অন্তহীন 💜 #পর্ব_৩৮ #স্নিগ্ধা_আফরিন

0
463

#অন্তহীন 💜
#পর্ব_৩৮
#স্নিগ্ধা_আফরিন

“এই মেয়ে এই তোমার নাম টা কি?বলে তো যাও।”
স্কুলে যাওয়ার সময় এমন কথা শুনে কনফিউজড হয়ে গেল চৈতি।কাকে কথাটা বলা হয়েছে তা দেখার জন্য পেছন ফিরে তাকাতেই দেখলো ইমরান নামের ছেলেটা বুকে দুই হাত গুজে চৈতির দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে হাসি হাসি ভাব।
চৈতি ইমরান কে দেখে এবার দ্রুত হাঁটতে লাগলো। চৈতি কে এত জলদি হাঁটতে দেখে ইমরান ও দ্রুত পায়ে হেঁটে চৈতির পাশে এসে পড়ে। ইমরান কে পাশে দেখে চৈতি ঘাবড়ে যায়।
“এমন করে পালিয়ে যাচ্ছো কেন মেয়ে?”
চৈতি থামলো।ইমারানের চোখের দিকে তাকিয়ে এক নিঃশ্বাসে বললো,”দেখুন আমি বিবাহিত। প্রহন চৌধুরীর স্ত্রী চৈতি চৌধুরী।দয়া করে আমাকে এমন বিরক্ত করবেন না। আমার স্বামী জানতে পারলে তখন অযথাই আমাকে ভুল বুঝবে। এবং আমাদের সুন্দর সম্পর্ক টা নষ্ট হবে।”
চৈতি বিবাহিত কথাটা ঠিক হজম হলো না ইমরানের।তার মুখের হাব ভাব দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে চৈতির কথায় সে কতটা অবাক।বিষ্মিত কন্ঠে বললো,”আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না। তুমি আমার সাথে নিশ্চয়ই মজা করছো।এই টুকু একটা মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।বললেই কী আর বিশ্বাস করা যায় নাকি। মোটেও না।”
যে বুঝতে চায় না তাকে বুঝ দিয়ে সময় নষ্ট করার প্রয়োজন মনে করে না চৈতি। সোজা সাপ্টা বললো,”আমাকে বিরক্ত করবেন না। আমি আপনার সাথে কথা বলতে বিরক্ত বোধ করি।”
কথাটা বলেই সিএনজি ডেকে উঠে গেল চৈতি। ইমরান অবাক হয়েই চেয়ে রইল সিএনজি টার দিকে।
মুখের উপর যেহেতু বলেই দিয়েছে বিরক্ত হয় এবং বিবাহিত সেহেতু মেয়েটাকে আর বিরক্ত না করাই উচিত। কিন্তু একটু ভালো করে খোঁজ নিয়ে জানতে হবে যে মেয়েটা সত্যিই বিবাহিত কিনা।মনে মনে কথা গুলো বলে নিজের কাজে চলে গেল ইমরান।
__________
বর্ষনময় মধ্যাহ্ন!
প্রকৃতিতে নেমে এসেছে ঘন বর্ষন।সতেজ হচ্ছে গাছের পাতা।পাখিরা মনের সুখে বৃষ্টির পানিতে ভিজছে। গায়ের সুন্দর পালক গুলো বৃষ্টির পানিতে ভিজে কেমন যেন স্যাতঁ স্যাতেঁ হয়ে আছে। বছর খানেক আগেই এমন একটা বর্ষনময় দিনে প্রহনের সাথে ভিজে ছিল চৈতি।আজ আর চাইলেও ভেজা সম্ভব না। পড়ার টেবিলে বসে মুখে কলম রেখে গালে হাত দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। আগামীকাল গনিত পরীক্ষা।অথচ সে প্রহনের সাথে কাটানো মিষ্টি মুহুর্তে ডুবে আছে।ছয় সাত মাসের ও বেশি সময় হয়ে গেল মানুষ টা কে সামনাসামনি দেখা হলো না। ছুঁয়ে দেখা হলো না।
“দুপুর বেলা কেউ পড়তে বসে? অসহ্য!”
চোখে মুখে বিরক্তি। কিছুক্ষণ আগেই ভাত খেয়েছে। কোথায় একটু এমন ঠান্ডা বৃষ্টির মধ্যে একটা শান্তির ঘুম দিবে তা আর হলো না মাধ্যমিক এর পরীক্ষার জন্য। গণিত বই এর বেশির ভাগ সব কিছু রিভিশন করা শেষ। পিথাগোরাস এর উপপাদ্য না হয় রাতে দেখে নিত। কিন্তু মিসেস ইয়াসমিন এর চোখ পাকিয়ে তাকানোতেই হাওয়া হয়ে গেল সব কথা। চুপ করে এসে ভদ্র মেয়ের মত বসতে হলো পড়ার টেবিলে।
রেদোয়ান চৌধুরী এখন যথেষ্ট সময় দেন মিসেস ইয়াসমিন কে। ছুটির দিনে চৈতি আর অর্ধাঙ্গিনী কে নিয়ে পার্কে ঘুরতে যান।মাঝে মাঝে রেস্টুরেন্টে খেতে যান।বই পড়া কমিয়ে মিসেস ইয়াসমিন এর সাথে গল্প করেন। রেদোয়ান চৌধুরীর কাছে আবদার করে ও লাভ নেই। কিছু বললেই বলবে,”গতবার মডেল টেস্ট পরীক্ষায় অংকতে মাত্র ৬২ মার্ক পেয়ে ছিলি।আর এখন ফাইনাল পরীক্ষা হচ্ছে।এ+ না পেলে প্রহন কিন্তু খুব বকবে। তোর পড়ালেখা হবে না দেখে এখনো বাড়ি আসেনি ছেলে টা। মন দিয়ে পড়।”
“অংক কি পড়ার বিষয় নাকি আজব!গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রেদোয়ান চৌধুরীর এই সব কথা শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গেছে চৈতির।এত কিছু ভাবার পর হঠাৎ মন বলে উঠলো,”চৈতি আসলেই তোর একটু ভালো করে অংক গুলো দেখা উচিত।নিয়ম গুলো দেখে নে। ভালো রেজাল্ট না করলে প্রহনের সাথে এই জন্মেও আর দেখা হবে না। খুব বকবে।‍”
বাইরে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বইয়ের উপর চোখ রাখলো।ইতি মধ্যে কখন যে সে পুরো বইয়ে প্রহন চৈতি লিখে ভরিয়ে ফেলেছে খেয়ালই করেনি।

