বৃষ্টি_থামার_পরে পর্ব ৬: #চোখে_হারায়

0
483

গল্পের নামঃ #বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ৬: #চোখে_হারায়

মিহি কোথায়? অস্থিরতার সাথে বলল এরোন।
তমা একটু থতমত খেয়ে গেল।
“আমি ত জানিনা ভাইয়া।”
“তুমি অবশ্যই জানো।” নাকমুখ শক্ত হয়ে গেল এরোনের।
তমা এবার ভয় পেল।
“সত্যিই জানিনা ভাইয়া।” সাহস যুগিয়ে কোমল গলায় বলল তমা।
“আমি জানি তুমি সব জানো। কি হয়েছে ওর? ঠিক আছে ও? প্লিজ বলো।” অনেক বেশিই বিচলিত হয়ে পরলো এরোন।
তমা চুপ করে মাথা নিচু করে রইল। সে বলতে নারাজ। নাহলে মিহি আবার ফেঁসে যাবে।
এরোন বিরক্ত হয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে অন্যদিকে তাকালো। এক সপ্তাহ হতে চলল। কিন্তু কেউ ওর বিষয় কোনো খবর দিতেই পারছে না। এখন সত্যিই অনেক চিন্তা হচ্ছে ওর।
“ওর ফোন? ফোন বন্ধ কেনো? ওর অন্য নাম্বার আছে তোমার কাছে?”
“না। আমিও ফোনে পাচ্ছিনা। আরকি আমি কিছু দিনের জন্য বাসায় গিয়েছিলাম সেখান থেকে ফিরে এসে দেখি মিহি হলে নেই।” ইনিয়েবিনিয়ে মিথ্যা বলে দিল তমা। মুখোভাব এমন করে রাখলো যেন সত্যিই কিছু জানেনা সে।
এরোন ঠোঁট কামড়ে চঞ্চল চাহনির সাথে এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা কিছু চিন্তা করে বলে উঠল,”ওর বাসা কোথায়?”
তমা একটা ঢোক গিলে নিল।
তারপর কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে মেকি হেসে বলল, “সঠিক জানিনা আমি।”
“কি জানো?” ধমকে উঠলো এরোন।
তমা ভয়ে লাফিয়ে উঠলো।
এরোন নিজের মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে চোখ বন্ধ করে ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল।
চিন্তায় মাথা কাজ করছে না ওর৷ তাই মেজাজও ঠিক থাকছে না।
তাও যতটুকু সম্ভব স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করে বলল, “সরি। একচুয়ালি আমি… যাইহোক। যাও তুমি।”
তমা মাথা নেড়ে দ্রুত ক্লাসরুমে ঢুকে গেল।

সেবা একটু দূর দাড়িয়ে এসব দেখে গোপনে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। ওর এরোনের জন্য অনেক খারাপ লাগছে। ছেলেটার অবস্থা এই কয়দিনেই কেমন হয়ে গেছে। ওদিকে কিনা মিহি বাসায় ফিরে গিয়ে মহাআনন্দে আছে।
________________
__________________________

