#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_২৫
“আমার বোন কে ছেড়ে দে নাহলে তোদের ভালো হবে না বলছি।”মুগ্ধতা অস্থির হয়ে এক নিশ্বাসে কথাটি বলে উঠলো।
সামনে দাড়িয়ে থাকা হিং’স্র মনের মানুষ গুলোর মধ্যে একজন লায়ানার গ’লা’য় ছু’রি চে’পে ধরে রেখেছে তো পাশ থেকে দুইজন লায়ানার মাথায় ব’ন্দু’ক ধরে আছে।
.
শেষ ভ্রমন জায়গা, ঝুলন্ত ব্রিজ ঘুরে সকলে হোটেল ফিরে গিয়েছিল।তখন সূর্য দিগন্তে চলে গিয়ে আশপাশ অন্ধকারে ঢেকে দেয়।আহান মেয়েগুলোকে কোথায় রাখা হয়েছে তার গুপ্তচরের সাহায্যে জানতে পারলে,মুগ্ধতা আর লায়ানা তার টিম নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
.
ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘেরা জঙ্গলের মাঝে প্রবেশ করতেই কতগুলো লোক এসে পথ আটকায়,সংখ্যায় গুনে বুঝে ওঠা যাবে না কতজন।
.
হুট করেই একজন লায়ানার হাত টেনে ধরে লায়ানার গ’লা’য় ছু’রি চে’পে ধরে।এখন লায়ানা ওই অবস্থায় দাড়িয়ে আছে।
লোক গুলোর মধ্যে একজন পৈ’শা’চি’ক হাঁসিতে মেতে উঠে।হাঁসি থামিয়ে মুগ্ধতাকে বলে,”শুধু শুধু নিজেদের জীবন বাজি রেখে ওই মেয়েগুলোকে নিতে এসেছিস।আজ তোরা বাড়ি ফিরতে পারিস কিনা দেখ।”
লায়ানা চোখের ইশারায় আহানকে কিছু একটা বুঝানোর চেষ্টা করছে।আহান বুঝে উঠতে পেরে দুই তিনবার চোখের পলক ঝাপটায়।
.
হঠাৎ এক বি’ক’ট শব্দ হলো,লায়ানাকে ধরে রাখা তিনজন মাটিতে লু’টি’য়ে পড়লো।লায়ানা ঠোঁট বাঁকিয়ে হেঁসে মাটিতে পড়ে থাকা কৃষ্ণবর্ণের তিনজন লোকগুলোকে বলে,”উফ কী যেনো বলছিলে ডিয়ার ব্ল্যাক চকলেট’স।”
লায়ানাদের কিছু গার্ড আড়ালেই লুকিয়ে ছিল।তারাই ব’ন্দু’ক তা’ক করে তিনজনের বু’ক ব’রা’ব’র গু’লি করে।
.
পিছন থেকে লোকগুলো তে’ড়ে আশে মুগ্ধতা গার্ডদের ইশারা করতেই গার্ডরা হা’ম’লে প’ড়ে লোক গুলোর উপর।লায়ানা,মুগ্ধতা এর মাঝে দৌড় লাগায়,দূরেই বড় গোডাউনে আছে মেয়ে গুলো।
মুগ্ধতা,লায়ানা গোডাউনের সামনে এসে থেমে যায়।লায়ানা হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,” বনু লেটস গো।”
বলেই দুজন গোডাউনের শাটার টেনে খুলে ফেলে।লায়ানা,মুগ্ধতা ভিতরে ঢুকে দেখে পুরো গোডাউন খালি।শুধু মাত্র সামনে দুইটি ট্যাংক রাখা।মুগ্ধতা ট্যাংক দুইটি ভালো করে লক্ষ্য করে চেঁচিয়ে বলে উঠে,”লায়ানা ট্যাংকে ব’ম ফি’ট করা।”
লায়ানা নিজের চুল নিজেই এলোমেলো করে বলে,”এত কিছু করা লাগে ভাই!ব’ম ফি’ট করেছে কেনো?এই ব’ম ডি’ফি’উ’জ কিভাবে করবো।আজ কী অকালেই টপকে যেতে হবে।”
মুগ্ধতা ভ্রু কুঁচকে তাকায় লায়ানার দিকে।মুগ্ধতা ট্যাংকের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,”তুই আমি একবার ব’ম ডি’ফি’উ’জ করেছিলাম তোর মনে আছে লায়ানা?আয় ট্রাই করি।”
লায়ানা চোখ বড় বড় করে বলে,” আহ তারপর ব’ম ডি’ফি’উ’জে’র বদলে যদি ব’ম ফাটিয়ে দি তখন কী হবে?”
