অভিমানে_তুমি #ফারিয়া_আফরিন_ঐশী #পর্বঃ১৪

0
329

#অভিমানে_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১৪

সাদি বিরক্তিকর মনোভাব নিয়ে অফিসে তার কেবিনে বসে ফাইল চেক করছে।।তার বিরক্তিকর মনোভাবের প্রধান কারণ হলো বিগত ১৫ দিনে মিথির আচরণ।
লাস্ট ৩ মাস তো সব স্বাভাবিক ছিলো তবে হঠ্যাৎ মিথির আচরনের পরিবর্তন সাদির কাছে বেশ অবাক লাগছে।। এটা নিয়ে সাদি বেশ টেনশনে আছে।।সাদি দ্রুত কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে আসে।ফ্রেস হয়ে মিথিকে ডাকতে থাকে।৫/৭ বার ডাকার পর মিথি এলো।
সাদি–কখন থেকে ডাকছি!!কই ছিলি??
মিথি বেশ বিরক্তি নিয়ে বলে–বাড়িতেই ছিলাম,,আর এতো ডাকাডাকির কি আছে!!
সাদি–ডাকাডাকির কি আছে মানে!!বাড়িতে এলাম মাত্র তোকে ডাকবো না তো কাকে ডাকবো!!
মিথি –যা বলার বলো দ্রুত।
সাদি চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কিছুটা কন্ট্রোল করে, মিথিকে নিজের কাছে টেনে নেয়।মিথি মুখ দিয়ে বিরক্তিকর আওয়াজ করে বলে–আমার ভালো লাগছে না,,ছাড়ো আমায়।
সাদি এবার রেগে ছেড়ে দিয়ে বলে–ভালো লাগছে না মানে কি!!!কি হয়েছে কি তোর!!!কয়েকদিন ধরে দেখছি তোর এই আচরন।।সমস্যা কি??
মিথি চিল্লিয়ে বলে–সমস্যা হলো তুমি।।ভালো লাগে না সবসময় আমার এসব।।
সাদি মিথির হাত চেপে ধরে বলে–ভালো লাগে না কেন শুনি??
মিথি চিল্লিয়ে বলে–বলবো না।।
সাদি –চেঁচাবি না।।মা অসুস্থ।। তোর চিল্লানি শুনে মা যদি উঠে আসে তো তোর খবর আছে।
মিথি–খবর আর কি করবে।।মারবে??মারো।।তুমি তো ওই কাজ টাই ভালো পারো,,মেয়েদের গায়ে হাত তুলতে।।
সাদি–দেখ মিথি,,সেদিন মারতে তোকে বাধ্য হয়েছিলাম আমি আগেই বলেছি।।তার কারণ ও আছে।।
মিথি–ফালতু কথা বলতে এসো না তো।
সাদি–থাপড়ে তোর দাঁত ফেলে দেবো।।মুখেমুখে তর্ক করলে।
মিথি দরজা শব্দ করে বন্ধ করে চলে যায়।সাদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে পা বাড়ায় তার মা এর ঘরে।সায়মা আহমেদ এর ঘরে এসে দেখে তিনি শুয়ে আছেন।
সাদি–মা!!শরীর কেমন আছে এখন??
সায়মা–এই তো আছে।মিথি কোথায়??কাল থেকে দেখছিনা।।
সাদি–জানি না।।
সায়মা–মেয়েটার কি হয়েছে বলতো??এমন আচরণ করছে কেন??
সাদি–বুঝতে পারছি না মা।।
সায়মা–ওর তো বয়সটা কম।।কোনো ঝামেলাতে জড়ালো কিনা ভার্সিটিতে।
সাদি মেডিসিন চেক করতে করতে বলল–২৩ বছর বয়স মা,,একেবারে কম না।।সে তো আর দুধের বাচ্চা না যে তাকে কেউ টেনে ঝামেলাতে জড়াবে।।আরো আগে বিয়ে হলে বাচ্চা থাকতো এখন।।
সায়মা–তাও,,তুই কিন্তুু রাগের বসে ওকে কিছু বলিস না।।বুঝিয়ে বলিস।।ঠিক হয়ে যাবে।
সাদি–আচ্ছা,, দেখব।।তুমি রেস্ট নাও এখন।।
সায়মা আহমেদ শুয়ে চোখ বুজলেন।।
সাদি ঘরে এসে দেখল মিথি রেডি হচ্ছে।।
সাদি–এখন এই ২ টোর সময় কই যাচ্ছিস তুই??
মিথি আয়নাতে চোখ রেখেই বলল–ভার্সিটি যাচ্ছি।। ক্লাস আছে।
সাদি–এই সময়??
মিথি–হুমম
সাদি–আজ যেতে হবে না।।
মিথি কপাল কুঁচকে বলল–কেন??
সাদি–ভাবছি তুই, আমি, মা একটু বেরবো।।অনেকদিন সবাই বাইরে ঘুরতে যাই না।।এতে মায়ের ও কিছুটা ভালো লাগবে।
মিথি–ওসব ঘুরতে আমার যেতে ইচ্ছে করছে না।।তোমরা যাও।
সাদির তো একেই মেজাজ খারাপ ছিলো তারওপর মিথির কথাতে আরও একধাপ রাগ হলো।।
তারপর দাঁতেদাঁত চেপে বলে–ইচ্ছে করতে হবে আর যেতেও হবে।।
মিথি চিল্লিয়ে উঠে –যাবোনা।।মানে যাবোনা।।কথা বুঝোনা তুমি।
সাদি তেড়ে এসে মিথির গাল চেপে ধরে বলে–চুপ।।বেয়াদবের মতো চিল্লাবি না।।গত কয়েকদিন ধরে তোর বেয়াদবি দেখছি।।আমার সাথে তো করছিস আর মায়ের সাথেও সমানে বেয়াদবি করছিস।।
মিথি মোচড়ামুচড়ি করে বলে–ছাড়ো আমায়।।
সাদি ছেড়ে দিয়ে বলে–বাইরে যেন বেরোতে না দেখি।।যদি বেরিয়েছিস তাহলে তোর খবর আছে আজকে।।
বলে সাদি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।মিথি ধপ করে বিছানাতে বসে রাগে ফুলতে লাগলো।তার মধ্যে মিথির ফোন বেজে উঠল।।মিথি ফোন রিসিভ করতেই একটা বাচ্চা বলল–মামনি,,তুমি এখনো এলে না??কখন আসবে??ইভান ইজ ওয়েটিং।।
মিথি কিছুটা শিথিল কন্ঠে বলে–সরি বাবু,,আমি কাল আসবো প্রমিজ।।
ইভান মুখটা ফুলিয়ে ফোন তার বাবার দিকে এগিয়ে দেয়,ইশান ফোন টা রিসিভ করে বলে–হুমম,মিথি বলো।।
মিথি–আসলে নীল,, আমি চেষ্টা করেছি কিন্তুুু বেরোতে পারছি না৷ (ইশানকে মিথি নীল নামে চিনে))
ইশান–ইটস ওকে।।আমি ইভানকে বুঝিয়ে বলবো।।তুমি ঝামেলা করে বেরিয়ো না।।
মিথি–হুমমম।।
ইশান–আচ্ছা রাখছি।।
ফোন কেটে ইশান একটা ডেভিল হাসি দেয় তারপর রেগে থাকা ইভানের কাছে গিয়ে বলে–পাপা কি রাগ করেছে??
ইভান ছলছল চোখে বলে–মামনি আসছে না।।
ইশান–মামনি খুব জলদি তোমার কাছে পারমানেন্টলি চলে আসবে।
ইভান কি বুঝলো কে জানে,,হাত নেড়ে খুশি হয়ে খেলতে চলে গেল।
ইশান–টু টু কুল সাদি।।বেশ লাগছে তোর অশান্ত মন দেখতে।।বলেই হেসে দেয়।।
তারপর একজন লোক এসে বলে–কেমন আছেন স্যার??
ইশান–বেশ ভালো।।
লোকটি–আপনি ১ মাস হলো এসেছেন অথচ দেখা করার সুযোগ হয়নি।।
ইশান–হুমম।।তোমাকে ডেকে পাঠাতাম স্পেশাল থ্যাংকস দেওয়ার জন্য।।
লোকটি –কেন স্যার??
ইশান–তুমি যে সাদি মিথির প্রত্যক মুহূর্তের ছবিসহ আপডেট দিচ্ছ তাই।।
লোকটি–সে তো আমার দায়িত্ব স্যার।।
ইশান লোকটির দিকে কিছু টাকা এগিয়ে দিয়ে বলে–এই নাও।।ভালো করে কাজ করো।। আরো পাবে।।
লোকটি টাকা নিয়ে খুশিতে গদগদ হয়ে চলে যায়।

