অতঃপর_তুমি_আমি #লেখিকা:#ইশা_আহমেদ #পর্ব_২২

0
253

#অতঃপর_তুমি_আমি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২২

দু’জন বাড়ি ফিরছে। আজ তারা যা দেখলো তা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে। এতো ভালো মানুষি। ইমন শেখ নিজেকে এমন ভাবে পাল্টে ফেলেছে যা কেউ কল্পনা ও করতে পারে না।চিনতেও অসুবিধা হচ্ছে এখন। মুখে দাঁড়ি রেখেছে,মাথায় টুপি তার,পরনে পাঞ্জাবি। ইফাজের প্রচন্ড পরিমানে রাগ হচ্ছিল। জঘন্য লোক এখন ভালো সাজার চেষ্টা করছে। দুজমন ভীষণ বিরক্ত। বাড়িতে প্রবেশ করে। ড্রয়িংরুমে বসে চিপস খাচ্ছে আর টিভি দেখছে ওয়ামিয়া। মেহবুবা খান ও বসে বসে টিভি দেখছেন ওয়ামিয়ার পাশে। অজিফা প্রিয় বান্ধবীকে দেখে দৌড়ে আসে। জড়িয়ে ধরে বলে,

‘কেমন আছিস মেহু?’

‘আগে ছাড় না হলে বলবো কীভাবে বেকুব মেয়ে’

অজিফা ছেড়ে দিলো ওয়ামিয়াকে। ওয়ামিয়ার অবস্থা খারাপ।সে বিরক্ত হয়ে বলল,,,
‘তুই আসলেই একটা আবাল।এতো শক্ত করে কেউ জড়িয়ে ধরে। আরেকটু হলে জান যেতো আমার’

‘দুঃখিত আমি বুঝতে পারিনি তুই ব্যাথা পাবি’

অজিফার খেয়াল আসে পাশে মেহবুবা খান বসা। ইশ সে খেয়ালই করেনি। ওয়ামিয়াকে এতোদিন পরে দেখে নিজেকে সামলাতে পারেনি। সে লজ্জা পায়। দ্রুত মেহবুবার দিকে ফিরে নম্র ভদ্র মেয়ের মতো লজ্জিত কন্ঠে বলে,
‘ আসসালামু আলাইকুম। আমি দুঃখিত আন্টি খেয়াল করিনি আপনায় আসলে ওয়ামিয়াকে দেখে একটু বেশিই উত্তেজিত হয়ে পরেছিলাম।’

মেহবুবা খান মৃদু হেসে বলে,,,,’ওয়ালাইকুম আসসালাম।লজ্জিত হওয়ার দরকার নেই মা। আমি বিষয়টি বুঝতে পেরেছি।’

অজিফা মিষ্টি করে হেসে বলল,,,,’ধন্যবাদ আন্টি’

মেহবুবা খান ওদের গল্প করতে বলে নাস্তা বানাতে চলে গেলেন।ইফাজ অনেক আগেই উপরে চলে গিয়েছে। বড্ড ক্লান্ত সে। দুপুরে একটা ছোট্ট হোটেল থেকে ভাত আর ডাল আলু ভর্তা খেয়েছিলো। অন্য কিছু খেতে ইচ্ছে করেনি রান্নার চেহারা দেখে। এখন ঘুম দিবে সে। অনেক ঘুমের প্রয়োজন তার। কোনোমতে ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পরলো। চোখ বন্ধ করতেই ভেসে উঠলো অজিফার চেহারা। ইফাজ ধপ করে চোখ খুলে ফেলল। একটা দিনে কি এমন হলো যে সে মেয়েটার মায়ায় জড়িয়ে পরলো। নাকি আগে থেকেই এই অনুভূতি ছিলো সেই এতোদিন নিজেকে বুঝিয়েছে সে ভালোবাসে না কাউকে এবং বাসতেও পারবে না। মনের গহীনের লুকানো অনুভূতি তাহলে বেরিয়ে আসছে। হয়তো।

মেহবুবা হালকা পাতলা খাবার দিলো অজিফাকে। অজিফা খেয়ে নিলো। মেহবুবা ওয়ামিয়াকে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে। অজিফাকেও একটা রুম দেখিয়ে দিয়েছে। অজিফা ক্লান্ত অনেক। ইফাজের থেকে সেই বেশি কাজ করেছে আজ। সবার কাছে শুনেও বেশি সে। বিছানায় ধপ করে শুয়ে পরে। বোরকা অনেক আগেই খুলে ফেলেছে। আজকের দিনটা সে মনে রাখবে। দিনটা তার অনেক ভালো কেটেছে। ভীষণ ভালো কেটেছে।স্মৃতির পাতায় খুব যত্ন করে তোলা রাখবে দিনটি।

