অভিমানে_তুমি #ফারিয়া_আফরিন_ঐশী #পর্বঃ১৩ (বিবাহ স্পেশাল)

0
348

#অভিমানে_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১৩ (বিবাহ স্পেশাল)

আজ সাদি-মিথির বিয়ে।গত কয়েকদিনের অনুষ্ঠান বেশ সুন্দর ভাবেই কেটেছে তাদের।সাদির কড়া সিকিউরিটির কারণে তেমন বাধা আর নজরে আসে নি।।মিথি সকাল সকাল পার্লারের মেয়েদের তাকে ঘিরে হরেক রকম কান্ড কারখানাতে মহা বিরক্ত।দীর্ঘ ৪ ঘন্টার বিরক্ত কাটিয়ে মিথি উঠে দাঁড়াল।সে সম্পূর্ণ তৈরি।।বিয়ের সাজে মিথিকে অপরূপা লাগছে।
সাদা, নীল বেনারসি, নীল ওড়না মাথায়,মাথার খোপায় গোলাপগাথা,গলা, হাতে,কানে রয়েছে সোনার বিভিন্ন গহনা,মুখে ভারী মেকাপের আবরণ।মিথির পুরো আউটফিট সাদির পছন্দের। সাদি আজ মিথিকে নিজের মতো সাজে দেখতে চেয়েছে।অন্যদিকে সাদি ও বা কম কিসে!!তার পরণে সাদা শেরওয়ানি আর মাথায় নীল পাগড়ি, হাতে রূপালি চেইন বেল্টের ঘড়ি।
সাদিকে বিয়ের স্টেজে বসিয়ে রাখা হয়েছে, কাজি এসেই মিথিকে আনার জন্য বললেন।মিথি সামনের গেট দিয়ে আসতেই সাদির চোখ যেন তার দিকে আটকে গেল।মিথি এসে সাদির সামনে বসলো তাদের মাঝে লাল ওড়না ২ পাশে ২ জন মেয়ে ধরে আছে।অবশেষে কাজি বললেন কবুল বলতে,,সাদি তো গড়গড় করে বলে দিল,মিথি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সায়মা আহমেদ এর হাত মাথায় রাখার পর কবুল বলল।তারপর সাদি-মিথি ওড়নার ভিতর আয়না দিয়ে নিজেদের মুখ দেখল।।কোনো ঝামেলা ছাড়া বিয়ে হয়ে যাওয়াতে সাদি ও বেশ খুশি।কমিউনিটি সেন্টার থেকে তাদের বাসায় আনা হলো।মিথির আহমেদ বাড়িতে প্রবেশ ও হলো বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে।সায়মা আহমেদ নিজের রুমে নিয়ে মিথিকে ফ্রেস হতে বললেন।তারপর মিথি কে হালকা গোলাপি জামদানী আর হালকা সোনার গহনা পরিয়ে দিলেন।।মিথিও হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।এরপর মিথিকে সাদির বান্ধবীরা ধরে নিয়ে আসলো সাদির ঘরে।মিথি এই ঘরে আগেও এসেছে তবে এবারের আসাতে তার অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে।। মিথি দেখল ঘরটা বেশ সুন্দর করে সাজানো।হালকা আলো জ্বলছে,খাটটা রজনীগন্ধা আর গোলাপ দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো।।তারা মিথিকে বসিয়ে রেখে বাইরে চলে গেল।মিথি চোখ ঘুরিয়ে চারদিক দেখতে থাকল।দরজার বাইরে বেশ চেচামেচি শোনা যাচ্ছে, মিথি বুঝতে পারছে সাদিকে টাকা দেওয়ার জন্য ধরা হয়েছে।মিথি একটু মিটিমিটি হাসল।তারপর ঠিক হয়ে পূর্বের জায়গায় বসে রইল।অবশেষে ১০,০০০ টাকা দিয়ে তারপর সাদি ঢুকল ঘরে।সাদি এসেই দরজা লক করার আওয়াজে কেঁপে উঠল মিথি।মিথি বিছানা থেকে নেমে সাদিকে সালাম করতে নিলেই হাত আটকে ধরে সাদি তারপর বলে–দোয়া করি আমার কন্যার জননী হও।।আর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে নেই।
মিথি যেন লজ্জাতে মাথা নামিয়ে নিল।তারপর সাদি বলল–আমি ওযু করে এসেছি, তুই ওযু করে আয়,নামাজ পড়ব।।জলদি আসবি।।
