অতঃপর_তুমি_আমি #লেখিকা:#ইশা_আহমেদ #পর্ব_২৪

0
224

#অতঃপর_তুমি_আমি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৪

বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। ওয়ামিয়া জানালার কাছে বসে বৃষ্টি দেখছে। শেহজাদ বাড়ি ফেরেনি এখনো। রাত ৯ টার বেশি বাজে। এই কটা দিন ওয়ামিয়ার এতো সুন্দর কেটেছে যা সে কাউকে বলে বোঝাতে পারবে না। সে এক নতুন শেহজাদকে আবিষ্কার করেছে। প্রমিক পুরুষ শেহজাদ। যে তার প্রেমিকার আবদার পূরণ করার জন্য সব কিছু করতে পারে। ওয়ামিয়া অবাক হয় মাঝে মাঝে শেহজাদের ভালোবাসা দেখে। লোকটা তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। তবে তাদের মাঝে দূরত্ব এখনো রয়েই গিয়েছে।

মেঘের গর্জনে কেঁপে উঠছে চারপাশ। সাথে ওয়ামিয়া নামক রমনীও। শেহজাদ আধভেজা হয়ে রুমে ঢুকলো। একটা মোমবাতি জ্বালানো রুমে। বিদ্যুৎ নেই। মোমবাতির ঝাপসা আলোতে নিজের প্রেয়সীকে দেখে চোখ আটকালো শেহজাদের। ওয়ামিয়া দক্ষিণ দিকে জানালার কাছে বসে বৃষ্টি দেখছে। পরনে তাহার লাল রঙা শাড়ি। চুলগুলো কোমড় ছাড়িয়ে মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। প্রেয়সীর এমন চোখ ধাঁধানো রূপে কি আর প্রেমিক পুরুষ নিজেকে সংযত করতে পারে।

ওয়ামিয়া শেহজাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পেছনে ফিরে মুচকি হাসে। শেহজাদ ও বিনিময়ে হালকা হাসলো। ওয়ামিয়া উঠে গামছা এনে চুল মুছে দিলো প্রেমিক পুরুষের। শেহজাদ বহু কষ্টে নিজেকে সংযত করে রেখেছে। ওয়ামিয়া হাত খোঁপা করলো। শার্ট এগিয়ে দিতে শেহজাদ ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসে। ওয়ামিয়া ফোনের ফ্লাস জ্বালিয়ে শেহজাদকে বলল,,,

‘খাবেন চলুন।’

শেহজাদ আনমনে মাথা নাড়িয়ে ওয়ামিয়ার পিছু পিছু নিচে আসে। বাড়ির সবাই খেয়ে নিজেদের রুমে বিশ্রাম নিচ্ছেন। ওয়ামিয়া অপেক্ষা করছিলো তার প্রিয় পুরুষের জন্য। নিজেও খায়নি এখনো। খাবার গরম করে দু’জন খেয়ে নিলো। সব কিছু গুছালো দু’জন মিলে। অতঃপর রুমে আসলো। বাহিরে অঝরে বৃষ্টি হয়ে চলেছে। ওয়ামিয়া আবদার করে বসলো প্রেমিক পুরুষের কাছে,,,

‘শুনুন চলুন না বৃষ্টিতে ভিজি’

‘এখন। যদি জ্বর আসে’

‘আসবে না চলুন প্লিজ’

শেহজাদ রাজি হয়। প্রেয়সী কিছু চেয়েছে সে না দিয়ে পারে। দুজন ছাদে আসলো। অন্ধকার চারপাশ। বৃষ্টি পরছে সমাল তালে। ওয়ামিয়া দৌড়ে মাঝখানে চলে আসে। শেহজাদ ও কিছুটা দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে পরে প্রেয়সীর সাথে। বৃষ্টির ফোঁটা ছুঁয়ে দিচ্ছে দুজন কপোত-কপোতীর শরীর। ওয়ামিয়া মনের আনন্দে ভিজে চলেছে তার কি আর জানা আছে তার প্রেমিক পুরুষের মনের ভেতর কেমন ঝড় বইছে। হঠাৎ বিদুৎ চমকে উঠলো। ওয়ামিয়া ভয় পেয়ে এসে আলিঙ্গন করলো। শেহজাদ কেঁপে উঠলো। কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে সে ভয়ংকর কিছু ঘটিয়ে ফেলবে।

হাত মুষ্টিবদ্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করছে। ওয়ামিয়া খামচে ধরেছে প্রেমিক পুরুষের শার্টের এক কোণা। শেহজাদ চোখ বন্ধ করে ঘনঘন শ্বাস নিতে নিতে বলল,,,

‘ওয়ামিয়া দূরে সরে যাও আমার থেকে। আমি বেসামাল হয়ে পরছি। ভয়ংকর কিছু ঘটিয়ে ফেলবো আমি।’