খেলাটা আজ জমছেই না। একটার পর একটা গোল বিপক্ষ দল করেই যাচ্ছে। করবে নাই বা কেনো! এরোন মাঠে নামে নি। এরোন নামে নি তাই তিমিরও নামে নি।
অতঃপর মহা হারা হারলো ওদের দল।
এজন্য ক্যান্টিনে সবার মুখে মহা বিরক্তি।
মিথুনের বিরক্তি হুরহুর করে বেড়েই চলল। সে বলে ফেলল, “কি ভাই কি শুরু করছস ক ত শুনি?”
“আর তোর কি হয়েছে? দেবদাসের মত হয়ে আছিস কেন? বেহুলা মরছে?” খিটখিটে কন্ঠে এরোনকে প্রশ্ন করলো মিথুন।
“দেবদাসের ত পার্বতী।” সরু চোখে তাকিয়ে বলল সুভাষ।
“ওই হল। একই কথা। সবই সালা মরে নাইলে অন্যডার লগে বিয়া কইরা ভাগে।”
এরোন নিজের মত চেয়ারের পিছনে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। কোনো উওর দিচ্ছে না।
“ওই লাভ লেটারওয়ালী নিখোঁজ ব্যাটা।” হাই তুলতে তুলতে মিথুনকে উওর দিল মেঘ।
“এটা ত হওয়ারই ছিলো।” তিমির তাচ্ছিল্য ভাব নিয়ে কথাটা বলল।
“মানে?” সুভাষ ভ্রু উঁচু করে নামলো।
“আরে ইদানীংকার মেয়েরা সব ফালতু। দুইদিনের জন্য তোকে ঘুরাবে। ভালোবাসি কথাটা বলবে না। যাতে পরে ছেড়ে দেওয়ার সময় অনেক মিথ্যা ড্রামা করতে পারে। আমি তোমাকে ভালোবাসি না, জীবনেও বলেছি ভালোবাসি? বলিনি ত, ব্লা ব্লা ব্লা। এরা অনেক চালাক। এজন্যই বলি রিলেশন মিলেশনে যাস না।” বলতে বলতে কফির মগে চুমুক দিল তিমির। তার মুখে এখনো তাচ্ছিল্য ভাব বিদ্যমান।
কথাটা শুনে এরোনের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলও কিছু বলল না। চুপ করেই রইল। কারণ বললেই বড়সড় ঝামেলা লাগবে।
কিন্তু মেঘ তিমিরকে বিদ্রুপ করে বলল, “সবাই তোর গার্লফ্রেন্ডের মত নাকি?”
তিমির কটমট চাহনির সাথে তাকালো।
মেঘ তাতে ঘাবড়ালো না।
ওদের থামাতে সুভাষ বলে উঠল, “এনাফ গাইজ! থাম এবার।”
তারপর এরোনকে উদ্দেশ্য করে বলল,”তুই এমনি ত অনেক কিছুই পারিস। একটা মেয়ের খোঁজ লাগাতে পারছিস না?”
এরোন মাথা হেলিয়ে রেখেই ঘাড় ঘুরিয়ে প্রশ্নাত্মক চোখে তাকালো।
“ওর বান্ধবীরা জানবেই। মিথ্যা বলছে ওরা। ঘাপলা আছে কোনো।” তদারকি করে বলল সুভাষ।
মিথুন আর মেঘও তাল মিলালো।
এরোনেরও তাই মনে হলো। কিছু জানেনা এটা ত সত্যিই অসম্ভব।
পরের দিন তমাকে আবার খুঁজে বের করলো এরোন।
তমা পরে গেল মহা বিপদে। কারণ এতদিন সে মিহির পিছনে ছিল এখন ওর পিছনে এসে জুটেছে।
তমা আবারো একই কথাই বলল যে সে কিছু জানেনা।
এরোন সেদিনের মত আজ সহজে ছেড়ে দেবে বলে আসেনি। তাই শক্ত চোখে তাকিয়ে বলল,”জানোনা নাকি জানাতে চাও না? তোমার বেনিফিটটা কি ওর থেকে আমি আলাদা হলে!”
“আ…আমার কিসের কি বেনিফিট, ভাইয়া?” আকাশ থেকে পরলো তমা।
“ম্যা ম্যা না করে বলো মিহি কোথায়?” রেগে গেল এরোন।
ভয়ে চুপসে গেল তমা।
“বাসা কোথায় ওর সেটা বলো।” কড়া গলায় বলল এরোন।
তমা বিপাকে পরে গেল। কি বলবে সেটাই চিন্তা করতে লাগল।
এরোন ওকে চুপ থাকতে দেখে এক ধমক দিল।
তাতেই ভয়ে লাফিয়ে উঠলো তমা।উভয় সংকটে পরে গেল ও।

