অন্তহীন💜 #পর্ব_২২ #স্নিগ্ধা_আফরিন

0
454

#অন্তহীন💜
#পর্ব_২২
#স্নিগ্ধা_আফরিন

মেঘলা মধ্যান্হ!
একগুচ্ছ কৃষ্ণবর্ণীয় কাদম্বিনী ছেঁয়ে আছে অন্তরীক্ষে।ছাই রঙা বেশভূষা জানান দিচ্ছে অন্তরীক্ষের মনচিত্ত উদাসীন। গুমোট কালোর আধিপত্য বাড়ছে। পশ্চিম দিগন্তে কালো নীরদ বাহনের বিস্তার চলছে সেই ভোর থেকেই। ধরিত্রীর এমন গুমোট ভাবটা জানান দিচ্ছে ভারি বর্ষণ হবে আজ।বাম পাশের শাড়ির আঁচল টা বাতাসে উড়ছে। কোমর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া এলোকেশ গুলো অবাধ্য হয়ে চোখে মুখে এসে লুটিয়ে পড়ছে। ভেজা চুলের ডগা থেকে বিন্দু বিন্দু জল ফ্লোরে গড়িয়ে পড়ে অনেকটাই ভিজে গেছে।পিঠের অংশের ব্লাউজ টা ও ভিজে শেষ। গোসল করেই বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে চৈতি।নিস্পৃহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শূন্য গগনে।
রুমের ভেতর থেকে সেই কখন থেকে একটা কথাই ভেসে আসছে,”চৈতি ভেতরে আসো।এখনি বাহিরে ঝড় শুরু হয়ে যাবে।”
সেই ডাক কর্ণকুহরে পৌঁছালে ও আগ্রহ দেখায়নি সে। আগের মতই আকাশের দিকে ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো।
বার কয়েক ভাকার পর ও চৈতির কোনো সাড়া না পেয়ে রুম থেকে বারান্দার দিকে এগিয়ে যায় প্রহন। বারান্দার দরজার সামনে এসে চৈতির ভেজা চুলের দিকে চোখ পড়তেই আবারো রুমে ফিরে যায় সে। সোফার উপরে রাখা তোয়ালে নিয়ে আবারো চৈতির কাছে চলে গেল। পেছন থেকে চৈতির চুল মুছতে মুছতে শান্ত কন্ঠে বললো,”বড্ড অগোছালো হয়ে গেছো। গোসলের পর চুল মুছোনি কেন? পরিবেশ দেখেছো?ঠান্ডা লেগে যাবে তো।”
প্রহনের কথা শুনে নড়েচড়ে উঠলো চৈতি।
“এতো নড়চো কেন?চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো।”
গম্ভীর গলায় বলা বারণ শুনে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো চৈতি। প্রহন এক মনে চুলের পানি মুছিয়ে দিলো। আকাশের দিকে মুখ করে পাশে গিয়ে দাঁড়ালো প্রহন। উচ্চতায় মেয়েটা তার কাঁধ পর্যন্ত হয়। বলিষ্ঠ দেহের লম্বা শ্যাম বর্ণের মানবের পাশে চিকন শরীরের মাঝারি উচ্চতার ফর্সা বর্ণের মানবিকে মানিয়েছে দারুন। মিসেস ইয়াসমিন এর কথা রাখতে গোলাপি রঙের শাড়ি পরেছে আজ।হাতে সোনার চিকন দুটো চুড়ি ও পরেছে। গলায় সাধারণ একটা সোনার মালা।কানে ছোট ছোট দুল।বাম পাশের নাকে ছোট্ট একটা ফুল। সদ্য গোসল করে আসা রমনীকে এমন সাধারণ সাজে ফুটন্ত গোলাপ মনে হচ্ছে রিক্ত প্রেমিকের কাছে।সিক্ত অনুভূতি এসে কড়া নাড়ছে বা পাশের চিত্তে। বেশি সময় ধরে তাকিয়ে থাকতে পারলো না প্রহন।শত জনম চেয়ে থাকলেও তৃষ্ণার্ত নেত্রের তৃষ্ণা মিটবে না।
চৈতি কে নিষ্প্রাণ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল প্রহনের।
অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো সে,”কী হয়েছে চৈতি?মন খারাপ?”
চৈতি তাকালো না প্রহনের দিকে। প্রহন কোনো উত্তর না পেয়ে চৈতির দুই কাঁধে হাত রেখে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিতেই ছিটকে সরে গেল চৈতি।
নিষেধাজ্ঞা জারি করে উত্তেজিত গলায় বলে উঠলো,”আমাকে ছোঁবেন না। দূরে থাকুন,দয়া করে আমার কাছ থেকে দূরে থাকুন।”
চৈতির এমন ব্যবহারে হতভম্ব প্রহন। প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে চৈতির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে সে।
চৈতি হাফাচ্ছে।বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে আর ত্যাগ করছে। শরীর ও কাঁপছে মেয়েটার।
চৈতির এমন অবস্থা দেখে প্রহন বিচলিত কন্ঠে বললো,”কী হয়েছে চৈতি?বলো আমাকে। এমন করছো কেন?”
প্রহনের কথার প্রত্যত্তর করলো না চৈতি। সেখান থেকে ছুটে চলে গেল। চৈতির পেছন পেছন যেতে লাগলে ফ্লোরের পানিতে পা পিছলে যায় প্রহনের।পড়ে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নিয়ে দ্রুত পায়ে রুমের দিকে চলে গেল। রুমে এসে চৈতি কে পেলো না প্রহন। রুম থেকে বেরিয়ে মিসেস ইয়াসমিন এর কাছে যাওয়ার সময় পথ আটকে দাঁড়ায় মুহিত।
প্রহন কে দেখে হাসি মুখে বললো,”রোমান্টিক ওয়েদার ব্রো। বউয়ের সাথে রোমান্স না করে এত ব্যাকুল হয়ে কোথায় যাস?”
মুহিতের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো প্রহন। মুহিতের কাঁধে হাত রেখে নিষ্তেজ কন্ঠে বললো,”আমি করবো বউয়ের সাথে রোমান্স? এতো ভালো সৌভাগ্যবান মানুষ আমি না। সামান্য কাঁধ ধরতেই বউ আমার পলাতক।”

