ডুবেছি_আমি_তোমাতে #Aiza_islam_Hayati #পর্ব_৪০

0
634

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_৪০
আহনাভ আড়মোড়া ভাঙিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে।পাশে সাদা চাদরে ঢাকা ঘুমন্ত লায়ানার মুখ পানে তাকিয়ে ঠোঁট প্রসারিত করে হাঁসে।কিঞ্চিৎ ঝুঁকে গিয়ে লায়ানার ললাটে অধর ছুঁয়ে দিয়ে মৃদু স্বরে বলে,”শুভ জন্মদিন হায়া পাখি।এইযে পাখি তোমায় এই ঘুমন্ত অবস্থায় দেখলে যে আমার আরো আদর করতে ইচ্ছে করে।কিন্তু আফসোস এখন কিছুই করা যাবে না,আমার এখন বের হতে হবে যে।আজ তোমার জন্য খুব বড় এক সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছি আমরা।”

আহনাভ থেমে গিয়ে পুনরায় মৃদু কন্ঠে বলে,”কিন্তু জানো পাখি আমার কেনো যেনো যেতে ইচ্ছে করছে না তোমায় ছেরে।মনে হচ্ছে আজ তোমায় রেখে কোথাও গেলেই আমি তোমায় হারিয়ে ফেলবো।”

.
আহনাভ বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেয়।হাতে ঘড়ি পরে বিছানার কাছে এগিয়ে এসে ঘুমন্ত লায়ানার মুখে অসংখ্য চুমু একে দেয়।লায়ানা মৃদু নড়ে উঠে,আহনাভ ঠোঁট টিপে হাসে আর দাড়িয়ে থাকে না ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

.
ঘড়িতে দশটা ছুঁইছুঁই,লায়ানা টিপটিপ করে চোখ মেলে তাকায় পুরো ঘরে ভালো করে চোখ বুলায়।শোয়া থেকে উঠে বসে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠে,”আহনাভ তুমি কোথায়?”

কোনো শব্দ না পেয়ে,লায়ানা বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ায়।পরমুহুর্তে লায়ানার ফোন বেজে উঠে,লায়ানা ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।এগিয়ে গিয়ে ফোন হতে নেয়,ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই ঐপাশ থেকে আহনাভ বলে,”গুড মর্নিং পাখি।পাখির কী ভালো করে ঘুম হয়েছে?”

“নাহ একদম ভালো ঘুম হয়নি আমার।”

“কেনো?”

“সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে আমার জান পাখি আমার আহনাভের মুখ দেখবো কী ,কিছুই হলো না তুমি কোথায় আহনাভ?”

“আমি এক জায়গায় এসেছি বুঝলে।আমার সাথে আপ্পি,আহিরও আছে।আমি তোমায় সন্ধ্যায় নিতে আসবো।”

“কোথায় আছো আমাকে বলো আমি চলে আসছি।”

“একদম না।দেখো টেবিলের উপর একটি শপিং ব্যাগ আছে,ব্যাগের ভিতর একটি লাল টুকটুকে শাড়ি আছে।আমি আসার আগে ঐটা পড়ে রেডি থাকবে কেমন।”

“কিন্তু আহনাভ,বলো না কোথায় আছো আমি চলে আসি বাড়িতে একা থেকে কী করবো আমি।”

“আমি সন্ধ্যায় তোমাকে নিতে আসবো মানে সন্ধ্যায় আর কোনো বার্তি কথা না।”

লায়ানা গাল ফুলিয়ে বলে,”যাও কথা বলবো না তোমার সাথে।”,বলেই ফোন কেটে দেয় লায়ানা।টেবিলের উপর রাখা ব্যাগটি নিয়ে নেয়।ছাদের ঘরটি থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে নিজের ঘরে চলে যায়।

.
একটি বিচের সামনের দিকে রিসোর্ট একদিনের জন্য নিয়েছে আহনাভ,মুগ্ধতা, আহির।ডেকোরেটরদের সাথে রিসোর্টটি লাল,গোলাপী ফুল ও বেলুন দিয়ে সাজাতে ব্যাস্ত তিনজন।আহনাভ এত ব্যস্ততার মাঝে বারবার ফোন করছে লায়ানাকে কিন্তু ফোন রিসিভ করলো না লায়ানা।

মুগ্ধতা আহনাভের চিন্তিত মুখ দেখে এগিয়ে এসে বলে,”কী হয়েছে ভাইয়া?”

