#অভিমানে_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১০ (প্রপোজ স্পেশাল)
সারা বিকেল সাদি নিজের ঘরে বসেই ল্যাপটপে কাজ করেছে।।একবারও বের হয়নি।কিছুক্ষণ পর ল্যাপটপ বন্ধ করে ভাবল ছাদে গিয়ে একটা সিগারেট খাবে কারণ সায়মা আহমেদের কঠোর বারণ ঘরে সিগারেট খাওয়া যাবে না। তাই সাদি সিগারেটের প্যাকেট টা নিয়ে ছাদের দিকে রওনা হলো।কিন্তুু সিড়িতে পা রাখার আগেই সায়মা আহমেদ বাঁধা দিয়ে সামনে দাঁড়ালেন। মুখে একটা নেকা হাসি রেখে বললেন–সা—-দি—- বা—বা কই যাচ্ছিস?
সাদি কপাল কুঁচকে বলল–ওয়েট মা,তুমি এমন করে কথা বলছ কেন?আর আমার নাম সা——দি—- না।।সাদি।
সায়মা–সে যাই হোক।।ছাদে যাবি না এই ভর সন্ধ্যা বেলা।
সাদি–তা সিগারেট টা কই খাবো??!!
সায়মা–ছি!!মাকে আবার জিজ্ঞেস করছিস সিগারেট কই খাবি!!!বদ ছেলে!!
সাদি–ও ও মা,, কাম অন মেলোড্রামা বন্ধ করো।তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি সেই ক্লাস ১০ থেকে সিগারেট খাই।
সায়মা–অভদ্র ছেলে।
সাদি–কি যে বলনা মা!!তুমি খাবে নাকি একটা??!!
সায়মা—থাপড়ে তোর দাঁতের পাটি খুলে দিবো বেয়াদব।
সাদি–দাঁতের পাটি খুলে দিলে তোমার বৌমাকে কামড় দিবো কেমনে মা!!??
সায়মা–বদমাইশ ছেলে সবসময় লাগাম ছাড়া কথা(সাদির কান ধরে)
সাদি—ও ও মা।,,তুমি তো আমার বান্ধবী।। (সায়মা আহমেদকে জড়িয়ে ধরে)
সায়মা–হুমম,,চল এখন আমার সাথে।
সাদি–কোথায়!!?? সিগারেট খেতে??
সায়মা–চুপ বাঁদর।
সায়মা আহমেদ সাদির হাত ধরে নিজের ঘরে নিয়ে সাদিকে বসিয়ে আজগুবি গল্প শুরু করলেন।
সাদি একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলল–আচ্ছা মা,তোমার গুণধর বৌমা কই??অনেকক্ষণ দেখছি না।
সায়মা–কেন ওকে দিয়ে কি করবি?!!আবার রাক্ষসের মতো কামড় দিবি??
সাদি–উফ!! মা,,তোমার বৌমা কে শুধু কামড় না আদর ও করি শুনে দেখো।
সায়মা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে–হুমম।।রাক্ষসের মতো ওই আদর না করাই ভালো।।মেয়েটার জীবন ভাজাভাজা করে দিবি তুই।
সাদি–কি করব বলো মা!!!