মুগ্ধতা হেঁসে বলে,”তোর এইসব কথা বাদ দিয়ে আসবি।”
লায়ানা এগিয়ে যায়।বাম পাশের ট্যাংকের সামনে লায়ানা মাটিতে গোল হয়ে বসে পড়ে।
দশ মিনিট চেষ্টার পর মুগ্ধতা একটি ট্যাংকের ব’ম ডি’ফি’উ’জ করে ফেলে আর লায়ানা একটি তার কেটে তার দুই কানে হাত দিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠে,” বনুই এইবার ব’ম ফাটবে নয়তো ডি’ফি’উ’জ হয়ে যাবে।”
মুগ্ধতা কপালে হাত দিয়ে বলে উঠে,”দেখ বলদি ডি’ফি’উ’জ হয়ে গিয়েছে।”
লায়ানা লাফ দিয়ে উঠে দাড়িয়ে নিজেকে নিজেই সাবাসি দিয়ে বলে,”উফ লায়ানা তুসি গ্রেট হো।”বলেই ট্যাংকের দরজাটি খুলে দেয়।
ভিতরে থাকা মেয়েগুলো হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে আসে।মুগ্ধতা বলে,”তোমরা সবাই ঠিক আছো?”
একটি মেয়ে বলে উঠে,”আপু আমাদের মধ্যে একটি মেয়েকে ওরা নিয়ে গিয়েছে।” বলেই কেঁ’দে ওঠে।
“কোথায়?”,লায়ানা বলতেই মেয়েগুলো হাতের ইশারায় গোডাউনের শেষ প্রান্তের ঘরটি দেখিয়ে দেয়।
লায়ানা,মুগ্ধতা দৌড়ে গোডাউনের শেষ প্রান্তে চলে আসে।ঘরটির কাছে এসে দেখে ঘরটির দরজা ভিতর থেকে আটকানো।
মুগ্ধতা পাশে পড়ে থাকা রড নিয়ে দরজায় অনবরত বা’রি দিতে থাকে।আচমকা দরজা খুলে দেয় একজন পুরুষ।দরজা খুলতেই দেখা মেলে মেয়েটির প’ড়ে থা’কা নি’থ’র দে’হ’টি।
মুগ্ধতা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে সামনে দাড়িয়ে থাকা পুরুষটির দিকে তাকায় অতঃপর হাতে থাকা রড দিয়ে লোকটিকে এ’লো’পা’থা’ড়ি মা’র’তে থাকে।লায়ানা ঘরের ভিতর ঢুকে আবিষ্কার করে আরো একটি মেয়ের দে’হ পাশেই বসে আশে আরো একজন পুরুষ।
লায়ানা কোমড় থেকে ব’ন্দু’ক বের করতেই লোকটি পাশে পড়ে থাকা টি শার্ট নিয়েই দৌড় লাগায়।”বনু আমি আসছি।”,বলেই লায়ানা লোকটির পিছু দৌড়ে যায়।
.
