#অতঃপর_তুমি_আমি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৬
‘স্যার নীলার খবর পেয়েছি।তিনি বর্তমানে সিলেটে নিজের পরিবারের সাথে আছেন’
‘গ্রেট!তাকে তুলে আনার ব্যবস্থা করো অর্নব। পাপিদের শাস্তি দেওয়ার সময় যে চলে এসেছে’
‘ঠিক আছে স্যার আমি ব্যবস্থা করছি’
শেহজাদ ফোন কাটলো। কিছু ভালো লাগে না তার। কবে এসব শেষ হবে এবং সুস্থ স্বাভাবিক একটা জীবনযাপন করবে। বারান্দা থেকে রুমে আসলো। রুমটি ফাঁকা। ওয়ামিয়া ছাদে হয়তো। সে নিজেও ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। ওয়ামিয়া ছাদের দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে। শীতল হাওয়া বইছে।চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। খোলা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। শেহজাদ এসে প্রেয়সীকে দেখে কয়েক মুহুর্তের জন্য স্তম্ভিত হলো। ইশ কেমন করে যেনো তার প্রেয়সী বসে দোল খাচ্ছে।শেহজাদ এসে পাশে বসলো।ওয়ামিয়া নিচু স্বরে শুধালো,,
“আমাকে কি একটু বাড়িতে নিয়ে যাবেন। কতগুলো দিন যাওয়া হয় না। আমার আম্মু আব্বুকে দেখতে ইচ্ছে করছে”
শেহজাদ কিছু একটা ভেবে বলল,,,“আচ্ছা কাল নিয়ে যাবো। দেখা করিয়ে আনবো তোমাকে”
ওয়ামিয়া উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো,,, “সত্যি নিয়ে যাবেন?”
“হ্যাঁ নিয়ে যাবো। এবার খুশি আমার বউ”
“হুম প্রচন্ড”
দু’জন বসে টুকটাক গল্প করছে। ওয়ামিয়া হঠাৎ বলে উঠলো,,,
“আপনি সকালে কাঁদছিলেন কেনো ডাক্তার সাহেব?”
শেহজাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,,,“আম্মুর কথা মনে পরছিলো তার জন্য”
‘আপনি কাঁদবেন না আর কখনো”
“ঠিক আছে ঠিক আছে”
–
সকাল সকাল দু’জন তৈরি হয়ে নিলো। ওয়ামিয়ার যথেষ্ট ভয় করছে। যদি কিছু বলে তার আব্বু আর ভাইজান। তিক্ত কথা সে সহ্য করতে পারবে না। তবুও তাকে একবার এগুলোর মুখোমুখি হতে হবে। ক্ষমা চাইবে সে। যদি ক্ষমা করে দেয়।সম্পর্ক আগের ন্যায় ঠিক করে নেয়। শেহজাদ নতুন জামাই যেভাবে সেজেগুজে শ্বশুর বাড়িতে যায় সেভাবেই লাল পাঞ্জাবি পরেছে। ওয়ামিয়া ও লাল শাড়ি পড়ে নিলো।দুজন মেহেবুবা খান এবং মুনতাসিব খানকে বিদায় দিলো। দু’জন বাইকে উঠে বসলো। যত বাড়িটা এগোচ্ছে তত বেশি অস্থির হয়ে পরছে ওয়ামিয়া। শেহজাদ হাসলো প্রেয়সীর অস্থিরতা দেখে।
বাড়ির সামনে এসে বাইক থামায়। দু’জন নেমে পরলো। শেহজাদ সাথে করে আনা ফলমূল মিষ্টি সব হাতে নিয়ে সামনে এগোলো।ওয়ামিয়া ভীত হয়ে ধীর পায়ে শেহজাদের পেছনে পেছনে আসলো। শেহজাদ বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো। সদর দরজা খোলাই ছিলো। হুমায়ন শেখ সোফায় বসে খবরের কাগজে চোখ বুলাচ্ছেন। মাহিম পাশে বসে টিভি দেখছে। শেহজাদ হাসিমুখে সামনে এগিয়ে গেলো। তবে ওয়ামিয়া থমকে দাঁড়িয়ে আছে এখনো। পা দু’টো কিছুতেই চলছে না।হাঁটার শক্তি নেই। শেহজাদকে চোখে পরতেই হুমায়ন শেখ দাঁড়িয়ে পরেন।
“তুমি! তুমি এখানে কি করছো।”
কথাটা বলেই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখেন ওয়ামিয়া জড়োসড়ো হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ওয়ামিয়াকে দেখে বুকটা কেঁপে উঠলো। একমাত্র মেয়ে তার। বড্ড ভালোবাসে। তবে শেহজাদের সাথে বিয়েটা মেনে নিতে পারেনি। খান বাড়িতে কিছুতেই পাঠাতে চাইছিলো না সে নিজের মেয়েকে। তবে নিজেকে সামলে কঠোর মুখভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলো। শেহজাদের উত্তরের আশায়।