ওয়ামিয়া চমকে উঠলো। কি বলল তার প্রেমিক পুরুষ। বেসামাল হয়ে পরবে। ভয়ংকর কিছু ঘটিয়ে ফেলবে। সে নিজেও চাইছে নিজের প্রেমিক পুরুষের কাছে ধরা দিতে। তাদের গভীর প্রনয়ের পূর্নতা দিতে। স্বামীর অধিকার দিতে শেহজাদকে। তবে লজ্জায় রাঙা হয়ে মুখ লুকালো তার প্রিয় পুরুষের বক্ষে। শেহজাদ বুঝলো বোধহয় প্রেয়সীর মনের খবর। বুক থেকে উঠিয়ে অধর ছুঁইয়ে দিলো ললাটে। এরপর কোলে তুলে নিলো। আজ এই বর্ষার রাতে পূর্নতা পেতে চলেছে শেহজাদ-ওয়ামিয়ার গভীর প্রনয়।

**********

নীলা ইমন শেখ এবং তাদের সাথীরা বেরিয়ে গিয়েছে বাড়ি থেকে। পুরো বাড়ি স্তব্ধ। তখনই বাড়িতে প্রবেশ করলো শেহজাদ নামক ছেলেটি। নিথর পাঁচটি দেহ দেখে সে অজ্ঞান হয়ে গেলো। হয়তো নিজের মা দাদা দাদি,নানা নানির অবস্থা সহ্য করতে পারিনি। তখন আড়াল থেকে বেরিয়ে আসলো মালা ইসলাম। সে আড়াল থেকে দেখেছিলো সব। তবে কিছু করার ক্ষমতা ছিলো না। সে দৌড়ে চলে আসেন প্রান প্রিয় বান্ধবীর নিকট। কাছে আসতেই টের পেলেন সে এখনো জীবিত আছেন। তখনই বাড়িতে প্রবেশ করেন তার স্বামী হিমালয় সরদার। মালা পাগলের মতো বললেন,,,

‘হিমালয় শেহতাজ এখনো জীবিত আছে ওকে বাঁচাতে হবে। আমাকে সাহায্য করো প্লিজ’

হিমালয় বুঝলেন পরিস্থিতি এরপর শেহতাজকে সাবধানে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো। কাউকে টের পেতে দেয়নি মালা বেগম। সবাই শেহতাজের লাশ খুঁজলেও পায়নি। শেহজাদ অনেক বার পাগলামি করেছে বলেছে সে দেখেছে তার মায়ের নিথর দেহ। কিন্তু মালা সব সামলেছেন। তিনি বলেছেন তিনি এসে সবাইকে দেখেছেন শুধু শেহতাজের লাশ পায়নি। শেহজাদকে পাশে অজ্ঞান অবস্থায় পেয়েছেন। যদিও শেহজাদ বিশ্বাস করেনি। তবে সবার কথার চাপে পরে বিশ্বাস করেছে যে সে ভুল দেখেছিলো।

তাদের কবর দেওয়া হয়েছে। শেহতাজ দু’দিন ধরে শহরের একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। মালা বেগম সব কিছু রেডি করে ফেলেছেন বিদেশ যাওয়ার জন্য। সবাই ভেঙে পরেছে। তার জন্যই হয়তো এতে দ্রুত সব করতে পেরেছেন তিনি। শেহতাজের হায়াত ছিলো বলেই হয়তো এতো কিছুর পরেও সে বেঁচে আছে। হুমায়ন শেখ মুনতাসিব খানকে দোষারোপ করছেন। মুনতাসিব কথা বলেনি কারো সাথে। নাওয়া খাওয়া ভুলে সে নিজের ঘরে দরজা দিয়ে বসে আছে। ছেলেটাও তাই। হুমায়ন শেখের অবস্থা ও প্রচন্ড খারাপ। বোন মা বাবাকে হারিয়ে সর্ব হারা সে। মায়া বেগম স্বামীকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ১৩ বছরের ওয়ামিয়া সবই বুঝে। তাকে সামলাচ্ছে মাহিম।

এরপর মালা বেগম হঠাৎ করে উধাও হয়ে যান। যদিও নীলা এবং ইমন শেখ শুনেছিলো শেহতাজের লাশ পাওয়া যায়নি তবুও তারা ভ্রুক্ষেপ করেনি। তারা নিশ্চিত ছিলো শেহতাজ মারা গিয়েছে।মালা বেগম চলে আসলেন আমেরিকায়। তার একটাই ছেলে মিহির। সে শেহজাদের থেকে হয়তো দুই এক বছরের ছোট। সে বুঝেছে সবই নিজের মাকে সামলিয়েছে। আমেরিকার ঠিকনা জানতো সবাই। শহর পাল্টালো তারা। শেহতাজকে হাসপাতালে সিফট করলেন।