আহনাভ মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে বলে,”দেখো না আপ্পি ফোন ধরছে না হায়া।আমি সকালে ফোন দিয়ে বলেছি সন্ধ্যায় আমি ওকে নিতে যাবো কিন্তু ও বলছে আমাকে জায়গা টা বলো আমি এখনি চলে আসছি।আমি মানা করাতে এখন আর ফোন’ই ধরছে না।”

মুগ্ধতা হেঁসে বলে,”রেগে আছে লায়ানা।সন্ধ্যায় যখন নিতে যাবে সামলে এনো।”

দূর থেকে আহির হাতে থাকা গোলাপী রঙের গোলাপ ফুল দেখিয়ে জোরে বলে উঠে,”বউ এই দেখো তোমার মত মিষ্টি একটা ফুল।”

মুগ্ধতা ফিরে তাকায়,মুচকি হেঁসে বলে,”আপনি কাজ রেখে কী সব করছেন আহির সাহেব?”

“বউয়ের মত একটা মিষ্টি ফুল পেয়ে সব কাজ গুলিয়ে ফেলেছি বউ।”

আহনাভ হেঁসে বলে,”যাও আপ্পি তোমার বউ পাগলা জামাই তোমাকে ডাকছে।”

মুগ্ধতা আহনাভের দিকে ফিরে বলে,”এক বউ পাগল আরেক বউ পাগলের কথা বলছে।”

“আমি তো আমার বউয়ের জন্য পুরোটাই পাগল।যাও তুমি যাও তোমার বউ পাগলার কাছে।”

.
আকাশ হলুদ আভায় ঢেকে আসলো।লায়ানা সেই সকালে নিজের ঘরে এসে শাওয়ার নিয়ে কাজে বসেছে মাত্র কাজ ছেরে উঠলো।ল্যাপটপ রেখে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো শাড়িটি নিয়ে।

লায়ানা শাড়িটি পড়ে বেরিয়ে আসে।আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে মন মত সাজিয়ে নেয়।হাতে মুঠ ভর্তি লাল রঙের চুড়ি পড়ে শেষে তার হাঁটু অব্দি চুল গুলো ছেরে দেয়।

টেবিলের উপর রাখা ফোনটি বেজে উঠে,লায়ানা ফোনটির দিকে ফিরে তাকাতেই বাজতে বাজতে বন্ধ হয়ে যায়।পুনরায় বেজে উঠলে,লায়ানা এগিয়ে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করে বলে,”কী হয়েছে বারবার ফোন করছো কেনো?”

“এই মেয়ে তুমি আমার ফোন কেনো ধরছিলে না।আমি বাড়ি আসছি এসেই তোমার এমন অবস্থা করবো না কখনো এমন করার সাহস পাবে না।তুমি জানো আমার কী টেনশন হচ্ছিল।তুমি কি আমায় চিন্তায় ফেলে মারতে চাও?”

লায়ানা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে,”আমার রাগ হচ্ছিলো তাই এমন করেছি।আই অ্যাম সরি আর করবো না এমন।”

“প্লিজ পাখি আর এমন করবে না আমার বড্ডো টেনশন হচ্ছিলো একটুর জন্য মরেই যেতাম আমি।”

“হয়েছে হয়েছে আমি ঠিক আছি।এই শুনো আমি তোমার দেয়া শাড়ি পরে সেজে গুঁজে রেডি তুমি এখন কোথায়?কখন আসবে তুমি?”

“আমি মাত্রই বের হয়েছি পাখি।আমার আসতে দুই ঘণ্টা লাগবে তুমি একটু অপেক্ষা করো।”

“আচ্ছা শুনো না আমি ভিডিও কল দি।আজ সারাদিন তোমাকে দেখিনি,আমার চোখ দুটো তৃষ্ণার্ত তোমায় দেখে কিছুটা তৃষ্ণা মেটাতে চাই আমি।”

আহনাভ হেঁসে বলে,”ঠিক আছে।”

লায়ানা ফোন কেটে দিয়ে ভিডিও কল করে আহনাভকে,আহনাভ সাথে সাথে কল রিসিভ করে।লায়ানা আহনাভকে দেখেই বুকের বা দিকে হাত রেখে বলে,”হায় আহনাভ তুমি তো তোমার এই কিলার লুক দিয়ে আমাকে মেরেই ফেলবে।তোমায় এই লাল সুট বুটে মারাত্মক লাগছে।কাছে আসো থু থু দিয়ে দি নাহয় মেয়েরা নজর দিয়ে দিবে আমার সুন্দর জামাইর উপর”

