ডুবেছি_আমি_তোমাতে #Aiza_islam_Hayati #পর্ব_৩২

0
212

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_৩২
এক পৈ’শা’চি’ক হাঁসির আওয়াজ সারা ঘরময় ভেসে বেড়াচ্ছে।পুরুষটি তার পৈ’শা’চি’ক হাঁসির ইতি টেনে গর্জে বলে উঠে,”এত কষ্ট করে ওই আহনাভ থেকে দূরে রাখার জন্য এই এক মাস তোমাকে কানাডায় কাজে ব্যাস্ত রাখলাম,শেষে কিনা আজ এক মুহূর্তের মাঝে দুজনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে গেলো।তোমাকে বলেছিলাম আমার তোমাকে ভালো লেগেছে কুইন,ওই আহনাভ থেকে দূরে থাকবে কিন্তু কুইন তুমি তো শুনলেই না আমার কথা।এমনিতেই আমার প্রত্যেকটা কাজে বা হাত চুকিয়েছ,প্রত্যেকটা কাজের বারোটা বাজিয়েছো শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে। ভালো করে আর কয়েকটা দিন কাটিয়ে নাও তারপর তোমাকে আমার জীবনে স্বাগতম কুইন।”

.
লায়ানাকে আহনাভ বাড়ির সামনে ড্রপ করে দিয়ে চলে গিয়েছিল।লায়ানা বাড়িতে এসে সকলের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে খাওয়া দাওয়া করে নেয় অতঃপর আহনাভের কথা মত ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
.
রাত দশটা ছুঁইছুঁই, আধ ঘণ্টা আগেই লায়ানার ঘুম ভেঙ্গেছে।ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি সে।
.
আহির,আহনাভ চলে এসেছে।বাড়ির নিচেই দাড়িয়ে আছে দুজন।আহির মুগ্ধতাকে ফোন করে জানালে মুগ্ধতা উত্তরে বলে,”হম আসছি।”

.
লায়ানা,মুগ্ধতা একে অপরে সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে আর বাড়ির সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে আহনাভ, আহিরের দিকেই এগিয়ে আসছে।আহনাভ বাইকে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে ছিল লায়ানাকে দেখেই সটান হয়ে দাড়িয়ে যায়,আনমনে বুকের বা দিকে হাত দিয়ে বলে উঠে,”উফ বউ তোমার ওই ঘায়েল করা হাসি ঠিক বুকের বা দিকে গিয়ে লাগছে গো।আজ তো তোমায় আমার পুতুল বউ লাগছে।”(লায়ানার পরনে একটি আকাশি ও সাদা রঙের মধ্যে মিনি ফ্রক,সাদা রঙের জিন্স ও সাদা রঙের বুটস।তার এক হাতে চাবি ঘুরাচ্ছে আরেক হাতে হোয়াইট হেলমেট মুখে কোনো প্রসাধনীর ছোয়া নেই শুধুমাত্র ঠোঁটে হালকা লিপ্সটিক)

আহির বাইকের উপর বসে ছিল মুগ্ধতার পানে তাকিয়ে বাইক থেকে পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নেয়।চোখ বড় বড় করে আহির তাকিয়ে আছে মুগ্ধতার পানে।বিড়বিড় করে বলে উঠে,”এইটা কী আমার বউ?”(মুগ্ধতার পরনে অফহোয়াইট রঙের এক বো টাই টপ আর কালো রঙের জিন্স, কালো রঙের বুটস এক হাতে চাবি ঘুরাচ্ছে তো আরেক হাতে ব্ল্যাক হেলমেট, তারও মুখে কোনো প্রসাধনীর ছোয়া নেই শুধু ঠোঁটে হালকা লিপ্সটিক)

আহির আনমনে বলে ফেলে,”আবার নতুন করে প্রেমে পড়ে গেলাম মুগ্ধ রানি।”
.
দুজন আহির , আহনাভের সামনে এসে দাঁড়ালে আহির আর আহনাভ,মুগ্ধতা আর লায়ানার হাতে চাবি দেখে একসাথে প্রশ্নসূচক চাহনিতে তাকিয়ে বলে উঠে,”এটা কীসের চাবি?

মুগ্ধতা লায়ানা একসাথে বলে,”আমাদের বাইকের চাবি”

আহির,আহনাভ অবাক হয়ে বলে উঠে,”এর মানে কী?আমাদের বাইক আছে তোমরা নিজেদের বাইকে আলাদা যাবে নাকি?