*********

মালা এতো সময় স্মৃতির পাতা উল্টাচ্ছিলেন। একটু আগে সবই খুলে বলেছেন সে শেহতাজকে। শেহতাজ সব শুনে স্তব্ধ। ভাগ্য করে একটা বান্ধবী পেয়েছিলেন সে।শেহতাজ এখন সুস্থ মোটামুটি। ডাক্তার তাকে বেশ কিছুদিন বিশ্রাম নিতে বলেছেন। যাকে বাঁচানোর জন্য শত বাঁধা বিপত্তি ও তাকে মানাতে পারেনি। শেহতাজ এবং মালা বসে আছেন মালাদের ছাদে। শেহতাজ মালার কাঁধে মাথা রাখেন।

‘আমি একটু দেখতে চাই মালা আমার শেহজাদ ওয়ামিয়াকে’

মালা বেগম বুঝলেন প্রিয় বান্ধবীর মনে অবস্থা। ফোন বের করে ফেসবুকে ঢুকে সার্চ করলেন শেহজাদের আইডি। বেশি ছবি ছাড়া নেই। একটা ছবি বের করে ধরেলেন শেহতাজের সামনে। শেহতাজ নিজের ছেলেকে এতোগুলো বছর পর দেখে নিজেকে সামলাতে পারলেন না কেঁদে ফেললেন। পাঁচ বছর আগের শেহজাদের সাথে মিল খুব কম। আগের শেহজাদ হাসতো,বলতে গেলে কথায় কথায় ছেলেটি হাসতো।প্রানবন্ত,চঞ্চল একটি ছেলে ছিলো। তবে এখন যার ছবি সে দেখছে তার মুখে গম্ভীরর্য একটা ভাব আছে। চাপ দাঁড়িয়ে রাখা খুব সুন্দর করে। চুলগুলো ও সুন্দর করো সেট করা।

‘আমার ছেলেটা এতো পাল্টেছে মালা’

‘শেহু ও আর আগের শেহজাদ নেই। তোর সেই অগোছালো ছেলেটি আজ দায়িত্ববান,কঠোর মনের অধিকারী হয়েছে’

‘মালা সে কি ভালো আছে নাকি কাউকে বিয়ে করে সুখী আছে’

কথাটা বলার সময় গলা কাঁপছিলো শেহতাজের। মালা বেগম বুঝলেন। তিনি স্বান্তনা দিয়ে বললেন,,
‘তুই এতো টুকু চিনিস শেহু মুনতাসিব ভাইকে। সে তার জীবনে তোকেই ভালোবেসেছে। এখনো ভালোবাসে,বেসে চলেছে’

শেহতাজ শান্ত হলেন।কাতর কন্ঠে বললেন,,,’আমি তারে ভীষণ ভালোবাসি রে মালা।’

‘এ কথা আমরা সবাই জানি রে শেহতাজ।’

**********

অজিফা এবং তার ইফাজ সাহেবও যে চুটিয়ে প্রেম করছে। অজিফা দুদিন আগে জানিয়েছিলো তার মনের কথা। ইফাজ সাহেব ও রাজি হয়ে গেলেন।অজিফার তো চাঁদ পাওয়ার মতো আনন্দ হয়েছে। এখন সাজুগুজু করে বের হবে ওয়ামিয়ার কাছে যাওয়ার জন্য। ওয়ামিয়া মূলত অজুহাত মাত্র সে তো যাবে তার ইফাজ সাহেবের সাথে দেখা করতে।

‘কিরে মা কোথায় যাচ্ছিস?’

অজিফার মা নাজমা বেগম কথাটি বললেন।অজিফা তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,,,’আম্মু আমি ওয়ামিয়ার কাছে যাচ্ছি’

নাজমা বেগম আর কিছু বললেন না। তারা সবই জানে সব।অজিফা চলে আসলো খান বাড়িতে। বাড়িতে কেউ নেই। ছেলেরা সব নিজ নিজ কাজে গিয়েছে। ইফাজ হয়তো আছে বাড়িতে। সে অবশ্য বলেনি সে আসবে। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে সবার প্রথমে মেহবুবা খানের সাথে কুশল বিমিময় করে।এরপর চলে আসে ওয়ামিয়ার রুমে। ওয়ামিয়া বসে উপন্যাস পরছে। অজিফা এসে ধপাস করে শুয়ে পরে বিছানায়।

‘জানু আমি প্রেম করছি’

ওয়ামিয়া প্রচন্ড অবাক হয়ে বলে,,,’কিহ!কার সাথে?’

‘কেনো তোর একমাত্র দেবরের সাথে’

#চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here