মিথি মাথা নাড়িয়ে দিয়ে চলে যায় ওযু করতে।।ওযু করে এসে ২ জনে নামায আদায় করে নেয়,তারপর মিথি জায়নামাজ ঘুছিয়ে রেখে ঘুরতেই সাদি তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে মিথির ২ হাতে ডায়মন্ডের চুড়ি পরিয়ে বলে–তোর বাসর রাতের গিফট,,তোর পছন্দ হয়েছে??
মিথি সাদির দিকে ঘুরে বলে–খুব,পছন্দ হয়েছে।
সাদি–ইউকে থাকাকালীন তোর জন্য কিনেছিলাম,ভেবেছিলাম আমাদের ২ জনের সবচেয়ে ভালো মুহূর্তে তোকে গিফট করবো।।আর আমার মতে আজকের থেকে ভালো সময় আমাদের জীবনে আর নেই।।তাই।।
মিথি –আমি খুব খুশি।।খুবই সুন্দর চুড়ি।।
এবার সাদি মিথিকে কাছে নিয়ে নেশাজড়ানো কন্ঠে বলে–আজ আমি তোকে চাই মিথিপাখি,একটু না পুরোটা চাই।।আমি তোকে আমার মতো করে ভালোবাসতে চাই।তুই কি রাজি??
মিথি লজ্জাতে সাদির বুকে নিজের মুখ লুকিয়ে নেয়।সাদি মিথির সম্মতি বুঝতে পেরে মিথিকে কোলে তুলে নেয়।তারপর মিথিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজের ভর মিথির ওপর ছেড়ে দেয়।তারপর তারা একে অপরের ভালোবাসার অনুভূতিগুলো অনুভব করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।।
সকালের মিষ্টি আলো পর্দা ভেদ করে মিথির মুখে পড়তেই চোখ কুঁচকে নেয় সে।পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে সে সাদির বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।আর সাদি ২ হাতে তাকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুম।মিথি মাথা তুলে সাদির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়।তারপর একটু উঁচু হয়ে সাদির মুখে চুমু দিতেই সাদি চোখ খুলে ভ্রু নাচিয়ে বলে–কি করছিস শুনি?
মিথি লজ্জা পেয়ে বলে –কিছু না তারপর উঠতে নিলে সাদি বিছানার সাথে চেপে ধরে বলে–কিছু না বললেই হলো।
মিথি–হুমম হলো,,ছাড়ো আমাকে।
সাদি–মোটেই না।।আমার পাওনা দিয়ে তারপর যাবি।।
মিথি ভ্রু কুঁচকে বলে–কিসের পাওনা??
সাদি–কেন!!এইযে তোকে এতো আদর করলাম,তার কিছু তো রিটার্ন করবি।।
মিথি–আমি কি বলেছি নাকি তোমাকে যে আমাকে আদর করো।।।
সাদি–মানাও তো করিস নি।।এখন কথা কম বলে আমার পাওনা দে আমাকে।
মিথি খানিকক্ষণ জোড়াজুড়ি করে যখন দেখল উপায় নেই তখন বাধ্য হয়ে সাদিকে চুমু দিল।।তারপর সাদির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ফ্রেস হতে ওয়াশরুমে গেল।ফ্রেস হতে গিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে মিথি অবাক।।সেদিনের মতো পুরো গলাতে কামড়ের দাগ।।ঠোঁটেও রক্ত জমাট বেধে আছে আর কিছুটা ফুলেও আছে। মিথি ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে লাল একটা জামদানী শাড়ি পড়ল,সাদি ফ্রেস হয়ে এসে দেখে মিথি মনখারাপ করে আয়নার সামনে বসে আছে।সাদি ঘড়ি পড়তে পড়তে বললো–কি হলো!!মন খারাপ কেন??
মিথি মুখ ফুলিয়ে বলল–এখন আমি কিভাবে বাইরে যাব??
সাদি কপাল কুঁচকে বলল–কেন সমস্যা কি??
