গল্পের নাম : #বৃষ্টি_থামার_পরে
পর্ব ১৮: #i_want_a_kiss
লেখিকা: #Lucky_Nova
রাতের গভীরতা বেড়েই চলেছে। কিন্তু এরোনের চোখ নির্ঘুম। আজ যেন ঘুম আসছেই না। এদিকে মিহি ঘুমিয়ে পরেছে অনেকক্ষণ হয়েছে।
ওর ঘুমন্ত মুখের দিকেই তাকিয়ে দেখছে এরোন।
তবে দেখার মাঝখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু চুল।
ওর ঘুমন্ত মুখের উপর এসে পারি জমিয়েছে তারা।
এরোন গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিছানার আরো কোনায় এগিয়ে এলো। তারপর স্মিত হেসে হাত বাড়িয়ে চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিলো।
‘আমার ঘুম হারাম করে নিজে শান্তিতে ঘুমাচ্ছ।’ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বিড়বিড়িয়ে বলল এরোন।
মিহি নড়েচড়ে ঘুমের মাঝেই উল্টো পাশ ঘুরলো।
এরোন কপাল কুচকে ফেলল।
ঘুমের মধ্যেও মেয়েটা ঘাড়ত্যাড়া।
এরোন মুখ দিয়ে একটা নিঃশ্বাস বের করে দিলো। তারপর চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। কোনো মতে ঘুম আসছে না।
এরোন ফোনে সময় দেখলো।
ঘড়ির কাঁটা দু’টো ছুইছুই।
ফোন রেখে মিহির দিকে তাকালো ও।
সে উল্টোদিকে ঘুরে মহা ঘুম ঘুমোচ্ছে।
এরোনের মনে হলো ওর পাশে গিয়ে শুয়ে পরলেই ঘুম আসবে।
নেমে পরলো সে বিছানা থেকে। অতঃপর মিহির পাশে অবশিষ্ট অল্প একটুখানি জায়গাতে শুয়ে ওর সাথে একই কম্বলে ঢুকে পরলো।
মিহি উল্টোদিকে ঘুরে থাকায় আলতো হাতে অতি কৌশলে মিহিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো এরোন।
হালকা শীত শীত আবহাওয়ায় শরীরের উষ্ণতা পেয়ে মিহি ঘুমের আবেশেই এরোনের বুকের মধ্যে চলে এলো।
এরোন স্মিত হেসে ওকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো।
🌸
সকাল সকাল এরোনের ঘুমই আগে ভাঙলো।
চোখ মেলেই মিহির ঘুমন্ত মুখটা দেখে মৃদু হাসলো ও। তবে ওর ঘুম ভাঙার আগেই উঠে পরা দরকার। নাহলে এই মেয়ে ঝামেলা বাধিয়ে ফেলবে।
এরোন আস্তে করে মিহির মাথার নিচ থেকে নিজের হাতটা বের করে নিলো।
তারপর সরে জন্য উঠতে যেতেই বুঝলো মিহি বেশ ভালো ভাবেই ওর কোমড়ের কাছের টি-শার্ট আঁকড়ে ধরে ঘুমাচ্ছে।
এরোন সেদিকে লক্ষ্য করে নিঃশব্দে হাসলো। মাথা হালকা জাগিয়ে হাতের দিকে তাকালো। তারপর আলতো হাতে মিহির হাত ছাড়াতে না ছাড়াতেই পুনরায় জড়িয়ে ধরে আরো কাছে এগিয়ে এলো মিহি।
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল এরোন।
