অতঃপর_তুমি_আমি #লেখিকা:#ইশা_আহমেদ #পর্ব_২০

0
229

#অতঃপর_তুমি_আমি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২০

আজ নির্বাচন ছিলো। এবার ও মুনতাসিব খানই বিজয়ী হয়েছে। খান বাড়ি আর শেখ বাড়ি আনন্দে উল্লাসে মেতে আছে। তাদের ধারণাই নেই সামনে তাদের সাথে কি হতে চলেছে। সবাই মিলে গিয়েছে মুনতাসিবকে কেন্দ্র থেকে আনতে। বাড়িতে রয়ে গিয়েছে শেহতাজ, তার বাবা-মা, শ্বশুড় শ্বাশুড়ি। শেখ বাড়িতেই আছে সবাই। এখানেই আজ সবাই আজ আনন্দ করবে। শেহতাজ রান্নাঘরে সব রান্না বান্না ঠিক করছিলেন। এগুলোর জন্যই মূলত সে যাইনি। রাতে একসাথে খাওয়া দাওয়া করবে সবাই মিলে।ড্রয়িংরুমে বসে চারজন টিভি দেখছে আর গল্প করছল। বাড়িতে যে কেউ ঢুকেছে তার বিন্দু মাত্র ধারণা নেই কারো। সবাই যার যার মতো আনন্দ করে যাচ্ছে। তার ভেতরেই ড্রয়িংরুম থেকে শেশতাজ নিজের মায়ের চিল্লাপাল্লার আওয়াজ শুনে দৌড়ে আসে। দৌড়ে এসে সে যা দেখে,সে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।

নিজের চোখের সামনে নিজের বাবার আর শ্বশুরের নিথর র’ক্তা’ক্ত দেহ দেখে সে নির্বাক হয়ে গিয়েছে। চোখের পলক ফেলতে ভুলে গিয়েছে সে। কয়েক জন কালো পোশাক পড়া লোক ধরে আছে তার শ্বাশুড়ি ও মাকে। শেহতাজের মা তাকে পালাতে বলছে ইশারা করে তবে শেহতাজের পা চলছে না। চোখ থেকে টুপটাপ করে অশ্রুকণা গড়িয়ে পরে। তখনই তার মায়ের পেতে চা’কু চা’লিয়ে দেয় একটা লোক। এবার শেহতাজ চেঁচিয়ে উঠে ‘মা ‘বলে। নিজের চোখের সামনে নিজের মায়ের মৃত্যু সহ্য করতে পারে না শেহতাজ। দৌড়ে লোকটার কাছে এসে ধস্তাধস্তি শুরু করে। সে মেয়ে হলেও মুনতাসিব এবং হুমায়ন তাকে নিজেকে রক্ষা করার উপায় শিখিয়েছে। লোকটার দুর্বল জায়গায় লাথি মেরে তাকে ফেলে দেয় সে।মা বাবার কাছে গিয়ে বলে,

‘বাবা- মা আব্বু তোমরা উঠো। চোখ খুলো না। কথা বলো। কথা কেনো বলছো না’

শেহতাজ পাগলের মতো কাঁদছে। তার শ্বাশুড়ি পাশে বসে চোখের পানি ফেলছে। তাকে এখনো কেউ মারেনি।হাত পা,মুখ বেঁধে এক পাশে ফেলে রেখেছে। মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়ে তার স্বামী বউমা তার প্রিয় জনের জন্য কষ্ট হচ্ছে। তাকে মারুক তবে তার বউমাকে ছেড়ে দিক। পেছন থেকে একজন মেয়ে চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলে শেহতাজকে। শেহতাজ ব্যাথায় কুঁকড়ে ওঠে। শক্তি নেই তার শরীরে। লোকটার সাথে ধস্তাধস্তি করার সময় নিজেও আহত হয়েছে। আবার মা বাবার শ্বশুরের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না। মেয়েটা থা’প্প’ড় মারে শেহতাজকে কয়েকটা শেহতাজের ঠোঁট কেটে র’ক্ত পরছে। এ দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে শেহতাজের শ্বাশুড়ি ও হার্টঅ্যাটাক করে মারা যায়। শেহাতাজ তাকে চোখ বন্ধ করতে দেখে তার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে।

তার আগেই সেই লোকটা এসে পেটে চা’কু চালিয়ে দেয়। পেট থেকে গলগল করে রক্ত পরতে থাকে তার।সে পেট চেপে ধরে বলে,

‘কে আপনারা! কি শত্রুটা আপনাদের সাথে আমাদের?’