মুগ্ধতা বলে,”অনেক দিন হলো বাইক চালাই না আজকে সুযোগ হাত ছাড়া কি করে করি?

লায়ানা বলে,”আমরা নিজেদের বাইকে যাবো আর তোমরা নিজেদের বাইকে।আর কী বলো একটা রেস’ও করা যাবে।জামাই ভার্সেস বউ।”

এহেন কথা শুনে দুই ভাই তাদের বউকে বাহু টেনে নিজের কাছে নিয়ে একই তাল মিলিয়ে বলে উঠে,”নাহ আমরা বাইক চালাবো একি বাইকে যাবো প্রয়োজন পড়লে আমাদের বউরা আমাদের বাইক চালিয়ে আমাদের রাইড দিতে পারে এইটা কিন্তু মন্দ হয় না।”

লায়ানা মুগ্ধতা দুজন দুজনের দিকে কিয়ৎকাল তাকিয়ে থেকে বলে,”ডান।চলুন যাওয়া যাক।”

লায়ানা আহনাভের বাইকে ও মুগ্ধতা আহিরের বাইকে উঠে বসে তাদের পিছন উঠে বসে আহির আর আহনাভ।অতঃপর চারজন তাদের হেলমেট পড়ে নেয়।

লায়ানা বলে উঠে,”লেট’স গো বনু।”,বলেই বাইক স্টার্ট দিয়ে ছুটিয়ে নিয়ে যায় মুগ্ধতা,লায়ানা।

.
বিশৃঙ্খল সড়ক যেনো রাতে নিস্তব্ধ সড়কে পরিণত হয়ে উঠে।রাস্তার পাশে শাড়ি শাড়ি ল্যাম্প পোস্টের আলো রাতের অন্ধকার মুছে দিয়ে সড়ক গুলোকে আলোকিত করে তুলে।

লায়ানা,মুগ্ধতা এই নিস্তব্ধ সড়কে তাদের বাইক ছুটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।আহনাভ দুই হাতে লায়ানার কোমড় জড়িয়ে বলে উঠে,”আমার বউ কে শুধু দেখেছি বাইক চালাতে আজ তো তার সাথে রাইড নিয়ে মনে হচ্ছে বউ আমার থেকেও ভালো বাইক চালায়।”

লায়ানা হেঁসে বলে,”আমার খুব ইচ্ছে ছিল বাইক চালানোর বুঝলে জামাই।কানাডা যাওয়ার পর আমি বাইক চালানো শিখি তারপর টাকা জমিয়ে প্রথম নিজের একটি বাইক কিনি।আর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আমার বাড়ির গ্যারেজে বাইকের অভাব নেই।বিয়ের পর কানাডা গিয়ে আগে তোমাকে আমার বাইক গুলো দেখাবো।”

“আমার বউয়ের একেকটা গুন দেখে তো আমি মুগ্ধ।বউ আমার মা’ফি’য়া,বেস্ট আর্কিটেক্ট,ভালো রাইডার আরো কত গুণ দেখানো বাকি আছে বউ?”

লায়ানা হো হো করে হেসে উঠে।আহনাভ লায়ানার কাঁধে ওষ্ঠ ছুঁয়ে বলে,”বউ আমার গুনবতী।”

লায়ানা কেঁপে উঠে,হুট করেই ধমকে বলে উঠে,”আহনাভ এমন অসময় উল্টো পাল্টা কিছু করলে বাইক অক্সিডেন্ট হবে আর তুমি আমি আমাদের ছেলে মেয়ের মুখ দেখার আগেই টপকে যাবো।”

আহনাভ হেঁসে বলে,”আমার বউ বাইক চালাচ্ছে যাই হয়ে যাক অ্যাকসিডেন্ট তো হতে দিবে না আমি সিওর।আর বউ যে আমার স্পর্শে কেঁপে উঠে আমার তো ভালই লাগে।”

“তুমি বড় সরো অ’স’ভ্য হয়ে গিয়েছ আহনাভ।”

“উফ বউ কে এক মাস পর পেয়ে অ’স’ভ্য তো হবোই।”

“তুমি এমন জ্বা’লা’ত’ন করছো না দাড়াও বাইক থামাই একবার তারপর তোমাকে এমন জোরে কামড়ে দিবো না সারাজীবন মনে থাকবে।”

“আমিও রেডি পাখি।”

আহনাভ বলতেই লায়ানা বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দেয়।আহনাভ আরো শক্ত করে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে লায়ানাকে।

.
আহির মুগ্ধতার কোমড় জড়িয়ে ধরেছে।আহির বলে উঠে,”মুগ্ধ রানি শুনেছিলাম তোমার বাইক আছে কিন্তু আজ তো আমি তোমার বাইক চালানো দেখে পুরোই মুগ্ধ।”

“আহির সাহেব আরেকটু স্পিড বাড়াই কেমন হবে?”

