বৃষ্টি_থামার_পরে পর্ব ১৯: #soft_romance লেখিকা: #Lucky_Nova

0
408

গল্পের নাম : #বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ১৯: #soft_romance
লেখিকা: #Lucky_Nova

মিহি আরেকদফা শিউরে উঠল। লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেল নিমিষেই। রসগোল্লার মত চোখ করে ফেলল ও।
তবে মুখ ফিরিয়ে তাকালো না।
তাই এরোন ওর গাল থেকে হাতটা ঘাড়ের পিছনে নিয়ে আলতো করে ওর মুখটা কাছে নিয়ে এলো। এতে চমকে চোখমুখ খিচে বন্ধ করে ফেলল মিহি। ঠোঁটের সাথে ঠোঁট চিপে রাখলো সে। সাথে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ত করছেই। তবে উপকার হচ্ছে না।
এরোন মুচকি হেসে আলতো করে মিহির কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিলো।
মিহি চকিত হয়ে চোখ খুলল।
এরোন মিহির কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,”কাপকেক, তুমি সত্যিই ডার্টি মাইন্ডেড।”
মুহুর্তেই যেন বোকা বনে গেলো সে। পলকহীনভাবে এরোনের বুক বরাবর ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল।
এরোন চোরা হাসি হেসে ওকে ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়ালো।
ছাড়া পেয়ে মিহি দ্রুত নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে পুরোপুরি অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালো।
এরোন মৃদু হেসে বুকে হাত গুজে ওর মতিগতি দেখতে শুরু করলো।
মিহি মাথা হালকা নিচু করে কপাল কুচকে নিজের হাতে শাড়ির আঁচল প্যাচাচ্ছে। মুখ ফুটে কয়েকটা কড়া কথা বলতে ইচ্ছে করছে ওর। কিন্তু পারছে না।

লোকটা সত্যিই হুটহাট উল্টাপাল্টা কাজ করে বসে। এজন্যই একটু আগে যা হয়েছে তাতে অনেক বেশিই অপ্রস্তুত হয়ে গেছে মিহি। আড়ষ্টতা যেন ঘিরে ধরেছে ওকে।
নাহলে সে অবশ্যই বলত, আমাকে কপালে কেন কিস করেছেন? অসভ্য লোক! ডার্টি মাইন্ড ত আপনার! সকালে কিভাবে সুযোগ নিতে যাচ্ছিলেন মনে নেই?! এখন ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে কপালে কিস করে সাধু সাজা হচ্ছে?!
কথাগুলো মনে মনে আওড়িয়ে গিলে নিলো মিহি।
ওর চিন্তাএর মধ্যে এরোন এসে ওর পিছনে দাঁড়িয়ে গেল।
একটু সময় নিয়ে আন্দাজ করতেই মিহি ঢোক গিলল। এখন আবার কিছু করে বসবে এই ছেলে।
মিহির ভাবনা সঠিক করে দিয়ে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো এরোন।
মিহি হালকা কেঁপে উঠলো। হৃদস্পন্দন দ্রুততর হয়ে উঠলো নিমিষেই।
এরোন ওর দুইহাত মিহির দুই হাতের উপর রেখে আঙুলে আঙুল গলিয়ে দিল। আর মিহির কাধে থুতনি রাখলো।
মিহি সাথে সাথে মুখটা হালকা ঘুরিয়ে নিলো। এরোনের নিঃশ্বাস ঘাড়ে পরে পুরো শরীর যেন অবশ করে দিচ্ছে। মুখে কোনো কথাও আসছে না। অতিরিক্ত ভয়ে শকে চলে গেলে এমন হয় নাকি!
কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে এরোন আবার মায়াবী কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলতে শুরু করল,”কাপকেক, আজ থেকে আমার শুরু আর তোমার শেষ।”