**********

‘আমাকে কি এবার ক্ষমা করা যায় না প্রেয়সী’

‘আমি ক্ষমা তো আপনায় অনেক আগেই করেছি প্রিয়। তবে এখনো কেনো জানি আপনার প্রত্যাখান করার বিষয়টা মনের ভীতর গভীর ক্ষত-র সৃষ্টি করেছে’

‘তুমি আমায় ক্ষমা করলেই হবে। আমার সাথে ঠিকমতো কথা বলো তাতেই আমি সন্তুষ্ট।’

‘ঠিক আছে আমি আপনার সাথে কিছুদিন প্রেম করতেই চাই ডাক্তার সাহেব’

শেহজাদ বিষ্মিত কন্ঠ বলল,,,’প্রেম!’

‘হ্যাঁ হালাল প্রেম। গভীর প্রেম। আমরা কোনো এক বিকালে দু’জন নৌকা করে ঘুরে বেড়াবো,কখনো মেলায় ঘুরবো, বৃষ্টিতে ভিজবো আপনার সাথে,আবার কখনো রাতে গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে হেঁটে বেড়াবো’

শেহজাদ খুশি ভীষণ খুশি। এতো দিন যেহেতু অপেক্ষা করতে পেরেছে প্রেয়সীর জন্য তাহলে আরো কিছুদিন ও পারবে। প্রেয়সীকে না হয় কিছুদিন পরেই নিজের করে পাক। তাতে তার সমস্যা নেই তবে প্রেয়সী যে তার আছে তাকেই ভালোবাসছে এটাই কি অনেক না। তার জন্য অনেক। দু’জন তাহলে প্রেম করবে এখন থেকে।ওয়ামিয়া অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শেহজাদ তো পরিস্থির কারণেই তাকে প্রত্যাখান করেছিলো। আর কতো মানুষটাকে যন্ত্রণা দিবে। এমনিতেও মানুষটা যন্ত্রণা পাচ্ছে। শেহজাদ বললো,

‘চলো চন্দ্রবিলাস করি’

ওয়ামিয়া মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। পায়ে হালকা ব্যাথা তার। হাঁটতে একটু কষ্ট হচ্ছে।শেহজাদের সাহায্যে বারান্দায় এসে চেয়ারে বসলো। দু’জন গল্প করলো। এতোদিনের মান অভিমান শেষ হলো। আজকে থেকে এক নতুন প্রণয়ের সূচনা হবে।ওয়ামিয়া নিজের মতো কথা বলছে আর তার প্রেমিক পুরুষ তাকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে। প্রেয়সীর অপ্রয়োজনীয় বকবকও বুঝি মধুর শুনায়। প্রেমে পরলো সব কিছুই মধুর লাগে হয়তো।

‘ডাক্তার সাহেব কাল আমায় নিয়ে একটু কাল ঘুরতে যাবেন?’

‘কাল!আচ্ছা আমি দেখছি।তুমি কি শাড়ি পরতে পারবে প্রেয়সী আমার জন্য?’

ওয়ামিয়া হাসলো। শেহজাদ ঘায়েল হয় এই হাসিতে বারবার। শেহজাদ মুগ্ধ চোখে চেয়ে রইলো প্রেয়সীর পানে। ওয়ামিয়া মৃদু কন্ঠে বলল,,,,

‘আমি কাল শাড়ি পরবো,সাজবো শুধু আপনার জন্য ডাক্তার সাহেব’

‘আমায় ক্ষমা করে দিও। অনেক যন্ত্রণা আঘাত করে ফেলেছি তোমায়।আমায় ক্ষমা করো আমি নিরুপায় ছিলাম।’

শেহজাদের কন্ঠে অসহায়ত্বের চাপ। ওয়ামিয়া জানে তার ভালোর জন্যই লোকটা বারবার তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে সে আর কষ্ট দিতে চাইলো না। মানুষটা তো আর ইচ্ছে করে এইসব করেনি। যখন দেখেছে প্রেয়সী অন্যকারো হয়ে যাবে তখনই সে তাকে নিজের করে নিয়েছে। ক্ষমা করে না হয় দিলো। ক্ষমা করা মহৎগুন। সুখে থাকতে চায় সে মানুষটার সাথে। যদিও তা সম্ভব কিনা বলতে পারছে না সে। তবে যতদিন একসাথে আছে অবশ্যই চেষ্টা করবে সুখে থাকার।

‘আমি নিজের মনে কিছু রাখবেন না। আমি ক্ষমা তো করেই দিয়েছি। ভালোবাসার মানুষের উপর যে বেশি সময় রাগ করে থাকা যায় না’

‘ধন্যবাদ প্রেয়সী তোমায়। এতোদিন এক অজানা যন্ত্রণায় ছটফট করেছি আমি। আজ আমার মুক্তি মিলল তবে’

