#অতঃপর_তুমি_আমি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৫
একটা বদ্ধ রুমে বন্দি হয়ে আছেন ইমন শেখ।পাশেই নাবিল শিকদার অজ্ঞান অবস্থায় পরে আছেন। ইমন শেখ চোখ খুললেন ধীরে ধীরে। মাথা যন্ত্রণা করছে। সব কিছু ঝাপসা দেখলেন। সকাল সকাল কারা যেনো তাকে অজ্ঞান করে ফেললো।আর এখন চোখ খুলল সে। কয়েকবার চোখের পলক ফেললেমন। তাকাতে যাবেন তখনই দরজা খুললো কেউ। চোখে আলো পরাতে আবারও বন্ধ করে নিলেন চোখ জোরা। খটখট শব্দ করে এসে চেয়ারে বসলো একজন পুরুষ। ইমন শেখ আবারও চোখ খুললেন। সামনে থাকা হিংস্র মানুষ রুপি বাঘকে দেখলেন। যার চোখে মুখে ক্রোধ উপছে পরছে। পারলে এখনই জ্যান্ত পুঁতে ফেলে দু’জনকে। কিন্তু কিন্তু কিন্তু এদের তো এতো সহজ মৃত্যু দেওয়া যাবে না।
“ককককে তুমি?”
শেহজাদ শব্দ করে হাসলো। নিস্তব্ধ রুমে ভয়ংকর শোনাচ্ছে শেহজাদের হাসির শব্দ। ইমন শেখ কেঁপে উঠলো। সামনে বসা পুরুষটিকে সে চিনে। এটা শেহজাদ ইমতিয়াজ খান। শেহতাজ শেখ এবং মুনতাসিব খানের একমাত্র পুত্র। নাবিল শেখও চোখ খুললেন পিটপিট করে। ঝাপসা দেখছেন তিনি। আজই দেশে ফিরেছেন এবং আজই তার উপর শত্রুরা ঝাপিয়ে পরলো কিছু বুঝে ওঠার আগে। সামনে শেহজাদকে দেখে আত্মা কেঁপে উঠলো তার। আজই তার জীবনের শেষ দিন মনে হলো।
“আমাদের এখানে তুলে আনার কারণ কি?”
“আপনি বুঝতে পারছেন না এখানে আপনাকে তুলে আনার কারণ কি ইমন শেখ”
“ইমন শেখ! কে ইমন শেখ আমি ইমান আলী।”
শেহজাদ বাঁকা হেসে বলল,,,’ওহ আচ্ছা আপনি তাহলে ইমান আলী।তা ইমান আলী আপনি পাঁচ বছর আগে কেনো আমার পরিবারকে হত্যা করেছেন”
‘আমি কেনো আপনার পরিবারকে হত্যা করতে যাবো। আমি তো ঠিকমতো চিনিও না আপনাদের।’
এবার শেহজাদ রাগলো। ভীষণ রেগে গেলো। চোখ মুখের অবস্থা দেখে ভয় পেলো দু’জন। নাবিল শিকদার মরার মতো পরে আছেন। সে জানে মিথ্যা বলেও বাঁচতে পারবে না সে। আপাতত এভাবে পরে থাকাই তার কাছে ঠিক মনে হলো।শেহজাদ মুখ চেপে ধরলো ইমন শেখের। শান্ত মানুষ যখন ভয়ংকর রেগে যায় তখন তাকে সামলানো মুশকিল হয়ে পরে। শেহজাদের অবস্থাটাও ঠিক তেমনি।
‘কতো আর কতো মিথ্যা বলবেন আপনি। নিজের ভালোবাসার মানুষকে খুন করতো হাত কাঁপেনি আপনার। আবার তাকে নাকি ভালোবাসেন। আপনি আদেও তাকে ভালোবাসতেন তো!’