আহনাভ নিজের রুম থেকে বেরিয়ে মুগ্ধতাদের রুমের সামনে এসে দরজায় দুই তিনবার বাড়ি দিয়ে বলে,”মুগ্ধতা আপ্পি দরজা টা একটু খোলো।”
আহনাভ পুনরায় অনেক গুলো বারি দিয়ে একই কথা শুধায়।কেউ দরজা না খুললে আহনাভ বলে উঠে,”তোমরা কী ঘুমিয়ে পড়েছ?আসলে আমরা ভাবছিলাম আমি,হায়া,তুমি, আহির আপুরা মিলে আজ রিসোর্টে ডিনারে যাবো।”
আহির পাশে এসে দাড়িয়ে বলে,”কী হয়েছে।”
“দরজা খুলছে না।মনে হয় ক্লান্ত হয়ে দুইজন ঘুমিয়ে পড়েছে।”
“তাহলে ডাকিস না চল আমরাই যাই ওদের জন্য খাবার নিয়ে আসা যাবে।”
আহিরের গাড়িতে আলিযা,আফ্রা, সহিরাহ আর আকাশ বসেছে।আহিরের গাড়িতে জায়গা না থাকায় আর যেতে পারলো না একসাথে।আহনাভ নিজের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে।
.
জঙ্গল পেরিয়ে নির্জন সড়কে চলে এসেছে লোকটি,পিছন পিছন লায়ানা।লায়ানা হাঁপাচ্ছে।লায়ানা হাতের ব’ন্দু’ক তা’ক করে লোকটির পায়ে গু’লি করতেই লোকটি তার পা চেপে ধরে আ’র্ত’না’দ করে উঠে।
লায়ানা হেঁসে বলে,”এইবার কোথায় পালাবি?”লায়ানা রাস্তার ওপর পাশ থেকে বাঁশ এনে লোকটিকে পালানোর সময় না দিয়েই ইচ্ছেমত মা’র’তে থা’কে লোকটিকে।
লায়ানা এক পর্যায়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বাঁশ হাত থেকে ফেলে দেয়,লোকটি উঠে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যেতে থাকে।লায়ানা ধীর পায়ে এগোতে এগোতে বলে,”তোদের এত শরীরে জ্বালা কোন জায়গা থেকে আসে?ওই মে’য়ে গুলোর গা’য়ে হা’ত দি’লি কী করে?” শেষ কথাটি অনেকটাই চেঁচিয়ে বলে লায়ানা।
“তোদের মত জা’নো’য়া’র’দে’র বেঁচে থাকার অধিকার নেই।”বলেই ব’ন্দু’ক তা’ক করলে হুট করে আহনাভ সামনে চলে আসে।
লায়ানা ঘাবড়ে যায়। আহনাভ চোখ মুখে এক রাশ বিস্ময় নিয়ে বলে,” কী করছো।তুমি এই লোকটিকে মা’র’ছো?”
লায়ানা লোকটির দিকে তাকালো অতঃপর বলল,” দেখো আহনাভ সরো বলছি।”
আহনাভ ঘাড় ঘুরিয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনি পালান আমি আছি এইখানে।” লোকটি এক পা ধরেই পালাতে লাগল।লায়ানা ছুটে যেতে নিবেই আহনাভ লায়ানার দুই বাহু চেপে ধরে বলে,”কী করছিলে?”
লায়ানা চেঁচিয়ে বলে উঠে,”ছাড়ো আমাকে।আমি তোমাকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই।”
আহনাভ লায়ানার দুই বাহু আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলে,” আজ আমি না আসলে তুমি ওই লোকটাকে মে’রে ফে’ল’তে?”
“অবশ্যই।ওকে মে’রে শে’ষ ক’রে ফেলতাম আমি।আহনাভ ছাড়ো আমাকে নাহলে।”
“নাহলে কী আমাকে মারবে।”
“আহনাভ ছাড়ো বলছি।” বলেই নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে আহনাভ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দূরে সরে আসে লায়ানা।লোকটি এখনও লায়ানার দৃষ্টির সীমানার বাইরে যায়নি,লায়ানা ব’ন্দু’ক উঠিয়ে চার-পাঁচ না ভেবেই গু’লি ক’রে দেয়।
গু’লি গিয়ে লোকটির পিঠে লাগতেই লোকটির মুখ থেকে অ’ন’র্গ’ল র’ক্ত বে’রি’য়ে আ’সে,ধপ করে মাটিতে পড়ে যায়।
আহনাভ চেঁচিয়ে বলে উঠে,”কী করলে তুমি এইটা?”