‘তোর সাথে শত্রুটা তো অনেক ছিলো রে শেহতাজ। বড় শত্রুতা হলো তুই আমার ভালোবাসার মানুষকে কেঁড়ে নিয়েছিলি। আমি ভালোবাসি এখনো তোর বর মুনতাসিবকে। চিনেছিস তো আমায়’

শেহতাজের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরে। এটা তার প্রিয় এক বান্ধবী। যার সাথে একসময় টিফিন ভাগাভাগি করে, খেলে,ঘুরে বেড়াতো, একসাথে ঘুমিয়েছেও বটে সে। শেহতাজ অস্পষ্ট কন্ঠে বলল,,,’নীলা!’

নীলা হাসলো। নিজের মুখে থাকা মাস্কটা খুলে ফেললো। শেহতাজ যত না কষ্ট পেয়েছিলো এতক্ষণ তার থেকে হাজার গুন কষ্ট এখন পেলো। শেষ পর্যন্ত বোনের মতো বান্ধবী ও তার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করলো। শুধু একজন মানুষকে পায়নি বলে আজ পাঁচটা প্রাণ নিচ্ছে সে। তার ভেতরেই আরেকটা চিরচেনা কন্ঠ পেলো শেহতাজ। এই কন্ঠ ও সে চিনে।

‘ হ্যাঁ নীলা এবং আমি ইমন শেখ’

কাঁপা কাঁপা কন্ঠে শেহতাজ বলল,,,,’ইমন তুই!’

ধক্কাটা আরো জোড়ালো হলো। ইমন এগিয়ে আসলো তার কাছে।এসে নিচু হয়ে ঝুঁকল শেহতাজের দিকে। কাছাকাছি এসে চাকু আরেকবার ঢুকিয়ে দিয়ে বলল,,

‘আমি তোকে সত্যি অনেক ভালোবেসেছিলাম রে না না এখনো বাসি। দেখ এতো বছরেও কাউকে ভালোবাসতে পারিনি বিয়ে করতে পারিনি। শুধু তোর জন্য। আমায় ভালোবাসলে কি হতো রে শেহু। আমি তো তোকে কম ভালোবাসি নি তবুও তুই আমার হলি না। মুনতাসিবের হলি, ওকে ভালোবাসলি। কি ছিলো আমার মধ্যে যে তুই আমায় ছেড়ে ওই কাপুরুষের দিকে তাকালি। তুই আমার হোসনি তো আমি তোকে সারাজীবন তোর ভালোবাসার মানুষের সাথে থাকতে দেবো মনে করেছিস। তুই আমার না তো কারো না। ভালো থাকিস ওপারে। আমি পরকালেও তোকেই চাইবো’

শেহতাজ হাসলো। নীলা বিরক্ত হলো। আরেকজন ও ছিলো ওদের সাথে। মুখ না দেখলেও চিনতে পেরেছে শেহতাজ এটা নাবিল শিকদার। মুনতাসিবের বিপরীত দলের লোক। শেহতাজ অনেক কষ্টে কয়েকটা শব্দ উচ্চারণ করলো।

‘ই…মন তুই আমায় কখনোই ভালোবাসিস নি। বাসলে কখনো নিজের হাতে মারতে পারতি না। আর তুই নীলা তোকো বোনের মতো ভালোবেসে ছিলাম আর শেষ অব্দি কিনা তুই বিশ্বাস ঘাতকতা করলি। ‘

‘হ্যাঁ করেছি। তোর জন্য পাইনি আমি ওকে। আমিও কম ভালোবেসেছিলাম না তো’

নীলা আরেকবার ছুড়ির আঘাত করলো শেহতাজকে। শেহতাজ নেতিয়ে পরলো। ইমনের সুক্ষ্ম কষ্ট হলেও মেনে নিলো। নীলা সহ বাকি সবাই বেরিয়ে পরলো বাড়ি থেকে। রয়ে গেলো এক নিস্তব্ধ বাড়ি। যেখানে কিছুক্ষণ আগে ঘটে গেলো এক নির্মম ঘটনা।ফ্লোরে পরে রইলো পাঁচটা নিথর দেহ। যার সাক্ষী হয়েছিলো কেউ একজন। তবে কে সে! শেহতাজ কি আদেও মৃত্যু গ্রহন করেছিলো!

