অতঃপর_তুমি_আমি #লেখিকা:#ইশা_আহমেদ #পর্ব_২৩

0
225

#অতঃপর_তুমি_আমি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৩

অপরাহ্নের শেষ প্রহর। রোদ্দুরের তেজ কমেছে। ওয়ামিয়া নামক রমনী প্রিয়তমের জন্য শাড়ি পরছে। তার শখের পুরুষ যে এই প্রথম তার কাছে কিছু চেয়েছে। সুন্দর করে একটা শাড়ি পরলো। সে এখন সব কিছু ভুলে কয়েকটা দিন প্রিয় মানুষের সাথে কাটাতে চায়। এরপর না হয় পাপীদের শাস্তির পালা। শাড়ি পরে হালকা সেজে নেয়। শেহজাদ ক্লান্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করে। আজ রোগীর সংখ্যা যথেষ্ট কম ছিলো বিধায় দ্রুত আসতে পেরেছে। প্রেয়সীকে শাড়ি পরিহিত দেখেছে সে আগেও। তবে আজ তার জন্য সেজেছে তার প্রেয়সী।

ওয়ামিয়ার শেহজাদের দিকে চোখ পরতেই মিষ্টি করে হাসে সে।হিজাব বাঁধছিলো সে। শেহজাদ ফ্রেশ হতে যায়। ওয়াশরুম বের হয় পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে গোটাতে। ওয়ামিয়ার শাড়ির সাথে মিলিয়ে কালো রঙের পাঞ্জাবি পরেছে। দেখতে ভীষণ মারাত্মক লাগছে।শেহজাদ এসে ওয়ামিয়ার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসে। দুজন সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়। মেহবুবা খান অনেক খুশি হলেন। ছেলে মেয়ে দু’জন যে নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছে। ভালোবাসছে এই অনেক।

দু’জন হাতে হাত রেখে হাঁটছে গ্রামের আঁকাবাকা মেঠো পথ দিয়ে। হেঁটে চেলেছে দু’জন প্রেমিক-প্রেমিকাযুগল।হাঁটতে হাঁটতে নদীর পাড়ে আসলো। রাশি রাশি কাশফুল ফুটে আছে। কী দারুণ দৃশ্য।দু’জন হাঁটলো কিছুক্ষণ কাশফুলেদের মাঝে। ওয়ামিয়া কাশফুল ছিঁড়তে পারছিলো না দেখে শেহজাদ এসে ছিঁড়ে দেয়। কাশফুল হাতে নিয়ে ওয়ামিয়া নিজের প্রেমিক পুরুষের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।জনম জনম ধরেও সে এই লোকের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবে। শেহজাদ নিজেও প্রেয়সীকে দেখছে। দু’জন নৌকায় চড়ে,মেলায় গিয়ে ঘুরে, ফুসকা খায়। শেহজাদ নিজের প্রেয়সীর ইচ্ছে পূরণ করার চেষ্টা করছে।

‘ডাক্তার সাহেব আমার না বাইকে চড়তে ইচ্ছে করছে’

সন্ধ্যা হবে হবে ভাব। সূর্য ডুবেছে মিনিট দুই তিনেক আগে। চারপাশ অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। শেহজাদ প্রেয়সীর ইচ্ছে শুনে মুচকি হাসলো।এরপর প্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,

‘আমার প্রেয়সীর যখন বাইকে চড়তে ইচ্ছে করেছে তো তার ডাক্তার সাহেব কি তা না পূরণ করে থাকতে পারে?’

‘সত্যি আপনি আমাকে এখন বাইকে চড়াবেন আমায়’

‘হ্যাঁ প্রেয়সী’

শেহজাদ তার প্রেয়সীর উচ্ছ্বসিত মুখখানার দিকে চেয়ে আছে। কি মিষ্টি সেই মুখ খানি। সে সারাজীবন পার করে দিতে পারবে এই মুখ খানার দিকে তাকিয়ে।ইফাজ কে ফোন করে বাইক নিয়ে আসতে বলে। ইফাজ ও ভাইয়ের কথামতো বাইক নিয়ে আসে। আজ না হয় রাত জুড়ে দু’জন প্রেমিক প্রমিকা যুগল ঘুরে বেড়ালো শহরতলীর রাস্তা দিয়ে। শেহজাদদের গ্রামটা শহর থেকে বেশি দূরে নয়। তারা আজ শহরেই যাবে ঠিক করেছে। একটু ভেতরের সাইডে গ্রামটি। তবে এতো সুন্দর গ্রাম দেখে মনে হবে রং তুলিতে আঁকা কোনো দৃশ্য।

