অন্তহীন💜 #পর্ব_২৫ #স্নিগ্ধা_আফরিন

0
451

#অন্তহীন💜
#পর্ব_২৫
#স্নিগ্ধা_আফরিন

সায়াহ্নের প্রহর কিন্তু বৃষ্টি থামলো না। অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ার জন্য বাবার বাড়িতে যাওয়া হয়নি চৈতির। সেই দুপুর থেকেই বৃষ্টি পড়ছে। প্রকৃতি শীতল, শান্ত, স্নিগ্ধ।ঠান্ডা বাতাস বইছে। শীত শীত অনুভব হচ্ছে। রেদোয়ান চৌধুরীর সাথে বসে বসে গল্প করছে চৈতি। রেদোয়ান চৌধুরী তাকে বড় বড় কথা সাহিত্যিকদের গল্প বলছেন। তাদের জীবনের কাহিনী খুব মন দিয়ে শুনছে চৈতি। ধরিত্রী তখন সাঁঝবেলার বর্ষণে সতেজ হচ্ছে। রাস্তার খাদ গুলো জলে পরিপূর্ণ। ভেজা নগরীর লাল নীল হলুদ রঙের লাইটের আলো শহরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ।চন্দ্রিমার অস্তিত্ব বিহীন অন্তরীক্ষ আজ অসুন্দর মনে হচ্ছে রিক্ত প্রেমিকের কাছে। কিশোরী বউয়ের আবদার মেটাতে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় প্রহন। এই বৃষ্টির মধ্যে নাকি তার ভীষণ ফুচকা খেতে মন চাইছে। মিসেস ইয়াসমিন বাড়িতেই বানিয়ে দিতেন কিন্তু তেঁতুল ছিল না।যার জন্য প্রহন কে বৃষ্টির মধ্যে ফুচকা আনতে যেতে হচ্ছে। পিচ্চি বউয়ের ইচ্ছে অপূর্ণ রাখা যায় নাকি!
রেদোয়ান চৌধুরী চৈতির দিকে তাকিয়ে বললেন,”গল্প পড়তে ভালো লাগে?”
চৈতি হাস্যউজ্জ্বল মুখে উত্তর দিলো,”অনেক বেশি।”
মিসেস ইয়াসমিন রুম থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে বললেন”হ্যাঁ বানাও তোমার মতই উপন্যাস পাগল বানিয়ে তুলো। বাস্তবতা ছেড়ে সারাদিন শুধু কল্পনায় ডুবে থাকুক।”
মিসেস ইয়াসমিন এর এমন কথায় বিরক্ত হলেন রেদোয়ান চৌধুরী। বিরক্ত মাখা কন্ঠে বলে উঠলেন,”দেখো ইয়াসমিন, আমার উপন্যাস পড়া নিয়ে তোমার থেকে এই সব কথা শুনতে আমার ভালো লাগে না। বিয়ের পরের দিন থেকেই যে তুমি আমার বই পড়ার পেছনে লেগেছো এখনো ছাড়োনি। আমার বই পড়া নিয়ে সব সময় তোমার সমস্যা ছিল,আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।”
মিসেস ইয়াসমিন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে জোর পূর্বক হেসে বললেন,”যে মানুষ টা তার প্রিয় মানুষের থেকে একটু সময় চায় কিন্তু পায় না সে মানুষটাই জানে প্রিয় মানুষটা থেকে সামান্য সময়টুকু পেলে মনের ভেতর কতটা শান্তি লাগে। অথচ সেই বিয়ের পর থেকেই তুমি যখনই একটু ফ্রী ছিলা তখনই উপন্যাসের বই নিয়ে বসতে। আমার জন্য তোমার সময় ছিল না কখনো।আর এখন ও নেই।”
মিসেস ইয়াসমিন আর রেদোয়ান চৌধুরীর কথা গুলো চুপচাপ শুনে যাচ্ছে চৈতি। মিসেস ইয়াসমিন এর কথা শুনে তার মনে হলো,’প্রিয় মানুষের কাছ থেকে পাওয়া এক টুকরো সময় ও কারো কাছে অনেক দামি।’
রেদোয়ান চৌধুরী ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ কুঁচকে মিসেস ইয়াসমিন এর দিকে তাকিয়ে আছেন।৩০ বছরের সংসারে মিসেস ইয়াসমিন এর কাছ থেকে এই একটা কথা শুনতে শুনতে তা মুখস্থ করে ফেলেছেন রেদোয়ান চৌধুরী। তিনি মিসেস ইয়াসমিন কে বলে উঠলেন,”শুনো ইয়াসমিন, এই কথা টা আমার মুখস্থ হয়ে গেছে।আর এটা শুনতে ও এখন আর আনন্দ লাগে না। তুমি বরং রুমে যাও। রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে নতুন কিছু চিন্তা করো।”