মিহির বুক ধক করে উঠলো। শেষ মানে!
“তুমি আমাকে কবে পছন্দ করবা না করবা সেটার জন্য তোমাকে ছেড়ে রেখে দেব না। কারণ বউ ত, কিছু করেও বসতে পারি। তাই তোমার জন্য এটাই ভালো হবে যদি তুমি আমাকে জলদি জলদি মেনে নেও।”
মিহি বড়বড় চোখ মেলে সামনের দিকে তাকিয়ে রইল। শরীরের লোমগুলো দাঁড়িয়ে গেছে ইতিমধ্যে। শ্বাস নেওয়াও দায় হয়ে গেছে। কি সব বলছে এই লোক!
“সমস্যা নেই। আমি আমাকে মেনে নেওয়ার জন্য সাহায্য করব তোমায়। তাই আজ, এই মুহূর্ত থেকে তোমায় seduce করবো আমি।”
মিহির চোখ কোটর থেকে বের হয়ে আসার উপক্রম হয়ে গেল। বুকের মধ্যে দ্রিম দ্রিম হচ্ছিলো এত সময়। শেষোক্ত কথায় এখন যেন তোড়পাড় শুরু হয়ে গেছে!
এরোন মুচকি হেসে ওকে ছেড়ে দিয়ে পিছিয়ে গেল আর একদম স্বাভাবিক ভাবে বলল, “ফ্রেস হও। দেরি হয়ে গেছে। একবারে লাঞ্চই করতে হবে হয়তো।”

এরোন বেরিয়ে যেতেই মিহি বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে বিছানায় ধপ করে বসে পরলো।
‘এখন!’ আতঙ্কিত হয়ে বিড়বিড়িয়ে উঠলো মিহি।

শাওয়ার নিয়ে মাথায় তোয়ালে জড়িয়ে বের হলো মিহি। শাড়ি কোনো রকমে গায়ে জড়ানো।
বাথরুমে শাড়ি পরা সত্যিই ঝামেলার। অতঃপর শাড়ি ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো মিহি।
সবশেষে কুচি ঠিক করার সময় এরোন এসে রুমে ঢুকে পড়লো।
ওকে দেখেই মিহি অপ্রস্তুত হয়ে উলটো দিকে ঘুরলো। এতে হাতের কুচিও বেসামাল হয়ে গেল।
দ্রুত গতিতে কুচি গুছিয়ে নিতে শুরু করল মিহি।

এরোন মুচকি হেসে দরজা আটকে দিতে দিতে বলল, “আমি পরাচ্ছি দেও।”
এরোনের কথায় মিহি পীলে চমকে উঠল।
কথাটা বলে সে এগিয়েও আসতে শুরু করে দিলো। মিহি শুকনো ঢোক গিলে অগোছালো কুচিটা দুই হাতের মধ্যে মুষ্টিবদ্ধ করে ধরলো।
এরোন ওর সামনে এসে দাঁড়াতেই ও বলে উঠল,”আ..আমি শাড়ি পরতে প..পারি। আ..আপনি প্লিজ যান।”
মিহি তাকাতেই পারছে না এরোনের দিকে। অস্থিরতায় বুক ধুকপুক করা শুরু করে দিয়েছে।
সে কোনমতে ওই অগোছালো কুচিই গুজে নেওয়ার চিন্তা করল।
তবে তা করার আগেই ওর দুইহাত ধরে নিলো এরোন। মিহি হকচকিয়ে উঠলো।
“আমি বলেছি আমি পরাবো।” ভরাট গলা এরোনের।
“ক..কি শুরু করেছেন আপনি!” কপাল কুচকে কাঁপা কণ্ঠে বলল মিহি।
“রোম্যান্স।” মৃদু কন্ঠে বলল এরোন।
মিহি হালকা পিছনে সরতে চেয়েও পারলো না। হাত যে ধরা পরে রয়েছে এরোনের কাছে।
“ল..লজ্জা করে না আপনার! আপনি…”
মিহির কথার মাঝে এরোন সিক্ত কন্ঠে বলা শুরু করলো, “সফট রোম্যান্সের ক্ষেত্রে আছে শাড়ি পরানো, একসাথে রান্না করা, জড়িয়ে ধরে ঘুমানো এসব। আর হট রোম্যান্স যেগুলো আছে সেগুলোও করতে পারব৷ কিন্তু তুমি ত পারবা না। যেমন হলো- একসাথে শাওয়ার নেওয়া, ~~~।”
মিহি মাথা নুয়ে নিলো। কান লাল হয়ে এসেছে ওর। কিন্তু এই ছেলের মুখ লাগামহীন চলছে।
“এগুলোর থেকে ভালোটাই করছি আমি। সো পরাতে দেও।”
মিহির ছোট হার্টটা বের হয়ে আসার উপক্রম হয়ে গেল। এ যেন নাছড়বান্দা। পরাবে মানে পরাবেই!
এরোন ওর হাত থেকে আলতো করে কুচি ছাড়িয়ে নিলো। তারপর কুচি করায় মনোযোগ দিলো।
মিহি ঘামতে শুরু করে দিয়েছে। থেকে থেকেই ঢোক গিলছে সে। এদিকে নিঃশ্বাসও আটকে আসছে।

