#অভিমানে_তুমি
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১৬
সাদি হসপিটালের বেডে বসে আছে,সায়মা আহমেদ ফল কাটছেন আর মিথি সাদির মেডিসিন গুলো দেখে দেখে প্যাক করছে।।
সাদি–মা!!দাদু কেমন আছে??
সায়মা আহমেদ ফল কেটে প্লেটে রাখতে রাখতে বললেন–বিপি অনেক লো বাবার তারওপর সুগার টাও বেশ বেশি।।বা হাতের আঙ্গুল একটা কাটা।।বাড়িতে ট্রিটমেন্টের ব্যবস্হা করেছি।
সাদি–হুমম।।
সায়মা–বাবু,,ইশানের কি করবি??
সাদি–এই হাতের ব্যান্ডেজটা একটু খুললেই ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো।।কাস্টাডিতে আছে।। আমি চেষ্টা করবো সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার ওকে।।
সায়মা–হুমম,,জীবনটা জ্বালিয়ে জাহান্নাম বানিয়ে ছাড়লো।।সবটা না জেনেই তোলপাড় করে দিল।।
এরমধ্যে রিদান কেবিনে এসে বলল–গুড নুন স্যার,রিলিজ হয়ে গিয়েছে আপনার।।
সাদি–হুমম।।মা তাহলে চলো বাড়ির দিকে।
সায়মা–তুই ফল শেষ কর তারমধ্যে আমি আর মিথি সব গুছিয়ে নিচ্ছি।
সাদি আড়চোখে তাকিয়ে দেখল মিথি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
সায়মা আহমেদ কিছু প্যাকেট নিয়ে মিথিকে উদ্দেশ্য করে বললেন–মিথি মা,তুই সাদিকে শার্টটা পরতে একটু সাহায্য কর।
মিথি একপলক সাদির দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে সায়মা আহমেদের কথাতে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।তারপর সায়মা আহমেদ কেবিন থেকে বেরিয়ে যান।।
মিথি শার্ট হাতে এগিয়ে গেলে সাদি অন্য হাতে শার্ট টা ছিনিয়ে নিয়ে বলে—কোনো দরকার নেই,,আমার কাজ আমি নিজেই করে নিতে পারব।।
মিথি ছলছল চোখে সাদির দিকে তাকিয়ে বলে–আমার ভুল হয়েছে,আমি স্বীকার করছি।তুমি শাস্তি দাও কিন্তুুু এমন করে দূরে সরে যেও না প্লিজ।।
সাদি–শাস্তি রাইট!ধরে নে তোর কাছে থেকেও আমার দূরে থাকাটা তোর শাস্তি।
মিথি চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।।সাদি কোনোমতে শার্ট পড়ে রিদানকে ডেকে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।
মিথি ও পিছনে পিছনে যায়।।গাড়িতে উঠে যায়।
সাদি–রিদান,মা কই??
রিদান–ম্যাম তো আগেই বাড়ি চলে গিয়েছেন।
সাদি–ইশানের কি আপডেট??
রিদান–রবিন স্যারের স্পেশাল কাস্টাডিতে রেখেছি,আর ওর ছেলে ইভানকে বাড়িতে পেয়েছি আপাতত রুহির সাথে আছে।।এরপর আপনি যা অর্ডার দিবেন তাই হবে।
সাদি–যেমন চলছে চলুক আমি ফিট হয়ে জয়েন করি তারপর দেখছি।।ইশানকে কড়া সিকিউরিটি তে রাখো।।পালের গোদা মানে রুহির বাবা(আয়মান চৌধুরী) কে এখনো ধরা হয়নি।ও মাস্ট ইশানকে মারার নয়তো পালানোর ব্যবস্হা করবে।।সো কেয়ারফুল।।বাচ্চার দিকে খেয়াল রেখো।
রিদান–ওকে স্যার।
কিছুক্ষণের মধ্যে তারা বাড়ি পৌঁছে যায়।সাদি নেমে নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেয় তারপর সোহেল আহমেদ এর ঘরে গিয়ে দেখে তিনি চোখ বুজে আছেন।
সাদি গিয়ে মাথায় হাত রাখতেই চোখ মেলে তাকান।।
সাদি–কেমন আছো দাদুন?
