মোহ_মায়া #সানজিদা_বিনতে_সফি #পর্ব_১৫

0
430

#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১৫

প্রিয় সম্রাট,,,
আজ তোমাকে তুমি করেই বলতে ইচ্ছে করছে। এই ইচ্ছে টা কিন্তু একদিনের নয়। অনেক গুলো দিন,অনেক গুলো মাস,অনেক গুলো বছর একটু একটু করে এই ইচ্ছে টা মনের ভিতর লালন করেছি। দেখো,আজ তুমি করে সম্বোধন করেই ফেললাম। আমি জানি চিঠিটা দেখে তুমি খুব অবাক হচ্ছো।হওয়ারি কথা। সামনাসামনি কথা গুলো বলতে পারতাম না। তাই চিঠির সাহায্য নিতে হলো। প্রচন্ড ভালোবাসি তোমাকে। তাই বলে আমার কষ্ট গুলো কিন্তু মিথ্যে ছিল না। আমার চোখের পানি গুলোও অভিনয় ছিল না। কষ্ট আমি পেয়েছি!গভীর রাতে তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে চিৎকার করে কেদে উঠেছি।নিজেকে ঘর বন্দি করে রেখেছি।বার বার পাগলের মতো তোমার চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা আর ভরসা খুজেছি।কিন্তু আমি কি পেয়েছি জানো?শূন্যতা? একরাশ শূন্যতা। তোমার চোখের সেই শূন্যতা আজ আমাকে পুরোপুরি গ্রাস করে নিয়েছে। দেখো,আজ তোমার ভালোবাসা পেয়েও আমি শূন্য।
হারানোর ভয় কাকে বলে তুমি জানো?প্রতি মুহুর্তে নিজের ভালবাসার মানুষকে অন্য কারো হতে দেখার কষ্ট কাকে বলে তুমি কখনো অনুভব করেছো?করনি হয়তো। করলে আমাকে কখনো এই দুঃস্বহ যন্ত্রনায় ফেলে দিতে না!আচ্ছা আমি যদি তোমার দেয়া আঘাত সহ্য করতে না পেরে নিজেকে শেষ করে দিতাম!তখন তুমি কি করতে?মরে গেছি ভেবে ভুলে যেতে নিশ্চয়ই। তাহলে এখন থেকে ভেবে নাও আমি মরে গেছি। তোমার দেয়া আঘাত আমার আত্মা কে মেরে ফেলেছে। বরই মর্মান্তিক মৃত্যু দিলে আমাকে প্রিয়।
শুনেছি যারা ভালোবাসে তারা নাকি তাদের প্রিয় জনকে খুব যত্নে রাখে।তাদের কে কোন কষ্ট পেতে দেয় না।তাহলে আমার বেলায় ভিন্ন কেন!দুজনেই তো ভালোবেসে ছিলাম। তাহলে!
আমি সহ্য করতে পারি বলেই কি আমাকে এতো কষ্ট দেয়া!যাও,তোমার সাথে বিচ্ছেদ ও আমি সহ্য করে নিলাম।মেনে নিলাম আমাদের দূরত্ব। তুমিও একটু আমার শূন্যতায় পুড়ো।আমাকে হারানোর ভয়ে তুমিও একটু কাতর হও।বিচ্ছেদের যন্ত্রনায় একটু হৃদয় নাহয় তোমারও জ্বলুক। ততদিন আমি নাহয় পাষাণ হয়েই রইলাম। যদি পথের বাকে কখনো আবার দেখা হয়ে যায় তাহলে আমি নাহয় জেনে নিবো তুমি কেমন আছো। ভালোবাসি প্রিয়। কিন্তু এখন তোমার থেকে আমার দূরত্বটাকেই বেশি প্রিয় মনে হলো।

ইতি
তোমার জীবনের অসমাপ্ত অধ্যায়।

চিঠিটা পড়ে ওইস্কির বোতলে পুনরায় চুমুক দিলো সম্রাট। গত দুই মাসে কয়েক হাজার বার এই চিঠি পড়েছে সে।প্রতিটি লাইন মুখস্ত হয়ে গেছে। তবুও সে বারবার এই চিঠিটা পড়ে। প্রচন্ড অভিমান নিয়ে লেখা এই চিঠিতে সে তার প্রেয়সীর মুখ দেখতে পায়।

ওইদিন আদওয়া তাকে না বলেই চলে গিয়েছিল। সন্ধ্যায় সম্রাট একটু বেড়িয়েছিল।সেই সুযোগে আদওয়া বাসা ছেড়ে চলে যায়।বনানী ও ওকে যেতে দেখে নি।আদওয়ার রুমে এই চিঠিটা পেতেই সম্রাটের কাছে সব কিছু পরিস্কার হয়ে যায়।
চিঠিটা পড়ে সম্রাট কিছুক্ষণ থমকে গিয়েছিল। তারপর কাওকে কিছু না বলেই বেরিয়ে যায় বাসা থেকে।