আর চেষ্টা করলো না সে। বরং হাল ছেড়ে দিয়ে আবার বালিশে মাথা নামালো।
দুজনেই মধ্যে দূরত্ব নেই বললেই চলে। খুব কাছে এসে পরেছে মিহি। দুজনেই একই বালিশে।
মিহি ঘুমন্ত মুখটা একদম এরোনের মুখের সামনে।
ঠোঁট জুড়ে সূক্ষ্ম হাসির রেখা নিয়ে বিমোহিত দৃষ্টিতে মিহির দিকে তাকিয়ে রইলো এরোন।
তাকিয়ে থাকতে থাকতে এক পর্যায়ে অদ্ভুত রকমের ইচ্ছে উদয় হলো মনে। হৃদস্পন্দনের গতি বাড়তে শুরু করল।
মনকে সায় দিয়ে মিহির গালে হাত ডুবিয়ে দিলো ও।
আলতো করে বুড়ো আঙুল দিয়ে ওর ঠোঁট ছুয়ে দিতে লাগল।
অতঃপর ওর ঠোঁটের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঠোঁট এগিয়ে নিলো ও।
তপ্ত নিঃশ্বাস মিহির মুখ জুড়ে আছড়ে পরতেই মিহি চোখ বন্ধ অবস্থাতেই ঈষৎ কপাল কুচকে ফেলল।
তারপর চোখ খুলেই দ্রুত ধরফর করে উঠে বসে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
বড়বড় শ্বাস নিতে নিতে কম্বলটা আঁকড়ে ধরল ও।
কপালে ভাঁজও চলে এলো।
মিহি সরে যেতেই এরোনের সম্বিত ফিরল।
এরোনও উঠে বসল। গোলমেলে গলায় বলল,”সরি আমি আসলে…”
“আপনি আসলে কি?” চাপা গলায় বলতে বলতে কম্বলটা দুহাতে আরো আঁকড়ে ধরলো সে।
এরোনের নিজের উপর নিজের বিরক্ত লাগতে লাগলো। আসলে ও এভাবে ওর কাছে আসতে চায়নি।
“দেখো আমি…।”
“প্রথমে ত হাত ধরা অব্দি ছিলো, তারপর জোর করে হুটহাট কোলে তোলা, কাছে আসা, আর এখন ত সরাসরি আমার থেকে সুযোগই নিতে যাচ্ছিলেন আপনি। এর পরে কিনা আমার সাথে…।” ফুসে উঠলো মিহি।এরোনের মুখের দিকে তাকালো না ও। গা রি রি করছে রাগে ওর।
এতসময় শান্ত থাকলেও শেষোক্ত কথাটা এরোনের মেজাজ বিঘড়ে দিলো।
মিহি অর্ধেক বলে থেমে গেলেও এরোন রেগে ওর অসম্পূর্ণ লাইনটা সম্পূর্ণ করে বলে ফেলল।
মিহি শিউরে উঠে এরোনের দিকে তাকালো।
“ছি! আপনার..।” বলতে বলতে আরো সরে বসলো মিহি।
লজ্জায় কান লাল হয়ে যাবার উপক্রম হলো ওর। মুখ না অন্যকিছু! নির্লজ্জ লোক সত্যিই। নাহলে এভাবে বলে কিভাবে!
“এতই যখন লজ্জা তখন আবার তোলো কেন এই ধরনের কথা?” রেগে ত্যাছড়া ভাবে বলল এরোন।
আরো বলল,”তোমার সাথে ভালো ভাবে হবে না কিছু। তাই যা করার ত্যাড়াভাবেই করবো।”
“ম..মানে!” সরে বসল মিহি।
“আ…আপনি না বলেছেন আ..আমাকে জোর করে কিছু করবেন না?” হকচকিয়ে গেল মিহি।
“সেটার মধ্যে হাত ধরা, কোলে তোলা, জড়িয়ে ধরা, একসাথে ঘুমানো আর কিস এগুলো ইনক্লুড না। এগুলো করবো। নাহলে তোমাকে দিয়ে আমার কি লাভ?” ত্যাছড়া ভাবে বলল এরোন।
মিহি ভারি চমকালো।
“ক..কি লাভ মানে?”