*********

‘সেদিন আমি চাইলেও কিছু করতে পারিনি। পারিনি তোমাদের সবাইকে বাঁচাতে। এটা আমার ব্যর্থটা। আমি এখনো অনুতাপের আগুনে দগ্ধ হচ্ছি। আমি কোন দিন ওই রাতের কথা ভুলবো না’

অন্ধকার রুমে একটা মাঝবয়সী মহিলা কাঁদছে।এতো সময় এই মহিলায় ভবছিলো সেদিন রাতের কথা। আমেরিকার এক বাড়িতে তার অবস্থান। একটু পরে একটা ছেলে ভেতরে প্রবেশ করলো। কারো আসার শব্দ শুনে মহিলাটি চোখ মুছলো।নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালালো। ছেলেটি এসে মাকে জড়িয়ে ধরে অস্পষ্ট বাংলায় বলল,

‘মম তুমি আবারও কাঁদছো প্লিজ ডোন্ট ক্রাই মম। ইট’স নট ফেয়ার তুমি প্রমিস করেছিলে তুমি কাঁদবে না। তবে আবার কেনো কাঁদছো?’

‘কি করবো বাবা বল আমি যে পুড়ছি অনুতাপের আগুনে’

‘তোমার কোনো দোষ নেই মম এখানে’

‘ও এভাবে সবাইকে হারাবে আমি কখনোই ভাবিনি’

‘মম সময় এসেছে। আমরা বিডি ব্যাক করবো খুব শীঘ্রই।’

মহিলাটি আঁতকে উঠলো। এতো বছর ধরে সে বাংলাদেশে যায় না এর কারণে। আর এখন যেতোই হবে। অবশ্য যেতে তো তাকে হবেই। অনেক কিছু বলার আছে তার। যা এখনো কেউ জানে না কেউ। সে পুরো দুনিয়ার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখে এই সত্যি। তবে এখন প্রকাশ করতেই হবে।

********

‘হ্যালো ভাবি জানতে পেরেছো কিছু’

‘জানতে পেরেছি তবে উড়ো কথাও হতে পারে।তবুও খোঁজ নিতে তো আর সমস্যা নেই। ইমন শেখ নাকি দুই তিন গ্রাম পরে থাকে।তুমি খোঁজ নিয়ে দেখতে পারো’

‘ধন্যবাদ ভাবি।রাখছি সবার খেয়াল রেখো’

কল কাটলো ওয়ামিয়া। এখন ইফাজের কাছে যেতে হবে তার।ইফাজই তাকে একমাত্র এই খবর এনে দিতে পারবে। শেহজাদ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে অনেক আগেই বেরিয়ে পরেছে। পা বাড়ায় ইফাজের রুমের উদ্দেশ্যে।দরজার সামনে এসে মৃদু কন্ঠে বলে,,

‘ইফাজ ভাইয়া আসতে পারি’

ইফাজ বাইরে বেরোনোর জন্যই তৈরি হচ্ছিল। ওয়ামিয়ার কন্ঠ শুনে কিছুটা অবাক হলো। ওয়ামিয়া কখনোই তার রুমে আসে না।সে অবাক হওয়া কন্ঠেই অনুমতি দিলো। ওয়ামিয়া রুমে প্রবেশ করলো। রুমে প্রবেশ করতেই দেখলো ইফাজ বড্ড অগোছালো। রুমের অবস্থা তেমন একটা ভালো না। ইফাজ ওয়ামিয়াকে চোখ বড়বড় করে তাকাতে দেখে বুঝলো কাহিনী। দ্রুত সোফাটা খালি করলো। জামা কাপড় দিয়ে ভর্তি ছিলো। বোকা বোকা হাসলো।ওয়ামিয়াকে বললো,,,

‘ বসো বসো মেহেনাজ।’

ওয়ামিয়া বসে বলল,,,,’ভাইয়া আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ বলো’

‘ ভাইয়া আমি আপনাকে এখন যা বলবো আপনি মোটেও তা ডাক্তার সাহেবকে জানাতে পারবেন না’

‘তুমি নিশ্চিন্তে বলতে পারো মেহেনাজ। আমি কখনোই বলবো না’

ওয়ামিয়া খুলে বলল সব।এটাও বলল তাকে সোজাসুজি গিয়ে খবর নিলে চলবে না। আগে পরিস্থিতি বুঝে আসতে হবে সেখানের তারপরই খোঁজ লাগাতে হবে। ইফাজ রাজি হলো। সে কালই খবর নিবে জানালো। ওয়ামিয়া ধন্যবাদ দিয়ে বেরিয়ে পরলো রুম থেকে। ইমন শেখকে না হয় পেলাম। তবে নাবিল শিকদার টা কে!আর কোথায় পাবো। নীলাকে পেতে হলে ইমন শেখকে প্রয়োজন। সব রহস্যের সমাধান করবে সে এবং তাদের যোগ্য শাস্তি পেতে হবে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here