#অন্তহীন💜
#পার্ট_২১
#স্নিগ্ধা_আফরিন
শুভ্র নীরদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অন্তরীক্ষে। আদিত্যর তেজ নেই এই প্রহরে। শান্ত, স্নিগ্ধ, সুনসান চৌধুরী ভিলা।এলোকেশে আবৃত আননের পানে সেই কখন থেকেই চেয়ে আছে তৃষ্ণার্ত নেত্র পল্লব। ঘুমের মধ্যেই এদিক ওদিক নড়ছে চৈতি। এতো নড়া চড়ায় বিরক্ত প্রহন। একটু শান্ত হয়ে ঘুমাতেও পারে মেয়েটা।নড়তে চড়তে হবেই যেন বাদ্ধতা মুলক। দরজায় টোকা পড়লো।এক বার দুই বার কয়েক বার।শোয়া থেকে উঠে বসলো প্রহন। দুই হাত দিয়ে চোখ কচলিয়ে দৃষ্টি পরিষ্কার করলো। বিছানা থেকে নেমে দরজা মেলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টা কে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে যায় প্রহন।
তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টা হেসে হেসে বলে উঠলো,”কীরে কেমন সারপ্রাইজ দিলাম?”
প্রহন জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো,”খুব বাজে।”
“তোর কাছে তো সব সময় বাজেই মনে হয়। জানি আমি।”
“এক বছর পর হঠাৎ কোথা থেকে দড়ি ছিঁড়ে আসলি মুহিত?”
“বাহ ভাই বাহ। তুই ও আর্মি আমিও আর্মি পার্থক্য শুধু তুই ক্যাপ্টেন আমি সৈনিক তাই বলে তুই ভুলে যাবি আমাকে?”
“ঠাঁটিয়ে এক চড় দিবো।পরশু ও তোরে আমি নিজে থেকে কল করে আধা ঘন্টার বেশি সময় ধরে কথা বলছি। আমার মোবাইল এর কত ব্যলেন্স শেষ হইছে জানিস? আবার বলিস আমি তোরে ভুলে গেছি।”
প্রহনের এহেন কথায় হাসে মুহিত। প্রহনের কাঁধে কিল মেরে বলে,”শালা তুই আগের মতই কিপ্টা রয়ে গেছোস।”
“ঐ ঐ আমি তোর কোনো বোন কে বিয়ে করি নাই।সো ডোন্ট কল মি শালা ওকে?”
মুহিত প্রহন কে পাশ কাটিয়ে রুমের ভেতর ঢুকতে বললো,
“দেখি সর তো সামনে থেকে। ভেতরে ঢুকতে দে।”
প্রহন বিছানার উপর ঘুমন্ত চৈতির দিকে এক পলক তাকিয়ে জলদি করে মুহিতের পথ আটকে সামনে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠলো,”হুরর গেস্ট রুমে যা। আমার বেড রুমে কী?”
মুহিতের অজানা প্রহন যে বিবাহিত।তার রুমে এখন অন্য একজন ও আছে। বিয়ের কথাটা কাছের কয়েকজন আত্মিয় স্বজন ছাড়া আর কেউই জানে না। প্রহনের ছোট বেলার বন্ধু মুহিত ও না।
“তোর রুমে কী মহা কোনো জিনিস আছে?যে আমাকে ঢুকতে বাধা দিচ্ছিস?বউ টউ ও তো নাই তাহলে,,,?”
“বউ নাই তোরে বলছে কে?আসার সময় আম্মুর কাছ থেকে জেনে আসতে পারিস নাই কিছু?”
“মানে?কী জেনে আসবো?আন্টি কে ও তো দেখলাম না আসার সময়।”
“দরজা খুলে দিছে কে তাহলে?”
“আঙ্কেল। উনাকে জিজ্ঞেস করলাম তুই কোথায় উনি বললেন তোর রুমে আছিস।আর কিছু বলে নাই তো।”
প্রহনের রুমের ভেতর উঁকি ঝুঁকি দিতে লাগলো মুহিত।এত সময় পর তার দৃষ্টি গেল বিছানার উপর ঘুমিয়ে থাকা চৈতির উপর। কাঁথা মুড়ি দিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে আছে।
মুহিতের দৃষ্টি অনুসরণ করে প্রহন ও তাকালো।মুহিত বিষ্ময় নিয়ে বললো,”কখন কীভাবে করলি এইসব? একটু জানানোর প্রয়োজন বোধ ও করলি না?”