সায়মা বেগম আচমকা ফোন চেক করে বললেন–যাহ!!বের হ তুই এখন।যেখানে গিয়ে সিগারেট ফুঁকবি,ফুঁক যাহ।।ভাগ এখান থেকে।
বলেই সাদিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিলেন।সাদি তো অবাকের ৭ম পর্যায়ে পৌঁছে গেল যে কি হলো তার সাথে।তারপর বলল–কেস টা কি!!ডেকে আনলো আবার বের ও করে দিল!!আজব তো!!কি জানি বাপু!!এসব মেয়েদের বুঝতে গেলে জীবন কয়লা হয়ে যাবে।যাই ছাদ থেকে সিগারেট খেয়ে তারপর অন্য ম্যাডামকে দেখছি।।তিনিেতো গায়েব পুরো।।
বলতে বলতে সাদি সিগারেট ধরিয়ে ছাদের পথে হাঁটা দিল।ছাদের দরজা খুলে সাদি তো পুরো হাই লেভেলের টাসকি খেল।ছাদ টা পুরো ফেয়ারি লাইটস দিয়ে ডেকোরেশন করা।।নিচে অনেক বেলুন ছড়ানো রয়েছে। সাদি সিগারেট ফেলে পা দিয়ে পিসে এগোতে লাগল সামনে।কিন্তুুু সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রমণী কে দেখে সাদি স্তব্ধ পুরো।।সাদি কিছুক্ষণের জন্য থমকে দাঁড়িয়ে গেল।সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মিথি পরনে রয়েছে হলুদ শাড়ি,হাতে হলুদ কাঁচের চুড়ি,কানে ছোট্ট ঝুমকা,মাথার খোপাতে বেলি ফুলের মালা।কোন কৃত্রিম সাজ ছাড়াই যেন মিথিকে পরী লাগছে।সাদিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিথি এগিয়ে এলো সাদির দিকে।মিথির এগোনোতে মনে হচ্ছে সাদির এবার হার্ট অ্যাটাক হবে।সাদি চোখের পলকও ফেলতে ভুলে গিয়েছে। মিথি হাতে একটা গোলাপ নিয়ে সাদির সামনে হাঁটুগেড়ে বসে পড়ল।গোলাপটা সাদির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল–জানি না কিভাবে তোমাকে বলব সাদি ভাই,,নিজের অনুভূতি সম্পর্কে নিজেই অচেতন ছিলাম,তোমার কাছে আসার অনুভূতিগুলো আমার মনে নতুন অনুভূতির সৃষ্টি করেছে।সেই অনুভূতি যে ভালোবাসা। তা আমি আজ বুঝলাম।।তাই আমি তোমাকে বলতে চাই যে –আমি তোমাকে ভালোবাসি সাদি ভাই,,খুব ভালোবাসি!!তোমার সাথে আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত স্মৃতির ফ্রেমে বন্দি করতে চাই।
বলো তুমি কি হবে আমার স্মৃতির ফ্রেমের সাথী???
সাদি যেন কথা বলতে ভুলে গিয়েছে।।মিথি হাত ধরে দাঁড় করিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।তারপর বলল–তুই জানিস মিথিপাখি,,আমি তোকে তোর থেকেও বেশি ভালোবাসি।।কিন্তুু তোকে প্রকাশ করার সুযোগ হয়নি বা বলতে পারিস ইচ্ছে করেই বলিনি।তোকে আজ ১১ বছর ধরে ভালোবাসি।খুব ভালোবাসি তোকে।তারপর মিথিকে সামনে এনে মিথির মুখ ধরে সাদি ওর ঠোঁট আঁকড়ে ধরে।মিথিও পরম আবেশে সাদির ভালোবাসা গ্রহণ করতে থাকে।
সাদি মিথির ঠোঁট ছেড়ে মিথির কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে–থ্যাংকস মিথি পাখি,, আমার অপ্রকাশিত অনুভূতি বুঝে নেওয়ার জন্য।।
তারপর সাদি মিথিকে কোলে তুলে নিয়ে বলল–চল,,আজ চন্দ্রবিলাস করব দুজনে।সাদির কোলে বসে আছে মিথি,আর সাদি দোলনাতে বসে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
নিরব পরিবেশ ভেঙে মিথি সাদিকে জিজ্ঞেস করে–আচ্ছা সাদি ভাই,তুমি বললে যে তুমি আমাকে ১১ বছর ধরে ভালোবাসো!!সেটা কিভাবে???
সাদি–১ম তোকে তোদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দেখেছিলাম।তখন তুই তো অনেক ছোট।।তখন থেকেই তোকে ভালোবাসি।।
মিথি কিছুটা কপাল কুঁচকে বলে–তাহলে আমার আগের বিয়েটা কেন হতে দিলে??,আর ওই বিয়ের দিনই বা ওমন কেন করলে??আর তিশাপু??