আহির জোরে বলে উঠে,”এই না না।অনেক স্পিডে চলছে বাইক পড়ে দেখা যাবে এই আহির উড়ে গিয়ে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে পড়বে।”

“আপনার মত সত্তর কেজির বস্তা সহজে উড়বে না।”

“হম তাও কথা এখন তো সত্তর প্লাস হয়ে গিয়েছি।”আহির থামলো পুনরায় বলল,”আর আরেকটা কথা কী জানো মুগ্ধ রানি আজ তোমার এই নতুন রূপে আমি নতুন করে প্রেমে পরেছি।আজ যে এক অন্য মুগ্ধ রানি আমার কাছে।”বলেই মুগ্ধতার ঘাড়ে মুখ গুজে নেয় আহির, আহিরের নিশ্বাস গিয়ে মুগ্ধতার গলায় পড়তেই মুগ্ধতা নড়ে উঠে, আহিরের ওষ্ঠ গিয়ে মুগ্ধতার কাঁধে লেগে যায় তখনই মুগ্ধতা জোরে ব্রেক কষে বাইক থামিয়ে দেয়।আহির নিজেকে সামলে বলে,”মুগ্ধ রানি এভাবে বাইক থামালে কেন?

মুগ্ধতা নড়ে চড়ে বলে উঠে,”আপনি আমার ঘাড়ে মুখ গুজে ছিলেন কেন?আপনি জানেন আমার ঘাড়ে সুরসুরি আমি এভাবে থাকতে পারি না কেমন যেন লাগে।”

আহির দুষ্টু হেসে বলে,”ওহ তাই বুঝি।আচ্ছা আবার সুরসুরি দেই একটু?”

মুগ্ধতা চেঁচিয়ে বলে উঠে,”দূর হও ভাই।অনেক সুরসুরি লাগে।”

আহির মুগ্ধতা কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুজে বলে,”আমি তো দূরে যেতেই চাই না।”

মুগ্ধতা পুনরায় চেঁচিয়ে বলে উঠে,”আহহহহহহহহ সরুন সুরসুরি লাগে বেশি করলে এখানেই রেখে চলে যাবো।ছাড়ুন সুরসুরি লাগছে আম্মায়ায়া।”

আহির হো হো করে হেঁসে উঠে,মুগ্ধতা কে ছেড়ে দিয়ে বলে,”হম ছেড়ে দিলাম।এইবার বাইক স্টার্ট দাও হায়াতি আর আহনাভ তো কত দূর চলে গেলো।”

“ঠিক আছে স্টার্ট দিচ্ছি।আর শুনুন কোমড় ধরেছেন ঠিক আছে আবার এমন করলে তুলে আছার মারবো বলে দিলাম।”,বলেই বাইক স্টার্ট দেয় মুগ্ধতা।স্পিড বাড়িয়ে ছুটিয়ে নিয়ে যায়।

.
দুজন একটি লেকের সামনে এসে বাইক থামালো।হেলমেট খুলে বাইক থেকে নেমে এলো চারজন।

মুগ্ধতা আহিরের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে,”কেমন লাগলো রাইড টা?”

“মাথা চক্কর দিচ্ছে,আমার পৃথিবী ঘুরে যাচ্ছে।এত স্পিড দিয়েছিলে কেনো?”

“আহ আপনি তো বললেন ওরা দূরে চলে গিয়েছে স্পিড না দিলে ধরতাম কী করে।”

আহির মুগ্ধতার হাত ধরে বলে,”হম বুঝলাম। চলো এবার লেক টা ঘুরে দেখি।”

আহির,মুগ্ধতা লেকের পাশে বসার দিকটিতে গেলে,লায়ানা উচু হয়ে আহনাভের গলায় কামড় দিয়ে বসে।আহনাভ চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে দুই হাতে লায়ানার কোমড় জড়িয়ে ধরে।লায়ানা ছেরে দিয়ে বড় শ্বাস নিয়ে বলে,”দিয়েছি কামড়।আর করবে এমন বলো?”