আহনাভ হেঁসে বলে,”আর আমার লাল টুকটুকে বউকে দেখে খুব ভ’য়া’ন’ক প্রেম পাচ্ছে আমার।অপেক্ষা করো আমি আসছি বউ।”লায়ানা মুচকি হাসে।

.
আচমকা পুরো বাড়ির কারেন্ট চলে যায়।সম্পূর্ন বাড়ি অন্ধকারে ছেয়ে যায়।লায়ানা বলে উঠে,”আহনাভ বাড়ির কারেন্ট চলে গিয়েছে।আমি দেখে আসছি কী হয়েছে।”

ফোন কেটে দিয়ে লায়ানা অন্ধকার ঘরটিতে চোখ বুলায়।লায়ানা নিজেকে ছাড়াও আরো একজনের উপস্থিতি টের পায় ঘরে।ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালানোর আগেই পাশ থেকে কেউ হাতের ফোনটি কেরে নেয়।লায়ানা কেঁপে উঠে বলে,”কে?”

একটি হাত লায়ানার ঘাড় চেপে ধরে ফিসফিস করে বলে,”কুইন!”

লায়ানা থমকে যায়।”এই সেই পরিচিত কন্ঠ।সেই মেইন লিডার’ই তো আমাকে ফোন করলে কুইন বলতো সব কিছুর পিছনে অভ্র মেইন লিডার ছিলো।কিন্তু আজ তো অভ্র’র মৃ’ত্যু’র নিউজ পেলাম তাহলে এ কে?”,লায়ানা ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটি পুনরায় বলে উঠে,”কী ভাবছো কুইন?”

লায়ানা তার সামনের মানুষটির অবস্থান বুঝে দুই হাতে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে আসে।চেঁচিয়ে বলে উঠে,”কে তুই?”

“আউচ!তুমি কী বারবার আমার বুকেই আঘাত করবে কুইন?”

লায়ানা পুনরায় তার হাতে করো হাতের স্পর্শ পেলো।বাম হাতে সামনের মানুষটির গলা চেপে ধরে লায়ানা।দাঁতে দাঁত পিষে বলে,”কে তুই?সাহস কী করে হয় তোর আমার বাড়িতে এইভাবে এসে আমার কাছাকাছি ঘেঁষার।”

সামনের মানুষটি লায়ানার হাত শক্ত করে ধরে, গলার থেকে হাতের অবস্থান পরিবর্তন করে শক্ত পোক্ত বুকে চেপে ধরে বলে,”চিনতে পারছো না কুইন?তোমার টানে তোমার কাছে চলে এসেছি।”

লায়ানা হাত ছাড়িয়ে সজোরে থাপ্পর বসিয়ে দেয় সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটিকে।সরে এসে অন্ধকার হাতড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে লায়ানা,নিচে বসার ঘরে যাওয়ার জন্য সিঁড়ির কাছে আসতেই পিছন থেকে তার শাড়ির আঁচলে টান অনুভব করে সাথে সাথে শাড়ির আঁচল ছেরে দিতেই শাড়ির সাথে পা পেচিয়ে সিঁড়ির উপর থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে নিচে এসে পড়ে যায় লায়ানা।

.
ব্যাথায় আ’র্ত’না’দ করে উঠে।নিজেকে সামলে কোনো রকমে উঠে দাড়ায় চি’ৎ’কা’র করে বলে উঠে,”বাড়ির গার্ডরা কোথায়?”

উপর থেকে পুরুষালি কণ্ঠে ভেসে আসে,”তোমার গার্ডদের ঠিক জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছি।তোমার গার্ডেনে তারা খুব আরামে ঘুমিয়ে আছে এখন।কখনোই সেই ঘুম ভাঙ্গবে না তাদের।চিন্তা করোনা সবাইকে মারলেও তোমার ঐ বিশ্বস্ত গার্ড রাফি আর তোমার ভাই আহানকে এখনও মা’রি’নি বাঁচিয়ে রেখেছি।”

লায়ানা বসার ঘরের দিকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে যায়।টেবিলের ড্রয়ার খুলে ব’ন্দু’ক বের করতেই পুরো বাড়ির কারেন্ট চলে আসে।লায়ানা কয়েকবার পলক ঝাপটে সামনে তাকায়।

“উপস কুইন তোমার কপাল দেখি ফে’টে গিয়েছে।”,সিঁড়ি থেকে নেমে কথাটি বলতেই লায়ানা ফিরে তাকায় মানুষটির দিকে।

এক রাশ বিস্ময় নিয়ে লায়ানা বলে উঠে ,”তুহিন তুমি?”