সেদিন সন্ধ্যায় ও ঝুম বৃষ্টি হলো। শীতের দিনে বৃষ্টি।আজব দেশের আজব আবহাওয়া। ফেব্রুয়ারীর শুরু হয়েছে তিন দিন হবে।দেয়ালে টাঙ্গানো কেলেন্ডার টা জানিয়ে দিচ্ছে আজ তেসোরা ফেব্রুয়ারি।কনকনে শীতে কাঁপছে প্রহন। রুমের ভেতর বিন্দু পরিমাণ নেট নেই।থাকবেই বা কি করে শহর ছেড়ে যে পাহাড়ী এলাকায় বদলি হয়েছে। শহরের তুলনায় পাহাড়ি এলাকায় শীতের পরিমাণ টা একটু বেশি। তার উপর বৃষ্টি পরিবেশ টা কে শীতল থেকে অতি শীতল বানিয়ে ফেলেছে।ভিডিও কলের উপাশে গালে হাত রেখে প্রহনের দিকে তাকিয়ে আছে চৈতি।
চোখে মুখে খুশির উজ্জ্বল আলো যেন ঝিকমিক করতেছে।এই মুহূর্তে প্রহনের ইচ্ছা করছে মেয়েটার গাল ধরে টেনে দিয়ে বিরক্ত করতে। আগের সেই পিচ্চি চৈতি এখন অনেক টাই বড় হয়েছে। সুন্দর ও হয়েছে আগের চেয়ে। চোখে কাজল দিলে প্রহন চৈতির চোখের ভেতরেই হারিয়ে যায়।ডুবে মরে ভালোবাসার সিক্ত আবেশে।
এই তো কয়েক দিন আগে, চোখে কাজল দেওয়ার জন্য চৈতি কে কী বকাটাই না দিল।
ডিউটি ও করতে পারে না সব সময় সেই চোখ দুটো যেন ভাসে তার চোখের সামনে।
“আপনার শীত করছে তো। রুমে চলে যান। আর আপনি শীতের কাপড় পড়েননি কেন?”