“আমি বলছি।” পিছন থেকে বলল সেবা।
সেবার গলা শুনে তমা একটু চকিত হলো আর আস্তে ধীরে ঘাড় ঘুড়ালো।
এরোন প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে সেবার দিকে তাকালো।
“মিহি বাসায় গেছে। ময়মনসিংহ।” বলতে বলতে সেবা এগিয়ে এসে এরোনের সামনে দাঁড়ালো। তারপর মিহির বাসার পুরো ঠিকানা গরগর করে বলে দিল।
তমা তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কারণ এখন যদি সেবা বলে দেয় যে দুই বান্ধবী মিলে প্রেমের নাটকের মঞ্চ সাজিয়েছিল তাহলে ত আরো সমস্যা।
“Thanks a lot.”গম্ভীরমুখে বলেই কড়া চোখে তমার দিকে তাকালো এরোন।
তমা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে রইলো।
“আমার আরো কিছু বলার আছে।” বলল সেবা।
শুনেই তমা শিউরে উঠল। কারণ সেবা আরো মুখ খুললে ও শেষ।
তবে আর কিছু শোনার অপেক্ষা এরোন করলো না। তার আগেই চলে যেতে যেতে বলল, “পরে শুনবো।”

সেবা ওর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। ছেলেটা সত্যিই মিহিকে চোখে হারায়।
সেবা দৃষ্টি ফিরিয়ে তীক্ষ্ণ চাহনিতে তমার দিকে তাকালো।
এরোন চলে গেছে টের পেয়ে তমা তেতে উঠলো আর কটমট চাহনির সাথে সেবার দিকে তাকালো, “তোর মাথা খারাপ? ঝামেলা হবে এখন বড়সড়।”
“মাথা তোদের খারাপ। আমার না। আর মিহির উচিত ওকে সব সত্যি বলে দেওয়া। যদিও অনেক দেরি হয়ে গেছ। তোরা দুইজন মোটেও ঠিক করিস নি।” শাসিয়ে বলে উঠল সেবা।
তমা কপাল চাপড়ে কাদো কাদো হয়ে বলল, “এই ছেলে মিহির বাসায় চলে গেলে মিহির বাবা মা মিহির কি অবস্থা করবে জানিস তুই? এই ছেলে ওর বাসায় হাজির হয়ে গেলে মহা ঝামেলা হবে।”
“তোদের আগে ভাবা উচিত ছিল। এখন মিহিকে খবর দে। ওকে বল যে এরোনের সাথে আগেভাগে যোগাযোগ করতে। আর বাসার বাহিরে দেখা করে সব মিটিয়ে নিতে।” রাগী চোখে তাকিয়ে বলল সেবা।
“খবর কিভাবে দেব। সিম বদলে বসে আছে মিহি। না জানি কি হবে আজ!” মহা চিন্তায় অস্থির হয়ে পরলো তমা।
“আগে সব মিটালে এমন হত!” কপাল চাপড়ে বলল সেবা।
___________________