আহনাভ লায়ানাকে নিজের সাথে লেপ্টে নিয়ে বলে,” তোমার থেকে এমন লাভ বাইট পেতে আরো ওমন করতে রাজি আমি।”

লায়ানা ধাক্কা দিয়ে আহনাভের থেকে সরে এসে বলে,”তোমাকে তো মন চাইছে ওই লেকের পানিতে নিয়ে চুবিয়ে আনি।”

“আরেহ পাখি রেগে কেনো যাও।চলো তো দেখি আপ্পি আর আহির গিয়ে বসে আছে।

.
দুজন গিয়ে ওপর পাশে বসে পড়ে।আহনাভ লায়ানার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,”জানো পাখি আজ তোমাকে পুরো পুতুল লাগছে।এমন করে অন্য কারো সামনে সাজবে না বুঝলে নজর দিয়ে দিবে আমার হায়া পাখির উপর।”

লায়ানা ভ্রু কুচকে বলে,” কোথায় সেজেছি আমি? শুধু লিপস্টিক দিয়েছি।”

“এই মিনি ফ্রক, জিন্স, বুটস আর চুল ছেড়ে রাখা পুরোই মাতাল করা রূপ তোমার।”

“তুমি এত ফ্লার্ট করতে পারো কী করে জামাই?”

“প্রথম থেকে তুমি ফ্লার্ট করতে করতে আমাকে তোমার জালে আটকেছো এখন বলছো আমি এত ফ্লার্ট করি?”

লায়ানা আহনাভের কাঁধে মাথা রেখে আকাশ পানে তাকিয়ে বলে,”ভালোবাসি যে তোমাকে আহনাভ মশাই।আচ্ছা এই এক মাসে কী এমন হলো যে আমার জামাই রোম্যান্টিক হয়ে গেলো?”

“তুমি আমাকে যেই অবস্থায় রেখে গিয়েছিলে।ওই রাঙামাটির ঘটনায় যত ভুল বোঝাবুঝি।তারপর তোমার মুখ থেকে সেদিন ওই কথা গুলো শুনে যেনো থমকে গিয়াছিলাম।আমি সেদিন তোমাকে না পেয়ে এয়ারপোর্ট গিয়েছিলাম একবার হলেও চেয়েছিলাম মাফ চাইবো কিন্তু কী ভাগ্য আমি গাড়ি থেকে নামতেই প্লেন ছেড়ে দিয়েছে।অনেক কষ্টে কেটেছে এই এক মাস।এই এক মাসে যেনো আরো গভীর ভাবে মায়ায় পড়ে গেলাম তোমার।আচ্ছা আমি তোমাকে কত বার ফোন করেছি বলো, তুমি কেনো ফোন ধরলে না আমার।”

“আমি বলেছিলাম আমি তোমাকে আর জ্বা’লা’বো না তাই ফোন ধরিনি জ্বা’লা’ই’নি তোমাকে।”

“ফোন না ধরেই আমাকে আরো জ্বা’লি’য়ে’ছো তুমি।”

লায়ানা নিশব্দে হাঁসে।

.
মুগ্ধতা আহিরের হাত ধরে বলে,”আসুন না আমরা ওই লেকের পানিতে চুবান চুবাই খেলি।”

আহির আড় চোখে তাকিয়ে বলে,”সিরিয়াসলি?”

“না সিরিয়াস না মজা করছিলাম।আরেহ ভাই আসলেই বলেছি চলেন।আমি আপনাকে একবার চুবাবো এর পর উঠিয়ে আপনাকে আবার চুবাবো।”

আহির হেঁসে বলে,”আর আমি তোমাকে চুবিয়ে ধরে রাখবো কেমন হয় বলো তো!”

মুগ্ধতা জোরে হাসি দিয়ে বলে,”নো প্রব্লেম আমি ম’র’লে আপনারই লাভ আপনি আরামসে থাকতে পারবেন।আমার মতো জ্বালানো বউ থাকবে না।”

আহির ধমক দিয়ে বলে উঠে,”জাস্ট শাট আপ,ম’রে যাবে এর মানে কী আমি বলেছি মানে কি তোমাকে এমন করবো কখনো?আর কখনোই মরে যাওয়ার কথা মুখে আনবে না।” বলেই উঠে হাঁটা ধরে আহির।

মুগ্ধতা মনে মনে বলে,”উফফ এই লোকটা যে খালি এরকম গাল ফুলায় না ভালোই লাগে হিহি।”