“শ্বশুড় বাবা আমি এখানে থাকবো না তো কে থাকবে বলুন। আপনার একমাত্র জামাই বলে কথা”
“তুমি নিজের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছো শেহজাদ”
শেহজাদ হাসলো। ততক্ষণে মায়া বেগম চলে এসেছেন বসার ঘরে। মেয়েকে দেখে চোখজোড়া ছলছল করে উঠলো। কতগুলো দিন পরে দেখছে মেয়েটাকে। রামিশাও রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে। এসে ওয়ামিয়াকে দেখে ভীষণ খুশি হয়। কতগুলো দিন পর তার সঙ্গীকে দেখলো। এ বাড়িতে আসার পর থেকেই ওয়ামিয়া তাকে সব বিষয়ে সাহায্য করেছে এবং সমর্থন করেছে।বড্ড ভালো। মায়া বেগম না পারছেন দৌড়ে গিয়ে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিতে না পারছেন দাঁড়িয়ে থাকতে। কি করবেন সে।
“মাহিম এবং মামু তোমাদের সাথে আমার কিছু কথা ছিলো”
মাহিম এবং হুমায়ন শেখ চমকালেন।শেহজাদকে দেখে মোটেও মনে হচ্ছে না সে ফাজলামো করছে। মুখভঙ্গি যথেষ্ট সিরিয়াস। তিনজন একটা রুমে ঢুকে পরলো। তারা যাওয়ার পরই মায়া হলো মায়া বেগম এসে ঝাপটে ধরলেন। ওয়ামিয়া কেঁদে ফেললো। কতগুলো দিন পর মায়ের সান্নিধ্যে।মালা বেগম ও কাঁদছেন। রামিশা রান্না ঘরে গেলো। নতুন জামাই এসেছে অবশ্যই আপ্যায়ন করতে হবে। সে দ্রুত নাস্তা তৈরি করতে লাগলো। ২০ মিনিট পরে বের হলো তিনজন রুম থেকে।
তবে কারো চোখে রাগের আভাস নেই। মনে হচ্ছে সবটা স্বাভাবিক। কি এমন বললো শেহজাদ তাদের। ওয়ামিয়ার সামনে এসে দাঁড়ালেন হুমায়ন শেখ। ওয়ামিয়া ভেবেছিলো এই বুঝি তার গালে সপাটে কয়েকটা থাপ্পড় পরবে।চোখ বন্ধ করে ফেলেছে সে। তবে হুমায়ুন শেখ ওয়ামিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।
“আম্মা তোর কি এই বুড়ো বাপকে আজ মনে পরলো”
ওয়ামিয়া কেঁদে ফেললো সাথে সাথে। নিজেও বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।ভীষণ ভালোবাসে সে তার আব্বুকে। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গিয়েছে ওয়ামিয়ার। হুমায়ন শেখ মেয়েকে শান্ত করছেন।
“আমি দুঃখিত আব্বু সেদিন ওভাবে চলে যাওয়ার জন্য। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। এতোগুলো দিন আমি আড়ালে অনুতাপের আগুনে দগ্ধ হয়েছি।আমায় ক্ষমা করে দাও”
ওয়ামিয়া হাউমাউ করে কান্না করছে। মায়া বেগম অবাক হলেন। ভীষণ অবাক হলেন। এই তো কিছুক্ষণ আগেও রেগে ছিলেন হুমায়ন শেখ তবে এখন এক অন্য হুমায়ন শেখকে দেখছেন। শেহজাদ কি এমন বললো যে তাতে কিছুসময়ের মধ্যে মেনে নিলো সব। মাহিম ও হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
শেহজাদ প্রাপ্তির হাসি হাসছে। নিজের স্ত্রীকে তার পরিবার ফিরিয়ে দিতে পেরেছে। এর থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে। প্রেয়সীর সুখেই সে সুখী।বাড়ির হাওয়া বদলে গেলো। শেহজাদ তার পুরোনো বন্ধুকে ফিরে পেয়েছে। কতশত গল্পের ঝুরি খুলে বসেছে দুজন। গল্প করছে তিনজন বসার ঘরে বসে। ওয়ামিয়া রামিশা এবং মায়া বেগম রান্নার জোগাড় করছে।কিছু কিছু রান্না শেষ ও। বাকিগুলো শেষ হয়ে যাবে কিছুক্ষণের মাঝে। রামিশা এবং ওয়ামিয়া ঠেলেঠুলে রুমে পাঠালো মালা বেগমকে। শেহজাদের মনে পরছে পাঁচ বছর আগে শেখ বাড়িতে হওয়া আড্ডাগুলোর কথা। এভাবেই আড্ডা দিতো সবাই তবে এখানে আরো তিনজন ছিলেন। যাদের মধ্যে দুজন মৃত এবং অন্যজন….!