তুহিন অট্টহাঁসে ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,”কুইন অবাক হলে?আমাকে চিনতে পারছো না?আমি তোমার সেই মানুষটি যে তোমাকে ভ’য়’ঙ্ক’র ভাবে ভালোবেসে ফেলেছিলাম কিন্তু এখন সেই ভালোবাসা ভ’য়’ঙ্ক’র প্র’তি’শো’ধে পরিণত হয়েছে।”

লায়ানা ব’ন্দু’ক রি’লো’ড করে তুহিনের দিকে তাক করতেই,লায়ানার হাত থেকে বন্দুক পড়ে যায়।লায়ানা মাথা চেপে ধরে ‘ আহ ‘ বলে ভুবন কাঁপানো চি’ৎ’কা’র করে উঠে,হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে।চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসতে শুরু করে।লায়ানা তুহিনের দিকে ব’ন্দু’ক তা’ক করলে পিছন থেকে তুহিনের গার্ড এগিয়ে এসে হকি স্টিক দিয়ে লায়ানার মা’থা’য় বা’রি ব’সি’য়ে দে’য়।

বাড়ির প্রবেশদ্বার দিয়ে এক এক করে কালো পোশাক পরা চল্লিশ – পঞ্চাশ জনের মত গার্ড প্রবেশ করে।সব শেষে চারজন রাফি আর আহান এর র’ক্ত মাখা নে’তি’য়ে পড়া শরীর নিয়ে প্রবেশ করে।লায়ানা ঝাপসা চোখে তাকায়, ঠুকরে কেঁদে উঠে রাফি আহানের অবস্থা দেখে।রাফি, আহান এর শরীরের প্রত্যেকটি জায়গা দিয়ে র’ক্ত গ’ড়ি’য়ে প’ড়’ছে।নে’তি’য়ে পড়েছে দুইটি দেহ।রাফি চোখ খোলার চেষ্টা করেও যেনো পারছে না।

আহান ঝাপসা চোখে তাকায় লায়ানার পানে। আতকে উঠলো আহান,লায়ানার পরনের শাড়ি এলোমেলো হয়ে আছে,হাতের কাঁচের চুরি গুলো ভেঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে,হাত পা ছি’লে র’ক্ত বেরিয়ে আসছে।মাথা ফেটে ঘাড় থেকে পিঠ বেয়ে র’ক্ত ফ্লো’রে গড়িয়ে পড়ছে।

লায়ানা কাঁদতে কাঁদতে বলে,”তোরা এত টা হা’রা’মী কিভাবে হতে পারিস।কিভাবে মে’রে’ছি’স ওদের।রাফি,আহান ভাই দেখ তাকা।প্লিজ তাকা।”

লায়ানা মাথায় চেপে ধরা রক্ত মাখা হাত সরিয়ে ব’ন্দু’ক’টি তুলে নেয়,ঝাপসা চোখে তুহিনের দিকে তাকিয়ে ব’ন্ধু’ক তা’ক করে সাথে সাথে গুলি করে দেয়।তুহিনের হাতে গিয়ে লাগে গু’লি। তুহিন চোখ মুখ কুচকে আরেক হাত দিয়ে চেপে ধরে হাতটি।তুহিনের গার্ডরা লায়ানার দিকে এগিয়ে আসতে চাইলে তুহিন হাত দেখিয়ে বারণ করে দেয়।
লায়ানা থেমে থাকে না রাফি আহানকে ধরে রাখা চারজন গার্ডের বুক বরাবর গু’লি ক’রে দেয়।রাফি,আহান হাঁটু ভাঁজ করে ফ্লোরে পড়ে যায়।তুহিন তার ব’ন্দু’ক বের করে লায়ানার হাতে থাকা ব’ন্দু’কে শু’ট করে দেয়,লায়ানার হাতে থাকা ব’ন্দু’ক’টি ছিটকে দূরে গিয়ে পরে।রাফি চোখ মেলে তাকায় মৃদু স্বরে বলে,”ম্যাম মাফ করে দিবেন আমায়।পারলাম না আমি এত গার্ডের সাথে পেরে উঠতে।”