সাদি ছাদে দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট টানছে।।তার যেন মনে কোনো শান্তিই নেই।
সাদি–কেন এমন করছিস মিথি??তোর ভার্সিটি রিলেটেড কোনো ঝামেলা না এটা আমি সিউর।।তাহলে??
এর মাঝেই সায়মা আহমেদ সাদির কাঁধে হাত রাখেন।।
সাদি তাকে দেখে সিগারেট ফেলে বলে–তুমি উঠে আসলে কেন??আমায় ডাকলেই পারতে!!
সায়মা–আমি এখন কিছুটা ভালো।।তাই উঠে এলাম।।শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে না।।
সাদি-হুমম।তোমার ডাক্তারের কাছে রুটিন চেকাপ আছে। সন্ধ্যা তে।।আমি নিয়ে যাবো।।
সায়মা–থাক।।আজ আর গিয়ে কাজ নেই।।তুই বরং মিথিকে একটু টাইম দে।কাজের চাপে তো বাড়িতেই থাকিস না৷
সাদি–চেকাপটা দরকার মা।।তোমার অলরেডি একবার স্ট্রোক হয়েছে।।আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই না।।আর মিথির সাথে আজ রাতে কথা বলবো।।
সায়মা–আচ্ছা।।তাহলে আমি রেডি হচ্ছি,,তুই আয়।
সাদি–হুমম,, আসছি।।