“রুমে নেট নেই। কোন এক জঙ্গলে আসছি নেট নাই কিছু নাই। তার উপর এত ঠান্ডা বলার মতো না।”

“শীতের কাপড় গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।আর কথা বলতে হবে না।”

চৈতির কথায় প্রহন বললো,”আচ্ছা।”
এতে চৈতি মোটেই খুশী হলো না।
কিছুটা রেগে গিয়ে বললো,”শুধু আচ্ছা?আর কীসের আচ্ছা হ্যা? আমি বললেই আপনাকে লাইন কেটে দিতে হবে? আচ্ছা বলতে হবে?”

চৈতির এহেন কথায় তাজ্জব বনে গেল প্রহন। শুধু আচ্ছা বলাতেই এত রাগ যদি আচ্ছা রাখছি আল্লাহ হাফেজ বলে কল কেটে দিতো তাহলে কী করতো আল্লাহ জানে।
“তুমি নিজেই তো বললা..”

“আমি বললেই যে আপনি আমার কথা শুনেন তা তো জানতাম না।যাই হোক মজা করছি। আপনার শীত করতেছে বুঝতে পারছি আমি।যান রুমে যান।”

এই বার চৈতির কথার উত্তরে প্রহন কিছু বললো না।কারন আবার কখন মুড বদলে যায় বলা যায় না। শুধু মুচকি হাসলো। ওপাশ থেকে চৈতি কল কেটে দিলো। প্রহন চৈতির এইসব কান্ড দেখে মাঝে মাঝে কনফিউজড হয়ে যায় যে, তার বউয়ের মানসিক কোনো সমস্যা দেখা দিচ্ছে না তো। হুটহাট মত বদলে ফেলে।
.
.
দেখতে দেখতে চৈতির পরীক্ষার ইতি ঘটলো। পড়ালেখার প্যারা থেকে মুক্তি পেলো বেশ অনেক দিন এর জন্য।
সময় তিন অক্ষরে কঠিন তম একটা শব্দ।কত কিছু যে সহজেই বদলে দেয় এই সময় বলার মতো না। একবার গেলে আর ফিরে আসতে চায় না।ধরে বেঁধে ও রাখা যায় না তিন অক্ষরের শব্দ টাকে।কতটা শক্তিশালী সে।
সামনের মাসেই দুটো মানুষ এর একসাথে পথ চলার দু বছর শেষ হবে। দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী নিয়ে বেশ উৎফুল্ল চৈতি।আগে যা জানা ছিল না তার চেয়ে ও বেশি কিছু জানা হয়ে গেছে এই দু’বছরে। দুটো মানুষ বিবাহ নামক বাঁধনে এক হলেও পুর্নতা পায়নি তাদের সম্পর্ক।
পাশের বাসার এক ভদ্রমহিলা এসেছিলেন সেদিন। চৈতি সোফার উপর পা তুলে বসে বসে টিভি দেখছিল আর নুডুলুস খাচ্ছিল।
ভদ্র মহিলার মাথার চুল পাকা ধরেছে। মিসেস ইয়াসমিন কে ডেকে বললেন,”তা কি গো ইয়াসমিন, তোমার নাতি নাতনির মুখ কখন দেখবো আমরা? বিয়ের তো অনেক দিন হলো।”
ভদ্র মহিলার কথা শুনে খাবার গলায় আটকে কাশি উঠে যায় চৈতির। কাশতে কাশতে মুখ দিয়ে রক্ত বের হবার উপক্রম।
কী সাংঘাতিক মহিলা!
অন্যের নাতি নাতনির মুখ দেখার আশায় যেন দিন কাটাচ্ছে। মিসেস ইয়াসমিন মুচকি হেসে বলেছিলেন,”আমার ছেলের বউ নিজেই তো এখন ও বাচ্চা।সে আবার বাচ্চা সামলাবে কি করে?আর অল্প বয়সে মা হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি নেওয়ার কোনো দরকারনেই।সময় হলে আমার নাতি নাতনির মুখ সবাই দেখবে।সাথে আপনি ও আপা।”

চলবে,,,

(আসসালামু আলাইকুম। আমার পরীক্ষা চলছিল। সাথে পারিবারিক কিছু সমস্যার জন্য গল্প দিতে পারিনি। আগামীকাল থেকে নিয়মিত দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।আর কয়েক পর্বের মধ্যে ইতি টানবো গল্পের।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here