আহান চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।লায়ানা কাঁদতে কাঁদতে বলে,”ভাই প্লিজ তাকা।প্লিজ ভাই আহান এমন করিস না চোখ বন্ধ করিস না ভাই প্লিজ ।রাফি দেখো হার মানতে নেই উঠে দাড়াও।রাফি প্লিজ,আমি পারছি না রাফি।”

লায়ানার চোখের সামনে সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসতে থাকে।লায়ানা হাত উঠিয়ে বলে,”তুহিন রাফিকে ছেরেদে প্লিজ।আমার ভাইকে হসপিটাল নিতে হবে তুহিন ও অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।প্লিজ দয়া কর।আমাকে মেরে ফেল আমার কিন্তু আমার ভাই কে ছেড়ে দে।”

তুহিনের একজন গার্ড লায়ানার দিকে ব’ন্দু’ক তা’ক করতেই রাফি উঠে দাড়ায় গার্ডটির থেকে ব’ন্দু’ক কেরে নিয়ে চোখের সামনে যাকে দেখতে পায় তাকেই গু’লি করতে থাকে।

তুহিন তার হাতের ব’ন্দু’ক উঠিয়ে রাফির দিকে তা’ক করলে লায়ানা চি’ৎ’কা’র করে বলে উঠে,”রাফি।”

রাফি ফিরে তাকায়,তুহিন রাফির বুক বরাবর গু’লি ক’রে দেয়,রাফি বুকে হাত রেখে ফ্লোরে লু’টি’য়ে পড়ে।লায়ানা নিজের সর্ব শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।দুই হাঁটু মুড়ে ফ্লোরে গা এলিয়ে দিয়েছে,চোখ দুটো বন্ধ হয়ে এসেছে।তুহিন লায়ানার সামনে এসে হাঁটু মুড়ে বসে বলে,”তোমার তেজ কেনো কমে না কুইন?”

লায়ানা তুহিনের প্রত্যেকটি কথা শুনতে পারছে লায়ানা বিড়বিড় করে বলে,”তুই বাঁ’চ’তে পারবি না তুহিন আমার বোন তোকে বাঁ’চ’তে দিবে না।”

তুহিন লায়ানার মাথায় হাত রেখে বলে,”তুমি একাই মা’ফি’য়া না কুইন ,এই তুহিন তোমার থেকেও বড় মা’ফি’য়া।তোমাকে আমি প্রথম যেদিন দেখেছিলাম তোমার এই তেজের প্রেমেই পড়েছিলাম।কী তেজ নিয়ে আমার লোকদের মেরেছো তুমি।তোমাকে কাছ থেকে দেখার এক প্রবল ইচ্ছা জেগে বসলো তারপর তোমার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট এর সিলেকশন প্রোগ্রামে আসলাম তুমি আমায়কেই সিলেক্ট করলে।
আমি যে গোপনে থেকেছি কুইন,আমার আসল পরিচয় সম্পর্কে কেউ জানেনা।আমি আমার ভাই অভ্র’র পিছনে গোপনে থেকে সব কাজ করিয়েছি,বাবেল এর মালিক অব্দি ওকে বানিয়েছিলাম যেনো কখনো কেউ আমাকে সন্দেহ না করে।তুমিও সকলের মতোই ভাবলে যে সেই আসল লিডার অভ্র।কুইন তুমি আমার বাবেল কে ধ্বং’স না করলে আজ তোমাকে এমন ভ’য়’ঙ্ক’র শা’স্তি দিতাম’ই না।আমি যে তোমায় খুব ভালবাসতাম কুইন।কিন্তু তোমার থেকেও বেশি ভালো আমি আমার বাবেল ইন্ডাস্ট্রিকে বাসতাম।তোমাকে তো শা’স্তি পেতেই হতো।আর শা’স্তি দেবো না তোমায়,তুমি চলো এইবার তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যাবো।”

বলেই তুহিন লায়ানাকে পাজা কোলে তুলে নিলো।গার্ডদের মধ্যে একজন বলে উঠল,”স্যার এই আহান কে কি করবো মে’রে ফেলবো?”

