমাকে চাই।”

লায়ানা মুচকি হেসে বলে,”আমি তো তোমারই।আমাকে ছাড়ো তোমার কাজের কথা কী কিছু মনে আছে?আজ আমি আর,তুমি আমার অফিসে যাবো আমাদের কাজ শুরু করতে হবে।”

আহনাভ লায়ানাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,”আমার তো এখন মন চাইছে সব কাজ বাদ দিয়ে বউকে নিয়ে ঘুরি বউকে একটু বেশি বেশি করে আদর করি।বউকে দেখলেই মন শুধু আদর করতে ইচ্ছে করে।”

লায়ানা উঠে গিয়ে আলমারি থেকে সুট বের করতে করতে বলে,”আমার বিজনেসম্যান উইথ অ্যাক্টর জামাই তুমি যদি কাজ কাম বাদ দিয়ে বউয়ের পিছন পড়ে থাকো ভবিষ্যতে আমাদের বেবিরা তার বাবার কী পরিচয় দিবে?”

আহনাভ ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বলে,”বলবে মাই ফাদার ইজ আ এক্স বিজনেসম্যান উইথ অ্যাক্টর নাও হি ইস আ ভেরি গুড হাসবেন্ড অফ হার ওয়াইফ।”আহনাভের এহেন কথা শুনে লায়ানা আড় চোখে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,”আমার বউ পাগলা জামাইরে।”

.
গত কাল রাতে টরন্টোর হসপিটালে জয়েন হওয়ার এপ্লিকেশন করে আহির,সাথে সাথে অ্যাপ্লিকেশন এক্সেপ্ট করে নেয় হসপিটালের কর্তৃপক্ষ।আহির ঘুম থেকে উঠেই বেরিয়েছে হসপিটালের উদ্দেশ্যে।

হসপিটালে এসে পৌঁছালে আহিরকে তার কেবিন দেখিয়ে দেয়া হয় সাথে আহিরের দায়িত্বে পড়া পেশেন্টদের ফাইল গুলো দিয়ে যাওয়া হয়।

.
আহির বাড়ি থেকে বের হতেই মুগ্ধতা বেরিয়ে যায় তার কাঙ্খিত জায়গাটির জন্য।

মুগ্ধতার গাড়ি এসে থেমেছে বাবেল ইন্ডাস্ট্রির সামনে। গাড়ি থেকে নেমে বাবেল ইন্ডাস্ট্রি নামক ভবনটিতে প্রবেশ করে সোজা লিফটের বাইশ নম্বর ফ্লোরে চলে যায়। পাভেল ইন্ডাস্ট্রির মালিক অভ্র’র কেবিনের সামনে এসে থেমে যায় মুগ্ধতা।অভ্র’র কেবিনের বাইরে তার পিএ বসে আছে।মুগ্ধতা এগিয়ে যায় অভ্র’র পিএর সামনে এসে বলে,”অভ্র ফ্রি আছে?”

অভ্র’র পিএ দাঁড়িয়ে মুগ্ধতার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে নিয়ে বলে,”জি ম্যাম স্যার ফ্রি আছে।প্লিজ ম্যাম আপনি ভিতরে যেতে পারেন।আপনাকে আমি ভিতরে যেতে মানা করলে স্যার আমাকে বকবে।”

মুগ্ধতা দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে দেখে অভ্র অন্যদিকে চেয়ার ঘুরিয়ে বসে আছে।মুগ্ধতা বড় বড় পায়ে হেঁটে অভ্র’র সামনে গিয়ে দাড়ায়, হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”হাই মি. অভ্র আমাকে আপনি চিনতে পারবেন না।তাও বলি আমার নাম মুগ্ধতা।”

মুগ্ধতাকে দেখে অভ্র চমকে হা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।মুগ্ধতার পরনে লাল রঙের বডিকোন ড্রেস,কালো রঙের ফ্রেঞ্চ কোট,কালো রঙের বুটস।অভ্র মুগ্ধতার হাত ধরে হ্যান্ডস্যাক করতে করতে বলে,”আপনার মতো রমনি কে না চিনলেও চেনার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না মিস।”

মুগ্ধতা আসার আগেই আহান মুগ্ধতাকে অভ্র আর তার পিএ সম্পর্কে সকল কিছু বলে দিয়েছে।আহান থেকেই মুগ্ধতা জানতে পারে অভ্র যেমন তার পিএ তেমনি মেয়ে দেখলেই তাদের সব কিছু উলোট পালোট হয়ে যায়।তাই সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চাইলো মুগ্ধতা।

অভ্র মুগ্ধতার হাত ধরে মুগ্ধতার দিকেই তাকিয়ে আছে।মুগ্ধতা বলে উঠে,”আমি শুনলাম যে এত বড় একটা ইন্ডাস্ট্রির মালিক নাকি বিয়ের জন্য মেয়ে খুজছে সেই সুযোগ কীভাবে হাত ছাড়া করি।”মুগ্ধতা থেমে গিয়ে অভ্র’র থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয়।অভ্র’র গালে হাত রেখে বলে,”এত হ্যান্ডসাম একজন পুরুষ কে বিয়ে করার সুযোগ কখনোই ছাড়া যায় বলুন।”

অভ্র এটাতেই যেনো গলে যায়।অভ্র বলে উঠে,”আমার সৌভাগ্য হবে তোমার মতো একটা হট উফস সরি সুন্দরী কে বিয়ে করতে পারলে।”

