#অতঃপর_তুমি_আমি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৭
‘এতো সহজ!আপনিই বলুন। বারবার ভালোবাসার দাবি নিয়ে দাঁড়িয়েছি আপনার সামনে আপনি কি করলেন প্রত্যেকবার আমায় প্রত্যাখান করলেন। তখন কেমন লাগে আপনি কিভাবে বুঝবেন।’
ওয়ামিয়াক এতোটা শক্ত হতে আগে দেখেনি শেহজাদ। তার প্রেয়সীও তাহলে তার মতোই হচ্ছে। কঠোর,পাথর মনের অধিকারী। আচ্ছা সে যখন তাকে অবহেলা করতো তার ও কি এমন কষ্ট হতো। শেহজাদ দম বন্ধ হয়ে আসছে প্রেয়সীর অবহেলায়। ঝাপটে ধরতে ইচ্ছে করছে তবে সে প্রেয়সীর মান না ভাঙ্গিয়ে কখনোই তাকে স্পর্শ করবে না। সে কাপুরুষ নয় যে স্ত্রীর অনুমতি ব্যতীত তাকে স্পর্শ করবে।ওয়ামিয়ার দৃষ্টি মেঝেতে।শেহজাদ প্রেয়সীকে দেখতে ব্যস্ত।এই সাধারণ রূপেও তার কাছে অসাধারণ লাগছে। এই রূপসী কন্যা তার,একান্তই তার। চাঁদ যেমন একান্তই আকাশের তেমনি ওয়ামিয়া ও একান্তই তার।শেহজাদ প্রেয়সীকে দেখে চোখের তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।
‘তুমি ঘুমিয়ে পরো ওয়ামিয়া রাত তো হলো অনেক।চিন্তা করো না আমি সোফাতে ঘুমাবো’
‘শেহজাদ ভাই এটা নাকট সিনেমা নয় যে আপনি সোফাতে ঘুমাবেন। আপনি আমার স্বামী। এক বিছানায় ঘুমাতে আমার সমস্যা নেই। আপনিও শুয়ে পড়ুন’
ওয়ামিয়া বিছানার এক কোনায় উল্টোদিকে ফিরে শুয়ে পরে।শেহজাদ হতভম্ব। সেই পিচ্চি ওয়ামিয়া আজ এতো বড়বড় কথা বলছে। ভাবতেই দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস ফেলে সে।লাইট বন্ধ করে বারান্দায় চলে আসে।আজকের রাতটা এভাবে কাটাতে হচ্ছে তাদের। শেহজাদ নিজেই দোষী এর জন্য। তবে তার ও কোনো উপায় নেই। ইমন শেখকে পেয়েছে শুধু এখনো নীলা এবং নাবিল শিকদারকে পাইনি সে। যদি হুমায়ন শেখ বিয়ে ঠিক করতে না চাইতো তাহলে সে কখনোই ওয়ামিয়াকে এতো দ্রুত নিজের কাছে আনতো না। বিপদ যে এখনো আছে। এখন আবার এই অভি হাওলাদার। কবে তারাও আর বাকি পাঁচ দশটা মানুষের মতো স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করবে।
‘আম্মু আমি একটা অযোগ্য পুরুষ,খারাপ প্রেমিক,বাজে ছেলে, হয়তো খারাপ স্বামী ও হবো। কিন্তু আমি আমার প্রেয়সীকে রক্ষা করবো হোক তা নিজের জীবন দিয়েও। আমি ভালোবাসি তাকে আম্মু!কেনো এতো কষ্ট। তুমি থাকলে কি এমন হতো বলো। আজ সবটা অন্যরকম হতো।আমরা সবাই এক সাথে হাসি খুশি দিন কাটাতাম।কিন্তু কিছুই হলো না।’
হঠাৎ করেই শেহজাদ ভয়ংকর হয়ে গেলো।চোখদুটো লাল টকটকে রূপ ধারণ করেছে।চোখের সামনে ভেসে উঠলো পাঁচ বছর আগের সেই রাত। নিজের মায়ের র’ক্তা’ক্ত নিথর দেহ,সাথে দাদা দাদি,নানা নানির।তার মায়ের কথাগুলো এখনো মনে আছে।শেহজাদ এলোমেলো হয়ে বসে পরলো ফ্লোরে।দৃষ্টিতে রাগ,ক্ষোভ,ঘৃণা ফুটে উঠেছে।
‘মালা ইসলামকেও চাই আমার।উনিও কিছু জানেন। উনাকে পেলেই নীলাকে পাবো আমি। কাউকে ছাড়বো না আমি জ্বালিয়ে দিবো সব। আমার আম্মু আমার পরিবার শেষ করে দিয়েছিস তোরা কি করে ছাড়ি তোদের। একসাথে শেষ করবো সব।শেহজাদ যতোটা ভালো তার থেকে হাজার গুন ভয়ংকর’