ইফাজ বাইক দিয়ে দু’জনকে সাবধানে থাকতে বলে নিজের গন্তব্যে রওনা দিলো। একজোড়া প্রমিক প্রেমিকা যুগল ও নিজেদের গন্তব্যে রওনা দিলো। ওয়ামিয়ার সব সপ্ন লাগছে। মনে হচ্ছে ঘুম ভাঙলেই সব শেষ। সে যে কখনো নিজের প্রিয় পুরুষকে পাবে এটাও কল্পনা করেনি। সে পেছন থেকে উষ্ণ আলিঙ্গন করলো শেহজাদকে। শেহজাদ প্রথমে চমকালেও মুচকি হাসে প্রেয়সীর কান্ডে।

দু’জন উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরছে। এতো বেশি আনন্দিত হবে সে কখনো ভাবেনি।ইশ কি সুন্দর মুহুর্ত। এমন অনুভূতি হাজারবার হোক। সোডিয়াম বাতিগুলো একে একে ফেলে ছুটে চলেছে বাইক। দুজন রাতের শহরতলী ঘুরলো। দু’জন এক অন্য দুনিয়ায় হারিয়ে গিয়েছে। স্মৃতির পাতায় আজকের দিনটা যত্ন করে তুলে রাখছে দু’জন। শেহজাদ ওয়ামিয়া গাজরা কিনে দিয়েছে রাস্তার পাশ থেকে। ওয়ামিয়া মুগ্ধ হয়ে দেখছে। শেহজাদের ভেতরেও বুজি এমন সুপ্ত প্রমিক পুরুষ লুকিয়ে ছিলো।

*********

মালা ইসলাম দিন নেই রাত নেই সব সময় পরে আছেন শেহতাজের কাছে। কখন জ্ঞান ফিরে তার প্রিয় বান্ধবীর। এই অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। ডাক্তার বলেছেন যখন তখন জ্ঞান ফিরবে শেহতাজ শেখের। মালার স্বামী হিমালয় সরদার ও দেখে যাচ্ছেন স্ত্রী এবং তার বোনের মতো বন্ধুর বোনকে। মিহির তো মায়ের কাছ থেকেই সরছে না। এখন রাত দু’টো বাজে হয়তো। মালা বেগম ঝিমাচ্ছেন শেহতাজের হাত ধরে। মিহির সোফায় বসে ঘুমিয়ে পরেছেন। শেহতাজ শেখ অবশেষে নিজের আঁখি পল্লব খুললেন ধীরে ধীরে। পেটের জখম গুলোর দাগ এখনো রয়ে গিয়েছে ব্যাথাও আছে বোধহয়।

উঠে বসতে চাইলেন তিনি। তবে পেরে উঠলেন না। ততক্ষণে মালা ইসলাম জেগে গিয়েছেন। এতো বছর পর প্রাণ প্রিয় বান্ধবীকে চোখ খুলতে দেখে থমকে গিয়েছেন। চোখের পলক ফেলতে ভুলে গিয়েছেন তিনি। তিনি মনে হয় স্বপ্ন দেখছেন। বিশ্বাসই হচ্ছে না তার শেহতাজ চোখ খুলেছে। কয়েকবার চোখের পলক ফেলে বোঝার চেষ্টা করলেন আসলেই এটি বাস্তব নাকি তার ভ্রম। নাহ!এটা ভ্রম নয় সত্য। চিরসত্য। চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো। শেহতাজও নিজের প্রাণ প্রিয় বান্ধবীর দিকে তাকিয়ে আছে।

সে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। সে বাঁচলো কিভাবে। বাঁচার তো কথা ছিলো না। মালা ঝাপটো ধরলেন নিজের বোনের মতো বান্ধবীকে। শেহতাজ ব্যাথা পেলো তবে কিছু বললো। তার মনে আছে সে চোখ বন্ধ করার সময় কাউকে দেখেছিলো যে তাকে ধরে কাঁদছিলো। যদিও মনে নেই কে ছিলো সেই নারী। কারণ তার মুখটা অস্পষ্ট ছিলো। তবে মনে হয় সে মালা ছিলেন।

‘তুই চোখ খুলেছিস শেহু। এতো বছর পর। আমি ভাবিনি তুই চোখ খুলবি। আমার দিকে তাকাবি। মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি।’

শেহতাজ ভাঙা গলায় বললেন,,,’আমি চোখ খুলেছি মালা।এটা সত্য’

‘হুম এতো গুলো বছর চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষা করছিলাম আমি’

শেহতাজ অবাক হয়ে বললেন,,,’এতোগুলো বছর মানে!’