ইমন শেখ এতো সময় নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও কথাগুলো কান অব্দি পৌঁছাতেই সে নিশ্চুপ হয়ে গেলো। সে ভালোবাসে ভীষণ ভালোবাসে শেহতাজকে। তাই তো এতো বছরেও অন্য কাউকে নিজের মনে জায়গা দিতে পারেনি। ইমন শেখ কাঁদতে শুরু করলো। হাউমাউ করে কাঁদছে। তবে এতে শেহজাদের একটুও খারাপ লাগলো না বরং মানসিক শান্তি পাচ্ছে সে। ইমন শেখ বললেন,,,
‘আমি ভালোবেসেছি ওকে এবং ভালোবাসি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওকেই ভালোবাসবো’
‘ভালোবাসলে তো কেউ কখনো নিজের হাতে তাকে হত্যা করতে পারতো না। আপনি নিজ হাতে হত্যা করেছেন আমার মাকে’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ করেছি বেশ করেছি। ও আমার হয়নি তাহলে অন্যকারো কেনো হবে।’
শেহজাদ হাসলো। কন্ঠস্বর উঁচু করে অর্নবকে ডাকলো। অর্নব আসতেই তাকে কিছু একটা বলে শেহজাদ বাইরে বের হলো। অর্নব গরম কয়লা চেপে ধরলো ইমন শেখের হাতে বুকে এবং পায়ে। হাতের তালু জ্বলছে। ইমন শেখ মুখ থেকে আওয়াজ প বের করতে পারছেন না।অর্নব আগেই মুখ বেঁধে দিয়েছে। নাবিল শিকদার আতঙ্কিত হয়ে পরেছেন। শেহজাদ যে এতোটা র্নিদয় তা জানা ছিলো না। বড্ড ভয়ংকর লাগছে শেহজাদকে। অর্নব নিজেও এই শেহজাদকে চিনে না। অপরিচিত এক শেহজাদ।
শেহজাদ বেরিয়ে গ্রামীন মেঠোপথ ধরে এলোমেলো পায়ে হাঁটা শুরু করলো। সব থেকে বড় সত্য সে জানে। তা মা বেঁচে আছে। দু বছর আগেই জেনেছে সে এই সত্য। মালা বেগম নিজেই বলেছেন। তবে ঠিকানা কিছুই দেয়নি তাকে। শেহজাদ এতো টুকু যেনে ও খুশি যে তার মা বেঁচে আছে। এটাই অনেক। মালা বেগম সব কিছু বললেও তিনি এরপর আর যোগাযোগ করেননি। খুঁজে চলেছে শেহজাদ তাদের। তবে এখনো দেখা মিলেনি।
“আম্মু খুব শীঘ্রই আমি শাস্তি দিবো এদের। কাউকে ছাড়বো না। নীলাকে ও খুব দ্রুত পেয়ে যাবো ততদিন না হয় নাবিল শিকদার এবং ইমন শেখ নিজেদের শাস্তি পেতে থাকুক”
*********
ওয়ামিয়া নিজের সুখের সাগরে ভাসছে। তার তো শেহজাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। প্রিয় মানুষের সাথে সময় কাটাচ্ছে। পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ সুখেই আছে। সে আপাতত ভুলে গিয়েছে শেহতাজ এবং বাকি সবার কথা। শেহজাদ ইচ্ছে করেই ওয়ামিয়াকে এসব থেকে দূরে রাখছে। মেহবুবা খান আজ একটু অসুস্থ। ওয়ামিয়া নিজে রান্না করতে এসেছে। যদিও সে অনেক ভালো রান্না করতে পারে না তবুও চেষ্টা করবে। রান্না মোটামুটি জানে সে। কোমড়ে শাড়ির আঁচল গুঁজে নেমে পরলো রান্নার কাজে।
নিজের পছন্দ মতো রান্না করছে ওয়ামিয়া। তখনই কেউ তাকে পেছন থেকে উষ্ণ আলিঙ্গন করলো। ওয়ামিয়ার পরিচিত এই স্পর্শ। এটা তার ডাক্তার সাহেব। ওয়ামিয়া মুচকি হাসলো বটে তবে শেহজাদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। এরপর শান্ত স্বরে বলল,,,
‘সরুন রান্না করছি তো’
‘রান্না পরে করো আগে আমাকে সময় দাও’
‘আপনি ছুটি কেনো নিয়েছেন ডাক্তার সাহেব’
‘আমার মিষ্টি বউয়ের সাথে সময় কাটাবো বলে’
‘আপনি ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসুন আমি শরবত বানিয়ে আনছি। বাইরে থেকে এসেছেন নিশ্চয়ই প্রয়োজন।’
‘আমার ওসবের প্রয়োজন নেই। আমার তো তোমাকে প্রয়োজন’
‘ঢং বাদ দিন। গিয়ে বসুন শরবত বানিয়ে দিচ্ছি’
শেহজাদ ওয়ামিয়ার কথা কানে তুলল না। আরো শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো প্রেয়সীকে। ওয়ামিয়া এবার একটু অবাক হলো। শেহজাদ এমন করছে কেনো বুঝে উঠতে পারলো না। রান্না তার শেষের দিকে ছিলো। তবে এখন তার কাছে রান্নার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তার ডাক্তার সাহেব। ওয়ামিয়া গ্যাস বন্ধ করল।পিছনে ফিরে পা উঁচু করে হাত রাখলো শেহজাদের গালে।
‘আপনার কি মন খারাপ’
‘জানি না আমি’
ওয়ামিয়া এবার বুঝলো মন খারাপ শেহজাদের।ওয়ামিয়া শেহজাদকে নিয়ে রুমে আসলো। শেহজাদ অন্যমনষ্ক। ওয়ামিয়া শেহজাদকে বিছানায় বসিয়ে শক্ত করে আলিঙ্গন করলো। বুকে মাথা রাখলো সে।শেহজাদকে বলল,,,
‘আপনি কখনো মন খারাপ করবেন না। ফুপিআম্মুকে মনে পরছে জানি আমি। তবে কি হবে বলুন চাইলেও যে তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।’
‘হু’
ওয়ামিয়া বুক থেকে মাথা তুলে তাকায় শেহজাদের দিকে। শেহজাদ মাথা নিচু করে বসে আছে। ওয়ামিয়ার বুকটা জ্বলছে শেহজাদকে এভাবে দেখতে তার ভালো লাগছে না।হঠাৎ করে শক্ত করে ঝাপটে ধরলো শেহজাদ তাকে। থতমত খেয়ে গেলো ওয়ামিয়া। কি করবে বুঝতে পারলো না। পিঠে হাত রাখলো। কাঁধ ভেজা মনে হলো। শেহজাদ কাঁদছে। বুক কেঁপে উঠলো। ভালোবাসার মানুষের কষ্ট বুঝি নিজেকেও জ্বালায়। জ্বলছে ওয়ামিয়ার হৃদয়।
‘আপনি কাঁদছেন কেনো ডাক্তার সাহেব?’