ওয়ামিয়া পেছন থেকে সব শুনছিলো। সে ঘুমাইনি। চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষকে কষ্ট পেতে দেখে বুকটা জ্বলছে। ছাড়খার হচ্ছে সে। যেনো শেহজাদ না সেই কষ্ট পাচ্ছে। সামনে থাকা মানুষটাকে সে পাগলের মতো ভালোবাসে। সে যেমন শান্ত নারী তেমন নিজের কারো দিকে কেউ হাত বাড়ালে সে ভয়ংকর রূপ ধারণ করতেও রাজি।ওয়ামিয়া আবার বিছানায় এসে শুয়ে পরলো।
‘আমি শান্ত,আমি কোমল আবার আমিই ভয়ংকর নারী’
***********
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলো ওয়ামিয়া। শেহজাদ তার থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ঘুমিয়ে আছে। চোখগুলো ফোলা ফোলা। কাল রাতে হয়তো দেরি করে ঘুমিয়েছে। ওয়ামিয়া কিছুক্ষণ তার শখের পুরুষকে দেখলো মন ভরে। কাল থেকে ইগনোর করছে। এটা শাস্তি। তাকে যখন বারবার প্রত্যাখান করেছিলো তার ও এমনই কষ্ট হয়েছিলো। এতো সহজে কি সে ক্ষমা করবে। মোটেও না!কয়েকদিন নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাবে তারপর। কষ্টটা বোঝা উচিত তার। ওয়ামিয়া উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।লাল রঙা শাড়ি পরে নিলো।নতুন বউ সে শাড়ি না পরলে নিজের কাছেই কেমন লাগবে। তার থেকে বড় কথা সে শাড়ি পরতে ভীষণ ভালোবাসে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো মুছলো গামছা দিয়ে।এরপর চুলগুলো ছেড়ে দিলো।চুলগুলো ছড়িয়ে কোমড়ের ও অনেক নিচে পরলো।ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর কাজল দিলো।শেহজাদ মাত্রই ঘুম থেকে উঠেছে। উঠে যে সামনে এতো মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখবে কল্পনা ও করতে পারিনি। সে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার প্রেয়সীর পানে। আজই ওয়ামিয়ার চুল দেখার সৌভাগ্য হলো তার।চুলগুলো এতো সুন্দর যে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করলো। মনে নিষিদ্ধ জিনিস চাইতে লাগলো। তবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো। প্রেয়সীর এমন রূপ দেখেও কি কেউ শান্ত থাকতে পারে। বুকের ভেতরে ঝড় বইছে।
ওয়ামিয়ার চোখ পরলো শেহজাদের দিকে। তার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওয়ামিয়া চুলগুলো হাত খোপা করে নিলো।মাথায় ঘোমটা দিয়ে বেরিয়ে পরলো।শেহজাদ তবুও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। ঘোর কাটতেই নিজেকে স্বাভাবিক করে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ওয়ামিয়া নিচে এসেই রান্না ঘরে চলে যায়। যেখানে মেহবুবা খান রান্না করছে।ওয়ামিয়াকে দেখে বললেন,
‘কিরে মা তুই এতো সকালে উঠলি কেনো?আরেকটু ঘুমিয়ে নিতি’
‘না না আন্টি তুমি এখানে একা কাজ করবে আর আমি ঘুমাবো কিভাবে’