মুগ্ধতা উঠে আহিরের পিছনে দৌড়ে যায় আহিরের হাত ধরে তাকে ঘুরিয়ে বলে,”আচ্ছা বাবা আর বলব না এমন।”বলেই আহিরের গালে অধর ছুঁয়ে দেয় মুগ্ধতা।অতঃপর সরে এসে বলে,এভাবে বাচ্চাদের মতো খালি গাল ফুলান কেনো?কিছুদিন পর বাচ্চার বাবা হবেন এখনো বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে হাটা ধরেন।”

আহির হেঁসে উঠে।মুগ্ধতার হাত শক্ত করে ধরে বলে,” তুমি হুটহাট এসে এভাবেই চু’মু খেয়ে রাগ ভাঙ্গালে আমি তো সবসময় গাল ফুলিয়ে রাখতে রাজি।আর আমাদের পূচকু আসার পর নাহয় পূচকু আমি একসাথে গাল ফুলিয়ে বসে থাকবো।”

“আমিও জানি কিভাবে গাল ফুলানো থামাতে এক্কেবারে ঘুসা মেরে হাওয়া বের করে দিবো।”

আহির মুগ্ধতাকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে বলে,”তোমার এই রূপে ফিরে এসো না আমি এখন রোম্যান্টিক মুডে আছি।আচ্ছা তুমি চুপ থাকো আমি বরং আমার বউয়ের জন্য একটি গান ধরি।”

“হুম হুম শুনি যে আমার হাসবেন্ড মি.আফরান আবরাহার আহির আমার জন্য কেমন গান গায়।”

আহির মলিন হেঁসে সুর তোলে,

~রাব কী কাওয়ালি হে ইশক কই
দিল কী দিওয়ালি হে ইশক কই
মেখি সি পেয়ালি হে ইশক কই
সুবাহ কী লালি হে ইশক কই
গিরতা সা ঝার্ণা হে ইশক কই
উঠতা সা কামলা হে ইশক কই
সা মেইন লিপটা হে ইশক কই
আখো মেইন দিখতা হে ইশক কই

মেরে দিল কো
তু জান সে যুদা কার দে
ইউ বাস তু মুজকো ফানা কার দে
মেরা হাল তু, মেরি চাল তু
বাস কার আশিকানা

তেরে ওয়াস্তে মেরা ইশক সুফিয়ানা
মেরা ইশক সুফিয়ানা
মেরা ইশক সুফিয়ান
তেরে ওয়াস্তে মেরা ইশক সুফিয়ানা
মেরা ইশক সুফিয়ানা
মেরা ইশক সুফিয়ানা ~

আহির থেমে গেলো।পুরো গান জুড়ে মুগ্ধতা আহিরের মুখ পানে তাকিয়ে ছিল।আহির হেঁসে বলে,”হম কেমন লাগলো মুগ্ধ রানি।”

“কেমন লাগলো আবার ভালোই লেগেছে।”বলেই অন্যদিকে ফিরে মুচকি হাঁসে মুগ্ধতা।

আহির বলে উঠে,”ঐদিকে তাকিয়ে মুচকি না হেসে তোমার ওই শরম পাওয়া মুখ টা আমাকেই দেখাতে পারো।”

মুগ্ধতা ঠিক হয়ে আহিরের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি কোনো শরম-টরম পাইনি হুহ।”

“আমি কিন্তু সবই দেখতে পাই মুগ্ধ রানি শরম-টরম পাও কী পাও না।”

“তো কানা তোহ না যে দেখতে পাবেন না চোখ আছে দেখবেনই।আকাশ, মাটি,পানি সবই তো দেখেন।”

“সাথে মুগ্ধ রানি কেও ভালো করে দেখি।”

মুগ্ধতা বলে,”আপনাকে আর আমার কিছু বলার নেই কোনো না কোনো ভাবে আমার কথা থামিয়ে দেন।”

“আমার কোনো দোষ নেই এইখানে আমি তো সত্যি বললাম।”

মুগ্ধতা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।

.
আহনাভ,লায়ানা মুগ্ধতা,আহিরের কাছে এগিয়ে আসে।আহনাভ বলে উঠে,”আহির চল সামনে ওই রোড টায় যাই,এখনও একটা বাজতে পনেরো মিনিট ঐখানের একটা রেস্তোরা আছে ছোট করে।এই সময়েও খোলা থাকে ওই রেস্তোরা।”

“ঠিক আছে চল।”

