বেলী_ফুলের_সুবাস #পর্ব :৪ #মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

0
664

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :৪
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
সকাল সকাল ফ্রেশ হয়ে নতুন শাড়ি পরে নিলো বেলী।কাল রাতে রিতা বেগম বলে দিয়েছিলেন যেনো সকালে ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পড়ে ,নতুন বউদের নাকি শাড়ি পড়তে হয়।শাড়ি পরতে বেশ পারদর্শী না হলেও একা একা পড়তে পারে বেলী।। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে বসার ঘরে বসলো বেলী।বিলকিস বেগম এবং সামিয়া সেখানেই বসে ছিল

-কি গো রমণী,বাসর রাত কেমন কাটাইলা? জামাই মনে হয় মেলা আদর সোহাগ করছে,তাই না ?
বলেই মুচকি হাসলেন বিলকিস বেগম।মূলত বেলীকে জ্বালাতন করতেই তিনি এই কথা বললেন ।
-আহা দাদী বাসর রাতে জামাই আদর করে না এটা কি কোথাও শুনেছ।দেখো না কি লজ্জা পাচ্ছে আমাদের বেলী।আবার দেখি শাড়িও পড়েছে।
বলেই হাসতে লাগলো সামিয়া।
-তোমরা চুপ করো। কি সব ফালতু কথা বলছো। যতোসব আজাইরা কথা বার্তা।
সকাল থেকে কি একটা পর একটা শুরু হয়েছে।দিন তাই খারাপ।দাদীরা এভাবে কথা বলে নাকি ? আজব।বেলী মনে মনে কথা গুলো বললো।

-আমাকে তো বলতেই পারিস বেলী ।আমি না তোর বেস্ট ফ্রেন্ড। বল না কালকে সুবাস ভাইয়া তোকে কয়টা চু’মু খেয়েছে ?বেলীর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো সামিয়া।
-ছিঃ! কথার কি অবস্থা। দয়া করে তুই চুপ থাক ।
মুখ কুচকে বললো বেলী।
-আচ্ছা এটা তো বলতেই পারিস যে জড়িয়ে ধরেছে নাকি?

-আমার বউকে আমি জড়িয়ে ধরলে প্রবলেম কোথায়? আমার বউ কে আমি জড়িয়ে ধরবো না তো কি অন্য জন ধরবে? আর জড়িয়ে ধরলেই বা কি? তোকে কি সব কিছু বলা লাগবে?

সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বলে উঠলো সুবাস।সুবাসকে দেখে চুপসে গেলো সামিয়া।তাও ভালো যে কোনো ঝাড়ি দেই নাই বা আম্মুর কাছে নালিশ করে নি । সুবাস ভাইয়া যে রাগী।

বেলী আর সামিয়ার উদ্দেশ্য করে সুবাস বললো
-দুজনেই তৈরি হয়ে নাও কলেজে পৌছে দিবো।
-এ কি কথা দাদু ভাই। কাল মাত্র বিয়ে হইলো আর আজই কলেজে যাইবো। আর তুমি বা কেন অফিসে যাইবা? তুমিও আজ ছুটি নাও।কালকে থেইকা কলেজ,অফিস সব শুরু কইরো।
-হুম সুবাস ভাই আজ কলেজে না যাই। কাল থেকে যাবো নি।
দাদির সাথে তাল মিলিয়ে বলে উঠলো সামিয়া।
-বিয়ে হয়েছে বলে কলেজে বা অফিসে যাওয়া যাবে না এমন কথা কোথাও নেই। তাদের কলেজে যেতে হবে সামনে বোর্ড এক্সাম। আর আমার অফিসেও ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে।
সুবাস বললো।

– কি রে বেলী তোর নাকি বিয়ে হয়ে গেলো।তাও আবার আমার ক্রাশের সাথে ।
আফসোসের সুরে বলল সিনথিয়া
-রাখ তোর ক্রাশ,আমি তো আগেই বলেছিলাম যে সুবাস ভাই বেলীকে পছন্দ করে।( সাজিয়া)
-হ্যা রে আমিও তো তাই বলি,সেদিনের ঘটনার পর থেকে আমার তাই মনে হয় সব সময়। আর শুধু মনে না আমি সিওর যে সুবাস ভাই বেলীকে ভালোবাসে।(মিরা)

তাদের কথায় ডুব দিল বেলী সেদিনের ঘটনায়

রোজ কলেজে থেকে সামিয়া, বেলী এবং মিরা এক সাথে বাসায় ফিরে। তাদের বাসার রাস্তা একই দিকে। সেদিনও তারা বাসায় ফিরছিল হঠাৎ তাদের সামনে আগমন ঘটে রাজীবের।রাজিব হলো তাদের ক্লাস মেট।রাজিব বেলীকে পছন্দ করে।এর আগে কয়েক বড় প্রেম নিবেদন ও করেছে তবে বেলী এর প্রতিউত্তর করে নি ।
সেদিন রাজিব বেলীকে আবার প্রপোজ করে,আর বেলীর ভাগ্য খারাপ ছিল যে সুবাস সেই রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিল।সুবাস কে দেখে বেলী প্রচুর ভয় পেয়ে যায়।সুবাস সব কিছু দেখে রাজিব কে ইচ্ছা মত কেলানি দেয়।বাসায় যেয়েও বেলীকে ইচ্ছা মতো কথা শুনায়।বেলীকে একদম সব ছেলেদের থেকে দূরে থাকতে বলে ।এর পর থেকেই তাদের মনে সন্দেহ যে সুবাস বেলীকে ভালোবাসে।