প্রহনের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো মুহিত।হাসি যেন থামছেই না। প্রহন যেনো তাকে খুব মজার কোনো কথা বলেছে। মুহিতকে এমন করে হাসতে দেখে বিরক্ত হলো প্রহন। মুখ দিয়ে বিরক্ত সূচক শব্দ করে বললো,”থাক তুই, আমি চৈতি কে খুঁজে আসি।”

“চৈতি,বাহ সুন্দর নাম তো। কিন্তু তোর বউকে আমি তো এখন ও দেখলাম না।”

প্রহন এক পলক মুহিতের দিকে তাকিয়ে ড্রইং রুমের দিকে চলে গেল।ড্রইং রুম ফাঁকা।কেউ নেই। রান্না ঘর থেকে বাসন কোসনের টুং টাং শব্দ শোনা যাচ্ছে। প্রহন সে দিকে এগিয়ে গেল। মিসেস ইয়াসমিন দুপুরের খাবারের জন্য সব কিছু তৈরি করছেন।ডাইনিং টেবিলের দিকে চোখ পড়তেই উত্তেজিত মন শান্ত হলো। গোলাপি রঙের শাড়ীর আঁচল মাথায় ঘোমটা দিয়ে টেবিলের উপর কনুই রেখে গালে হাত রেখে বসে আছে চৈতি।জল ভর্তি সামনের কাঁচের গ্লাসের দিকে নিবদ্ধ দৃষ্টি।
তার পাশের চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসলো প্রহন। মিসেস ইয়াসমিন তরকারির বাটি নিয়ে এসে রাখছেন আর ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন।
প্রহন চৈতির দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ করে বললো,”চৈতি কী হয়েছে তোমার বলো আমাকে। এমন মন খারাপ করে বসে আছো কেন তুমি?”

“প্রহন খারাপ মন রুমে গিয়ে ভালো করো। এখন তোমার আব্বু আর মুহিত কে ডাকো। খাবার খেয়ে যেতে বলো।”
মিসেস ইয়াসমিন এর কথা শুনে তার দিকে এক নজর তাকিয়ে বসা থেকে উঠে চলে গেল প্রহন। মিসেস ইয়াসমিন চৈতির পাশে এসে বসলেন। চৈতির ডান হাতটা নিজের হাতে নিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। মিসেস ইয়াসমিন এর চোখের দিকে তাকিয়ে চৈতি বুঝতে পারলো মিসেস ইয়াসমিন কী বলবেন তাকে।
“কী হয়েছে মন খারাপ কেন? প্রহন বকেছে?”