************

বিকালের দিকটায় ঘুমিয়েছে বলে ঘুম নেই চোখে অজিফার। অজিফা ধীরে পায়ে ছাদের দোলনায় এসে বসলো। আকাশে চাঁদ উঠেছে। পূর্নিমা বোধহয় আজ। মিষ্টি হাওয়া এসে ছুঁইয়ে দিচ্ছে তার শরীর। অনেক দিন পর আকাশে চাঁদ দেখলো। ঘন কালো মেঘের কারণে তো দেখা যায় না। কারো হেঁটে আসার শব্দ পায় অজিফা। চোখ তুলে তাকাতেই ইফাজকে দেখলো। পকেটে হাত গুঁজে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকেই দেখে চলেছে।

‘ইফাজ সাহেব এতো রাতে এখানে যে’

‘উমম ঘুম আসছিলো না তাই আসলাম। মাঝে মাঝে আসা হয় আরকি’

‘ওহ বসতে পারেন ইফাজ সাহেব দাঁড়িয়ে থাকার দরকার নেই’

ইফাজ এসে ছাদের কোনায় রাখা চেয়ার এনে বসলো। ইফাজের কেনো জানি মেয়েটার সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগছে। হুট করেই তার চোখে এই রমনী এতো সুন্দর হলো কিভাবে এটাই বুঝতে পারছে না। অজিফা গল্প বলতে লাগলো নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া। মেয়েটা প্রচুর কথা বলে।

‘এতো উত্তেজিত কেনো তুমি! ধীরে সুস্থে কথাগুলো বলো। শুনছি আমি’

‘আমি উত্তেজিত কখন হলাম’

মুখ বাঁকিয়ে বললো অজিফা। ইফাজ হেসে ফেললো। অজিফা গাল ফুলালো। ইফাজ তা দেখে হো হো করে হেসে ফেলল। অজিফা রেগে মেগে বলল,,,
‘আপনি মোটেও হাসবেন না। হাসলে আপনাকে আপনাকে বাদর লাগে’

অজিফা রাগ করে চলে যায়। ইফাজ হাসলো বেশ ক্ষানিক সময় নিয়ে। তাকে রাগাতে বেশ লাগলো ইফাজের। কেমন মায়ায় পরে যাচ্ছে সে। আদেও কি এই মায়ায় জড়ানো ঠিক হচ্ছে তার। বুঝতে পারছে না সে। তবে মেয়েটার সাথে গভীর ভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে সে।

********

মালা ইসলাম একজন রোগীর সামনে বসে তার হাত ধরে কাঁদছেন। পাশেই তার ছেলে মিহির দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা তার মাকে বার-বার কাঁদতে বারন করছে তবে তার মা কেঁদেই চলেছে। হ্যাঁ শেহতাজ বেঁচে আছেন। মালা অনেক কষ্টে নিজের প্রাণ প্রিয় বান্ধবীকে বাঁচিয়েছে। তবে ক্ষত এতোটাই গভীর হয়েছিলো যে শেহতাজ আজও কোমাতে রয়ে গিয়েছে। তবে এখন আগের তুলনায় যথেষ্ট সুস্থ আছে তিনি। ডক্টররা নিজেদের সাধ্য মতো চেষ্টা করে চলেছেন।

‘কবে উঠবি তুই শেহতাজ। কতগুলো বছর কাটলো। জানিস খবর পেয়েছি তোর ছোট্ট ওয়ামিয়া এবং শেহজাদ বিয়ে করেছে। তারা এখন পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ। খবরটা আমি অনেক খুশি হয়েছি।’

শেহতাজ শেখ নিজের হাত নাড়ালেন। হয়তো তিনিও শুনতে পেয়েছেন কথাটি। এটা যে ইচ্ছে ছিলো তার শেহজাদ এবং ওয়ামিয়া একসাথে থাকবে সারাজীবন। মিহির তার মাকে বলে উঠলো,,,

‘মম আন্টি আবারও রেসপন্স করেছেন’

মালা চোখ মুছে তাকালো শেহতাজের দিকে। মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরানো। মুখটা মলিন হয়ে আছে। সে আজ পাঁচ বছর ধরে এমন মলিন মুখ খানা দেখে যাচ্ছে। হাসিখুশি শেহতাজ তো কত বছর আগেই হারিয়ে গিয়েছে। মালা সেদিন কত কষ্ট করেই না বাঁচিয়েছিল মানুষটিকে। কি করে মরতে দেখতো সে নিজের প্রাণপ্রিয় বান্ধবীকে। তাই তো নিজে যেই দেশে তার স্বামীর সাথে থাকতেন সেখানেই নিয়ে আসলেন। নামিদামী হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করাচ্ছেন।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here