সোহেল– আলহামদুলিল্লাহ দাদুভাই,, এখন শরীরটা বেশ ভালো।তোমার শরীর কেমন??
সাদি–বেশ ভালো।।বলছিলাম যে–
সোহেল–ওসব কাজের কথা পরে।।বৌমা বলল আমার নাতবৌমা আছে তার সাথে তো আলাপই হলো না।।ডাকো তাকে।
সাদি একজন মেইড কে পাঠায় মিথিকে ডাকতে আর অন্য একজন মেইড সোহেল আহমেদ কে ধরে বসিয়ে দেন।। মিথি দরজায় এসে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।।সাথে সায়মা আহমেদ ও রয়েছেন।
সোহেল আহমেদ তা দেখে বললেন–আয় নাতবৌ আমার পাশে এসে বস।
মিথি ধীর পায়ে গিয়ে সোহেল আহমেদের পাশে গিয়ে বসে।সোহেল আহমেদ মিথিকে দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন–বাহ!!খুব সুন্দরী নাতবৌ আমার।আমার দাদুভাইয়ের চয়েজ আছে।।
সায়মা–হুমম বাবা।।আপনার নাতি তো পাগল ছিল পুরো তা তো আপনি জানেন।।
সোহেল–জানি!!তুমি আমায় আমার ঐ বাক্সটা দাও।
সায়মা আহমেদ সম্মতি দিয়ে আলমারি হতে একটা বাক্স বের করে সোহেল আহমেদের হাতে দিল।
সোহেল আহমেদ বাক্স খুলতে খুলতে বলেন–এগুলো তোদের দাদীর বিয়ের গয়না।।বুঝলি নাতবৌ।সব নাতিদের ভাগ করে দেওয়ার কথা ছিল।কিন্তুুু নিশান তো আর নেই আর ইশানের বৌ কে তা জানতে পারলে তাকেও দিবো কারণ ওর ও অধিকার রয়েছে।।তবে এখানে যা আছে সব তোর।
মিথি সায়মা আহমেদের দিকে তাকালে সায়মা আহমেদ ইশারায় নিতে বলেন।।
মিথি কাঁপা-কাঁপা হাত দিয়ে নিয়ে বলে–ধন্যবাদ দাদু।।আসসালামু আলাইকুম।।
সোহেল আহমেদ –ওয়ালাইকুম আসসালামু নাতবৌ।।এগুলোর মধ্যে থেকে গহনা পরে আমাকে দেখিও।।
মিথি মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।তারপর সায়মা আহমেদ আর মিথি বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।সাদি প্রয়োজনীয় কিছু স্টেটমেন্ট রেকর্ড করে নেয় সোহেল আহমেদের থেকে।
সায়মা আহমেদ আর মিথি রান্নার কাজ করতে থাকল।
রাতের খাবার খেয়ে সবাই নিজ নিজ ঘরে চলে যায়।
মিথি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে সাদি ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে।
মিথি গুটিগুটি পায়ে ব্যালকোনিতে গিয়ে বলে–তুমি আবারও সিগারেট খাচ্ছ??
সাদি কোনো উত্তর দিল না।মিথি সাদির কাছে গিয়ে বলল–সরি গো!!প্লিজ!!!
