#মোহ_মায়া
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_২৮
দিনের আলো ফুরিয়ে আধার নেমে এসেছে ধরনীর বুকে।চারিদিকে ভয়ংকর নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।
ইনানী বিচ থেকে কলাতলি পর্যন্ত সব জায়গায় আদওয়া কে খোজা হচ্ছে।
পুলিশ থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ও সার্চ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আদওয়ার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। যেন হুট করেই গায়েব হয়ে গিয়েছে।
হিমছড়ি রোডে গাড়ি থামিয়ে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে সম্রাট। বন্ধ চোখ থেকে অনবরত পানি গড়িয়ে পরছে।সারাদিন আদওয়াকে খুজতে খুজতে পাগল প্রায় অবস্থা সবার। সম্রাটের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। চোখ মুখ ভয়ংকর ভাবে লাল হয়ে আছে।
— চিন্তা করিস না ভাই।আমরা আদু কে খুব তারাতাড়ি খুজে বের করবো। তুই আগে নিজেকে একটু শান্ত কর।
সুমনের কথা শুনে চোখ খুললো সম্রাট।সকাল থেকে আদওয়া কে পাওয়া যাচ্ছে না। কিভাবে শান্ত করবে নিজেকে!কোথায় আছে? কে নিয়ে গেছে কোন আইডিয়া নেই।কোথায় খুজবে কিছু জানে না। তৌহিদের অবস্থা খুব একটা ভালো না।ওকে ঢাকা পাঠানো হয়েছে। ওহিদ আর প্রিয়া তৌহিদের সাথেই গেছে।তানিয়া হাজার বার বলেও পাঠানো যায় নি। ও আদু কে ছাড়া যাবে না। রাব্বির অবস্থা পাগল প্রায়। সব জায়গায় পাগলের মতো ছুটে চলেছে বোনের জন্য।
অতীত,,
সকালে তৌহিদকে এই অবস্থায় দেখে সবার হুস উড়ে গিয়েছিল।তার উপর যখন জানতে পারে আদওয়া নিখোঁজ তখন সবার পাগল হওয়ার অবস্থা। তৌহিদ কে দেখবে না আদওয়া কে খুজবে!
রাব্বি একটা গাড়ি ঠিক করে ওহিদ কে দিয়ে তৌহিদ আর প্রিয়া কে পাঠিয়ে দিলো হসপিটালে।তানিয়া আর সে নিজে আদওয়া কে খুজতে লাগলো।
সম্রাটের কথা মনে হতেই তানিয়া তারাতাড়ি সম্রাট কে কল করলো।
দুইবার কল করার পরেও যখন সম্রাট কল রিসিভ করলো না তখন বাধ্য হয়ে ইসহাক কে কল করলো। দুই বার রিং হতেই ইসহাক কল রিসিভ করলো,,,
— মন!তুমি আমাকে কল কিরেছো!আমার বিশ্বাস হচ্ছে না!
ইসহাকের কথা শুনে তানিয়া প্রচন্ড বিরক্ত হলো। ঝাজালো গলায় বললো,
— সম্রাট ভাইয়া কোথায়? আমার ফোন কেন রিসিভ করছে না? (চিৎকার করে)
তানিয়ার চিৎকার শুনে ইসহাক থতমত খেয়ে গেলো।
— কি হয়েছে মন!এভাবে কথা বলছো কেন!
— আপনি সম্রাট ভাইয়া কে এখুনি আমাকে কল করতে বলুন। এখন মানে এখন।
তানিয়া কল কাটতেই ইসহাক হতভম্ব হয়ে গেলো। নিজেকে কয়েক সেকেন্ড নিয়ে ধাতস্থ করে সম্রাটের কেবিনের দিকে ছুটল।সম্রাট একটা মিটিং এ ছিলো। তাই ফোন রিসিভ করতে পারে নি।ইসহাক কে এভাবে ঢুকতে দেখে হচকচিয়ে গেলো সে।
— কি হয়েছে? এমন লাগছে কেন তোকে?
— তানিয়াকে কল কর তারাতাড়ি। মনে হয় কোন ঝামেলা হইছে।
ইসহাকের কথা শুনে সম্রাট তারাতাড়ি নিজের ফোন চেক করলো। তানিয়ার এতো গুলো কল দেখেই বুক টা ধুক করে উঠলো।
তানিয়া কে কল করতেই তানিয়া কান্না করতে করতে একে একে সব বললো সম্রাট কে। সব কিছু শুনে পাথরের মতো দাড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। ইসহাকের ধাক্কায় হুস ফিরতেই মিটিং ফেলে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো হোটেল থেকে। সুমন কে তৌহিদের জন্য রেখে সায়েম আর ইসহাক কা নিয়ে চলে গেলো ইনানীর দিকে।রাস্তায় পুলিশ কে কল করে সব কিছু জানালো।
বর্তমান
ফোনের শব্দে ধ্যান ভাংলো সম্রাটের। স্ক্রিনে মারিয়ার বাবার নাম্বার দেখে কপাল কুচকে গেল তার।
— হ্যালো।
— ভালো আছো তো বাবাজীবন। দিনকাল কেমন চলে?
কথা গুলো বলেই কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো মারিয়ার বাবা।
সম্রাট শান্ত হয়ে শুনছে।
— প্রেমিকা হারিয়ে গেছে বুঝি?আহা খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে নাকি বাবাজীবন।
— আদওয়া কোথায়?