প্রহন মুহিতের কাঁধ জড়িয়ে ধরে ড্রইং রুমের দিকে যেতে যেতে বললো,”আমি নিজে ও জানতাম না যে ছুটিতে আসলে আম্মু আব্বু আমাকে বিয়ে করিয়ে দিবে।”
মুহিত প্রহনের কথা বুঝতে না পেরে বললো,”খোলসা করে সব কিছু বল।একদম প্রথম থেকে।”
প্রহন হাই তুলে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর তার আর চৈতির বিয়ের সব কিছু প্রথম থেকে বলতে শুরু করলো। তার পাশেই মনোযোগী শ্রোতা হয়ে সেই সব কথা চুপ করে শুনছে মুহিত।
.
কাকের কর্কশ গলার কা কা শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় চৈতির। ঘড়ির কাঁটা টুং টুং করে উঠলো। শোয়া থেকে উঠে চোখ কচলে ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে দেখলো, সকাল বরাবর ৭টা। উঠে ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে।৯টা থেকে আবার স্কুল আছে।
রেদোয়ান চৌধুরী সোফায় বসে বসে মনোযোগ দিয়ে চা খাচ্ছিলেন।এত মন যোগ সহকারে চা খাওয়ার একটাই কারণ তা হলো ইদানিং তার চা টা ঠিক মন মতো হচ্ছে না। টেস্ট খুব পানসা পানসা লাগে। মিসেস ইয়াসমিন কে জিজ্ঞেস করলে তিনি রেগে গিয়ে বলেন,মন দিয়ে চা খাও না দেখেই পানসা লাগে।বইয়ের ভেতরে ঢুকে থাকলে চায়ের স্বাদ কী করে পাবে?অথচ তিনি নিজেই চিনি একে বারে কম করে দেন। রেদোয়ান চৌধুরীর ডায়বেটিস আছে।এত মিষ্টি খাওয়া উচিত নয় একদম। রেদোয়ান চৌধুরী কোনো কালেই নিজের খেয়াল নিজে রাখেননি। বিয়ের পর থেকে তার সব খেয়াল মিসেস ইয়াসমিন রেখে আসছেন। তার আগে রেদোয়ান চৌধুরীর মাই রাখতেন ছেলের খেয়াল।
বেশ কয়েক বার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মুখ কুঁচকে ফেললেন রেদোয়ান চৌধুরী।”ইয়াসমিন তুমি ইচ্ছে করেই চায়ে চিনি দাও না তাই না? আমি তো মিষ্টি খাইতে চাই না সব সময়।ফ্রীজে মিষ্টি এনে রাখো যে ঐ সব কী আমি খাই? শুধু চার বেলা চায় একটু পরিমাণ মতো চিনিই তো চেয়েছি।”
মিসেস ইয়াসমিন সেই সময় রান্না ঘরে সবজি নুডুলুস বানাতে ব্যস্ত। রেদোয়ান চৌধুরীর কথা শুনে উঁচু গলায় বললেন,”সারা জীবন তোমার ভালোটা আমাকেই চিন্তা করতে হয়েছে। এখন ও হচ্ছে বুড়ো হচ্ছো যে তুমি।তাই চা যেমন আছে তেমনই খাওয়ার অভ্যাস করো।”
রেদোয়ান চৌধুরী হাল ছাড়লেন। চিৎকার চেঁচামেচি করে ও কোনো লাভ হবে না। তিনি একবার চিল্লাইলে মিসেস ইয়াসমিন একশো বার চিল্লাবে। প্রহন কে এই বিষয়ে কী বললে সেও ঠিক মায়ের পক্ষই নিবে।তাই অসহায় হয়ে সেই চায়ের কাপে চুমুক দিতে লাগলেন রেদোয়ান চৌধুরী। এমন সময় তার মোবাইল বেজে উঠলো। রিংটোন এর শব্দটা অসহ্য লাগে রেদোয়ান চৌধুরীর কাছে। মোবাইল টা হাতে নিয়ে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সরদার সাহেব এর গলার স্বর কানে আসে।কুশোল বিনিময় করে তিনি সবাইকে দাওয়াত দিলেন। সন্ধ্যায় যেনো প্রহন আর চৈতি কে নিয়ে তাদের বাড়িতে যায়। রেদোয়ান চৌধুরী ও হাসি মুখে নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে বললেন,”আচ্ছা ভাই যাবো।”
এদিকে প্রহনের মুখ থেকে সম্পূর্ণ ঘটনা শুনে অবাক মুহিত। বিছানার উপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে বললো,”শেষ পর্যন্ত বাল্য বিবাহ করলি তাও কিনা আর্মির ক্যাপ্টেন হয়ে?”