সাদি–আর কিছু বলবি??নাহলে গিয়ে শুয়ে পড়।
মিথি সাদিকে হালকা জড়িয়ে ধরে বলে–আম সরি!!প্লিজ।।
সাদি এবার একটা ভয়াবহ কাজ করে বসল।।
সাদি মিথির কোমড়ে জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরল।
মিথি চিৎকার দিতে গিয়েও দিল না চোখ বন্ধ করে সহ্য করে নিল।।।
সাদি ছেড়ে দিয়ে বলল–ঠিক এমন কষ্ট হয়েছিল আমার যখন জানলাম তুই আমাকে অবিশ্বাস করেছিস।
মিথি চোখের পানি ছেড়ে দিল।
সাদি সামনে ঘুরে আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে মুখে নিয়ে টান দিয়ে বলে–তুই জানতে চেয়েছিলি না ঐদিন রাতে তোকে কেন মেরেছিলাম??শোন তাহলে ঐদিন তোকে বিয়ে করার জন্য ইশান দাদুর আঙ্গুল কেটে পাঠিয়েছিল। আমার ঘরের সোজা বিল্ডিং এ বন্দুক তাক করা ছিল।। ইশান বাধ্য করেছিল আমায় এমন করতে৷
মিথি সাদির হাত জড়িয়ে ধরে বলে–আমায় ক্ষমা করো।।
সাদি সিগারেট ফেলে নিজের হাত ছাড়িয়ে চলে যায় ভেতরে। মিথি ওখানে বসে অঝোরে কাঁদতে থাকে।।কিছুক্ষণ পর মিথি ভেতরে এসে দেখে সাদি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে মাত্র। সাদি বালিশ নিয়ে সোফাতে রাখলে মিথি দৌড়ে গিয়ে সাদির হাত ধরে বলে–তুমি অসুস্থ, তুমি বেডে ঘুমাও।।আমি সোফাতে ঘুমাচ্ছি।।প্লিজ।
সাদি ঝটকা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ে।।মিথি চোখের জল মুছে সোফাতে অন্য পাশ ফিরে শুয়ে চোখের পানি ফেলতে থাকে নীরবে।
সাদি মনে মনে চিন্তা করতে থাকে—তুই কিভাবে আমায় অবিশ্বাস করলি মিথিপাখি!!!তোকে কেউ কিছু বললে আমাকে একবার জানাতিস।।তোকে আমাকে অবিশ্বাস করার শাস্তি পেতেই হবে।।
মিথি ও চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ভাবতে থাকে–আচ্ছা,,তুমি কি আমায় কখনো ক্ষমা করবে না।।আমি দোষ করেছি তার শাস্তি যদি তুমি দূরে চলে গিয়ে দাও তা তো আমি মানতে পারছি না।।
এই নীরব রাতে সাদি বা মিথি কারোর ই ঘুম হলো না।।
দুজনের দুজনকে নিয়ে ভেবেই রাত পার হয়ে গেল।।
মান অভিমানের মাঝেই কেটে গেল ১ সপ্তাহ।।
সাদি মিথি এখনো আলাদা থাকছে।সাদি মিথির সাথে এখন পুরোপুরি কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।।তার সাথে ইগনোর তো আছেই।মিথি বহুবার ক্ষমা চেয়েছে কিন্তুুু কাজ হয় নি।এখনতো মিথি ঘরে থাকলে সাদি খুব সম্ভব চেষ্টা করে ঘরে না থাকার।।
অন্যদিকে,,,
ইশান ধরা পড়াতে আয়মান চৌধুরী আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায়।আয়মান চৌধুরী মদের গ্লাস হাতে তার একজন দন্ডায়মান চেলাকে বলছেন–ইশান ধরা পড়ে গিয়েছে।। ওকে এখন কিছু করতে হলে আগে সাদিকে ডিসট্রাক্ট করতে হবে।। আর সাদির ডিসট্রাক্টশন হলো মিথি।।
তারপর ২ জন লোককে ডেকে বলে–কিল হার।।ফাস্ট।।
লোক ২ জন মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে চলে যায়।।
আয়মান চৌধুরী বলে–ইশানকে আমার চাই।।ইশানের কিছু হলে আমার সব শেষ।।!!!
সাদি আজ অফিস জয়েন করেছে।।সকালে বেরিয়ে গিয়েছে,, মিথি বেশ কয়েকবার কথা বলতে চেষ্টা করেছে কিন্তুু সাদি কোনো কথার সুযোগ না দিয়েই চলে গিয়েছে।।
বর্তমানে সাদি ইশানের সামনে বসে আছে,,ইশানের হাতে হাতকড়া পরানো।।সোহেল আহমেদ আর সায়মা
আহমেদের থেকে সত্যি জানার পর সে যেন শান্ত হয়ে গিয়েছে।। নিজের করা অন্যায়তে অনেক অনুতপ্ত সে।
সাদি স্টেটমেন্ট রেকর্ড করতে এসেছে ইশানের যাতে,আয়মান চৌধুরী কে এরেস্ট করতে পারে।।
#চলবে
১২০০ শব্দের পর্ব😊
বিঃদ্রঃ কেমন হলো জানাবেন??আর ২/৩ পর্বে শেষ করে দিবো।।
সাদি – মিথি জুটির কি সিজন টু আনবো নাকি অন্য কোনো জুটির জানান আপনারা।।😊😊