এরোন ব্যঙ্গ করে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। তারপর ভ্রু কুচকে বলল, “বোঝোনি? বুঝিয়ে দেব।”
মিহি ভয়ে আরো সরে গেল।
“এর পর থেকে উল্টোপাল্টা কথা বলে দেখো খালি।” কটকটে গলায় চোখ পাকিয়ে বলল এরোন।
মিহি শুকনো ঢোক গিলল।
এরোন উঠে দাঁড়ালো আর একই ভঙ্গিতে বলল,”বিছানা গুছাও। তারপর ফ্রেস হও।”
মিহি নিজের রাগ দমালো। তারপর মেঝেতে দৃষ্টি রেখে থমথমে গলায় বলল, “আজ বাসায় যাবার কথা।”
এরোন বেরিয়ে যাচ্ছিলো, মিহির কথাটা শুনে থেমে দাঁড়ালো।
মিহির দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলল,”নিয়ে গেলে অশান্তি বাঁধিয়ে ফেলবা তুমি। সবকিছু অনেক কষ্টে ঠিক করেছি আমি।”
“মানে? নিয়ে যাবেন না?” তেতে উঠে দাঁড়িয়ে গেল মিহি।
“আপনি কি সারাজীবন আমাকে এভাবে আটকে রাখবেন!” রাগী প্রশ্নসূচক দৃষ্টি মিহির।
এরোন গম্ভীর মুখে তাকিয়ে এগিয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়ালো। তারপর নিজের ফোনটা ওর দিকে এগিয়ে দিলো।
মিহি চোখ সংকুচিত করলো।
“আপাতত আগে ফোন করে কথা বলে নেও।” বলল এরোন।
শোনার সাথে সাথে খপ করে ফোনটা নিলো মিহি। কথা বললটা সত্যিই দরকারি। অনেক দিন ত হলো।
নাম্বার তুলতে তুলতে বারান্দার দিকে পা বাড়াতে লাগলো মিহি।
এরোন এগিয়ে গিয়ে এক বাহু টেনে দাঁড় করালো ওকে।
মিহি অপ্রস্তুত হয়ে কিছু বলার আগেই এরোন বলল, “আমার সামনে কথা বলবা। যদি মুখ দিয়ে একটাও ফালতু কথা বের করো বিয়ে নিয়ে তাহলে সেটাই করবো যেটা একটু আগে করতে যাচ্ছিলাম।”
মিহি চমকে গেল।
“I really mean it.” গরম চোখের চাহনিতে বলল এরোন।
বাধ্য হয়ে সেখানে দাঁড়িয়েই ফোন করলো মিহি। শুধু মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখলো।
মায়ের ফোনে ফোন দিলো ও। বাবাকে ফোন করার সাহস এখনো জোগার করে উঠতে পারে নি।
দুইবার রিং হতেই ওপাশ থেকে ফোন তুলে হ্যালো বলল ওর মা।
এতদিন পর মায়ের আওয়াজ কানে আসতেই চোখ ভিজে গেল মিহির। সব কথা গলার কাছে আটকে গেল।
ওপাশ থেকে ওর মা কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করে থেমে গেল।
কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলল,”মিহি?”
মিহি ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। আর কোনমতে ভাঙা গলায় ‘মা’ শব্দটা উচ্চারণ করল।
“এত দিন লেগে গেল ফোন দিতে?” অভিমানী সুরে বললেন উনি।
মিহি নাক টেনে টেনে চোখের জল ফেলতে লাগলো।
“কি হয়েছে এভাবে কাঁদছিস কেন? বোকা মেয়ে।” ব্যস্ত হয়ে উঠলো মিহির মা। গলা শুনে মনে হচ্ছে সেও কাঁদছে।
“ব..বাবা…?” মিহি এটুকু বলেই থেমে গেলো।
“কথা বলিনা আমি ওটার সাথে। অসভ্য লোক।” বিরক্তিকর ভঙ্গিমায় বললেন উনি।
তারমানে বাবা এখনো রেগে আছে। চিন্তা করেই মিহির মন খারাপ হয়ে গেল।
“চিন্তা করিস না। চুপচাপ আছে সে। মনে ত হয় মেনেই নিয়েছে। তাও ঢং! তাছাড়া এত ভালো ছেলেকে না মেনে পারে কেউ?” বলতে বলতে চোখের জল মুছে হাসলেন মিহির মা।
মিহি থমকে গেল। এত ভালো ছেলে মানে? কে ভালো ছেলে?
মিহির চিন্তার মধ্যেই ওর মা আবার বলে উঠল,”আমার ভারি পছন্দ হয়েছে।”
মায়ের এত খুশি হবার বিষয়টা মিহি ঠিক নিতে পারছে না। বিষয়টা ঢেকি গেলার মত লাগছে।জাদুটোনা করেছে নাকি এই ছেলে।
“কোথায়? সে কোথায়?” জিজ্ঞেস করল মিহির মা।
“কে কোথায়?” হা হয়ে গেল মিহি।
“এরোন। আর কে?”