রেদোয়ান চৌধুরীর এহেন কথায় খিলখিল করে হেসে উঠলো চৈতি। চৈতির হাসি দেখে মিসেস ইয়াসমিন এবং রেদোয়ান চৌধুরী ও হেসে উঠলেন।
মিসেস ইয়াসমিন এর ফোন বেজে উঠলো।স্ক্রিনে প্রহনের নাম্বার ভেসে আছে।হাসি মুখে কল রিসিভ করলেন তিনি। ওপাশ থেকে গাড়ির শব্দ শোনা যাচ্ছে। সাথে মানুষের চিৎকার চেঁচামেচি। ফোনের ওপাশ থেকে অচেনা একটা কন্ঠ ভেসে ওঠে,”এই মোবাইল এর মালিক মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছেন।আপনারা দ্রুত আসুন।”
কথা টা কর্ণপাত হতেই অধর থেকে হাসির রেখা মিলিয়ে যায়। বুকের ভেতর কেপে ওঠে।হাত থেকে মোবাইল টা পড়ে যেতে নিলে চৈতি ধরে ফেলে। মিসেস ইয়াসমিন এর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে।আৎকে উঠে চৈতি সাথে রেদোয়ান চৌধুরী ও।
মোবাইল এর ওপাশ থেকে লোক টা হসপিটালের নাম বলে দিয়েছে।লাইন কেটে গেছে। রেদোয়ান চৌধুরী মিসেস ইয়াসমিন এর কাঁধ ঝাঁকিয়ে অস্থির কন্ঠে বলে উঠেন,”কী হয়েছে ইয়াসমিন? উত্তর দিচ্ছো না কেন?”
মিসেস ইয়াসমিন কাঁপা গলায় বললেন,”প্রহনের এক্সিডেন্ট হয়েছে।”
মিসেস ইয়াসমিন এর কথা শুনে কেঁপে উঠলেন রেদোয়ান চৌধুরী। ছিটকে সরে গেল চৈতি। নিজের কান কে বিশ্বাস হচ্ছে না তার।কী শুনলো এটা?
রেদোয়ান চৌধুরী মিসেস ইয়াসমিন আর চৈতির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললেন,”এখন এমন শক খেয়ে কান্না করার সময় না। জলদি চলো হসপিটালে।
বৃষ্টির ভিতর কোনো ছাতা ছাড়া ছুটছেন তারা। বাড়ির গেইট পেরিয়ে রাস্তায় নামতেই ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রহন কে দেখে থমকে গেল সবাই। প্রহন ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রহন কে এমন সুস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দৌড়ে গিয়ে প্রহন কে জড়িয়ে ধরলো চৈতি। মিসেস ইয়াসমিন ও প্রহনের দিকে এগিয়ে গেলেন। প্রহন হাতের ফুচকার প্যাকেটটা রেদোয়ান চৌধুরীর হাতে দিয়ে বললো,”কী হয়েছে? তোমরা এই বৃষ্টির মধ্যে ছাতা ছাড়া বাইরে আসছো কেন?”
চৈতি কাঁদছে প্রহনের বুকে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
মিসেস ইয়াসমিন প্রহনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,”তুমি ঠিক আছো আব্বু? কিছু হয়নি তো তোমার?”
প্রহন বুঝতে না পেরে বললো,”কী হবে আমার? কিছু হয়নি তো।”রেদোয়ান চৌধুরী মিসেস ইয়াসমিন এর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললেন,”ছেলে একদম ঠিক আছে। তুমি ভেতরে চলো তো।”মিসেস ইয়াসমিন কে নিয়ে চলে গেলেন রেদোয়ান চৌধুরী। চৈতি এখনো প্রহন কে জড়িয়ে ধরে আছে। চৈতির চোখের পানিতে প্রহনের টিশার্ট ভিজে গেছে অনেকটাই। প্রহন এক হাত দিয়ে চৈতি কে জড়িয়ে ধরে বললো,”কী হয়েছে বউ? এমন করে কান্না করছো কেন?”
কান্নার কারণে কথা বলতে পারছে না চৈতি। প্রহন চৈতি কে নিজের থেকে সরিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,”ভিজে গেছো পুরো। ভেতরে চলো।”
———