-কি রে বেলী কথায় হারিয়ে গেলি ( সাজিয়া)
-থাক এ কথা বাদ এখন বল বাসর ঘিরে কি কি করলি,সুবাস ভাই কি তোর ঠোঁটেও চু’মু খেয়েছে নাকি ?(মিরা)
-আমি তো শুনেছি বাসর ঘরে মানুষ কত কিছু করে, তা কি কি করেছ বেলী ফুল ?(সিনথিয়া)
-তোরা চুপ থাক প্লিজ।কেমন অসভ্যের মতো কথা বলছিস।মুখে কোনো কিছু আটকায় না নাকি?
রাগে গজগজ করতে করতে বললো বেলী ।

।কি বলবে এই বাদর গুলোকে।এদের কিছু বললে তিল থেকে তাল বানিয়ে দিবে । রাগে ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে গেলো বেলী।এদের সাথে থাকা যাবে না।এদের সাথে থাকলে হয়তো বেলীর রাগ বেড়ে যাবে নয়তো লজ্জায় শেষ হয়ে যাবে।বেলী সোজা এখন কলেজে এর মাঠে এক কোনায় বসে পড়লো।কাল রাত থেকে অনেক বার ফাহিমের ফোন কল দিয়েছে।কিন্তু একবার ও কল রিসিভ হয় নি।বেলী এই বার লাস্ট কল দিবে এই বার কল রিসিভ না করলে আর কখনো কল দিবে না।সব কিছু মেনে নিবে।একটা পবিত্র সম্পর্ককে নষ্ট করবে না।পরক্ষনেই মনে হলো প্রথম ভালোবাসার মানুষকে কি এত সহজেই ভুলে থাকা যায়?আজ বেলীর নিজেকে অসহায় লাগছে।কাপা হাতে কল দিলো কিন্তু এইবার ও কল রিসিভ হলো না।নিজেই নিজেকে প্রতিজ্ঞা করলো আর কখনই কল করবে না।নিজেকে আজ অনেক ছোট মনে হচ্ছে।পরক্ষনেই মনে হলো ফাহিমের এক বন্ধুর নম্বর তার কাছে আছে।তাই নিজিকে সামলে নিয়ে ফাহিমের ফ্রেন্ড কে কল করে জানতে পারলো ফাহিম বলেছে বেলীর সাথে আর সম্পর্ক রাখতে চায় না ফাহিম।তাই বেলীর কল রিসিভ করছে না।বেলীর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। কেনো তার সাথেই এমন হলো?কেনো তার এতো কিছু সহ্য করতে হচ্ছে?

আজ শুক্রবার।অফিস বন্ধ সুবাসের।দুপুরের খাবার খেয়ে নিজ রুমের দিকে পা বাড়াতেই করো কণ্ঠে পিছে তাকালো সুবাস।

-আজ নাকি মেলা বসেছে পাশের মাঠে। বেলী আর সামিয়া যাইতে চাইছে।মেয়ে মানুষ তো একা যেতে দেয়া ঠিক হবে না তুমি তাদের সাথে করে নিয়ে যেও।
বললেন রিতা বেগম।
-জি চাচী নিয়ে যাব ।তাদের রেডি থাতে বইলো।তোমার মেয়েদের আবার আটা ময়দা মাখতে মাখতেই সময় শেষ।
বলেই রুমে চলে গেলো সুবাস।

সুবাসের কথায় মুখ ফুলালো বেলী। ছেলে মানুষ কিভাবে জানবে যে এই মেকআপের প্রতি মেয়েদের ভালোবাসা কতোটা? মেকআপ করতে যে কত দামী দামী প্রোডাক্ট ইউস করতে হয় টা কি জানে?না জেনেই শুধু এত দামী দামী প্রোডাক্ট গুলোকে আটা ময়দা বলে দেয়। হুহ।কথা গুলো মনে মনে বললো বেলী।

বসার ঘরে বসে আছে সুবাস আর সামিয়া ।দুজনে রেডি থাকলেও রেডি হয় নি বেলী।সেই কখন থেকে বলছে দুই মিনিট দুই মিনিট। অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে এলো বেলী।পরনে কালো রঙের শাড়ি।বড় চুল গুলো ছেড়ে দেয়া।ঠোঁটে হালকা লিপ্টিক।চোখে কাজল দেখতে ভীষণ মায়াবী লাগছে বেলীকে ।
আসসালামুআলাইকুম।আশা করি সবাই ভালো আছেন।ধন্যবাদ সবাইকে সাপোর্ট করার জন্য। ভুল ত্রুটি হলে ধরিয়ে দিবেন।ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন)

চলবে……..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here