অভ্র মুগ্ধতার হাত ধরে পাশের সোফায় নিয়ে বসিয়ে মুগ্ধতার হাতে আলতো করে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে বলে,”উফস তোমাকে ভুলে তুমি বলে ফেললাম ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমি তোমাকে তুমি করে বলতে চাই।”

মুগ্ধতা মৃদু হেসে বলে,”নো প্রব্লেম হ্যান্ডসাম আপনি আমাকে তুমি বলতে পারেন।”বলেই দাঁড়িয়ে টেবিলের কাছে গিয়ে নিজের কোট খুলে টেবিলে পাশে রেখে দেয়।অভ্র আরো ড্যাব ড্যাব করে মুগ্ধতার দিকে তাকায়।

মুগ্ধতার এক কানে ব্লু টুথ তা চুল দিয়ে ঢাকা,ব্লু টুথে আহানের সাথে কানেক্ট মুগ্ধতা।ওই পাশ থেকে আহান বলে উঠে,”ইয়েস,এখন ওর কেবিনের সব কিছু আমি দেখতে পাবো।” (মুগ্ধতা কোট রাখতে গিয়ে কোটের নিচে থাকা মিনি সিসি ক্যামেরা টেবিলের পাশে লাগিয়ে দেয়।)

অভ্র মুগ্ধতার উপর থেকে নিচ অব্দি চোখ বুলিয়ে বলে,”মিস ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমরা কোনো জায়গায় কফি ডেটে যেতে পারি?”

“ওহ কাম অন ম্যান আমি মাইন্ড কেন করব চলুন।”

অভ্র সোফা থেকে উঠে এগিয়ে এসে নিজের চেয়ার থেকে ব্লেজার নিয়ে পরে নেয় অতঃপর মুগ্ধতার কাছে এসে বলে,”যাওয়া যাক মিস।”

.
মুগ্ধতা অভ্র কাছের এক কফি শপে এসেছে।
অভ্র কফি অর্ডার করলে ওয়েটার এসে কফি দিয়ে যায়।মুগ্ধতা অভ্র কফি খেতে খেতে দুজন হেসে হেসে কথা বলেছে।

মুগ্ধতা অভ্রর থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় রক্ত বর্ণ ধারণ করা এক জোড়া চোখ তার দিকেই তাকিয়ে আছে।রক্ত বর্ণ ধারণ করা এক জোড়া চোখ যে আহিরের।মুগ্ধতা সাথে সাথে দাঁড়িয়ে বলে উঠে,”অভ্র সরি আমি আপনার সাথে পরে দেখা করতে যাবো আপনার অফিসে এখন আমার জরুরি ভাবে যেতে হচ্ছে।”

অভ্র কিছু বলার আগেই মুগ্ধতা দ্রুত হেটে কফিশপ থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে বসে, ড্রাইভার কে দ্রুত বাড়ি যেতে বলে।

মুগ্ধতাকে বেরিয়ে যেতে দেখে আহির বেরিয়ে যায় কফি শপ থেকে।আহির হসপিটাল থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এই কফি শপের সামনে এসে দাঁড়ায়।মাথা কিছুটা ধরায় কফি খাওয়া জন্য শপের ভিতরে প্রবেশ করে আহির আর প্রবেশ করতেই মুগ্ধতাকে চোখে পড়ে অভ্র’র সাথে।

.
মুগ্ধতার গাড়ি বাড়ির সামনে এসে থামতেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। আহিরের গাড়ি মুগ্ধতার গাড়ির পিছনে এসে থেমেছে। আহির বড় বড় পায়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায়,সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই দেখতে পায় মুগ্ধতা ঘরের দরজা আটকে দিচ্ছে।আহির তড়িৎ গতিতে পা চালিয়ে দরজায় হাত দিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে যায়।

মুগ্ধতা চমকে উঠে। আহির দরজা আটকে মুগ্ধতার দুই হাত ধরে দেয়ালে পিন করে বলে উঠে,”কোথায় গিয়েছিলে মুগ্ধতা?কে ছিল সেই ছেলে?কার সাথে তুমি এত হেসে হেসে কথা বলছিলে?ও তোমার দিকে বাজে নজরে কেন তাকিয়ে ছিল?আমার পছন্দ হলো না ব্যাপার টা।আমাকে রাগালে ভালো হবে না মুগ্ধতা।আমি ওকে মাটির নি’চে পুঁ’তে ফেলব বলে দিলাম।এই মুগ্ধতা শুধু আমার অন্য কেউ ওকে বাজে ভাবে দেখবে আমি সহ্য করব না।”, এক নিশ্বাসে বলে বড় বড় শ্বাস নিয়ে মুগ্ধতাকে জড়িয়ে ধরে।

“শান্ত হন আহির। আমারও কোনো ইচ্ছে নেই আহির সেই লোকের সামনে ঐভাবে বসে হেসে হেসে কথা বলার কিন্তু বুঝেনই তো কোনো ডিলের জন্য হলেও সেভাবে হেসে কথা বলতে হয়।”

“কী এমন ডিল যে ওমন একটা মানুষের সাথে করতে হবে।”

“খুব গুরুত্বপূর্ণ ডিল আহির।আহির আমাকে একটা প্রমিস করবেন?”

“তুমি শুধু বলো মুগ্ধরানি।আমি আমার মুগ্ধিরানিকে সব রকমের কথা দিতে রাজি আছি।”

“আপনি কখনো আমাকে ভুল বুঝবেন না আহির প্লিজ কখনো না।”

“প্রমিস কখনো ভুল বুঝবো না তোমায়।”

#copyrightalert
#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here