তুহিন লায়ানার মুখ পানে তাকিয়ে বলে,”আমার কুইন তার ভাইয়ের প্রাণের জন্য আমার কাছে দয়া অব্দি চেয়েছে।ওকে কিছু করার দরকার নেই এইভাবেই রেখে চলে আয়।”

তুহিন বেরিয়ে যায়,তার সাথে গার্ডরাও বেরিয়ে যায়।

.
আহনাভের গাড়ি বাড়ির সামনে এসে থামলো।গাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ির প্রবেশদ্বার খোলা দেখে ভ্রু কুচকে এলো আহনাভের।আহনাভ ভিতর প্রবেশ করে আহান,রাফির র’ক্ত মাখা দে’হ দেখে আতকে উঠলো।ছুটে আহান এর কাছে গিয়ে বলে উঠলো,”এই আহান তোমার এই অবস্থা কেনো?আহান।”

আহান বিড়বিড় করে বলে উঠলো,” আহনাভ বোনকে বাঁচাও ওরা বোনকে মেরে ফেলবে।”

আহনাভ ব্যাস্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,”আহান হায়া কোথায়?”

আহানের মুখ থেকে আর কোনো কথা বেরিয়ে আসলো না।আহনাভ পাশে ফিরে রাফির পালস চেক করে শিউরে ওঠে।আহনাভ রাফিকে ধাক্কা দিয়ে বলে,”এই রাফি।রাফি।”রাফি চোখ খুললো না,সে যে আরো আগেই পরপারে পারি জমিয়েছে।

আহনাভ দাড়িয়ে গেলো পুরো বারি চি’ৎ’কা’র করে ‘হায়া’ বলে লায়ানাকে খুঁজলো।কোথাও পেলো না আহনাভ লায়ানাকে।

রুদ্র বাড়িতে এসে গার্ডেনের দিকে পা বাড়াতেই অবাক হলো,বাড়ির গার্ড সহ তাদের সাথে চল্লিশ জনের থেকেও অধিক গার্ডদের দে’হ প’ড়ে আছে।

রুদ্র বাড়ির ভিতরে ছুটে এলো রাফি,আহানের এহেন অবস্থা দেখে সাথে সাথে এম্বুলেন্সের জন্য হসপিটালে ফোন করলো।রুদ্র আহান এর গালে মৃদু থাপ্পর দিতেই আহান চোখ খুলে তাকালো বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলো।রুদ্র ছুটে টেবিল থেকে পানি এনে আহানকে খাওয়ালো।আহান উঠে বসতে পারলো না,রুদ্র বলে উঠলো,”আহান কী হয়েছিল এইখানে?”

আহান মৃদু কন্ঠে বলা শুরু করলো,”তুহিন হচ্ছে আসল লিডার রুদ্র।আমি অফিস থেকে ফিরে এসে যখন সদর দরজার সামনে আসি আমাকে পিছন থেকে আঘাত করা হয়।ওদের গার্ডদের সংখ্যা ছিল খুব বেশি রুদ্র।ওরা বুঝে শুনেই এত গার্ড নিয়ে এসেছিল।রুদ্র আমার বোনকে ওই জা’নো’য়া’র আ’ঘা’ত করেছে,আমি কিছু করতে পারিনি রুদ্র।আমার বোনটি কে বাঁ’চা’ও রুদ্র ওরা বেশি দূর যায়নি রুদ্র।”

আহনাভকে সিঁড়ি বেয়ে নামতে দেখে রুদ্র আহানকে উঠিয়ে সোফায় বসালো,আহনাভের কাছে গেলো।আহনাভ পাগলের মত করছে।আহনাভ বলে উঠে,”পেলাম না রুদ্র আমার পাখি কোথায় রুদ্র?বাড়িতে কোথাও নেই সে।”

“স্যার আপনি এমন করবেন না আমি আমাদের আরো গার্ড দের ইনফর্ম করছি।”

আহনাভ পকেট থেকে ফোন বের করে মুগ্ধতাকে ফোন করতেই মুগ্ধতা রিসিভ করে বলে,”ভাইয়া তোমরা কখন আসবে?”

“আপ্পি হায়া নেই।”,আহনাভ এক এক করে সব খুলে বলতেই মুগ্ধতা আহিরের হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে গাড়ির দিকে চলে যায়। আহির অবাক হয়ে মুগ্ধতার পিছন পিছন দৌড়ে যায় বলে উঠে,”এই মুগ্ধ রানি কী হয়েছে?”