এরোন নিজের মত কুচি করতে লাগলো। আর ফাঁকে ফাঁকে কয়েকবার মিহির দিকে তাকিয়ে দেখলো। দেখে এটাই আবিষ্কার করল যে, বিচলিত মুখেও তাকে অপরূপ সুন্দর লাগে।
বেশ সময় লেগে গেল কুচি করতে এরোনের। যদিও ঠিকঠাক হয়ে ওঠে নি। তাও যা হয়েছে সেটাই মিহির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,”নেও।”
মিহি ফটাফট কুচিটা হাতে ধরে অন্যদিকে ঘুরে গুজে নিলো। ভাগ্যিস নিজের হাতে কুচি গুজে দেওয়ার বায়না ধরেনি! বুকের মধ্যে এখনো দ্রিম দ্রিম আওয়াজ হচ্ছে ওর।
কুচি গুজে নেওয়া শেষ হতে না হতেই এরোন ওর চুল থেকে তোয়ালেটা খুলে নিলো।
মিহি হকচকিয়ে উঠলো।
এরোন তোয়ালেটা নিয়ে পিছন থেকেই ওর মাথা মুছতে শুরু করে দিলো।
“তোমার মা ঠিকই বলেছে। মাথা না মুছেই তোয়ালে পেচিয়ে রেখে দেও তুমি।” স্বগতোক্তি করে বলল এরোন।
মিহি চোখ সরু করে ফেলল।
“ঠান্ডা কি এমনি লাগে?” ভরাট গলায় বলল সে।
মিহি চুপচাপ দাঁড়িয়ে হাত কচলাতে লাগল। আর চিন্তা করতে লাগল যে ওর মা এসব এরোনকে বলতে গেছে কেনো!
মাথা মোছার শেষে এরোন তোয়ালেটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেল। সেখানে শুকাতে দিয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “নিচে চলো। খাবার চলে এসেছে এতক্ষণে। প্রীতিরাও অপেক্ষা করছে।”
মিহি কপাল কুচকে ফেলল। মনে মনে ভাবলো, আবার ওরা এসেছে কেনো?! এখন কি বউভাতও করবে নাকি!
মিহিকে ভাবনায় ডুবে থাকতে দেখে এরোন এগিয়ে গিয়ে ওর হাত ধরলো।
মিহি হালকা চমকালো। তবে মুখে কিছু বলার সুযোগ পেল না।
এরোন ওর হাত ধরেই সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হলো।
সিঁড়ির কাছে এসে নামার জন্য এক পা বাড়ানোর আগেই চোখ আটকে গেল সামনের ড্রয়িং রুমে দাঁড়ানো এক মুখশ্রীতে। যার আশপাশ দিয়েই শুকনো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে ওর সব ফ্রেন্ডরা।
এরোনকে ওদের মধ্যে কয়েকজন ইশারায় বুঝালো, ওরা জানেনা কিভাবে উনি এখানে হাজির হলো।
যদিও ওদের দিকে এরোন তাকাচ্ছে না।
হঠাৎ থেমে যাওয়ায় মিহি প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে এরোনের দিকে তাকালো। তারপর সন্দিহান চোখে তাকিয়ে ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনের দিকে তাকালো।