মিহি অবাকের চরম সীমায় চলে গেল। ফোন করলো ও। তাও এত দিন পর! কিন্তু তার মা খুঁজছে ওই অসভ্য লোকটাকে।
“জানিনা আমি।” রাগ দমিয়ে থমথমে গলায় বলল মিহি।
“ওমা সেকি? জানিস না কেনো?”
মিহির মেজাজ আরো বিগড়ে গেলো। এরোনের জন্য দরদ যেন উথলে পরছে ওর মায়ের।
“ওনার জন্য এত পাগোল হচ্ছে কেনো? আশ্চর্য ত!” কটকটা গলায় বলে উঠল মিহি।
“কেনো? ঝগড়া করেছিস নাকি?” একই সাথে অবাক আর সন্দিহান কন্ঠে বললেন উনি।
মিহি আরো কিছু বলার আগেই এরোন ফোন টেনে নিয়ে নিজের কানে দিলো।
মিহি হা হয়ে গেলো।
এরোন ভ্রুকুটি করে মিহির দিকে তাকিয়ে বলল, “হ্যালো।”
মিহি প্রচন্ডভাবে চোখ মুখ কুচকে তাকালো।
ওপাশ থেকে ওর মা কি বলল সেটা মিহি শুনতে পেল না।
“না আন্টি কিছুই হয়নি আমাদের মধ্যে। সব ঠিক আছে। এমনি মাঝে মাঝে বিনাকারণেই খ্যাটখ্যাট করে একটু-আকটু।” দাঁতেদাঁত চিপে মিহির দিকে উপহাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল এরোন।
“আমি খ্যাটখ্যাট করি?” তর্কে উঠল মিহি।
এরোন ঠোঁট নাড়িয়ে চুপ করতে ইশারা করলো।
মিহি চুপ করতে নারাজ। সে বলতে শুরু করলো, “কি করে বশ করেছেন আ…!”
কথা শেষ করার আগেই মিহির ঠোঁটে এক আঙুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিলো এরোন।
মিহি চোখ সংকুচিত করে ওর হাতের দিকে তাকালো।
“পরে আপনাকে কল করছি আমি।” বলে ফোন কাটলো এরোন।
মিহি হাতের উল্টোপাশ দিয়ে ঠেলে হাত সরিয়ে দিল এরোনের।
তারপর মুখ খুলে কিছু বলার আগেই এরোন কড়া চোখে তাকিয়ে বলে উঠল,”আমাকে ফোনে চাচ্ছিলো আর তুমি না দিয়ে রুড বিহেভ করা শুরু করেছিলা কিজন্য!”
“সেটাই ত! আপনাকে কেন চাইবে? কি কি মিথ্যা বলে ফাসিয়েছেন ওদের?” হালকা তেজের সাথে কটাক্ষ করে বলল মিহি।
“কি কি বলে ফাসিয়েছি!” উলটো প্রশ্নসূচক কন্ঠে বলল এরোন।
“জানেন না?”
“মেনে নিয়েছে তাই সহ্য হচ্ছে না! নিজের ত মুরদ ছিলো না কোনো। প্রেম করে ভাগছিলা! Coward.” তাচ্ছিল্যের ভাব নিয়ে বলল এরোন।
“আগেই বলেছি চিঠি আমার ছিলো না। আর আমি আপনাকে…।”
কথা শেষ হবার আগেই এরোন এক হাত দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরে অন্যহাতে কোমড় আগলে ওকে কাছে নিয়ে এলো।
মিহি থম মেরে চোখ প্রসারিত করে তাকালো।
কিছুক্ষন গম্ভীর চোখে তাকিয়ে মুখ থেকে হাত সরিয়ে ওর গালে রাখলো ও।
মিহি শিউরে উঠে এরোনের দিকে তাকালো।
তার দৃষ্টি মিহির ঠোঁটের দিকে।
মিহি হকচকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলে উঠল, “আ..আপনি আবার আমাকে…। ছাড়ুন আমায়।”
মিহি হালকা ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু লাভ হলো না।
ঢোক গিলে ওভাবেই মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল মিহি। না জানে এখন কি করে বসে এই ছেলে।
আচমকা এরোন নেশাতুর কন্ঠে বলে উঠল, “I want a kiss.”
(চলবে…)