“আহির কথা বলার সময় নেই গাড়িতে উঠে বসুন।”, আহির গাড়িতে উঠে বসলো। ড্রাইভার কে যত দ্রুত গাড়ি চালাতে পারে তত দ্রুত গাড়ি চালাতে বলল মুগ্ধতা।

.
মুগ্ধতার গাড়ি বাড়িতে এসে থামতেই দৌড়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো মুগ্ধতা,আহির।মুগ্ধতা পুরো বাড়িতে চোখ বুলাতেই শিউরে উঠলো,সিঁড়ি থেকে শুরু করে একেক জায়গায় র’ক্ত।মুগ্ধতা রুদ্রর কাছে বড় বড় পায়ে এগিয়ে যায়,করলার চেপে ধরে ঝাঁঝে ভরা কণ্ঠে বলে,”রুদ্র এইখানের এই অবস্থা কেন?গার্ডরা কোথায়?বাড়িতে সিকিউরিটি এত কম কেন ছিল?লায়ানার কি হয়েছে?ও কোথায় আমি জানতে চাই রুদ্র আমি জানতে চাই।সিসিটিভি চেক কর।ওকে খুজে বের কর নাহলে আমি তোমাকে ছাড়ব না।কোন হা’রা’ম’জা’দা এই কাজ করেছে আমি ওকে ছাড়ব না।”

রুদ্র মৃদু কণ্ঠে বলে,”ম্যাম আমি হোটেলে গিয়েছিলাম তার মধ্যে এমন টা হয়েছে।এইসবের পিছনে আর কেউ না হায়াতি ম্যাম এর নতুন পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট তুহিন।তুহিন’ই ছিলো এত সব কিছুর মেইন লিডার,ম্যাম তুহিন আপনাদের থেকেও অনেক বড় মা’ফি’য়া।তুহিন এতদিন ম্যাম এর এসিস্ট্যান্ট সেজে ছিল।ম্যাম ওদের গার্ডদের সংখ্যা এতই ছিল যে আমাদের গার্ডরা পেরে উঠে না।ওরা সব কিছু জেনে শুনে এসেছে।ম্যাম আমাদের স্পেশাল ফোর্স ম্যামকে খুঁজতে নেমে পড়েছে।”

মুগ্ধতা নিজেকে সামলে সরে এসে বলে,”আহান,রাফি কোথায়?”

“ম্যাম রাফি আর আমাদের মধ্যে নেই।”বলেই থেমে যায় রুদ্র।পুনরায় বলা শুরু করে,”আহান এর অবস্থা ক্রিটিকাল।আমি সবাইকে হসপিটাল পাঠিয়ে দিয়েছি।”

রুদ্র টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়।টেবিলে রাখা ল্যাপটপ হাতে নিয়ে মুগ্ধতার কাছে এসে ভিডিও অন করে বলে,”ম্যাম সিসিটিভি ফুটেজ।”

মুগ্ধতা মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকে, যত বার লায়ানার গায়ে আ’ঘা’ত পেতে দেখলো মুগ্ধতা কেপে উঠলো।আহির এগিয়ে এসে মুগ্ধতার দুই বাহু শক্ত করে ধরে বলে,”মুগ্ধ আমাদের হায়াতি কে যত দ্রুত সম্ভব খুঁজে বের করতে হবে এই তুহিন হায়াতিকে আ’ঘা’ত করে ভালো কাজ করে নি।ওকে পেলে আমি মা’টি’তে পুঁ’তে রেখে দিবো।”

মুগ্ধতা দাঁতে দাঁত পিষে বিড়বিড় করে বলে,”একবার ওকে পেয়েনি।যে হাত দিয়ে আমার বোন কে স্পর্শ করেছে আ’ঘা’ত করেছে সেই হাত আমি নিজ হাতে কা’ট’ব।”

আহির আসে পাশে তাকিয়ে বলে উঠে,”রুদ্র আহনাভ কোথায়?”

“স্যার,আহনাভ স্যার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পা’গ’লে’র মত গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে।”

মুগ্ধতা,আহির একসাথে বলে উঠে,”ওকে যেতে দিলে কেনো?”,আর দাঁড়ালো না রুদ্র কে নিয়ে দুইজন বেরিয়ে গেলো।

#copyrightalert
#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here