সব যুবক যুবতীদের মধ্যে একজন কালো শাড়ি পরিহিতা ভদ্রমহিলা দাঁড়ানো। যার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বর্তমানে ওদের দুইজনের দিকে।
মিহি হালকা অসস্তিতে পরে জোর করেই নিজের হাতটা টেনে নিলো। কারণ বয়স্ক কারো সামনে এভাবে হাত ধরে থাকা ঠিক মনে হয় না তার। তাছাড়া অন্যরাও আছে।
এরোন ভ্রু কুচকে মিহির দিকে তাকালো।
সে হাত দুটো একত্রে ধরে এদিক ওদিক চোখ বুলাচ্ছে।
“এই মেয়ে কে? তুই কি সত্যিই একটা মেয়েকে তুলে এনে বিয়ে করেছিস? জোর করে?” অবিশ্বাস্য স্বরে প্রশ্নগুলো ছুড়ে দিলেন ভদ্রমহিলা।
মিহি অবাক, একইসাথে কৌতূহল নিয়ে ভদ্রমহিলার দিকে তাকালো।
এরোন প্রথমে তাকে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলও এখন তার মুখোভাব স্বাভাবিক। তবে ভিতরে ভিতরে চিন্তা হচ্ছে। চিন্তাটা মিহিকে নিয়ে।
“চুপ করে আছিস কেনো?” কপাল আর ভ্রু উভয়ই প্রচন্ডভাবে কুচকে ফেললেন তিনি।
আরো বললেন, “এসব কি তাহলে সত্যি? আমি যা শুনেছি!”
এরোন মুখ দিয়ে একটা নিঃশ্বাস বের করে দিলো। তারপর একহাত কোমড়ে রেখে অন্যহাতে কপাল চুলকে স্বাভাবিক গলায় বলল,”কে বলেছে?”
তিনি একটু রেগে গেলেন। হালকা ধমকে উঠলেন, “এরোন!”
এরোন গম্ভীর মুখে তাকিয়ে মিহির হাতটা নিজের হাতের মধ্যে টেনে নিয়ে বলল,”হ্যা মা। করেছি বিয়ে। ওকে।”
বলে মিহির দিকে তাকালো এরোন।
ভদ্রমহিলা অবাক হলেন না। বরং নাকমুখ শক্ত করে ফেললেন। হয়তো সবটা জেনে শুনেই এসেছেন।
মিহি চোখ বড়সড় করে ভদ্রমহিলার দিকে তাকাল। এটা তাহলে এরোনের মা!
“জোর করে?” প্রশ্ন করলেন তিনি ছেলেকে।
এরোন একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই মিহি এরোনের মাকে উদ্দেশ্য করে হালকা ক্ষুব্ধ তবে সাবলীলভাবে বলে উঠল, “হ্যা জোর করে। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে।”
ছেলের দিকে মহাবিরক্ত হয়ে তাকালেন আরোহী। অনেক অবাকও হচ্ছেন তিনি।
এরোন মিহির দিকে কড়াচোখে তাকালো।
মিহি সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও ভালই টের পেলো।
“এর শোধ আমি রাতে তুলবো তোমার থেকে।” দাতেদাত চিপে কড়া গলায় আস্তে করে বলল এরোন।
মিহি হালকা ভয় পেলেও প্রকাশ করল না।
কারণ সে আশা করছে যে এরোনের মা-ই হয়তো এই বেহায়া ছেলেকে সোজা করতে পারবে।

(চলবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here