সাদি মিথির কপালে চুমু দিয়ে তারপর ইশান,তিশার ব্যাপারটা খুলে বলল শুধু এটা ছাড়া যে ইশান মিথিকে চায়।
সব শুনে মিথি বলল–ভীষণ বাজে লোক তো।।ওই বাজে লোকটাকে তুমি ধরবে কবে??
সাদি একটু মুচকি হেসে বলে–মিথিপাখি বলে দিয়েছে বাজে তারমানে তো দ্রুতই ধরতে হবে।
মিথি–হুমম।একটা কথা বলবো। রাগ করবে নাতো??
সাদি–উহুম।। বল।
মিথি–জানো,তোমাকে ভালোবাসি বলার আগে আমি ভয় পাচ্ছিলাম যে তোমায় বলবো কিনা,বললে তুমি আমায় মানবে কিনা!!আর আমি তোমার যোগ্য তো কোনো দিক থেকেই নই।
সাদি কপাল কুঁচকে একটু রেগে বলে–তোর কোনো যোগ্যতা বা তোর রুপ দেখে তোকে ভালোবাসিনি।
মিথি–সে তো ফুপি বোঝানোর পর বুঝেছি।।
সাদি–মানে!!তোর সন্দেহ ছিল কোনো কারণে??
মিথি–না মানে!!তুমি বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে এসেছো!!আমার থেকে ভালো হাজার টা মেয়ে তোমার আশেপাশে থাকে।তাই আরকি!!
সাদি–শোন!! আমার ওই ভালো হাজারটা মেয়েকে ভালো লাগে না৷ আমার তোকে চাই শুধু।
মিথি–না বুঝেছি আমি।।তবে জানি আমি যে শহুরে ছেলেরা নাকি একটু ক্যারেক্টালেস হয়।
সাদি–তারমানে তুই আমায় ক্যারেক্টরলেস ভাবিস??কারণটা কি তোকে আমি কয়েকবার কিস করেছি এজন্য?? (বেশ রেগে উঠে দাঁড়িয়ে বলে কথাটা)
মিথি তাড়াতাড়ি করে বলে –না না!!আসলে তোমার দিশাপুর কথা মনে আছে।।আমার ছোট মামা র মেয়ে।আপুর একটা শহুরে ছেলের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তুু আপু যেদিন প্রপোজ করেছিল তখন নাকি ঐ ছেলেটা আপুকে যা তা বলে অপমান করেছিল বলেছিল –আপুর কি যোগ্যতা আছে??!!!তখন থেকেই আমার একটা বিরূপ ধারণা চলে আসে তাই ই ভাবতাম যে তুমিও যদি এমন বলো।।বাট ফুপি আমাকে বলেছে তুমি এমন না।।আর আমিও বুঝেছি।।
এর মিথি কান ধরে সাদির সামনে গিয়ে বলে –সরি!!আর এমন গবেটমার্কা ধারণা রাখব না।।প্রমিজ।
সাদির মিথির হাত ধরে বলে–কে কেমন আমি জানি না মিথিপাখি।আমি শুধু তোকে ভালোবাসি।।আমার সব #অভিমানে_তুমি। শুধুই তুমি।
তারপর মিথিকে জড়িয়ে ধরে।।কিছুক্ষণ পর আচমকা মিথিকে ছেড়ে দিয়ে বলে–আচ্ছা, আমি যে কয়েকদিন তোকে এতো আদর করলাম, তুই বুঝতে পারিস নি,যে আমি তোকে ভালোবাসি।
মিথি মুখটা নামিয়ে বলে–আমি তো আমার ঐ ধারণা নিয়ে ছিলাম যে তুমিও ঐ ছেলেটার মতোই।
সাদি–তোকে ডাফার কেন বলি,,এবার তুই ভেবে দেখ।
মিথি মুখটা ভার করে বলে–তুমি সরাসরি বললেই পারতে ভালোবাসো।তানা উনি চুমু,কামড় দিয়ে একাকার।।!!
সাদি–তুই যে আমার সম্পর্কে এমন ডাফারমার্কা ভাবনা নিয়ে আছিস তা কে জানতো!!