মুহিতের কথায় কেন জানি আজ আক্ষেপ হলো না প্রহনের।সে মুচকি হেসে উত্তর দিলো,”ভাগ্যিস করে ছিলাম। না হলে তো আমার ভেতরে লুকিয়ে থাকা আরেক আমিটাকে কখনো খুঁজেই পেতাম না।”
মুহিত শোয়া থেকে উঠে বসে চট করে বলে উঠলো,”তোর পিচ্চি বউকে দেখাবি না? আমি আমার পিচ্চি ভাবিকে দেখবো না নাকি?”
“দেখতে হচ্ছে কেন? না দেখলে কী হয়?ওটা আমার আমানত।তোকে দেখতে হবে না।”
প্রহনের এমন কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো মুহিত।
“বাপরে এত জেলাস? দেখিস আবার তোর বউ কে নিয়ে আমি যেন পালিয়ে টালিয়ে না যাই।”
“কানের নিচে দুইটা কষিয়ে চড় খেলে এমন কথা কেন এমন চিন্তা ও আর তোর মাথায় আসবে না।”
“বাহ বউ এর প্রতি অনেক ভালোবাসা দেখছি।”
“তা হঠাৎ কী মনে করে আমার বাড়িতে আসলি? কোন উদ্দেশ্যে?”
“তোর বাড়িতে আসতে হলে উদ্দেশ্যে লাগে? অনেক দিন দেখা হয়নি তাই চলে এলাম দেখা করতে। ভাগ্যিস এসেছিলাম। না হলে তো জানতাম না কোনো দিন তোর বিয়ের কথা।”
“না জানলেই ভালো হতো।”মনে মনে বললো প্রহন। মুহিত কে রেস্ট করতে বলে নিজের রুমে ফিরে যায় সে। রুমে এসে বিছানার উপর চৈতি কে না দেখে কয়েক বার ডাক দেয়,”লাজুক লতা বউ আমার, তুমি কই?”
বেলকনি থেকে চৈতির কন্ঠস্বর ভেসে আসে,”আমি এখানে আছি।”
চৈতির কথা শুনে প্রহন চট করে বেলকনিতে চলে গেল। চৈতি এক দৃষ্টিতে ফুলের উপর বসে থাকা প্রজাপতির দিকে তাকিয়ে আছে। প্রহন হুসস হুসস করে তাড়িয়ে দিতে চাইলে বাঁধ সাধে চৈতি।
“কী করছেন কী আপনি?ফুল থেকে মধু খাচ্ছে
যে দেখছেন না? একদম বিরক্ত করবেন না ওদের।”
চৈতির নিষেধাজ্ঞা শুনে শয়তানি হাসে প্রহন। ঠোঁট কামড়ে চৈতির হাত ধরে টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। আচমকা এমন করায় কয়েক টা হার্ট বিট মিস হলো চৈতির। এমন করে কাছে টেনে নিয়েছে মানেই হলো ভয়ঙ্কর সব কথা বলে হৃদয় স্পন্দন প্রক্রিয়া পাল্টে দিবে।দ্রুত গতিতে চলতে থাকবে।
প্রহন চৈতির মুখের সামনে আসা চুল গুলো আলতো হাতে কানের পিছে গুঁজে দিল। চোখে চোখ রেখে বলল,”আমার ও তো ইচ্ছে করছে ভীষণ, ফুলের মধু খেতে। তুমি নামক ফুলের,,”
চলবে,,,,
(বিঃদ্রঃ আসসালামুয়ালাইকুম ♥️ আজ থেকেই নিয়মিত হবো ইনশাআল্লাহ। কয়েক দিন ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম।)