‘আমার আম্মু ওয়ামিয়া। আমার আম্মু। আমি যাবো তার কাছে এনে দাও আমাকে। প্রচন্ড ইচ্ছে করছে আমার আম্মুকে দেখতে’
‘আপনি বোঝার চেষ্টা করুন ফুপিআম্মু আসবে না কখনো’
শেহজাদ শব্দ করলো না। ওয়ামিয়ার কাঁধে নিজের ক্লান্ত দেহটা ভর দিলো।ওয়ামিয়া কোনোমতে সামলালো। বুঝলো শেহজাদের মনে পরছে ভীষণ শেহতাজ শেখকে।শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে ওয়ামিয়া। একটা সময় ঘুমিয়ে পরে শেহজাদ ওয়ামিয়ার কাঁধে।ওয়ামিয়া সাবধানে শুইয়ে দেয় তাকে। এরপর কপালে অধর ছুঁইয়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে।
************
‘আমি বাংলাদেশে ব্যাক করতে চাই হিমালয় ভাই এবং মালা’
মালা হিমালয় কিছু বলবেন তার আগে মিহির বলে উঠে,,,’আন্টি প্লিজ থেকে যাও না। তোমাকে আমার ভীষণ পছন্দ’
শেহতাজ হাসেন। এ ক’দিন ছেলেটির সাথে বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে তার। ছেলেটি চঞ্চল প্রচন্ড। কতগুলো গার্লফ্রেন্ড আছে সেগুলো ও বলেছে তাকে। প্রায়ই দু’জন বসে গল্প করে। ভার্সিটি থেকে ফিরে শেহতাজের সাথে গল্প জুড়ে দেয়।
‘মিহির বাবা বাংলাদেশ তো ফিরতেই হবে সেখানে যে আমার কলিজার টুকরো দুটো রয়েছে’
‘তারাই তোমার কলিজা হয়ে গেলো আর আমি কিছু না’
‘তুমিও আমার আরেক কলিজা বাবা।তবুও এবার ফিরতে যে আমাকে হবেই’
‘আচ্ছা ঠিক আছে এবার আমিও যাবো। শেষবার তো পাঁচ বছর আগে গিয়েছিলাম’
সবাই টেবিলে বসে খাচ্ছিল। হিমালয় খাবার শেষ করে বলেন,,’এতো তাড়াতাড়ি কি যাওয়া খুব প্রয়োজন শেহতাজ’
‘হিমালয় ভাইয়া আর কত দিন। আমার ছেলেটা কষ্ট পাচ্ছে ভাইয়া। ধুকে ধুকে মরছে। ও যে সব থেকে বেশি আমায় ভালোবাসে’
হিমালয় কথা বাড়ালেন না। উঠে গেলেন। মিহির এবং মালা এখনো বসে আছেন। মালা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,,,,
‘শেহু শেহজাদ জানে তুই বেঁচে আছিস!’
শেহতাজ অবাক হয়ে যান। তার ছেলে জানে সে বেঁচে আছে। তবে কেনো এলো না।চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে।
‘তাহলে ও আসেনি কেনো মালা।ওর তো ছুটে চলে আসার কথা’
‘ও আসেনি কারণ ও জানেই না যে আমরা এই শহরে আছি।আমি সব খুলে বলেছি ওকে’
‘ওকে কেনো বলেছিস শেহু ওকে। ও তো ছাড়বে না ওদের’
‘ওদের কি আদেও ছেড়ে দেওয়ার কথা শেহতাজ’
‘ইমন শেখ এবং নীলা শেখের যে সামনে ভয়ংকর মৃত্যু অপেক্ষা করছে এটা আমি জানি। তোকেও জানিয়ে রাখলাম। আর হ্যাঁ বাংলাদেশে যাবি তুই তবে এখন নয়।’
#চলবে
আসসালামু আলাইকুম। আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এতোদিন গল্প না দিতে পারার জন্য।পড়াশোনার একটু বেশি চাপ ছিলো।আবারও বলছি অতন্ত্য দুঃখিত।