সাদি সায়মা আহমেদ কে নিয়ে বেরিয়ে গেল।মিথি যেন এই অপেক্ষাতেই ছিল।
মিথিও বেরিয়ে গেল উদ্দেশ্য ইশান উরফ নীলের বাড়ি।মিথি নিজেও জানে না কোন বিপদের কাছে সে নিজ ইচ্ছে তে ধরা দিচ্ছে।।
কিছুক্ষণের মধ্যে মিথি পৌঁছাল তার গন্তব্যে।।বেল বাজাতেই ইভান কে কোলে নিয়ে দরজা খুলে দিল ইশান।।
মিথি দ্রুত ইভানকে কোলে নিয়ে ভেতরে এসে বলল–আপনি আজ হসপিটাল যান নি??
ইশান–আসলে ইভান জেদ করছিল তাই আর যাওয়া হয়নি।।।
মিথি–ও ও।।
ইশান–তুমি এলে কিভাবে??তাও এই সময়??
মিথি–সাদি আমার শাশুড়ীকে নিয়ে বেরিয়েছে।।সেই ফাঁকে এলাম।।
ইশান–ও ও আচ্ছা।।
মিথি,ইভানের সাথে খেলতে লাগল।

অন্যদিকে ঘন্টাখানিকের মধ্যে সাদি আর সায়মা আহমেদ বাড়িতে চলে আসেন।।সাদি মিথিকে খুঁজতে লাগলে মেইড জানায় সে বেশ আগেই বেরিয়েছে।
সাদি ফোন দেয় দেখে ফোন বাড়িতে ফেলে গেছে।
তারপর ড্রইংরুমে বসে অপেক্ষা করতে থাকে।মেইডের থেকে শুনে সায়মা আহমেদ ও নিচে সোফাতে বসে থাকেন।ঘড়ির কাটা তখন ৯ টায়।
সাদি মিথির সব বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিয়েছ৷ বাট নাই।
তারপর রিদানকে খুঁজতে বলে নিজে বাড়িতে অপেক্ষা করতে থাকে।।রাগে সাদির চোখ লাল হয়ে আছে।
সায়মা আহমেদ বেশ বুঝতে পারছে মিথি যদি ইচ্ছেকৃত দেড়ি করে তবে আজ বাড়িতে ছোটখাট ঝড় বয়ে যাবে।
ঘড়ির কাটা ১০ টায় পৌঁছালে মিথি বাড়িতে ফেরে।।ইভান ছাড়ছিল না বলে দেড়ি হয়ে গেল।।ভেবেছিল চুপিসারে ঘরে চলে যাবে।।তবে ড্রইংরুমে ঢুকেই মাথানিচু করে সোফাতে বসে থাকা সাদিকে দেখতে পায়।
সাদি উঠে এগিয়ে এসে বলে–বেরোতে নিষেধ করেছিলাম,,,তাও কই গিয়েছিলি??
মিথি আমতা আমতা করে বলে–বান্ধবীর বাড়িতে।
সাদি–কোন বান্ধবী??
মিথি–নি—শি
সাদি–এবার চেঁচিয়ে ওঠে–মিথ্যা কথা।।আমি সবার বাড়িতে খোঁজ নিয়েছি।।
সাদি মিথির হাত শক্ত করে ধরে রুমে নিয়ে যেতে গেলে সায়মা আহমেদ বলে–সাদি বাবা,আজ বকিস না ওকে।।আমি কথা বলবো ওর সাথে।।
সাদি–মা তুমি এসবের মধ্যে এসো না।।আমি বুঝে নিবো।রুমে যাও।
তারপর মিথিকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে দরজা লক করে দেয়।
সায়মা আহমেদ জানে এখন কোনো কাজ হবে না তাই নিজের ঘরে বসে চোখের জল ফেলতে লাগে।।

অন্যদিকে,,
ইশান–ও হহ সাদি,, এখন তো খুব রাগ দেখাচ্ছিসস।।।
আমার জান আমার কাছে আসার অনেকটা ধাপ পার করে ফেলেছে।।
তারপর নিজের বেডে হাতপা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে।।

#চলবে
১৩০০ শব্দের পর্ব😊😊

বিঃদ্রঃ সাদির মায়ের ফ্রেন্ডলি মনোভাব নিয়ে অনেক পাঠকের বেশ সমস্যা লক্ষ করলাম,,তাই সাদির মায়ের চরিত্রটার বদল আনার চেষ্টা করছি।।আমার লেখা মূলত পাঠকদের জন্য।। তাদের খারাপ লাগবে এমন কিছু লিখবো না।।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।।
আর কেমন হলো জানাবেন??😊😊😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here