মিথি–বললাম তো সরি।।আর এসব ভাববো না।।
সাদি–ঠিক আছে।।
বলেই মিথিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল।
সাদি–তোকে এসব ডেকোরেশন করতে মা হেল্প করেছে তাইনা??
মিথি–হুমম,ফুপি হেল্প না করলে,,কখনোই সম্ভব হতো না এতো কিছু করা।ফুপির ই আইডিয়া আর আমার ভুলভাল ধারণাও ফুপিই ভেঙেছে।
সাদি–তোর শাশুড়ী বেশ কুল তাইনা??
মিথি একটু হেসে বলে –অনেক কুল।।
তারপর সাদি মিথিকে ছেড়ে দিয়ে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে সিগারেট জ্বালায়।
মিথি নাক ফুলিয়ে ভ্রুকুটি করে সাদির দিকে তাকিয়ে আছে।।
সাদি সিগারেটে একটা টান দিয়ে বলে–এভাবে তাকাচ্ছিস কেনো??এখন তুই আমার তাই আমার সব হ্যাবিট সম্পর্কে তোর জানা দরকার।
মিথি–তুমি এসব ছাইপাঁশ খেয়ে খবরদার আমায় চুমু দেবে না।কি বাজে গন্ধ,,,ছি!!!
সাদি সাথে সাথে সিগারেট ফেলে পা দিয়ে পিসে মিথিকে কাছে টেনে বলে–ওকে।। সিগারেটের থেকে তোকে চুমু খাওয়াটা বেশি দরকার। তোর নেশা এর থেকেও বেশি।
মিথি হেসে ফেলে বলে–তাই বুঝি!!।
সাদি মিথির ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিতেই মিথি হাত দিয়ে ঠেকিয়ে দেয় সাদিকে।সাদি কপাল কুঁচকে বলে –কি!!
মিথি–বললাম যে,,সিগারেট খেয়ে নো চুমু।
সাদি করুণ করে বলে–মাত্র একটা টান দিয়েছি।।
মিথি –সে যাই হোক।একটান আর দুটান কি!!সিগারেট তো সিগারেট ই।
সাদি — মিথিপাখি।।
মিথি–ছাড়ুন।।কেক কাটবো চলুন।।।
সাদি মাথা চুলকে মিথিকে ছেড়ে মিথির পেছন পেছন গেল।কেকটা কেটে একে ওপরকে খাইয়ে দিল।তারপর মিথিকে রেলিং এর সাথে দাঁড় করিয়ে সাদি মিথির ২ পাশের হাত দিয়ে আটকে ধরল।তারপর তাদের ব্যক্তিগত কিছু কথা একে অপরের সাথে বলতে লাগল।।
অন্যদিকে,,,
সাদি মিথির এই অপূর্ব মুহূর্ত ল্যাপটপের স্ক্রিনে রক্তচক্ষু নিয়ে দেখছে ইশান।হাতে থাকা সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বলল–ভুল করলে মিথি জান সাদিকে ভালোবেসে।।তোমার বিশাল হার্টব্রেক হতে চলেছে যে।।
বলেই আবার স্ক্রিনে তাকাতে দেখল সাদি মিথির চুম্বনরত অবস্থা ভিডিও চলছে।।ইশান রেগে ল্যাপটপ আছাড় মারল।ল্যাপটপ টা খন্ড খন্ড হয়ে ঘরের এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়ল।তারপর একে একে ঘরের সব জিনিস ভাঙতে লাগল ইশান।একসময় ক্লান্ত হয়ে বসে বলল–কিছুদিন তোমার নতুন প্রেমের সাথে একটু এনজয় করে নেও মিথি জান৷ ফাইনালি তো তুমি আমার কাছেই থাকবে।।বলেই ড্রইংরুমে থাকা বারের উদ্দেশ্যে চলে গেল।।
#চলবে
১৫৫০ শব্দের পর্ব😊😊
বিঃদ্রঃ কেমন হলো জানাবেন??একজন পাঠিকা আপুর কমেন্ট ছিল,মিথি যেন প্রোপোজের সময় সাদিকে ভাই সম্বোধন করে।।তার কথা রাখা হলো😊😊