মিসেস ইয়াসমিন কে কী করে বলবে তার বুকের ভেতর বয়ে যাওয়া ঝড়ের কথা। ভেবে পাচ্ছে না সে। সকালে প্রহনের বলা কথাটাই যে মন খারাপের কারণ। লজ্জা জনক কথা। ছেলের বউ হয়ে শাশুড়ি কে সেই কথাটা বলা উচিত হবে না।সে যতই ফ্রী মাইন্ডের মানুষ হোক না কেন। কথাটা মজার ছলে বলা হলেও সেই কথার গভীরতা না বোঝার মতন এতোটা ও অবুঝ না চৈতি। প্রহনের মজার ছলে বলা কথাটা মনে দাগ কেটে গেছে যে। মিসেস ইয়াসমিন কে বুঝ দেওয়ার জন্য চৈতি বলে উঠলো,
“এমনিতেই ভালো লাগছে না।বাড়ি যেতে মন চাইছে। আব্বু আম্মু কে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব।”

চৈতির কথা শুনে মিসেস ইয়াসমিন তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,”বোকা মেয়ে।এই জন্য এমন করে মন খারাপ করতে হয়? আমরা সবাই আজ যাবো তো তোদের বাড়িতে। সকালে তোর আব্বু ফোন করে দাওয়াত দিয়েছেন সবাই কে নিয়ে যেতে।”
____________
খাবার টেবিলে মুহিত কে চৈতির দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে রেগে গেলো প্রহন।পা দিয়ে মুহিতের পায়ের উপর পাড়া দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,”খাবার খেয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়িতে চলে যা।”
প্রহনের এহেন কথায় ঘাবড়ে গেল মুহিত। চৈতির দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল। মুহিতের এমন করে তাকিয়ে থাকার জন্য অস্বস্থি হচ্ছিলো চৈতির। দ্রুত খাবার শেষ করে সেখান থেকে সরে পড়লো সে। প্রহন মুচকি হাসলো।

.
“মুহিত আমরা একটু বাইরে যাবো। তুমি কি যাবে আমাদের সাথে?”মিসেস ইয়াসমিন এর কথা শুনে মুহিত খুশিতে গদগদ করে বলে উঠলো,”আন্টি আপনারা তো আমার কাছের মানুষ। আপনাদের সাথে ঘুরতে যেতেই পারি।”

“না, মুহিত তো আমাদের সাথে যাবে না।ও তো বাড়িতে ফিরে যাবে।”
মায়ের কাছে আসতে আসতে কথাটা বলে উঠলো প্রহন। মুহিতের হাসি মুখ চুপসে গেল নিমিষেই।

“কেন প্রহন?”
“আসলে আম্মু ওর মা নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। একটু আগেই ফোন করলেন আন্টি। মুহিত কে পাঠিয়ে দিতে বললেন।”

“আল্লাহ।সে কি মুহিত, তোমার আম্মু তো অসুস্থ বাবা। মায়ের কাছে যেতে হবে তো।”

মুহিত প্রহনের দিকে তাকালো, প্রহন চোখ ছোট ছোট করে দাঁতে দাঁত চেপে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ সরিয়ে ফেললো মুহিত। প্রহন তাড়া দিয়ে বললো,”দোস্ত জলদি বের হ, বাহিরের অবস্থা ভালো না। ঝুম বৃষ্টি নামতে পারে।”
মুহিত কে নিয়ে গেস্ট রুমে চলে গেল প্রহন।
মুহিত ব্যাগ কাঁধে নিতে নিতে প্রহনের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”তোর বউয়ের দিকে তাকালে কী ফোস্কা পড়বে গায়ে?যার জন্য মিথ্যা বলে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছিস।”

প্রহন কোনো ভনিতা না করে বলে দিলো,”তোকে আমার সুবিধার লাগছে না। চলে যা আমাদের বাড়ি থেকে।”

প্রহনের এমন কথায় অপমান বোধ করলো মুহিত। রুম থেকে বেরিয়ে যাবার সময় পেছন ফিরে প্রহনের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,”ইউর ওয়াইফ ইজ সো হট।”
মুহিতের এমন কথায় প্রহনের রক্ত চড়ে গেল মাথায়। কপালের রগ গুলো ফুলে উঠলো রাগে। পেছন থেকে মুহিতের শার্টের কলার চেপে ধরে কাছে টেনে এনে ঠাসস করে একটা চড় বসিয়ে দিল মুহিতের বা গালে। রেগে গিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো,”হাউ ডেয়ার ইউ, আমার চৈতি কে এত বাজে উক্তি করার সাহস পাস কই থেকে? একদম কলিজা টেনে ছিঁড়ে ফেলবো।”

#চলবে,,,,

(বিঃদ্রঃ আসসালামুয়ালাইকুম।ভ্যাক্সিন দিয়ে জ্বর উঠে বসে আছে। দোয়া করিয়েন যেনো সুস্থ হয়ে যাই।🙂🥀)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here