বসুন্ধরার এই ফ্ল্যাটটা সম্রাট আদওয়ার জন্য কিনেছিল।এতো দিন নিজের মতো করে প্রতিটি রুম নিজের হাতে সাজিয়েছে। ইচ্ছে ছিল বিয়ের পর আদওয়া কে নিয়ে এখানেই থাকবে। হাসিখুশি খুনসুটি ভরা সংসার হবে তাদের।কিন্তু এখন এই ফ্ল্যাট তার একাকিত্বের একমাত্র সঙ্গী। যে ছেলে জীবনে কখনো একটা সিগারেট ও খায় নি আজকাল সে বড় বড় ওইস্কির বোতল এক নিমিষেই খালি করে দেয়।
সম্রাটের বাবা মা ছেলের এমন অবস্থা দেখে প্রচুর ভেঙে পরেছে।যুথি বেগম সারাদিন কান্নাকাটি করতে থাকে। মেয়েটার এমন পরিনতির পর ছেলের এমন অবস্থা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা। বিজনেস এখন যুবরাজ দেখাশোনা করে। সারা দিন অফিস করে রাতে একবার ভাইয়ের কাছে আসে।ভাইয়ের অবস্থা দেখে চোখ ভরে উঠে তার।যে ভাই কোন দিন এক ওয়াক্ত নামাজ কাযা করে নি সে আজ মাতাল হয়ে ঘরের এক কোনায় পরে থাকে।

হঠাৎ করে রুমে আলো জ্বলে উঠতেই চোখ মুখ কুচকে বন্ধ করে ফেললো সম্রাট।হাতের চিঠিটা ভাজ করে পকেটে ভরে হেলতে দুলতে উঠে দাড়ালো। দুই এক কদম ফেলতেই তাল হারিয়ে পড়ে যেতে নিতেই যুবরাজ এসে আঁকড়ে ধরলো। আস্তে করে খাটে বসিয়ে দিয়ে চেয়ার টেনে তার সামনে বসলো।

– এভাবে আর কতো দিন চলবে ভাই?

খাটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে ছিল সম্রাট।যুবরাজের কথায় চোখ খুলে তাকালো তার দিকে।

– যত দিন আমি বেচে আছি।(নির্লিপ্ত ভাবে)

ভাইয়ের জবাবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো যুবরাজ। আপাতত একে বুঝিয়ে কোন কাজ হবে না।যা করার কাল সকালে করতে হবে।

🌸

– একটু বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেললি না ভাইয়াকে?

তানিয়ার কথায় ওর দিকে ঘুরে তাকালাম আমি। আমরা এখন কক্সবাজার আছি।আমার ছোট ফুপির বাসা কক্সবাজার। ওইদিন সম্রাট ভাইয়ার মুখে সব কিছু শুনে ও কেন জানি আমি তাকে ক্ষমা করতে পারি নি। তাই বাবার সাথে যোগাযোগ করে ফুপির কাছে চলে আসি।যদিও আমাকে ভাইয়া দিয়ে গেছে এখানে। মায়ের প্রতি তীব্র অভিমানে আর বাসায় যাই নি।এখানেই একটা কলেজে এডমিশন নিয়েছি।আমার পিছন পিছন আমার সৈন্য সামন্ত ও এখানে হাজির।যদিও প্রিয়া আসে নি।পরিবারে এমন একটা ঘটনার পর সবাই ওকে দূরে পাঠাতে নারাজ। তাই ওকে ওখানেই থাকতে হলো। ওহিদ,তৌহিদ, তানিয়া আমার কাছে চলে এসেছে। এমন বন্ধু পাওয়া সত্যিই ভাজ্ঞের ব্যাপার। আমি কয়েক দিন ফুপির বাসায় ছিলাম।তারপর তানির সাথে হোস্টেলে উঠে গেছি।

– কি ভাবছিস?

তানির কথায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,

– আমার মনে হয় না আমি কোন ভুল করেছি।তার দিক থেকে হয়তো সে ঠিক আছে। কিন্তু আমি তাকে ক্ষমা করতে পারছি না। আমার সেই দুঃসহ দিন গুলো আমি ভুলতে পারি না। তাকে হয়তো ক্ষমা করে দেয়া যেতো। কিন্তু আমি চাই সে হারানোর ভয় বুঝুক।

– মানুষ কে ততটুকুই আঘাত করা উচিত যতটা সে সইতে পারবে। আমরা সবাই জানি সম্রাট ভাইয়া তোকে কতটা ভালোবাসে।তোকে আগে থেকে সব কিছু না জানানো তার ভুল ছিল। তাই বলে এতো বড় শাস্তি!এর পড়ে তার সাথে চোখ মিলাতে পারবি তো?তাকে জীবন থেকে একেবারে মুছে ফেলতে পারবি তো? তাকে তার খারাপ সময়ে ছেড়ে আসার যে ভুল তুই করেছিস তার জন্য যদি সে তোর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়?তখন কি করবি?

তানির কথায় বুক কেপে উঠলো আমার।আমি তাকে শাস্তি দিতে চাই। আমার শূন্যতা তাকে অনুভব করতে চাই।তবে তাকে ছাড়া বাচতে চাই না।

আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে তানি আবারো বললো,

– শাস্তি সামনে থেকে ও দেয়া যায় আদু।আর ভাইয়া বলেছিলেন তোর দেয়া সমস্ত শাস্তি মাথা পেতে নিবে।তবুও তাকে ছেড়ে না যেতে।তুই কি করলি!তার দুর্বলতায়ই আঘাত করলি।আমি জানি না তুই কি চাস।তবে আমার মনে হয় তুই ভুল করেছিস।

আমি ছলছল চোখে তানির দিকে তাকাতেই ও উঠে চলে গেলো। আমি কি মানুষটাকে বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেললাম। তাকে কি মাফ করে দেয়া যেতো না!
তখনই নিজের ভিতর থেকে আওয়াজ আসলো, না।মাফ করা যেতো না। তার ও একটু কষ্ট পাওয়া উচিত। আমি একাই কেন সব সময় কষ্ট পাবো।

চলবে,,,,

( দু এক লাইনের মন্তব্য আশা করছি।ভালোবাসা সবাইকে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here