#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_২৪
আপনি কি আমাকে প্রোপোজ করলেন??
আমি ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করতেই সম্রাট ভাইয়া কাতর চোখে তাকালেন। দেখে মনে হচ্ছে আমার কথায় সে যথেষ্ট হতাশ।
— না তোহ।আমি তো মজা করছিলাম। তুই সিরিয়াসলি নিস না এই সব।
আমি হা করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। কতো বড় দুই নাম্বার লোক।প্রপোজ না করেই অযথা চুমু খাওয়ার মানে কি!
— আপনি আমাকে প্রপোজ না করেই চুমু খেয়ে নিলেন!(অবাক হয়ে)
— তোকে চুমু খেতে হলে এখন আমাকে প্রপোজ করতে হবে?কোন এলাকার নায়িকা তুই?তোকে চুমু খেয়ে যে আমি আমার ঠোঁটের ভার্জিনিটি নষ্ট করলাম তার বেলায়।ইসসস,সর তো সামনে থেকে।আমার ঠোঁট কলংকিনি হয়ে গেলো। এই ঠোঁট আমি কাকে দেখাবো??
আদওয়া কে ভরকে যেতে দেখে মিটমিটিয়ে হাসছে সম্রাট।মেয়েটা এতো বোকা কেন?
সম্রাট ভাইয়ার কথা শুনে চোয়াল ঝুলে গেলো আমার। কতো বড় ফাউল কথা! বলি আমি কি চুমু খাওয়ার জন্য মরে যাচ্ছি নাকি!কথা শুনে গা জ্বলে যাচ্ছে। আমি রেগে দাত কিড়মিড় করতে করতে বললাম,
— একদম বাজে কথা বলবেন না।আমি মোটেও আপনার সাথে এই সব করতে চাই নি। আপনি ই,,,,
— আমি ই কি?
আমাকে কথার মাঝেই থামিয়ে দিয়ে আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললো।সম্রাট ভাইয়া কে এতটা কাছে দেখে আমার বুক ধুকপুক শুরু করে দিয়েছে।মন কে ও বলি হারি।এই লোক কে দেখে এমন নাচানাচি করার কি আছে! যত্তসব।
— দেখুন,, (কাপা কাপা গলায়)
— নাহ।এখন কিছু দেখবো না।আমার মুড নাই।
— কি সব আবোল তাবোল বলছেন।(অবাক হয়ে) দ দূরে সরে দাড়ান।
আমার কাপা কাপি দেখে সম্রাট ভাইয়া মুচকি হেসে দূরে সরে দারালো। ওয়াশ রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
— খুব শীঘ্রই আমরা এক হচ্ছি জান।নিজেকে প্রস্তুত করে ফেল।এর পর থেকে প্রতিদিন ই আমার ঠোঁটের ভার্জিনিটি নষ্ট হবে।
ঠোঁট কাটা লোক একটা। এভাবে নির্লজ্জের মতো করে বলার কি হলো। আমি যে লজ্জা পাচ্ছি তা কি বুঝতে পারছে না!
🌸
চেহারার এমন হাল কেন করছোস মামা।কি হইছে তোর? বউ মরছে?শুটকি মাছের মতো শুখায় গেছোস ক্যা বাল।
তানির বাংলা ভাষার এমন ভয়ংকর প্রয়োগ দেখে বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে তৌহিদ। মেয়েটা সব সময় এমন করে কথা বলে। মেয়ে মানুষের কথা হবে সুন্দর,শ্রুতিমধুর। আর এই মেয়ের কথা শুনলে মনে হয় বাংলা ভাষার ইজ্জত লুটে নিচ্ছে।
— তুই এমন কইরা চাইয়া রইলি ক্যা।তোর ভাইয়ের মতো তোর ও কি বান্ধুবিরে ভালাবাসার চুলকানি হইছে নি?
— ঠিক করে কথা বল তানিয়া।এগুলো কোন ধরনের ভাষা! আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই তোর কথা শুনে। একটা ভার্সিটিতে পড়াশোনা করা মেয়ের মুখের ভাষা এমন নর্দমা মার্কা কিভাবে হতে পারে!