লায়ানা আহনাভের দিকে তাকিয়ে বলে,”ওর করা কর্মকাণ্ডের জন্যই ওকে মে’রে’ছি।”
লায়ানা চোখ বন্ধ করে এক বড় শ্বাস নিয়ে আহনাভের দিকে এগিয়ে যেতে নিলে আহনাভ লায়ানার র’ক্ত মাখা হাত পানে তাকিয়ে পুনরায় লায়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি খু’নি!”
” শুনো আহনাভ আমি সব বলছি তোমায়।”
আহনাভ পিছিয়ে যেতে যেতে বলে,”তুমি আমার সামনে আসবে না।তুমি খু’নি।”
লায়ানা দৌড়ে আহনাভের কাছে এসে আহনাভের হাত ধরে বলে,”এমন বলো না আহনাভ।প্লিজ শুনো বোঝার চেষ্টা করো।দেখো আমি তোমাকে সব খুলে বলছি।”
আহনাভ লায়ানাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।লায়ানা ছিটকে রাস্তায় পড়ে যায়।আহনাভ তর্জনী তুলে বলে,”ছুবে না আমাকে তোমার ওই হাতে।আমি তোমাকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম,ভেবেছিলাম হায়া দুষ্টু সভাবের হলেও মনটা তার খুব ভালো।কিন্তু।”
লায়ানা নিজের হাত ধরে আ’হ করে উঠে।হাতের অনেকটাই ছিলে গিয়েছে।লায়ানা অনুরোধের স্বরে বলে,”আহনাভ তুমি কেনো এমন করছো আমাকে কিছু বলতে কেনো দিচ্ছ না।প্লিজ দেখো তুমি বলেছিলে আমাকে ভুল বুঝবে না।”
“আমি তোমার মুখ দেখতে চাই না।তুমি আমার থেকে আর আমার পরিবার থেকে শত হাত দূরে থাকবে।”
আহনাভ বড় বড় পায়ে হেঁটে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে।লায়ানা চেঁচিয়ে বলে উঠে,” প্লিজ আহনাভ শুনো।জেও না একবার আমার কথা শুনো।”
আহনাভ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায়।লায়ানা নিজের র’ক্ত মাখা হাতের দিকে তাকিয়ে ঠুকরে কেঁদে উঠে।চিৎকার করে বলে উঠে,”এমন কেনো হয় বার বার সব ঠিক হয়ে আসলেই কেনো আবার আহনাভ আমাকে ভুল বুঝে দূরে ঠেলে দেয়।এইসব জা’নো’য়া’রা নিজেদের শরীরের জ্বা’লা মি’টি’য়ে না’রী’দে’র ছু’ড়ে ফেলে দেয়,তারপর মাথা উচু করে ঘুরে বেড়ায় এই সমাজে।ওদের বেঁ’চে থাকার অধিকার নেই।শুনে রাখো আহনাভ আমি কোনো ভুল করিনি।”
নির্জন সড়কে লায়ানার চিৎকারের ধ্বনি কয়েকবার প্রতিফলিত হয়ে কানে ভেসে আসছে।মুগ্ধতা আহানকে সব সামলাতে দিয়ে লায়ানার আসার রাস্তা ধরেই চলে এসেছে।মুগ্ধতা স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে,লায়ানাকে চিৎকার করে কথা গুলো বলতে শুনেছে মুগ্ধতা।
মুগ্ধতা এগিয়ে এসে লায়ানার পাশে বসে পড়ে।লায়ানা ঘাড় ঘুরিয়ে মুগ্ধতাকে দেখেই ঝাপিয়ে পড়ে মুগ্ধতার উপর,হা’উ’মা’উ করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,”বনু আহনাভ আবার ভুল বুঝলো আমায়।”
মুগ্ধতা চোয়াল শক্ত করে বলে উঠে,” মন তো চাইছে ওই আহনাভকে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পর বসিয়ে দি।সাহস কী করে হয় আমার বোনকে এইভাবে কাঁদাতে।”
#copyrightalert
#চলবে।
ভুলত্রুটি হলে আশা করি সকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।