‘শেহতাজ পাঁচ বছর হ্যাঁ পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। এটা ২০২৩ সাল’

অস্ফুটস্বরে শেহতাজ বললেন,,,’২০২৩’

‘হ্যাঁ রে শেহতাজ। তুই পুরো পাঁচ বছর কোমায় ছিলিস। আর এটা বাংলাদেশ নয়। এটা আমেরিকা। আমরা আমেরিকায় আছি’

‘আমেরিকায় কেনো। আমার শেহজাদ ওয়ামিয়া ওরা কেমন আছে। কীভাবে আছে ওরা’

মালা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,,’ওরা সবাই ভালো আছে। খুশির খবর কি জানিস আমাদের শেহজাদ আর ওয়ামিয়া মামনি বিয়ে করেছে কিছুদিন হলো’

চমকে উঠলেন শেহতাজ শেখ। বিয়ে করেছে তার ছেলে মেয়েরা। এখন হয়তো তার ছোট্ট ওয়ামিয়া আর ছোট্ট নেই। এখন অনেক বড় হয়েছে। বিয়ে করে ফেলেছে দু’জন। তারা কি জানে না তাদের নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো তার। তবুও তাকে ছাড়া বিয়ে করে নিলো। আচ্ছা তার বাবা মা এবং শ্বশুর শাশুড়ী তারা কেমন আছে?

‘মালা আম্মা আব্বু শাশুড়ী আম্মু শশুর বাবা সবাই ঠিক আছে’

‘শেহতাজ তোর মনে অনেক প্রশ্ন জমে আছে আমি সবই বলবো তবে এখন না। এটুকু যেনে রাখ পুরো দুনিয়ার কাছে মৃত তুই। আর তারা সবাই ও মৃত। তোকে ছাড়া কাউকে আমি সেদিন বাঁচাতে পারিনি’

শেহতাজ শেখ শক খেলেন। তারা মৃত। সে ও দুনিয়ার সবার কাছে মৃত। কি হচ্ছে এ সব। তবে সে কিছু জিজ্ঞেস করলো না। সে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। চোখ থেকে টুপটাপ পানি পরছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো। তার জীবন থেকে পাঁচ বছর হারিয়ে গিয়েছে। পাঁচটা বছর। কেমন আছে তার ছেলে মেয়েরা পরিবার। তার ভালোবাসার মানুষ একমাত্র স্বামী। তবে কি নীলা তাকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে। এটা হলে তার বেঁচে থাকার ইচ্ছে মরে যাবে। সে জীবিত অবস্থায় অন্তত মুনতাসিবকে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারবে না। সে ছাড়বে না কাউকে। যাদের জন্য সে নিজের প্রিয়জনদের হারিয়েছে তাদের কিছুতেই ছাড়বে না। নীলা শেখ এবং ইমন শেখ!

********

‘কি ইমন শেখ কেমন আছেন’

ইমন শেখ থতমত খেয়ে গেলেন। ইমন শেখ সে তা তো কেউ জানে না। নিজের পরিচয় বদলিয়েছে, নিজেকে বদলিয়েছে তাহলে তো চেনার কথা নয়।ইমন শেখ কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন,,,

‘কে আপনি!’

ওপর পাশের মহিলাটি হেসে উঠলেন। ইমন শেখ হতভম্ব হলেন। মহিলাটি কে হতে পারে । মালা ইসলাম!তবে তার তো এই নাম্বার পাওয়ার কথা না। মহিলাটি ইমন শেখকে কথা বলতে না দেখে বলেন,,,

‘ভয় পাচ্ছেন আপনি। ভয় পাবেন না আমি নীলা’

‘নীলা তুই। এইভাবে ফোন করে কেউ ভয় দেখায়। কান্ড জ্ঞান কবে হবে তোর। বুড়ি হয়ে গেলি তাও আগের মতোই রয়ে গিয়েছিস। নাম্বার কোথায় পেলি’

‘সে যেখান থেকে পাই না কেনো তুই কেমন আছিস। বিয়ে সাদী তো করলি না। কি এমন পেয়েছিলি রে ওই শেহতাজের ভেতর যে এখনো ওকেই ভালোবেসে যাচ্ছিস’

‘যাই হোক না কেনো আমি এই ব্যাপারে তোর সাথে কথা বলতে চাইছি না। ফোন রাখ আর ফোন করবি না আমায়’

‘আরে শোন শোন ফোন কাটিস না। এতো বছর হয়ে গেলো এখনো তোর তেজ কমলো না। আর না শেহতাজের প্রতি ভালোবাসা। ট্রু লাভ!’

নীলা হাসতে লাগলো। ইমন শেখ ফোন কেটে দেয়। রাগে ফোসফাস করছে। ফোনটা বিছানার উপর ছুড়ে মারেন। রাগে তার শরীর জ্বলছে। এই মহিলা আগেও তাকে শান্তি দেয়নি না এখন দিচ্ছে।সারাটা জীবন জ্বালিয়ে মারলো। ঘর থেকে বেরিয়ে যান তিনি। রাগ লাগছে তার। এ রাগ সিগারেট না খেলে কমবে না। সিগারেটই তাকে এর থেকে মুক্তি দিতে পারে।

#চলবে

আসসালামু আলাইকুম। দু’দিন গল্প না দেওয়ার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। লিখতে বসলে শব্দ খুঁজে পাই না। দু’দিন অনেক বার লিখতে বসেছি তবে লিখে উঠতে পারিনি। আশা করছি সমস্যাটা বুঝবেন আপনারা। রেসপন্স করার অনুরোধ রইলো।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here