–
ওয়ামিয়া এবং শেহজাদ বাড়ি ফিরেছে। রাত হয়তো বাজে এগারোটা।গ্রামে এই সময় বেশি মানুষ থাকে না। ওয়ামিয়া দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছে। শেহজাদ এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো তাকে।ওয়ামিয়া মৃদু স্বরে শুধালো,,
“আপনি কি এমন বললেন আব্বু এবং ভাইজানকে”
“আমার বউয়ের জন্য আমি সব করতে পারি। আর এটা তো কোনো ব্যাপারই না। তুমি যে লুকিয়ে লুকিয়ে আমার আড়ালে তাদের জন্য কান্না করো তা আমি জানি”
“আপনি জানেন!”
বিস্মিত হয়েছে ওয়ামিয়া। তবে শেহজাদ জানতো সে কান্না করে তাদের জন্য। আজ সারাটা দিন এতো ভালো কেটেছে। শেহজাদ তাকে খুব সুন্দর একটি দিন উপহার দিলো।শেহজাদ ওয়ামিয়ার নাকে নাক ছুঁইয়ে দিয়ে বলে,,,
“আমি তোমার সব বিষয়ে অবগত মিসেস শতাব্দ ইমতিয়াজ খান ”
“উমম এতো বিষয় জানা কিন্তু ঠিক নয় ডাক্তার সাহেব”
“আমার বউয়ের বিষয় আমি জানবো না তো কে জানবে শুনি”
শেহজাদ কোমড় জড়িয়ে ধরেছে ওয়ামিয়ার। ওয়ামিয়া হালকা কেঁপে উঠলো।ওয়ামিয়া শেহজাদের বুকে মাথা রাখলো।শেহজাদ ও আগলে নিলো প্রেয়সীকে।
“ভালোবাসি! ভালোবাসি ডাক্তার সাহেব”
“আমিও ভালোবাসি”
–
দশ দিন পরে শেহতাজ শেখের ফ্লাইট। এক প্রকার জোরজবরদস্তি করে টিকিট কাটিয়েছে শেহতাজ।মালা কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। অতি কষ্টে রাজি করিয়েছে সে। শেহতাজ দাঁড়িয়ে উঁচু উঁচু বিল্ডিংগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন। দশটা দিন। এরপর নিজের ছেলে মেয়েদের দেখতে পাবেন। ভালোবাসার মানুষটিকে ছুঁয়ে দেখতে পারবেন। এটা কি স্বপ্ন।মিহির এসে পেছন থেকে মামনি বলে জড়িয়ে ধরে,,,
“মামনি আমি কিন্তু বাংলাদেশ যাচ্ছি তোমার সাথে”
শেহতাজ হাসলো। ছেলেটা বড্ড পাগলাটে। ভালোবাসে তাকে ভীষণ। তাই তো শেহতাজ আন্টি থেকে নেমে মামনিতে এসেছে।সে ও তুমি থেকে তুই এ নেমেছে। শেহতাজ বললো,,,
“ঠিক আছে আব্বু তাহলে তোকে আমি একটা বাংলাদেশী সুন্দরী একটা মেয়ে দেখে বিয়ে দিয়ে দেই কি বলিস”
“ইয়াহু মামনি এটা দারুণ। বাংলাদেশী মেয়ে আমার ভীষণ পছন্দ। কি সুন্দর করে চোখে কাজল লাগায়,আরো কত কি নাম জানি না হ্যাঁ মনে পরেছে টিপ পরে কপালে আর শাড়ি কি সুন্দর যে লাগে”
“তা আব্বু কাউকে কি পছন্দ তোর?”
“মামনি বলবে না তো কাউকে”
“না বলে ফেল”
“আমার একটা বাংলাদেশী বান্ধবী আছে। নাম আরু।পুরো নাম হয়তো অরুনিকা রাহি। সেও মাঝে মাঝে কপালে টিপ দিয়ে,শাড়ি পরে কাজল দিয়ে ছবি তুলে আমাকে দেয়। আমার ভীষণ ভালো লাগে তাকে”
“তাহলে তো তোমার ও মেয়ে ঠিক মিহির আব্বু”
“মামনি আমি ভীষণ ভয়ে আছি। যদি আমায় প্রত্যাখান করে দেয় সে। তার জন্য তোমার কাছ থেকে শুদ্ধ ভাষা শিখেছি। আগের গার্লফ্রেন্ড গুলোকে ছেড়েছি। পুরো বাঙালি ছেলে হতে চাইছি”
“তুই নিশ্চয়ই তোর অরুকে পাবি মিহির আব্বু”
#চলবে