পড়ন্ত বিকেলে হাতে একটা পলিথিনের প্যাকেট ঝুলিয়ে মহা খুশিতে বাসায় ফিরছে মিহি। এগুলো দিয়ে সবাই নাস্তা করবে একসাথে।
এই সাত দিন মহা সুখের দিন ছিল ওর জন্য। একদম চিন্তামুক্ত দিন।
তবে তার চেয়েও মহা খুশির আরেকটা বিষয়ও ঘটে গেছে।
মিহি যে ছেলেটাকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতো তার সাথে ওর বিয়ের কথাটা পাকাপাকি হয়ে গেছে। দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার পরেই বিয়ে। এজন্যই আরো বেশিই খুশি মিহি।
ছেলেটার নাম রিজু। অনেক ভদ্র আর চুপচাপ।
ঠিক যেমনটা মিহি চায়।
উপরন্তু ছেলেটাও মিহিকে পছন্দ করে।
নিজের প্রিয় মানুষের সাথে সারাজীবন থাকার কথা চিন্তা করতে করতেই মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো মিহির।
এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে মিহি আচমকা সামনের কোনো ব্যক্তির সাথে বেশ জোরেই ধাক্কা খেল। ফলে বাম কাধে ভালোই ব্যথা পেল। লোকটা যেন পাথরের মত। একদম ফুটপাত আটকে দাঁড়িয়ে আছে। ধাক্কা দেওয়াই যেন তার লক্ষ্য ছিলো।
মিহি বেশ বিরক্ত হলো। সে মুখ দিয়ে বিরক্তসূচক শব্দ বের করে হাত দিয়ে কাধ ঘষতে ঘষতে ভ্রুকুটি করে তাকালো।
আর তাকাতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল মিহির। চোখের সামনে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে যেন আশাই করেনি মিহি। ফলে হাতের প্যাকেটটা ধপ করে মাটিতে পরে গেল।
“আ…আপনি!” ভয়ে ভয়ে বলল মিহি।
“কেনো? এক্সপেক্ট করোনি?” কড়া চোখে তাকিয়ে বলল এরোন।
মিহি ঢোক গিলে পিছিয়ে গেল।
“কি?” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো এরোন।
মিহি রীতিমতো বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। এটা স্বপ্ন না বাস্তব সেটাই চিন্তা করতে লাগল। কারণ যদি বাস্তব হয় তাহলে কপালে শনি রবি সব আছে।
“আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করো নি? আর ফোন? সেটার কি করেছো?” মোটামুটি কঠোর গলায় বলল এরোন।
ভয়ে মিহির মুখ চুপসে গেল। মিহি কল্পনাও করতে পারেনি যে এই ছেলে এতদূর চলে আসবে। ঠিকানা জানার কথা ত ছিলো না। কে জানালো!
মিহিকে ঘাবড়ে যেতে দেখে দমে গেল এরোন।
“সরি আমি ওভাবে বলতে চায়নি।” আশ্বস্ত করার চেষ্টায় বলল এরোন।
মিহি কিছু একটা চিন্তা করে হালকা চকিত হয়ে বলল, “আ..আপনি প্লিজ যান। বাবা দেখে ফেললে অনেক সমস্যা হয়ে যাবে।”
কথাটা শুনে এরোনের মেজাজ বিঘড়ে গেল। এতদিন পরে দেখা হতে প্রথম কথায় এটা বলতে হলো?
“ফেলুক দেখে।” ত্যাড়া ভাবে বলল এরোন।
শুনে মিহি চমকে গেল।
“আমাকে জানাও নি কেনো?” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেই মিহির কাছে এগিয়ে আসতে লাগল এরোন।
মিহি দ্রুত গতিতে পিছিয়ে দেয়ালের সাথে লেপ্টে গেল।
“বলো। উওর চাই আমার।” সোজাসুজি একটু দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে বলল এরোন।
বাসার সামনে ঝামেলা চায় না মিহি। তাছাড়া মিহির বাবা যদি দোতালা থেকে একবার ওদের দেখে নেয় তাহলে সব শেষ। তাই মিহি অনুনয় করে বলল, “আপনাকে আমি ফোনে সব বলবো। প্লিজ আপাতত যান। প্লিজ।”
বলতে বলতে শুধু নিজেদের বাসার মেইন গেটের দিকে তাকাতে লাগলো মিহি।
এরোন এগিয়ে এসে মিহির দুই পাশে হাত রাখল। এতেই মিহি চমকে উঠলো।
“কেনো যাব?”
“ম…মানে?”
“সাত দিন আমাকে যেভাবে টেনশনে রেখেছো এবার ত সেটার প্রতিশোধ তুলব আমি।”
“প..প্রতিশোধ!” আরো ঘাবড়ে গেল মিহি।
“এভাবে কেনো চলে এসেছো?” কটাক্ষ করে বলতে বলতে মিহির খুব কাছাকাছি চলে এলো এরোন। এতই কাছে যে এরোনের নিঃশ্বাস ওর মুখে আছড়ে পরতে লাগল।

(চলবে….)

লেখিকাঃ #Lucky_Nova

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here