তৌহিদের বিরক্তিকর কন্ঠ শুনে হু হা করে হেসে উঠলো তানিয়া।যেন খুব মজার কোন জোক বলা হয়েছে।
— ধুর বেডা।এই সব মেনার্স দিয়া কি হইবো। বন্ধুদের সাথে এতো ফর্মালিটি নিয়া কথা কইতে পারুম না। হুনতে ভালো না লাগলে চুপ কইরা থাক।কাহিনি করবি না।
তৌহিদ দুই দিকে মাথা ঝাকিয়ে নিজের বিরক্তি সরানোর চেষ্টা করছে। এই মেয়ের সাথে কথা বলা না বলা সমান।
— আহা বাদ দে দোস্ত।তোর কি খবর বল।
— কি আর খবর? ভালোই আছি।(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
তানির কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকালো ওহিদ। এই ছটফটা মেয়েটার ভিতর চাপা কোন কষ্ট আছে এটা ওরা সবাই জানে।তবুও কিছু করার নেই।যতক্ষণ ও নিজের থেকে কিছু না বলবে ততদিন কিছুই করার নেই।
সবার ভিতরেই কোন না কোন চাপা কষ্ট আছে।কারোর টা সামনে আসে আর কারোর টা ভিতরে গোপনে থেকে যায়।
🌸
স্যার ওই মেয়ের খবর পেয়েছি।কক্সবাজার আছে। সাথে ওর বন্ধুরা ও আছে।চেয়ারম্যান এর ছেলে ও এখানেই আছে। সাথে কিছু ছেলে পেলেও আছে।
লোকটার কথা শুনে কপাল কুচকে ফেললো মারিয়ার বাবা। এতো দিন মেয়েটা লাপাত্তা ছিল।এখন যখন পাওয়া গেলো তখন তার সাথে পুরো সৈন্য সামন্ত হাজির।
বিরক্তি তে মুখ থেকে ‘চ’ শব্দ বেরিয়ে এলো তার।মনে মনে সম্রাট কে অশ্রাব্য কিছু গালি দিয়ে ওই লোকটা কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
— ওদের উপর নজর রাখ।এখনি কিছু করতে হবে না। কিছু দিন যাক।তারপর আমি সঠিক ব্যবস্থা নিবো।এর আগে ওদের প্রত্যেক টা খবর আমার চাই।কোন কিছু যেন বাদ না পরে।
— আচ্ছা স্যার।
ছেলেটা ফোন কাটতেই মারিয়ার বাবা বিশ্রী ভাবে হেসে উঠলো। তার ছেলে মেয়ে কেউ ই যে আর বেচে নেই এটা সে অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে। তবু্ও চুপ করে আছে। শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা। সব কয়টা কে নিজের জায়গা দেখাবে সে।
আর আদওয়া,,,, এই মেয়ের অবস্থা এমন করবে যে সম্রাট নিজেই এই মেয়ের মৃত্যু কামনা করবে।প্রতি টা দিন একটু একটু করে মারবে।হাজার লোকের ভোগের বস্তু হবে সম্রাটের প্রেয়সী। আর তার লাইভ টেলিকাস্ট হবে সম্রাটের চোখের সামনে। তবেই তার কলিজায় শান্তি মিলবে তার আগে না।
ওয়াইন এর বোতলে চুমুক দিয়ে নিজের মনে ছক কষতে লাগলো সে।
🌸
সায়েম ভাইয়া আমার দিকে গোল গোল করে তাকিয়ে আছে। তার এমন তাকানো দেখে আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে। আমি হালকা গলা পরিস্কার করে বললাম,
— কিছু বলবে ভাইয়া? এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
— দুনিয়া ধ্বংস হতে বেশি দেড়ি নাই রে আদু।কলিকাল চলে আসছে।চোখের সামনে আরো কতো কি যে দেখতে হবে কে জানে।(আফসোস করে)
— কেন?কি হয়েছে আবার?(ভ্রু কুচকে)
— কি হয় নি বল।আমার চোখের সামনে আমার বোন কে নিয়ে আধ ঘন্টা দরজা বন্ধ করে রাখে।এতো বড় সাহস! ভাব একবার। মানুষ কি বলবে!আমি ভাই হয়ে এই অবিচার মেনে নিতে পারছি না। আমি এর একটা বিহিত করেই ছারবো আজ।
ভাইয়ার কথা শুনে লজ্জায় আমার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বেরুচ্ছে। ছি ছি ছি। সম্রাট ভাইয়া কে এখন আমার খুন করতে ইচ্ছে করছে। এই মানুষটার জন্য এখন আমাকে এই লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পরতে হলো।
আমাকে এভাবে দেখে হয়তো ইসহাক ভাইয়ার মায়া হলো। সে সায়েম ভাইয়া কে এক ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলো। সায়েম ভাইয়া তবুও আহাজারি করেই যাচ্ছে। আমার মন চাইছে মাটি ফাক করে এর মধ্যে ঢুকে পরি।
আমার ফোনটা হয়তো আমার পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছ। তাই বেজে আমাকে এখান থেকে পালাতে সাহায্য করলো। আমি ফোনের বাহানা দিয়ে ওখান থেকে চলে আসলাম।
— হ্যালো। আমি বিল্ডিংয়ের নিচে খারায় আছি দোস্ত।তুই কই?
— আমি আট তালায় আছি।তুই উপরে চলে আয়।সম্রাট ভাইয়া আমাদের দিয়ে আসবে।আর আজকে আমাদের এখানেই খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
— আইতাছি বান্দুপি।অনেক দিন ভালো কইরা খাওয়া হয় না। আইজকা মন ভইরা খাওয়া হইবো। ওই আদু,ওহিদ, তৌহিদ রে ও আইতে কই।
— ওরা আসবে।তুই আয়।
— আইয়া পরছি মামা।ফ্ল্যাট কোনটা?
— 8A।
— দেখছি।
কলিং বেল বাজতেই ইসহাক উঠলো দরজা খোলার জন্য। দরজা খুলতেই তানির হাসি হাসি মুখ টা একদম চুপসে গেলো। পরিচিত মুখটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নির্বিকার ভাবে চোখ সরিয়ে নিলো।
যেই মানুষটা চোখ থেকে শুধু অশ্রু ঝরায়,চোখের দৃষ্টি ওই মানুষটার দিকে যাওয়া ঘোর অন্যায়।
ইসহাক এখানো এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তানিয়ার দিকে।মেয়েটা আগের থেকে অনেকটা শুকিয়ে গেছে। নিজের যত্ন নেয়না হয়তো ঠিক মতো।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা থেকে সরে দারালো ইসহাক।
চলবে,,,
(রি চেক করা হয় নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।সবাইকে ভালোবাসা। নামাজ কায়েম করুন।)