সম্রাটের শান্ত গলা শুনে অবাক হলো মারিয়ার বাবা। কিন্তু ছেলে আর মেয়ের কথা মনে হতেই তেজি কন্ঠে বললো,
— বেচে দিয়েছি।একটু আগেই বেচে দিয়েছি।খুব কচি মাল ছিলো। কাস্টমার দেখেই পাগল হয়ে গেছে নেয়ার জন্য। সাথে সাথে বেচে দিয়েছি। এতক্ষণে হয়তো কয়েকবার মধু খাওয়া ও হয়ে গেছে।
বলেই বিশ্রী ভাবে হাসলো মারিয়ার বাবা। সম্রাট দাতে দাত চেপে শুনলো।
— পীপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে।তোর ও শেষ সময় চলে এসেছে। ছেলে মেয়েদের মতো তোর যাওয়ার ও সময় হয়ে গেছে। চিন্তা করিস না।যত মজা করার করে নে।খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে।
এতক্ষণ সবাই সম্রাটের দিকে তাকিয়ে ছিলো। কারোই বুঝতে সমস্যা হলো না যে, যারা আদওয়া কে নিয়ে গেছে তাদের কেউই কল করেছিলো। ফোন রাখতেই কয়েক জোরা উৎসুক চোখ তাকিয়ে আছে তার দিকে।ফোনের দিকে চোখ যেতেই হঠাৎ করে তৌহিদের মেসেজ চোখে পড়লো সম্রাটের।
মেসেজ ওপেন করে তৌহিদের লেখা পড়তেই চোখ বন্ধ করে ফেললো সে।এখন নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে।
কাওকে কিছু না বলেই গাড়ি নিয়ে চলে গেলো সম্রাট।সবাই অবাক হয়ে সম্রাটের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কি হলো এটা!
🌸
অন্ধকার রুমে খাটের ওপর শুয়ে আছে আদওয়া।এখনো জ্ঞান ফিরেনি তার।পাশেই কিছু মানুষের কথা শুনা যাচ্ছে। বিদঘুটে গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা। মেয়েদের হাসা হাসি শুনে আন্দাজ করা যায় এটা কোন জায়গা।
— মাইয়ার জ্ঞান ফিরে না কেন? পানি মাইরা উঠা তারাতাড়ি। ধান্দার টাইমে এমনে হুইয়া থাকলে কাম করবো কেমনে।বিউটি,,,
পতিতা পল্লীর সর্দারনীর ডাক মডেলের মতো একটা মেয়ে এসে আদওয়ার চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো। কয়েকবার পানি ছিটাতেই পিটপিট করে চোখ খুললো আদওয়া।
চোখ খুলতেই নিজেকে অজানা জায়গায় আবিস্কার করলাম। সামনের মহিলাটার দিকে আবছা চোখে তাকালোম।মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা করছে। মুখ দিয়ে অস্পষ্ট করে আহ বেরিয়ে যেতেই মহিলা টা কর্কশ গলায় বললো,
— নাটক কইরা লাভ হইবো না মাইয়া।তারাতাড়ি রেডি হইয়া লও।কাস্টমার বাইরে দাড়ায় আছে।দশ মিনিট সময় দিলাম।এর মধ্যেই নিজেরে তৈরি কর।কোনো কাহিনি করবি না।
মহিলার দিকে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। কি বলছে এই সব।
— কে আপনি? আমি এখানে কেন?
— হোন মাইয়া।তোরে এইহানে বেইচা দিছে।আইজ থেকা তুই এইহানেই থাকবি।কাস্টমার আইলেই হেগোর সব কতা হুনবি।হেরা তোরে একটু আদর সোহাগ করবো। মাগনা করবো না।টেকা পাবি।কোন চালাকি করবি না। নাইলে আমারে তো চিনোছ না।গলা কাইটা সাগরে ভাসায় দিতে সময় লাগবো না আমার।ওই বিউটি, ওরে সব কিছু বুঝায় রেডি কইরা নিচে লইয়া আয়।আইজকাই ওরে নিলামে উডাইতে হইবো।
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছি।চোখ থেকে অনাবরত পানি পরছে।ভয়ে আমার রুহ কেপে উঠছে।কি হবে আমার সাথে!শেষে কি আমার নামের পাশে পতিতা নাম উঠতে চলছে! আল্লাহ রক্ষা করো আমাকে।
— কাইন্দা লাভ নাই মাইয়া।এইডা পইরা রেডি হইয়া যাও।নইলে ম্যাডাম মাইরা হাড়গোড় ভেঙ্গে দিবো।
বিউটি নামের মেয়েটা আমার দিকে পাতলা একটা ড্রেস ছুরে মারলো।ড্রেস টা দেখেই আমার গা গুলিয়ে উঠলো।
— আমি এই সব কিছুই করবো না।আমাকে মেরে ফেললেও পরবো না এই সব জামাকাপড়। ছিঃ।গিয়ে বলে দাও তোমার ম্যাডাম কে।
চিৎকার করে কথা গুলো বলতেই মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হলো।
মাথা ধরে আর্তনাদ করতেই ওই মহিলা এসে আমাকে কষিয়ে থাপ্পড় মারলো।থাপ্পড় টা এতো জোরে ছিল যে আমি হুমড়ি খেয়ে খাটের সাথে বারি খেলাম।সাথে সাথেই মাথা ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে গেলো। আমি নিভু নিভু চোখে তাকাতেই মহিলার ভয়ংকর লাল চোখ দেখেতেই চোখ গুলো বন্ধ হয়ে গেলো।
চলবে,,,
(রিচেক করা হয় নি। বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন। আইডিতে সমস্যা হচ্ছে তাই গল্প দিতে দেরি হচ্ছে। নতুন বছরে আল্লাহ আমাদের সকলের পুরনো গুনাহ গুলো মাফ করে দিক।)