সোফায় বসে প্রহন মিসেস ইয়াসমিন এবং রেদোয়ান চৌধুরী। চৈতি রুমে ড্রেস চেঞ্জ করছে। মিসেস ইয়াসমিন এর দিকে তাকিয়ে প্রহন বললো,”কী হয়েছিল যার জন্য এমন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যাচ্ছিলে তোমরা?”
মিসেস ইয়াসমিন বললেন,”তোমার নাম্বার থেকে কল আসছিল যে, তোমার নাকি এক্সিডেন্ট হয়েছে।”
মিসেস ইয়াসমিন এর কথা শুনে বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে চোখ গোল গোল করে তাকালো প্রহন।কন্ঠে এক রাশ বিষ্ময় নিয়ে বলে উঠলো,”কীহ আমি এক্সিডেন্ট করেছি আমি জানি না।”
পাশ থেকে রেদোয়ান চৌধুরী বললেন,”কিন্তু কল টা তো তোমার ফোন থেকেই আসছে।”
বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো প্রহন। পকেট হাতড়ে দেখলো মোবাইল নেই। বিষয় টা পরিষ্কার হয়ে গেল তার কাছে। সোফায় বসতে বসতে বললো,”মোবাইল তো চুড়ি হয়ে গেছে। আর নয়তো কোথাও পড়ে গিয়েছিল। অন্য কেউ পেয়েছে হয়তো তার এক্সিডেন্ট হয়েছে।”
মিসেস ইয়াসমিন কপালে হাত রাখলেন। প্রহন রেদোয়ান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,”কোন হসপিটালে আছে বলেছে কিছু? আমার তো মোবাইল টা আনতে যেতে হবে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আছে। তার চেয়ে ও বড় কথা অনেকেরই নাম্বার সেভ করা আছে।”
মিসেস ইয়াসমিন ধীর কন্ঠে হসপিটালের নাম বললেন। প্রহন তখনই যেতে চাইলে যেতে দিলেন না তিনি।ভয় কাটেনি এখনো।”সকালে নিতে যাবে”কড়া গলায় কথা টা বলে দিলেন তিনি। প্রহন আর মায়ের কথার অবাধ্য হলো না। বাড়ির সবার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে সে। তবে এই একটা কথা ভেবে ভীষণ ভালো লাগছে তার যে তার পরিবার তাকিয়ে নিয়ে কত চিন্তা করে। রুমে চলে গেল প্রহন। চৈতি বিছানার উপর পা ভাঁজ করে বাবু হয়ে বসে আছে।চুল থেকে পানি পড়ছে। মুখটা ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে।মন খারাপি হাওয়া ছুঁয়ে গেছে তাকে। চোখের কোনে এখনো পানি চিকচিক করছে। সেই সময় মিসেস ইয়াসমিন এর মুখে কথাটা শোনার পর এক মুহুর্তের জন্য মনে হয়েছিল কলিজা টা কেউ টেনে ছিঁড়ে ফেলেছে। প্রহন দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল চৈতির দিকে। বিছানার উপর তোয়ালে রাখা। তোয়ালে দিয়ে চুল মুছিয়ে দিয়ে চৈতির সামনাসামনি বসলো। চৈতি নিমেষহীন দৃষ্টিতে প্রহনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। প্রহন চৈতির মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,”আচ্ছা তখন কার কথা যদি সত্যি হতো আর আমি যদি মরে যেতাম আমার কথা মনে পড়তো তোমার?”
কথাটা বলার দেরী প্রহনের বুকের উপর ঝাপিয়ে পড়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠার দেরি হলো না চৈতির। হঠাৎ প্রহন বুকের ভেতর ব্যাথা অনুভব করলো।ব্যাথায় কাতর না হয়ে মুচকি হেসে চৈতির চুলের উপর চুমু খেলো। মেয়েটা তাকে কামড়াচ্ছে আর বিড়বিড় করছে,”আপনাকে ছেড়ে আমি একদম মরে যাবো।”

চলবে,,,,,

বিঃদ্রঃ আসসালামুয়ালাইকুম ♥️
আমার বড় ফুফা মারা গেছেন আজ দুই দিন।তাই এই দুই দিন গল্প দিতে পারিনি দুঃখিত 🤷🏻‍♀️।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here