মিথি গলা দেখিয়ে বলল–দেখ,,তুমি কামড়ে কি হাল করছো।।এই দাগ কেউ দেখলে তো হাসবে।
সাদি মিথিকে জড়িয়ে ধরে বলল–আমার ভালোবাসা এমনই।।তোকে আমি সবসময় এভাবেই ভালোবাসব।।আর কেউ কিছু বললে আমায় বলিস আমি মানা করে দেব যাতে আমার মিথিপাখির ওপর না হাসে।
তারপর মিথির ঠোঁটের ওপর চুমু দিয়ে বলে–তাড়াতাড়ি আয় নিচে।।সাদি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।মিথি গহনা পরে, চুল আর শাড়ির আঁচল দিয়ে দাগগুলো ঢেকে তারপর নিচে যায়। ব্রেকফাস্ট করতে বসলে মিথির কাঁধের দাগগুলো সায়মা আহমেদ চোখ এড়ায় না। তিনি মনে মনে সাদিকে হাজারটা গালি দিয়ে বলেন–রাক্ষস পয়দা করছিলাম একটা,,কামড়াকামড়ি করে মেয়েটারে তেজপাতা বানায় দিলো,অসভ্য ছেলে।।মুখে হাসিভাব ফুটিয়ে খাওয়া শেষ করলো সবাই।আজ বৌভাত তাই সাদি বেরিয়ে গেল কিছু এরেন্জমেন্টের কাজ দেখতে।আর সায়মা আহমেদ মিথিকে নিজের ঘরে নিয়ে বিছানাতে বসিয়ে ফাস্টএইড বক্স এনে বললেন–দেখি,আঁচল টা সরা তো।।
মিথি কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে নিল।
সায়মা–লজ্জা পাস না,,আমি দেখেছি তোর গলা, কাঁধের অবস্থা।।সাদি টা চরম বেয়াদব হয়েছে।।এমন কামড়াকামড়ি কেমনে শিখল কে জানে!!!
মিথিকে মাথা নিচু করে থাকতে দেখে বলল–আমি তো তোর মা ই।।তাহলে দ্রুত সরা আঁচল আমি মলম লাগিয়ে দেই।
মিথি আস্তে করে আঁচল সরিয়ে দিল।তারপর সায়মা আহমেদ মলম লাগিয়ে মিথিকে বললেন রেস্ট নিতে।
সন্ধ্যা ৭টা,,
সাদি মিথি কমিউনিটি সেন্টার এর স্টেজে দাঁড়িয়ে আছে।সামনে থাকা ফটোগ্রাফার তাদের ছবি তুলতে ব্যস্ত।মিথি আজ ব্লাক লেহেঙ্গা আন স্টোনের গহনা পরেছে আর সাদি ব্লাক সুট।সবার শুভ কামনা গ্রহণ করছে তারা।
রাত ১১ টায় অনুষ্ঠান শেষে মিথি সায়মা আহমেদের সাথে বাড়ি পৌঁছে ফ্রেস হয়ে বিছানার শুতেই চোখে ঘুম নেমে আসে।রাত ১২ টা নাগাদ সাদি ফিরে দেখে বিছানাতে তার প্রেয়সী ঘুমন্ত অবস্থায়। সাদি ফ্রেস হয়ে এসে কিছুটা ঝুঁকে মিথিকে দেখতে থাকে।কারো ক্রমাগত গরম নিশ্বাসে মিথির ঘুম ভেঙে যায়।
মিথি চোখ মেল৷ তাকিয়ে বলে–তুমি,,কখন এলে??
সাদি কোনো কথার উত্তর না দিয়ে আরো একটু ঝুঁকে মিথির গলাতে নিজের মুখ গুজে দেয়।ধীরে ধীরে ছোঁয়ার গভীরতা বারতে থাকে।২ জনের ভারী নিশ্বাসের কাঁপুনিতে আরও ঘোর লেগে যায়।।একে অপরকে আঁকড়ে ধরে অনুভতি প্রকাশের মাধ্যমে কেটে যায় তাতের আরও একটি রাত।

অন্যদিকে,,
ইশান আজ প্রচুর ড্রিংক করছে,ড্রাগস ও নিয়েছে কিন্তুু টিভির স্ক্রিনে থাকা ছবির কারণে তার কোনো নেশাই ধরছে না টিভির স্ক্রিনে সাদি মিথির বাসর ঘরের কিছু মুহূর্ত ভেসে রয়েছে।।ইশান –আমাকে এভাবে আটকে দিয়ে তুই ভেবেছিস,মিথি তোর হয়ে গিয়েছে!!!
মিথির ১০ টা বিয়ে হলেও মিথিকে আমার হতে হবে।।মিথি ইজ অনলি মাইন।।গেড রেডি সাদি।।আম কামিং।।।

#চলবে
১২০০ শব্দের পর্ব😊

বিঃদ্রঃ কেমন হলো জানাবেন??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here