.
আহির আর আহনাভ বাইকে উঠে বসে এইবার তারা বাইক চালাবে তাদের পিছন মুগ্ধতা ও লায়ানা উঠে বসেছে।দুজন বাইক স্টার্ট দিয়ে ছেড়ে দেয়।
.
রাস্তার বা বাক নিতেই একটি ট্রাক আহনাভ এর বাইকের সামনে চলে আসে,আহনাভ বাইক ডান পাশে নিয়ে জোরে ব্রেক কষে বাইক থামিয়ে দেয়। আহির আহনাভের বাইকের সামনে এসে বাইক থামিয়ে নেমে আসে।

লায়ানা বাইক থেকে নেমে আহনাভের ডান হাত দেখে ব্যাস্ত কণ্ঠে বলে,”আহনাভ তোমার তো হাত কত খানি কেটে গিয়েছে ব্যাথা পেয়েছ বেশি।”

আহির,মুগ্ধতা ঘাবড়ে গিয়ে বলে,”ঠিক আছিস তোরা দুজন?”

লায়ানা আহনাভকে বলে উঠে,”এই তুমি নামো বাইক থেকে আমি ওই ট্রাক এর ড্রাইভার কে ছাড়বো না আজকে ওর ৩৬ গুষ্টি’কে উদ্ধার করে ছাড়বো।বেশি দূর যায়নি।নামো তুমি।ও কী নেশা করে ড্রাইভ করছিল দেখতে পায়নি চোখে।আজ ওর ভালো করে নেশা করিয়ে ছাড়বো আমি।”

আহনাভ লায়ানাকে বা হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,”পাগলী একটা,কিছু করতে হবে না।শান্ত হও।কিছু হয়নি আমার।”

লায়ানা আহনাভকে নিজের থেকে ছড়িয়ে নেয়। আহির নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে বলে,” আহনাভের হাত দে।” আহনাভ হাত এগিয়ে দিলে আহির রুমাল দিয়ে কাঁটা জায়গাটা বেঁধে দেয়।

লায়ানা আহনাভকে জোর করে বাইক থেকে নামিয়ে নিজে বসে বলে,”আমি চালাবো তুমি আমার পিছনে বসো।”আহনাভ কথা না বাড়িয়ে উঠে বসে, সে জানে এখন তার বউয়ের রাগ তুঙ্গে উঠে আছে।

.
রেস্তোরা টির সামনে এসে বাইক থামতেই দেখতে পায় রেস্তোরা বন্ধ করা হচ্ছে।আহনাভ বাইক থেকে নেমে বাঁধা দিয়ে বলে,”এক্সকিউজ মি।”

লোকটি আহনাভের দিকে তাকিয়ে চমকে বলে উঠলো,”আরেহ আহনাভ আপনি!এই সময়?”

আহনাভ ঘাড় ঘুরিয়ে মুগ্ধতা,লায়ানা, আহির এর দিকে তাকিয়ে বলে,”আমাদের সকলের অনেক খিদা লেগেছে মামা প্লিজ রেস্তোরা টা অফ করো না।”

লোকটি হাঁসলো বলল,”আপনি বলছেন আমি কি করে বন্ধ করি বলুন।ঠিক আছে আপনারা দাড়ান আমি টেবিল সাজিয়ে দিচ্ছি।”

.
আহনাভের ঠোঁটের কোণে এক বিজয়ী হাঁসি ফুটে ওঠে।রেস্তোরার বসার ব্যবস্থা এই খোলা আকাশের নিচেই করা হয়,আর তার সামনে ছোট একটি ঘরে ফুল দিয়ে সাজানো।সেই ঘরটিতেই রান্না করা হয়।
লোকটি চেয়ার টেবিল সাজিয়ে দিলে,চারজন রেস্তোরার বসে পড়ে।কিছুক্ষন পর লোকটি খাবার এনে তাদের সামনের টেবিলে সাজিয়ে দেয়।

.
আহনাভ লায়ানার গাল টেনে বলে,”কী হয়েছে পাখি এখনও মুখ ফুলিয়ে রেখেছে কেনো?”

লায়ানা নিজ হাতে খাবার নিয়ে আহনাভের মুখে পুরে দিয়ে বলে,”আমাকে যেতে দিলেই পারতে আহনাভ,ওকে আজ একটা উচিত শিক্ষা দিয়ে আসতাম।”

আহির ফিক করে হেসে বলে উঠে,”জামাই হলো বউ পাগলা,আর তার বউ হচ্ছে জামাই পাগলী।পাগলা পাগলির জরি।”

#copyrightalert
#চলবে।

ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে দয়া করে ক্ষমার সুন্দর দৃষ্টান্তে দেখবেন সকলে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here