‘পাগলি মেয়ে মা কি তার মেয়েকে কাজ করতে দিতে পারে।তুই বোস গিয়ে ড্রয়িংরুমে। ইফাজ,শেহজাদ,ভাইয়া এখনই চলে আসবে গল্প করিস তাদের সাথে’
‘না না তুমি বলো কি করা লাগবে আমি করে দিচ্ছি’
‘কিছু করা লাগবে না মা। আচ্ছা ঠিক আছে চা বানা সবাই নিচে আসলে দিয়ে আসিস।এর থেকে আর বেশি কিছু করতে হবে না’
মাথা নাড়িয়ে চা বানাতে শুরু করে ওয়ামিয়া। রান্নাবান্না টুকটাক সবই পারে সে।চা বানানো শেষ হতেই ড্রয়িংরুম থেকে কথা বলার আওয়াজ শুনলো। কাপে চা ঢেলে ড্রয়িংরুমে আসলো। মুনতাসিব খানকে চা দিয়ে বললো,
‘নাও আজ আমার হাতের চা খেয়ে বলো তোমার মেয়ে কেমন চা বানানো শিখেছে’
মুনতাসিব খান হেসে বলেন,,,’আজ আমার মেহেনাজ মামনি চা বানিয়েছে তাহলে তো খেতেই হবে’
ওয়ামিয়া শেহজাদকে চা দিলো তবে কথা বললো না। শেহজাদ তো চা হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। তার বউ,তার প্রেয়সী বানিয়েছে। খেতে তো হবেই তাকে। ইফাজকে চা দিয়ে বলল,
‘এই যে ভাইয়া আপনার চা’
‘ধন্যবাদ ভাবি’
ভাবি ডাকায় একটু অস্বস্তি অনুভব করলো ওয়ামিয়া।ইফাজ সব সময় তাকে না ধরেই ডাকে তবে আজ ভাবি বলায় একটু অস্বস্তি হচ্ছে। তবুও ঠোঁটের কোনে হাসি বজায় রাখে।চা দেওয়া শেষে ওয়ামিয়া মুনতাসিবের সাথে গল্প করা শুরু করে।মেহবুবা এসে খেতে ডাকেন।সবাই একসাথে খেয়ে নেয়। ছেলেরা সবাই বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।শেহজাদ যাওয়ার সময় কথা বলতে চেয়েছিলো ওয়ামিয়ার সাথে তবে ওয়ামিয়া ইগনোর করেছে তাকে।বড্ড পিড়া দিচ্ছে তাকে ওয়ামিয়ার ব্যবহার।ওয়ামিয়া দুপুরে খেয়ে রুমে চলে আসলো। ডাইরিটা আবার পরতে হবে তাকে।
*********
‘ইফাজ সাহেব মেহু কেমন আছে?’
ইফাজ চমকে উঠে।বাজারের শেষের দিকে একটা চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিল সে। তখনই কারো কন্ঠ শুনে চমকে উঠেছে।বুকে হাত দিয়ে বলে,
‘এই মেয়ে তুমি হুটহাট কোথা থেকে টপকাও বলো তো। এসেই আমায় ভয় পাইয়ে দেও’
অজিফা চোখ ছোট ছোট করে বলে,
‘আপনি ভয় ও পান ইফাজ সাহেব।জানতামই না’
‘অন্য কিছু ভয় না পেলেও মেয়ে মানুষকে ভীষণ ভয় পাই আমি।এরা ভুত পেত্নীর থেকেও ভয়ংকর’
ইফাজ বিরবির করে বলে কথাগুলো।অজিফা শুনতে না পেয়ে বললো,
‘আপনি কি কিছু বললেন ইফাজ সাহেব’
‘নাহ কি বলবো আমি’
ইফাজ চায়ের দোকানদারকে বিল দিয়ে হাঁটা শুরু করলো।অজিফাও দৌড় লাগালো ইফাজের পিছু পিছু। ওয়ামিয়ার খবর শোনা বাহানা মাত্র সে তো ইফাজের সাথে কথা বলতে চাইছিলো।সকালেই তার কথা হয়েছে ওয়ামিয়ার। ওয়ামিয়া জিজ্ঞেস করছিলো বাড়ির কথা তার কাছে তবে এ ব্যাপারে সে জানে না।অজিফা ইফাজের পাশাপাশি এসে হাঁটতে থাকে।
‘এই যে আপনি এতো দ্রুত কেনো হাঁটেন বলুন তো।একটু আস্তে হাঁটুন আমি এতো জোরে হাঁটতে পারি না।’
‘তো আমি কি করবো।তুমি আমার পিছু পিছু আসছো কেনো মানুষ দেখলে খারাপ ভাববে বাড়ি যাও’
অজিফা মুখ ভেংচি কেটে বলে,,,,’মানুষ বলতে থাকুক। আপনি আগে বলুন আপনার প্রেমিকা আছে কিনা’
#চলবে